রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২০

আলেমের স্ত্রী হওয়াতে গর্ভবতী মহিলাকে চেম্বার থেকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন,গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফৌজিয়া আক্তার৷


আজ ১৯/০৪/২০২০ইং রোজ রবিবার নবিনগর উপজেলার কুড়িঘর গ্রামের মাওলানা জুনায়েদ আহমদ ওনার গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে হলিল্যাব হসপিটালে যান৷সিরিয়াল অনুযায়ী যখন ওনার স্ত্রী চেম্বারে ঢুকেন,ডাক্তার বোরকা পরিহিতা মহিলা দেখে কর্কষ ভাষায় বলেন,আপনার স্বামি কি হুজুর ?? ওনি বলে জ্বী,তখন ডাক্তার বলেন তাহলে তো আপনার স্বামি আনসারী হুজুরের জানাযায় গিয়েছে,ওনি বলেন আমার স্বামি এলাকায় খেদমত করেন,জানাযায় যাননি,তখন ডাক্তার রাগত কন্ঠে বলেন,মিথ্যা বলেন আমার সাথে ?? বের হন আমার চেম্বার থেকে,বলে ধাক্কা মেরে চেম্বার থেকে নার্সের মাধ্যমে বের করে দেন৷(অথচ তিনি জানাযায় যায়নি)এবং হসপিটাল কতৃপক্ষকে বলে দেন,কোন হুজুরকে যেন হসপিটালে ঢুকতে না দেন,সকল হুজুর নাকি করোনায় আক্রান্ত৷

ওনি ওনার স্বামিকে নিয়ে হসপিটাল থেকে চলে আসেন,দেশের এই পরিস্থিতিতে আর ডাক্তার না পেয়ে চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ি চলে আসেন৷

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাটিতে আলেমদের সাথে এমন অমানবিক আচরন সহ্য করা হবেনা ইনশাআল্লাহ৷

শুধু মাফ চাইলে হবে না,প্রশাসন এবং স্বাস্থ অধিদপ্তর যদি ওনাকে শাস্তির সম্মুখিন না করেন,তাহলে যেকোন ধরনের বৈরী পরিস্থিতির জন্য আলেমসমাজ দায়ী থাকবে না৷

নিজের বিপদকেও বুদ্ধি দিয়ে নিজের সুবিধা হিসেবে ব্যবহার করা





জার্মানির এক নামকরা ব্যাংকে ব্যাংক ডাকাতির সময় ডাকাত দলের সর্দার বন্দুক হাতে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো, "কেউ কোনো নড়াচড়া করবেন না, টাকা গেলে যাবে সরকারের, কিন্তু জীবন গেলে যাবে আপনার আর তাই ভাবনা চিন্তা করে আপনার পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করুন।"

এই কথা শোনার পর, সবাই শান্ত হয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে শুয়ে পড়েছিল। এই ব্যাপারটাকে বলে "Mind Changing Concept”, অর্থাৎ মানূষের ব্রেইনকে আপনার সুবিধা অনুযায়ী অন্যদিকে কনভার্ট করে ফেলা।

সবাই যখন শুয়ে পড়েছিল, তখন এক সুন্দরী মহিলার কাপড় অসাবধানতা বসত তার পা থেকে কিছুটা উপরে ঊঠে গিয়েছিল এমন সময় ডাকাত দলের সর্দার তার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো, "আপনার কাপড় ঠিক করুন! আমরা এখানে ব্যাংক ডাকাতি করতে এসেছি, রেপ করতে না।"

এই ব্যাপারটাকে বলে "Being Professional”, অর্থাৎ আপনি যেটা করতে এসেছেন, সেটাই করবেন। যতই প্রলোভন থাকুক অন্যদিকে মনোযোগ দেওয়া যাবে না।

যখন ডাকাতরা ডাকাতি করে তাদের আস্তানায় ফিরে এলো তখন এক ছোট ডাকাত(এমবিএ পাশ করা) ডাকাত দলের সর্দার(যে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে)কে বললো, "বস চলেন টাকাটা গুনে ফেলি"

ডাকাত দলের সর্দার মুচকি হেসে বললো, তার কোনোই প্রয়োজন নেই, কেনোনা একটু পরে টিভি ছাড়লে নিউজ চ্যানেলগুলোই বলে দেবে আমরা কতো টাকা নিয়ে এসেছি।

এই ব্যাপারটাকে বলে "Experience"। অভিজ্ঞতা যে গতানুগতিক সার্টিফিকেট এর বাইরে গিয়েও কাজ করতে পারে, ইহা তার একটি ঊৎকৃষ্ট প্রমাণ।

ডাকাতরা চলে যাওয়ার সাথে সাথেই ব্যাংক এর এক কর্মচারি ব্যাংক ম্যানেজারের কাছে ছুটে এসে বললো, স্যার তাড়াতাড়ি চলেন পুলিশকে ফোন করি, এখনই ফোন করলে ওরা বেশিদূর যেতে পারবে না। ব্যাংক ম্যানেজার কর্মচারিকে থামিয়ে দিয়ে বললো, ওদেরকে আমাদের সুবিধার জন্যই এই ২০ মিলিয়ন টাকা নিয়ে যেতে দেওয়া উচিৎ, তাহলে আমরা যে ৭০ মিলিয়ন টাকার গরমিল করেছি, তা এই ডাকাতির ভিতর দিয়েই চালিয়ে দেওয়া যাবে।

এই ব্যাপারটাকে বলে, Swim with the tide, অর্থাৎ নিজের বিপদকেও বুদ্ধি দিয়ে নিজের সুবিধা হিসেবে ব্যবহার করা।

কিছু সময় পরেই, টিভিতে রিপোর্ট আসলো, ব্যাংক ডাকাতিতে ১০০ মিলিয়ন টাকা লোপাট। ডাকাতরা সেই রিপোর্ট দেখে বারবার টাকা গুনেও ২০ মিলিয়ন এর বেশি বাড়াতে পারলো না। ডাকাত দলের সর্দার রাগে ক্রুদ্ধ হয়ে বললো, "শালা আমরা আমাদের জীবনের ঝুকি নিয়ে, এতো কিছু ম্যানেজ করে মাত্র ২০ মিলিয়ন টাকা নিলাম আর ব্যাংক ম্যানেজার শুধুমাত্র এক কলমের খোঁচাতেই ৮০ মিলিয়ন টাকা সরিয়ে দিল। শালা চোর-ডাকাত না হয়ে পড়াশোনা করলেই তো বেশি লাভ হত।"

এই ব্যাপারটাকে বলে "Knowledge is worth as much as gold!" অর্থাৎ অসির চেয়ে মসী বড়।

ব্যাংক ম্যনেজার মন খুলে হাসছে, কেনোনা তার লাভ ৮০ মিলিয়ন টাকা। ৭০ মিলিয়ন টাকার গরমিল করেও সে আরও ১০ মিলিয়ন টাকা এই সুযোগে তার নিজের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছে।

এই ব্যাপারটাকে বলে,
"Seizing the opportunity.” Daring to take risks!

অর্থাৎ সুযোগ থাকলে তাকে কাজে লাগানোই উচিৎ...!

মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২০

পাকিস্তানে সব ঘরানার আলেমদের প্রেস কনফারেন্স


আজ দারুল উলূম করাচীতে সকল ঘরানার আলেমদের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ছিলেন মুফতী মুহাম্মদ তাকী উসমানী দা.বা.।
টেলিফোনে সংযুক্ত হয়ে একাত্মতা ঘোষণা করেন জমিয়ত আমীর মাওলানা ফজলুর রহমান।
মজলিসে জামাতে ইসলামী, আহলে হাদীসসহ সব ঘরানার আলেমরা উপস্থিত ছিলেন। মসজিদে জামাতে নামাজ বিশেষ করে রমযান উপলক্ষে তারাবিহের নামাজ এসব বিষয়কে জরুরী আখ্যায়িত করে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। নামাজ এই কঠিন পরীক্ষার সময়ে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে তাই মজলিসে সিদ্ধান্ত হয় নামাজ চালু রাখার।

সিদ্ধান্তগুলে সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করা হলো :
১. সতর্কতামুলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মসজিদসমূহ খোলা থাকবে। জামাতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায এবং জুমআ জারি থাকবে। তিন বা পাঁচজন মুসল্লির বাধ্যবাধকতার ওপর শরয়ী গ্রহণযোগ্যতা নেই।
২. অসুস্থ, ভাইরাসে আক্রান্ত বা তাদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা মসজিদে আসবেন না। ঘরে নামায পড়লেই জামাতের সওয়াব পাওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ।
৩. বয়স্ক হযরতরা মসজিদে আসার ক্ষেত্রে নিজেকে মাযুর(অপারগ) মনে করবেন। অর্থাৎ মসজিদে আসবেন না।
৪. প্রত্যেক নামাযের পর মসজিদের কার্পেট উঠিয়ে যথাসম্ভব জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে ধৌত করবেন।
৫. মসজিদের গেইটে যথাসাধ্য
সেনিটাইজার এর ব্যবস্থা করতে হবে।
মহল্লাবাসী এটাকে দায়িত্ব মনে করে করবেন।
৬. দুই কাতারের মাঝখানে এক কাতার পরিমাণ ফাঁকা রাখতে হবে। এক কাতারে মুক্তাদিরা প্রয়োজনীয় দূরত্বে থাকবে। সাধারণ অবস্থায় যদিও এমনটি মাকরূহ, কিন্তু ওযরের কারণে কারাহাত হবে না, ইনশাআল্লাহ।
৭. সবাই ঘর হতে ওযু করে আসবেন।
৮. মুক্তাদীরা গুরুত্বের সাথে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে যথাসম্ভব মাস্ক পরে আসবেন।
৯. সুন্নত ঘর থেকে পড়ে আসবেন,বাকি সুন্নত, নফলও ঘরে গিয়ে পড়বেন।
১০. জুমআর পূর্বের উর্দু (বাংলা) বয়ান বন্ধ রাখুন। একান্ত প্রয়োজনে পাঁচ মিনিটে সতর্কতামুলক ব্যবস্থা সম্পর্কে মুসল্লিদেরকে সচেতন করুন।
১১. জুমআর খুতবা প্রয়োজনীয় হামদ-সালাত, তাকওয়ার একটি আয়াত এবং মুসলমানদের জন্য বিপদ থেকে মুক্তির দুআর মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত করবেন।
১২. নামাযের পর ভিড় না করে সবাই নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বাড়ি যাবেন।
১৩. মসজিদের ইমামগণ জনসাধারণকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করবেন। তবে এগুলো কার্যকর করার দায়িত্ব প্রশাসনের। তাই এসবের জন্য ইমামদেরকে যিম্মাদার বানানো যাবে না।
--জাকারিয়া নোমান
...

পাকিস্তানের আলেমরা সরকারের কাছে মসজিদের জামাতে অংশগ্রহণে বিধিনিষেধ শিথিল করার দাবী জানিয়েছেন। দেওবন্দি, আহলে হাদিস, জামায়াত, শিয়া ও বেরলবিসহ সব পক্ষের আলেমরা এতে অংশগ্রহণ করেছেন। মসজিদে সংক্রমণ ঘটবে না, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিংসহ সব রকমের সতর্কতা অবলম্বন করার অঙ্গীকার করে দায়িত্বগ্রহণ করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে দাবী জানালেও সরকার যা সিদ্ধান্ত নিবে, তারা সেটা মেনে নিবেন বলেও মন্তব্য করেছেন।
কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয় :
ক) আলেমরা নিজেরাই কমিটি গঠন করেছেন।
খ) সবপক্ষের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ও মত নিশ্চিত করেছেন।
গ) নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেরা গ্রহণ করেছেন।
ঘ) সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। আসলে ঐক্য ও সচেতনতা থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব। অনৈক্য তৈরি হলে রাষ্ট্র বিগ বসের মতো চেপে বসে। তাতে সিদ্ধান্ত-দায়িত্বহীনতা তৈরি হয়।
--ইফতেখার জামিল



শা‘বান মাসে নফল রোযা

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَصُومُ حَتّى نَقُولَ: لاَ يُفْطِرُ، وَيُفْطِرُ حَتّى نَقُولَ: لاَ يَصُومُ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلّا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُهُ أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ.
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অবিরাম) রোযা রাখতেন, যার কারণে আমরা বলতাম, আর বাদ দিবেন না। আবার (অবিরাম) রোযাহীনও থাকতেন, যার কারণে আমরা বলতাম, আর রাখবেন না। আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমযান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পুরো মাস রোযা রাখতে দেখিনি। তেমনি দেখিনি শা‘বানের চেয়ে বেশি অন্য কোনো মাসে রোযা রাখতে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৯৬৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১১৫৬

.
■ সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখা
.
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেছেন-

كَانَ النبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ يَتَحَرّى صَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ.
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোমবার ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখার ইহতিমাম করতেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৫
হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
تُعْرَضُ الأَعْمَالُ يَوْمَ الِاثْنَيْنِ وَالخَمِيسِ، فَأُحِبّ أَنْ يُعْرَضَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ.
সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমলসমূহ পেশ করা হয়। তো আমার পছন্দ, আমার আমল যেন পেশ করা হয় আমি রোযাদার অবস্থায় । -জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৪৭

.
■ মাসে তিন রোযা
.
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

شَهْرُ الصَبْرِ، وَثَلَاثَةُ أَيّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ صَوْمُ الدّهْرِ.
সবরের মাস (রমযান) ও প্রতি মাসে তিন দিন সারা বছর রোযার সমতুল্য। -সুনানে নাসায়ী ৪/২১৮, হাদীস ২৪০৮; মুসনাদে আহমাদ ২/২৬৩, হাদীস ৭৫৭৭
হযরত আবু যর গিফারী রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا صُمْتَ مِنْ شَهْرٍ ثَلَاثًا، فَصُمْ ثَلَاثَ عَشْرَةَ، وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ، وَخَمْسَ عَشْرَة.
তুমি যদি মাসে তিন দিন রোযা রাখ তাহলে তের তারিখ, চৌদ্দ তারিখ ও পনের তারিখ রোযা রেখো। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৪৩৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ৭৬১; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৪২৪
ইবনে মাজাহর বর্ণনায় আছে-
فَأَنْزَلَ اللهُ عَزّ وَجَلّ تَصْدِيقَ ذَلِكَ فِي كِتَابِهِ: مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا فَالْيَوْم بِعَشْرَةِ أَيّامٍ.
অর্থাৎ আল্লাহর কিতাবে এর সমর্থন রয়েছে, যে নেক কাজ করবে সে তার দশ গুণ পাবে। তো এক দিন সমান সমান দশ দিন। (দ্র. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৭০৮)

