কার উপর
কুরবানী ওয়াজিবমাসআলা : ১. প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন
মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২
সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর
করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা,
বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি,
প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও
অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর
আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫)
রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি,
অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য
বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া।
সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর
একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে
প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে
তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও
উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।-আলমুহীতুল
ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫
মাসআলা ২. কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা
বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন
থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস
৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২
মাসআলা : ৩. মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়।
যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা
মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে
মাসআলা : ৪. নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে
সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও
উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার
সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা
বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার
মাসআলা : ৫. যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে
থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮
যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার
কুরবানী ওয়াজিব নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান
বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার
নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী
মাসআলা : ৬. নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী
অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।-
মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫
দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম
মাসআলা : ৭. দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা
নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে
তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -
মাসআলা : ৮. কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে
কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু
করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি
মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে
কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে
জীবিত সদকা করে দিবে।-বাদায়েউস সানায়ে
প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে
মাসআলা : ৯. যেসব এলাকার লোকদের উপর
নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের
কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা
কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয়
ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম
কুরবানী করা জায়েয।-সহীহ বুখারী ২/৮৩২,
৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
মাসআলা : ১০. ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত
করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো। -
আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫,
কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই
মাসআলা : ১১. কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই
পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে।
যদি(সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো
সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি
জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ
হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।-বাদায়েউস
৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১
কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে
মাসআলা : ১২. উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও
কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু
পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী
জায়েয নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস
মাসআলা : ১৩. যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয
নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। -কাযীখান
মাসআলা : ১৪. উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে।
কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও
কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি
বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে,
বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও
জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের
উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো
অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে
-কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে
মাসআলা : ১৫. একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা
একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু
মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না।
গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে।
অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -
মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯,
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮
মাসআলা : ১৬. সাতজনে মিলে কুরবানী করলে
সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম
পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড়
এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না।
মাসআলা : ১৭. উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং
যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয়
কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮,
কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে
মাসআলা : ১৮. যদি কেউ আল্লাহ তাআলার
উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার
কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে
অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী
তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯
কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ
মাসআলা : ১৯. কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে
নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও
দুটোই সহীহ হবে।-তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬,
মাসআলা : ২০. শরীকদের কারো পুরো বা
উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী
মাসআলা : ২১. যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা
দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা
করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে
কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা
দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়,
কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে
করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে
করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে
-কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে
মাসআলা : ২২. কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া
আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস
মাসআলা : ২৩. যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা
রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন
কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫,
দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল
রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৪. এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা
পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা
জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী
দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৫. যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত
পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না
দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। -বাদায়েউস
যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে
মাসআলা : ২৬. যে পশুর শিং একেবারে গোড়া
ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর
শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং
একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয। -
তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮,
সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪,
কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৭. যে পশুর লেজ বা কোনো কান
তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়।
অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী
তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে
নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ
ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২,
মাসআলা : ২৮. যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক
নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে
১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭,
নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে
মাসআলা : ২৯. কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার
আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া
তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর
ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব।
হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি
কুরবানী করাই উত্তম। -সুনানে বায়হাকী
সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯,
মাসআলা : ৩০. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা
জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায়
সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন
সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। -কাযীখান
পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে
মাসআলা : ৩১. কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু
যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে
কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর
না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে।
ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই
পারবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯,
সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯,
পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা
মাসআলা : ৩২. যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর
হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের
দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর
করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা
আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ.
মাসআলা : ৩৩. বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। -
নিজের কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা
মাসআলা : ৩৪. কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা
নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে
এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে
উপস্থিত থাকা ভালো। -মুসনাদে আহমদ ২২৬৫৭,
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩, আলমগীরী
জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে
মাসআলা : ৩৫. অনেক সময় জবাইকারীর জবাই
না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে
এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে
‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি
একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না
জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার
কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের আগে উপকৃত হওয়া
মাসআলা : ৩৬. কুরবানীর পশু কেনার পর বা
পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন
করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি।সুতরাং
পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে
হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে।-
আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস
কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০
কুরবানীর পশুর দুধ পান করা
মাসআলা : ৩৭. কুরবানীর পশুর দুধ পান করা
জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে
কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না।
প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে
দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে
তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে
সদকা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস
১৭/২৭৭, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯, কাযীখান
মাসআলা : ৩৮. কয়েকজন মিলে কুরবানী করার
জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার
ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার
দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের
স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস
৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান
মাসআলা : ৩৯. কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই
জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম।
সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে
জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।-
৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩
মাসআলা : ৪০. মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা
মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি
কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক
গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং
আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত
কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত
নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের
সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭,
ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬,
কুরবানীর গোশত জমিয়ে রাখা
মাসআলা : ৪১. কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও
জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয।-বাদায়েউস
৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক
মাসআলা : ৪২. শরীকে কুরবানী করলে ওজন
বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১
মাসআলা : ৪৩. কুরবানীর গোশতের এক
মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন
প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি
নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০
মাসআলা : ৪৪. কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি
করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে
হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস
কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১
জবাইকারীকে চামড়া, গোশত দেওয়া
মাসআলা : ৪৫. জবাইকারী, কসাই বা কাজে
সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর
কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে
না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি
হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া
মাসআলা : ৪৬. ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই
পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা
মাসআলা : ৪৭. জবাইয়ের পর পশু নিস্তেজ হওয়ার
চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা
মাসআলা : ৪৮. এক পশুকে অন্য পশুর সামনে
না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট না
কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া
মাসআলা : ৪৯. কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য
ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।-ইলাউস সুনান
অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে
মাসআলা : ৫০. অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে
ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির
আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি
সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে
তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে
কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে
মাসআলা : ৫১. কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায়
যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে
ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী
গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়)
আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।-
সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯
মাসআলা : ৫২. পাগল পশু কুরবানী করা
এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং
চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না।
আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/২৩০,
সানায়ে ৪/২১৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৫২
নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া
মাসআলা : ৫৩. কুরবানীদাতার জন্য নিজ
খাওয়া মুস্তাহাব। -সূরা হজ্ব ২৮, সহীহ মুসলিম
মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯০৭৮, বাদায়েউস
মাসআলা : ৫৪. কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও
টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে
তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।
হাজীদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী
মাসআলা : ৫৫. যেসকল হাজী কুরবানীর
মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার
ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন
থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আযহার
করা জরুরি হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩,
মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫,
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
মাসআলা : ৫৬. সামর্থ্যবান ব্যক্তির
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ
কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত
করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ
কুরবানী দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ ২/২৯, জামে
তিরমিযী ১/২৭৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮,
কোন দিন কুরবানী করা উত্তম
মাসআলা : ৫৭. ১০, ১১ ও ১২ এ তিন দিনের মধ্যে
কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন,
তৃতীয় দিন। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬
খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী
মাসআলা : ৫৮. খাসিকৃত ছাগল দ্বারা
উত্তম। -ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল
জীবিত ব্যক্তির নামে কুরবানী
মাসআলা : ৫৯. যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে
সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ
ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য
কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্রে
মাসআলা : ৬০. বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য
দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।
কুরবানীদাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবাই
মাসআলা : ৬১. কুরবানীদাতা এক স্থানে আর
ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের
বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায়
এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই
কুরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা
মাসআলা : ৬২. কুরবানীর চামড়া
ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার
করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা
করা জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া
কুরবানীর চামড়া বিক্রির নিয়ত
মাসআলা : ৬৩. কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি
সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার
না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও
নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা
দেওয়া জরুরি। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১,
কুরবানীর শেষ সময়ে মুকীম হলে
মাসআলা : ৬৪. কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে
থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার
মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব
পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয়
মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কুরবানী
থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে
না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, ফাতাওয়া
৩/৩৪৬, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯
কুরবানীর পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক
মাসআলা : ৬৫. এক কুরবানীর পশুতে আকীকা,
কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের
ইবাদত আদায় হয়ে যাবে।-বাদায়েউস সানায়ে
রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, আলমাবসূত সারাখছী
আলইনায়া ৮/৪৩৫-৩৪৬, আলমুগনী ৫/৪৫৯
কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা
মাসআলা : ৬৬. ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ
গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল
কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া
সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২
দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। -জামে তিরমিযী
শরহুল মুনয়া ৫৬৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬,
কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি
মাসআলা : ৬৭. কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন
হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে
সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-
বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু
কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো
এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে
সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের
এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -
সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া
মাসআলা : ৬৮. ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে
করা জায়েয। তবে রাতে আলোস্বল্পতার দরুণ
ত্রুটি হতে পারে বিধায় রাতে জবাই করা
পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে জবাই
কোনো অসুবিধা নেই। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫,
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া
কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো
মাসআলা : ৬৯. কুরবানীর পশুর কোনো কিছু
হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক
হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ
ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও
গোশত খাওয়ানো যাবে।-আহকামুল কুরআন
৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর
জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া
মাসআলা : ৭০. কুরবানী পশু জবাই করে
দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো
পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -
মাসআলা : ৭১. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের
মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি না
কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে
কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। -খুলাসাতুল
৪/৩১৪, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০,
৬/৩১৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২০০
প্রশ্ন:কুরবানীর পশুর চামড়া বা এর টাকা পাওয়ার
কুরবানীর পশুর চামড়ার মালিক
করলে তা ব্যবহারও করতে পারে। সে যদি
করে দিতে চায় তবে বিক্রি না করে আস্ত দান
উত্তম। বিক্রি করলে এর মূল্যের হকদার হয়ে যায়
মিসকীন তথা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত লোকজন।
মধ্যে আত্মীয়-স্বজনও দ্বীনদারগণ
-রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮-৯; শরহুল কানয, বদরুদ্দীন
আইনী ২/২০৬কুরবানীর প্রয়োজনীয় ৭২টি মাসআলা/
-------------------------------------
মাসআলা : ১. প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন
মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২
সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর
করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা,
বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি,
প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও
অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর
আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫)
রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি,
অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য
বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া।
সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর
একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে
প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে
তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও
উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।-আলমুহীতুল
ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫
মাসআলা ২. কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা
বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন
থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস
৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২
মাসআলা : ৩. মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়।
যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা
মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে
মাসআলা : ৪. নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে
সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও
উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার
সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা
বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার
মাসআলা : ৫. যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে
থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮
যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার
কুরবানী ওয়াজিব নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান
বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার
নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী
মাসআলা : ৬. নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী
অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।-
মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫
দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম
মাসআলা : ৭. দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা
নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে
তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -
মাসআলা : ৮. কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে
কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু
করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি
মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে
কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে
জীবিত সদকা করে দিবে।-বাদায়েউস সানায়ে
প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে
মাসআলা : ৯. যেসব এলাকার লোকদের উপর
নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের
কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা
কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয়
ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম
কুরবানী করা জায়েয।-সহীহ বুখারী ২/৮৩২,
৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
মাসআলা : ১০. ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত
করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো। -
আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫,
কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই
মাসআলা : ১১. কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই
পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে।
যদি(সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো
সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি
জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ
হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।-বাদায়েউস
৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১
কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে
মাসআলা : ১২. উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও
কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু
পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী
জায়েয নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস
মাসআলা : ১৩. যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয
নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। -কাযীখান
মাসআলা : ১৪. উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে।
কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও
কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি
বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে,
বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও
জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের
উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো
অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে
-কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে
মাসআলা : ১৫. একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা
একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু
মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না।
গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে।
অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -
মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯,
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮
মাসআলা : ১৬. সাতজনে মিলে কুরবানী করলে
সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম
পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড়
এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না।
মাসআলা : ১৭. উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং
যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয়
কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮,
কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে
মাসআলা : ১৮. যদি কেউ আল্লাহ তাআলার
উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার
কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে
অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী
তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯
কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ
মাসআলা : ১৯. কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে
নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও
দুটোই সহীহ হবে।-তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬,
মাসআলা : ২০. শরীকদের কারো পুরো বা
উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী
মাসআলা : ২১. যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা
দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা
করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে
কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা
দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়,
কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে
করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে
করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে
-কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে
মাসআলা : ২২. কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া
আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস
মাসআলা : ২৩. যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা
রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন
কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫,
দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল
রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৪. এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা
পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা
জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী
দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৫. যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত
পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না
দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। -বাদায়েউস
যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে
মাসআলা : ২৬. যে পশুর শিং একেবারে গোড়া
ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর
শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং
একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয। -
তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮,
সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪,
কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৭. যে পশুর লেজ বা কোনো কান
তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়।
অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী
তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে
নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ
ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২,
মাসআলা : ২৮. যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক
নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে
১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭,
নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে
মাসআলা : ২৯. কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার
আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া
তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর
ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব।
হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি
কুরবানী করাই উত্তম। -সুনানে বায়হাকী
সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯,
মাসআলা : ৩০. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা
জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায়
সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন
সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। -কাযীখান
পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে
মাসআলা : ৩১. কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু
যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে
কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর
না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে।
ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই
পারবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯,
সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯,
পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা
মাসআলা : ৩২. যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর
হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের
দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর
করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা
আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ.
মাসআলা : ৩৩. বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। -
নিজের কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা
মাসআলা : ৩৪. কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা
নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে
এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে
উপস্থিত থাকা ভালো। -মুসনাদে আহমদ ২২৬৫৭,
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩, আলমগীরী
জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে
মাসআলা : ৩৫. অনেক সময় জবাইকারীর জবাই
না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে
এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে
‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি
একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না
জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার
কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের আগে উপকৃত হওয়া
মাসআলা : ৩৬. কুরবানীর পশু কেনার পর বা
পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন
করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি।সুতরাং
পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে
হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে।-
আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস
কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০
কুরবানীর পশুর দুধ পান করা
মাসআলা : ৩৭. কুরবানীর পশুর দুধ পান করা
জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে
কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না।
প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে
দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে
তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে
সদকা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস
১৭/২৭৭, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯, কাযীখান
মাসআলা : ৩৮. কয়েকজন মিলে কুরবানী করার
জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার
ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার
দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের
স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস
৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান
মাসআলা : ৩৯. কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই
জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম।
সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে
জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।-
৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩
মাসআলা : ৪০. মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা
মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি
কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক
গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং
আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত
কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত
নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের
সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭,
ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬,
কুরবানীর গোশত জমিয়ে রাখা
মাসআলা : ৪১. কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও
জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয।-বাদায়েউস
৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক
মাসআলা : ৪২. শরীকে কুরবানী করলে ওজন
বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১
মাসআলা : ৪৩. কুরবানীর গোশতের এক
মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন
প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি
নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০
মাসআলা : ৪৪. কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি
করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে
হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস
কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১
জবাইকারীকে চামড়া, গোশত দেওয়া
মাসআলা : ৪৫. জবাইকারী, কসাই বা কাজে
সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর
কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে
না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি
হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া
মাসআলা : ৪৬. ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই
পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা
মাসআলা : ৪৭. জবাইয়ের পর পশু নিস্তেজ হওয়ার
চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা
মাসআলা : ৪৮. এক পশুকে অন্য পশুর সামনে
না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট না
কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া
মাসআলা : ৪৯. কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য
ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।-ইলাউস সুনান
অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে
মাসআলা : ৫০. অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে
ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির
আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি
সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে
তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে
কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে
মাসআলা : ৫১. কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায়
যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে
ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী
গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়)
আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।-
সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯
মাসআলা : ৫২. পাগল পশু কুরবানী করা
এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং
চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না।
আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/২৩০,
সানায়ে ৪/২১৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৫২
নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া
মাসআলা : ৫৩. কুরবানীদাতার জন্য নিজ
খাওয়া মুস্তাহাব। -সূরা হজ্ব ২৮, সহীহ মুসলিম
মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯০৭৮, বাদায়েউস
মাসআলা : ৫৪. কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও
টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে
তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।
হাজীদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী
মাসআলা : ৫৫. যেসকল হাজী কুরবানীর
মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার
ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন
থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আযহার
করা জরুরি হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩,
মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫,
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
মাসআলা : ৫৬. সামর্থ্যবান ব্যক্তির
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ
কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত
করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ
কুরবানী দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ ২/২৯, জামে
তিরমিযী ১/২৭৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮,
কোন দিন কুরবানী করা উত্তম
মাসআলা : ৫৭. ১০, ১১ ও ১২ এ তিন দিনের মধ্যে
কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন,
তৃতীয় দিন। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬
খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী
মাসআলা : ৫৮. খাসিকৃত ছাগল দ্বারা
উত্তম। -ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল
জীবিত ব্যক্তির নামে কুরবানী
মাসআলা : ৫৯. যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে
সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ
ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য
কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত
বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্রে
মাসআলা : ৬০. বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য
দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।
কুরবানীদাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবাই
মাসআলা : ৬১. কুরবানীদাতা এক স্থানে আর
ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের
বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায়
এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই
কুরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা
মাসআলা : ৬২. কুরবানীর চামড়া
ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার
করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা
করা জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া
কুরবানীর চামড়া বিক্রির নিয়ত
মাসআলা : ৬৩. কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি
সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার
না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও
নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা
দেওয়া জরুরি। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১,
কুরবানীর শেষ সময়ে মুকীম হলে
মাসআলা : ৬৪. কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে
থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার
মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব
পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয়
মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কুরবানী
থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে
না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, ফাতাওয়া
৩/৩৪৬, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯
কুরবানীর পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক
মাসআলা : ৬৫. এক কুরবানীর পশুতে আকীকা,
কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের
ইবাদত আদায় হয়ে যাবে।-বাদায়েউস সানায়ে
রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, আলমাবসূত সারাখছী
আলইনায়া ৮/৪৩৫-৩৪৬, আলমুগনী ৫/৪৫৯
কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা
মাসআলা : ৬৬. ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ
গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল
কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া
সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২
দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। -জামে তিরমিযী
শরহুল মুনয়া ৫৬৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬,
কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি
মাসআলা : ৬৭. কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন
হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে
সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-
বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু
কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো
এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে
সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের
এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -
সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া
মাসআলা : ৬৮. ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে
করা জায়েয। তবে রাতে আলোস্বল্পতার দরুণ
ত্রুটি হতে পারে বিধায় রাতে জবাই করা
পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে জবাই
কোনো অসুবিধা নেই। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫,
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া
কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো
মাসআলা : ৬৯. কুরবানীর পশুর কোনো কিছু
হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক
হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ
ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও
গোশত খাওয়ানো যাবে।-আহকামুল কুরআন
৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর
জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া
মাসআলা : ৭০. কুরবানী পশু জবাই করে
দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো
পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -
মাসআলা : ৭১. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের
মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি না
কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে
কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। -খুলাসাতুল
৪/৩১৪, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০,
৬/৩১৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২০০
কুরবানীর পশুর চামড়া বা এর টাকা পাওয়ার
কুরবানীর পশুর চামড়ার মালিক
করলে তা ব্যবহারও করতে পারে। সে যদি
করে দিতে চায় তবে বিক্রি না করে আস্ত দান
উত্তম। বিক্রি করলে এর মূল্যের হকদার হয়ে যায়
মিসকীন তথা যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত লোকজন।
মধ্যে আত্মীয়-স্বজনও দ্বীনদারগণ
-রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৮-৯; শরহুল কানয, বদরুদ্দীন
আইনী ২/২০৬কুরবানীর প্রয়োজনীয় ৭২টি মাসআলা/
-------------------------------------
মাসআলা : ১. প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন
মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২
সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত
নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর
করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা,
বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি,
প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও
অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর
আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫)
রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি,
অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য
বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া।
সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর
একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে
প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে
তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও
উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।-আলমুহীতুল
ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫
মাসআলা ২. কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা
বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন
থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস
৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২
মাসআলা : ৩. মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়।
যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা
মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে
মাসআলা : ৪. নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে
সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও
উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার
সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা
বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার
মাসআলা : ৫. যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে
থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮
যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার
কুরবানী ওয়াজিব নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান
বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার
নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী
মাসআলা : ৬. নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী
অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।-
মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫
দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম
মাসআলা : ৭. দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা
নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে
তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -
মাসআলা : ৮. কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে
কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু
করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি
মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে
কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে
জীবিত সদকা করে দিবে।-বাদায়েউস সানায়ে
প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে
মাসআলা : ৯. যেসব এলাকার লোকদের উপর
নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের
কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা
কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয়
ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম
কুরবানী করা জায়েয।-সহীহ বুখারী ২/৮৩২,
৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
মাসআলা : ১০. ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত
করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো। -
আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ
আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫,
কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই
মাসআলা : ১১. কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই
পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে।
যদি(সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো
সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি
জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ
হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।-বাদায়েউস
৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১
কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে
মাসআলা : ১২. উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও
কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু
পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী
জায়েয নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস
মাসআলা : ১৩. যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয
নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। -কাযীখান
