রবিবার, ২৮ মে, ২০১৭

কামালুদ্দিন শামানী এর বিখ্যাত কবিতা-


من يأخذ العلم عن شيخ مشافهةً *** يكن من الزيف والتصحيف في حرمِ
ومن يكن آخذاً للعلم من صحف *** فعلمه عند أهل العلم كالعدم

“যে ব্যক্তি তাঁর শায়েখের নিকট থেকে সরাসরি ইলম শিক্ষা করে, সে বিকৃতি ও জালিয়াতি থেকে পবিত্র থাকে।
আর যে ব্যক্তি কিতাব পড়ে ইলম অর্জন করে, আলেমদের নিকট তার ইলম কোন ইলমই নয়”

আল্লামা শাওকানী (রহঃ) লিখেছেন,
إنَّ إنصاف الرجل لا يتمُّ حتَّى يأخذ كلَّ فنٍّ عن أهله كائناً ما كان

“কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত ন্যায়Ñনিষ্ঠার উপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে জ্ঞানের প্রত্যেক শাখায় অভিজ্ঞ লোকদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করবে।”
আল্লামা শাওকানী (রহঃ) আরও বলেছেন,
وأمَّا إذا أخذ العلم عن غير أهله، ورجَّح ما يجده من الكلام لأهل العلم في فنون ليسوا من أهلها ، فإنَّه يخبط ويخلط

“আলেম যদি অযোগ্য লোকের কাছ থেকে ইলম শিক্ষা করে এবং জ্ঞানের সংশ্লিষ্ট শাখায় পারদর্শী নয় এমন লোকের বক্তব্যকে সে প্রাধান্য দেয়, তবে সে অনুমান নির্ভর এবং অবিমৃশ্যকারী।” [আদাবুত তলাব ও মুনতাহাল আরাব, পৃষ্ঠা-৭৬]
আল্লামা সাখাবী (রহঃ) লিখিত “আল-জাওয়াহিরু ওয়াদ দুরারু” নামক কিতাবে রয়েছে,
"من دخل في العلم وحده؛ خرج وحدَه"

“যে ব্যক্তি একাকী ইলমের পথে প্রবেশ করল, সে একাকী সেখান থেকে বের হয়ে গেল”
[আল জাওয়াহির ওয়াদ দুরার, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৫৮]

New Islamic Song 2017 | Ya Rab | Sayed Ahmad | Allama Iqbal Rah | Kalarab


শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭

বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ে সাওম


[ বাংলা – Bengali – بنغالي ]

আব্দুল্লাহ আল মামুন আল-আযহারী
﴿ الصوم عند الديانات والشعوب ﴾
« باللغة البنغالية »
عبد الله المأمون الأزهري


বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ে সাওম
সিয়াম বা রোযা নাম ও ধরণভেদে বিভিন্ন জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বহুল প্রচলিত একটি ধর্মীয় বিধান, যা মুসলমানদের জন্য অবশ্য পালনীয় (ফরজ) একটি ইবাদত। শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘য়তে যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে সিয়ামের বিধান দেয়া হয়েছে, তেমনি সিয়ামের বিধান দেয়া হয়েছিল পূর্ববর্তী নবীদের শরী‘য়তেও; পূর্ববর্তী জাতিগুলোর ধর্ম-কর্মেও। আসমানী ধর্ম ছাড়াও মানব রচিত বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ে সাওমের বিধান রয়েছে। আল্লাহ তায়া‘লা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ ﴾ [البقرة: ١٨٣] 
 “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সাওম ফরজ করা হয়েছে। যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার” [সূরা বাক্বারা: ১৮৩]। 
এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়, পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী ও প্রত্যেক জাতির মধ্যেই প্রচলিত ছিল ‘সিয়াম’ বা রোযা নামের এই ধর্মানুষ্ঠান।
তাফসীরে কুরত্ববীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখায় বলা হয়েছে, 
الْمَعْنَى:"كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيامُ" أَيْ فِي أَوَّلِ الْإِسْلَامِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ وَيَوْمَ عَاشُورَاءَ،" كَما كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ" وَهُمُ الْيَهُودُ- فِي قَوْلِ ابْنِ عَبَّاسٍ- ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ وَيَوْمَ عَاشُورَاءَ. ثُمَّ نُسِخَ هَذَا فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ بِشَهْرِ رَمَضَانَ. وَقَالَ مُعَاذُ بن جبل: نسخ ذلك" ب أَيَّامٍ مَعْدُوداتٍ" ثُمَّ نُسِخَتِ الْأَيَّامُ بِرَمَضَانَ.
অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রত্যেক মাসে তিন দিন ও আশুরার দিনে সাওম ফরজ ছিল, যেমনি ভাবে তোমাদের পূর্ববর্তী ইহুদি সম্প্রদায়ের উপর মাসে তিন দিন ও আশুরার দিনে সাওম ফরজ ছিল। পরবর্তীতে রমাদান মাসের দ্বারা এ সাওম রহিত হয়। মুয়াজ ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উক্ত তিন দিনের সাওম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের সাওমের দ্বারা রহিত হয়, অতঃপর উক্ত কয়েক দিনের সাওম আবার রমাদানের সাওম দ্বারা রহিত হয়। 
 عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «صَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَاشُورَاءَ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ فَلَمَّا فُرِضَ رَمَضَانُ تُرِكَ»، وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ لاَ يَصُومُهُ إِلَّا أَنْ يُوَافِقَ صَوْمَهُ
ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আশুরার দিন সিয়াম পালন করেছেন এবং এ সিয়ামের জন্য আদেশও পালন করেছে। পরে যখন রমাদানের সিয়াম ফরজ হল তখন তা ছেড়ে দেওয়া হয়। ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু এ সিয়াম পালিন করতেন না, তবে মাসের যে দিনগূলোতে সাধারন সিয়াম পালন করতেন, তাঁর সাথে মিল হলে করতেন। 
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا،: أَنَّ قُرَيْشًا كَانَتْ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فِي الجَاهِلِيَّةِ، ثُمَّ أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِصِيَامِهِ حَتَّى فُرِضَ رَمَضَانُ، وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ شَاءَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ شَاءَ أَفْطَرَ»
‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহার থেকে বর্নিত যে, জাহিলী যুগে কুরায়শগন ‘আশূরার দিন সাওম পালন করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও পরে এ সাওম পালনের নির্দেশ দেন। অবশেষে রমাদানের সিয়াম ফরজ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার ইচ্ছা ‘আশুরার সিয়াম পালন করবে এবং যার ইচ্ছা সে সাওম পালন করবে না। 
 আমরা এখানে আদি পিতা আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত বিভিন্ন আসমানী ধর্মে ও মানব রচিত অন্যান্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ের যুগে যুগে সাওমের বিধান ও ধরণ নিয়ে আলোচনা করব। 
আদম আলাইহিস সালামের ধর্মে সাওম: 
প্রথম নবী আদম আলাইহিস সালামের শরী‘য়তে সিয়ামের বিধান দেয়া হয়েছিল বলে তাফসির গ্রন্থে উল্লেখ পাওয়া যায়। অবশ্য সেই সিয়ামের ধরণ ও প্রকৃতি কেমন ছিল তা আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে বাইবেল, কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসের কিতাব একেবারে নিশ্চুপ। বলা হয়ে থাকে, পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবীর শরী‘য়তেই চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়ামের বিধান ছিল। এই সিয়াম আইয়্যামি বীদ বা বেজোড় সংখ্যক দিনের সাওম নামে খ্যাত। 
নূহ আলাইহিস সালামের সাওম: 
তাফসীরে ইবনে কাসীরে এসেছে, 
قَدْ كَانَ هَذَا فِي ابْتِدَاءِ الْإِسْلَامِ يَصُومُونَ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ، ثُمَّ نُسِخَ ذَلِكَ بِصَوْمِ شَهْرِ رَمَضَانَ، كَمَا سَيَأْتِي بَيَانُهُ. وَقَدْ رُوي أَنَّ الصِّيَامَ كَانَ أَوَّلًا كَمَا كَانَ عَلَيْهِ الْأُمَمُ قَبْلَنَا، مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ -عَنْ مُعَاذٍ، وَابْنِ مَسْعُودٍ، وَابْنِ عَبَّاسٍ، وَعَطَاءٍ، وَقَتَادَةَ، وَالضَّحَّاكِ بْنِ مُزَاحِمٍ. وَزَادَ: لَمْ يَزَلْ هَذَا مَشْرُوعًا مِنْ زَمَانِ نُوحٍ إِلَى أَنْ نَسَخ اللَّهُ ذَلِكَ بِصِيَامِ شَهْرِ رَمَضَانَ.
অর্থাৎ প্রসিদ্ধ তাফসিরবিদ হযরত মুয়াজ, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু, আতা, কাতাদা ও দহহাক (রহ.) বর্ণনা করেন, নূহ আলাইহিস সালাম থেকে শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত প্রত্যেক নবীর যুগেই প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়ামের বিধান ছিল। পরবর্তীতে ইহা রমজানের সাওমের দ্বারা রহিত হয়। 
 عن عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «صَامَ نُوحٌ الدَّهْرَ، إِلَّا يَوْمَ الْفِطْرِ وَيَوْمَ الْأَضْحَى» 
হযরত নূহ আলাইহিস সালাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন বাদে সারা বছর সাওম রাখতেন। 
 ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সাওম: 
 মুসলিম মিল্লাতের পিতা সহিফাপ্রাপ্ত নবী ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের যুগে ৩০টি সিয়াম ছিল বলে কেউ কেউ লিখেছেন।
তাফসীরে মানারে আল্লামা রশিদ রেজা ইমাম মুহাম্মদ আব্দুর সূত্রে উল্লেখ করেন, 
قَالَ الْأُسْتَاذُ الْإِمَامُ: أَبْهَمَ اللهُ هَؤُلَاءِ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا، وَالْمَعْرُوفُ أَنَّ الصَّوْمَ مَشْرُوعٌ فِي جَمِيعِ الْمِلَلِ حَتَّى الْوَثَنِيَّةِ، فَهُوَ مَعْرُوفٌ عَنْ قُدَمَاءِ الْمِصْرِيِّينَ فِي أَيَّامِ وَثَنِيَّتِهِمْ، وَانْتَقَلَ مِنْهُمْ إِلَى الْيُونَانِ فَكَانُوا يَفْرِضُونَهُ لَا سِيَّمَا عَلَى النِّسَاءِ، وَكَذَلِكَ الرُّومَانِيُّونَ كَانُوا يُعْنَوْنَ بِالصِّيَامِ، وَلَا يَزَالُ وَثَنِيُّو الْهِنْدِ وَغَيْرُهُمْ يَصُومُونَ إِلَى الْآنِ، وَلَيْسَ فِي أَسْفَارِ التَّوْرَاةِ الَّتِي بَيْنَ أَيْدِينَا مَا يَدُلُّ عَلَى فَرْضِيَّةِ الصِّيَامِ، وَإِنَّمَا فِيهَا مَدْحُهُ وَمَدْحُ الصَّائِمِينَ، وَثَبَتَ أَنَّ مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ صَامَ أَرْبَعِينَ يَوْمًا، وَهُوَ يَدُلُّ عَلَى أَنَّ الصَّوْمَ كَانَ مَعْرُوفًا مَشْرُوعًا وَمَعْدُودًا مِنَ الْعِبَادَاتِ، وَالْيَهُودُ فِي هَذِهِ الْأَزْمِنَةِ يَصُومُونَ أُسْبُوعًا تِذْكَارًا لِخَرَابِ أُورْشَلِيمَ وَأَخْذِهَا، وَيَصُومُونَ يَوْمًا مِنْ شَهْرِ آبَ. 
 দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম: 
 আসমানি কিতাব ‘যবুর’প্রাপ্ত বিখ্যাত নবী দাউদ আলাইহিস সালামের যুগেও সাওমের প্রচলন ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ «صُمْ أَفْضَلَ الصِّيَامِ عِنْدَ اللهِ، صَوْمَ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلَام كَانَ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا»
‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় সাওম দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম তিনি এক দিন সাওম পালন করতেন এবং এক দিন বিনা সাওমে থাকতেন। 
 মূসা আলাইহিস সালাম ও ইহুদি ধর্মে সাওম: 
ইহুদিদের ওপর প্রতি শনিবার, বছরের মধ্যে মহররমের ১০ তারিখে আশুরার দিন এবং অন্যান্য সময় সাওম ফরজ ছিল।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المَدِينَةَ فَرَأَى اليَهُودَ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ: «مَا هَذَا؟»، قَالُوا: هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ، فَصَامَهُ مُوسَى، قَالَ: «فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ»، فَصَامَهُ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করে ইহুদিদের আশুরার দিনে সাওম অবস্থায় পেলেন। তিনি তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘আজকে তোমরা কিসের সাওম করছ?’ তারা বলল, ‘এটা সেই মহান দিন যেদিন আল্লাহ তা‘আলা মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর কওম বনী ইসরাইল ফেরাউনের কবল থেকে মুক্ত করেছিলেন। ফলে শুকরিয়াস্বরূপ মূসা আলাইহিস সালাম ওই দিনে সাওম রেখেছিলেন, তাই আমরা আজকে সাওম করছি।’ এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি তোমাদের অপেক্ষা হযরত মূসা আলাইহিস সালামের অধিক নিকটবর্তী। এরপর তিনি এ দিন সওম পালন করেন এবং সবাইকে সাওম রাখার নির্দেশ দেন”।’ 
 মূসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে আল্লাহর কাছ থেকে তাওরাতপ্রাপ্তির আগে ৪০ দিন পানাহার ত্যাগ করেছিলেন। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাতে বর্ণিত আছে, মূসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে ৪০ দিন পানাহার না করে কাটিয়েছিলেন। তাই ইহুদিরা সাধারণভাবে মূসা আলাইহিস সালামের অনুসরণে ৪০টি সাওম রাখা ভালো মনে করত। তন্মধ্যে ৪০তম দিনটিতে তাদের ওপর সাওম রাখা ফরজ ছিল। যা ইহুদিদের সপ্তম মাস তিসরিনের দশম তারিখে পড়ত। এ জন্য ওই দিনটিকে আশুরা বা দশম দিন বলা হয়। এ ছাড়া ইহুদি সহিফাতে অন্যান্য সাওমেরও সুস্পষ্ট হুকুম রয়েছে। ইহুদিরা বর্তমানে ৯ আগষ্ট ইহুদী হাইকাল বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংস দিবসে সাওম রাখে, এদিন তারা খাদ্য, স্ত্রী সহবাস ও জুতা পরিধান থেকে বিরত থাকে। এছাড়াও ১৩ নভেম্ভর, ১৭ই জুলাই, ১৩ই মার্চ ও বিভিন্ন দিবসে সাওম পালন করে।
ঈসা আলাইহিস সালাম ও খৃস্টান ধর্মে সাওম: 
 আসমানি কিতাব ‘ইঞ্জিল’ প্রাপ্ত বিশিষ্ট নবী ঈসা আলাইহিস সালামের যুগে সাওমের প্রমাণ পাওয়া যায়। ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারী সম্প্রদায় সাওম রাখতেন। বর্তমানে তাদের দু'ধরণের সাওম আছে। প্রথম হলো, তাদের পিতার উপদেশে নির্দিষ্ট কয়েকদিন খাদ্য পানীয় থেকে বিরত থাকা, আর ইফতার হবে নিরামিষ দিয়ে, মাছ, মাংস ও দুগ্ধজাত জিনিস খাওয়া যাবেনা। যেমন: বড় দিনের সাওম, তাওবার সাওম যা ৫৫ দিন পর্যন্ত দীর্ঘায়ীত হয়, এমনিভাবে সপ্তাহে বুধ ও শুক্রবারে সাওম। দ্বিতীয় ধরণের সাওম হলো খাদ্য থেকে বিরত থাকা, তবে মাছ ভক্ষণ করা যাবে। এ সাওমের মধ্যে ছোট সাওম বা জন্মদিনের সাওম, ইহা ৪৩ দিন দীর্ঘায়িত হয়, দূতগণের সাওম, মারিয়ামের সাওম ইত্যাদি। তবে তাদের ধর্মে কোন সাওমই ফরজ নয়, বরং কেউ ইচ্ছা করলে রাখতে পারে। 
 তাফসীরে ত্বাবারীতে এসেছে,
حدثني موسى بن هارون قال، حدثنا عمرو بن حماد قال، حدثنا أسباط، عن السدي:"يا أيها الذين آمنوا كُتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم"، أما الذين من قبلنا: فالنصارى، كتب عليهم رمضان، وكتب عليهم أن لا يأكلوا ولا يشربوا بعد النوم، ولا ينكحوا النساءَ شهر رمضان. فاشتد على النصارى صيامُ رمَضان، وجعل يُقَلَّبُ عليهم في الشتاء والصيف. فلما رأوا ذلك اجتمعوا فجعلوا صيامًا في الفصل بين الشتاء والصيف، وقالوا: نزيد عشرين يومًا نكفّر بها ما صنعنا! فجعلوا صيامهم خمسين. فلم يزل المسلمون على ذلك يَصنعون كما تصنع النصارى، حتى كان من أمر أبي قيس بن صرمة وعمر بن الخطاب، ما كان، فأحل الله لهم الأكل والشرب والجماعَ إلى طُلوع الفجر.

ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর ধর্ম প্রচার শুরুতে ইঞ্জিল পাওয়ার আগে জঙ্গলে ৪০ দিন সিয়াম সাধনা করেছিলেন। একদা ঈসা আলাইহিস সালামকে তাঁর অনুসারীরা জিজ্ঞেস করেন যে, ‘আমরা অপবিত্র আত্মাকে কী করে বের করব?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘তা দু‘আ ও সাওম ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে বের হতে পারে না।’ 
গ্রীক ও রোমানদের সাওম: 
গ্রীস ও রোমানরা যুদ্ধের আগে সাওম রাখত যাতে ক্ষুধা ও কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। খ্রিষ্টান পাদরিদের ও পারসিক অগ্নিপূজকদের এবং হিন্দু যোগী ইত্যাকার ধর্মাবলম্ব্বীদের মধ্যে সাওমের বিধান ছিল। পারসিক ও হিন্দু যোগীদের সাওমের ধরন ছিল এরূপ—তারা সাওম থাকা অবস্থায় মাছ-মাংস, পাখি ইত্যাদি ভক্ষণ করা থেকে বিরত থাকত বটে; কিন্তু ফল-মূল এবং সামান্য পানীয় গ্রহণ করত। মূর্তিপূজক ঋষীরা সাওমের ব্যাপারে এতোই কঠোর ছিল যে, এরূপ—তারা সাওম থাকা অবস্থায় মাছ-মাংস, পাখি ইত্যাদি ভক্ষণ করা থেকে বিরত থাকত, স্ত্রী সহবাস করতনা। সারা বছর সাওম রেখে আত্মার কষ্ট দিত আর এভাবে তারা পবিত্রতা অর্জনের সাধনা করত। 
প্রাচীন চীনা সম্প্রদায়ের লোকরা একাধারে কয়েক সপ্তাহ সাওম রাখত। 
জাহেলী যুগে সাবেয়ী সম্প্রদায়ের সাওম: 
ইবন নাদিম তার ‘ফিহরাসাত’ কিতাবের নবম খন্ডে উল্লেখ করেন, সাবেয়ী সম্প্রদায়ের লোকেরা (যারা গ্রহ নক্ষত্র পূঁজা করে) ত্রিশ দিন সাওম পালন করত। আযার মাসের ৮দিন অতিবাহিত হলে এ সাওম শুরু হতো, কানুনে আউয়াল মাসে ৯টি, শাবাত মাসে ৭টি সাওম। এ সাত সাওম পালনের পরে তারা ঈদুল ফিতর উদযাপন করত। সাওমবস্থায় তারা খাদ্য, পানীয় ও স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি থেকে বিরত থাকত। 
হিন্দু ধর্মে সাওম বা উপবাস: 
বেদের অনুসারী ভারতের হিন্দুদের মধ্যেও ব্রত অর্থাৎ উপবাস ছিল। প্রত্যেক হিন্দি মাসের ১১ তারিখে ব্রাহ্মণদের ওপর ‘একাদশীর’ উপবাস রয়েছে। এ হিসাবে তাদের উপবাস ২৪টি হয়। কোনো কোনো ব্রাহ্মণ কার্তিক মাসে প্রত্যেক সোমবার উপবাস করেন। কখনো হিন্দু যোগীরা ৪০ দিন পানাহার ত্যাগ করে চল্লিশে ব্রত পালন করেন। হিন্দু মেয়েরা তাদের স্বামীদের মঙ্গল কামনায় কার্তিক মাসের ১৮তম দিবসে "কারওয়া চাওত" নামে উপবাস রাখে। 
বৌদ্ধ ধর্মে সাওম বা উপবাস: 
তারা তাদের চন্দ্রমাসের Upisata মাসে ১,৯,১৫ ও ২২ তারিখে ৪ দিন উপবাস পালন করে। এছাড়া বৌদ্ধ গুরুরা দুপুরের খাবারের পর থেকে সব ধরণের খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। তারা এভাবে খাদ্য থেকে বিরত থেকে সংযম ও শারীরিক নিয়ন্ত্রণ করে। 
মংগোলীরা প্রতি ১০ দিন অন্তর ও যারাদাশতিরা প্রতি ৫ দিন অন্তর সাওম পালন করত। 
জাহেলী যুগে সাওম: 
ইসলামের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত লাভের আগে আরবের মুশরিকদের মধ্যেও সিয়ামের প্রচলন ছিল। যেমন আশুরার দিনে কুরাইশরা জাহেলি যুগে সাওম রাখত এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহেলি যুগে ওই সাওম রাখতেন।
রায়েলীদের নিকট সাওম: 
রায়েলী সম্প্রদায়ের লোকেরা শারীরিক সুস্থতার জন্য সপ্তাহে একদিন তথা ২৪ ঘন্টা সাওম পালন করে। 
ইসলাম ধর্মে সাওম:
আল্লাহ তায়া‘লা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ ﴾ [البقرة: ١٨٣] 
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সাওম ফরজ করা হয়েছে। যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার” [সূরা বাক্বারা: ১৮৩]। 
ইসলামে সাওমের রয়েছে করিপয় শর্ত ও বৈশিষ্ট্য। সুর্যোদয় থেকে সুর্যাস্ত পর্যান্ত যাবতীয় পানাহার, স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকার নাম সাওম। সেহেরী খাওয়া ইসলামী শরিয়তের সাওমের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলামে রমাদানের সাওম ফরজ, অন্যান্য সাওম মুস্তাহাব, যেমন, আরাফার সাওম, মহররমের সাওম, শবে বরাতের সাওম, প্রতি চন্দ্র মাসে ১৩.১৪.১৫ তারিখ সাওম ইত্যাদি। 
সমাজে সাওমের প্রভাব
সংযম অর্জন: 
সাওমের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে যে বিষয়টি বেরিয়ে আসে তা হচ্ছে সংযম। মূলত সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্ম ও সমাজে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য সাওমের প্রচলন ছিল। ইসলামী শরীয়তে ফরজকৃত সাওম সেই লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সহায়ক। তাই প্রতিটি মুমিনের জন্য কর্তব্য হলো সাওমের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ব্রতী হওয়া।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রমাদান মাস হলো ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো জান্নাত। এই মাসেই আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে ধৈর্যের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। যাতে রমাদান পরবর্তী সময়ে প্রতিটি মুহূর্তে, কথায় কাজে ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে এর বাস্তব প্রতিফলন ঘটানোর জন্যই সাওম। 
পরহেযগারী অর্জন: 
সাওমের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ তায়া'লা বলেছেন, 
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ ﴾ [البقرة: ١٨٣] 
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সাওম ফরজ করা হয়েছে। যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার” [সূরা বাক্বারা: ১৮৩]।
(لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ) যাতে তোমরা তাকওয়াবান হও। এখানেই সমাজ গঠনে সাওমের ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠে। তাকওয়ার ভিত্তির উপর যে সমাজ গঠিত হবে সেখানে থাকবে না কোন হিংসা বিদ্বেষ, মারামারি, কাটাকাটি, দুর্নীতি ও রাহাজানি। সাওমের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সকল প্রকার নাফরমানি কাজ থেকে দূরে থাকার নামই তাকওয়া। মানুষের মনের গোপন কোণে যে কামনা-বাসনা আছে, আল্লাহ তা‘আলা সে সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। আল্লাহর কাছে বান্দার মান-মর্যাদা নির্ধারণের একমাত্র উপায় তাকওয়া। এ তাকওয়াই মানুষের মনে সৎ মানবিক গুণাবলি সৃষ্টি করে। সুতরাং যাবতীয় অন্যায় কাজ থেকে বিরত থেকে ভালো কাজ করতে পারলেই সাওম পালন সফল ও সার্থক হবে। এভাবে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত প্রশিক্ষণ দ্বারা নিজেদের একজন সৎ, আল্লাহভীরু নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে।
সাওম থেকে তাকওয়া শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আল্লাহভীতি অর্জন করার ক্ষেত্রে সাওমের কোনো বিকল্প নেই। সাওমের শিক্ষা নিয়ে তাকওয়ার গুণাবলি অর্জনের মধ্য দিয়ে মানুষ ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক মুক্তি লাভ করতে পারে। ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে সাওম রাখলে জীবনের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এ শিক্ষা যদি বাকি ১১ মাস কাজে লাগানো যেত, তাহলে পৃথিবীতে এত অশান্তি, অনাচার থাকত না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে 
﴿ قَدۡ أَفۡلَحَ مَن تَزَكَّىٰ ١٤ ﴾ [الاعلا: ١٤] 
“যে সংশোধিত হলো, সেই সফলকাম হলো”। (সূরা আল-আ‘লা, আয়াত-১৪) 
আত্মিক ও দৈহিক সুস্থতা অর্জন: 
সাওম মানুষের ভেতর ও বাহির—দুই দিকের সংশোধন করে। মানুষের বাতেন বা ভেতরের অবস্থা পরিবর্তন করা অর্থাৎ আলোকিত করা এবং তার স্বভাব, চরিত্র, আচার-আচরণ সংশোধনপূর্বক প্রকাশ্যভাবে সুন্দর করে গড়ে তোলা সাওমের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। এ পরিপ্রেক্ষিতে সাওম মানুষকে পার্থিব লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরচর্চা, পরনিন্দা, মিথ্যাচার, প্রতারণা, অতিরিক্ত সম্পদ অর্জনের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়।
মানুষের শারীরিক অবকাঠামো ঠিক রাখতে বর্তমানে চিকিৎসকেরা সাওম রাখার নির্দেশ দিয়ে থাকেন। শরীর ঠিক মন ঠিক। সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে শারীরিক সুস্থতা অত্যাবশ্যকীয়। 
ইবনে সিনা সাওমকে দুরারোগ্য সব রোগের চিকিৎসা বলতেন। 
মিশরে নেপোলিয়ানের আগ্রাসন পরবর্তী যুগে হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসার জন্য সাওম রাখলে বলা হতো। 
সুন্দর সমাজ গঠন: 
সাওমের মাধ্যমে দরিদ্র ও অভুক্ত মানুষের দুঃখ দুর্দশা অনুধাবন করা যায়, ফলে সমাজে এর প্রভাব সুদূর প্রসারী। সিয়াম সাধনা সহমর্মিতা শিক্ষা জাগ্রত করার কার্যকর মাধ্যম। অনাহার কাকে বলে, খাদ্যাভাব কাকে বলে যারা অনুভব করেনি, তারা সমাজের বঞ্চিত ও পীড়িত মানুষের কষ্ট কীভাবে বুঝবে? সাওম রাখার কারণে এই মানুষগুলো ক্ষুধার যন্ত্রণা সম্পর্কে সামান্য হলেও ধারণা পাবে। ফলে প্রতিবেশী ও কাছে অবস্থানকারীদের কষ্টের জীবন কিছুটা অনুধাবন করা সহজ হবে। সাওম রাখার কারণে শরীরের শক্তি কমে আসবে। তখন অধীনস্থদের কাজের ভার লাঘব করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হবে। আর এতে মনিব-ভৃত্যের দূরত্ব কমে একে অপরের পরিপূরক মনে করার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে বৈরিতা থাকবে না।
সিয়াম সাধনার দ্বারা মানুষের মধ্যে পারস্পরিক স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া-মমতা, আন্তরিকতা, দানশীলতা, বদান্যতা, উদারতা, ক্ষমা, পরোপকারিতা, সহানুভূতি, সমবেদনা প্রভৃতি সদাচরণ জন্মায়। সাওমের এ মহান শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের সমাজ ও পারিবারিক জীবনে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রমাদান মাস আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি দান সদাকা করতেন। যেমন হাদীসে এসেছে, 
عَنْ ابْن عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ بِالخَيْرِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ، وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ، حَتَّى يَنْسَلِخَ، يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ القُرْآنَ، فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ أَجْوَدَ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ»
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমাদানে জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরীল আলাইহিস সালাম যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন। 
তাই সাওম পালনের দ্বারা সমাজের দারিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত। 
প্রকৃতপক্ষে সাওম প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক জীবনসহ সর্বস্তরে অনুশীলনের দীক্ষা দিয়ে যায়। তাই আসুন, সাওমের প্রকৃত শিক্ষা ও উদ্দেশ্যের প্রতি যত্নবান হয়ে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নিজেদের মনুষ্যত্ববোধকে জাগ্রত করি, মানবিক গুণাবলিতে জীবনকে আলোকিত করি; তাহলে আমাদের সিয়াম সাধনা অর্থবহ হবে। তখন মানুষের মধ্যে গড়ে উঠবে সুমধুর সম্পর্ক, বিদায় নেবে অরাজকতা, অন্যায়-অনাচার এবং দুর্নীতি ও ভেজালমুক্ত হয়ে আদর্শ জাতি হিসেবে আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব। সাওমের মাসের পরিসমাপ্তি বয়ে আনুক সমাজ জীবনে আমূল পরিবর্তন, খোদাভীতি, আত্মসংযম ও মানবপ্রেম। সাওমের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের আলোকে যেন সারা জীবন সৎভাবে অতিবাহিত করে আল্লাহর অশেষ করুণা ও ক্ষমা লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি, আল্লাহ পাক আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমীন।

রামাযান মাসে মুমিনের দৈনন্দিন কর্মসূচী


আল্ হামদু লিল্লাহ, ওয়াস্ সালাতু ওয়াস্ সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদ :
রহমতের মাস, বরকতের মাস, কল্যাণের মাস, ক্ষমার মাস, কুরআনের মাস মাহে রামাযান আমাদের মাঝে উপস্থিত। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা কি রামাযানের এই মহামূল্যবান সময়গুলোকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি? আসুন না একটি তালিকা তৈরি করি যেন এই মাসের প্রতিটি মুহূর্তে নেকী কুড়িয়ে আখেরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখতে পারি।
ফজর পূর্বে:
১) আল্লাহর দরবারে তাওবা-ইস্তেগফার ও দুয়া: কারণ মহান আল্লাহ প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করে বলেন: “কে আছে আমার কাছে দুআকারী, আমি তার দুআ কবুল করবো”। (মুসলিম)
২) সাহরী ভক্ষণ : নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “সাহরী খাও। কারণ সাহরীতে বরকত আছে”। (বুখারী মুসলিম)
ফজর হওয়ার পর:
১) ফজরের সুন্নত আদায়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “ফজরের দুই রাকাআত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা আছে তার থেকে উত্তম”। (মুসলিম )
২) ইকামত পর্যন্ত দুআ ও যিকিরে মশগুল: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”আযান ও ইকামতের মাঝে দুআ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না”। (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ)
৩) ফজরের নামায আদায়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”তারা যদি ইশা ও ফজরের ফযীলত জানতো, তো হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত”। (বুখারী ও মুসলিম)
৪) সূর্যোদয় পর্যন্ত সকালে পঠিতব্য দুআ-যিকর ও কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মসজিদে অবস্থান: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর নামাযের পর নিজ স্থানেই সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করতেন”। (মুসলিম )
৫) সূর্যোদয়েরে পর দুই রাকাআত নামায: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”যে ব্যক্তি জামায়াতের সহিত ফজরের নামায পড়লো, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর যাকর করলো, তারপর দুই রাকাআত নামায আদায় করলো, তার জন্য এটা একটি পূর্ণ হজ্জ ও উমরার মত “। (তিরমিযী) 
৬) নিজ নিজ কর্মে মনোযোগ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “নিজ হাতের কর্ম দ্বারা উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাবার নেই”। )বুখারী(
যহরের সময় :
১) জামায়াতের সহিত জহরের নামায আদায়। অতঃপর কিছুক্ষণ কুরআন কিংবা অন্যান্য দীনী বই পাঠ।
২) আসর পর্যন্ত বিশ্রাম, কারণ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ( তোমার উপর তোমার শরীরেরও হক আছে)।
আসরের সময় :
১) আসরের নামায জামাতের সাথে সম্পাদন: অতঃপর ইমাম হলে নামাযীদের উদ্দেশ্যে দারস প্রদান কিংবা দারস শ্রবণ কিংবা ওয়ায নসীহতের ক্যাসেট ও সিডির মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :”যে ব্যক্তি মসজিদে ভাল কিছু শিক্ষা নিতে কিংবা শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গেল, সে পূর্ণ এক হজ্জের সমান নেকী পেল”। (ত্ববারানী)
২) পরিবারের সদস্যদের সাথে ইফতারির আয়োজনে সহায়তা করা: এর মাধ্যমে যেমন কাজের চাপ হাল্কা হয় তেমন পরিবারের সাথে ভালবাসাও বৃদ্ধি পায়।
মাগরিবের সময় 
১) ইফতারি করা এবং এই দুআ পাঠ করা: “যাহাবায্ যামাউ ওয়াব্ তাল্লাতিল্ উরূকু ওয়া সাবাতাল্ আজরু ইন্ শাআল্লাহু তাআলা”। অর্থ: পিপাষা নিবারিত হল, রগ-রেশা সিক্ত হল এবং আল্লাহ চাইলে সওয়াব নির্ধারিত হল। (আবূ দাউদ)
২) মাগরিবের নামায জামায়াতের সাথে আদায় করা যদিও ইফতারি পূর্ণরূপে না করা যায়। বাকি ইফতারি নামাযের পর সেরে নেওয়া মন্দ নয়। অতঃপর সন্ধ্যায় পঠিতব্য যাকর-আযকার পাঠ করে নেওয়া।
৩) স্বভাবানুযায়ী রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে একটু বিশ্রাম করে তারাবীর নামাযের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।
ইশার সময় :
১) জামায়াতের সহিত ইশার নামায আদায় করা।
২) ইমামের সাথে সম্পূর্ণ তারাবীর নামায আদায় করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি ঈমান ও নেকীর আশায় রমযানে কিয়াম করবে, (তারাবীহ পড়বে ) তার বিগত সমস্ত (ছোট গুনাহ) ক্ষমা করা হবে”। (বুখারী ও মুসলিম)
৩) সম্ভব হলে বিতরের নামায শেষ রাতে পড়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :তোমরা বিতরকে রাতের শেষ নামায কর”। (মুত্তাফিকুন আলাইহ)
লেখক: আব্দুর রাকীব (মাদানী) দাঈ, দাওয়াহ সেন্টার খাফজী, সৌদী আরব।
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহিল হাদী দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদী আরব।

সন্তানের প্রতি লোকমান হাকীমের উপদেশাবলিঃ

Emran Hossain Adib
প্রথমে লোকমান আ. তার ছেলেকে যেভাবে উপদেশ দিয়েছেন, তা আলোচনা করা হল। কারণ, লোকমান আ. তার ছেলেকে যে উপদেশ দিয়েছেন, তা এতই সুন্দর ও গ্রহণ যোগ্য যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তা কুরআনে করীমে উল্লেখ করে কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত উম্মতের জন্য তিলাওয়াতে উপযোগী করে দিয়েছেন এবং কিয়ামত পর্যন্তের জন্য তা আদর্শ করে রেখেছেন।
লোকমান আ. তার ছেলেকে যে উপদেশ দেন তা নিম্নরূপ:
মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِذْ قَالَ لُقْمَانُ لِابْنِهِ وَهُوَ يَعِظُهُ ﴾
অর্থ, “আর স্মরণ কর, যখন লোকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল...।”
এ উপদেশগুলো ছিল অত্যন্ত উপকারী, যে কারণে মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে লোকমান হাকিমের পক্ষ থেকে উল্লেখ করেন।

প্রথম উপদেশ: তিনি তার ছেলেকে বলেন,
﴿يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ﴾
অর্থ, “হে প্রিয় বৎস আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলুম।”

এখানে লক্ষণীয় যে, প্রথমে তিনি তার ছেলেকে শিরক হতে বিরত থাকতে নির্দেশ দেন। একজন সন্তান তাকে অবশ্যই জীবনের শুরু থেকেই আল্লাহর তাওহীদে বিশ্বাসী হতে হবে। কারণ, তাওহীদই হল, যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিশুদ্ধতা ও নির্ভুলতার একমাত্র মাপকাঠি। তাই তিনি তার ছেলেকে প্রথমেই বলেন, আল্লাহর সাথে ইবাদতে কাউকে শরিক করা হতে বেচে থাক। যেমন, মৃত ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা অথবা অনুপস্থিত ও অক্ষম লোকের নিকট সাহায্য চাওয়া বা প্রার্থনা করা ইত্যাদি। এছাড়াও এ ধরনের আরও অনেক কাজ আছে, যেগুলো শিরকের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “দোআ হল ইবাদত” الدعاء هو العبادة সুতরাং আল্লাহর মাখলুকের নিকট দোআ করার অর্থ হল, মাখলুকের ইবাদত করা, যা শিরক।
মহান আল্লাহ তা‘আলা যখন তার বাণী, ﴿وَلَمْ يَلْبِسُواْ إِيمَانَهُم بِظُلْمٍ﴾ অর্থাৎ “তারা তাদের ঈমানের সাথে যুলুমকে একত্র করে নি।” এ আয়াত নাযিল করেন, তখন বিষয়টি মুসলিমদের জন্য কষ্টকর হল, এবং তারা বলাবলি করল যে, আমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে তার উপর অবিচার করে না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের আলোচনা শোনে বললেন,
} ليس ذلك ، إنما هو الشرك ، ألم تسمعوا قول لقمان لابنه :يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ﴾ .
অর্থাৎ, “তোমরা যে রকম চিন্তা করছ, তা নয়, এখানে আয়াতে যুলুম দ্বারা উদ্দেশ্য হল, শিরক। তোমরা কি লোকমান আ. তার ছেলেকে যে উপদেশ দিয়েছে, তা শোন নি? তিনি তার ছেলেকে বলেছিলেন,
}يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ﴾ .
অর্থ, হে প্রিয় বৎস আল্লাহর সাথে শিরক করো না, নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলুম।”

দ্বিতীয় উপদেশ: মহান আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতিকে যে উপদেশ দিয়েছেন, তার বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿وَوَصَّيْنَا الْإِنسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْنًا عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ﴾ .
অর্থ, “আর আমি মানুষকে তার মাতাপিতার ব্যাপারে [সদাচরণের] নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে, তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন-তো আমার কাছেই।” [সূরা লোকমান: ১৪]
তিনি তার ছেলেকে কেবলই আল্লাহর ইবাদত করা ও তার সাথে ইবাদতে কাউকে শরীক করতে নিষেধ করার সাথে সাথে মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করার উপদেশ দেন। কারণ, মাতা-পিতার অধিকার সন্তানের উপর অনেক বেশি। মা তাকে গর্ভধারণ, দুধ-পান ও ছোট বেলা লালন-পালন করতে গিয়ে অনেক জ্বালা-যন্ত্রণা ও কষ্ট সইতে হয়েছে। তারপর তার পিতাও লালন-পালনের খরচাদি, পড়া-লেখা ও ইত্যাদির দায়িত্ব নিয়ে তাকে বড় করছে এবং মানুষ হিসেবে ঘড়ে তুলছে। তাই তারা উভয় সন্তানের পক্ষ হতে অভিসম্পাত ও খেদমত পাওয়ার অধিকার রাখে।