করোনা ভাইরাস

                                        ණ মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ

.ইসলাম আমাদের যে কোনো পরিস্থিতির শান্ত ও সঠিক মূল্যায়নে উৎসাহিত করে। পরিস্থিতির সঠিক মূল্যায়ন করণীয় সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বশর্ত। বর্তমানে যে বৈশ্বিক মহামারির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে নিঃসন্দেহে তা ভয়াবহ। এ অবস্থায় কোনোরূপ ভাবাবেগের অনুগামী না হয়ে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের দেওয়া শরয়ী নির্দেশনার উপর আমল করা অতি প্রয়োজন।মুসলিমমাত্রেরই দৃঢ় বিশ্বাস, আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন তা-ই ঘটবে। এর বাইরে কিছুই ঘটবে না। এই বিশ্বাস আমাদের ঈমানের অংশ। ইসলাম আমাদের এই ঈমানী শিক্ষা দান করেছে। একই সাথে যথাসাধ্য সতর্কতা অবলম্বন ও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনাও প্রদান করেছে।এই বিশ্বাস ও কর্ম-পন্থার সমষ্টিই হচ্ছে ইসলামের শিক্ষা। সাহাবা তাবেয়ীন ও সালাফে সালেহীনের নীতি ও কর্মপন্থাও তাই। বিশ্বাস ও কর্মের এই সমন্বিত আদর্শ অনুসরণ করাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। নিঃসন্দেহে এটি তাকওয়া। তাকওয়ার মূল কথাই হচ্ছে আল্লাহর ভয় এবং যে অবস্থায় শরীয়তের যে নির্দেশনা তার অনুসরণ। শরীয়তে সাধারণ অবস্থায় যেমন সাধারণ বিধান রয়েছে তেমনি বিশেষ অবস্থায় আছে বিশেষ বিধানও। এটি শরীয়তের সৌন্দর্য ও অনন্য বৈশিষ্ট্য।শরীয়তের বিধান ও নির্দেশনার ভেতরে থেকে বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা ও যথাসময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের চেষ্টা কিছুতেই তাকওয়া ও তাকদীরে-বিশ্বাসের পরিপন্থী নয়। মনে রাখতে হবে, তাকওয়া অর্থ বেপরোয়া হওয়া নয়, তাকওয়া অর্থ শরীয়তের নির্দেশনা পালনে সক্ষম হওয়া। আর এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ও হক্কানী উলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্তই অনুসরণীয়।দ্বীনদারী রক্ষা যেমন শরয়ী বিধি-বিধানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তেমনি দ্বীনদারীর সাথে জান-মালের সুরক্ষাও শরীয়তের বিধি-বিধানের অন্যতম লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। এ সম্পর্কেও আমাদের ফকীহগণ বিস্তারিত আলোচনা করেছেন এবং বিভিন্ন ফিকহী নীতি প্রণয়ন করেছেন। বিশদ আলোচনায় না গিয়ে এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে শুধু একটি ঘটনা আলোচনা করছি।খলীফায়ে রাশেদ হযরত ওমর ফারূক রা.-এর ঘটনাটি অনেকেরই জানা আছে। সংক্ষেপে তা এই যে, সাহাবায়ে কেরামের এক জামাতসহ তিনি যখন শামের নিকটে পৌঁছে সংবাদ পেলেন যে, ওখানে মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে তখন মুহাজির, আনসার ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের সাথে করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে পরামর্শ করেন। পরামর্শে উপদ্রুত অঞ্চলে প্রবেশ করা ও না-করা দুই রকমের মতই এল। রেওয়ায়েতে আছে যে, ওমর রা. প্রথমে মুহাজির সাহাবায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করেছিলেন। তাদের পক্ষ হতে দুই রকম মত আসে। এরপর আনসার সাহাবীগণের সাথে পরামর্শ করেন। তাদের পক্ষ হতেও দুই রকম মত আসে। এরপর অন্যান্য বিচক্ষণ ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করেন। তারা একমত হয়ে উপদ্রুত অঞ্চলে না যাওয়ার পরামর্শ দেন।এরপর ওমর রা. ঘোষণা করেন যে, তিনি মদীনায় ফিরে যাচ্ছেন।এ সময় বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রা. এর সাথে তাঁর যে কথোপকথন হয়েছিল তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ তাঁকে বললেনأَفِرَارًا مِنْ قَدَرِ اللَّهِ؟আল্লাহর তাকদীর থেকে পলায়ন করে মদীনায় ফিরে যাচ্ছেন?হযরত ওমর রা. বললেনلَوْ غَيْرُكَ قَالَهَا يَا أَبَا عُبَيْدَةَ؟ نَعَمْ نَفِرُّ مِنْ قَدَرِ اللَّهِ إِلَى قَدَرِ اللَّهِ، أَرَأَيْتَ لَوْ كَانَ لَكَ إِبِلٌ هَبَطَتْ وَادِيًا لَهُ عُدْوَتَانِ، إِحْدَاهُمَا خصبَةٌ، وَالأُخْرَى جَدْبَةٌ، أَلَيْسَ إِنْ رَعَيْتَ الخَصْبَةَ رَعَيْتَهَا بِقَدَرِ اللَّهِ، وَإِنْ رَعَيْتَ الجَدْبَةَ رَعَيْتَهَا بِقَدَرِ اللَّهِ؟হে আবু উবাইদা! কথাটি যদি আপনি ছাড়া অন্য কেউ বলত! জ্বী, আমরা আল্লাহর তাকদীর থেকে আল্লাহর তাকদীরের দিকেই পলায়ন করছি। দেখুন, আপনার উটের পাল যখন কোনো চারণভ‚মিতে নামে, এর এক পার্শ্বে যদি তৃণলতাপূর্ণ সজীব ভূমি থাকে, অন্য পার্শ্বে থাকে বিরাণ ভূমি, তখন আপনি সজীব ভূমিতে সেগুলোকে চরানোর ব্যবস্থা নিলে তা কি আল্লাহর তাকদীরের কারণেই নয়? ....... সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭২৯অর্থাৎ যথাসময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত ও যথার্থ ব্যবস্থাগ্রহণে সক্ষম হওয়াও তাকদীরের অন্তর্ভুক্ত। নিঃসন্দেহে তাকদীরে যা আছে তাই ঘটবে, কিন্তু মানুষের জানা নেই কী তার তাকদীরে আছে। তাকদীরে ভালো থাকলে ভালোর উপযোগী সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণই তার জন্যে সহজ হবে।অতএব যথাসময়ে সঠিক করণীয় সম্পর্কে সচেতন হয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হওয়াও একটি লক্ষণ যে, সম্ভবত তার পক্ষে আল্লাহর ফয়সালা ভালো।বান্দার কর্তব্য, বিচক্ষণতার সাথে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা এবং জান-মাল, ইজ্জত-আব্রু ইত্যাদি রক্ষার ক্ষেত্রেও শরীয়ত-প্রদত্ত প্রশস্ততা গ্রহণে সচেষ্ট হওয়া। এটিও আল্লাহর পক্ষ হতে কল্যাণ-প্রার্থনার ও কল্যাণের প্রতি মুখোপেক্ষিতা প্রকাশের অন্যতম উপায়। তবে হাঁ, নীতিটি বলতে বা শুনতে যত সহজ বাস্তব ক্ষেত্রে এর সঠিক প্রয়োগ তত সহজ নয়। এর জন্যে বিজ্ঞ ও মুত্তাকী আলিমের দিক-নির্দেশনা অতি প্রয়োজন।* * *উপরোক্ত নীতির আলোকে আমরা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে পারি। আমরা ইতিমধ্যে দেখছি যে,এক. করোনা ভাইরাসটি গোটা পৃথিবীতে ভয়াবহ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাও বিশ্বজুড়ে অচিন্তনীয়ভাবে বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশেও আক্রান্তের হার বাড়ছে ( আল্লাহ তাআলা হেফাযত করুন।)দুই. বিষয়টির প্রকৃতি ও ভয়াবহতাও ইতিমধ্যে আলোচনায় এসেছে। বিষয়টি বোঝার দুটি উপায় রয়েছে,ক. সাধারণ বিচার-বুদ্ধি এবং খ. বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত।সাধারণ বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ একটু চিন্তা করলেই বিষয়টির ভয়াবহতা বুঝতে পারবেন। পৃথিবীর দেশে দেশে একের পর এক লকডাউন ঘোষিত হয়েছে। কয়েকটি উন্নত রাষ্ট্রেও প্রথম দিকে এই ভাইরাস স্বল্পমাত্রায় ও মন্থরগতিতে ছড়ালেও একটা পর্যায়ে এসে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। কোথাও কিছুটা ‘নিয়ন্ত্রণে’ এসেছে কোথাও এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে।সৌদি আরবেও পূর্ণ লক ডাউন সত্তেও আক্রান্তের হার বেড়েই চলেছে। আমাদের দেশে এখনও আক্রান্তের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম হলেও ক্রমেই তা বাড়ছে। (আল্লাহ হেফাযত করুন।)ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের নাগরিকেরা বাংলাদেশ ছেড়েছেন।খ. উপরোক্ত বিষয়গুলোর পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ চিকিৎসক, অণুজীব বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও ভাইরাসটির ধরন ও বিস্তারের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের সম্মিলিত বক্তব্য ও মতামতকে উপেক্ষা করা উচিত নয়। শরীয়তে প্রত্যেক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভারসাম্যপূর্ণ মূল্যায়ণের নীতি ও নির্দেশনা আছে।তিন. সব ধরনের জমায়েত থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি জুমা-জামাতের প্রসঙ্গটিও আলোচনায় এসেছে।জুমা-জামাতের দুটো দিক রয়েছে। এক. সাধারণভাবে মসজিদে জুমা-জামাত কায়েম থাকা। দুই. ব্যক্তিগতভাবে জুমা-জামাতে শামিল হওয়া।মসজিদ, মসজিদের আযান, জামাত, জুমা এগুলো যেহেতু ইসলামের শি‘আর ও নিদর্শন তাই ন্যূনতম পর্যায়ে হলেও যথাসাধ্য তা কায়েম রাখার চেষ্টা করা কাম্য।আর প্রত্যেক ব্যক্তির জুমা-জামাতে শামিল হওয়ার প্রসঙ্গে সাধারণ অবস্থায় ওজরহীন সাবালক পুরুষের জন্য মসজিদের জামাতে শামিল হওয়া বিশেষভাবে কাম্য হলেও বিশেষ অবস্থা ও পরিস্থিতিতে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে।চার. বর্তমান পরিস্তিতিতে জুমা-জামাত বিষয়ে মুসল্লীদের করণীয় সম্পর্কে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও এসে গেছে।একটি জাতীয় দৈনিকের ইসলামী পাতায় মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকার আমীনুত তা‘লীম হযরত মাওলানা আব্দুল মালেক ছাহেবের সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে তাঁর বক্তব্যের সারসংক্ষেপ এভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।“বাংলাদেশে বর্তমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে সব ধরনের জমায়েত বন্ধের পাশাপাশি মসজিদগুলোয় জুমা ও জামাতে সম্মানিত মুসল্লিদের উপস্থিতি সীমিত পরিসরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিজ্ঞ আলেমরা। ‘মসজিদ বন্ধ থাকবে না তবে সুরক্ষা পদ্ধতি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ব্যক্তিরা মসজিদে যাবে না’ অনেকেই আলেমদের এই আহবানের ব্যাখ্যা চাইছেন। মূলত মুসল্লিদের উপস্থিতি সীমিত রাখার উদ্দেশ্য হলো, এমন পরিস্থিতিতে “যার জন্য মসজিদে আসা উচিত নয়” তিনি আসবেন না। তেমনিভাবে “যার জন্য না আসার অবকাশ রয়েছে” তিনিও আসবেন না।এমন পরিস্থিতিতে যাদের জন্য মসজিদে আসা উচিত নয় তাঁরা হলেন,ক. যাঁরা এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।খ. যাঁরা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত রয়েছেন, কিন্তু আজিমত (শরিয়তের স্বাভাবিক সময়ের বিধান) অবলম্বনের জন্য মসজিদে উপস্থিত হয়ে থাকেন। তাঁদেরও এমন পরিস্থিতিতে মসজিদে আসা উচিত নয়।গ. যারা সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত তাঁরা সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার আগে মসজিদে কোনোভাবেই আসবেন না।ঘ. ষাট বা তদূর্ধ্ব মুরব্বিদের মসজিদে না আসা উচিত।ঙ. বিশেষত যেসব মুরব্বি কোনো রোগে আক্রান্ত রয়েছেন তাঁরা একেবারেই মসজিদে আসবেন না।চ. এ পরিস্থিতিতে নাবালেগ শিশুরা, বিশেষ করে যারা খুব ছোট তারা মসজিদে একেবারেই আসবে না।ছ. যারা এমন কোনো অঞ্চল বা পরিবেশ থেকে এসেছেন যেখানে এই মহামারি বিস্তার লাভ করেছে, তারাও এমন পরিস্থিতিতে মসজিদে একেবারে আসবেন না।জ. কোনো বিশেষ এলাকা যেমন কোনো বাড়ি, টাওয়ার, পাড়া, মহল্লা ইত্যাদির ব্যাপারে যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কারণে বিশেষ নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয় তাহলে এমন লোকেরাও মসজিদে আসবে না।উল্লিখিত মুসল্লিরা ঘরে নামাজ আদায় করবেন। অন্তরে মসজিদে উপস্থিত হতে না পারার কারণে আক্ষেপ পোষণ করবেন। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তাআলা তাঁদের আপন শান মোতাবেক সওয়াব দান করবেন।ঝ. কোনো কোনো মসজিদে এ প্রচলন রয়েছে, যা না হওয়া উচিত, সেখানে নারী মুসল্লিরাও উপস্থিত হয়ে থাকেন। এ প্রচলন এমনিতেই সংশোধনযোগ্য। তথাপি এ পরিস্থিতিতে মসজিদে তাদের উপস্থিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না।অসুস্থ না হয়েও এ অবস্থায় যাদের মসজিদে না আসার অনুমতি রয়েছে তাঁরা হলেন,ক. যাঁরা কারো শুশ্রƒষায় আছেন।খ. আতঙ্কের কারণে যাঁকে তাঁর বাবা-মা অথবা স্ত্রী কিংবা ছেলেসন্তনরা বাইরে বের হতে বাধা দিচ্ছে।গ. আতঙ্কের কারণে যাঁকে তাঁর প্রতিবেশী, একই ভবনের বাসিন্দা বাধা দিচ্ছে।ঘ. যিনি নিজে আক্রান্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা বোধ করার দরুন মসজিদে উপস্থিত হওয়ার হিম্মত করতে পারছেন না।এই মুসল্লিরা ছাড়া অন্যরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে জামাতে উপস্থিত হবেন। তারপরও যাঁদের মধ্যে কোনো লক্ষণও নেই এবং পূর্বোক্ত দুই শ্রেণির আওতায়ও পড়েন না উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তাঁদের কেউ যদি (পরিবার ও সমাজের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে) মসজিদে না আসেন তাহলে আশা করা যায় তাঁদেরও গুনাহ হবে না।এই পরিস্থিতিতে যাঁদের জন্য জামাতে উপস্থিত হওয়া সংগত নয়, তারা জুমাতেও উপস্থিত হবেন না। আর যাদের জন্য জামাতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি রয়েছে তাদের জন্য জুমাতেও উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি রয়েছে। আর এই সময় এ রুখসত (ছাড়) গ্রহণ করায় সওয়াবও বেশি। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ এটাও পছন্দ করেন তাঁর দেওয়া রুখসত বান্দা গ্রহণ করবে।’সুতরাং তারা ঘরে জোহরের নামাজ আদায় করবে। আর জুমার দিনের অন্যান্য আমলের প্রতি মনোযোগী হবে। যেমন সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা, বেশি বেশি দরুদ পাঠ ইত্যাদি।[মাসিক আল কাউসারের ওয়েবসাইটে ২৭ মার্চ ২০২০ প্রকাশিত দীর্ঘ সাক্ষাৎকারের একাংশের গদ্যরূপ দিয়েছেন আবরার আবদুল্লাহ।] ( দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২ এপ্রিল ২০২০ ঈ.)হযরতুল উস্তাযের নির্দেশনার মর্মার্থ, আমি যদ্দুর বুঝেছি, খুবই স্পষ্ট। তবে প্রত্যেক শাস্ত্রেরই নিজস্ব উপস্থাপনা-পদ্ধতি থাকে। ফিকহের মাসআলা বর্ণনারও নিজস্ব নীতি ও পদ্ধতি আছে, যার তাৎপর্য শাস্ত্রবিদেরা বোঝেন। মাসআলা বর্ণনার ক্ষেত্রে সংবাদপত্রের মতো ঢালাও সমীকরণ করা যায় না, যথার্থ স্তর বিন্যাস করেই কথা বলতে হয়। সেই পদ্ধতির সাথে ঘনিষ্ঠতা না থাকলে মনে হতে পারে যে, ‘পরিষ্কার ভাষায় তো মানা করা হল না।’একজন ফকীহ কীভাবে এমন একটি বিষয়ে শর্তহীনভাবে মসজিদে আসতে মানা করবেন। দেশে তো এখনও রাষ্ট্রীয়ভাবেও পূর্ণ লকডাউন ঘোষিত হয়নি।তবে একটু মনোযোগ দিয়ে পড়লেই বোঝা যাবে যে, খুবই স্পষ্ট ভাষায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিষ্কারভাবে বলাও হয়েছে যে, এমন পরিস্থিতিতে ‘যার জন্য মসজিদে আসা উচিত নয়’ তিনি আসবেন না। তেমনি ‘যার জন্য না আসার অবকাশ আছে’ তিনিও আসবেন না। এরপর এই দুই শ্রেণির স্পষ্ট তালিকাও দেওয়া হয়েছে। এর চেয়ে স্পষ্ট বক্তব্য আর কী হতে পারে? শুধু এইটুকুর উপর আমল করলেও চিকিৎসক ও অণুজীব বিশেষজ্ঞদের উপস্থাপিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও পরিসংখ্যান অনুসারে দৃশ্যত করোনা ঝুঁকি অনেকখানি হ্রাস পেতে পারে। অথচ শোনা যাচ্ছে কোথাও কোথাও বৃদ্ধ ব্যক্তিরা এবং হাঁচি-কাশি নিয়েও কেউ কেউ জামাতে উপস্থিত হচ্ছেন। এটা কিন্তু অনুচিত হচ্ছে।এরপর আরো বলা হয়েছে যে, ‘‘এই মুসল্লীরা ছাড়া অন্যরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে জামাতে উপস্থিত হবেন। তারপরও যাদের মধ্যে কোনো লক্ষণও নেই এবং পূর্বোক্ত দুই শ্রেণির আওতায়ও পড়েন না উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে তাদের কেউ যদি ( পরিবার ও সমাজের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে) মসজিদে না আসেন তাহলে আশা করা যায় তাদেরও গুনাহ হবে না।”বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘গুনাহ না হওয়াটাই’ কি যথেষ্ট নয়?সারকথা হচ্ছে, নির্দেশনা খুবই স্পষ্ট। যেভাবে যে যে শর্তের সাথে বলা হয়েছে সেভাবে বুঝেশুনে সেই মানসিকতা নিয়ে তা অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়।পাঁচ. উপরোক্ত নির্দেশনার বাইরে গিয়ে এখন মসজিদের জুমা-জামাতে ঢালাওভাবে সব শ্রেণির মুসল্লীর অংশগ্রহণ শুধু ব্যক্তিগত ঝুঁকিরই প্রশ্ন নয়; বরং নিজের সাথে পরিবার-পরিজনের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি এবং নিজের অজান্তে অন্য মুসল্লীদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মত প্রকাশ করেছেন। তাই মসজিদের প্রতি মনের টান ও জামাতে হাজির হতে না পারার বেদনা নিয়ে সাময়িকভাবে উপরোক্ত ব্যক্তিদের ঘরে নামায পড়াই সঙ্গত।শরীয়ত দ্বীনী কাজের কোনো কোনো প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে নিজের ঝুঁকি স্বীকার করাকে ছওয়াবের বিষয় সাব্যস্ত করলেও যেখানে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কিংবা আমলের চেয়েও বড় বিপদের বাস্তব আশঙ্কা থাকে সেখানে এই ঝুঁকি স্বীকারে উৎসাহিত করা হয় না।অতএব বর্তমান পরিস্থিতিতে ওই শ্রেণির মুসল্লীদের কর্তব্য হবে, বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনা অনুসারে ঘরে নামায পড়া এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও যথাসম্ভব অন্যান্য জমায়েতও এড়িয়ে চলা।মনে রাখতে হবে যে, বিশেষ অবস্থা ও পরিস্থিতিতে বিশেষ বিধান অনুসারে আমল করা এবং শরীয়তের ছাড় ও প্রশস্ততা গ্রহণ করাও তাকওয়া। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাঁর আনুগত্যের প্রেরণা নিয়ে এর অনুসরণ আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের এবং তাঁর রহমত লাভের উপায়।* * *একইসাথে আরো যে বিষয়গুলো লক্ষণীয় তা হচ্ছে :এক. সব রকমের গুনাহ ও পাপাচার বর্জন করে একান্তভাবে আল্লাহ-অভিমুখী হোন। তাওবা-ইস্তিগফার, দুআ-কান্নাকাটি, বেশি বেশি দরূদ পাঠ, কুরআন তিলাওয়াত, বিশেষত বালা মুসিবত থেকে মুক্ত থাকার আমলগুলোতে নিজেও মশগুল থাকুন, ঘরের স্ত্রী-পুত্র-পরিজনকেও মশগুল রাখুন। একই সাথে উলামায়ে কেরাম এবং চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে দেওয়া সতর্কতামূলক নির্দেশনা-বিধিগুলোও মেনে চলুন।দুই. ঘরে অবস্থানের সময়টুকুতে পরস্পরিক সুসম্পর্ক, সৎ ব্যবহার ও উত্তম আখলাকের চর্চা করুন। তবে সময় কাটানোর জন্য কোনো কোনো মহলের পক্ষ হতে প্রস্তাবিত ও সরবরাহকৃত বিভিন্ন মুভি ইত্যাদিতে লিপ্ত হওয়া থেকে বেঁচে থাকুন।স্ব স্ব পরিসরে প্রত্যেকে অন্যের সাথে কোমল ও দয়ার আচরণ করুন। দরিদ্র অভাবীদের প্রয়োজন পূরণে এগিয়ে আসুন। হাদীস শরীফে আছে, তোমরা যমীনওয়ালাদের উপর রহম করো, তাহলে আসমানওয়ালা তোমাদের উপর রহম করবেন।তিন. সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যমগুলোতে সাধারণত যা হয়ে থাকে পরস্পর ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, কটাক্ষ ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন। কারো মনে কষ্ট দেয়ার মতো কথা ও কাজ, বিশেষত মুত্তাকী উলামায়ে কেরাম এবং বৃদ্ধ-বয়স্ক ইবাদতপ্রাণ ব্যক্তিদের সম্পর্কে কট‚ মন্তব্যের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করুন। মনে রাখতে হবে যে, এখন আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আল্লাহর রহমত। ব্যবস্থা যা কিছুই আমরা গ্রহণ করি, আমাদের রক্ষা করবেন একমাত্র আল্লাহ। যারা আক্রান্ত হয়েছেন আল্লাহর হুকুমেই আক্রান্ত হয়েছেন, যারা রক্ষা পাবেন আল্লাহর হুকুমেই রক্ষা পাবেন।তাই আল্লাহ তাআলা নারাজ হন এমন সব কথা, কাজ ও আচরণ থেকে অবশ্যই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।চার. প্রত্যেক মুমিন একে অপরের জন্য দুআ করুন। এক মুমিনের অনুপস্থিতিতে অন্য মুমিনের দুআ বিশেষভাবে কবুল হয়ে থাকে। আর এক মুসলিম যখন অন্য মুসলিমের জন্য কল্যাণের দুআ করেন তখন ফেরেশতাগণ তার জন্য অনুরূপ কল্যাণ প্রার্থনা করেন।পাঁচ. শবে বরাতে অর্থাৎ ১৪ শা‘বান (বৃহস্পতিবার) দিবাগত রাতে নফল ইবাদতের জন্য মসজিদে জমায়েত হওয়া থেকে বিরত থাকুন। নিজ নিজ ঘরে আমল করুন। বেশি বেশি দোআ ইস্তিগফারে মশগুল থাকুন এবং মুক্তির এ রজনীকে পাপ-মুক্তির, রোগ-মুক্তির ও বালা-মুসিবত থেকে মুক্তির সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করুন।আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হেফাযত করুন এবং তাঁর রহমতের নিরাপদ বেষ্টনীর মধ্যে রাখুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।

হতাশা মুমিনের চরিত্র নয়

. -- মাওলানা শিব্বীর আহমদ
.
দুনিয়ার এ জীবনে বিপদ আসেই। নানান সময় নানান দিক থেকে বিপদ এসে হামলে পড়ে আমাদের ওপর। অর্থসম্পদ সন্তানাদি সম্মান-মর্যাদা- আক্রান্ত হয় সবকিছুই। দুনিয়ার জীবনে এ বিপদের মুখে পড়ার কথা অবশ্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে-

وَ لَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَیْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَ الْجُوْعِ وَ نَقْصٍ مِّنَ الْاَمْوَالِ وَ الْاَنْفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ، وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیْنَ، الَّذِیْنَ اِذَاۤ اَصَابَتْهُمْ مُّصِیْبَةٌ، قَالُوْۤا اِنَّا لِلهِ وَ اِنَّاۤ اِلَیْهِ رٰجِعُوْنَ.
আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব সামান্য ভয় ও ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফসলের কিছুটা ক্ষতি দিয়ে; আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও- যাদের ওপর কোনো মসিবত এলে বলে, ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’- নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর আর অবশ্যই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব। -সূরা বাকারা (২) : ১৫৫-১৫৬
বোঝা গেল, বিপদ আসবেই। বিপদের মুহূর্তে কী করতে হবে সেই নির্দেশনাও দেয়া আছে এ আয়াতে। কিন্তু বিপদ যখন কিছুটা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তা কেটে যাওয়ার মতো কোনো স্বাভাবিক সম্ভাবনা যখন মানুষের সামনে থাকে না, তখন আঘাত হানে হতাশা। হতাশা তাকে আল্লাহর রহমতের কথা ভুলিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর কুদরত থেকে তার দৃষ্টিকে সরিয়ে দিতে চায়। আল্লাহর সীমাহীন অনুগ্রহ এবং দয়াকে আড়াল করে দিতে চায়। অথচ পবিত্র কুরআনের ভাষ্য মতে- মুমিন কখনোই হতাশ হতে পারে না। কুরআনে বর্ণিত ঘটনা। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন বার্ধক্যে উপনীত, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা এসে তখন তাঁকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ শোনাল। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন- আমাকে তো বার্ধক্য পেয়ে বসেছে, এরপরও তোমরা আমাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছ?! কীসের ভিত্তিতে তোমরা এ সুসংবাদ দিচ্ছ? ফেরেশতারা বলল, আমরা তো সত্য কথাই বলছি। আপনাকে সত্য সুসংবাদই দিচ্ছি। বার্ধক্য আপনাকে স্পর্শ করেছে করুক, এ বৃদ্ধ বয়সেই আপনার সন্তান হবে। আপনি নিরাশদের দলে যাবেন না। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের কথার জবাবে বললেন, পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে আপন প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে? (সূরা হিজ্র, ৫৩-৫৬ নং আয়াত দ্রষ্টব্য)
আরেকজন নবীর আরেকটি ঘটনা। হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের সর্বাধিক প্রিয় সন্তান ছিলেন হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। কিন্তু তাঁর ভাইয়েরা বাবার এই আদরকে সহজে মেনে নিতে পারেনি, তাই কৌশলে তাঁকে একদিন বাবার কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে কূপে ফেলে দিল। আল্লাহর অসীম কুদরতে কূপ থেকে উঠে এসে একদিন তিনি মিশরের ধনভা-ারের দায়িত্বশীল হলেন। আর যে ভাইয়েরা তাঁকে নিয়ে চক্রান্ত করেছিল, দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে তারা খাবার আনতে হাজির হলো তাঁর কাছে। এরপর এক কৌশলে তিনি তাঁর সহোদর বিনইয়ামীনকে নিজের সঙ্গে রেখে দিলেন।দুই ছেলে হারিয়ে বাবা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম অন্য ছেলেদের বললেন, (তরজমা) ‘হে আমার ছেলেরা! তোমরা যাও, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো। তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহর রহমত থেকে তো কাফের ছাড়া অন্য কেউ নিরাশ হতে পারে না।’ -সূরা ইউসুফ (১২) : ৮৭
এ দুই নবীর শেষ কথা- এক আল্লাহকে যারা বিশ্বাস করে, যারা মুমিন, যারা সঠিক পথের অনুসারী, তারা তো কিছুতেই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না। তাঁরা উভয়েই ছিলেন পার্থিব বিপদের শিকার। একজন সন্তানহীন অবস্থায় পুরো জীবন কাটিয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন, আরেকজন এক সন্তানের শোকেই যখন পাথর হওয়ার অবস্থা, তখন হারালেন আরেক সন্তান! তবুও তাঁরা আল্লাহর অসীম কুদরতের কাছে আশাবাদী ছিলেন। হতাশা তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। পরিশেষে তাঁরা উভয়েই এই পৃথিবীতে থেকেই এর ফল ভোগ করে গেছেন।
মুমিনের শান এমনই হওয়া উচিত। যতকাল বেঁচে থাকবে, আল্লাহর রহমতের কাছে আশাবাদী হয়েই সে বেঁচে থাকবে। সাধ্যে যতটুকু কুলায়, চেষ্টা করে যাবে। একবারের চেষ্টা ব্যর্থ হলে আবার করবে। বারবার করবে। কবি যেমনটি বলেছেন : ‘পারিব না এ কথাটি বলিও না আর/ একবার না পারিলে দেখ শতবার।’
হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম দুই সন্তান হারিয়ে চরম সংকটের মুহূর্তেও ছেলেদের বলছেন- তোমরা গিয়ে ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সন্ধান করো! অর্থাৎ তিনি নিজেও আশাবাদী, আশা পোষণ করছেন। অন্যদের মনেও আশার সঞ্চার করতে চাচ্ছেন।
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেন, ‘হাবরু হাযিহিল উম্মাহ’-এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে র্শিক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস ১৯৭০১
বিপদে পড়লে মানুষ যে কীভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এর কিছু বর্ণনা পবিত্র কুরআনেও আছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَ اِذَاۤ اَنْعَمْنَا عَلَی الْاِنْسَانِ اَعْرَضَ وَ نَاٰ بِجَانِبِهٖ وَ اِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ كَانَ یَـُٔوْسًا.
আমি মানুষকে যখন কোনো নিআমত দিই তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় ও পাশ কাটিয়ে যায়। আর যদি কোনো অনিষ্ট তাকে স্পর্শ করে তাহলে সে সম্পূর্ণ হতাশ হয়ে পড়ে! -সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৮৩
