বৃহস্পতিবার, ২২ মার্চ, ২০১৮

জবরদস্ত আল্লাহর ওলি

আবুল হুসাইন আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বাগাবি নুরি রহ.। প্রসিদ্ধ সুফি। জবরদস্ত আল্লাহর ওলি। সৎ কাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেধ করতে মোটেও পরোয়া করতেন না। তিনি ছিলেন জুনাইদ বাগদাদির শিষ্য। বাগদাদেই তাঁর জন্ম। বাগদাদেই বেড়ে ওঠা। তাঁর পূর্বপুরুষের নিবাস ছিল খুরাসানে। এজন্য তাঁকে খুরাসানিও বলা হয়।
একবার বাগদাদের দাজলা নদীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। নদীর কূল ঘেঁষে বড় একটা নৌকা বাঁধা ছিল। মাঝি অনেকগুলো মটকা নিয়ে বসে আছে। তিনি নৌকায় উঠলেন। মাঝিকে জিজ্ঞেস করলেন, 
-এগুলো কী?
-তা জেনে আপনার লাভ কী?
-এগুলো কার?
-আল্লাহর কসম! আপনি অনেক বাচাল লোক। এগুলো খলিফা মু’তাদি বিল্লাহর মদ।

এটা শুনে তিনি অনেক রেগে গেলেন। হাতে লাঠি ছিল। তা দিয়ে মটকা ভাঙা শুরু করলেন। মাঝি তাকে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু তিনি শুনছেন না। মাঝি উঁচু আওয়াজে চিল্লাতে শুরু করল। লোকেরা পুলিশ ডাকল। ভাঙতে ভাঙতে তিনি সব মটকা ভেঙে ফেললেন। আর মাত্র একটা মটকা বাকি ছিল। তিনি তা ভাঙলেন না।
পুুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে গেল। খলিফার সামনে নিয়ে হাজির করল। খলিফা জিজ্ঞাসা করলেন, 
-তুমি কে?
-আমি সৎ কাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধকারী।
-কে তোমাকে এই কাজের জন্য নিযুক্ত করেছে?
-আমিরুল মুমিনীন, যিনি আপনাকে খলিফা বানিয়েছেন, তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন।

কথাটা শুনে মাথা নিচু করে নিলেন। এরপর বললেন, 
-এই কাজ করার দুঃসাহস কী করে হয়েছে? আর কেন করেছ? 
-আপনার প্রতি ভালবাসার কারণে। আর এটা আপনার জন্য ক্ষতিকর ছিল। 
খলিফা আবারও মাথা নিচু করে ফেললেন।

কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,
-তুমি সব মটকা ভাঙলে কিন্তু একটা বাকি রাখলে; সেটা ভাঙনি কেন?
-আমি যখন ভাঙা শুরু করি, তখন আমার মনে আল্লাহ’র সন্তুষ্টির নিয়ত ছিল। শেষ মটকা ভাঙার সময় আমার মনে আত্মগৌরব চলে এসেছিল। এমন মনে হল, এটা জানা সত্যেও যে এগুলো খলিফার – আমি কত বড় একটা কাজ করে ফেললাম। মনের এই অবস্থাটির কারণে আমার মনে হল যে, এখন আমি আর আল্লাহর জন্য কাজটি করছি না। তাই থেমে গেলাম। আর সেজন্যই শেষ মটকাটা ভাঙা হয়নি।

তাঁর এই কথা শুনে খলিফার দিল নরম হয়ে গেল। তিনি বললেন, 
-তোমাকে আমি তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিযুক্ত করলাম। নিষেধ যা কিছু দেখবে তা পরিবর্তন করে ফেলবে।
-এখন আমার এই কাজ করার ইচ্ছা নেই।
-কেন?
-আগে আমি একাজ করতাম আল্লাহ’র সন্তুষ্টি এবং সাহায্যের সাথে, আর এখন করতে হবে আপনার সন্তুষ্টি এবং পুলিশের সাহায্যে।
-আপনার কোনো প্রয়োজন থাকলে বলেন।
-আমাকে এ দরবার থেকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হোক এবং আমার পথে আপনার কোন লোক যেন বাধা না হয়।

বাদশাহ সম্মত হলেন। তাঁর কথামতো আদেশ দিলেন। ছাড় পেয়ে তিনি বাগদাদ ছেড়ে বসরায় চলে যান। সেখানেই অবস্থান করেন।
তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন আত্মগোপন করতে; যেন খলিফা অথবা তার পক্ষের কোন ব্যক্তি সুপারিশের জন্য না আসে। খলিফার ইন্তেকালের পর তিনি বাগদাদে ফিরে আসেন।
----------
সূত্রঃ سير أعلام النبلاء ১৪/৭৬, হাফিজ শামসুদ্দিন যাহাবি* تاريخ الملوك والأمم ১৩/৭৩, ইমাম আবুল ফারজ ইবনুল জাওযি* حلية الأولياء ১০/২৪৯, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানি* البداية والنهاية ১১/১০৬, হাফিজ ইমাদুদ্দিন ইবনে কাসির।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন