আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উম্মত। আর উম্মতে মুহাম্মদীর অনুসারী ও দাবিদার হিসেবে আমাদের ওপর নবী (সা.)-এর কিছু অধিকার রয়েছে। যেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়া একজন মানুষ প্রকৃত মুসলমান বা নবীর উম্মতের দাবিদার হতে পারে না। আমরা এখানে সেগুলোর কয়েকটি আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।
১. নবী (সা.) কর্তৃক আনীত রিসালাতের ওপর পরিপূর্ণ ঈমান আনয়ন করা। আর এ কথা বিশ্বাস করা যে তাঁর রিসালাত পূর্ববর্তী সব রিসালাতকে রহিত করে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মুহাম্মদ (সা.) প্রদর্শিত পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতিতে আল্লাহর ইবাদত না করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং যে জ্যোতি আমি অবতরণ করেছি তার ওপর ঈমান আনয়ন করো।
’ (সুরা তাগাবুন, আয়াত : ৮)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুল (সা.) তোমাদের যা দেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা থেকে নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাকো।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ৭)
২. এ কথায় দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা যে রাসুল (সা.) রিসালাতের দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছেন। তাঁর ওপর অর্পিত আমানত আদায় করেছেন। উম্মতকে সংশোধনকরণের নিমিত্তে নসিহত করেছেন।
আবু জর (রা.) বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) আমাদের এমন অবস্থায় রেখে গেছেন যে আকাশে কোনো পাখি তার দুই ডানা মেলে নড়াচড়া করলে তার সম্পর্কেও আমাদের জ্ঞান দান করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ : ৫/১৫৩)
৩. রাসুল (সা.)-কে এমনভাবে ভালোবাসা যে তাঁর ভালোবাসা যেন নিজের ও সব সৃষ্টিজগতের ভালোবাসার ওপর প্রাধান্য পায়। যদিও সব নবী ও রাসুলদের ভালোবাসা ওয়াজিব। তাঁর ভালোবাসা সব মানুষের ভালোবাসা তথা সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা ও অন্যান্য যাবতীয় আত্মীয়-স্বজন এবং নিজের জীবনের ভালোবাসার ওপরও প্রাধান্য দেওয়া ফরজ। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলুন, তোমাদের কাছে যদি আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও তাঁর (আল্লাহর) পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশি প্রিয় হয় তোমাদের পিতৃবর্গ, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভ্রাতৃরা, তোমাদের স্ত্রীরা, তোমাদের আপন গোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা করো এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালোবাস, তবে অপেক্ষা করো আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত।
আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।’ (সুরা তওবা, আয়াত : ২৪)
এখানে আল্লাহ তাআলা তাঁর ভালোবাসার সঙ্গে রাসুলের ভালোবাসাকে একসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে ধমক দিয়েছেন যে যার কাছে তার সম্পদ, পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসার চেয়ে বেশি প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা করো আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত।
আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউই মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার কাছে আমি তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সব মানুষ থেকে প্রিয় না হব।’ (বুখারি, হাদিস : ১৫, মুসলিম, হাদিস : ৪৪)
৪. নবী (সা.)-কে সম্মান করা, তাঁকে মর্যাদা দেওয়া। কেননা এটা নবী (সা.)-এর সে প্রাপ্য অধিকারগুলোর অন্তর্ভুক্ত, যেগুলো স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কোরআন কারিমে শিরোধার্য করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সামনে (কোনো বিষয়ে) অগ্রণী হয়ো না।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১)
৫. নবী (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি সালাত ও সালাম পাঠ করা (দরুদ পাঠ করা)। যেমনটি আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর ওপর সালাত (দরুদ) পাঠ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা তাঁর ওপর সালাত পাঠ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম দাও।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৬)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আমার ওপর একবার (দরুদ) সালাত পাঠ করবে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার ওপর ১০ শতবার সালাত (দরুদ) পাঠ করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৮৪)
আল্লাহর সালাত পাঠের অর্থ হচ্ছে তাঁর পক্ষ থেকে রহমত বর্ষণ করা।
আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) বলেছেন, বড় কৃপণ হলো ওই ব্যক্তি যার কাছে আমার নাম উল্লেখ হলো কিন্তু সে আমার ওপর সালাত পাঠ করল না। তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪৬)
এ কথার ওপর সব ওলামায়ে কেরামের ঐকমত্য রয়েছে যে নবী (সা.)-এর নাম শুনলে বা নিলে তাঁর ওপর সালাত (দরুদ) পাঠ করা ওয়াজিব।
৬. রাসুল (সা.)-এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি সব মুসলমানের মধ্যে যথাযথভাবে তুলে ধরা। ছোট বাচ্চাদের অন্তরে রাসুলের সম্মানবোধ সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের গড়ে তোলা।
লেখক : পরিচালক, তামিরুল উম্মাহ মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন