সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ইবনি লী বাইতান!


আমার জন্যে একটি ঘর নির্মাণ করুন। কোথায়? জান্নাতে! আবার কোথায়! কথাটা আসিয়া (আ.)-এর। তিনি রাব্বে কারীমের কাছে ফরিয়াদ জানিয়েছিলেন। এটা তো জান্নাতে ঘর নির্মাণের কথা! জান্নাতে আল্লাহ আমাদের জন্যে ঘর নির্মাণ করবেন। এজন্য আমাদের করণীয়? দুনিয়াতে আল্লাহর জন্যে ঘর নির্মাণ করা!
.
মদীনায় এসেই নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমেই একটা মসজিদ নির্মাণ করেছেন। কুবাপল্লীর মসজিদ। বোঝা গেলো, ইসলামি সমাজ গঠনে, মসজিদ নির্মাণের গুরুত্ব অপরিসীম! রাষ্ট্র গঠনের আগে মসজিদ নির্মাণ। 
.
পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে সেরা স্থান কোনটি? আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় স্থান কোনটি? কুইজের উত্তর একটা হাদীসে আছে:
أَحَبُّ الْبِلاَدِ إِلَى اللهِ مَسَاجِدُهَا، وَأَبْغَضُ الْبِلاَدِ إِلَى اللهِ أَسْوَاقُهَا
মসজিদ হলো আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় স্থান। বাজার আল্লাহর সবচেয়ে অপ্রিয় স্থান (মুসলিম)। 
.
আমরা দুনিয়াতে মসজিদ বানালে, প্রতিদানে কী মিলবে? উত্তরটা নবীজির কাছ থেকেই শুনি:
مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ، بَنَى اللهُ لَهُ فِي الْجَنَّةِ مِثْلَهُ
আল্লাহর জন্যে মসজিদ বানালে, আল্লাহও তার জন্যে জান্নাতে অনুরূপ ঘর বানাবেন (মুসলিম)। 
.
প্রথম শুনলে মনে হবে, এ-আর এমন কি, জান্নাতে একটা ঘর বানাবেন? আখেরাতে একটা ঘর থাকার কতো যে, গুরুত্ব, সেটা ফুটপাতে রাত কাটানো মানুষগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। আমার নামায-রোজা কবুল হলো কি না, তার তো নিশ্চয়তা ে নই, কিন্তু একটা মসজিদ নির্মান করলে, জান্নাতে একটা আবাসন নিশ্চিত!
.
প্রশ্ন জাগে, আমি গরীব মানুষ! এত টাকা কোথায় পাবো? সমাধান নবীজি নিজেই দিয়ে গেছেন:
مَنْ بَنَى مَسْجِدًا لِلَّهِ كَمَفْحَصِ قَطَاةٍ، أَوْ أَصْغَرَ، بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ
যে পাখির বাসার মতো বা তার চেয়েও ছোট একটা মসজিদ বানালো, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে একটা ঘর বানাবেন! (ইবনে মাজা)!
-
পাখির বাসার মতো মসজিদও হয়? এমন পিচ্চি মসজিদে নামায কে পড়বে? মানুষ না পাখি? তাহলে বোঝা গেলো, গোটা মসজিদ একাই বানাতে হবে এমন নয়। মসজিদের নির্মাণকাজে ‘টুটাফাটা’ অংশগ্রহণ করলেই হবে। আমি যদি অল্প কিছু টাকা দিয়েও শরীক হই, আমি গোটা মসজিদ নির্মানকাজের ‘প্রতিদান’ পেয়ে যাবো। 
.
এজন্য বড়লোক হওয়ার প্রয়োজন নেই। পথের ফকিরও মসজিদ নির্মাণে শরীক হতে পারে। কয়েকটা টাকার বিনিময়ে, সেও হয়ে যেতে পারে, জান্নাতে বিশাল আলীশান প্রাসাদের সন্তুষ্ট মালিক!
.
পথের ধারে কোথাও নতুন মসজিদ নির্মান হতে দেখলেই, পকেটে হাত দেয়ার অভ্যেস করে ফেলা যায়। হাদীসটা মনে রেখে, আজ থেকেই আমরা জান্নাতে ‘কনস্ট্রাকশন ফার্ম’ খুলে বসতে পারি। একবার দান করবো, নতুন একটা সাইট ওপেন হয়ে যাবে। দুনিয়াতে একটা রিয়েল এস্টেট কোম্পানী দাঁড় করাতে কতো কতো কাঠখড় পোড়াতে হয়! আর জান্নাতে?
= স্রেফ পকেটের সামান্য টাকা ব্যয় করেই, বিলাসবহুল প্রাসাদের মালিক বনে যেতে পারি। রিহ্যাব সদস্য হতে হবে না। এলাকার মাস্তানদের বখশিশ-বখেড়া দিতে হবে না। রাজউক থেকে প্ল্যান পাস করিয়ে নেয়ার ঝামেলা নেই। সয়েল টেস্টের মাথাব্যথা নেই। বায়না-রেজিস্ট্রি-নামজারির ঝক্কি নেই। 
.
আল্লাহর ঘরনির্মাণে শরীক হলাম, সাথে সাথে জান্নাতে একটা ‘অভ্রংলিহ-অভ্রভেদী-হাইরাইজ-আকাশছোঁয়া-গগনচুম্বী’ প্রাসাদের মালিক হয়ে গেলাম!
-

শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ


শায়খ আবদুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ রহ.। অনেক বড় মুহাদ্দিস। তার মতা মুহাদ্দিস সব সময় জন্ম নেয় না। এতবড় আলেম হয়েও নিজের উস্তাজ শায়খ মুস্তাফা যারকা রহ.-কে কোট পরতে সহায়তা করছেন। ভঙ্গিটাও লক্ষ্যণীয়! শায়খের ভঙ্গি থেকে বিনয় আগ্রহ ইহতিরাম (সম্মানদান) আনন্দ যেন চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে! শায়খ আবদুল ফাত্তাহ রহ. আমাদের মাওলানা আবদুল মালেক সাহেব দা. বা. এর খাস ওস্তাদ!
-
ওস্তাজের খেদমত, এই উম্মাহর অন্যতম বৈশিষ্ট্য! আবু বকর রা. থেকে বর্তমান পর্যন্ত! ওস্তাজের খেদমতের এই ধারা চলে আসছে! গারে সাওর থেকে হালের খানকা পর্যন্ত ব্যাপ্ত!
.
অদ্ভুত ব্যাপার হলো, আল্লাহ তা‘আলা এই অধমকেও গতকাল ঈশার পর, নিজের শায়খকে ‘কোট’ পরতে সহযোগিতা করার তাওফীক দিয়েছেন। মাদরাসায় আসার পর এক আরব ভাইয়ের ওয়ালে এই ছবি চোখে পড়লো! ইন্না হাজা লাশাইয়ুন উজাব! তবে কাজের ধরনটাই শুধু এক! নইলে:দুই ঘটনায় আকাশ-পাতাল তফাত! চার ব্যক্তির স্তরেও যোজন যোজন ফারাক!সুবহা-নাল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহু আকবার!


শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

প্রাচীন ইতালীতে খৃষ্টানরা একই টয়লেটে দলবদ্ধ হয়ে মলত্যাগ করত!


প্রাচীন ইতালীতে খৃষ্টানরা একই টয়লেটে দলবদ্ধ হয়ে মলত্যাগ করত! এমনকি টয়লেটের মাঝামাঝি ছিল মল ভেসে যাওয়ার নালা! তাও মলত্যাগের আসনে উপবিষ্ট ব্যক্তিদের চোঁখের সামনে দিয়ে! এখানেই শেষ নয়; তখন ভৃত্যরা মল ভেসে যাওয়ার ঐ নালায় লেগে যাওয়া মলগুলো পরিষ্কার করার জন্য চক্কর দিত! 
.
.
প্রাচীন ইতালীর এই সামাজিক রীতি প্রচলিত ছিল ইউরূপের অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের শেষ অববাহিকা পর্যন্ত। এই রীতি ৪০০ খৃষ্টাব্দ থেকে চালু হয়ে ১৪০০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত ছিল বহমান ! অর্থাৎ আজ থেকে ৬০০ বছর আগেও এই ধারা চালু ছিল!
.
.
ইউরূপের অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগের শেষ অববাহিকায়- ও মুসলিম বিশ্বের কতিপয় পন্ডিতগন বিভিন্ন শাস্ত্রে সবার চাইতে আগ বেড়ে গিয়েছিলেন। চিকিৎসা, জ্যোতিষ, জ্যামিতি, রসায়ন, ভাষা, ধর্মীয় জ্ঞান, জলবিদ্যা, ভূবিদ্যা, অংক, রচনা ও অনুবাদ ইত্যাদি শাস্ত্রে পারদর্শী ছিলেন।
অথচ, তখনও ইউরূপীরা একই টয়লেটে দলবদ্ধভাবে মলত্যাগ করত! একেবারে হায়ওয়ানের মত! 
.
.
ইউরূপীরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সবক নিলে মুসলিম সভ্যতা থেকেই নিয়েছে। আর আজ এরাই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে সভ্যতার ফেরিওয়ালা! আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, এই তারাই আজ মুসলিমদের বুনো মনে করে! 
.
.
আমাদেরকে আমাদের পুরোনো সভ্যতায় ফিরে যেতে হবে। আমাদের হারানো ঐতিহ্য আর ইজ্জত-সম্মানকে পূণরায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তবে এরজন্য আমাদেরকে নতুনকরে ইসলামে প্রবেশ করতে হবে। আব্রাহাম লিঙ্কনের শরীয়ত থেকে বের হয়ে মুহাম্মাদ সা. -এর শরীয়তে প্রবেশ করতে হবে।
.
.
সূত্র-
হাযারাতুল আরব
_ গষ্টেভ ল্যাবন।
মাদীনাতুল মুসলিমীন ফিল আন্দালুস
_জুসেফ ম্যাক।


খিলাফতে রাশেদার সময়কার কথা


খিলাফতে রাশেদার সময়কার কথা। ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. তখন রাজধানী মদীনা মুনাওয়ারায় খিলাফতের মসনদে সমাসীন। শামের গভর্নর কাতিবে ওহী হযরত মু'আবিয়া রা.।
.
ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. শামের দিকে রওয়ানা হলেন। অতঃপর যখন দামেশকের নিকটবর্তী হয় গেলেন, তখন একটি আড়ম্বরপূর্ণ, অভিজাত শোভাযাত্রা দলের মাঝে হযরত মু'আবিয়া রা. এর দেখা পাওয়া গেল। ওমর রা. একটি গাধার উপর আরোহী ছিলেন, পাশেই ভিন্ন আরেকটি গাধায় আরোহী ছিলেন হযরত আব্দুর রাহমান বিন আওফ রা.। কিন্তু মু'আবিয়া রা. তা দেখতে পেলেননা, তাই তিনি উভয়কে অতিক্রম করে আগে চলে গেলেন।
.
কিছুদূর যাওয়ার পর মু'আবিয়া রা. কে বলা হল যে, আপনি খলীফাতুল মুসলিমীন ওমর রা. কে পেছনে ফেলে এসেছেন! তা শুনে তিনি পেছন ফিরে আসলেন। অতঃপর যখন ওমর রা. কে দেখতে পেলেন, নিজ বাহন থেকে অবতরণ করলেন। কিন্তু ওমর রা. তাঁকে দেখে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন! মু'আবিয়া রা. ও ওমর রা. এর বাহনজন্তুর পাশে পাশে পায়ে হেঁটে চললেন! 
.
ব্যাপারটি হযরত আব্দুর রাহমান বিন আওফ রা. এর কাছে বিব্রতকর ঠেকল। তিনি বলে উঠলেন, হে আমীরুল মু'মিনীন, আপনি তো মানুষটাকে কষ্ট দিচ্ছেন! তখন ওমর রা. মু'আবিয়া রা. এর দিকে চেহারা ফিরালেন এবং বললেন
-হে মু'আবিয়া, আপনি কি শোভাযাত্রা দলের অধিপতি?! 
- মু'আবিয়া রা. জবাব দিলেন, হ্যাঁ, হে আমীরুল মু'মিনীন! 
- ওমর রা. বললেন, কিন্তু এইসব কেনো?! 
- মু'আবিয়া রা. জবাব দিলেনঃ হে আমীরুল মু'মিনীন! আমি এমন একটি শহরে অবস্থান করি, যেখানে শত্রুপক্ষের চরদের থেকে নিরাপদ থাকা যায়না। সুতরাং তাদের জন্য সুলতানের পক্ষ থেকে এমন কিছু অতীব প্রয়োজন, যা তাদেরকে ভীতসন্ত্রস্থ করবে! এতে যদি আপনি আমায় অনুমতি প্রদান করেন, তাহলে আমি তা বলবৎ রাখব, অন্যথায় আমি তা পরিত্যাগ করব।
.
তা শুনে ওমর রা. বললেন, হে মু'আবিয়া, আল্লাহর কসম! যখনই আমার কাছে আপনার ব্যাপারে কোনো বিষয় পৌঁছে; যা আমি অপছন্দ করি এবং এক্ষেত্রে আপনাকে ভরৎসনা করতে চাই, তখনই আপনি আমায় পেষনদন্তগুলোর সন্ধিস্থলের চেয়েও আরো বেশি সংকীর্ণ স্থানে ফেলে দেন! আপনি যা বলেছেন, তা যদি সত্য হয়, তাহলে ইহা একজন বুদ্ধিমানের দৃষ্টিভঙ্গি, আর যদি সত্য না হয়, তাহলে ইহা একজন সাহিত্যিকের ধোঁকা! আমি এ ব্যাপারে আপনাকে আদেশও করবনা; নিষেধও করবনা! 
.
সূত্র-
(মুখতাসার তারীখু দিমাশক্ব_ ইবনে মানযূর রাহ., মৃত্যু ৭১১ হি.)
.
আল্লাহু আকবার! এমনই ছিলেন তাঁরা! হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা. এর ভাষায়- এঁরাই আসহাবে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ তা'আলা তাঁদেরকে নির্বাচন করেছেন তাঁর রাসুলের সাহচর্যের জন্য। কারও সুন্নাহ অনুসরণ করতে হলে এঁদের সুন্নাহ- ই অনুসরণ করতে হবে। কেননা জীবিত ব্যক্তির ব্যাপারে ফিৎনার আশংকামুক্ত হওয়া যায়না। (শারহুস সুন্নাহ, ১/২১৪, সংক্ষিপ্ত)।
.
আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন রাসুলের মজলুম সাহাবী হযরত মু'আবিয়া রা. এর উপর। আর তার বিদ্ধেষীদের হিদায়াত দান করুন। আমীন।


শাহজাদী ফাতেমা বিনতে আব্দুল মালিক


শাহজাদী ফাতেমা বিনতে আব্দুল মালিক (রাহমাতুল্লাহি আলাইহা)। উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের আদরের দুলালিনী। উমাইয়া খলিফা হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) র সহধর্মিণী। কাঁদতে কাঁদতে চোঁখেরজ্যোতি হারিয়ে ফেললেন! 

.
ফাতেমার কাছে আগমন করলেন তাঁর ভাই মাসলামা বিন আব্দুল মালিক ও হিশাম বিন আব্দুল মালিক। উভয়ে জিজ্ঞেস করলেন-

- তোমার এই অবস্থা কেনো? তোমার এই হাহুতাশ কি তোমার স্বামীর জন্য? যদি হয়ে থাকে, তাহলে এ ধরণের স্বামীর জন্য হাহুতাশ করা যুক্তিযুক্ত, নাকি তোমার এই হাহুতাশ পার্থিব কোনো শান-শওকত বিসর্জনের উপর? আমরা তো তোমার সামনেই রয়েছি, আমাদের ধনজন ও তো আছে! 
- ফাতেমা উত্তর দিলেন, এগুলোর জন্য আমি হাহুতাশ করিনি, এগুলোর কোনো একটির ব্যাপারেও আফসোস করিনি, বরং আল্লাহর ক্বসম! আমি তাঁর (ওমর বিন আব্দুল আযীয) থেকে এমন একটি দৃশ্য দেখেছি, এবং আমি বুঝতে পেরেছি যে, আমি যা প্রত্যক্ষ করেছি, ইহাই তাকে এই পার্থিব মোহ থেকে বের করে ফেলেছে! আমি একটি ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখেছি, যার পরিচয় তাঁর অন্তরকে প্রশান্ত করে দিয়েছে! 

-উভয় ভাই প্রশ্ন করলেন, তাঁর থেকে তুমি কী ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখতে পেয়েছ?
- ফাতেমা উত্তর দিলেন, আমি একদিন রাতে তাঁকে দেখেছি যে, তিনি দাঁড়িয়ে নামায পড়ছেন। নামাযে তিলাওয়াত করতে করতে এই আয়াতে আসলেন, *যেদিন মানুষেরা বিক্ষিপ্ত পরওয়ানার মত হবে *যেদিন পাহাড়গুলো তেলের গাদলার মত হবে। (সুরা ক্বারি'আহ, ৪-৫)। 

এই আয়াতদ্বয় তিলাওয়াত করতেই তিনি চিৎকার করতে লাগলেন- হায় অশুভ সকাল! 
অতঃপর মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, এবং গোঙাতে লাগলেন। আমি মনে করলাম এক্ষুনি তাঁর প্রাণবায়ু বেরিয়ে পড়বে! অতঃপর তিনি শান্ত হলেন, আমি মনে করলাম তিনি এই দুনিয়া ত্যাগ করে চলে গেছেন! 

অতঃপর তাঁর চেতনা ফিরে আসল, এবং চিৎকার করে বলতে লাগলেন- হায় অশুভ সকাল! 
এরপর পুরো ঘরে তিনি চক্কর দিতে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, আমার তো ধ্বংস সেদিন, যেদিন মানুষেরা বিক্ষিপ্ত পরওয়ানার মত হয়ে যাবে, যেদিন পাহাড়গুলো তেলের গাদলার মত হয়ে যাবে! 

ফাতেমা বলেন, এভাবেই তিনি চক্কর দিতে থাকলেন আর বলতে রইলেন, এমনকি ফজর হয়ে গেল! আবারো তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, যেমন নাকি তিনি দুনিয়া ত্যাগ করে চলে গেছেন! শেষ পর্যন্ত ফজরের আযান ভেসে আসল! 
আল্লাহর ক্বসম! যখনই এই রাতের কথা স্মরণ করি, আমার চোখঁকে সামলাতে পারিনা; চোঁখেরজল আটকিয়ে রাখতে আমি ব্যর্থ হয়ে যাই! 

আল্লাহ রহম করুন ওমর বিন আব্দুল আযীযের উপর।
আল্লাহ রহম করুন ফাতেমা বিনতে আব্দুল মালিকের উপর। 

সূত্র-
(সালাহুল উম্মাহ ফী উলুওয়িল হিম্মাহ, ৬/৩২২)

খৃষ্টান ইতিহাসজ্ঞ 'ক্যান্টওয়েল স্মিথ'


খৃষ্টান ইতিহাসজ্ঞ 'ক্যান্টওয়েল স্মিথ' কোনোপ্রকার জড়তা বা সংকীর্ণতা ব্যতিরেকে চরম সত্যকে এভাবেই ব্যক্ত করেছেন, "মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -ই প্রকৃত চ্যালেঞ্জ যার সম্মুখিন হতে হয়েছে পশ্চিমা সভ্যতাকে তার গোটা ইতিহাসে!" 

এই খৃষ্টান ইতিহাসবিদ আরও বলেছেন, "নিশ্চয় ইউরোপ ঐ আতঙ্ককে কখনও ভুলতে পারবেনা, যে আতঙ্ক ইউরোপের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে লেগেই ছিল ক্রমাগত পাঁচ শতাব্দী পর্যন্ত - এমতাবস্থায় ইসলাম ইউরোপের সাথে যুদ্ধ করতেই ছিল!"
.
.
ক্যান্টওয়েল স্মিথের উল্লেখিত ঐ আতঙ্ক দ্বারা উদ্দেশ্য হল ওসমানী খিলাফাহর আতঙ্ক, যা কয়েক শ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপকে শান্তিতে ঘুমোতে দেয়নি! ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে বিস্তৃত ছিল ওসমানী খিলাফাহর সীমানা। ক্রুসেডারদের অনিষ্ট থেকে বাঁচাতে এসব সীমান্তে দাপড়িয়ে বেড়াত ওসমানী খিলাফাহর সীমান্ত রক্ষীরা। ভূমধ্যসাগরের তীরে সদা নোঙর করে থাকত ওসমানী খিলাফাহর নৌবহর। আজকের ক্ষমতাধর ইউরোপ তখন ওসমানী খিলাফাহর শক্তি-সাহস, শৌর্য-বীর্য, ক্ষমতা-দাপট, আর হুংকারের সামনে ভয়ে কাঁপত থরথর! 
.
.
ইউরোপীরা এই প্রকৃত সত্যকে অনুধাবন করতে পেরেছিল ঠিকই, তাই বেঈমান মোস্তফা কামাল পাশার মাধ্যমে ওসমানী খিলাফাহর কবর রচনা করে তুরষ্কে তাদের খিলাফাহ 'গনতন্ত্র' কে প্রতিষ্টা করেছে। এবং কালক্রমে মানবাধিকার আর স্বাধীনতার মুলা দেখিয়ে তা বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম ভূখন্ডে বিস্তৃত করে গোটা মুসলিম বিশ্বকে তাদের খিলাফাহর অধীনে নিয়ে মুসলিম উম্মাহকে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছে! মুসলিম উম্মাহ নপুংসক হওয়ার ইহাই প্রকৃত রহস্য। 

সূত্র:
(আল-ইসলাম ফিল আসরিল হাদীস)


ব্রিটানিয়ান স্টারলিন মুদ্রার উপর স্পেন বিজয়ী মুসলিম সেনাপতি 'তারিক বিন যিয়াদ'র কল্পিত চিত্র, যাকে জিব্রালটার গভর্নমেন্ট ব্যবহার করে!


ব্রিটানিয়ান স্টারলিন মুদ্রার উপর স্পেন বিজয়ী মুসলিম সেনাপতি 'তারিক বিন যিয়াদ'র কল্পিত চিত্র, যাকে জিব্রালটার গভর্নমেন্ট ব্যবহার করে! 

শুধু কি তাই?

স্পেনের ৭৪১ এর চেয়েও বেশি সড়ক ও ভবন (শিক্ষা প্রতিষ্টান, যাদুঘর, মসজিদ, রেস্তোরা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্টান) -এর মাঝে লিখা রয়েছে তারিক বিন যিয়াদের নাম! এমনকি কয়েকশ' স্পেনীশ খৃষ্টান নিজেদের নাম রেখেছে তারিক বিন যিয়াদ!

যদি তারিক বিন যিয়াদ কোনো ঔপনিবেশক দলের সেনাপতি হতেন, যারা স্পেনকে দখল করে নিয়ে স্পেনীশ জাতিকে তাদের ভূখন্ড থেকে বিতাড়িত করেছে, তাহলে কি স্পেনীশ খৃষ্টানরা এভাবে তারিক বিন যিয়াদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করত, এবং এতসব সড়ক ও ভবনে তাঁর নাম লিখে রাখত চির স্মরণীয় করে রাখতে, এমনিক নিজেদের নাম পর্যন্ত রাখত তাঁর নামে?! 

গোটা পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি মেলা ভার, যারা তাদের উপর আক্রমণকারী যোদ্ধা ও তাদের ভূখন্ডকে দখলকারীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, তাদের মাটিতে ঔপনিবেশিকদের সম্মান করে। কিন্তু স্পেনীশরা ঠিক তা- ই করেছে তারিক বিন যিয়াদের সাথে! 

ইহা এজন্য যে, স্পেনীশরা তারিক বিন যিয়াদকে একজন ঔপনিবেশক মনে করেনা; একজন মহান সেনাপতিই মনে করে, যিনি স্পেনের মাটিতে 'সভ্যতা'র বীজ বপন করেছেন!

সূত্র: (টুইটারের আরব সেলিব্রেটি মুনাওয়ির সুলাইমান এর মাধ্যমে 'আকাযীবু ই'লামিল আরাবী' হতে সংগ্রহকৃত)

আমীরুল মু'মিনীন হিশাম বিন আব্দুল মালিক রাহ.


আমীরুল মু'মিনীন হিশাম বিন আব্দুল মালিক রাহ. - হজ্জের মওসূমে কা'বা শরীফের অাভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। প্রবেশ করে সেখানে সালিম বিন আব্দিল্লাহ বিন ওমর রাহ. কে দেখতে পেলেন। তখন সালিম বিন আবিল্লাহ'র গায়ে গাঢ় সুতার একটি চাদর (অর্থাৎ নিম্নমানের, যা তৎকালিন সময়ের দরিদ্র ব্যক্তিরা পরিধান করত) ছিল। হিশাম সালিম কে বললেন, 

- হে সালিম! আপনি আমার কাছে আপনার প্রয়োজন ব্যক্ত করুন।
সালিম বললেনঃ আমি আল্লাহর কাছে লজ্জাবোধ করছি যে, তাঁর ঘরের ভিতর তাঁকে ব্যতিত অন্য কারো কাছে চাইব! 
অতঃপর যখন সালিম কা'বা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন, হিশাম তাঁর পিছু নিলেন এবং বললেন, 
- এখন তো কা'বা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছেন, সুতরাং এখন আপনার প্রয়োজন বলতে পারেন!
সালিম বললেনঃ আমি আপনার কাছে কী চাইব, দুনিয়ার প্রয়োজন নাকি আখেরাতের প্রয়োজন? 
- দুনিয়ার প্রয়োজন! 
সালিম উত্তর দিলেনঃ আমি তো দুনিয়ার মালিকের কাছেও দুনিয়া চাইনি, তাহলে কেমনে ঐ ব্যক্তির কাছে দুনিয়া চাইতে পারি, যিনি দুনিয়ার মালিক হতে পারেননা?! 

(সিয়ারু আ'লামিন নুবালা, খন্ড ২৪, সালিম বিন আব্দিল্লাহর জীবনাংশ)। 
.
.
চিন্তা করুন, ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর দৌহিত্র সালিম বিন আব্দিল্লাহ রাহ. এর ইয়াক্বিন, তাক্বওয়া, তাওয়াক্কুল আ'লাল্লাহ আর দুনিয়াবিমুখতা! সাথে দেখুন, হিশাম বিন আব্দুল মালিক রাহ. এর বিনয়, নম্রতা ও বড়জনকে সম্মান দেয়ার অভিপ্রায়ে অনঢ়তা, অথচ তিনি উমাইয়া খিলাফাহর একজন খলিফা!

খন্দকের যুদ্ধ


হিজরতের ৫ম বছর। কাফেররা মদীনা মুনাওয়ারাকে বেষ্টন করে নিল। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবায়ে কিরাম (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) উপস্থিত যুদ্ধকৌশল হিসেবে মদীনার বাইরে বিরাট বিরাট পরিখা খনন করে নিলেন। ইতিহাসে এই যুদ্ধ খন্দকের যুদ্ধ বলে পরিচিত।
.
.
এই খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী ও শিশুদেরকে নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন দূর্গে রাখলেন। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - হযরত সাফিয়্যা বিনতে আব্দিল মুত্তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ও তাঁর স্ত্রীদেরকে হাসসান বিন সাবিত দূর্গে রাখলেন। কারণ, এই দূর্গ সবচেয়ে বেশি মজবুত ছিল। 
.
.
মুসলমানগন কাফেরদের সাথে যুদ্ধে ব্যস্ত। এক ইহুদি চুপিসারে হাসসান বিন সাবিত দূর্গের আশেপাশে চক্কর দিতে শুরু করল গুপ্তচরবৃত্তির জন্য। কিন্তু হযরত সাফিয়্যা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তাকে দেখে ফেললেন, এবং বুঝতে পারলেন যে, সে জানার চেষ্টা করছে দূর্গে শুধু নারী ও শিশুরাই রয়েছে, নাকি কিছু পুরুষরাও রয়েছে।
.
.
সাফিয়্যা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) একটি খুঁটি হাতে নিলেন। খুব তাড়াতাড়ি নড়েচড়ে উঠলেন! দূর্গের এমন একটি জায়গায় ওৎপেতে রইলেন, যেখান থেকে খুব সহজেই শত্রুকে ধরাশায়ী করা যায়! খুটি দিয়ে আঘাত করলেন ইহুদীর মাথায়। আঘাতটি জায়গামত লাগল! সাথে সাথে ইহুদী মটিতে লুটিয়ে পড়ল। সাফিয়্যা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) খুব ব্যাপকভাবে আঘাত করতে থাকলেন, যাতে করে ইহুদীটা মারা যায় এবং খবর নিয়ে স্বগোত্রীয়দের কাছে পৌঁছতে না পারে।
.
.
অতঃপর ছুরি দিয়ে ইহুদীর মাথা কেটে ফেললেন! কর্তিত মস্তকটি দূর্গের উপর থেকে নীচে নিক্ষেপ করলেন! মস্তকটি গড়িয়ে গড়িয়ে দূর্গের নীচে স্বগোত্রীয় ইহুদীদের সামনে এসে থামল, যারা নীচে তার জন্য অপেক্ষা করছিল। অতঃপর যখন তারা প্রেরিত ইহুদীর কর্তিত মস্তক দেখল, বলে উঠল, আমরা আগে থেকেই জানি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী ও শিশুদেরকে কোনো নিরাপত্তারক্ষী ব্যতিত একা রেখে যাবেননা। অতঃপর তারা দৌড়ে পলায়ন করল! 
.

সূত্র: (আল-মু'জামুল কাবীর লিত-ত্বাবরানী, হাদিস নং- ২০২৬৪)


হল্যান্ড ক্রুসেডাররা বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম ভূখণ্ড ইন্দোনেশিয়া আক্রমন


পঞ্চাশ দশকের দিকে হল্যান্ড ক্রুসেডাররা বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম ভূখণ্ড ইন্দোনেশিয়া আক্রমন করে ঔপনিবেশিকতা স্থাপন করেছিল। এমন কোন নির্যাতন নাই যা তারা ইন্দো জাতির উপর করেনি। ইন্দো মুসলিমরাও ইজ্জত-আব্রু আর নিজেদের দ্বীন রক্ষায় অস্ত্র ধরেছিল হল্যান্ড ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে। এভাবেই তারা বুঝিয়ে দিয়েছিল যে, ইসলাম কোনো লাঞ্চিত দ্বীন নয়; ইজ্জতের দ্বীন।

ইন্দো লড়াকুদের মাঝে আত্নসম্ভ্রবোধসম্পন্না নারীরাও ছিল! এঁদের একজন ছিলেন 'রাসূলা সাঈদ'। হল্যান্ড ক্রুসেডাররা ইন্দো মুজাহিদাহ 'রাসূলা সাঈদ' কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছিল। তখন উম্মাহর এই বীরাঙ্গনা ভীরু ইন্দো পুরুষ জাতকে সম্বোধন করে একটি কটাক্ষমূলক কথা বলেছিলেন, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী পর্যন্ত উম্মাহর বুযদিল মুসলমানদের জন্য সবক হয়ে থাকবে। 

তিনি বলেছিলেন, 

"হে পুরুষ জাতি, তোমরা যদি নির্যাতন ও কয়েদখানাকে ভয় কর, তাহলে তোমরা নারী হয়ে যাও, যাতে আমরা নারীরা তোমরা পুরুষদের স্থলাভিষিক্ত হতে পারি"! 

('সুওয়ারুম মিনাশ শারক্ব ফী ইন্দোনেসিয়া' ১৫৫। শাইখ আলী তানতাভী রাহ.)


সায়্যিদুনা হযরত আবু বকর রা.


সায়্যিদুনা হযরত আবু বকর রা. যখন মুসলিম উম্মাহর খলিফা মনোনিত হলেন, বাইতুল মাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার)- এ কোনো কিছু সঞ্চিত রাখতেননা; সবকিছুই ফকির-মিসকিনদের মাঝে বন্টন করে দিতেন।
.
ঐতিহাসিক ইবনে সা'দ রাহ. বলেন, প্রথমে বাইতুল মাল ছিল মদীনার একপ্রান্তে সানাহ নামক স্থানে। সেখানে বাইতুল মালের জন্য কোনো পাহারাদার ছিলনা। আবু বকর রা. কে প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসুলের খলীফা! আপনি বাইতুল মালের জন্য পাহারাদার নিযুক্ত করেননা কেনো? আবু বকর রা. উত্তর দিলেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই। প্রশ্ন করা হল, কেনো হে খলিফাতুল মুসলিমীন? উত্তরে বলললেন, বাইতুল মালে কোনো কিছু নেই; সব আমি বন্টন করে দিয়েছি। 
.
অতঃপর তিনি বাইতুল মালকে মদীনায় স্থানান্তরিত করলেন। এবং তিনি যেখানে অবস্থান করতেন, সেখানেই বাইতুল মাল স্থাপন করলেন। তাঁর খিলাফতকালে জুহাইনা ও বনূ সুলাইম নামক গোত্রের খনিজ সম্পদ নিয়ে আসা হল। তিনি সম্পদগুলোকে বাইতুল মালে রাখলেন। তা থেকে মানুষকে দলে দলে দান করলেন।
.
তিনি বন্টনের ক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখতেন। স্বাধীন, গোলাম, নারী, পুরুষ, ছোট, বড়কে সমানহারে দিতেন। তিনি বাইতুল মাল থেকে ঘোড়া, উট, অস্ত্র খরিদ করে আল্লাহর পথের মুজাহিদদের সাহায্য করতেন। তদ্রুপ শীতকালে তিনি পল্লী অঞ্চল থেকে আমদানিকৃত লোমশ, গাঢ় কম্বল খরিদ করে মদীনার বিধবা নারীদের মাঝে বিলি করতেন।
.
যখন আবু বকর রা. মৃত্যুবরণ করলেন, তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন হযরত ওমর বিন খাত্তাব, আব্দুর রহমান বিন আউফ, ওসমান বিন আফফান (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)। সারা ঘর তালাশ করে কোনো দিরহাম-দিনার পেলেননা, শুধুমাত্র কাপড়ের একটি থলি পেলেন। সেই থলি খুলে মাত্র একটি দিরহাম পেলেন! আবু বকর রা. এর উপর তাঁদের খুব দয়া হল! উপস্থিত লোকেরা তা দেখে ঝরঝর কেঁদে ফেলল! যে ব্যক্তি গোটা পৃথিবী শাসন করলেন, মৃত্যুর পরে তাঁর ঘরে মাত্র একটি দিরহাম পাওয়া গেল!!!
.
সূত্র-

(তাবাক্বাতে ইবনে সা'দ। খন্ড ৩, পৃষ্টা ১৯৫)



খলিফাতুল মুসলিমীন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)


খলিফাতুল মুসলিমীন ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন শাম থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদীনায় আগমন করলেন, মানুষের অগোচরে চুপিসারে বেরিয়ে পড়লেন প্রজাদের অবস্থা জানার জন্যে। ঘুরতে ঘুরতে তিনি একটি তাবুর ভেতরে একজন বৃদ্ধাকে দেখতে পেলেন। সেই তাবুকে লক্ষ্য করে তিনি সামনে এগোলেন।
.
.
ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কে বৃদ্ধা চিনতে পারেনি, তাই বৃদ্ধা স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করে উঠলো, এই যে! ওমর কী করছেন? 
-তিনি শাম থেকে নিরাপদ ফিরে এসেছেন।
- আল্লাহ আমার পক্ষ থেকে তাঁকে যেনো কোনো মঙ্গল দান না করেন!
- কেনো হে বুড়িমা?! 
- তিনি যখন থেকে খিলাফতের মসনদে আসীন হয়েছেন, সেদিন থেকে আমি তাঁর পক্ষ থেকে কোনো দিরহাম-দীনার দান হিসেবে পাইনি! 
-আপনি এই জায়গায় আছেন, ওমর কি তা জানেন? 
- সুবহানাল্লাহ! যদি কেউ মানুষের শাসনভার গ্রহন করে, তাহলে সে তার রাজ্যের পূর্ব থেকে পশ্চিমের মধ্যকার হালত জানতে পারবেনা- তা তো আমার জানা নয়! 
.
ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কেঁদে ফেললেন! অতঃপর নিজেকে সম্বোধন করে বললেন, হায় ওমর! তোমার বিরুদ্ধে বৃদ্ধারাও অভিযোগ করছে! 
.
অতঃপর ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হে আল্লাহর বান্দী! ওমরের পক্ষ থেকে কৃত অন্যায়কে আপনি আমার কাছে কত টাকার বিনিময়ে বিক্রি করবেন? আমি ওমরকে দোযখ থেকে বাঁচাতে রহম করবো।
- তুমি আমার সাথে মশকারি করছো?! তোমার উপর যে আল্লাহ রহম করবেন- তার নিশ্চয়তা আছে? 
- আমি মশকারি করছিনা।
.
এভাবে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বৃদ্ধার সাথে দর কষাকষি করতে থাকলেন। শেষপর্যন্ত পনেরো দীনারের বিনিময়ে খলিফা ওমরের কৃত অন্যায়কে খরিদ করে নিলেন।
.
ইত্যবসরে সেখানে আগমন করলেন হযরত আলী ইবনে আবু তালিব ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)। উভয়েই ওমর রা. কে সালাম দিলেন- আসসালামু আলাইকুম হে আমীরুল মু'মিনীন! 
.
.
সাথে সাথে বৃদ্ধা মাথায় হাত দিলো! একপ্রকার ভড়কে গিয়ে বললো, হায় আমার বরবাদী! আমি আমীরুল মু'মিনীনকে তার সামনেই অপমান করলাম! 
- কোনো সমস্যা নেই। আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন।
.
অত:পর ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বিনিময় পরিশোধ করতে চাইলেন, কিন্তু পরিশোধ করার মত কোনো টাকা-পয়সা পেলেননা। অতঃপর তাঁর তালিযুক্ত কাপড় থেকে একটুকরো তালি ছিঁড়ে সেখানে লিখলেন-

'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। ইহা ওমর যে তাঁর কৃত অন্যায়কে পনেরো দীনারের বিনিময়ে খরিদ করেছেন, সেটার চুক্তিপত্র। সুতরাং হাশরের ময়দানে আল্লাহর সামনে ওমরের দণ্ডায়মান অবস্থায় বৃদ্ধা যে অভিযোগ করবে, তা থেকে ওমর মুক্ত। অমুক বৃদ্ধার পক্ষ হতে এই চুক্তিপত্রের সাক্ষী হলেন আলী ইবনে আবু তালিব ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ।'
.
.
আবু তালহা রা. বলেন, অতঃপর তিনি চুক্তিপত্রটি আমাকে দিলেন, এবং বললেন, যখন আমি মৃত্যুবরণ করবো, তখন ইহা আমার কাফনের ভেতর রেখে দিবেন। এই চুক্তিপত্র নিয়েই আমি আল্লাহর মোলাকাত করবো।
.
সূত্র-
.
* সিমত্বুন নুজূমিল আওয়ালী। আল্লামা আব্দুল মালিক আল-ঈসামী।
* রিয়াযুন নাযিরাহ ফী মানাক্বিবিল আশারাহ। ইমাম ত্বাবারী রাহ.।


প্রেম-ভালোবাসার বাস্তবতা রয়েছে,


প্রেম-ভালোবাসার বাস্তবতা রয়েছে, ইহা নিছক কোনো হেঁয়ালিপনা নয়। দু'জন মানব-মানবীর বৈধ প্রেম। বৈধ ভালোবাসা। প্রেম-ভালোবাসা আছে বলেই তো জীবন এতো সুন্দর। প্রেম-ভালোবাসাহীন জীবন অসুন্দর, অসুখী, অনর্থক। আরব্য কবি 'শাওক্বী'র ভাষায় 'প্রেমই জীবন, জীবনই প্রেম।' এই প্রেম-ভালোবাসা শুধু মানব জীবনেই নয়, জীব-জন্তুর মাঝেও আছে। এমনকি প্রকৃতির মাঝেও প্রেম-ভালোবাসা বিদ্যমান। আর তাইতো পৃথিবীটা এতো সুন্দর! আরবের জনপ্রিয় প্রয়াত কথাসাহিত্যিক, দার্শনিক, বিচারপতি শাইখ আলী তানতাভী (রাহিমাহুল্লাহ)র কথা এ বিষয়ে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী! স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত।
.