তৃতীয় উপদেশ: মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে মাতা-পিতা যখন তোমাকে শিরক বা কুফরের নির্দেশ দেয়, তখন তোমার করণীয় কি হবে তার বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿وَإِن جَاهَدَاكَ عَلى أَن تُشْرِكَ بِي مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلَا تُطِعْهُمَا وَصَاحِبْهُمَا فِي الدُّنْيَا مَعْرُوفًا وَاتَّبِعْ سَبِيلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾
অর্থ, “আর যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে জোর চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তখন তাদের আনুগত্য করবে না। এবং দুনিয়ায় তাদের সাথে করবে সদ্ভাবে। আর আমার অনুসরণ কর তার পথ, যে আমার অভিমুখী হয়। তারপর আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব, যা তোমরা করতে।” [সূরা লোকমান: ১৫]
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. আয়াতের তাফসীরে বলেন, ‘যদি তারা উভয়ে তোমাকে পরি-পূর্ণরূপে তাদের দ্বীনের আনুগত্য করতে বাধ্য করে, তাহলে তুমি তাদের কথা শুনবে না এবং তাদের নির্দেশ মানবে না। তবে তারা যদি দ্বীন কবুল না করে, তারপরও তুমি তাদের সাথে কোন প্রকার অশালীন আচরণ করবে না। তাদের দ্বীন কবুল না করা তাদের সাথে দুনিয়ার জীবনে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করাতে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। তুমি তাদের সাথে ভালো ব্যবহারই করবে। আর মুমিনদের পথের অনুসারী হবে, তাতে কোন অসুবিধা নাই।’
এ কথার সমর্থনে আমি বলব, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীও বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট ও শক্তিশালী করেন, তিনি বলেন,
« لا طاعة لأحد في معصية الله ، إنما الطاعة في المعروف »
“আল্লাহর নাফরমানিতে কোন মাখলুকের আনুগত্য চলবে না। আনুগত্য-তো হবে একমাত্র ভালো কাজে।”

চতুর্থ উপদেশ: লোকমান হাকিম তার ছেলেকে কোন প্রকার অন্যায় অপরাধ করতে নিষেধ করেন। তিনি এ বিষয়ে তার ছেলেকে যে উপদেশ দেন, মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে তার বর্ণনা দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَا بُنَيَّ إِنَّهَا إِن تَكُ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ فَتَكُن فِي صَخْرَةٍ أَوْ فِي السَّمَاوَاتِ أَوْ فِي الْأَرْضِ يَأْتِ بِهَا اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٌ﴾ .
অর্থ, “হে আমার প্রিয় বৎস! নিশ্চয় তা [পাপ-পুণ্য] যদি সরিষা দানার পরিমাণও হয়, অত:পর তা থাকে পাথরের মধ্যে কিংবা আসমান সমূহে বা জমিনের মধ্যে, আল্লাহ তাও নিয়ে আসবেন; নিশ্চয় আল্লাহ সুক্ষ্মদর্শী সর্বজ্ঞ।” [সূরা লোকমান: ১৬]
আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, অন্যায় বা অপরাধ যতই ছোট হোক না কেন, এমনকি যদি তা শস্য-দানার সমপরিমাণও হয়, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তা‘আলা তা উপস্থিত করবে এবং মীযানে ওজন দেয়া হবে। যদি তা ভালো হয়, তাহলে তাকে ভালো প্রতিদান দেয়া হবে। আর যদি খারাপ কাজ হয়, তাহলে তাকে খারাপ প্রতিদান দেয়া হবে।

পঞ্চম উপদেশ: লোকমান হাকিম তার ছেলেকে সালাত কায়েমের উপদেশ দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ﴿يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ﴾ অর্থাৎ, “হে আমার প্রিয় বৎস সালাত কায়েম কর”, তুমি সালাতকে তার ওয়াজিবসমূহ ও রোকনসমূহ সহ আদায় কর।
ষষ্ঠ উপদেশ:
﴿وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ﴾
অর্থাৎ “তুমি ভালো কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ হতে মানুষকে নিষেধ কর।” বিনম্র ভাষায় তাদের দাওয়াত দাও, যাদের তুমি দাওয়াত দেবে তাদের সাথে কোন প্রকার কঠোরতা করো না।

সপ্তম উপদেশ: আল্লাহ বলেন, ﴿وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ﴾ “যে তোমাকে কষ্ট দেয় তার উপর তুমি ধৈর্য ধারণ কর।” আয়াত দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, যারা ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং খারাপ ও মন্দ কাজ হতে মানুষকে নিষেধ করবে তাকে অবশ্যই কষ্টের সম্মুখীন হতে হবে এবং অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে। যখন পরীক্ষার সম্মুখীন হবে তখন তোমার করণীয় হল, ধৈর্যধারণ করা ও ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া। রাসূল সা. বলেন,
«المؤمن الذي يخالط الناس ويصبر على أذاهم ، أفضل من المؤمن الذي لا يخالط الناس ولا يصبر على أذاهم».
“যে ঈমানদার মানুষের সাথে উঠা-বসা ও লেনদেন করে এবং তারা যে সব কষ্ট দেয়. তার উপর ধৈর্য ধারণ করে, সে— যে মুমিন মানুষের সাথে উঠা-বসা বা লেনদেন করে না এবং কোন কষ্ট বা পরীক্ষার সম্মুখীন হয় না—তার থেকে উত্তম।”
﴿إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ﴾
অর্থ, “নিশ্চয় এগুলো অন্যতম সংকল্পের কাজ।” অর্থাৎ, মানুষ তোমাকে যে কষ্ট দেয়, তার উপর ধৈর্য ধারণ করা অন্যতম দৃঢ় প্রত্যয়ের কাজ।

অষ্টম উপদেশ:
﴿وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ﴾
অর্থ, “আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না।”
আল্লামা ইবনে কাসীর রহ. বলেন, ‘যখন তুমি কথা বল অথবা তোমার সাথে মানুষ কথা বলে, তখন তুমি মানুষকে ঘৃণা করে অথবা তাদের উপর অহংকার করে, তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখবে না। তাদের সাথে হাস্যোজ্জ্বল হয়ে কথা বলবে। তাদের জন্য উদার হবে এবং তাদের প্রতি বিনয়ী হবে।’
কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
تبسمك في وجه أخيك لك صدقة .
“তোমার অপর ভাইয়ের সম্মুখে তুমি মুচকি হাসি দিলে, তাও সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে।”

নবম উপদেশ: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: 
﴿وَلا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحاً﴾
“অহংকার ও হঠকারিতা প্রদর্শন করে জমিনে হাটা চলা করবে না।” কারণ, এ ধরনের কাজের কারণে আল্লাহ তোমাকে অপছন্দ করবে। এ কারণেই মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ﴾
“নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।”
অর্থাৎ যারা নিজেকে বড় মনে করে এবং অন্যদের উপর বড়াই করে, মহান আল্লাহ তা‘আলা তাদের পছন্দ করে না।

দশম উপদেশ: নমনীয় হয়ে হাটা চলা করা। মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে করীমে বলেন: ﴿وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ﴾ “আর তোমার চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর।” তুমি তোমার চলাচলে স্বাভাবিক চলাচল কর। খুব দ্রুত হাঁটবে না আবার একেবারে মন্থর গতিতেও না। মধ্যম পন্থায় চলাচল করবে। তোমার চলাচলে যেন কোন প্রকার সীমালঙ্ঘন না হয়।
একাদশ উপদেশ: নরম সূরে কথা বলা। লোকমান হাকীম তার ছেলেকে নরম সূরে কথা বলতে আদেশ দেন। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَاغْضُضْ مِن صَوْتِكَ﴾ “তোমার আওয়াজ নিচু কর।” আর কথায় কোন তুমি কোন প্রকার বাড়াবাড়ি করবে না। বিনা প্রয়োজনে তুমি তোমার আওয়াজকে উঁচু করো না। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ أَنكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ﴾
“নিশ্চয় সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল, গাধার আওয়াজ।”
আল্লামা মুজাহিদ বলেন, ‘সবচাইতে নিকৃষ্ট আওয়াজ হল, গাধার আওয়াজ। অর্থাৎ, মানুষ যখন বিকট আওয়াজে কথা বলে, তখন তার আওয়াজ গাধার আওয়াজের সাদৃশ্য হয়। আর এ ধরনের বিকট আওয়াজ মহান আল্লাহ তা‘আলার নিকট একেবারেই অপছন্দনীয়। বিকট আওয়াজকে গাধার আওয়াজের সাথে তুলনা করা প্রমাণ করে যে, বিকট শব্দে আওয়াজ করে কথা বলা হারাম। কারণ, মহান আল্লাহ তা‘আলা এর জন্য একটি খারাপ দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। যেমনিভাবে—
ক. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
»ليس لنا مثل السوء ، العائد في هبته كالكلب يعود في قيئه«
“আমাদের জন্য কোন খারাপ ও নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হতে পারে না। কোন কিছু দান করে ফিরিয়ে নেয়া কুকুরের মত, যে কুকুর বমি করে তা আবার মুখে নিয়ে খায়।”
খ. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
»إذا سمعتم أصوات الديكة ، فسلوا الله من فضله ، فإنها رأت ملكاً ، وإذا سمعتم نهيق الحمار فتعوذوا بالله من الشيطان ، فإنها رأت شيطاناً» .
“মোরগের আওয়াজ শোনে তোমরা আল্লাহর নিকট অনুগ্রহ কামনা কর, কারণ, সে নিশ্চয় কোন ফেরেশতা দেখেছে। আর গাধার আওয়াজ শোনে তোমরা শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা কর। কারণ, সে অবশ্যই একজন শয়তান দেখেছে।”
দেখুন: তাফসীর ইবন কাসীর, খ. ৩ পৃ. ৪৪৬

আয়াতের দিক-নির্দেশনা:-
1. আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হয়, যে সব কাজ করলে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিশ্চিত হয়, পিতা তার ছেলেকে সে বিষয়ে উপদেশ দিবে।
2. উপদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে তাওহীদের উপর অটল ও অবিচল থাকতে এবং শিরক থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেবে। কারণ, শিরক হল, এমন এক যুলুম বা অন্যায়, যা মানুষের যাবতীয় সমস্ত আমলকে বরবাদ করে দেয়।
3. প্রত্যেক ঈমানদারের উপর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা ওয়াজিব। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব হল, মাতা-পিতার কৃতজ্ঞতা বা শুকরিয়া আদায় করা। তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা, কোন প্রকার খারব ব্যবহার না করা এবং তাদের উভয়ের সাথে সু-সম্পর্ক বজায় রাখা।
4. আল্লাহর নাফরমানি হয় না, এমন কোন নির্দেশ যদি মাতা-পিতা দিয়ে থাকে, তখন সন্তানের উপর তাদের নির্দেশের আনুগত্য করা ওয়াজিব। আর যদি আল্লাহর নাফরমানি হয়, তবে তা পালন করা ওয়াজিব নয়। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: «لا طاعة لأحد في معصية الله إنما الطاعة في المعروف» অর্থ: “আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধে কোন মাখলুকের আনুগত্য চলে না; আনুগত্য-তো হবে ভালো কাজে”।
5. প্রত্যেক ঈমানদারের উপর কর্তব্য হল, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী মুমিন-মুসলিমদের পথের অনুকরণ করা, আর অমুসলিম ও বিদআতিদের পথ পরিহার করা।
6. প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আর মনে রাখবে কোন নেক-কাজ তা যতই ছোট হোক না কেন, তাকে তুচ্ছ মনে করা যাবে না এবং কোন খারাপ-কাজ তা যতই ছোট হোক না কেন, তাকে ছোট মনে করা যাবে না এবং তা পরিহার করতে কোন প্রকার অবহেলা করা চলবে না।
7. সালাতের যাবতীয় আরকান ও ওয়াজিবগুলি সহ সালাত কায়েম করা প্রত্যেক মুমিনের উপর ওয়াজিব; সালাতে কোন প্রকার অবহেলা না করে, সালাতের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হওয়া এবং খুশুর সাথে সালাত আদায় করা ওয়াজিব।
8. জেনেশুনে, সামর্থানুযায়ী সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করার দায়িত্ব পালন করতে হবে। না জেনে এ কাজ করলে অনেক সময় হিতে-বিপরীত হয়। আর মনে রাখতে হবে, এ দায়িত্ব পালনে যথা সম্ভব নমনীয়তা প্রদর্শন করবে; কঠোরতা পরিহার করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من رأى منكم منكراً فليغيره بيده ، فإن لم يستطع فبلسانه ، فإن لم يستطع فبقلبه ، وذلك أضعف الإيمان»
অর্থ: “তোমাদের কেউ যদি কোন অন্যায় কাজ সংঘটিত হতে দেখে, তখন সে তাকে তার হাত দ্বারা প্রতিহত করবে। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তবে তার মুখ দ্বারা। আর তাও যদি সম্ভব না হয়, তাহলে সে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করবে। আর এ হল, ঈমানের সর্বনিম্নস্তর।”
9. মনে রাখতে হবে, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বারণকারীকে অবশ্যই-অবশ্যই ধৈর্যশীল হতে হবে। ধৈর্যের কোন বিকল্প নাই। ধৈর্য ধারণ করা হল, একটি মহৎ কাজ। আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন।
10. হাটা চলায় গর্ব ও অহংকার পরিহার করা। কারণ, অহংকার করা সম্পূর্ণ হারাম। যারা অহংকার ও বড়াই করে আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না।
11. হাটার সময় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করে হাটতে হবে। খুব দ্রুত হাঁটবে না এবং একেবারে ধীর গতিতেও হাঁটবে না।
12. প্রয়োজনের চেয়ে অধিক উচ্চ আওয়াজে কথা বলা হতে বিরত থাকবে। কারণ, অধিক উচ্চ আওয়াজ বা চিৎকার করা হল গাধার স্বভাব। আর দুনিয়াতে গাধার আওয়াজ হল, সর্ব নিকৃষ্ট আওয়াজ।
শিশুদের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গুরুত্বপূর্ণ উপদেশঃঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে ছিলাম, তখন তিনি আমাকে ডেকে বললেন, “হে বৎস! আমি কি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দেব?” এ বলে রাসূল আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসকে কিছু উপদেশ দেন। নিম্নে তা তুলে ধরা হল:
প্রথম উপদেশ: 
احفظ الله يحفظك “তুমি আল্লাহর হেফাজত কর আল্লাহ তোমার হেফাজত করবে” : অর্থাৎ, তুমি আল্লাহর নির্দেশ মেনে চল এবং যে সব কাজ হতে আল্লাহ তোমাকে নিষেধ করেছে, সে সব কাজ হতে বিরত থাক। আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতে নিরাপত্তা বিধান করবে।
দ্বিতীয় উপদেশ:
احفظ الله تجده تجاهك (أمامك) “তুমি আল্লাহকে হেফাজত কর, তখন তুমি তাঁকে তোমার সম্মুখেই পাবে।” অর্থাৎ, তুমি আল্লাহ তা‘আলার বিধানের সংরক্ষণ ও আল্লাহর হক রক্ষা কর; তবে তুমি আল্লাহকে এমন পাবে যে, তিনি তোমাকে ভাল কাজের তাওফিক দেবে এবং তোমাকে তোমার যাবতীয় কর্মে সাহায্য করবে।
তৃতীয় উপদেশ:
إذا سألت فاسأل الله ، وإذا استعنت فاستعن بالله “যখন তুমি কোন কিছু চাইবে, আল্লাহর নিকট চাইবে। যখন কোনো সাহায্য চাইবে, আল্লাহ্‌র কাছেই চাইবে।” অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতের কোন বিষয়ে সাহায্যের প্রয়োজন হলে, তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাও। বিশেষ করে, যে কাজ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সমাধান করতে পারে না, তা আল্লাহর নিকটই চাইবে; কোন মাখলুকের নিকট চাইবে না। যেমন, সুস্থতা, রিযক, হায়াত, মওত ইত্যাদি। এগুলি এমন কাজ, যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সমাধান করতে পারে না।
চতুর্থ উপদেশ:
وأعلم أن الأمة لو اجتمعوا على أن ينفعوك بشيء لم ينفعوك إلا بشيء قد كتبه الله لك ، وإن اجتمعوا على أن يضروك بشيء لم يضروك إلا بشيء قد كتبه الله عليك
“একটি কথা মনে রাখবে, যদি সমস্ত উম্মত একত্র হয়ে তোমার কোন উপকার করতে চায়, আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য যতটুকু উপকার লিপিবদ্ধ করেছে, তার বাইরে বিন্দু পরিমাণ উপকারও তোমার কেউ করতে পারবে না, যদি আল্লাহ তোমার উপকার না চায়। আর সমস্ত উম্মত একত্র হয়ে যদি তোমার কোন ক্ষতি করতে চায়, আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য যতটুকু ক্ষতি লিপিবদ্ধ করেছে, তার বাইরে বিন্দু পরিমাণ ক্ষতিও তোমার কেউ করতে পারবে না, যদি আল্লাহ তোমার ক্ষতি না চায়।” অর্থাৎ, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জন্য ভালো ও মন্দের যে, ভাগ্য নির্ধারণ করেছে, তার বাইরে কোন কিছুই বাস্তবায়িত হবে না। এ বিষয়ের প্রতি ঈমান আনা আবশ্যক।
পঞ্চম উপদেশ:
رفعت الأقلام وجفت الصحف “কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে ও কাগজ শুকিয়ে গেছে।” তাই আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করতে হবে। তাওয়াককুল করার অর্থ হল, উপকরণ অবলম্বন করে তাওয়াককুল/ভরসা করা। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উষ্ট্রীর মালিককে বলেন, তুমি আগে উষ্ট্রীকে বেঁধে রাখ এবং আল্লাহর উপর তাওয়াককুল কর।
ষষ্ঠ উপদেশ:
تعرف إلى الله في الرخاء يعرفك في الشدة “সচ্ছল অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ কর, বিপদে তোমাকে আল্লাহ স্মরণ করবে।” অর্থাৎ, সচ্ছল অবস্থায় তুমি আল্লাহর হক ও মানুষের হক্ব আদায় কর, বিপদে আল্লাহ তোমাকে মুক্তি দেবে।
সপ্তম উপদেশ:
وأعلم أن ما أخطأك لم يكن ليصيبك ، وما أصابك لم يكن ليخطئك
“মনে রেখো— যা তুমি পেলে না, তা তোমার পাবার ছিল না; আর যা তুমি পেলে তা তুমি না পেয়ে থাকতে না।” অর্থাৎ, আল্লাহ তোমাকে কোন কিছু দান না করলে, তা কখনোই তুমি লাভ করতে পারবে না। আর যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে কোন কিছু দান করে, তা বাধা দেয়ার কেউ নাই।
অষ্টম উপদেশ:
واعلم أن النصر مع الصبر “আর জেনে রাখ, বিজয় ধৈর্যের সাথে।” অর্থাৎ, শত্রু ও নফসের বিপক্ষে সাহায্য বা বিজয় লাভ ধৈর্য ধারণের উপর নির্ভর করে। সুতরাং, আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
নবম উপদেশ:
وأن الفرج مع الكرب “বিপদের সাথেই মুক্তি আসে।” মুমিন বান্দা যেসব বিপদের সম্মুখীন হয়, তারপরই মুক্তি আসে।
দশম উপদেশ:
وأن مع العسر يسرا “কষ্টের সাথেই সুখ।” এক মুসলিম যে কষ্টের মুখোমুখি হয়, তা কখনোই স্থায়ী হয় না। কারণ, তারপর অবশ্যই আরাম বা সুখ আসে এবং আসবেই।

হাদিসের নির্যাস:
1. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুদের ভালোবাসতেন। তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. কে নিজের পিছনে বসান এবং আদর করে তিনি তাকে হে বৎস বলে আহ্বান করেন, যাতে সে সতর্ক হয় এবং রাসুলের কথার প্রতি মনোযোগী হয়।
2. শিশুদের তিনি আল্লাহর আনুগত্য করা ও তার নাফরমানি হতে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিতেন, যাতে দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের কল্যাণ নিশ্চিত হয়।
3. যখন কোন বান্দা সচ্ছলতা, সুস্থতা ও ধনী অবস্থায় আল্লাহ ও তার বান্দাদের অধিকার আদায় করে, আল্লাহ তা‘আলা বিপদে তাকে মুক্তি দেবে এবং সাহায্য করবে।
4. আল্লাহর নিকট কোন কিছু চাওয়া ও সাহায্য প্রার্থনার তালীম দেয়ার মাধ্যমে শিশুদের অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে দেয়া, মাতা-পিতা ও অভিভাবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ছোট বেলা থেকেই শিশুদের অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে দিতে হবে, যাতে বড় হলে তার পথভ্রষ্ট না হয়।
5. ঈমানের রোকনসমূহ হতে একটি রোকন হল, ভাল ও মন্দের তকদীরের উপর বিশ্বাস করা। বিষয়টি শিশুদের অন্তরে গেঁথে দিতে হবে।
6. শিশুদের ইতিবাচক মনোভাবের উপর গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা আশা, আকাঙ্ক্ষা ও সাহসিকতার সাথে তাদের জীবনের ভবিষ্যৎ রচনা করে এবং তাদের জাতির জন্য কর্ণধার ও ত্রাণকর্তা হিসেবে আর্ভিভাব হতে পারে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«وأعلم أن النصر مع الصبر ، وأن الفرج مع الكرب ، وأن مع العسر يسرا» .
“আর জেনে রাখ: ধৈর্যের সাথেই বিজয়, বিপদের সাথেই মুক্তি, কষ্টের সাথেই সুখ।

তারাবীহ নামায বিশ রাকাতঃ একটি দলীলভিত্তিক পর্যালোচনা ভূমিকাঃ

Emran Hossain Adib
রাসূল সা:সাহাবায়ে কেরাম রা:তাবেয়ীন,তাবে তাবেয়ীগণ এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে,তারাবীহ নামায বিশ রাকাত।
কিন্তু ১২৮৪ হিজরীতে ভারতের আকবরাবাদ থেকে সর্বপ্রথম এক লা-মাযহাবী মৌলভী সাহেব আট রাকাত তারাবীর ফাতওয়া প্রদান করেন। এরপর ১২৮৫ হিজরীতে পাঞ্জাব সীমান্তে মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবী আট রাকাত তারাবী নামায পড়া সুন্নত হওয়ার দাবি করেন।
কিন্তু কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে তৎকালীন প্রাজ্ঞ হক্কানী উলামায়ে কেরাম উক্ত আট রাকাত তারাবীর ফাতওয়াকে ভুল হিসেবে প্রমাণিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।

১৩৭৭ হিজরীতে আরবে শায়েখ নসীব রেফায়ী ও শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রহ. সর্বপ্রথম আট রাকাত তারাবীর মত প্রকাশ করেন। তখন শায়েখ আতিয়্যা সালিমসহ আরবের জমহুর উলামায়ে কেরাম তাদের উক্ত রায়কে প্রত্যাখ্যান করেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. এর যুগ থেকে চলে আসা হারামাইন শরীফাইন তথা বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীর আমলকে অব্যহত রাখেন। 
যা আজো অব্যাহত রয়েছে।

সুতরাং আট রাকাত তারাবী পড়ার মতকে অনুসরণের অর্থ হল, সাহাবা ও তাবেয়ীগণের অনুসৃত আমলকে প্রত্যাখ্যান করে নব্য সৃষ্ট বিদআতি দলের অনুসরণ করা।
📌তারাবীহ নামায বিশ রাকাতের প্রমাণঃ
👉
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন।

{মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/২৯৪, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১}
👉
ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ ﺧﺮﺝ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺫﺍﺕ ﻟﻴﻠﺔ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﺼﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﺭﺑﻌﺔ ﻭﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻭﺗﺮ ﺑﺜﻼﺛﺔ
হযরত জাবের রাঃ বলেনঃ রমজান মাসের এক রাতে রাসূল সাঃ বাহিরে তাশরীফ নিয়ে এলেন। আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত [৪ রাকাত ঈশার, আর ২০ রাকাত তারাবীহের] নামায পড়ালেন। আর তিন রাকাত বিতির পড়ালেন।

[তারীখে জুরজান-২৭}
যেহেতু কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কাছে দলীল শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস। তথা আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর কথা। কোন ব্যক্তির মতামত তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আর এ দু’টি হাদীসকে আল্লাহ এবং রাসূল সাঃ না সহীহ বলেছেন, না জঈফ বলেছেন। 
তাই গায়রে মুকাল্লিদরা এ দু’টি হাদীসকে না সহীহ বলতে পারবে, না জঈফ বলতে পারবে।

এবার দেখার বিষয় হল, উম্মতের ঐক্যমত্বের আমল এর উপর আছে কি নেই?
যদি দেখা যায় যে, উম্মতের আমল এর উপরই। তাহলে আমল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার দ্বারা উক্ত হাদীস সহীহ হয়ে যায়।
📌ওমর রাঃ এর আদেশঃ
👉
ﻋﻦ ﻳﺤﻴﻰ ﺑﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺍﻣﺮ ﺭﺟﻼ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় ওমর বিন খাত্তাব রাঃ এক ব্যক্তিকে বিশ রাকাত পড়ার হুকুম দিলেন।

{মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/২৯৩}
📌হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলঃ
👉
ﻭﺭﻭﻯ ﻣﺎﻟﻚ ﻣﻦ ﻃﺮﻳﻖ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺧﺼﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত সায়েব বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ এর সময়কালে বিশ রাকাত তারাবীহ ছিল। 
{ফাতহুল বারী-৪/৪৩৬}

যার সনদ বুখারীতে দুই স্থানে আছে।
👉
ﻋﻦ ﺍﻟﺴﺎﺋﺐ ﺑﻦ ﻳﺰﻳﺪ ، ﻗﺎﻝ : ﻛﻨﺎ ﻧﻘﻮﻡ ﻓﻲ ﺯﻣﺎﻥ ﻋُﻤَﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺑﻌﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ
হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ রাঃ বলেনঃ আমরা হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ ও বিতির পড়তাম।

{সুনানে সুগরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৮৩৩, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩}
ইমাম নববী রহঃ, সুবকী রহঃ [শরহুল মিনহাজ], মোল্লা আলী কারী রহঃ [শরহুল মুয়াত্তা] ও সুয়ুতী রহঃ এ বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন।
👉
ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﺍﻟﻘﺮﻇﻰ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻓﻰ ﺯﻣﺎﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻳﻮﺗﺮﻭﻥ ﺑﺜﻼﺙ
মুহাম্মদ বিন কাব কুরজী বলেনঃ ওমর ফারুক রাঃ এর শাসনামলে লোকেরা রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিতির পড়তো।

👉
ﻋﻦ ﻳﺰﻳﺪ ﺑﻦ ﺭﻭﻣﺎﻥ ، ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ : ‏« ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﻘﻮﻣﻮﻥ ﻓﻲ ﺯﻣﺎﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﺜﻼﺙ ﻭﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ »
হযরত ইয়াজিদ বিন রূমান বলেনঃ লোকেরা হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির রমজান মাসে আদায় করতো।

{মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৩৮০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৪}
👉
ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺟﻤﻊ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻋﻠﻰ ﺍﺑﻰ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻓﻜﺎﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত হাসান রাঃ থেকে বর্ণিত। হযরত ওমর রাঃ লোকদেরকে হযরত উবায় বিন কাব রাঃ এর কাছে একত্র করে দিলেন। আর তিনি লোকদের বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতেন।

{সুনানে আবু দাউদ-১/২০২, সিয়ারু আলামিন নুবালা-১/৪০০}
👉
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﺍﻥ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺍﻣﺮﻩ ﺍﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﺎﻟﻴﻞ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত উবায় বিন কাব রাঃ বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ আমাকে এই মর্মে আদেশ দিলেন যে, আমি যেন লোকদেরকে তারাবীহ পড়াই। তখন বিশ রাকাত পড়া হতো। 
{কানযুল উম্মাল-৮/২৬৪}

ইমাম বায়হাকী,আল্লামা বাজী, কাশতাল্লানী,ইবনে কুদামা, ইবনে হাজার মক্কী, তাহতাবী, ইবনে হুমাম, বাহরুর রায়েক প্রণেতা রহঃ প্রমুখগণ এ ব্যাপারে একমত হয়ে বলেনঃ হযরত ওমর ফরুক রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহের উপরই সকলের সিদ্ধান্ত স্থির হয়। এবং এভাবেই চলতে থাকে।
ইংরেজ আমলের পূর্বে কোন একজন মুহাদ্দিস বা ফক্বীহ এটাকে অস্বিকার করেননি। আর সুন্নত হওয়ার জন্য সেটির নিরবচ্ছিন্ন হওয়া শর্ত। তাই এই বিশ রাকাত তারাবীহ সুন্নতে ফারূকী হয়েছে।

এ সেই ওমর রাঃ, যার ব্যাপারে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, যদি আমার পর কোন নবী হতো তাহলে নবী হতো ওমর।
তিনি আরো বলেছেনঃ দ্বীনের ব্যাপারে সবচে’ মজবুত হলেন ওমর রাঃ। যদি বিশ রাকাত তারাবীহ নামায বিদআত হয়, তাহলে হযরত ওমর রাঃ সহ সে সময়কার সমস্ত আনসার ও মুহাজির সাহাবীগণের বিদআতি হওয়ার আবশ্যক হয়।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ উবাই বিন কাব রাঃ তারাবীহ মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের মাঝে পড়াতেন। কোন একজনও এ ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করেনি। 
{মাজমুআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-৩৩/১১২}

📌হযরত উসমান রাঃ এর শাসনামল;
👉১০
হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে লোকেরা বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তেন। আর হযরত উসমান রাঃ এর শাসনামলে লম্বা কেরাতের কারণে লাঠির উপর ভর দিতেন। 
{বায়হাকী-৪/২৯৬}

হযরত উসমান রাঃ এর শাসনামলের একজন ব্যক্তির নামও বলা যাবে না, যে ব্যক্তি আট রাকাত পড়ে জামাত থেকে বেরিয়ে যেত। কিংবা কেউ বিশ রাকাত তারাবীহকে বিদআত বলেছে এমন একজন ব্যক্তিও পাওয়া যাবে না।
📌আলী রাঃ এর শাসনামলঃ
👉১১
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺴﻠﻤﻰ ﻋﻦ ﻋﻠﻰ ﻗﺎﻝ ﺩﻋﻰ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﺎﻣﺮ ﻣﻨﻬﻢ ﺭﺟﻼ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻗﺎﻝ ﻭﻛﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻳﻮﺗﺮ ﺑﻬﻢ
হযরত আবু আব্দুর রহমান সুলামী বলেনঃ হযরত হযরত আলী রাঃ রমজান মাসে কারীদের ডাকতেন। তারপর তাদের মাঝে একজনকে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতে হুকুম দিতেন। আর বিতিরের জামাত হযরত আলী নিজেই পড়াতেন।
{বায়হাকী-৪/৪৯৬}

ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺍﻟﺤﺴﻨﺎﺀ ﺍﻥ ﻋﻠﻴﺎ ﺍﻣﺮ ﺭﺟﻼ ﺍﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﺧﻤﺲ ﺗﺮﻭﻳﺤﺎﺕ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত আবুল হাসনা বলেনঃ হযরত আলী রাঃ এক ব্যক্তিকে পাঁচ তারাবীহ এর সাথে বিশ রাকাত পড়াতে হুকুম দিয়েছেন।
{সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪৮০৫, ৪৩৯৭, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৩৪৭৪}

হযরত আলী রাঃ নিজেই রাসূল সাঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি বিদআতের উৎপত্তি করবে তার ফরজ, নফল কিছুই কবুল হয় না। 
{বুখারী-২/১০৮৪, মুসলিম-১/১৪৪}

হযরত আলী রাঃ আজানের পর ইশার নামাযের জন্য আবার ডাকতে শুনে বললেনঃ এ বেদআতিকে মসজিদ থেকে বের করে দাও। 
{বাহরুর রায়েক}

তিনি এক ব্যক্তিকে ঈদগাহে ঈদের নামাযের আগে নফল পড়তে দেখে খুবই ধমক দিলেন লোকটিকে।
যদি বিশ রাকাত তারাবীহ বিদআত হতো, তাহলে এর হুকুম কেন দিলেন তিনি?
ইংরেজ শাসনের আগে একজন মুহাদ্দিস বা ফক্বীহের নাম বলা যাবে না, যারা আলী রাঃ এর শাসনামলের বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াকে অস্বিকার করেছেন।
কোন ব্যক্তি সেই জমানার একজন ব্যক্তির নামও বলতে পারবে না, যে ব্যক্তি আট রাকাত তারাবীহ পড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে যেত। এটাও মনে রাখতে হবে যে, এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল যে, বিশ রাকাতওয়ালী নামাযের নাম তারাবীহ হযরত আলী রাঃ বর্ণনা করেছেন। 
কোন খলীফায়ে রাশেদ বা কোন সাহাবী আট রাকাতের সাথে তারাবীহ শব্দ উচ্চারণ করেননি। হাদীস ভান্ডারে এর কোন প্রমাণ নেই।

👉১৩
ﻋﻦ ﺯﻳﺪ ﺑﻦ ﻭﻫﺐ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻥ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﺼﻠﻲ ﺑﻨﺎ ﻓﻲ ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﻴﻨﺼﺮﻑ ﻭﻋﻠﻴﻪ ﻟﻴﻞ ﻗﺎﻝ ﺍﻻ ﻋﻤﺶ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻠﺚ
হযরত জায়েদ বিন ওহাব বলেনঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ আমাদের তারাবীহ পড়িয়ে ফারিগ হতেন এমতাবস্থায় যে, তখনো রাত অনেক বাকি থাকতো, ইমাম আমাশ বলেনঃ তিনি বিশ রাকাত তারাবীহ আর তিন রাকাত বিতির পড়াতেন। 
{কিয়ামুল লাইল-১৫৭}

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ খোদ বলেছেন যে, সুন্নত ছেড়ে দেয়া উত্তম বেদআতের উপর মেহনত করার চেয়ে।
{হাকেম-১/১,৩}

যদি বিশ রাকাত তারাবীহ বিদআত হতো, তাহলে তিনি কেন পড়ালেন?
📌জমহুর সাহাবাগণ রাঃ-
👉১৪
ﺍﺑﻮ ﺣﻨﻴﻔﺔ ﻋﻦ ﺣﻤﺎﺩ ﻋﻦ ﺍﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺍﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﺧﻤﺲ ﺗﺮﻭﻳﺤﺎﺕ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ
হযরত ইমাম আবু হানীফা রহঃ, হযরত ইবরাহীম [মৃত্যু-৯৬হিজরী] থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় লোকেরা [সাহাবী ও তাবেয়ীগণ] রমজান মাসে পাঁচ তারবীহার সাথে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তো।

{কিতাবুল আসার লিআবী ইউসুফ}
👉১৫
ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﺑﻦ ﺭﻓﻴﻊ ﻗﺎﻝ ﻛﺎﻥ ﺍﺑﻰ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﺎﻟﻨﺎﺱ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺑﺎﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻼﺛﺔ
হযরত আব্দুল আজীজ বিন রফী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হযরত উবায় বিন কাব রাঃ লোকদেরকে রমজান মাসে মদীনা মুনাওয়ারায় বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির নামায পড়াতেন।
{মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}

👉১৬
ﻋﻦ ﻋﻄﺎﺀ ﻗﺎﻝ ﺍﺩﺭﻛﺖ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻫﻢ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﺛﻠﺜﺔ ﻭﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ ﺑﺎﻟﻮﺗﺮ
হযরত আতা [মৃত্যু-১১৪হিজরী] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি লোকদের [সাহাবী ও তাবেয়ীগণ] বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির পড়তে দেখেছি।

{মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}
📌তাবেয়ীগণ রহঃ-
হযরত সুয়াইদ বিন গাফালা যিনি বয়সে রাসূল সাঃ থেকে মাত্র তিন বছরের ছোট ছিলেন। তিনি ইমামতি করাতেন। হযরত আবুল হাজীব বলেনঃ
👉১৭
ﻛﺎﻥ ﻳﺆﻣﻨﺎ ﺳﻮﻳﺪ ﺑﻦ ﻏﻔﻠﺔ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻓﻴﺼﻠﻰ ﺧﻤﺲ ﺗﺮﻭﻳﺤﺎﺕ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺭﻛﻌﺔ
হযরত সুইয়াইদ বিন গাফালা রমজান মাসে আমাদের জামাতের সাথে পাঁচ তারবিহায় বিশ রাকাত নামায পড়াতেন।

{বায়হাকী-২/৪৯}
👉১৮
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺍﻟﺒﺨﺘﺮﻯ ﺍﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﺧﻤﺲ ﺗﺮﻭﻳﺤﺎﺕ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻼﺙ
হযরত আবুল বুখতারী রহঃ বলেনঃ তিনি রমজানে পাঁচ তারবিহায় বিশ রাকাত ও তিন রাকাত বিতির পড়তেন।

{মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৭৬৮৬}
👉১৯
ﻋﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﻋﺒﻴﺪ ﺍﻥ ﻋﻠﻰ ﺑﻦ ﺭﺑﻴﻌﺔ ﻛﺎﻥ ﻳﺼﻠﻰ ﺑﻬﻢ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺧﻤﺲ ﺗﺮﻭﻳﺤﺎﺕ ﻭﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻼﺙ
হযরত সাঈদ বিন আবু উবায়েদ থেকে বর্ণিত। হযরত আলী বিন রাবীয়া পাঁচ তারবিহা তথা বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির জামাতের সাথে পড়তেন। 
{মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}

এ সকল হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, বিশ রাকাতের সাথে তারাবীহ শব্দ এবং বিশ রাকাত তারাবীহের আমল তাবেয়ীগণের মাঝে বিনা প্রতিবাদে নির্বিঘ্নে প্রচলিত ছিল। আর পুরো খাইরুল কুরুনে কোন এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা যাবে না, যে ব্যক্তি বিশ রাকাত তারাবীহকে অস্বিকার করেছেন বা অপছন্দ করেছেন। কিংবা বিশ রাকাত তারাবীহকে বিদআত বলেছেন, বা আট রাকাত জামাতের সাথে পড়ে মসজিদ থেকে বেরিয়ে গেছেন। পুরো খাইরুল কুরুনের মাঝে আট রাকাতের সাথে তারাবীহ শব্দ ব্যবহার করেছেন এরকম কোন প্রমাণ কোথাও বিদ্যমান নেই।
মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীহ
মদীনা তায়্যিবাহর মাঝে হযরত ওমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ, হযরত আলী রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহই পড়া হতো। আজো মদীনা মুনাওয়ারায় বিশ রাকাত তারবীহই পড়া হয়। হযরত আয়শা রাঃ ও মদীনা মুনাওয়ারায় অবস্থান করতেন। তিনিই রাসূল সাঃ এর এ ফরমান বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার দ্বীনের মাঝে বেদআত বের করবে, তার কাজটি পরিত্যাজ্য। যদি বিশ রাকাত তারাবীহের নামায বিদআত ও নাজায়েজ হতো, তাহলে হযরত আয়শা রাঃ বছরের পর বছর এর উপর চুপ করে বসে থাকতেন না।

হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ ও মদীনায় অবস্থান করছিলেন। তিনি ঐ হাদীসের রাবী। যাতে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেকটি বিদআত গোমরাহী আর প্রত্যেক গোমরাহী জাহান্নামে নিক্ষেপকারী।
অথচ তারই সামনে অর্থ শতাব্দী পর্যন্ত মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীহ জামাতের সাথে পড়া হচ্ছিল, অথচ তিনি এর বিরুদ্ধে কোন কথা বলেন নি। এটা হতে পারে না।
বাইতুল্লাহ শরীফে বিশ রাকাত তারাবীহ
মক্কা মুকাররমায় হযরত আতা বিন আবী রাবাহ রহঃ [মৃত্যু ১১৪হিজরী] বলেনঃ ﺍﺩﺭﻛﺖ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻭﻫﻢ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﺛﻼﺛﺔ ﻭﻋﺸﺮﻭﻥ ﺭﻛﻌﺔ ﺑﺎﻟﻮﺗﺮ তথা আমি লোকদের [সাহাবা ও তাবেয়ীগণ] বেতের নামাযসহ ২৩ রাকাত পড়তে দেখেছি। 
{মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}

আর ইমাম ইবনে আবী মালিকাহ [মৃত্যু ১১৭হিজরী] লোকদের মক্কায় বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতেন। 
{মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩}

ইমাম শাফেয়ী রহঃ [মৃত্যু ২০৪হিজরী] বলেনঃ আমি স্বীয় শহর মক্কায় লোকদের বিশ রাকাত তারাবীহ পড়া অবস্থায়ই পেয়েছি। 
{তিরমিজী-১/১৬৬}

আর আজ পর্যন্ত মক্কা মুকাররমায় বিশ রাকাত তারাবীহই পড়া হচ্ছে।
কুফায় বিশ রাকাত তারাবীহ
কুফায় হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির পড়াতেন। 
{মুখতাসার কিয়ামুল লাইল-১৫৭}

ইমাম ইবরাহীম নাখয়ী রহঃ [মৃত্যু-৯৬হিজরী] বলেনঃ লোকেরা [সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণ] রমজান মাসে পাঁচ তারবীহা [বিশ রাকাত] পড়তেন। 
{কিতাবুল আসার লিআবী ইউসুফ-৪১}

বসরায় বিশ রাকাত তারাবীহ
হযরত ইউনুস রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি আবুল আশআস [মৃত্যু ৮৩হিজরী] এর ফেতনার পূর্বে জামে মসজিদ বসরাতে দেখেছি যে, হযুরত আব্দুর রহমান বিন আবী বাকরা [মৃত্যু ৯১হিজরী] হযরত সাঈদ বিন আবীল হাসান [মৃত্যু ১০০হিজরী] এবং হযরত ইমরানুল আব্দী লোকদের পাঁচ তারাবীহ [বিশ রাকাত] পড়াতেন। 
{কিয়ামূল লাইল-১৫৮}

মোটকথা, পুরো খাইরুল কুরুনের মাঝে বিশ রাকাত তারাবীহকে অস্বিকারকারী একজনও ছিল না। কোন ইসলামী রাজত্বে এটাকে অস্বিকার করা হয়নি। এটাকে অস্বিকার করে সর্ব প্রথম ইংরেজরা উপমহাদেশে আসার পর কতিপয় নামধারী আহলে হাদীস গায়রে মুকাল্লিদ গ্রুপ।
👉চার ইমাম রহঃ এর বক্তব্যঃ
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ বলেনঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত চার মাযহাবে সীমাবদ্ধ। এ চার ইমামের মাঝে প্রথম ইমাম হলেন ইমাম আবু হানীফা রহঃ [মৃত্যু ১৫০ হিজরী] ও বিশ রাকাত তারাবীহের প্রবক্তা। 
[ফাতাওয়া কাজীখান-১/১১২}

ইমাম মালিক রহঃ এর একটি বক্তব্য বিশ রাকাতের পক্ষে, দ্বিতীয় বক্তব্য ৩৬ রাকাতের পক্ষে। [যাতে বিশ তারাবীহ আর ১৬ রাকাত নফল] 
{হেদায়াতুল মুজতাহিদ-১/১৬৭}

ইমাম শাফেয়ী রহঃ বিশ রাকাতের প্রবক্তা। 
{আলমুগনী-২/১৬৭}

ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহঃ এর মুখতার বক্তব্যও বিশ রাকাতের পক্ষে।
[আলমুগনী-২/১৬৭}

চার মাযহাবের ফিক্বহের ইবারতের মাঝে কোন একটি ইবারতেও শুধু আট রাকাত তারাবীহকে সুন্নত আর বিশ রাকাততে বিদআত বলা হয়নি।
সাহাবাগণের নিরবচ্ছিন্ন আমল ও ইজমার আলোকে তারাবীহ নামায বিশ রাকাত। সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে এ আমলই সারা পৃথিবীতে চালু হয়েছে। যা আজো সারা পৃথিবীতে আমল হয়ে আসছে। নব্য ফিতনা কতিপয় আহলে হাদীস নামধারী ছাড়া মসজিদে নববী এবং বাইতুল্লাহসহ সারা পৃথিবীতে তা সকল মুসলমাগণ আমল করে আসছেন।
এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে আমলী ইজমা হয়েছিল।

ইবনে কুদামা হাম্বলী রহঃ [মৃত্যু ৫৯৫ হিজরী] আলমুগনী গ্রন্থের ২য় খন্ডের ১৬৭ নং পৃষ্ঠায়, আল্লামা কাশতাল্লানী শাফেয়ী রহঃ [মৃত্যু ৯২৩ হিজরী] “ইরশাদুস সারী” এর ৩য় খন্ডের ৫১৫ নং পৃষ্ঠায় বিশ রাকাতের উপর সাহাবাগণের ইজমার কথা উল্লেখ করেছেন।
মোল্লা আলী কারী হানাফী রহঃ [মৃত্যু ১০১৪হিজরী] “শরহুন নুকায়া” এর ২য় খন্ডের ২৪১ পৃষ্ঠায় এবং আল্লামা সাইয়্যেদ মুরতাজা জুবাইদী [মৃত্যু-১২০৫ হিজরী] সাহেব “ইতহাফুল সাদাতুল মুত্তাকীন” কিতাবের ৩য় খন্ডের ৭০০ নং পৃষ্ঠায় সাহাবাগণের এ ইজমাকে নকল করেছেন।
📌উম্মতে মুসলিমার ইজমাঃ
১২৮৪ হিজরীর ইংরেজ আমলের আগে পৃথিবীর কোন মসজিদে রমজানের পুরো মাস মসজিদে আট রাকাত তারাবীহ জামাতের সাথে পড়ার কোন নজীর নেই। একটি মসজিদের নাম কোন কথিত আহলে হাদীস দেখাতে পারবে না। না মসজিদে নববীতে কোনদিন আট রাকাত তারাবীহ পড়া হয়েছে। না বাইতুল্লায়। না পৃথিবীর কোন মুসলিম পল্লিতে। রানী ভিক্টোরিয়ার আমলে সর্বপ্রথম এ বিদআতের সূচনা হয়।
এর আগে সমগ্র উম্মতে মুসলিমা ঐক্যমত্বের ভিত্তিতে ২০ রাকাত ও এর চেয়ে তারাবীহ পড়ে আসছেন। 
দেখুন-
👉১- মিরকাত-৩/১৯৪।

👉২- ইতহাফুল সাদাতিল মুত্তাকীন-৩/৪২২।
👉৩- আনারাতুল মাসাবীহ-১৮।
👉৪- হাশিয়ায়ে শরহে বেকায়া মাওলানা আব্দুল হাই লৌক্ষবী রহঃ।
👉৫- উমদাতুল কারী-৫/২৬৭।
👉৬- ফাতাওয়ায়ে কাজীখান-১১০।
👉৭- আলমুগনী-১/৮০৩।
👉৮- শরহে মুকান্না’-১/৮৫২।
👉৯- শরহুল বুখারী লিলকাসতাল্লানী।
👉১০- আওযাজুল মাসালেক-১/৩৯০।
👉১১- শরহে নুকায়া-১০৪।
👉১২- আউনুল বারী-২/৩০৭।
👉১৩- কিতাবুল আজকার-৮৩।
👉১৪- ফাতহুল কাদীর-১/৪০৭।
👉১৫- আরফুশ শাজী-২৩০।
👉১৬- আলবাহরুর রায়েক-২/৬৬।
👉১৭- ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৫১১।
👉১৮- বাদায়েউস সানায়ে-১/২৮৮।
👉১৯- আলমাসাবীহ-১৬।
👉২০- হালবী শরহে মুনিয়্যা-৩৮৮।
.

৮ রাকাত তারবীহের কোন প্রমাণ সহীহ হাদীস নেইঃ
📌৮ রাকাত তারাবীহের পক্ষে গায়রে মুকাল্লিদদের দলিলসমূহঃ
👉১নং দলিল:
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻠﻤﺔ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺃﻧﻪ ﺃﺧﺒﺮﻩ : ﺃﻧﻪ ﺳﺄﻝ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ﻛﻴﻒ ﻛﺎﻧﺖ ﺻﻼﺓ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ؟ ﻓﻘﺎﻟﺖ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ ﻋﻠﻰ ﺇﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ ﻳﺼﻠﻲ ﺃﺭﺑﻌﺎ ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭﻃﻮﻟﻬﻦ ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺃﺭﺑﻌﺎ ﻓﻼ ﺗﺴﻞ ﻋﻦ ﺣﺴﻨﻬﻦ ﻭﻃﻮﻟﻬﻦ ﺛﻢ ﻳﺼﻠﻲ ﺛﻼﺛﺎ . ﻗﺎﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻓﻘﻠﺖ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺗﻨﺎﻡ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﺗﻮﺗﺮ ؟ . ﻓﻘﺎﻝ ﻳﺎ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﺇﻥ ﻋﻴﻨﻲ ﺗﻨﺎﻣﺎﻥ ﻭﻻ ﻳﻨﺎﻡ ﻗﻠﺒﻲ ‏( ﺻﺤﻴﺢ ﺍﻟﺒﺨﺎﺭﻯ - ﺃﺑﻮﺍﺏ ﺍﻟﺘﻬﺠﺪ، ﺑﺎﺏ ﻗﻴﺎﻡ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺑﺎﻟﻠﻴﻞ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻏﻴﺮﻩ 1/154
হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাঃ এর কাছে জানতে চান নবীজী সাঃ এর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না।

(সহীহ বুখারী-১/১৫৪)
জবাব:
১-
এই হাদিসে ইযতিরাব তথা অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা থাকায় এ দিয়ে দলিল দেয়া ঠিক নয়। আল্লামা কুরতুবী রহঃ বলেন-আমি আয়েশা রাঃ এর এই বর্ণনাটি অনেক আহলে ইলমদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি অনেকেই এতে অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন।

(ফাতহুল বারী শরুহুল বুখারী-৩/১৭)
👉২-
খোদ হযরত আয়েশা রাঃ থেকে ১৩ রাকাত তারাবীহের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। সুতরাং হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা দূর করতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন-“সঠিক কথা হল এ ব্যাপারে আমি যা উল্লেখ করেছি এগুলো সব ভিন্ন সময় ও ভিন্ন পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল” অর্থাৎ নবীজী একেক সময় একেক রাকাত নামায পড়েছেন তারাবীহের ক্ষেত্রে।
(ফাতহুল বারী-৩/১৭)

এর মাধ্যমে কথিত আহলে হাদিসদের “৮ রাকাতের মাঝেই তারাবীহ নামায সীমাবদ্ধ এরচে’ বেশী তারাবীহ নামায নেই” এই দাবিটি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। 
খোদ আহলে হাদিসদের আলেম মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী বলেন-নিশ্চয় একথা প্রমাণিত যে রাসূল সাঃ ১৩ রাকাত তারাবীহ পড়েছেন ফজরের দু’রাকাত সুন্নত ছাড়াই।
(তুহফাতুল আহওয়াজী-২/৩)

👉৩-
এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল নবীজী সাঃ এক সালামে ৪, ৪ রাকাত করে তারাবীহ আর শেষে এক সালামে ৩ রাকাত বিতর পড়েছেন, অথচ কথিত আহলে হাদিসদের আমল এর বিপরীত। তারা তারাবীহ দুই দুই রাকাত করে পড়েন। আর বিতর এক রাকাত বা তিন রাকাত দুই সালামে পড়েন।

সুতরাং যেই হাদিস দলিলদাতাদের কাছে আমলহীন এর দ্বারা দলিল দেয়া যায়?
👉৪-
আসল কথা হল এই যে, এই হাদিসটি তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট। এতে তারাবীহের কথা বর্ণিত নয়। নিম্নে এ ব্যাপারে কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করা হল।
হাদিসটিতে মূলত তাহাজ্জুদের বর্ণনা এসেছে একথার দলিল

👉১-
হাদিসের শব্দ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻳﺰﻳﺪ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻻ ﻓﻲ ﻏﻴﺮﻩ (নবীজী সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া অন্য সময় বাড়াননা) 
এটাই বুঝাচ্ছে যে, প্রশ্নটি করা হয়েছিল রামাযান ছাড়া অন্য সময়ে যে নামায নবীজী পড়তেন তা রামযানে বাড়িয়ে দিতেন কিনা?

এই প্রশ্নটি এজন্য করা হয়েছে যেহেতো বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে রাসূল সাঃ রামাযানে আগের তুলনায় অনেক নামায পড়তেন ও ইবাদত করতেন, তাই এই প্রশ্নটি করাটা ছিল স্বাভাবিক।
আর রামযান ছাড়া কি তারাবীহ আছে?
যে রামাযানের আগেই তারাবীহ আর বিতর মিলিয়ে ১৩ রাকাত নবীজী পড়তেন? 
নাকি ওটা তাহাজ্জুদ? 
তাহাজ্জুদ হওয়াটাই কি সঙ্গত নয়?
সুতরাং এটাই স্পষ্ট বুঝা যায় তারাবীহ নয় প্রশ্ন করা হয়েছে তাহাজ্জুদ নিয়ে যে, নবীজী তাহাজ্জুদের নামায রামাযান ছাড়া যে ক’রাকাত পড়তেন তা থেকে রামাযানে বাড়িয়ে পড়তেন কিনা? 
এর জবাবে আয়েশা রাঃ বললেন-১৩ রাকাত থেকে বাড়াতেননা তাহাজ্জুদ নামায।

👉২-
এই হাদিসের শেষাংশে এই শব্দ আছে যে ﻗﺎﻟﺖ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻓﻘﻠﺖ ﻳﺎﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺗﻨﺎﻡ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﺗﻮﺗﺮ ؟ (তারপর আয়েশা রাঃ বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার আগে ঘুমান?) এই বিষয়টি তারাবীহ এর ক্ষেত্রে কল্পনাতীত যে নবীজী সাঃ তারাবীহ নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়েন আর সাহাবীরা বিতর পড়ার জন্য নবীর জন্য অপেক্ষমাণ থাকেন। বরং এটি তাহাজ্জুদ এর ক্ষেত্রে হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত নয়কি?

👉৩-
মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি। বরং তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ বিন নসর মারওয়াজী তার কিতাব “কিয়ামুল লাইল” এর “ ﻋﺪﺩ ﺍﻟﺮﻛﻌﺎﺕ ﺍﻟﺘﻰ ﻳﻘﻮﻡ ﺑﻬﺎ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﻟﻠﻨﺎﺱ ﻓﻰ ﺭﻣﻀﺎﻥ ”(রামযানে ইমাম কত রাকাত তারাবীহ পড়বে) অধ্যায়ে অনেক হাদিস আনলেও আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি সহীহ হওয়া সত্বেও তিনি আনেননি। সাথে এদিকে কোন ইশারাও করেননি।

👉৪-
মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার অধ্যায়ের পরিবর্তে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। 
যেমন ইমাম বুখারী রহঃ তার প্রণিত বুখারী শরীফে এই হাদিসটি নিম্ন বর্ণিত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন-

👉(ক) বিতর অধ্যায়-(১/১৩৫)
👉(খ) নবীজী সাঃ এর রাতে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতা রামযানে ও রামযান ছাড়া-(১/১৫৪)
👉(গ) রামযানে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতার ফযীলত অধ্যায়-(১/২৬৯)
👉(ঘ) নবীজী সাঃ এর দু’চোখ ঘুমায় মন ঘুমায়না-(১/৫০৩)
প্রথম অধ্যায়ে বিতরের রাকাত সংখ্যা আর দ্বিতীয় অধ্যায়ে তাহাজ্জুদ রামাযানে বেশি পড়তেন কিনা তা জানা আর তৃতীয় অধ্যায়ে রামাযানে বেশি বেশি নামাযের ফযীলত আর চতুর্থ অধ্যায়ে নবীজী ঘুমালে যে তার অযু ভাঙ্গেনা তার কারণ বর্ণনা জন্য হাদিস আনা হয়েছে। তারাবীহের রাকাত সংখ্যা বুঝানোর জন্য কোথায় এসেছে এই হাদিস?
👉৫-
আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এই হাদিসের ব্যাক্ষায় বলেন-আর আমার কাছে এটি প্রকাশিত হয়েছে যে, ১১ রাকাতের থেকে না বাড়ানোর রহস্য এটি যে, নিশ্চয় তাহাজ্জুদ ও বিতরের নামায রাতের নামাযের সাথে খাস। আর দিনের ফরয যোহর ৪ রাকাত আর আসর সেটাও ৪ রাকাত আর মাগরীব হল ৩ রাকাত যা দিনের বিতর। সুতরাং সাযুজ্যতা হল-রাতের নামায দিনের নামাযরের মতই সংখ্যার দিক থেকে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে। আর ১৩ রাকাতের ক্ষেত্রে সাযুজ্যতা হল-ফযরের নামায মিলানোর মাধ্যমে কেননা এটি দিনের নামাযই তার পরবর্তী নামাযের জন্য।
(ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী-৩/১৭)

ইবনে হাজার রহঃ এর এই রহস্য বা হিকমত বর্ণনা কি বলছেনা এই হাদিস দ্বারা তাহাজ্জুদ উদ্দেশ্য তারাবীহ নামায নয়?
এই বক্তব্যে তাহাজ্জুদের কথা স্পষ্টই উল্লেখ করলেন ইবনে হাজার রহঃ।
তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের মাঝে পার্থক্য
কথিত আহলে হাদিসরা বলেন “তাহাজ্জুদ আর তারাবীহ একই” 
তাদের এই দাবিটি ভুল নিম্নবর্ণিত কারণে-

👉১-
তাহাজ্জুদের মাঝে ডাকাডাকি জায়েজ নয় তারাবীহতে জায়েজ।

👉২-
তারাবীহের সময় ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদের সময় নির্ধারিত নয় তবে উত্তম ঘুমের পর।

👉৩-
মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন লিখেছেন।

👉৪-
তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম কুরআন দ্বারা প্রমাণিত যথা সূরা ইসারার ৭৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻴْﻞِ ﻓَﺘَﻬَﺠَّﺪْ ﺑِﻪِ ﻧَﺎﻓِﻠَﺔً ﻟَّﻚَ ﻋَﺴَﻰ ﺃَﻥ ﻳَﺒْﻌَﺜَﻚَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻣَﻘَﺎﻣًﺎ ﻣَّﺤْﻤُﻮﺩًﺍ অর্থাৎ আর রাতে তাহাজ্জুদ পড় এটি তোমার জন্য নফল, অচিরেই তোমাকে তোমার রব প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন।

আর তারাবীহের ব্যাপারে আল্লাহর নবী বলেন-নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা রামযানের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন আর আমি তোমাদের উপর এতে কিয়াম করাকে সুন্নত করেছি (সুনানে নাসায়ী-১/৩০৮)
সুতরাং বুঝা গেল তাহাজ্জুদ আল্লাহর আয়াত আর তারাবীহ নবীজীর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত।

👉৫-
তাহাজ্জুদের হুকুম মক্কায় হয়েছে আর তারাবীহের হুকুম মদীনায় হয়েছে।

👉৬-
ইমাম আহমাদ রহঃ ও তারাবীহ তাহাজ্জুদ আলাদা বিশ্বাস করতেন(মাকনা’-১৮৪)

👉৭-
ইমাম বুখারী রহঃ এর ক্ষেত্রে বর্ণিত তিনি রাতের প্রথমাংশে তার সাগরীদদের নিয়ে তারাবীহ পড়তেন আর শেষ রাতে একাকি তাহাজ্জুদ পড়তেন। 
(ইমাম বুখারী রহঃ এর জীবনী)

👉৮-
তাহাজ্জুদ এর নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত অর্থাৎ বিতরসহ বেশি থেকে বেশি ১৩ রাকাত আর কমপক্ষে ৭ রাকাত। আর তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার ক্ষেত্রে খোদ আহলে হাদিস ইমামদের স্বাক্ষ্য যে এর কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নবীজী সাঃ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত নয়।
স্মর্তব্য
তারীখুল খুলাফা তথা খুলাফায়ে রাশেদীনের ইতিহাস অনুযায়ী হযরত ওমর রাঃ ১৫তম হিজরীতে তারাবীহ নামাযের জামাতের শুরু করেন। আর হযরত সাইয়্যেদা আয়শা রাঃ ৫৭হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন। পুরো ৪২ বছর আম্মাজান আয়শা রাঃ হুজরার নিকটবর্তী মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবীহের বেদআত জারী হল, অথচ যেই আম্মাজান আয়শা সিদ্দিকা রাঃ নিজেই রাসূল সাঃ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, যে ব্যক্তি দ্বীনের মাঝে দ্বীন হিসেবে নতুন বিষয় উদ্ভাবন করবে তার সে বিষয় পরিত্যাজ্য।
[বুখারী, মুসলিম] সেই আয়শা রাঃ থেকে একথা প্রমানিত নয় যে, তিনি ৪২ বছরের মাঝে কোন দিন তাহাজ্জুদওয়ালী হাদীসটিকে বিশ রাকাত তারাবীহের বিরুদ্ধে দলীল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এখন পথ দুইটি। হয়তো এটা মানা হবে যে, এ হাদীসের সাথে তারাবীহ বিশ রাকাতের কোন সম্পর্ক নেই। যা আয়শা রাঃ ভাল করেই বুঝতে পেরেছেন। তাই তিনি কোন কথাই বলেননি মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীহ হতে দেখে।

কিংবা আম্মাজান আয়শা রাঃ তার বর্ণিত হাদীসটিকে বিশ রাকাত তারাবীহের বিরোধী মনে করতেন, কিন্তু তার মনে সুন্নতের মোহাব্বত আর বিদআতের প্রতি এতটুকু ঘৃণা ছিল না, যতটুকু আজকালের কথিত আহলে হাদীস নামধারী অতি ধার্মিক গায়রে মুকাল্লিদদের রয়েছে। এমনটি কেবলমাত্র রাফেজী শিয়ারাই বলতে পারে। অন্য কেউ এমন কথা বলতে পারে না।
📌২ নং দলিলঃ
ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ : ﺻﻠﻰ ﺑﻨﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻲ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺛﻤﺎﻥ ﺭﻛﻌﺎﺕ ﻭﺍﻟﻮﺗﺮ ﻓﻠﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﺎﺑﻠﺔ ﺍﺟﺘﻤﻌﻨﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻭﺭﺟﻮﻧﺎ ﺃﻥ ﻳﺨﺮﺝ ﺇﻟﻴﻨﺎ ﻓﻠﻢ ﻧﺰﻝ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺣﺘﻰ ﺃﺻﺒﺤﻨﺎ ﻓﺪﺧﻠﻨﺎ ﻋﻠﻰ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻘﻠﻨﺎ ﻟﻪ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﺟﻮﻧﺎ ﺃﻥ ﺗﺨﺮﺝ ﺇﻟﻴﻨﺎ ﻓﺘﺼﻞ ﺑﻨﺎ ﻓﻘﺎﻝ : ﻛﺮﻫﺖ ﺃﻥ ﻳﻜﺘﺐ ﻋﻠﻴﻜﻢ ﺍﻟﻮﺗﺮ ‏( ﻗﻴﺎﻡ ﺍﻟﻠﻴﻞ 90- )
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-রাসূল সাঃ আমাদের সাথে রামযানে ৮ রাকাত নামায ও বিতর নামায পড়লেন, তারপর যখন পরদিন হল আমরা মসজিদে একত্রিত হলাম এবং আকাংখা করলাম নবীজী সাঃ আমাদের কাছে আসবেন। আমরা মসজিদে অবস্থান করতে লাগলাম। প্রভাত হয়ে গেল। তখন আমরা গেলাম নবীজী সাঃ এর কাছে। তাকে বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আকাংখী ছিলাম আপনি আমাদের কাছে যাবেন এবং আমাদের নিয়ে নামায পড়বেন, তখন তিনি বললেন-আমি এটি পছন্দ করছিলামনা যে, তোমাদের উপর বিতর ফরয হয়ে যাক।
(কিয়ামুল লাইল-৯০)

জবাবঃ
এই হাদিসটি নিয়ে কথিত আহলে হাদিসরা সবচে’ বেশি খুশি হতে দেখা যায়। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল এই হাদিসটি দুর্বল। শুধু একজন নয় এই হাদিসের তিনজন রাবীর ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেন তারা গ্রহণযোগ্য নয়। দেখুন মুহাদ্দিসীনে কিরাম কি বলে এই হাদিসের বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে।
ইবনে হুমাইদ রাজী
👉১. হাফেজ জাহাবী রহঃ বলেন-তিনি দুর্বল

👉২. ইয়াকুব বিন শি’বা রহঃ বলেন-তিনি অনেক অগ্রহণীয় হাদিস বর্ণনা করেন।
👉৩. ইমাম বুখারী রহঃ বলেন-এতে আপত্তি আছে।
👉৪. আবু জুরআ রহঃ বলেন-তিনি মিথ্যাবাদী।
👉৫. ইসহাক কু’সজ রহঃ বলেন-আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি মিথ্যাবাদী।
👉৬. সালেহ জাযরাহ রহঃ বলেন-প্রত্যেক বিষয়ে সে হাদিস বর্ণনা করে। আল্লাহর উপর অধিক অপবাদ আরোপকারী আমি তাকে ছাড়া কাউকে দেখিনি। সে লোকদের হাদিস পরিবর্তন করে ফেলে।
👉৭. আল্লামা ইবনে খারাশ রহঃ বলেন-আল্লাহর কসম সে মিথ্যাবাদী
👉৮. ইমাম নাসায়ী রহঃ বলেন-সে গ্রহণযোগ্য নয়।
(মিযানুল ই’তিদাল-৩/৪৯-৫০)

ইয়াকুব বিন আব্দুল্লাহ আশআরী
ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন-সে শক্তিশালী নয় 
(মিযানুল ই’তিদাল-৩/৩২৪)

ঈসা বিন জারিয়া:
১. আল্লামা ইয়াহইয়া বিন মায়ীন রহঃ বলেন-তার কাছে অগ্রহণীয় হাদিস আছে।
২. ইমাম নাসায়ী বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়।
৩. ইমাম নাসায়ী বলেন-তার হাদিস পরিত্যাজ্য।
৪. আবু দাউদ রহঃ বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়।
৫. আল্লামা জাহাবী বলেন-তিনি দুর্বলদের মাঝে শামীল (মিযানুল ই’তিদাল-২/৩১১)
এছাড়া এ হাদিসটি “বুলুগুল মারাম” কিতাবে হযরত জাবের রাঃ থেকেই বর্ণিত কিন্তু সেখানে রাকাত সংখ্যার কথা উল্লেখ নেই। দেখুন বুলুগুল মারাম-৪২-৪৩।
এছাড়াও এ হাদিসে আরেকটি সমস্যা আছে, তাহল-এই হাদিসে বিতর ফরয হবার