মাসআলা : ১৪. উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে।
কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও
কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি
বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে,
বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও
জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের
উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো
অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে
-কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে
মাসআলা : ১৫. একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা
একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু
মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না।
গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে।
অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -
মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯,
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮
মাসআলা : ১৬. সাতজনে মিলে কুরবানী করলে
সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম
পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড়
এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না।
মাসআলা : ১৭. উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং
যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয়
কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮,
কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে
মাসআলা : ১৮. যদি কেউ আল্লাহ তাআলার
উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার
কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে
অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী
তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯
কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ
মাসআলা : ১৯. কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে
নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও
দুটোই সহীহ হবে।-তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬,
মাসআলা : ২০. শরীকদের কারো পুরো বা
উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী
মাসআলা : ২১. যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা
দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা
করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে
কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা
দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়,
কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে
করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে
করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে
-কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে
মাসআলা : ২২. কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া
আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস
মাসআলা : ২৩. যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা
রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন
কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫,
দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল
রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৪. এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা
পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা
জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী
দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৫. যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত
পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না
দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। -বাদায়েউস
যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে
মাসআলা : ২৬. যে পশুর শিং একেবারে গোড়া
ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর
শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং
একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয। -
তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮,
সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪,
কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৭. যে পশুর লেজ বা কোনো কান
তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়।
অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী
তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে
নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ
ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২,
মাসআলা : ২৮. যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক
নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে
১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭,
নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে
মাসআলা : ২৯. কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার
আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া
তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর
ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব।
হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি
কুরবানী করাই উত্তম। -সুনানে বায়হাকী
সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯,
মাসআলা : ৩০. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা
জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায়
সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন
সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। -কাযীখান
পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে
মাসআলা : ৩১. কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু
যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে
কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর
না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে।
ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই
পারবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯,
সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯,
পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা
মাসআলা : ৩২. যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর
হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের
দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর
করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা
আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ.
মাসআলা : ৩৩. বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। -
নিজের কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা
মাসআলা : ৩৪. কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা
নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে
এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে
উপস্থিত থাকা ভালো। -মুসনাদে আহমদ ২২৬৫৭,
বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩, আলমগীরী
জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে
মাসআলা : ৩৫. অনেক সময় জবাইকারীর জবাই
না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে
এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে
‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি
একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না
জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার
কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের আগে উপকৃত হওয়া
মাসআলা : ৩৬. কুরবানীর পশু কেনার পর বা
পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন
করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি।সুতরাং
পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে
হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে।-
আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস
কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০
কুরবানীর পশুর দুধ পান করা
মাসআলা : ৩৭. কুরবানীর পশুর দুধ পান করা
জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে
কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না।
প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে
দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে
তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে
সদকা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস
১৭/২৭৭, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯, কাযীখান
মাসআলা : ৩৮. কয়েকজন মিলে কুরবানী করার
জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার
ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার
দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের
স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস
৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান
মাসআলা : ৩৯. কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই
জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম।
সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে
জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।-
৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২