নানা কারণেই মানুষ হতাশায় আক্রান্ত হতে পারে। বিপদে যদি কেউ ধৈর্যধারণ করতে না পারে তখন দেখা যায়- সামান্য সংকটেই সে ভেঙ্গে পড়ে। কখনো হতাশাগ্রস্তদের সঙ্গও আরেকজনকে হতাশ করে দেয়। আরবীতে প্রবাদ আছে-المرأ على دين خليله অর্থাৎ মানুষ তার বন্ধুর আদর্শই গ্রহণ করে থাকে। এটাই স্বাভাবিকতা। তাই কেউ যদি হতাশাগ্রস্তদের সঙ্গে ওঠাবসা করে, তাহলে এই হতাশায় একসময় সেও আক্রান্ত হবেই। কখনো আবার প্রত্যাশার পাহাড়ও মানুষকে হতাশ করে। নিজের জীবন নিয়ে কিংবা জীবনের কোনো দিক নিয়ে যখন কেউ নিজ সামর্থ্যরে বিবেচনা না করে অনেক উঁচু স্বপ্ন দেখতে থাকে, এর পরিণতিতেও সে হতাশাগ্রস্ত হতে পারে।একের পর এক যখন আশাভঙ্গ হতে থাকে, তখন হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে সে। আবার এমনও হয়- আকস্মিক কোনো বিপদ কাউকে এতটাই ঝাঁকুনি দেয়, যার ফলে সে আর মাথা সোজা করে সামনে এগিয়ে চলার হিম্মত করতে পারে না। পরিণামে কেবলই হতাশা।
হতাশা যে কেবল পার্থিব বিষয়াদিকেই আক্রান্ত করে এমন নয়, দ্বীনী ও পরকালীন বিষয়েও মানুষ হতাশাগ্রস্ত হয়। কারও যখন পাপের পরিমাণ বেশি থাকে, সারাদিন যখন কেউ বড় বড় পাপে ডুবে থাকে, যখন নিজেও পাপ করে, অন্যকেও পাপের দিকে ডাকে, মোটকথা, দিনের পর দিন মাসের পর মাস ধরে কেউ যখন কেবলই পাপই করে চলে, এমতাবস্থায় কেউ যদি দয়াময় প্রভুকে স্মরণ করতে চায়, তখন একরাশ হতাশা তাকে ঘিরে ধরতে পারে- আমার যে এত এত পাপ, আমারও কি এখান থেকে মুক্তি সম্ভব? গোনাহের পঙ্কিলতা থেকে পরিচ্ছন্ন হওয়ার সম্ভাবনা যতটুকু থাকে, তাও এ হতাশার আঘাতে শেষ হয়ে যায়। আবার এমন গোনাহগার কাউকে দেখে দ্বীনদার লোকেরাও অনেক সময় হতাশ হয়ে পড়ে- একে মনে হয় আর ভালো পথে আনা যাবে না! কথা কি, এ উভয় হতাশাই আল্লাহ তাআলার রহমত সম্পর্কে অজ্ঞতার ফল। আল্লাহর রহমত যখন ভাগ্যে জুটে, তখন তো ইসলামের চরম দুশমনও মুহূর্তের ব্যবধানে অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হয়। একটি উদাহরণ দিই।
ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রা.। তাঁর ইসলামগ্রহণের কাহিনী আমরা অনেকেই জানি- যখন নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতি কার্যক্রমকে কিছুতেই কাফের কুরাইশরা প্রতিহত করতে পারছিল না, আবার আরবের কঠিন গোত্রপ্রীতির কারণে কেউ তাঁকে হত্যা করার মতো সাহসও করছিল না, তখন এক মজলিসে ঘোষিত হল পুরস্কার। নবী মুহাম্মাদকে হত্যার পুরস্কার। বীর সাহসী তো সেখানে কতজনই ছিল। কিন্তু এক উমর ছাড়া কেউ সেদিন মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। তিনি খোলা তরবারি নিয়ে ছুটলেন নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার লক্ষ্যে। কিন্তু আল্লাহ তাআলার রহমত ও কুদরত দেখুন। কাফেরদের পুরো সমাজ মিলে যে কাজটি করার হিম্মত করতে পারেনি, একা উমর তা সম্পন্ন করার দুঃসাহস দেখাতে বেরিয়ে পড়ল। তাও কেমন অপরাধ- ইসলামের নবীকে সরাসরি হত্যা! উমরের এ মিশন সফল হলে তো ইসলাম এখানেই শেষ! এমন জঘন্য ও গুরুতর এক অপরাধের দিকে ছুটে চলা উমর পথিমধ্যে আল্লাহ তাআলার রহমতের বর্ষণে এতটাই সিক্ত হলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। এখানেই কি শেষ! তিনি ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুনিয়াতেই সুনির্দিষ্টভাবে যে দশজন সাহাবীকে জান্নাতী বলে ঘোষণা করেছেন, যাদেরকে আমরা ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ বলে স্মরণ করি, তিনি তাঁদের দ্বিতীয়জন।
আমাদের ইসলামী ইতিহাসের পরতে পরতে এমন অনেক বরেণ্য মনীষীর দেখা মিলবে, যারা শুরুর জীবনে নানামুখী পাপে ডুবে ছিলেন। পরবর্তী জীবনে তারা এতটাই বড় হয়েছেন, এখনো আমরা তাদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। ফুযায়ল ইবনে ইয়ায, মালিক ইবনে দিনারের মতো নামের এখানে অভাবে নেই।তাজা উদাহরণ দিই। সারা বিশ্বের মুসলমানদের শোকের সাগরে ভাসিয়ে এ দুনিয়া থেকে আকস্মিকভাবে বিদায় নিলেন পাকিস্তানের সঙ্গীতশিল্পী জুনায়েদ জামশেদ। শুরুর জীবনে ছিলেন পপতারকা। সেই জগতে তিনি ছিলেন যারপরনাই সফল। বিশ্বজোড়া তার খ্যাতি। জগতটা যে কতটা নোংরা- তা কি বলার অপেক্ষা রাখে! অথচ সেখান থেকে তিনি উঠে এলেন এমন উচ্চতায়, বিশ্বজুড়ে দ্বীনদার মুসলমানদের কাছে তিনি হয়ে উঠলেন একজন প্রিয় মানুষ। আর তাবলীগ জামাতের বিশ্বব্যাপী মেহনতের বদৌলতে বর্তমান পৃথিবীর আনাচেকানাচে এমন কত জুনায়েদ জামশেদ ছড়িয়ে আছে- কে জানে? গায়ক হয়ে উঠছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। সন্ত্রাসী-ডাকাত, ইসলামের দুশমন, অমুসলিম ধর্মগুরু, মন্দির-গীর্জার প্রধান ব্যক্তি উঠে আসছেন ইসলামের আলোকিত সীমানায়। এই বাস্তবতাকে সামনে রেখে কি দ্বীন-ধর্ম আর পরকাল নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ আছে? আল্লাহ তাআলার কী দ্ব্যর্থহীন আহ্বান-
قُلْ یٰعِبَادِیَ الَّذِیْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤی اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ، اِنَّ اللهَ یَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِیْعًا، اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ.
বলো, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেন। সন্দেহ নেই, তিনিই ক্ষমাশীল দয়ালু। -সূরা যুমার (৩৯) : ৫৩
একই কথা পার্থিব সংকট নিয়েও। এখানকার কোনো সংকটই স্থায়ী নয়। দুনিয়াই যেখানে ক্ষণস্থায়ী, সেখানে এসব সংকট স্থায়ী হবে কীভাবে? পবিত্র কুরআনের একটি ছোট সূরা ‘সূরা আলাম নাশরাহ’। এ সূরায় আল্লাহ তাআলার ওয়াদা-
فَاِنَّ مَعَ الْعُسْرِ یُسْرًا اِنَّ مَعَ الْعُسْرِ یُسْرًا.
কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে। -সূরা আলাম নাশরাহ (৯৪) : ৫-৬
আল্লাহ তাআলার এ ওয়াদা সর্বকালের জন্যেই সত্য। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাকের একটি বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণিত হয়েছে-
اَمَّنْ یُّجِیْبُ الْمُضْطَرَّ اِذَا دَعَاهُ وَ یَكْشِفُ السُّوْٓ ءَ وَ یَجْعَلُكُمْ خُلَفَآءَ الْاَرْضِ، ءَاِلٰهٌ مَّعَ اللهِ، قَلِیْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ.
বরং তিনি, যিনি অসহায়ের আহ্বানে সাড়া দেন, যখন সে তাঁকে ডাকে এবং তিনি বিপদাপদ দূর করে দেন আর পৃথিবীতে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করেন। আল্লাহর সঙ্গে কি অন্য কোনো মাবুদ আছে? তোমরা খুব সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর। -সূরা নামল (২৭) : ৬২
তাই হতাশ নয়; মুমিন হবে আশাবাদী। আল্লাহর রহমতের আশায় থাকবে সে; নিরেট পার্থিব বিষয় নিয়েও, দ্বীনী ও পরকালীন বিষয়েও। সর্বশক্তিমান দয়ালু আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর প্রতি যার বিশ্বাস থাকবে অটুট, তার অবশ্য হতাশ হওয়ার সুযোগ কোথায়! এ বিশ্বাস হতাশাকে দূর করবেই।
.
[ মাসিক আলকাউসার | রজব ১৪৩৯ || এপ্রিল ২০১৮ ]

পয়লা বৈশাখ : অর্থহীন কাজে লিপ্ত হওয়া মুমিনের শান নয়

কুরআন মাজীদের একটি সূরার নাম ‘আলমুমিনূন’।এ সূরার প্রথম আয়াতটি হচ্ছে-قَدْ اَفْلَحَ الْمُؤْمِنُوْنَ ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ’।এরপরের আয়াতগুলোতে আছে এই মুমিনগণের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা, যার একটি হচ্ছে- وَ الَّذِیْنَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَযারা অসার কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকে। -সূরা মুমিনূন ২৩ : ৩
সুতরাং মুমিন কখনো অর্থহীন কাজে লিপ্ত হতে পারে না। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- من حسن إسلام المرء تركه ما لا يعنيهঅর্থাৎ‘ব্যক্তির সুন্দর মুসলিম হওয়ার এক নিদর্শন, অর্থহীন কাজ ত্যাগ করা।’মুমিন তো আল্লাহর ঐ বান্দা, আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে যার বিশ্বাস, পৃথিবীতে তার আগমন অর্থহীন ও তাৎপর্যহীন নয়। তাঁর জীবনও উদ্দেশ্যহীন পরিণামবিহীন নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার ¯্রষ্টা ও প্রভু এবং তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত ও ইতাআত-উপাসনা ও আনুগত্য। আর এ তার জীবনের খণ্ডিত বিষয় নয়, জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাকে আল্লাহ তাআলার হুকুম মোতাবেকই চলতে হবে। এই যে জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এর সাথে যা কিছু সাংঘর্ষিক এবং যা কিছু অপ্রাসঙ্গিক মুমিনের তাতে কোনো আগ্রহ নেই। সুতরাং সে তা বর্জন করে এবং এড়িয়ে চলে।

ইসলামের এ গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সম্পর্কে সচেতনতা ও অনুশীলন এবং এ পরম গুণ অর্জনের আন্তরিক প্রচেষ্টা এখন খুব প্রয়োজন। কারণ ইসলামী জীবন-দর্শন ও মুমিন-বৈশিষ্ট্যের সম্পূর্ণ বিপরীত যে ‘অসার-অর্থহীন কার্যকলাপ’, এখন চারদিকে তারই স্রোত-প্রবাহ। সুতরাং প্রজ্ঞা, সচেতনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি এখন খুব বেশি প্রয়োজন। নতুবা জীবনের মূল্যবান সময়ের অপচয় হবে এবং জীবন লক্ষ্যভ্রষ্ট হবে।
এর অতিসাম্প্রতিক উদাহরণটি হল ‘বিশ্বকাপ ক্রিকেট’।সাধারণ হুজুগ ও ক্রীড়ামত্ততা ছাড়াও যেহেতু বাংলাদেশ দল এ আসরে অংশগ্রহণ করেছিল এজন্য এটা ‘দেশপ্রেমের’ও এক অনিবার্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছিল! একেই বলে চিন্তার ভ্রান্তি। চিন্তার গতিধারাই যখন বদলে যায় তখন সঠিক কর্মের আশা নির্বুদ্ধিতামাত্র। এ-ও আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এক প্রকারের শাস্তি। যারা আল্লাহকে ভুলে যায় আল্লাহ তাদের আত্মবিস্মৃত করে দেন। ফলে নিজের ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণের উপলব্ধি ও আগ্রহ তার থাকে না। আরবের এক কবি বলেছেন- إذا لم يكن عون من الله للفتى + فأول ما يجنى عليه اجتهاده
যখন ব্যক্তির উপর থেকে আল্লাহর সাহায্য উঠে যায় তখন সবার আগে যা তাকে আক্রমণ করে তা তার নিজের চিন্তা।

সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে তো কারো দ্বিমত নেই। শুধু ইসলামই নয়, পৃথিবীর সকল ধর্ম, এমনকি নাস্তিক ও বস্তুবাদী দার্শনিকেরাও সময়ের গুরুত্ব সম্পর্কে একমত। কিন্তু এইসব খেলাধুলার সময়ের অবস্থা দেখে মনে হয়, এ জাতির কাছে সবচেয়ে মূল্যহীন ও অপ্রয়োজনীয় জিনিসের নাম সময়। এখন মিডিয়ার কল্যাণে ও পর্দার ভিতরের-বাইরের নানা কারণে খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। কিন্তু একে কেন্দ্র করে যে উন্মাদনা আমাদের দেশে দেখা যায় তা বোধ হয় আর কোথাও নেই। এরপর এবারের বিশ্বকাপে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ম্যাচে আম্পায়ারিংয়ের যে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হল তা থেকেও বাস্তবতার উপলব্ধি আমাদের কতটুকু হল তা ভবিষ্যতই বলে দিবে।
আমাদের আত্মবিস্মৃতি ও অসার কার্যকলাপে লিপ্ততার আরেক উদাহরণ থার্টিফাস্ট নাইট ও পয়লা বৈশাখ। মিডিয়ার কল্যাণে ‘পয়লা বৈশাখ’উদযাপনও যেন এখন জাতীয় ঐতিহ্যের ব্যাপার! পয়লা বৈশাখে যেভাবে ও যেসব উপায়ে ‘বাঙালিয়ানা’র প্রকাশ দেখা যাচ্ছে একে অনাচার-উচ্ছৃঙ্খলা বললে বোধ হয় সবটা বলা হয় না। ধীরে ধীরে এটি বাঙালী মুসলিম মানসে ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতির প্রভুত্ব বিস্তারের এক বড় অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ, এখন পয়লা বৈশাখ পান্তা-ইলিশে সীমাবদ্ধ নয়, এখন পৈতা-ধুতিতে এর ‘উত্তরণ’ঘটছে। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে ধুতি-পায়জামা পরিধান এখন পয়লা বৈশাখের পরিচয়-চিহ্ন।
প্রথম কথায় ফিরে আসি। অর্থহীন কাজে লিপ্ত হওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।
আসুন, আমরা আমাদের ঈমানকে পুনরুজ্জীবিত করি এবং যে কোনো পর্যায়ে যা কিছু ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক তা বর্জন করি।
আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন

[ মাসিক আলকাউসার » সম্পাদকীয় » জুমাদাল আখিরাহ ১৪৩৬ . এপ্রিল ২০১৫ ]