'কসম সেই আল্লাহর, যিনি ফুলকে ফুলের উপর ঝুকিয়ে দেন, যাতে কলি জন্মলাভ করে। যিনি কপোতকে কপোতীর উপর সোহাগী করে তুলেন, যাতে ডিম সৃষ্টি হয়। যিনি পাহাড়কে পাহাড়ের নিকটবর্তী করে দেন, যাতে মধ্যখানে উপত্যকা সৃষ্টি হয়। যিনি যমীনকে তার চলার পথে সূর্যের সামনে ভাঁজ করে দেন, যাতে পালাক্রমে দিন-রাত আগমন করে। তিনিই অন্তরের সাথে অন্তরের 'বাঁধন' তৈরি করেন, যাতে সন্তান জন্মলাভ করে।

যদি প্রেম-ভালোবাসা না থাকতো, তাহলে গহীন বনে গাছের শাখা শাখার উপর ঝুকে পড়তোনা, দূরের ঝুপড়ীতে হরিন হরিনীর উপর সোহাগী হয়ে উঠতোনা, এবং পাহাড়ও ছোট টিলার উপর ঝুকে আসতোনা, ঝর্ণাও সাগরের দিকে নালা বইয়ে দিতোনা।

যদি প্রেম-ভালোবাসা না থাকতো, তাহলে যমীনের শুষ্কতায় মেঘমালা কেঁদে উঠতোনা, বসন্তের ফল-ফুল দেখে যমীন হেসে উঠতোনা, এবং জীবন সার্থক হতোনা।

প্রেম-ভালোবাসায় কোনো অপরাধ নেই। প্রেমিকদের কোনো দোষও নেই। অপরাধী তো সে, যে প্রেমে পড়ে তার দ্বীনকে ভুলে যায়, অথবা তার চরিত্রকে নষ্ট করে ফেলে, অথবা তার পুরুষত্বকে হারিয়ে ফেলে, বা ক্ষণিকের স্বাদ আস্বাদন করতে গিয়ে জাহান্নামে হাজার বছরের শাস্তিকে খরিদ করে নেয়!'

সূত্র-

(সুওয়ারুন ওয়া খাওয়াত্বির, ২৭৯। শাইখ আলী তানতাভী রাহ.।)


দু'জন মানব-মানবীর সম্পর্কের বাঁধন 'বিয়ে'


দু'জন মানব-মানবীর সম্পর্কের বাঁধন 'বিয়ে'- ই প্রকৃত প্রেম, প্রকৃত ভালোবাসা। বিয়ে পূর্বকালীন যে প্রেম-ভালোবাসা আমরা দেখি, তা আদৌ প্রকৃত প্রেম-ভালোবাসা নয়; ইহা ক্ষণিকের মোহ। সাময়িক উন্মাদনা। মওসুমী উতল হাওয়া। এ ব্যাপারে আরবের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক, দার্শনিক, বিচারপতি শাইখ আলী তানতাভী রাহ.- বলেন,
.
.
বিয়ে পূর্বকালীন প্রেম-ভালোবাসা মদের ন্যায়, আর প্রেমিক নেশাখোরের মত। প্রেমিকার অসুন্দরকে সুন্দর হিসেবে দেখতে পায়, আর অপূর্ণাঙ্গতাকে পূর্ণাঙ্গতা হিসেবে দেখতে পায়। অতঃপর যখন তার আসক্তির নেশা কেটে যায়, পরিশুদ্ধ জ্ঞান ফিরে পায়; তখন প্রেমিকার মন্দকে অনুধাবন করতে পারে, তার প্রকৃত চিন্তার আলোকে দেখতে পায়। 
.
.
বিয়ে পূর্বকালীন এই টান-আকর্ষন কেনো হয়? উত্তর হলো - বিপরিত লিঙ্গের প্রতি টান-আকর্ষনের ধারা সৃষ্টির শুরুলগ্ন থেকেই বহমান। আর তা শুধু মানুষের মাঝেই নয়; জীব-জন্তুর মাঝেও বিদ্যমান। বনের বিশালকায় হাতি থেকে নিয়ে গর্তের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পিপিলিকার মাঝেও! তবে মানুষ যেহেতু সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব, তাই এ টান-আকর্ষনকে সুন্দর ও নৈতিকভাবে বাস্তবায়িত করতে প্রতিটি ধর্মেই সামাজিকভাবে বিয়ের প্রচলন রয়েছে। বিয়ে ব্যতিত এই টান-আকর্ষনকে বাস্তবায়িত করতে গেলেই সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব মানুষের তখন আর জীব-জন্তুর সাথে কোনো পার্থক্য থাকেনা। শাইখ আলী তানতাভী রাহ.- বলেন, পানির স্বভাব যেমন অপেক্ষাকৃত নিচু ভূমির দিকে গড়িয়ে যাওয়া, এতে বাঁধ সাধলে যেমনি পানি বাঁধের উপর দিয়ে গড়ায়, ঠিক তদ্রূপ মানুষের স্বভাব হলো বিপরিত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ। এই আকর্ষণকে বিয়ের মাধ্যমে প্রতিফলিত করতে হয়। অন্যথায় এই আকর্ষণ ব্যভিচার ও অন্যান্য চরিত্রবিধ্বংসী অনৈতিক কুকর্মে রূপ নেয়।
.
.
সূত্র-

৩০/১২/১৯৬০ সালে সিরিয়ার 'আল-আইয়াম' পত্রিকায় প্রকাশিত শাইখ আলী তানতাভীর 'আল-ফুসূলুল ইজতিমাইয়্যাহ' নামক প্রবন্ধ।

* ইরহামুশ শাবাব, ০৭, শাইখ আলী তানতাভী।


খলিফাতুল মুসলিমীন ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ.


খলিফাতুল মুসলিমীন ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. খিলাফাহর দায়িত্ব গ্রহনের পর যেমনি পার্থিব চাকচিক্য ত্যাগ করে অল্পে তুষ্টির জীবন বেছে নিয়েছিলেন, তেমনি তাঁর মেয়ে আমিনা, উম্মে আম্মার ও উম্মে আব্দুল্লাহকেও এমনই জীবনের উপর অভ্যস্ত করিয়ে নিয়েছিলেন। তাঁর মেয়েদের পার্থিব দরিদ্রতার কথা পড়লে চোখ আর্দ্র হয়ে যায়! 
. 
.
ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. প্রতিদিন ঈশার নামায আদায় করে তাঁর মেয়েদের কাছে যেতেন। যেয়ে সালাম দিতেন। একদিন ঈশার নামাযের পর অন্ধকারে মেয়েদের কাছে গিয়ে উপস্থিত হলেন, অতঃপর যখন মেয়েদের উপস্থিতি অনুভব করলেন; মেয়েদের মুখে হাত রাখলেন। মেয়েরা পিতার উপস্থিতি টের পেয়ে তড়িৎ দরোজা দিয়ে পলায়ন করলো! 

ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. মেয়েদের লালন পালনকারী মহিলাকে জিজ্ঞেস করলেন, এদের কী হলো? মহিলা উত্তর দিলো, রাতের খাবার হিসেবে তাদের জন্য পেয়াজ আর রশুন ছাড়া কিছুই ছিলোনা; তাই তাদের মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসার ভয়ে তারা পালিয়েছে! 

তা শুনে ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. কেঁদে ফেললেন। অতঃপর বললেন, হে আমার কন্যারা! দুনিয়ার রঙ-বেরঙ তোমাদের কোনোই উপকারে আসবেনা। তদ্রূপ কোনো উপকারে আসবেনা যদি তোমাদের পিতাকে টেনে হিচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়। এই কথাটি শুনে তাঁর মেয়েরা বড়গলায় কান্না জুড়ে দিলেন। ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. দ্রুত প্রস্থান করলেন সেই স্থান থেকে।
.
.
একবার ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. এর মেয়ে আমিনা তাঁর সম্মুখ দিয়ে গমন করলেন। খলিফা তখন বসা ছিলেন। তিনি ডাক দিলেন: আমিনা! আমিনা! কিন্তু আমিনা না থেমে চলে গেলেন। তিনি একজন ব্যক্তিকে তাঁকে নিয়ে আসার জন্য হুকুম দিলেন। আমিনাকে নিয়ে আসা হলো। জিজ্ঞেস করলেন, তুমি ডাক শুনলেনা কেনো? আমিনা উত্তর দিলেন, আমার পরনের জামা ভালো নয় তাই! 

ওমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. বললেন, হে মুযাহিম! ঐ যে বিছানাকে আমি ছিঁড়ে ফেলেছি, তা থেকে একে একটা জামা বানিয়ে দাও! 
.
.
সূত্র-

(সাফহা-তুন মুশরিক্বাতুন মিন হায়াতি উমার ইবনি আব্দিল আযীয, পৃষ্টা- ১২৩)

মুহুর্তেই হাসতে পারে, আবার মুহুর্তেই কাঁদতে পারে


ইমাম শা'বী রহ. বলেন, ক্বাযী শুরাইহ রহ.- এর কাছে একজন নারীলোক আগমন করে এক পুরুষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলো। ক্বাযীর দরবারে এসে নারীটি চোঁখ ভাসিয়ে কান্না জুড়ে দিলো! শা'বী রহ.- বলেন, আমি বললাম, হে আবু উমাইয়া! আমার ধারণা এই নারী নির্যাতিতা। 

ক্বাযী শুরাইহ রহ. বললেন, ইউসুফ আ: এর ভাইয়েরাও বিকেলবেলা কেঁদে কেঁদে তাদের পিতার কাছে আগমন করেছিলো।
.
.
এই কাহিনী আমায় একটি কথা স্মরণ করিয়ে দিলো। আমার শ্রদ্ধেয় ছোটোমামা M N Zaman Najmu একদিন কথা প্রসংগে বলেছিলেন, দুনিয়াতে এমন কোনো প্রজাতি নেই, যে প্রজাতি এক টিপাতেই চোঁখের পানি বের করে ফেলতে পারে। যদি থাকে, তাহলে সে প্রজাতি হলো নারী প্রজাতি! 
.
.
সত্যিই নারীদের ছলনা বুঝা বিষমধায়! এরা মুহুর্তেই হাসতে পারে, আবার মুহুর্তেই কাঁদতে পারে! শুধু কান্না নয়; বিলাপ করে কাঁদতে পারে! অথচ, এই কান্না মেকি! আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন সূরা ইউসুফে বলেই দিয়েছেন, 'নিশ্চয় তোমাদের (নারীদের) ছলনা মারাত্নক!'

এক নজরে দেওয়ানবাগীর কিছু ভ্রান্ত আকিদা ও উক্তি সমূহঃ



=“আমার অসংখ্য মুরিদান স্বপ্ন ও কাশফের মাধ্যমে আল্লাহর দীদার লাভ করেছে। আমার স্ত্রী হামিদা বেগম ও আমার কন্যা তাহমিনা এ খোদা স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহকে দাড়ী গোফ বিহীন যুবকের ন্যায় দেখতে পায়।”
–সুত্রঃ আল্লাহ কোন পথে, পৃঃ ২৩
=সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন “শুধু আমি নই, আমার স্ত্রী কন্যা সহ লক্ষ্য লক্ষ্য মুরিদানও আল্লাহকে দেখেছেন”
–সুত্রঃ সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ।
=“দেওয়ানবাগে আল্লাহ ও সমস্ত নবী রাসূল, ফেরেস্তারা মিছিল করে এবং আল্লাহ নিজে শ্লোগান দেন।”
–সুত্রঃ সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ, মার্চ ১৯৯৯ ইং।
=“আমি এক ভিন্নধর্মের লোককে ওজীফা ও আমল বাতলে দিলাম। ক’দিন পর ঐ বিধর্মী স্বপ্নযোগে মদিনায় গেল। নবিজীর হাতে হাত মিলালো। নিজের সর্বাঙ্গে জিকির অনুভব করতে লাগলো। তারপর থেকে ওই বিধর্মী প্রত্যেক কাজেই অন্তরে আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে থাকে।”
–সুত্রঃ মানতের নির্দেশিকা:- ২৩, সূফী ফাউন্ডেশন, ১৪৭ আরামবাগ, ঢাকা।
=“কোন লোক যখন নফসীর মাকামে গিয়ে পৌঁছে, তখন তাঁর আর কোন ইবাদাত লাগেনা।”
–আল্লাহ কোন পথে,পৃঃ ৯০
=“জিব্রাইল বলতে আর কেও নন, স্বয়ং আল্লাহ-ই জিব্রাইল।”
–সুত্রঃ মাসিক আত্মার বাণী, ৫ম বর্ষ, ১ম সঙ্খ্যাঃ২১
=“সূর্যোদয় পর্যন্ত সাহরী খাওয়ার সময়। সুবহে সাদেক অর্থ প্রভাতকাল। হুজুরেরা ঘুমানোর জন্য তাড়াতাড়ি আযান দিয়ে দেয়। আপনি কিন্তু খাওয়া বন্ধ করবেন না। আযান দিয়েছে নামাজের জন্য। খাবার বন্ধের জন্য আযান দেয়া হয়না।”
–সুত্রঃ মাসিক আত্মার বাণী, সংখ্যাঃ নভেম্বরঃ ৯৯, পৃঃ ৯
=“মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যুপর্যন্ত হায়াতে জিন্দেগীকে পুলসিরা বলা হয়।”
–সুত্রঃ আল্লাহ কোন পথে, তৃতীয় সংস্করনঃ ৬০
=“আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে আত্মা এক বিচ্ছেদ যাতনা ভোগ করতে থাকে। প্রভূর পরিচয় নিজের মাঝে না পাওয়া অবস্থায় মৃত্যু হলে সে বেঈমান হয়ে কবরে যাবে। তখন তাঁর আত্মা এমন এক অবস্থায় আটকে পড়ে যে, পুনরায় আল্লাহর সাথে মিলনের পথ খুঁজে পায়না। আর তা আত্মার জন্য কঠিন যন্ত্রনাদায়ক। আত্মার এরূপ চিরস্থায়ী যন্ত্রনাদায়ক অবস্থাকেই জাহান্নাম বা দোযোখ বলা হয়।”–আল্লাহ কোন পথেঃ
=দেওয়ানবাগী নিজেকে ইমাম মাহদী দাবী করেন। অতঃপর দরুদে মাহদী রচনা করে্ন। দরুদে মাহদীঃ “আল্লাহুম্মা ছাল্লী আ’লা সাইয়্ ওয়ালা আ’লা ইমাম মাহদী রাহমাতাল্লিল আলামীন ওয়ালিহী ওয়াছাল্লীম।
=” ময়লার স্তূপে অর্ধমৃত ও বিবস্ত্র অবস্থায় রাসুল (সাঃ) কে দেখেছি। দেওয়ানবাগী ১৯৮৯ সালে নাকি একটি ব্যতিক্রমধর্মী স্বপ্ন দেখে ফেলেন। এ স্বপ্ন সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি দেখি ঢাকা ও ফরিদপুরের মধ্যবর্তী স্থান জুড়ে এক বিশাল বাগান ফুলে-ফলে সুশোভিত। ওই বাগানে আমি একা একা হেটে বেড়াই। হঠাৎ বাগানের একস্থানে একটি ময়লার স্তূপ আমার চোখে পড়ে। আমি দেখতে পাই ওই ময়লার স্তূপে রাসুল (সাঃ) এর প্রানহীন দেহ মোবারক পড়ে আছে। তাঁর মাথা মোবারক দক্ষিন দিকে আর পা মোবারক উত্তর দিকে প্রসারিত। বাম পা মোবারক হাটুতে ভাজ হয়ে খারা অবস্থায় রয়েছে। আমি তাকে উদ্ধার করার জন্য পেরেশান হয়ে গেলাম। আমি এগিয়ে গিয়ে তাঁর বাম পায়ের হাটুতে আমার ডান হাত দ্বারা স্পর্শ করলাম। সাথে সাথেই তাঁর দেহ মোবারকে প্রাণ ফিরে এল। তিনি চোখ মেলে আমার দিকে তাকালেন। মূহুর্তের মধ্যেই রাসূল (সাঃ) সুন্দর পোশাকে সুসজ্জিত হয়ে গেলেন। তিনি উঠে বসে হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, হে ধর্ম পূনর্জীবন দানকারী! ইতমধ্যেই আমার ধর্ম আরও পাঁচবার পূনর্জীবন লাভ করেছে। একথা বলে রাসূল (সাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে হেটে হেটে সাথে চলে এলেন। এরপর আমার ঘুম ভেঙে গেল।”–সুত্রঃ দেওয়ানবাগীর স্বরচিত গ্রন্থ “রাসূল স. সত্যিই কি গরীব ছিলেন?” ১১-১২, প্রকাশকালঃ জুন ১৯৯৯।
="দেওয়ানবাগী এবং তার মুরীদদের মাহফিলে স্বয়ং আল্লাহ্, সমস্ত নবী, রাসূল (সা), ফেরেস্তা, দেওয়ানবাগী ও তার মুর্শিদ চন্দ্রপাড়ার মৃত আবুল ফজলসহ সমস্ত ওলি আওলিয়া, এক বিশাল ময়দানে সমবেত হয়ে সর্বসম্মতিক্রমে দেওয়ানবাগীকে মোহাম্মাদী প্রচারক নির্বাচিত করা হয়। অত:পর আল্লাহ সবাইকে নিয়ে একমিছিল বের করে। মোহাম্মাদী ইসলামের চারটি পতাকা চার জনের যথাক্রমে আল্লাহ, রাসূল (সা), দেওয়ানবাগী এবং তার পীরের হাতে ছিল। আল্লাহ, দেওয়ানবাগী ও তার পীর প্রথম সারিতে ছিলেন। বাকিরা সবাই পিছনের সারিতে। আল্লাহ নিজেই স্লোগান দিয়েছিলেন ''মোহাম্মাদী ইসলামের আলো ঘরে ঘরে জ্বালো।"
-সূত্র: সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগী পত্রিকা (১২/০৩/৯৯ )
=দেওয়ানবাগীর এক তথাকথিত ভন্ড আলেম বলেন, "আমি স্বপ্নে দেখলাম হযরত ইব্রাহীম (আ) নির্মিত মক্কার কাবা ঘর এবং স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা) বাবে রহমতে হাজির হয়েছেন। আমাকে উদ্দেশ্য করে নবী করীম (সা) বলছেন_''তুমি যে ধারণা করছ যে, শাহ্ দেওয়ানবাগী হজ্জ করেননি আসলে এটা ভুল। আমি স্বয়ং আল্লাহর নবী মোহাম্মাদ (সা) তার সাথে আছি এবং সর্বক্ষন থাকি। আর কাবা ঘরও তার সামনে উপস্থিত আছে। আমার মোহাম্মাদী ইসলাম শাহ দেওয়ানবাগী প্রচার করতেছেন।"
=ফাতিমা (রাঃ) অর্থাৎ রাসুলের কন্যা ফাতেমা আমার স্ত্রী ছিল।
=আরশে আজিমে আল্লাহ্‌কে আমার রুপে দেখা যায়।
=কুরআন মানবের কোন উপকার করতে পারেনা।
কুরআন অন্য সব গ্রন্থের মতই নিঃপ্রাণ একটা গ্রন্থ।
=আমি ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ থামাতে আল্লাহর কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম, কিন্তু আল্লাহ আমাকে অনুমতি দেয়নি বলে আমি থামাইনি।
=জাকেরানদের (মুরিদ) মধ্যে অনেকে আমাকে রাসুলের বেশে দেখে।
=আল্লাহ ও তার রসূল্কে স্বচক্ষে না দেখে কালিমা পড়ে সাক্ষ্য দেয়ার ও বিশ্বাস করার কোনো অর্থ হয়না।
=আদমের জীরেকদম(পায়ের নিচে) ক্বালব।এই ক্বালবে আল্লাহ ও রসূল থাকেন।
=১৯৯৮ সালে বিশ্ব আশেকে রসূল সম্মেলনে আল্লাহ ও রসূল স্বয়ং দেওয়ানবা




শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

প্রতিদিনই হউক পবিত্র ভালবাসা দিবস যাতে কোন পিতা মাতার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম না হয় সেই প্রত্যাশা।

বেগানা পুরুষ এবং বেগানা নারীর ভালবাসা কখনোই পবিত্র ভালবাসা হতে পারেনা। এই হারাম ভালবাসাকে পবিত্র ভালবাসা নাম দিয়ে, কোন মুসলমান ভ্যালেন্টাইন দিবস পালন করতে পারেনা। কারণ এই দিবসের সাথে কু-সংস্কার জড়িত। এই দিবসের সাথে দেবতার নাম জড়িত, এই দিবসের প্রচলন করে পৌত্তলিকরা, মুশরিক সমাজ। কাজেই যার সাথে ঈমান বিরোধী এতগুলো উপকরণ যুক্ত, এই ধরনের একটি দিবস কি করে মুসলমানরা পালন করতে পারে? মুসলমানরা থার্টিফাষ্ট নাইট পালন করতে পারেনা, ভ্যালেন্টাইন'স ডে পালন করতে পারেনা, বসন্ত বরণ উৎসব পালন করতে পারেনা। এই ভালবাসা দিবস নাম দিয়ে লিভ টুগেদার আর সমকামিতাকে সুকৌশলে মুসলমানের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে জারজ সন্তান আর আজাব আসার একটা ব্যববস্থা করা ছাড়া অন্য কিছু নয়। বিয়ে ছাড়া ছেলে মেয়ে একসাথে থাকা আর পুরুষে পুরুষে বা নারী আর নারী সমকামিতাতে জড়িয়ে যাওয়া এইটি ইউরুপ আমেরকিার অসভ্য লোকগুলোর অসভ্য সংস্কৃতি হতে পারে, মুসলমান পুরুষের চরিত্র ধ্বংস আর নারীদের সতিত্ব নষ্ট করার জন্যই এই বিশ্ব ভালবাসার আবির্ভাব। হে যুবক যুবতী তোমাকেই বলছি সাবধান তুমি কিন্তু মুসলমানঃ-

পবিত্র ভালবাসা হল, সন্তানের ভালবাসা পিতা মাতার জন্য, ভাই বোনের ভালবাসা, স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা, যেটা জায়েয সেইটাই পবিত্র ভালবাসা, আর যেইটা হারাম সেইটাই অপবিত্র ভালবাসা। সন্তান তার পিতা মাতাকে ভালবাসবে একদিন নয় প্রতিদিন, স্বামী স্ত্রীকে ভালবাসবে একদিন নয় প্রতিদিন। একদিন নামের ভালবাসা দিবস পালন করাত কুকুরের স্বভাব, কোন মানুষের হতে পারে না। তাই আমরা প্রতিজ্ঞা করি হারাম ভালবাসা দিবস পালন করবো না ইনশা আল্লাহ। আমাদের পিতা মাতাকে এমন ভাবে সবসময় প্রত্যেকদিন ভালবাসব, যাতে করে আমাদের কারো পিতা মাতার ঠিকানা বৃদ্ধ বয়সে যেন বৃদ্ধাশ্রম না হয়।

বিঃ দ্রঃ- কোন কুলাঙ্গার যদি বলতে চায়, ১৪ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ্যে চুমো খাবে, সেক্স করবে, আমি বলব ৯২ ভাগ মুসলমানের এই পবিত্র দেশে, এমন কোন কর্মকান্ড করতে দেওয়া হবেনা ইনশা আল্লাহ। যদি ভাদ্র মাসের কুকুরের মত ভালবাসা প্রকাশ করতে চাও তোমাদের ফ্রি সেক্সের দেশ আমেরিকা চলে যাও, জাহান্নামে যাওয়াও সহজহয়ে যাবে। আমরা এক সময় বোকা ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ এখন আমরা সচেতন হয়ে গেছি আর আমাদেরকে অপসস্কৃতিতে জড়ানো যাবে না ইনশাআল্লাহ।
আমীনুল ইসলাম আমীন