বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৫

পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম!


আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পাকিস্তানের হাতে অন্তত ৩৫০টি পরমাণু অস্ত্র থাকবে বলে আমেরিকার দুটি থিংক ট্যাংক জানিয়েছে। এর ফলে তারা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম পরমাণু অস্ত্র মজুতকারী দেশে পরিণত হবে।
কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস এবঙ স্টিমসন সেন্টার জানিয়েছে, ভারত-ভীতির কারণে পাকিস্তান দ্রুতগতিতে তাদের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের আকার বাড়াচ্ছে। তবে পাকিস্তান ইতোমধ্যেই পরমাণু অস্ত্রের দিক থেকে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। ভারতের কাছে যেখানে প্রায় ১০০ পরমাণু অস্ত্র আছে, সেখানে পাকিস্তানের রয়েছে ১২০টি। তাছাড়া পাকিস্তান বছরে প্রায় ২০টি পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে।
এতে বলা হয়, কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাতেই পাকিস্তানের চেয়ে বেশি পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারে

মুজাহিদে মিল্লাত হজরত মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী রহঃ; দেওবন্দী চেতনার উজ্জ্বল নক্ষত্র

ইসলামী শক্তিকে সুসংহত করণ, বাতিলের মোকাবেলায় আপোষহীন, সময়োপযোগী এবং সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্তের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে মুজাহিদে মিল্লাত মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী রহঃ এর নাম৷ কিন্তু তার সেই অবদানের কথা কতোটুকু জানা আছে আমাদের?)
আমরা ফেসবুকে কতোকিছু নিয়েই তো লেখালেখি করি৷ লড়াই, অপরকে তীর্যক বাক্যবাণে বিদ্ধ করা, নিজের মত প্রতিষ্ঠায় ভিন্নমতকে হেন ভাষায় আক্রমণ, আরো কতো কি!!
যদিও বর্তমান বাংলাদেশে সামাজিক ও সাংগঠনিক তৎপরতার মাসআলায় ওলামায়ে কেরামের মাঝে বিস্তর মতপার্থক্য, সরকারের দমনপীড়নের মাঝেও নীরবে-নিভৃতে মউদুদীবাদের ব্যাপক বিস্তার, ইসলামের ছদ্মাবরণে আহলে হাদীস কিংবা মাযহাববিরোধীদের উল্লম্ফন সবগুলোই আমাদের জন্য অশনিসংকেত বহন করছে৷
স্বাধীনতাত্তোর সামগ্রীকভাবে গোটা দেশ, এবং বিশেষভাবে এদেশের আলেম-ওলামা ও ইসলামপ্রিয় জনতা এতোটা বিপর্যয় কিংবা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছে কি না, সন্দেহ আছে৷
মানুষ কথা বলতে চায়, প্রতিবাদে সোচ্চার হতে চায়, গর্জে উঠতে চায় ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ধর্মহীন অপশক্তি, অবৈধ আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে৷
কিন্তু তথাকথিত গণতান্ত্রিক দলগুলোর উপর থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের ক্ষমতা দখলের নীতিহীন অপরাজনীতির কারণে৷ আন্দোলন ডেকে বিরোধীদলীয় নেতাদের পলায়নপর ও কাপুরুষোচিত মনোবৃত্তি সাধারণ মানুষকে তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে৷
বর্তমানে জাতির সামনে সত্যিকার কান্ডারী হিসেবে আবির্ভূত হবার যাবতীয় সম্ভাবনা ওলামায়ে হকের সামনে বিদ্যমান৷ এর স্বপক্ষে জলজ্ব্যান্ত প্রমাণ হিসেবে আমরা অবিন্যস্ত, অগোছালো এবং শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনের জন্য অপ্রস্তুত হেফাজতে ইসলামের ধুমকেতুর ন্যায় উত্থান এবং উল্কাপিন্ডের ন্যায় পতনের কথা বলতে পারি৷
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সীমাহীন লুটপাট, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, গুম, খুনসহ রাষ্ট্রিয় উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলাম দূরীকরণের নির্লজ্জ অপপ্রয়াসের কারণে
তৌহিদী জনতা যুগশ্রেষ্ঠ বুজুর্গ, ওলামায়ে কেরামের অভিভাবক, খলীফায়ে মাদানী হজরতুল আল্লাম শাহ আহমদ শফী দাঃবাঃ নেতৃত্বাধীন হেফাজতে ইসলামের আহবানে বানের পানির মতো দু'কুল উপচে রাস্তায় নেমে আসে৷ হেফাজতের নজিরবিহীন জাগরণের ঢেউ বাংলাদেশের সীমান্ত ছাপিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত এবং সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের বুকে কাঁপন ধরায়৷
আওয়ামী লীগ হেফাজতকে ম্যানেজের চেষ্টা চালায়৷ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে কিছু দাবী মেনে নেয়ার আভাস দেন৷ যদিও এটা ছিলো তার একটি অপকৌশলমাত্র৷
ওদিকে ক্ষমতার জন্য মরিয়া বিএনপি হেফাজতের আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে এমন অপরিপক্ক কৌশল নেয়, যা হেফাজতের জন্য বরং প্রতিবন্ধকতাই তৈরী করে৷ যুদ্ধাপরাধ ইস্যূ আড়ালের জন্য জামায়াত অনুপ্রবেশ করে হেফাজতের মাঝে৷ তারপরেরটুকু সবার জানা৷
এরকম চরম সংকটকালীন মুহুর্তে প্রয়োজন ছিলো বিচক্ষণ, দূরদর্শী, আপোসহীন ও সাহসী নেতৃত্বের৷ যিনি বা যারা অবস্থা বুঝে সঠিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন, পাল্টা হুংকারে তাগুতী অপশক্তিকে পিছু হটতে বাধ্য করবেন৷
কিন্তু নিতান্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমীরে হেফাজতের আশপাশে বিচরণকারী কিছু অতিউৎসাহী, অনভিজ্ঞ দিবাস্বপ্নদ্রষ্টা, কিংবা অলীক কল্পনাকারীরা তাকে প্রকৃত অবস্থা বুঝতেই দেয়নি৷ ফলে সেই ৫ মে থেকে যে দুরবস্থার শুরু, দিনদিন তা প্রকট রূপ ধারন করেছে৷
আওয়ামী অক্টোপাসের কঠিন শৃংখলে আবদ্ধ আলেম-ওলামা ও ইসলামী নেতৃবৃন্দ নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগটুকুও পাচ্ছেন না৷ মাদরাসা, মসজিদে স্বস্তির সাথে খেদমত করতে পারছেন না৷
কোন পদ্ধতিতে তারা অগ্রসর হবেন? কিভাবে ইসলামী বিদ্বেষী অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন? তার সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়ার মতো সাহসী, দূরদর্শী ও দৃঢ়চেতা নেতার সন্ধান পাচ্ছেন না৷
এরকম ক্রান্তিকালে প্রচন্ডভাবে অনুভূত হচ্ছে মুজাহিদে মিল্লাত, বাতিলের বিরুদ্ধে আপোসহীন মর্দে মুজাহিদ, দেওবন্দিয়ত,জমিয়ত ও মাদানিয়তের উজ্জ্বল নক্ষত্র, হজরত মাওলানা শামছুদ্দীন কাসেমী রহঃ এর ন্যায় একজন বজ্রহুংকারদাতা আলেমের৷ যিনি স্বাধীনতার পর ইসলামপন্থিদের উপর সেক্যুলার রক্তচক্ষুধারীদের হিংস্র দৃষ্টি উপেক্ষা করে পুনরায় জমিয়তের কার্যক্রম ও কওমী মাদরাসার বদ্ধ কপাট উন্মুক্তকরণে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখেন৷
যিনি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কাদিয়ানীদের সম্মেলনে যাবার সংবাদে তার সাথে দেখা করে সরাসরি হুমকি দেন, “আপনি কাদিয়ানীদের সম্মেলনে যাবার পূর্বেই আমরা জাতির সামনে প্রকাশ করে দিবো যে, আপনি মিথ্যা নবী অনুসারীদের খপ্পরে পড়েছেন"৷ এই হুমকির পর মরহুম জিয়াউর রহমান আর কাদিয়ানীদের সম্মেলনে যাননি৷
যিনি গুলিস্তানে সামরিক স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের নির্দেশে গোলাপ শাহ মসজিদ উচ্ছেদ করে মাজার নির্মাণ প্রতিরোধে নেতৃত্ব দিয়ে কারাবরণ করেন৷
উল্লেখ্য, পুলিশী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোলাপ শাহ মসজিদে জুমা আদায়ের সেই কর্মসূচীতে পুলিশ হামলা করলে জুমার খুতবা পাঠরত আমার মুহতারাম আব্বা কারী আব্দুল খালিক আসআদী সাহেব (হজরত কাসেমী রহঃ এর একান্ত ভাবশিষ্য) পুলিশের নির্মম বেয়নেট চার্জে গুরুতর অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে শয্যাশায়ী ছিলেন৷
মরহুম কাসেমী সাহেবের নেতৃত্বে পরিচালিত সেই আন্দোলনের কারণে এরশাদ সরকার মসজিদ পুনঃনির্মাণ করে৷
১৯৯৬ এর অক্টোবরে ইসলামের এই মহান খাদেমের মৃত্যু হয়৷
ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্বের আসনে তার সমসাময়িক ও পরবর্তী অনেকেই ছিলেন এবং আছেন৷ আমরা তাদের সবাইকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি৷ এদেশে ইসলামের প্রচার-প্রসারে তাদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে৷
কিন্তু সেই ছোট্টবেলায় বাবার মুখে ‘শামছুদ্দীন কাসেমী' নামটির চর্চা শুনতে শুনতে মনে ধারণা জন্মায় যে, তিনিই এদেশের সবচেয়ে বড় আলেম৷ আস্তে আস্তে সেই ধারণা বিশ্বাসে রূপ নিয়েছে৷ আর বর্তমানে তা বদ্ধমূল হয়েছে৷
ঠিক যেমন বর্তমানে আমার সন্তানদের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আলেম মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস সাহেব৷ এটাও তাদের পিতা সূত্রে প্রাপ্ত বিশ্বাস৷ কারণ সন্তান তার পিতার চোখে পৃথিবী দেখে, পিতার কানে শোনে এবং পিতার মনে উপলব্ধি করে৷
১৯৭৫ সালে তিনি রাজধানীর মিরপুরে জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদের ছোট্ট পরিসরে যাবার পাঁচ বছরের মাথায় নিরন্তর ইখলাস, কোরবানী আর নিরবচ্ছিন্ন শ্রমের মাধ্যমে আরজাবাদকে দাওরায়ে হাদীস মাদরাসায় উন্নীত করেন৷ তার পরিশ্রম, একনিষ্ঠতা এবং যে কোনো দ্বীনি ও জাতীয় ইস্যূতে আপোসহীন ভূমিকা আরজাবাদকে নিছক একটি কওমী মাদরাসার পরিচয় ছাপিয়ে জমিয়ত ও মাদানিয়তের লালনক্ষেত্রের পাশাপাশি দ্বীন, ঈমান সংরক্ষণে একটি দুর্ভেদ্য জাতীয় মারকাজের পরিচিতি এনে দিয়েছে৷ আজ আরজাবাদ মাদরাসা ছাত্রদের নিবিড়ভাবে লেখাপড়া এবং শিক্ষকদের খেদমতে যে ঈর্ষণীয় ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ বিরাজ করছে, তারই ইখলাসের বদৌলতে৷ স্পষ্ট মনে আছে, খুব ছোট বেলায় এশার পরপর মসজিদের লাইট নিভিয়ে এবং দরজা, জানালা বন্ধ করে কান্নার রোল উঠতো৷ আমরা বুঝতাম, আজ রাতের খাবার রান্না হয়নি৷ তিনি ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে মাওলার দরবারে কান্নায় বুক ভাসাতেন৷ আপনি এখন আরজাবাদে গেলে ওসব গল্পের মতো মনে হবে৷ কিন্তু এটিই বাস্তব সত্য৷
একজন মহান ব্যক্তি যোগ্য ও আস্থাশীল সহকর্মী এবং উত্তরসূরী বানিয়ে প্রাণান্ত পরিশ্রমে একটি প্রতিষ্ঠানকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়ার পরম নিদর্শন হজরত কাসেমী সাহেব রহঃ৷
দ্বীনি কাজে সবাইকে উৎসাহ যোগাতেন তিনি৷ বিশেষত শিশুদেরকে আলাদা নজরে স্নেহ করতেন৷ তার নিকট বুখারী কিংবা অন্য কোনো হাদীস বা তাফসীর পড়ার সুযোগ না হলেও এবতেদায়ী জামাতের ছাত্র হিসেবে তিনি আমাদেরকে উর্দু কায়েদার সবক নিতেন৷ মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস, দেশের শীর্ষ আলেম রাজনীতিবিদের নিকট পড়ার ভীতির পাশাপাশি গর্ব হতো প্রচন্ড৷ যা এখনো আমাকে আলোড়িত করে৷
হক ও হক্কানিয়াতের পতাকাবাহী জমিয়তের অনেকগুলো গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন তিনি৷ প্রথমে পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক, এরপর বাংলাদেশ জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহসভাপতির পর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত নির্বাহী সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন সুচারুভাবে৷
খতমে নবুওয়াত আন্দোলন পরিষদ, দেশ বাচাও ঈমান বাচাও আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা, ইসলামী ঐক্যজোট, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা৷ মওদুদীবাদ, শিয়াবাদ, কাদিয়ানী, বাহাই, খৃস্টান মিশনারী, রক্তচোষা এনজিও, নাস্তিক্যবাদসহ যাবতীয় বাতিলের মোকাবেলায় প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে৷ কখনো তার আহবানে অন্যরা এসেছেন৷ আর অন্যরা না এলে তিনি একাই জমিয়তকে নিয়ে আপোসহীনভাবে কাজ করেছেন৷ আমরা যেনো তার রূহানী বরকতে ধন্য হই, রাব্বুল আলামীনের নিকট এই আরজ রাখছি৷
পরিশেষে তাকে নিয়ে দেখা আমার স্বপ্নের বর্ণনায় লেখাটি শেষ করবো৷ কয়েক বছর পূর্বে একদিন গভীর ঘুমে স্বপ্নে দেখি; আরজাবাদে মুহতামিম সাহেবের কামরার সামনে মরহুম কাসেমী সাহেব অযু করছেন৷ আমাকে দেখে তিনি বললেন, “সব ছাত্রকে বুখারী শরীফ নিয়ে বসতে বলো৷ আমি এখুনি বুখারীর সবক পড়াবো"৷
আমাদের সুদৃঢ় বিশ্বাস, তিনি মহান আল্লাহ একান্ত প্রিয় বান্দা হিসেবে জান্নাতে সুউচ্চ মর্যাদা লাভ করেছেন৷ আমরা যেনো তার আদর্শে নিজেদেরকে পরিচালিত করতে পারি, মহান রবের নিকট কায়মনোবাক্যে এই মিনতি জানাই৷
ওয়ালী উল্লাহ আরমান৷

****** নারী সাধীনতা*******

 একজন সুন্দরী মেয়েকে ঘরথেকে বাহির করে এনে দুই পুরুষের মাঝখানে রিক্সায় বসতে দেয়া কি নারী স্বাধীনতা ? »» বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল স্লোগান দিতে গিয়ে একজন পুরুষকে জড়িয়ে ধরে ফটোসেশনকরা কি নারী স্বাধীনতা ? »» বিলবোর্ড থেকে শুরু করে পণ্যের অ্যাডে নারীর দেহ উপস্থাপন করে পণ্যের মত নারীকে পণ্য বানিয়ে প্রোডাক্টের প্রচারণা চালানো কি নারীস্বাধীনতা ??? »» সবচেয়ে বড়কথা যারা নারী স্বাধীনতা নিয়ে তাফালিং করে তাদের চারিত্রিক গুণাবলী দেখলেই বোঝা যায় তারা কেমন নারী স্বাধীনতা চায় !! »» পাগল নিজেও পাগলের সুখ বোঝে কিন্তু (কথিত) নারী বোঝে না তার প্রকৃত সম্মান- অধিকার-স ্বাধীনতা !! •• আমার নারী বোনদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলে রাখি- »» এরা যতোক্ষণ পর্যন্ত আপনার শরীরের ব্যবচ্ছেদ করতে পারবে না ততোক্ষণ পর্যন্ত এরা আপনার জন্য নারীবাদী। আর যখন আপনার শরীরের চামরা ভোঁতা হয়ে যাবে, আপনার রূপের বাহাদুরি হারিয়ে যাবে, তখন তারা আপনাকে ডাস্টবিনে ছুঁড়েফেলে দিবে। তাই, কথিত নারীবাদীরা যেন আমাদের ভুল বুঝিয়ে ইসলাম থেকে দূরে ঠেলে নিয়ে না যায় ৷ তারা চাই, আধুনিকতার নামে নারীদের সতীত্ব নষ্ট করতে ... >> যেসব ছেলেরা এই নারি সাধীনতা প্রাধান্য দেয়,তাদের চরিত্রেই সমস্যা আছে।আর মেয়েরা তো সাধীনতার নামে কি করে তা দেখাই যায় >>শুনুন মা ও বোনেরা আপনাদের কে কারা সাধীনতা দেয় জানেন? যারা আপনাদের সুন্দর্যের পিয়াসি তারা। অসুন্দর মেয়েদের দিয়ে তাদের কোনো কাজ নেই,তাই তো বিশেষ ভাবে সেই অসুন্দর মেয়েদের জন্য এড বানানো লাগে সুন্দর্য মানে কি শুধুই ফর্শা? এতই যখন সমান ভাগ চান,পুরুষ এর মত রিক্সা চালিয়ে দেখান,হাল চাষ করেন পারলে।কুলি গিরি করে দেখান।তা তো পারবেন না।পারবেন শাড়ী পরে অফিস আদালত করতে,বাস এও তো বিশেষ সিট রাখা লাগে। অন্নান্য ধর্মের মানুষ মনে করতে পারে এখানে নারিদের অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।কারন তারা জানে না যে ইসলাম এ নারি কে যেভাবে মরজাদা দেয়া হছেয়ে অন্য কোনো ধর্মে তা দিতে পারে নি পারবেও নাহ। সময় থাকতে শুধরান। পরদা করুন। পরদা করা ফরজ। আল্লাহ কে,কবরের আজাব কে ভয় করুন। আল্লাহ আমাদের সবাই কে হেদায়েত দান করুন আমিন।

ভারতে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সবথেকে বেশি পশ্চিমবঙ্গে




শেষ দশ বছরে ভারতে হিন্দু জনসংখ্যার তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, ২০১১ জনগণনা অনুযায়ী ধর্মভিত্তিক নিরিখে। মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বাংলা রয়েছে এগিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদা ও উত্তর দিনাজপুরে হিন্দু জনসংখ্যার থেকে ছাপিয়ে গিয়েছে মুসলিম জনসংখ্যা। মঙ্গলবার ২০১১ জনগণনা অনুযায়ী ধর্মভিত্তিক সমীক্ষা প্রকাশ হয়।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা যদি ০.৭ শতাংশ কমে, বাংলায় কমেছে ১.৯৪ শতাংশ। ঠিক তেমনই মুসলিম জনসংখ্যা ভারতে ০.৮ শতাংশ বেড়েছে কিন্তু বাংলায় বেড়েছে ১.৭৭ শতাংশ। পশ্চিমবঙ্গে মোট জনসংখ্যা ৯ কোটি ১২ লক্ষ। ধর্ম ভিত্তিতে হিন্দু রয়েছে ৬ কোটি ৪ লক্ষ। মোট জনসংখ্যার ৭০.৫৩ শতাংশ হিন্দু রয়েছে। মুসলিম জনসংখ্যা ২ কোটি ৪ লক্ষ। ২৭.০১ শতাংশ রয়েছেন মুসলিম সম্প্রদায়। ২০০১ জনগণনা অনুযায়ী শেষ দশ বছরে পশ্চিমবঙ্গে ধর্মভিত্তিতে জনসংখ্যা বেড়েছে অসামঞ্জস্যভাবে।
জনসংখ্যার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গে তিন জেলায় এগিয়ে রয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়। মুর্শিদাবাদে মুসলিম জনসংখ্যা ৪৭ লক্ষ, হিন্দু ২৩ লক্ষ। মালদায় ২০ লক্ষ মুসলিম, হিন্দু ১৯ লক্ষ। উত্তর দিনাজপুরে ১৫ লক্ষ মুসলিম, ১৪ লক্ষ হিন্দু।
২০১১ জনগণনা
পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যা- ৯,১২,৭৬, ১১৫ জন
হিন্দু জনসংখ্যা- ৬,৪৩,৮৫,৫৪৬ জন
(পুরুষ- ৩,৩০,৪৬,৫৫৭ ও মহিলা- ৩,১৩,৩৮,৯৮৯ জন)
মুসলিম জনসংখ্যা- ২,৪৬,৫৪,৮২৫ জন
(পুরুষ- ১,২৬,৪০,০৯২ ও মহিলা- ১,২০,১৪,৭৩৩ জন)
২০০১ জনগণনা
মোট জনসংখ্যা- ৮,০১,৭৬,১৯৭ জন
হিন্দু জনসংখ্যা- ৫,৮১,০৪,৮৩৫ জন
(পুরুষ- ৩,০০,৬৯,৫০৩ জন ও মহিলা- ২,৮০,৩৫,৩৩২ জন)
মুসলিম জনসংখ্যা- ২,০২,৪০,৫৪৩ জন
(পুরুষ- ১,০৪,৭০,৪০৬ জন ও মহিলা- ৯৭,৭০,১৩৭ জন)

ইতিহাস বলে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মুসলিম হত্যা করা হয়েছে ভারতে।

Golam Nabiul's photo.

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মুসলিম হত্যা করেছে ভারত। ভারত কাশ্মীর হায়দ্রাবাদ গুজরাট সহ সংখা গরিষ্ঠ অঞ্চল গুলিতে গত ৬০ বছরে ভারত ১০ লক্ষ মুসলিম হত্যা করেছে। হায়দ্রাবাদ কাশ্মীরের ইতিহাস পড়ে দেখুন সেখানে মুসলিমদের রক্তে হাটু সমান বন্যা বয়ে গিয়েছিল্ ভারত পাকিস্তান বিভক্তির সময়। আজকের মুসলিম প্রজন্ম এগুলি জানে না।
ভারতে মুসলিম হত্যার নির্মম ইতিহাস আজকের প্রজন্মকে জানাতে হবে। আসাম, কাশ্মীর, গুজরাট, হায়দ্রাবাদসহ পুরো ভারতে যেভাবে মুসলিম গনহত্যা চলেছে, তা ইতিহাসে বিরল।
১. ১৯৪৮ সালে ভারতের হিন্দুরা হায়দারাবাদে ৪০ হাজার মুসলমানকে হত্যা করে।
২. ১৯৬১-এর অক্টোবরে আলিগড় মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
৩. ১৯৬২-তে মধ্য প্রদেশের জাবালপুরে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
৪. ১৯৬৪-তে মহারাষ্ট্রের ভিভান্ডিতে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা বাধে।
৫. ১৯৬৭-তে বিহারের রানচিতে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
৬. ১৯৬৯-তে গুজরাটের আহমেদাবাদে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
৭. ১৯৭০-এ মহারাষ্ট্রের ভিওয়ান্দি, জালগন ও মালাদে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
৮. ১৯৭১-এ বিহারে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা লাগে।
৯. ১৯৭৮-এ আলিগড়ে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
১০. ১৯৭৮-৮০ পর্যন্ত বিহারের জামশেদপুর ও উত্তর প্রদেশের ভানারসিতে মুসলিম
নিধনে দাঙ্গা হয়।
১১. ১৯৮০ তে উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
১২. ১৯৮১-তে আলিগড়ের মিনাকশিপুরাম ও বিহারাশরীফে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা
হয়।
১৩. ১৯৮২-তে উত্তর প্রদেশে মিরাটে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
১৪. ১৯৮৩-তে আসামে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা বাধে।
১৫. ১৯৮৩- তে কর্নটকে ভাটাকালে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা শুরু হয়।
১৬. ১৯৮৬ তে বিহারে নেওয়াদাতে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
১৭. ১৯৮৭-তে উত্তর প্রদেশের মিরাটে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
১৮. ১৯৮৯-তে বিহারের ভাগলপুরে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
১৯. ১৯৯০-৯১-এ আলিগড়ে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
২০. ১৯৯২-৯৩-এ মুম্বাই, সুরাট, আহমেদাবাদ, কানপুর, দিল্লিসহ সমগ্র ভারতে  মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
২১. ১৯৯৭-এ তামিলনাড়ুতে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
২২. ২০০০-এ আহমেদাবাদসহ বেশ কয়েক এলাকা মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
২৩. ২০০১-এ কানপুর, মালিগাও তে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
২৪. ২০০২-এ গুজরাটে মুসলিম নিধনে দাঙ্গা হয়।
২৫. ২০০৩-এ মুসলিম নিধনে ৭১১টি দাঙ্গা হয়।
২৬. ২০০৪-এ মুসলিম নিধনে ৬৭৭টি দাঙ্গা হয়।
২৭. ২০০৫-এ মুসলিম নিধনে ৭৭৯ টি দাঙ্গা হয়।
২৮. ২০০৬-এ গোয়া ও ভাদোদ্রা (গুজরাট) দাঙ্গাসহ মুসলিম নিধনে ৬৯৮টি দাঙ্গা
হয়।

" যে (১০ দশটি) যিকির প্রতিদিন করলে মৃত্যুর পর জান্নাত "

(১) প্রতিদিন ১০০ বার "সুবহান আল্লাহ্"
পাঠ করলে ১০০০ সাওয়াব লিখা হয় এবং ১০০০ গুনাহ মাফ করা হয়।
[সহীহ মুসলিম-৪/২০৭৩]
(২) "আলহামদুলিল্লাহ" মীযানের পাল্লাকে ভারী করে দেয় এবং সর্বোত্তম দোয়া ।
[তিরমিযী-৫/ ৪৬২,ইবনে মাযাহ-২/১২৪৯,হাকিম-১/ ৫০৩,সহীহ আল জামে’-১/৩৬২]
(৩) 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' সর্বোত্তম যিকর।
[তিরমিযী-৫/৪৬২,ইবনে মাযাহ-২/১২৪৯,হাকিম-১/৫০৩,সহীহ আল জামে’-১/৩৬২]
(৪) 'সুবহান আল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর' এই
কালিমাগুলি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় এবং নবী (সঃ) বলেনঃ পৃথিবীর সমস্ত জিনিসের চইতে আমার নিকট অধিক প্রিয়।
[ সহীহ মুসলিম -৩/১৬৮৫, ৪/২০৭২]
(৫) যে ব্যক্তি 'সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী' প্রতিদিন ১০০ বার পাঠ করবে সমুদ্রের ফেনা পরিমান (সগীরা) গুনাহ থাকলে ও তাকে মাফ করে দেওয়া হবে।
[সহীহ আল-বুখারী-৭/১৬৮,সহীহ মুসলিম-৪/২০৭১]
(৬) নবী (সঃ) বলেনঃ "সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহী সুবহানাল্লিল আযীম"
মীযানের পাল্লায় ভারী ,দয়াময় আল্লাহর নিকট প্রিয় ।
[সহিহ আল- বুখারী-৭/১৬৮,সহীহ মুসলিম-৪/২০৭২]
(৭) যে ব্যক্তি 'সুবহানাল্লাহিল আযীমি ওয়াবি হামদিহী' পাঠ করবে প্রতিবারে তার জন্য জান্নাতে একটি করে (জান্নাতী) খেজুর গাছ রোপন করা হবে ।
[আত- তিরমিযী-৫/৫১১,আল-হাকীম-১/৫০১,সহীহ আল-জামে’-৫/৫৩১, সহীহ আত-
তিরমিজী-৩/১৬০]
(৮) নবী (সঃ) বলেনঃ "লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ"
হচ্ছে জান্নাতের গুপ্তধন সমুহের মধ্যে একটি গুপ্তধন।
[ সহীহ আল-বুখারী -১১/২১৩, সহীহ মুসলিম-৪/২০৭৬]
(৯) নবী (সঃ) বলেনঃ "সুবহান আল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ" এই কালীমাগুলি হচ্ছে 'অবশিষ্ট নেকআ’মল সমুহ' ।
[ আহমাদ (সহীহ)-৫১৩, মাজমাউজ জাওয়াঈদ-১/২৯৭ ]
(১০) নবী (সঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআ’লা তার প্রতি দশ বার রহমত বরষন করবেন- "আল্লাহুম্মা সাল্লি ’আলা মুহাম্মাদিঁওয়া ’আলা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা সাল্লায়তা ’আলা ইব্রাহীমা ওয়া
’আলা ’আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজিদ আল্লাহুম্মা বারিক ’আলা মুহাম্মাদিঁওয়া ’আলা আলি মুহাম্মাদিন্ কামা বারাকতা ’আলা ইব্রাহীমা ওয়া ’আলা ’আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুমমাজিদ এবং
তিনি (সঃ) আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি সকালে দশবার এবং বিকেলে
দশবার দুরুদ পাঠ করবে সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত পাবে " [ তাবারানী, মাজময়াউজ জাওয়াঈদ-১০/১২০, সহীহ আত- তারগীব ওয়াত তারহীব-১/২৭৩]
-----------নিজে জানুন, লাইক এবং শেয়ার করে বিশ্বকে জানান।

------বর্তমান মুসলিম সমাজের জন্য কিছু কোরআনের আয়াত যে কাজগুলো তারা করে থাকে --- ---


 আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।
সূরা বাক্বারা --- ৮
 তারা সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করে। বস্তুতঃ তারা তাদের এ ব্যবসায় লাভবান হতে পারেনি এবং তারা হেদায়েতও লাভ করতে পারেনি।
সূরা বাক্বারা --- ১৬
 যে ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালেম আর কে? এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে।
সূরা বাক্বারা ---- ১১৪
হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে
যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।
সূরা মায়েদা'হ ---৫৪
 তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ-যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র।
সূরা মায়েদা'হ ---৫৫
 যখন ওদের সামনে আমার আয়তসমূহ পাঠ করা হয়, তখন ওরা দম্ভের সাথে এমনভাবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন ওরা তা শুনতেই পায়নি অথবা যেন ওদের দু'কান বধির। সুতরাং ওদেরকে কষ্টদায়ক আযাবের সংবাদ দাও।
সূরা লোকমান---- ৭
  যারা দুস্কর্ম উপার্জন করেছে তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে সে লোকদের মত করে দেব, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং তাদের জীবন ও মুত্যু কি সমান হবে? তাদের দাবী কত মন্দ।
সূরা জাসিয়া--- ২১
দয়া করে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

যাকাত কার উপর আবশ্যক?

প্রশ্ন
মোঃসাজিদ সরকার মনোহরদী.,নরসিংদী
1) আমার এক নিকট আত্তিয় তার জমানো কিছু টাকা আছে, প্রায় 3লাখ, এখন কি তার উপর যাকাত ফরজ হয়েছে?
2)কি পরিমাণ মাল থাকলে যাকাত ফরজ হয়?
3)কেও যদি যাকাত ফরজ হওয়ার পর তা আদায় না করে তার শরিয়তের বিধান কি?
4) কেউ যদি যাকাত দিতে অসিকার করে তার বিধান কি?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
যাকাত ফরজ হবার জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের মালিক হলে বা এর সমমূল্যের অর্থ বা ব্যবসায়িক পণ্য থাকলে ব্যক্তির উপর যাকাত আবশ্যক হয়।
সে হিসেবে যেহেতু তিন লাখ টাকা উক্ত নেসাব পরিমাণ হয়ে যাচ্ছে, আর তা জমানো টাকা, মানে হল প্রয়োজন অতিরিক্ত। তাই উক্ত ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হয়ে গেছে।
যাকাত ফরজ হবার পর তা আদায় না করলে ফরজ তরক করার গোনাহ হবে।
যাকাত আবশ্যক হবার পর তা প্রদান করা মারাত্মক গোনাহের কাজ। বাকি যদি যাকাতকেই অস্বিকার করে বসে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি কাফির। কারণ যাকাত ইসলামের একটি মৌলিক স্তম্ভ। আর ইসলামের কোন মৌলিক স্তম্ভকে অস্বিকারকারী নিঃসন্দেহে কাফির। বাকি ফরজ মানার পর যদি না আদায় করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি ফাসিক কাফির নয়।
(نِصَابُ الذَّهَبِ عِشْرُونَ مِثْقَالًا وَالْفِضَّةِ مِائَتَا دِرْهَمٍ كُلُّ عَشْرَةِ) دَرَاهِمَ (وَزْنُ سَبْعَةِ مَثَاقِيلَ) الخ (أَوْ) فِي (عَرْضِ تِجَارَةٍ قِيمَتُهُ نِصَابٌ) الْجُمْلَةُ صِفَةُ عَرَضٍ وَهُوَ هُنَا مَا لَيْسَ بِنَقْدٍ. (رد المحتار، كتاب الزكاة، باب زكاة المال-2/224-228)
وفى الهندية: الزكاة واجبة فى عروض التجارة كائنة ما كانت إذا بلغت نصابا من الورق والذهب (الفتاوى الهندية-1/179)
فى الدر المختار-وَلَوْ بَلَغَ بِأَحَدِهِمَا نِصَابًا دُونَ الْآخَرِ تَعَيَّنَ مَا يَبْلُغُ بِهِ، وَلَوْ بَلَغَ بِأَحَدِهِمَا نِصَابًا وَخُمُسًا وَبِالْآخَرِ أَقَلَّ قَوَّمَهُ بِالْأَنْفَعِ لِلْفَقِيرِ (رد المحتار، كتاب الزكاة، باب زكاة المال-3/229، وكذا فى الهداية-1/196، وكذا فى الهندية-1/179، وكذا فى التاتارخانية-2/237، وكذا فى المبسوط للسرخسى-2/191
لا خلاف في كفر المخالف في ضروريات الإسلام من حدوث العالم وحشر الأجساد ونفي العلم بالجزئيات وإن كان من أهل القبلة المواظب طول عمره على الطاعات كما في شرح التحرير (رد المحمتار، كتاب الصلاة، باب الإمامة، مطلب البدعة خمسة أقسام -2/300
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com
lutforfarazi@yahoo.com

মুক্তাদীর জন্য ইমামের পেছনে ফাতেহা পড়া কি ওয়াজিব?

মুক্তাদীগণ ক্বেরাত পড়বে কি, পড়বেনা; 'সিররী' (যে নামাযে আস্তে ক্বেরাত পড়া হয়) ও 'জাহরী' (যে নামাযে স্বশব্দে ক্বেরাত পড়া হয়) নামাযের বিধান কি এক, নাকি ভিন্ন—এসব ব্যাপারে মুজতাহিদীনে কেরামের মাঝে মতপার্থক্য বিরাজমান।
~
ইমামে আ'জম, ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদ (রহ)-এর নিকট সর্বাবস্থায় (নামায 'সিররী' হোক বা 'জাহরী' , মুক্তাদী ইমামের ক্বেরাত শুনতে পাক বা নাই পাক) মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পড়া নাজায়েজ, বরং মাকরূহে তাহরিমী।
হেদায়া গ্রন্থকার ইমাম মুহাম্মদ (রহ)-এর যে উক্তি উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ 'সিররী' নামাযে সূরা ফাতেহা পড়া উত্তম— সেটি আল্লামা ইমাম ইবনে হুমাম (রহ) এ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, এটি ইমাম মুহাম্মদ (রহ)-এরই লেখিত 'কিতাবুল আছার' এবং 'মুয়াত্তা' এর বক্তব্যের পরিপন্থী। 'দুররে - মুখতার' কিতাবের ভাষ্য :
ﻭﺍﻟﻤﺆﺗﻢ ﻻ ﻳﻘﺮﺃ ﻣﻄﻠﻘﺎ ﻭ ﻻ ﺍﻟﻔﺎﺗﺤﺔ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﺮﻳﺔ ﺍﺗﻔﺎﻗﺎ، ﻭ ﻣﺎ ﻧﺴﺐ ﻟﻤﺤﻤﺪ ﺿﻌﻴﻒ. ﻛﻤﺎ ﺑﺴﻄﻪ ﺍﻟﻜﻤﺎﻝ، ﻓﺎﻥ ﻗﺮﺃ ﻛﺮﻩ ﺗﺤﺮﻳﻤﺎ، ﻭ ﺗﺼﺢ ﻓﻲ ﺍﻻﺻﺢ. ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﻤﺨﺘﺎﺭ
অর্থাৎ মুক্তাদী একেবারেই ক্বেরাত পড়বেনা। 'সিররী' নামাযেও সর্বসম্মতিক্রমে ক্বেরাত পড়বেনা। আর ইমাম মুহাম্মদ (রহ)-এর দিকে যে উক্তির সম্বন্ধ করা হয় (অর্থাৎ 'সিররী' নামাযে সূরা ফাতেহা পড়া উত্তম) সেটি দ্বয়িফ, যা আল্লামা ইমাম ইবনে হুমাম (রহ) বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। সুতরাং মুক্তাদী যদি ক্বেরাত পড়ে তবে তা মাকরূহে তাহরিমী হবে। অবশ্য বিশুদ্ধ মতানুসারে এতে তার নামায হয়ে যাবে।"
ইমাম মুহাম্মদ (রহ)-এরই লেখিত 'কিতাবুল আছার' কিতাবে লেখা আছে,
ﻻ ﻧﺮﻱ ﺍﻟﻘﺮﺍﺀﺓ ﺧﻠﻒ ﺍﻻﻣﺎﻡ ﻓﻲ ﺷﻴﺊ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼﻭﺍﺕ ﻳﺠﻬﺮ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻭ ﻳﺴﺮ .
অর্থাৎ আস্তে কিংবা জোরে ক্বেরাতের নামাযান্তে আমরা মুক্তাদীর ক্বেরাত পড়ার কোনো সুযোগই দেখিনা।"
এবার পবিত্র কুরআনের আয়াতগুলোর আলোকে উপরিউক্ত মাসয়ালার চূড়ান্ত সমাধান নিন!
~
প্রথমত, ইমামের পেছনে মুক্তাদীর জন্য কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করা নিষেধ হওয়ার প্রমাণাদির দিকে দৃষ্টি দেয়া হল। যেমন —
ﻭَ ﺍِﺫَﺍ ﻗُﺮِﻯﺀَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺍَﻥُ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮْﺍ ﻟَﻪُ ﻭَ ﺍَﻧْﺼِﺘُﻮْﺍ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﺮْﺣَﻤُﻮْﻥ
অর্থাৎ আর যখন কোরআন শরীফ পড়া হয় তখন তা কান লাগিয়ে শোনো আর চুপ থাকো। যাতে তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হয়।"
জ্ঞাতব্য যে, ইসলামের প্রাথমিক যুগে নামাযের মধ্যে কথা বলাও বৈধ ছিল। আর মুক্বতাদীও কোরআন পড়তো। এরপর নিচের আয়াত নাযিল হলে কথা বার্তা বলার প্রচলন নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
যেমন, ﻭَ ﻗُﻮْﻣُﻮْﺍ ﻟِﻠّﻪِ ﻗَﺎﻧِﺘِﻴْﻦَ অর্থ ‘ তোমরা দাঁড়িয়ে যাও আল্লাহ তা’য়ালার অনুগত হয়ে’।
ইমাম মুসলিম ‘বাবু তাহরীমিল কালাম ফিস সালাত’ এবং ইমাম বোখারী ‘বাবু মা-য়ুনহা মিনাল কালাম ফিস সালাত’ শীর্ষক অধ্যায় হযরত যায়েদ বিন আরকাম (রাদ্বি) হতে বর্ণনা করেন-
"আমরা নামাযের মধ্যে কথা- বার্তা বলতাম, এক ব্যক্তি তার পাশে দাঁড়ানো তার বন্ধুর সাথে কথা বলছিলো। এমন সময় ‘কূমূ লিল্লাহি ক্বানিতীন’ আয়াতটি নাযিল হল। এরপর আমাদেরকে চুপ থাকার নির্দেশ দেয়া হলো এবং কথা বলতে নিষেধ করা হলো। তারপর নামাযে কথা-বার্তা বলা নিষিদ্ধ হলো। কিন্তু মুক্তাদী কোরআন তিলাওয়াত করতো।"
যখন নিম্নোক্ত আয়াতখানা নাযিল হলো তখন মুক্তাদীর জন্য তিলাওয়াতও নিষিদ্ধ হয়ে গেলো। আয়াতটি এই যে,
ﻭَ ﺍِﺫَﺍ ﻗُﺮِﻯَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺍﻥُ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮْﺍ ﻟَﻪُ ﻭَﺍَﻧْﺼِﺘُﻮْ …… ﺍﻟﺦ
অর্থাৎ যখন কুরআন পড়া হবে তখন মনোযোগ দিয়ে শোনো আর চুপ থাকো।"
‘তাফসীরে মাদারিক’ কিতাবে উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছেঃ
ﻭَ ﺟَﻤْﻬُﻮْﺭُ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ ﻋَﻠﻰ ﺃَﻧَّﻪُ ﻓِﻰ ﺍﺳْﺘِﻤَﺎﻉِ ﺍﻟْﻤُﺆﺗَﻢِّ
“অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরামের অভিমত হলো এ আয়াতটি মুক্তাদীর জন্য ইমামের ক্বিরাআত শোনার ব্যাপারেই”।
"তাফসীরে খাযিন" কিতাবে উক্ত আয়াতের তাফসীরে নিম্নোক্ত রেওয়ায়েত দেখা যেতে পারে। যেমন,
ﻭَ ﻋَﻦْ ﺍِﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮْﺩٍ ﺍِﻧَّﻪُ ﺳَﻤِﻊَ ﻧَﺎﺳًﺎ ﻳَّﻘْﺮَ ﺃُﻭْﻥَ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﺎِﻣَﺎﻡِ ﻓَﻠَﻤَّﺎ ﺍِﻧْﺼَﺮَﻑَ ﻗَﺎﻝَ ﺍَﻣَﺎ ﺍَﻥْ ﻟَﻜُﻢْ ﺃَﻥْ ﺗَﻔْﻘَﻬُﻮْﺍ ﻭَ ﺍِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺍﻥُ ……….. ﺍﻟﺦ
অর্থ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাদ্বি.) কিছু লোককে ইমামের সাথে সাথে কিরাআত পড়তে শুনলেন। নামায শেষ হলে তিনি বললেন এখনও কি তোমাদের উক্ত আয়াতের মমার্থ বুঝার সময় আসেনি?
‘তানভীরু মিকয়াস মিন তাফসীরি ইবনে আব্বাস’ কিতাবে উক্ত আয়াতের তাফসীরে লেখা আছে যে,
ﻭَ ﺍِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﺍﻟْﻘُﺮْﺍﻥُ ﻓِﻰ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ ﺍﻟْﻤَﻜْﺘُﻮْﺑَﺔِ ﻓَﺎﺳْﺘَﻤِﻌُﻮْﺍ ﻟَﻪُ ﺍِﻟَﻰ ﻗِﺮَﺍﺀَﺗِﻪ ﻭَﺍَﻧْﺼِﺘُﻮْﺍ ﺑِﻘِﺮَﺍﺀَﺗِﻪ
অর্থ যখন ফরয নামাযে কোরআন তিলাওয়াত করা হয় তখন তা তোমরা কান লাগিয়ে শোনো। আর কোরআন পাঠ করার সময় চুপ থাকো।"
আমাদের উপরোক্ত অনুসন্ধানী আলোচনা থেকে জানা গেল, ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুক্তাদীগণ ইমামের পেছনে কিরাআত পড়তো। কিন্তু উক্ত আয়াত নাযিলের পর ইমামের পেছনে কিরাআতের বিধান রহিত হয়ে গেল।"
~
দ্বিতীয়ত, এবার নিচের হাদীসগুলোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন!
১-
সহিহ মুসলিম শরীফ কিতাবে ‘বাবু সুজূদিত তিলাওয়াহ’ শীর্ষক অধ্যায় হযরত আতা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণিত আছে যে,
ﻭَﺭَﻭَﻯ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﻓِﻲ ﺻَﺤِﻴﺤِﻪِ ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀِ ﺑْﻦِ ﻳَﺴَﺎﺭٍ ﺃَﻧَّﻪُ ﺳَﺄَﻝَ ﺯَﻳْﺪَ ﺑْﻦَ ﺛَﺎﺑِﺖٍ ﻋَﻦْ ﺍﻟْﻘِﺮَﺍﺀَﺓِ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡِ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻟَﺎ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓَ ﻣَﻊَ ﺍﻟْﺈِﻣَﺎﻡِ ﻓِﻲ ﺷَﻲْﺀٍ
অর্থ হযরত যায়েদ বিন ছাবিত (রা)-এর নিকট ইমামের সাথে কিরাআতের হুকুম সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, ইমামের সাথে কিছুতেই কিরাআত পড়া জায়েয নেই।
২-
সহিহ মুসলিম শরীফ ‘বাবুত তাশাহহুদ’ এ হাদিস এসেছে যে,
ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻟَﻪُ ﺃَﺑُﻮْﺑَﻜَﺮٍ ﻓَﺤَﺪِﻳْﺚُ ﺃَﺑِﻰْ ﻫُﺮَﻳْﺮَ ﺓَ ﻓَﻘَﺎﻝَ ﻫُﻮْ ﺻَﺤِﻴْﺢٌ ﻳَﻌْﻨِﻰْ ﻭَ ﺍِﺫَﺍ ﻗُﺮِﺉَ ﻓَﺎﻧْﺼِﺘُﻮْﺍ
অর্থ "হযরত আবূ বকর (রা) তিনি সুলায়মানকে প্রশ্ন করলেন, হযরত আবূ হোরায়রা (রাদ্বি.)-এর বর্ণনাটি কেমন? তিনি বললেন, সহিহ। অর্থাৎ যখন ইমাম ক্বিরাআত পড়বে তখন তোমরা চুপ থাকবে—বর্ণনাটি সহিহ।"
৩- সহিহ মুসলিম শরীফে হযরত আবু মূসা আশ'আরী (রা) হতে আরো সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে যে,
ﻓِﻲ ﺻَﺤِﻴﺢِ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻣُﻮﺳَﻰ ﺍﻟْﺄَﺷْﻌَﺮِﻱِّ ﻗَﺎﻝَ : " ﺇﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺧَﻄَﺒَﻨَﺎ ﻓَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻨَﺎ ﺳُﻨَّﺘَﻨَﺎ ﻭَﻋَﻠَّﻤَﻨَﺎ ﺻَﻠَﺎﺗَﻨَﺎ ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺃَﻗِﻴﻤُﻮﺍ ﺻُﻔُﻮﻓَﻜُﻢْ ﺛُﻢَّ ﻟِﻴَﺆُﻣّﻜُﻢْ ﺃَﺣَﺪُﻛُﻢْ ﻓَﺈِﺫَﺍ ﻛَﺒَّﺮَ ﻓَﻜَﺒِّﺮُﻭﺍ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻗَﺮَﺃَ ﻓَﺄَﻧْﺼِﺘُﻮﺍ "
অর্থাৎ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিলেন। অতপর আমাদের জন্য সুন্নাহ'র আলোচনা করলেন এবং সালাত শিক্ষা দিলেন। অতপর বললেন, তোমাদের কাতার সোজা করো ও তোমাদের একজনকে ইমাম বানাও। এরপর সে যখন তাকবীর বলবে, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে। আর যখন সে কুরআন পড়বে তখন তোমরা চুপ থাকবে।”
৪-
তিরমিযী শরীফে হযরত জাবির (রাদ্বি.) হতে বর্ণিত আছে,
ﻣَﻦْ ﺻَﻠَّﻰ ﺭَﻛْﻌَﺔً ﻟَﻢْ ﻳَﻘْﺮَﺃ ﻓِﻴْﻬَﺎ ﺑِﺄُﻡِّ ﺍﻟْﻘُﺮْﺍﻥِ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺼَﻞِّ ﺍِﻟَّﺎ ﺃَﻥْ ﻳَّﻜُﻮْﻥَ ﻭَﺭَﺍﺀِ ﺍﻟْﺎِﻣَﺎﻡِ ﻫﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳْﺚً ﺣَﺴَﻦٌ ﺻَﺤِﻴْﺢٌ
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইমামের পেছনে ছাড়া (একাকী) নামায পড়লো কিন্তু তাতে সূরা ফাতেহা পড়লো না, পক্ষান্তরে সে নামাযই পড়লো না। হাদীসটি হাসান ও সহীহ।"
৫-
‘নাসাঈ শরীফ' কিতাবে হযরত আবূ হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত :
ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺍِﻧَّﻤَﺎ ﺟُﻌِﻞَ ﺍﻟْﺎِﻣَﺎﻡُ ﻟِﻴُﺆْﺗَﻢَّ ﻟَﻪُ ﻓَﺎِﺫَﺍ ﻛَﺒَّﺮَ ﻓَﻜَﺒِّﺮُﻭْﺍ ﻭَﺍِﺫَﺍ ﻗَﺮَﺃ ﻓَﺎﻧْﺼِﺘُﻮْﺍ
অর্থ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই ইমাম বানানো হয়েছে তার অনুসরণের জন্যই। যখন তিনি তাকবীর বলবেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলো। আর যখন তিনি কুরআন পড়বেন তখন তোমরা চুপ থাকো।”
উল্লেখ্য, আমরা ২নং হাদীসে মুসলিম শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে আগেই বলেছি যে, হযরত আবূ হোরায়রা (রাদ্বি.) থেকে বর্ণিত হাদীসটি সহীহ।
হাদিসের ভাষ্য : "হযরত আবূ বকর (রা) তিনি সুলায়মানকে প্রশ্ন করলেন, আবূ হোরায়রা (রাদ্বি.)-এর বর্ণনাটি কেমন? তিনি বললেন, সহীহ অর্থাৎ যখন ইমাম ক্বিরাআত পড়বে তখন তোমরা চুপ থাকবে" ।
৬-
বিখ্যাত হাদিসের কিতাব "তাহাবী শরীফ" -এ হযরত জাবির (রাদ্বি.) হতে বর্ণিত আছে যে,
ﺍَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ ﺍِﻣَﺎﻡٌ ﻓَﻘِﺮَﺍﺀَﺓَ ﺍﻟْﺎِﻣَﺎﻡِ ﻟَﻪُ ﻗِﺮَﺍﺀَﺓً
অর্থাৎ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যার ইমাম আছে, ইমামের তিলাওয়াতই তার তিলাওয়াত”।
৭-
ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) মুয়াত্তা শরীফে ইমাম আবূ হানীফা থেকে, তিনি মূসা ইবনে আবি আয়িশা থেকে, তিনি আবদুল্লাহ ইবনে শাদ্দাদ থেকে, তিনি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাদ্বি.) থেকে বর্ণনা করেন:
ﺍَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰَّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪَ ﺍِﻣَﺎﻡٌ ﻓَﻘِﺮَﺍﺀَﺓُ ﺍﻟْﺎِﻣَﺎﻡِ ﻟَﻪُ ﻗِﺮَﺃﺀَﺓ ﻗَﺎﻝَ ﻣُﺤَﻤَّﺪَﺑْﻦِ ﻣَﻨِﻴْﻊٍ ﻭَﺍِﺑْﻦُ ﺍﻟْﻬُﻤَﺎﻡِ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟْﺎِﺳْﻨَﺎﺩُ ﺻَﺤِﻴْﺢٌ ﻋَﻠﻰ ﺷَﺮْﻁِ ﺍﻟﺸّﻴْﺨَﻴْﻦِ
অর্থাৎ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, যার ইমাম আছে তার ক্ষেত্রে ইমামের ক্বিরাআতই তার ক্বিরাআত। মুহাম্মদ ইবনে মানী এবং ইমাম ইবনুল হুমাম (আলাইহিমার রাহমাহ) উনারা বলেন, এ হাদীসের সনদ শায়খাঈন তথা ইমাম বুখারী এবং মুসলিমের শর্তাধীন মতে বিশুদ্ধ”।
যাইহোক, দলিল হিসেবে সহিহ, হাসান ইত্যাকার আরো অনেক হাদিস দেয়া যাবে। তবে যাদের অন্তরে সীমাহীন বক্রতা রয়েছে তাদের জন্য পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে সমুদ্র করে পেললেও কোনো লাভ নেই।
আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সহিহ কথা বুঝেশুঝে আমল করার তাওফিক দিন। 

◉◉◉ প্রশ্ন ◉◉◉

একজন আহলে হাদিস আমাকে চ্যালেন্জ্ঞ করলো যে লম্বা জামা ,টুপি,পাগড়ি এগুলি মক্কা মদিনার কাফির মুশরিকরাও পড়তো । তাই এগুলো সুন্নাত নয়। এগুলির সম্পর্কে কুরআন হাদিসের কোনো দলীল নাই। মহানবী সা. পরতেন কারণ এগুলি আরবের পোষাক ছিল। দয়া করে রেফারেন্স জানাবেন যাতে আমারও সন্দেহ নিরসন হয়।
◉◉◉ জবাবঃ
بسم الله الرحمن الرحيم
এ বক্তব্যটি কোন নবীপ্রেমিকের কথা নয়, নবীজীর দুশমনদের কথা হতে পারে। কাফেররা কী করেছে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমাদের প্রিয় নবীজী কী করেছেন? সেটাই আমাদের আলোচ্য ও বিবেচ্য। রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজ উম্মতের জন্য আদর্শ।
তবে কতিপয় সুনির্দিশ বৈশিষ্ট রাসূল সাঃ এর ছিল যা অন্য কারো জন্য জায়েজ নয়। যেমন চারের অধিক বিয়ে করা ইত্যাদি। এটা রাসূল সাঃ এর বৈশিষ্ট। এমন কতিপয় সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট ছাড়া রাসূল সাঃ এর প্রতিটি আমল, প্রতিটি চাল-চলন একজন নবী প্রেমিক উম্মতের কাছে আদর্শ ও পালনীয়।
রাসূল সাঃ এর সকল আমলকে আদর্শ সাব্যস্ত করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا [٣٣:٢١
যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে,তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে। {সূরা আহযাব-২৩}
পোশাকের মাঝে রাসূল সাঃ কোন নমুনা আমাদের জন্য রেখে যান নি? তিনি শুধু মক্কার কাফেরদের অনুসরণে জামা কাপড় পরিধান করে গেছেন? এমন কথা রাসূল বিদ্বেষী ছাড়া অন্য কেউ কিছুতেই বলতে পারে না।
যারা আল্লাহ ও হাশরে বিশ্বাস রাখে তাদের জন্য নবীজীর পোশাকে, নবীজী কথায়, নবীজীর প্রতিটি আমলে উত্তম নমুনা আছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ পাক।
কিন্তু যারা আল্লাহ ও হাশরে অবিশ্বাসী তাদের জন্য নবীজীর পোশাকে, নবীজীর চাল-চলনে আদর্শ না থাকাটা অসম্ভব কিছু নয়। তারা নবীজী সাঃ এর চাল-চলন ও পোশাক পরিচ্ছদ না দেখে কাফেরদের পোশাক পরিচ্ছদ দেখেই আকৃষ্ট হবে বেশি এটাই স্বাভাবিক।
কে কী করেছে? সেটা কোন মুসলমান বিবেচনা করতে পারে না। একজন মুসলমান দেখবে আমাদের আদর্শ, আমাদের পথিকৃত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ কী করেছেন? রাসূল সাঃ এর প্রতিটি কাজের শর্তহীন ও যুক্তিহীনভাবে অনুসরণের নাম দ্বীন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ [٣:٣١
বলুন,যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস,তাহলে আমাকে অনুসরণ কর,যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। {সূলা আলে ইমরান-৩১}
সর্বক্ষেত্রে নবীজীর অনুসরণকে আল্লাহ প্রেমের নিদর্শন বলা হয়েছে। আর হাদীসে কাফেরদের অনুসরণকে জাহান্নামী হওয়ার নিদর্শন বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ».
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে (আবু দাউদ শরীফ, হাদিস নং-৪০৩৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৯৬৬, মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস নং-২০৯০৮৬)
একজন মুমিন মুসলমান প্রতিটি আমলে রাসূলের মাঝে আদর্শ ও নমুনা খুঁজে বেড়ায়। আর নবী বিদ্বেষীরা খুঁজবে কাফেরদের মাঝে এটাই স্বাভাবিক। তাই তাদের মুখে নবীজী সাঃ এর পরিধান করা পোশাকে থাকা আল্লাহ তাআলার ঘোষণা দেয়া আদর্শিক রূপরেখা বর্জনের জন্য স্লোগান আসতেই পারে। নবীপ্রেমিকের মুখে এমন কুফরী কথা আসতে পারে না।
রাসূলে কারীম সাঃ এর প্রতিটি কর্মের অনুসরণকে রাসূল সাঃ এর সাথে জান্নাতে যাওয়ার পথ বলে ঘোষণা করে বলেন-
ومن أحيا سنتي فقد أحبني ومن أحبني كان معي في الجنة
যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত তথা পথ-পদ্ধতিকে জিন্দা করবে তথা পালন করবে, সে আমাকে ভালবাসল, আর যে, আমাকে ভালবাসল, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৬৭৮}
◉◉◉ সুন্নাত কাকে বলে?
السنة تطلق في الأكثر على ما أضيف إلى النبي من قول أو فعل أو تقرير
সুন্নাত বলা হয়, রাসূল সাঃ এর কথা, কাজ ও চুপ থাকাকে। {আনওয়ারুল কাশিফাহ, উলুমুল হাদীস ফি জাওয়ি তাতবীকাতিল মুহাদ্দিসীন, কাওয়ায়েদুত তাহদীস ফি ফুনুনি মুসতালাহিল হাদীস, লিসানুল মুহাদ্দিসীন}
রাসূল সাঃ এর প্রতিটি আমলকে অনুসরণের চেষ্টা করা নবীপ্রেমিকের কাজ। নবীজী সাঃ এর আমল বর্জনের বাহানা খোঁজা নবী বিদ্বেষীদের কাজ। সাহাবায়ে কেরাম রাসূল সাঃ যাই করেছেন, যে কারণেই করেছেন, তা’ই অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন দলিল ও যুক্তি ছাড়া। এ কারণেই -
☞ রাসূল সাঃ এর মজাক করে বলা আবু হুরায়রা তথা বিড়ালওয়ালা নাম পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন বিখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন সাখার রাঃ।
☞ সাহাবী আব্দুল্লাহ নামের সাথে জোড়ে নিলেন “জুলবাদাইন” তথা দুই চাদরওয়ালা নাম।
☞ আরেকজন জোরে নিলেন জুলইয়াদাইন তথা হাতওয়ালা নাম।
যুক্তি খুঁজেননি, কেন বলেছেন রাসূল সাঃ? রাসূল সাঃ বলেছেন এর চেয়ে আর বড় দলিল কি আছে একজন একনিষ্ট ভক্তের কাছে?
এ কারণেই -
☞ যুক্তিহীনভাবে রাসূল সাঃ কে ভালবেসে এক সাহাবী সারা জীবন খাবারের তালিকায় কদু রাখতে চেষ্টা করেছেন যেহেতু রাসূল সাঃ পছন্দ করতেন।
☞ আব্দুল্লাহ বিন ওমর অকারণেই মদীনা থেকে মক্কায় যাওয়ার পথে নির্দিষ্ট স্থানে বসে পড়তেন, যেহেতু রাসূল সাঃ কোন কারণে সেখানে একদিন বসে ছিলেন।
☞ হযরত ওমর রাঃ বিনা কারণে ইচ্ছেকৃত মাটিতে বসে গিয়েছিলেন এক স্থানে যেহেতু একদিন রাসূল সাঃ উক্ত স্থানে হোচট খেয়েছিলেন।
এই সবই তীব্র মোহাব্বত ও হৃদয়ের টানের ব্যাপার। নবীজী সাঃ কে হৃদয়ের সবটুকু নিংড়ে ভালবাসার নিদর্শন।
রাসূল সাঃ এর অনুসরণ থেকে দূরে থাকতে নোংরা যুক্তি দিয়ে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা করা গোটা পৃথিবীর আদর্শ মানব নবীজী সাঃ এর পোশাককে মক্কার কাফেরদের অনুসরণ বলাটা নবীপ্রেমিকরা করবে না। নবীবিদ্বেষীদের বেআদবীর বহিঃপ্রকাশ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

লা মাজহাবীরা পালাবে কোথায়?

এক. ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ পঞ্চান্নবার হজ্ব করেন ৷ আখেরী হজ্বে কা'বার প্রহরী থেকে অনুমতি নিয়ে রাতে কা'বা শরীফের অন্দরে তাশরীফ নিয়ে গেলেন ৷ দুই স্তম্ভের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এভাবে দু রাকআত নামাজ পড়লেন যে, প্রথম রাকআতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে পনেরো পারা কুরআন পড়লেন আর দ্বিতীয় রাকআতে আরেক পায়ে শেষ পনেরো পারা পড়লেন ৷ সালাম ফিরিয়ে খুব রোনাজারি করলেন আর দুআ করলেন:
يا الهي ما عبدك هذا العبد الضعيف حق عبادتك ولكن عرفك حق معرفتك فهب نقصان خدمته بكمال معرفته.
হে মাবুদ, তোমার এই দুর্বল বান্দা তোমার পূর্ণ ইবাদত করতে পারেনি, কিন্তু তোমাকে পূর্ণরূপে চিনতে পেরেছে ৷ অতএব, তার ইবাদতের কমতি ক্ষমা করে দাও তার মারিফাতের বিনিময়ে (তোমাকে যতটুকু চিনতে পেরেছে তার বিনিময়ে) ৷
তখন অদৃশ্য থেকে আওয়াজ এলো
يا اباحنيفة قد عرفتنا حق المعرفة وخدمتنا فأحسنت الخدمة وقد غفرنا لك ولمن اتبعك ممن كان علي مذهبك إلي يوم القيامة الخ.
হে আবু হানীফা, তুমি আমাকে পরিপূর্ণরূপে চিনতে পেরেছো আর আমার ইবাদত অতিশয় সুন্দরভাবে করেছো ৷ অবশ্যই আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম এবং যারা কিয়ামত পর্যন্ত তোমার মাযহাবের অনুসরণ করবে তাদেরও ক্ষমা করে দিলাম ৷
--রদ্দুল মুহতার, খঃ-1, পৃঃ-36
দুই. ইমাম শাফেঈ রহঃ হলেন ইমাম আজমের ছাত্রদের ছাত্র ৷ তিনি ইমাম সাহেব রহঃ কে অত্যন্ত সম্মান করতেন ৷ আর এতটাই আদব করতেন যে, যখন তিনি ইমাম আজম রহঃ এর কবরে উপস্থিত হলেন তখন ফজরের নামাজে দুআ কুনূত পড়লেন না এবং রফয়ে ইয়াদাইনও করলেন না ৷
তিন. ইমাম শাফেঈ রহঃ বলেন:
যখন কোনো বিষয় আমার সংশয় সৃষ্টি হয় তখন দু' রাকআত নামাজ পড়ে ইমাম সাহেব রহঃ এর রুহ থেকে এস্তেফাদা করি (উপকৃত হই) ৷ যদ্দরুণ আমার সংশয় দূর হয়ে যায় ৷
--মবাদিয়াতে ফিকহ, পৃঃ-29)

আহলে হাদিসের গোপন কথা।

আহলে হাদিসের গোপন কথা। যে কথা শুনে আপনিও চমকে উঠবেন। শীয়া থেকেই আহলে হাদিসের জন্ম। অত্যন্ত অপ্রিয় একটি কথা, তাই না! তবে হ্যাঁ, এটাই সত্য। বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকিহ, আল্লামা ইবনু হুমাম (রহ) রচিত কিতাব "ফতহুল ক্বাদীর" এর সম্পূরক একটি কিতাব "মুকাদ্দামাতু ফতহুল ক্বাদীর" (মিশরীয় মুদ্রণ , পৃষ্ঠা ৫) কিতাবে সুস্পষ্টভাবে একটি তথ্য উল্লেখ পেলাম, যা পড়ে আমি নিজেও হতভম্ব হয়ে গেলাম। সেখানে প্রামাণ্য একটি তথ্য এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আশ্চর্যজনক বিষয় হল— (সম্প্রতি গজে উঠা) আহলে হাদিসদের অগ্রণী ব্যক্তিবর্গরা সবাই ছিলেন শীয়া। একথা অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য। প্রমাণ স্বরূপ বলতে পারি, আহলে হাদিসের পথিকৃৎ আব্দুল হক বেনারসির কথা। তিনি ইয়ামানের শীয়া যায়েদিয়া ফেরকার অনুসারী পন্ডিত শাওকানী হতে শিক্ষা -দিক্ষা লাভ করেন। " প্রসিদ্ধ আহলে হাদিস গুরু নবাব সিদ্দিক হাসান খান সাহেব নিজের "সিলসিলাতুল আসজাদ" নামক কিতাবে তা স্বীকার করে লিখেছেন যে, "মধ্য বয়সে আব্দুল হক বেনারসি শীয়া হয়ে যান।" কাশফুল হিজাজ কিতাবের ২১ নং পৃষ্ঠায় আরো যে তথ্যটি পাওয়া গেল তা শুনে যে কারোরই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠবে। তাতে লেখা আছে, ক্বারি আব্দুর রহমান মুহাদ্দিসে পানিপথী (রহ) আব্দুল হক বেনারসি (আহলে হাদিস ফেরকার প্রতিষ্ঠাতা) সম্পর্কে লিখেছেন, " আব্দুল হক বেনারসি তিনি শীয়া পন্ডিত গুলশান আলীর নিকট গেলেন। তখন বেনারসের রাজাও ছিল শীয়া। আব্দুল হক বেনারসি তখন গর্বের সাথে বলে পেললেন, আমি একজন শীয়া। আমি নিজেকে প্রকাশ্যে শীয়া হওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি। আমি সরাসরি হাদিস দেখে দেখে আমল করার দাওয়াত দেয়ার আড়ালে হাজারো আহলে সুন্নাহ'র অনুসারীদের মাযহাব থেকে বের করে দিয়েছি। এখন তাদের জন্য শীয়া হওয়াটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। এ ঘোষণার পরেই শীয়া পন্ডিত গুলশান আলী সেই যুগের ত্রিশ টাকা বেতনে তাকে চাকুরী দেন।" তারপর পরের ঘটনা সবার জানা। উক্ত প্রামাণ্য তথ্য হতে যা বুঝার, তা নিশ্চয় বুঝে গেছেন। এককথায়, আব্দুল হক বেনারসি ছিলেন, ইসলামে অনুপ্রবেশকারী ঐতিহাসিক নব্য আব্দুল্লাহ বিন সাবার প্রেতাত্মা। যার ডিম থেকে ফুটন্ত বাচ্ছাগুলোই হল, সাম্প্রতিককালের কথিত আহলে হাদিস বা লামাযহাবী চক্র

ব্যয় বাহুল্যতা ও সিনেমার ব্যাপকতাঃ

বর্তমানে ছোট বড় প্রায় সবশহরেই সিনেমা হল বা চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহ গড়ে উঠেছে বা উঠছে। প্রতিদিন যেখানে লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ তথা বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ একাকী বা সবান্ধব কিংবা বান্ধবী নিয়ে সিনেমার দর্শক হিসেবে হাজির হচ্ছে পঙ্গপালের মত। সম্প্রতি নির্মিত হলগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করলেই আমাদের বোধগম্য হবে যে, এ শয়তানী কাজটি বাস্তবায়নের জন্য মানুষ কিভাবে পানির মত অর্থ ব্যয় করে চলছে এবং কত অর্থ ব্যয় করে প্রেক্ষাগৃহের এ সুরম্য অট্টালিকাসমূহ নির্মাণ করা হয়েছে। সর্বোপরি চলচিত্র উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান এফ,ডি,সি, এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তথা ছবি নির্মাতা,প্রযোজক,পরিবেশক,পরিচালক,অভিনেতা,অভিনেত্রী,নৃত্যশিল্পী,ক্যামেরাম্যান প্রভৃতি লোকদের ভাতা এবং এদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ তথা একটি ছবি নির্মাণে দেশের অর্থনীতিরর শতকরা কতভাগ ব্যয় হয় এবং ব্যয়ের এ বিরাট অংশটি দেশ ও জাতির চরিত্রগত উন্নতির খাতে ব্যয় হচ্ছে কিনা দেশের নীতি নির্ধারকগন এসব নিয়ে ভাবেন কি কোনদিন? অথচ পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অর্থ ব্যয় সম্পর্কে স্পষ্ট বিধান রয়েছে। অন্যায় ও চরিত্রহরনমূলক খাতে ব্যয় করাকে নিরুৎসাহিত করে কঠোর নিষেধাজ্ঞাও জারী করা হয়েছে।
সিনেমা দেখার বদভ্যাস যে আমাদেন দেশে কত ব্যাপক আকার ধারণ করেছে এ আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এ শয়তানি জালটি বর্তমানে এতো বিস্তার লাভ করেছে যে, প্রতি ঘরে ঘরে পৌছে গেছে এর অশুভ বিচরণ। খুব কম পরিবারই এমন আছে যারা এখনো এই আবর্জনা থেকে মুক্ত এবং সিনেমা, টিভি বা ডিশএন্টিনা দ্বারা ঘরতে অপবিত্র করেনি। অতন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যারা এ শয়তানি কর্মের সাথে নিজেদের জড়ায়নি তাদেরও এর পাপ থেকে রেহাই পাওয়া মুশকিল হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ মিনেমার প্রচারভিযানের নির্লজ্জ দৌরাত্ম্য যেমনঃ উলঙ্গ, অর্ধোলঙ্গ ও যৌন আবেদনমূলক পোষ্টার, ব্যানার, পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, আকর্ষণীয় পদ্ধতি অবলম্বনে গাড়ি সাজিয়ে মাইকিং করা ইদ্যাদির কবল ধেকে কোন নাগরিকই মুক্ত এবং নিরাপদ নয়। মোটকথা সিনেমা এখন ব্যাপক মুসিবতের রূপ পরিগ্রহ করেছে। এ থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
কিন্তু পরিতাপের সাথে বলতে হচ্ছে যে, 'সিনেমা' এত শত মন্দতার বাহক হওয়া সত্ত্বেও আমাদের সমাজে অনেক লোকই এমন আছে যারা একে মন্দ কাজ এবং অপরাধ বলে মনো করে না। বরং সিনেমাভক্তরা বলে, এর দ্বারা চিত্তবিনোদন ও আত্মিক তৃপ্তি লাভ করা যায় এবং বিভিন্নমুখী জ্ঞানও অর্জিত হয়!
হায় আমাদেন আকল! জানি না কিভাবে এমন মারাত্মক কথা আমাদের মুখ দিয়ে নিসৃত হয়। অভিশপ্ত শয়তান আমাদের দেমাগের কি বিকৃতি সাধন করেছে। হে আল্লাহ! আমাদেরকে শুভবুদ্ধি দান করুন।
মূলতঃ শয়তান সর্বদা মানুষের সামনে মন্দ কাজকে অতি সুশোভিদ করে তুলে ধরে; ফলে বাহ্যিক দৃষ্টিতে ভালকে মন্দ আর মন্দকে ভাল বলে মনে হয়। পরিনামে মানুষ সিরাতে মুস্তাকিম বা সঠিক ও সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়। মন্দকাজে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে থাকে এবং আল্লাহর হুকুম তথা নামাজ, রোজা, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নেক কাজে কোন তৃপ্তি অনুভূত হয় না। বরং খুবই বেরস লাগে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
"আর শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের নিকট সুশোভিত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে; ফলে তারা সৎপথ পায় না।"

চারিত্রিক ক্ষতিঃ -----------------------

এটা পরিক্ষিত সত্য যে, যার যে পরিমাণ সিনেমা দেখার অভ্যাস গড়ে উঠবে তার চরিত্র সে পরিমান দ্রুততার সাথে মারাত্মক ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের বেলায় এর প্রভাব অতি সহজে অনুমান করা যায়। সিনেমার কারণে ঘরে-বাইরে সর্বত্র চরিত্রহননমূলক অশালিন আলোচনা, অসাড় ও অনর্থক কাহিনী বর্ণনা, অশ্লীল ও যৌন আবেদনমূলক গানবাজনা ইত্যাদি প্রসার লাভ করে। ফলে বেয়াদবি এত চরমভাবে বিস্তার লাভ করে যে পিতা-পুত্র, ছোট-বড় এর কোন ভেদাভেদ থাকে না। মা-বাবার সামনেই ছেলেমেয়েরা অশালীনভাবে নাচতে-গাইতে শুরু করে। সন্তানদের মাঝে পিতা-মাতার অবাধ্যতা, তাদের সাথে রূঢ় এবং অসদ্ব্যবহার করা, বড়দের অমান্য করা, ছেটদের প্রতি নির্দয় হওয়া, শিক্ষকদের ব্যঙ্গ করা, পরস্ত্রীরর প্রতি লোভী হওয়া, পরের অনিষ্ট করা, প্রতিবেশীর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করা, বেপর্দা-বেহায়াপনা প্রভৃতি বদভ্যাসগুলো প্রধানত সিনেমা এবং নাটক থেকেই জন্ম নিয়ে থাকে। মোটকথা নাটক-সিনেমার কারণে পরিবারের লজ্জা-শরম, ভদ্রতা-সভ্যতা, মমতা-সহমর্মিতা, শ্রদ্ধা-ভক্তি ইত্যাদি সবকিছুই বিলীন হয়ে যায়। ফলে পরিবারের উপর থেকে আল্লাহর রহমত ধীরে ধীরে লোপ পায় এবং যা হওয়ার কথা ছিল সুখের নীড় শতচেষ্টা করেও তা আর গড়ে তোলা যায় না। কার্যত সুখের স্থলে পরিবার অশান্তির নরক রাজ্য হয়ে ওঠে। কেউ হয়তো এ কথা বলতে পারেন যে, আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা সিনেমা দেখি কিন্তু কই আমাদের চরিত্রতো ঠিক আছে। আমি বলব, এটা হয়তো আপনাদের প্রাথমিক অবস্হা। কিছুদিন অতিক্রান্ত হলেই টের পাবেন এর পরিণতি কত ভয়াবহ। কারণ সিনেমা দেখার আগ্রহ এবং লিপ্সা দিন দিনন বাড়তে থাকে আর চরিত্রের মান দিন দিন ক্ষয় হতে থাকে। এটা এতো সন্তোর্পনে হয়ে থাকে যে প্রাথমিকভাবে টেরই পাওয়া যায় না যে, ব্যক্তি চরিত্রের দিক থেকে কত দ্রুত পিছিয়ে যায়।
মূলতঃ এটা হলো শয়তানি কৌশল। শয়তানই বিভিন্নভাবে মানুষের মনে লোভনীয় ও চমৎকার যুক্তি দিয়ে এসব মন্দকাজে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে ব্যক্তি নিজের ভিতরের মন্দ মানুষটিকে জয় করে নিজেকে আর সৎ ও সুখী করে গড়ে তুলতে চায় না।

সিনেমার অভ্যাস একটি রূহানী ব্যাধিঃ

মানুষের যেমন শারিরীক ব্যাধি আছে তেমনি আত্মারও ব্যাধি আছে। কুদৃষ্টি, অহেতুক প্রেমপ্রীতি, অহংকার, গোস্বা, হিংসা ইত্যাদি রূহানী রোগের অন্তর্ভুক্ত। এসব রোগের বৈশিষ্ট্য হলো এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে কখনও রোগী মনে করে না এবং নিজের ভুলকে ভুল বলে স্বীকারই করে না। বরং নিজেকে একজন সুস্থ, সবল মানুষ মনে করে। নিয়মিত সিনেমা দেখার বদভ্যাসও এক ধরনের রূহানী ব্যাধি। এতে অন্তরাত্মার পবিত্রতা ক্ষয় হতে হতে একসময় শূণ্যের কোঠায় এসে দাঁড়ায়। যার পরিনাম সাধারণ রোগের তুলনায় অনেক বেশি ভয়ংকর।
সিনেমা দেখার আরেকটি অপুরণীয় ক্ষতিকর দিক হল নির্লজ্জতা এ পর্দাহীনতার প্রসার। সমাজে নারীঘটিত কেলেঙ্কারীজনক দূর্ঘটনার প্রায় সব ক'টি এই একটি কারণেই ঘটে থাকে। এতে যে শুধু সমাজে বিপর্যয় নেমে আসে তা নয় বরং মুসলিম নারীরা আল্লাহ তায়ালার পর্দাপ্রথা সম্পর্কিত একটি নির্দেশ অমান্য করার দায়ে হারামের অথৈ সাগরে ডুবে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বলাবাহুল্য, যারা পবিত্র কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন দারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যে, ইসলামে পর্দাকে কি অসামান্য গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-- ' হে নবী! আপনি আপনারর স্ত্রী, কন্যা এবং মুমিনদের নারীদের বলে দিন যেন তারা তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আর আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।'
(সূরা আহযাব, আয়াত ৫৯)
কুরআনে কারীমের সকল মুফাসসির সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় নারীদের চেহারাও পর্দার হুকুমের আওতাভুক্ত। অথচ জঘন্য হলেও সদ্য যে, এ আদেশ অমান্য করে শুধু চেহারা নয় প্রায় সর্বাঙ্গ উন্মোক্ত করেই বর্তমানে নারীরা সিনেমা হলসহ অণ্যান্য স্থানে পুরুষের সাথে একান্তে মিলিত হচ্ছে। ফলে সমাজের অবস্হা অাজ যাচ্ছেতাই। এহেন পরিস্থিতিতে সমাজকর্তা ও অভিভাবকদের শুভবুদ্ধির উদয় না হলে সমাজকে পতনের হাত থেকে কিছুতেই রক্ষা করা যাবে না। অনেক সময় এমনও হয় যে, মহিলারা সিনেমা দেখে গভীর রাতে ঘরে ফেরার পথে দুবৃত্তের হাতে পড়ে ইজ্জত-সম্ভ্রমের মত দৌলতও খুইয়ে বসে। কোন কোনন সময় জীবনও দিতে হয়। এসব কারণে পারিবারিক দুর্নাম সৃষ্টি হয় এবং বংশগত ঐতিয্য ভূলুণ্ঠিত হয়। এমনকি উক্ত মহিলার সাথে কোন পুরুষ সঙ্গী থাকলে তার জীবনও আক্রমনকারীদেন হাতে বিপন্ন হয়ে যায়। অথচ এভাবে সিনেমা দেখার বদরুসম চালু না থাকলে আমাদের সমাজে এ অভিশাপ নেমে আসতো না। একটু ভেবে দেখলেই আমরা উপলদ্ধি করতে পারবো যে, এক সিনেমার কারণে আমাদেরকে দৈনন্দিন জীবনে কত বিপদের মুখোমুখি হতে হয়, সমাজ দেহে সৃষ্টি হয় কত জঘন্য ক্ষত চিহ্ন।প্রথমত রূহানী রোগের প্রাদুর্ভাব অতঃপর ক্রমে ঘটতে শুরু হয় বেপর্দা, সম্ভ্রমহানি, প্রাণহানির মত ভয়াবহ দূর্ঘটনাসমূহ।

ছাত্রছাত্রীদেরর উপর সিনেমার প্রভাবঃ

ছাত্রছাত্রীদের বিরাট একটি অংশ সিনেমা দেখার ভয়ংকর রোগে আক্রান্ত। কিন্তু অল্পসংখ্যক অভিভাবকই এ ব্যাপারে খবর রাখেন। অথচ এতে সমাজের ভাবী কর্ণধার এ নবীনদের ভবিষ্যত জীবনের উপর সাংঘাতিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। লেখাপড়া ও স্বাভাবিক কাজকর্মে ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা জড়িয়ে যাচ্ছে এদের জীবনধারার সাথে। যা সুন্দর ও উজ্জল জীবন গড়ার পথে এক দূর্ভেদ্য অন্তরায়। এ কথা পরীক্ষিত সত্য যে, যেসব ছেলেমেয়ে সিনেমা দেখতে অভ্যস্ত তারা ধীরে ধীরে পিতামাতার অবাধ্য হয়ে যায়। বরং অধিকাংশ সময় কঠিন ও রূঢ় ব্যবহার নিয়ে তাদের সম্মুখীন হয়। সিনেমার নেশা উদয় হওয়ার পর বাবা-মা'র নিকট টাকা চেয়ে ব্যর্থ হলে তারা বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা বাহানার আশ্রয় নিতে থাকে। যেমনঃ এই বলে টাকা দাবি করে যে, কলেজে অমুক কাজের জন্য এত টাকা চাঁদা ধার্য্য করা হয়েছে। অতঃপর এ টাকা নিয়ে কলেজ কামাই দিয়ে সিনেমার ক্লাশকেই জমজমাট করে তোলে! আবার কখনো বইপত্র হারিয়ে যাওয়ার বাহানা করে কিংবা বাবার পকেট কাটার পথ খুলে বসে! ভেবে দেখুন, শুধুমাত্র সিনেমার কারণেই একটি ছেলে জীবনের প্রথম অংশেই মিথ্যা বাহানা, কুটকৌশল, চুরি ইত্যাদির মত জঘন্য কাজে অভ্যস্ত হয়ে যায়।পরে অবশ্য এ অভিজ্ঞতা থেকেই অনেকে ছিনতাই, ডাকাতি পর্যস্ত পৌঁছে যায়। অথচ বাবা-মা'র অবহেলা কিংবা অসর্কতার কারণেই এহেন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। কারণ এ মা-বাবাই প্রথম এদেরকে সিনেমা দেখতে নিয়ে গেছে কিংবা যাওয়ার পথে উপযুক্ত বাধা দেয়নি।
কলেজের ছাত্রছাত্রীরা সিনেমা দেখে দেখে সম্পূর্ণ ফিল্মী কায়দায় অবৈধ প্রেমপ্রীতির বাজার গরম করে তোলে। একদল হিরো'কে অনুসরণ করে অন্যদল হিরোইনকে। ঠিক সিনেমার মতই ভাবভঙ্গি করে কথা বলে বলে নিজেদের মাঝে প্রণয়ের জন্ম দেয়। একজন অন্যজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। মিষ্টি মিষ্টি কথার রেশ ধরে সম্পর্ক হয় ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠকর। নেমে আসে প্রেমের পাগলা তুফান। এদিকে লেখাপড়ার বেহাল অবস্হা। ভাল রেজাল্টের আশায় পড়ে গুড়ে বালি। পরীক্ষারর দিন ঘনিয়ে আসে। কিন্তু কোন পরোয়া নেই। বরং এতোদিনে প্রেমের অনেক স্তর অতিক্রম শেষে হাজির হয় আখেরি মনজিলে। যেখানে এসে সব শেষ। শেষ পর্যন্ত এদেরকে বিয়ে দেয়ার সময় অভিভাবকের ভোগ কররতে হয় অসহ্য কষ্ট। সিনেমা দেখার কারণে ছাত্রছাত্রীদের স্মৃতিশক্তিও লোপ পায়। কারণ অশ্লীল সিনেমা দেখে দেখে এদের মাঝে বিভিন্ন প্রকার বদস্বভাব জন্ম নেয়। ফলে শারীরিক শক্তি হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে মেধার তীক্ষ্ণতাও লোপ পেতে থাকে। জানিনা আত্মভোলা এ জাতির চক্ষু কবে খুলবে? কবে কাটবে এ উন্মাদনারর ঘোর?
মূলতঃ প্রত্যেকেরই উচিৎ জীবনের এ মূল্যবান সময়গুলো চিত্ত বিনোদনের নামে এ ধ্বংসাত্মক পথে ব্যয় না করেরে আল্লাহর সন্তুষ্টি তথা দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও হিফাজতের ক্ষেত্রে ব্যয় করা।
---"কোন অনল গহবরে জীবন দিওনা বলিদান
যিনি দিয়েছেন প্রাণ হও তার লাগি কুরবান"---

ফ্যাশনপূঁজার প্রবণতাঃ

নিয়মিত সিনেমা দেখার অভ্যাস গড়ে ওঠলে সাধারনত মানুষ মানষিকভাবে ফ্যাশনপূঁজারী হয়ে ওঠে। তখন সুন্নত মোতাবেক জীবনযাপনের পরিবর্তে ফ্যাশন মোতাবেক চলাকেই গৌরব মনে করে। এতে ব্যক্তির মনে এমন এক অপবিত্র ও অশুভ ছায়া পড়ে যার প্রভাবে সে মহানবী সা. এর চিরসুন্দর আদর্শ ত্যাগ করে ক্ষণিকের চোখ ঝলসানো ভেল্কিবাজির মত অত্যাধুনিক ফ্যাশনকেই নিজের জীবনের জন্য বেছে নেয়। নিম্নে কয়েকটি আলোচনা করা হলঃ
ক) ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক দাড়ি রাখা সুন্নত পক্ষান্তরে দাড়ি শেভ করা হালের ফ্যাশন। মানুষ সিনেমা দেখে দেখে নায়কদের অনুকরণে দাড়ি শেভ করতে অনুপ্রাণিত হয়।
খ) সুন্নত হলো, পুরুষ মাথায় টুপি দিয়ে থাকবে এবং চুল ছোট রাখবে। আর নারীরা সম্পূর্ণভাবে মাখার কেশ ঢেকে রাখবে। অথচ বর্তমানে উল্টো ছেলেরা সিনেমার নায়কদের অনুকরণে বড় বড় চুল রাখছে। আর মেয়রি অনুসরণ করছে নায়িকাদের। এভাবে খোলা মাথায় কেশের বাহারে যুবতীররা যুবকদেরকে রাস্তাঘাটে অপরাধের দিকে কেমন করে লেলিয়ে দিচ্ছে বলাই বাহুল্য। তারা এমন করে সুন্নতকে জবাই করছে আর ফ্যাশনকে লালন করছে অতি উৎসাহের সাথে এটা তো সিনেমারই কুফল।
গ) মহিলাদের হাতে মেহেদীর রং দেয়া হল সুন্নত। কিন্তু আজকের মেয়েরা মেহেদীর বদলে বছে নিয়েছে নেইল পলিশ। কারণ এটা নায়িকাদের ফ্যাশন। অথচ এই ফ্যাশনপূঁজার কারণে মেয়েদের না হচ্ছে অযু আর না হচ্ছে নামাজ। গভীরভাবে চিন্তা করলে বুঝা যায়, সিনেমা আবিস্কার করে অতি সুক্ষ্ণভাবে ইসলামের শত্রুরা মুসলমানদেরকে খোদার পথ থেকে সরিয়ে অন্যপথে ব্যস্ত রাখার যে ফাঁদ পেতেছে আমাদের বর্তমান প্রজন্ম সোৎসাহে সে ফাঁদে মাথা আটকিয়ে নিজেদের ভাবছে মুক্ত, স্বাধীন এবং প্রগতিশীল। এর পরিনাম যে কত কঠিন তা ভেবে দেখার অবকাশ পর্যন্ত তাদের নেই। আর যারা এতে বাধা দেয় তারা হয়ে যায় অসামাজিক, কাঠখোট্রা, রসকষহীন এবং প্রগতি বিরোধী ইত্যাদি।

চোখ ও কানের বহুবিধ ক্ষতিঃ

সিনেমা দেখার কারণে শারীরিক যেসব রোগব্যাধি দেখা দেয় দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া এর অন্যতম। চিকিৎসা বিজ্ঞানেরর মতে যে যত বেশি সিনেমা দেখবে তার দৃষ্টিশক্তি ততদ্রুত প্রভাবিত হবে। প্রনিধানযোগ্য যে, যে বদামলের কারণে দুনিয়া-আখেরাত উভয় বরবাদ হচ্ছে তা থেকে জাতিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বিরত রাখা বর্তমান যুগসন্ধিক্ষণের বড় কল্যাকামিতা হবে বলেই মনে করি।
সিনেমার মাধ্যমে শয়তান মানুষকে হেদায়েতের পথ থেকে সহজেই বিচ্যুত করতে পারে। কারণ চোখ এবং কান এই দুই অঙ্গ দ্বারা মানুষ হেদায়েতের প্রতি অগ্রসর হয়। অর্থাৎ চোখ দিয়ে ভাল এবং সত্যকে দেখে আর কান দিয়ে তা শোনে। কিন্তু সিনেমা দেখার দ্বারা এ দু'পথই রুদ্ধ হয়। কেননা চোখ উলঙ্গপনা ও অপরাধ অবলোকন করে আর কান দিয়ে অশ্লীল গান ও অশালীন ডায়ালগ শোনে। এভাবে হেদায়েতের দু'টি পথই শয়তানের দখলে চলে যায়। ফলে মানুষ সত্য ছেড়ে মিথ্যাবেষ্ঠিত হয়েও নিজেদের পরিতৃপ্ত মনে করে। কোন অনুতাপ বোধ করেনা। অথচ কিয়ামতের দিন প্রত্যেককে তার কান, চোখ সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে যে, আল্লাহর দেয়া এ দু'অঙ্গকে কোন কাজে ব্যবহার করেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন--" যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই তার অনুসরণ কর্রনা; কান, চোখ, অন্তর এদের প্রত্যেকের সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।"
জানিনা সিনেমাদর্শকদের সেদিন কোন উপযুক্ত উত্তর থাকবে কিনা। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে নাচ-গান দেখা এবং শোনা উভয়টাই হারাম। তাছাড়া বেগানা নারীর প্রতি তাকানোই যেখানে হারাম সেখানে তাদের নাচ-গান উপভোগের কি জবাব মিলবে সেদিন?

সিনেমা দ্বীন থেকে দূরে রাখেঃ

যে ব্যক্তির সিনেমা দেখার অভ্যাস যত কঠিনতর তার জীবন যাত্রার পথটি দ্বীনের আলোকময়তা থেকে তত দূরে সরে যায়। কুরআন তিলাওয়াতের সুমধুর সাধ তার হৃদয়ে আর অনুভূত হয়না বরং গানের সূর লহরিতে সে এক অজানা তৃপ্তি আস্বাদন করতে থাকে। নামাজ, রোজা কোন কিছুতেই মন বসে না বরং সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি দেখার দুর্বার নেশায় তনুমন অস্থির হয়ে থাকে। রাসূল সা. এর পবিত্র বাণী এবং হাদীস নির্দেশিত আমলসমূহ আদায় করা তার কাছে অসাধ্য ও দূরহ বলে মনে হয়। ধীরেধীরে এক দুই ওয়াক্ত করে নামাজ ছুটে যেতে থাকে।দাড়ির কথা শোনা মাত্র গাত্রদাহ শুরু হয়। মহিলাদের বেশভুষায় নিজেকে সাজিয়ে তৃপ্তি পায়। অন্যদিকে মহিলারা পুরুষের সাজ লয়। বোরকা কথা, পর্দার কথা শুনতে অসহ্য লাগে। এগুলোকে জ্বালাতন মনে করে। সিনেমার বদৌলতে পর্দার পূর্ব অভ্যাস মন থেকে হারিয়ে যায়। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, কুরআন-হাদীসের বাণী, ওয়াজ-নসিহত ইত্যাদি বিরক্তকর মনে হয়। নাচ-গানের আসরে গেলে কিংবা সিনেমা দেখতে বসলে এর বিপরীত চরিত্র ফুটে ওঠে। সিনেমা দেখতে না পারলে মন বিষাদময় এবং অস্থির হয়ে থাকে। চলচ্চিত্রের প্রচারপত্র ও সিনেমা বিষয়ক ম্যাগাজিন পড়ে এক ধরনের সম্মোহনী তৃপ্তি লাভ করে। অন্যদিকে কুরআন-হাদীস তথা দ্বীনি বইপত্র পাঠে মনের কোন সাড়াই পাওয়া যায় না। এভাবেই সিনেমা আসক্ত এক সময় দ্বীন থেকে দূরে, বহুদূরে সরে যায়।

নামাজ থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্রঃ

হল কতৃপক্ষ প্রদর্শনীর শোগুলোকে এমনভাবে বিন্যাস করেছে যে গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যাবে যে, কোন লোক নিয়মিত সিনেমা দেখায় অভ্যস্ত হয়ে ওঠলে নিজের অজান্তেই সে নামাজ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। যেমনঃ দিনের প্রথম শো দেখতে গেলে যোহরের নামাজ ছুটে যায়। অন্তত জামাত কোনভাবেই পাওয়া যায় না।
দ্বিতীয় শো দেখতে গেলে আসরের নামাজের একই অবস্থা হয়। তৃতীয় শোতে অবশ্যই মাগরিব কাযা হয়। চতুর্থ শোতে অবশ্য ইচ্ছা করলে আগে নামাজ আদায় করতে পারে। কিন্তু তখন প্রস্তুতি পেরেশানির তা হয়ে ওঠে না। আর রাত ১২টার পর সিনেমা ফেরত কোন লোক বাসায় এসে নামাজ আদায় করবে এটা খুবই দুরাশার কথা। অনেকরাতে ঘুমানোর ফলে ফজরেন নামাজ পড়াটাও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বহুলাংশেই পড়া হয় না। এভাবেই সিনেমার নেশা মানুষকে নামাজের মত গুরুত্বপূর্ণ ফরজ আদায় করা থেকে দূরে সরিয়ে ফেলে। অথচ নামাজ ত্যাগ সম্পর্কেে রাসূল সা. ইরশাদ করেন--
★ নামাজ ত্যাগ মানুষকে কুফরি পর্যন্ত পৌঁছেে দেয়।
★ ঈমান এবং কুফরের মাঝে প্রভেদ হলো নামাজ ত্যাগ করা।
★ আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করো না যদিও তোমাকে টুকরো টুকরো করে দেয়া হয় বা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয় কিংবা শুলিতে চড়ানো হয়। আর জেনে শোনে নামাজ ত্যাগ করো না। যে ব্যক্তি জেনে শোনে (ইচ্ছাকৃত) নামাজ বর্জন করে সে আল্লাহর দায়িত্ব থেকে বের হয়ে যায়।
★ কেউ যদি বিনা কারণে দুই ওয়াক্ত নামাজ একত্রে আদায় করে তবে সে কবীরা গুনাহের ধাপসমূহের একটি ধাপ অতিক্রম করলো।
★ যার নামাজ ছুটে গেল তার যেন মানুষজন, ধনসম্পদ সবকিছুই ধ্বংস হয়ে গেল।

সিনেমার জন্য অর্থ ব্যয় করা অপব্যয় এবং হারামঃ

মানুষ অর্থ উপার্জনের জন্য দিনরাত হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে। দিনমজুর মাত্র ক'টি টাকার জন্য সারাদিন কাঠফাটা রোদ আর মুষলধারে বৃষ্টিতে মাঠে ময়দানেে খেটে যায়। শ্রমিকররা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্তভাবে মেশিনের চাকা ঘুরিয়ে যায়। এভাবে সকল শ্রেণীর পেশাদার ব্যক্তিকেই শুধু বেঁচে থাকার জন্য তা করতে হয়। অথচ ঘুনাক্ষরেও আমরা চিন্তা করে দেখি না যে এতো কষ্টসাধ্য উপার্জনেের পয়সা দিয়ে সিনেমা দেখে দেখে কত বড় গুনাহের কাজে তা ব্যয় করছি। শরীয়তের হুকুম হলো হালাল পথে উপার্জনের সাথে সাথে তা হালাল পথেই ব্যয় করতে হবে।
তাছাড়া পুঁজিপতিরা অতি কৌশলে শ্রমিকদেরকে দেয়া টাকা এর মাধ্যমে আবার নিজের পকেটে ফিরিয়ে নিচ্ছে। কারণ বেশিরভাগ সিনেমাভক্ত তারাই হয় যারা খেটে খায়। যাদেরকে চতুর্থ শ্রেণীর নাগরিক বলা হয়। দিনের উপার্জিত টাকা দিয়ে ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য সঞ্চয় না করে বিনোদনের নামে সিনেমাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে তা খরচ করে ঘরে ফিরে যাচ্ছে সকালের মত নিঃস্ব হয়েই। অন্যদিকে পুঁজিপতিরা মেহনতি মানুষদেরকে আকর্ষণ করার মতো এমন অনেক ফাঁদ পেতে রেখেছে যেখানে মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো টাকা জমা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। এভাবেই ধনীরা সরীসৃপের রক্ত চোষার ন্যায় শোষন করে নিচ্ছে নিরিহ মানুষকে। আর নিরিহরা আত্মভোলা মাতালের মত তালে তালে নেচে যাচ্ছে। আর বিনোদনের নামে নিজের জীবন এবং সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে অবক্ষয়ের রসাতলে।
ইসলামী আইনশাস্ত্রে পারদর্শী ফকীহগনের মতে সিনেমার জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হয় তা অপব্যয়ের শামিল এবং হারাম।
সারকথা হলো, সিনেমা দেখার ক্ষতিকর দিকগুলো বর্ণনা করে শেষ করার মত নয়। মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর কুপ্রভাব বিরাজমান। সিনেমার পরিচয় এভাবেও দেয়া যায় যে, এটা হলো সকল প্রকার অপরাধ ও ক্রাইম শিক্ষার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখান থেকে সমাজে সব ধরনের অপরাধের প্রোডাকশন দেয়া হয়। ফলে একটা করে অপরাধ জন্মানোর সাথে সাথে একটা কররে ভাল কাজ তথা দ্বীনি অামল বিলুপ্ত হতে থাকে। সমাজটাকে আমরা একটা দেহের সাথে তুলনা করতে পারি। দেহের একটা অঙ্গ যেমন একই সাথে সুস্থ ও অসুস্থ থাকতে পারে নাা অর্থাৎ অসুস্থতা আসলেই সুস্থতা চলে যায় তেমনি সমাজের বিভিন্ন অঙ্গনেও যখন অন্যায়-অপরাধ জন্ম নেয় তখন সে অঙ্গনে ন্যায়-অন্যায়ও একত্রে অবস্থান করে নাা। সুতরাং অন্যায় যত জন্ম নেবে ন্যায়ের ততো অপমৃত্যু ঘটবে। আর যেহেতু অন্যায়েের একটা বিিরাট ফ্যাক্টরি হলো সিনেমা সেহেতু সমাজদেহ থেকে এ দূরারোগ্য ব্যাধির অপসারণ করতে হলে প্রথমে সিনেমা নামের কারখানা থেকে অপরাধ উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় অপসংস্কৃতিরর এ বাঁধভাঙ্গা জোয়ার আমাদেরকে কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তা বলা মুশকিল।

জান্নাতের বালাখানায়: মাওলানা আতাউর রহমান খান

ইসহাক ফরিদী। নামটাতেই বৈচিত্র আছে। আজকাল দেশভর্তি আলিম; অত আলিম আগে ছিল না। দিন দিন আলিমের সংখ্যা বাড়ছেই, লক্ষন খারাপ নয়। তবে সাধারণ নিয়ম হলো; কোন বস্তুর ব্যপ্তি বেড়ে গেলে গভীরতা হ্রাষ পায়। বাস্তবেও তা-ই লক্ষ্য করা যায়। আগের দিনে আলিম সংখ্যায় কম ছিলেন; কিন্তু প্রায় প্রত্যেক আলিম জ্ঞানে-জ্ঞুনে , আমল- আখলাকে এবং ইলমী গভীরতায় দৃষ্টান্ত ছিলেন। মানুষ একক জন আলিম কে গণীমত মনে করতো এবং নিজেদের দ্বীনী দুনিয়াবী প্রয়োজনে তাঁদের শরণাপন্ন হতো। এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। মাদরাসার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, তালিবে ইলমের সংখ্যাও বেড়েছে এবং আলিমের সংখ্যাও বেড়েছে, পাশাপাশি ইলমের চাহিদাও বেড়েছে। এ বৃদ্ধির সাথে সাথে মানগত অবনতি ও নিমগ্নতাও লক্ষনীয়। ইলমের রৌনক যেমন আগের মত নেই তেমনি আমল আখলাকের চমক ও আগের মত নেই।সবই ফেকাশে হয়ে যাচ্ছে। যমানার অবনতি সব কিছুতেই অবনতির ছোঁয়া লাগিয়ে দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতেও মাঝে মাঝে নজরকাড়া দৃশ্য অবলোকন করা যায়। হাজারে দু- একজন এমন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব নজরে পড়ে যাদের থেকে নজর ফেরানো যায় না।
এরা যেন “গুর্রে মুহাজ্জালীনের মত“ চাঁদ কপালের অধিকারী, যাদের দূর থেকে দেখলেও চেনা যায়।
আমি অর্ধশতাদ্বিকাল ধরে তুচ্ছ দুনিয়াটা দেখছি। দীর্ঘকালের এ চলার পথে অসংখ্যবনী
আদমের সাক্ষাত পেয়েছি। দেখেছি সাদা-কালো বহু কিছু তবে মনে দাগ কাটতে পেরেছে এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম।যারা দাগ কেটেছে তারা হৃদয়াকাশে জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। লোকে
লোকারণ্য এ ধরায় নিজেকে চেনার আগেই “ফরিদী“ রুপে যথার্ত নিজেই নিজের উপমা হয়ে অন্তর্ধান করলেন মহা জবনিকার অন্তরালে; যেখানে গেলে কেউ পূনরায় মঞ্চে ফিরে আসে না।
তিনি মঞ্চে ছিলেন। সমঝদার দর্শকদের মন জয় করে গেছেন, সত্য এটাই। দর্শকেরা হা করে তাকিয়ে দেখলো তাঁর চলে যাওয়ার দৃশ্যটা, এদৃশ্য ভুলবার নয়।
নবীন আলিম, জ্ঞানী আলিম, আমলদার আলিম, বিচক্ষন আলিম ও দূরদর্শী আলিম, অমায়িক ভদ্র আলিম, রুচিশীল আলিম, যোগ্য আলিম তিনি, আলিমের ছড়াছড়ি যেখানে সেখানে তিনি সকলের নজর কেড়ে নিয়েছিলেন তাঁর স্বাতন্ত্রের মহিমায়। হিংসাও পরশ্রীকাতরাতা শূণ্য, সংকীর্ণ মন-মানসিকতার উর্ধ্বে, আলিম সুলভ উদার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন, প্রতিভাবান একজন যুবক আলিম, নবীন-প্রবীণ সবার প্রিয়, আস্থাভাজন একজন হৃদয়বান আহলেদীল, শরী‘আত ও তরীকতের উভয় ময়দানে সরল পদচারণা ছিল তাঁর, আল্লাহ কে পাওয়ার বুকভরা অদম্য প্রেরণা, যাকে সব সময় কী যেন একটা অজানা আকর্ষন আকৃষ্ট করে রাখতো। দুনিয়ার হালচাল সব বুজেও না বুঝার ভান করে মুখের মুচকি হাসি দিয়ে ঢেকে রাখতেন সব ব্যথা-বেদনা, বাদ-প্রতিবাদ ও অবুঝদের অবুঝপনাকে। আমি তাঁকে খুব কাছে থেকে দেখার মতন তেমন কোন পরিস্থিতি আসেনি; তবে মাঝে মাঝে স্বল্প সময়ের দেখা আমাকে তাঁর বৈশিষ্টগুলো উপলব্ধি করার পথে অনতরায় হয়নি।

সিনেমা সম্পর্কে শরীয়তের বিধানঃ

প্রশ্নঃ- মুসলমানদের সিনেমা-থিয়েটারে যোগদান করা, এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা, প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে এর প্রতি আগ্রহী করে তোলা, সিনেমা হল নির্মাণ করা ইত্যাদির ব্যাপারে শরীয়ত কি বলে এবং এর প্রতি উৎসাহদানকারীর জন্য শরীয়তের বিধান কি?
উঃ- উপরোক্ত কাজসমূহ শক্ত গুনাহের কাজ এবং অনেকগুলো কবীরা গুনাহের সমষ্টি। যে ব্যক্তি এসব কাজের প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সে যেন শয়তানের কাজ করে। শরীয়তের দৃষ্টিতে সে প্রথম শ্রেণীর ফাসেক। যত মানুষ তার প্রচেষ্টায় এ অপরাধে লিপ্ত হবে প্রত্যেকের সমপরিমাণ গুনাহের অংশীদার সেও হবে। এতে অংশগ্রহণকারীরর গুনাহ কোন অংশেই হ্রাস পাবে না।
অনেকগুলো অপরাধের সমষ্টি বলার কারণ হলো সিনেমা সংক্রান্ত সবগুলো কাজই পৃথক পৃথকভাবে কবীরা গুনাহ।
যেমনঃ ১) গানবাজনা।
২) প্রকাশ্যে নাচা এবং নাচ দেখা।
৩) আপন রূপ পরিবর্তন করে অন্যরূপ পরিগ্রহ করা।
৪) নারী-পুরুষ অবাধে মেলামেশা করা।
৫) ছবি তোলা।
৬) কাহিনী নির্মাণের ক্ষেত্রে অবাস্তব মিথ্যা কথা।
৭) মদ্যপান ইত্যাদি ছাড়াও আরো অনেক গুনাহ আছে যা হয়তো আমাদের অজানা।

একটি ভিত্তিহীন যুক্তি এবং তার জওয়াবঃ

প্রশ্নঃ কারো কারো মতে যে সমস্ত ফটো তোলা হারাম; সিনেমা ঐ ধরনের ফটো নয়। বরং এটা হলো ছায়া। আর আলোর প্রভাবে প্রত্যেক বস্তুরই ছায়া হয়ে থাকে। সুতরাং এটাকে হারাম বলা যাবে না।
উঃ উপরোক্ত যুক্তিটি একেবারেই দুর্বল ও ভিত্তিহীন। আলোর প্রভাবের প্রতিফলনে সৃষ্ট ছায়া হলো মূল বস্তুরই একটি অবিচ্ছেদ্য হুবহু আকার। যা মূল বস্তু থেকে কখনো পৃথক হতে পারে না। মূল বস্তুটি যেভাবে নড়েচড়ে ছায়াটিও ঠিক তাই করে এবং যতক্ষণ মূল বস্তুর উপস্থিতি বিদ্যমান থাকে ততক্ষণ ছায়াটিও থাকে। মূল বস্তু না থাকলে ছায়াও থাকবে না। সে যেদিকে যাবে ছায়াও ঠিক একইভাবে সেদিকে যাবে। কিন্তু সিনেমার ব্যাপারটি এমন নয় বরং এটা হলো সাক্ষাত ছবি এবং ফটো। কারণ শুটিং করার সময় নায়ক-নায়িকাদের অভিনয়গুলো ছবি তুলে ক্যামেরাবন্দী করে রাখা হয়। পরবর্তীততে সবগুলো রিল একত্রিত করে একটা পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি তৈরি করা হয়। যা সিনেমার পর্দায় দেখানো হয়। এটা ছায়া নয় বরং ঐ সমস্ত ছবি যেগুলো ক্যামেরাবন্দী করে রাখা হয়েছিল। সুতরাং সিনেমা ছায়া নয় এবং ছবি আর ছায়া এক নয়। অতএব, এমন খোড়া যুক্তি উপস্থাপন করে একটি সমাজবিধ্বংসী হারাম কাজকে জায়েয করার অপচেষ্টাকে আমরা কি বলে সিদ্ধ আখ্যা দিতে পারি? এ কখনো হতে পারে না।

সিনেমার পর্দায় মুসলমান বাদশাহদের ছবি প্রদর্শনঃ

ইসলামী শরীয়ত যে কোন প্রাণীর ছবি তোলা এবং দেখাকে হারাম ঘোষণা করেছে। সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অপরাধমূলক নাচ-গান সমৃদ্ধ সিনেমায় কোন ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান খলীফার চরিত্র চিত্রায়িত করার অর্থই হলো তাঁর মর্যাদা এবং সম্মানকে ধুলোয় লুটিয়ে দেয়া। সুতরাং এটা নাজায়েজ এবং অবৈধ। এমনিভাবে ইসলাম প্রচারের নামে তথাকথিত ইসলামী সংস্থা কর্তৃক ভিডিও বা ইসলামী সিনেমা নামে ছবি নির্মাণ করা আরো মারাত্মক এবং জঘন্য অপরাধ। কারণ এতে ইসলাম ও কুরআন-হাদীসেকে সুস্পষ্টভাবে অবমাননা করা হয়। যে ব্যাক্তি বা সংস্থা এসব করে থাকে তাকে সমর্থন দেয়া এবং এ কাজে সহযোগিতা করা সম্পূর্ণভাবে নাজায়েজ। এসব ক্ষেত্রে ইসলাম প্রচারের তুলনায় খায়েশাত বা প্রবৃত্তি পুজার তাড়নাই কাজ করে বেশি। ফলে যতটুকু না ইসলামের প্রচার হয় তার চেয়ে অধিক উপকার হয় শয়তানের। শয়তান তার স্বভাবজাত অপকৌশল ব্যবহার করে মুসলমানদেরকে দিয়ে ইসলামের ছদ্মাবরনে এসব অপরাধগুলো করিয়ে নিচ্ছে অকপটে।

অশ্লীলতার নিকটস্থ না হওয়ার নির্দেশঃ

পবিত্র কুরআনের সূরা আনআম এ ইরশাদ হয়েছে "তোমরা নির্লজ্জতা ও অশ্লীলতার নিকটেও যেওনা চাই তা প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে।"
এই আয়াতের তাফসিরে মুফাস্সিরগণ বলেন, আলোচ্য আয়াতে ফাওয়াহিশ শব্দের মূল অর্থ থেকে বুঝা যায় এখানে সকল প্রকার প্রকাশ্য-গোপনীয় গুনাহ থেকে দূরে থাকার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ শব্দের বহুল ব্যবহৃত মাশহুর ও ব্যাপক অর্থের ভিত্তিতে বুঝা যায় যে, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার যত পথ আছে সবকিছুই উক্ত নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। এখানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অশ্লীলতার নিকটেও না যাওয়ার। এর অর্থ হলো, এমন অনুষ্ঠান এবং পরিবেশসমূহ এড়িয়ে চলা যাতে যোগদান করলে গোনাহে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশংকা থাকে এবং ঐসব কাজ বর্জন করা যার দ্বারা গুনাহের পথ প্রশস্ত হয়।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূল সা. ইরশাদ করেনঃ দেখ! প্রত্যেক বাদশারই নিজস্ব চারণক্ষেত্র থাকে। যে তার সীমার কাছাকাছি বিচরণ করবে তৎকর্তৃক এর সীমা লংঘনের খুবই আশংকা বিদ্যমান। তাই সতর্কতাস্বরূপ ঐ সীমার নিকটবর্তী হওয়াও ঠিক নয় যেখানে প্রবেশ করা নিষেধ।
উক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে এ কথাই প্রতিভাত হয় যে, সিনেমা দেখা তো দূরের কথা এর নিকটস্থ হওয়াও নিষেধ। কারণ সিনেমা এমন একটি কাজ যার সম্পূর্ণটাই অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতায় ভরপুর। ইসলামি বিধান তথা দ্বীনের ওপর সহজে চলার জন্য এবং সমাজকে মহাধ্বংসের ছোবল থেকে রক্ষা করতে সর্বপ্রথম সিনেমার অবাধ সয়লাবকে রোধ করতে হবে। অন্যথায় পরিতাপ করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না।

সিনেমা দেখার অভ্যাস পরিহার করার উপায়ঃ

অনেকেই হয়তো এ ধারনা করে আছেন যে, সিনেমা দেখার বদভ্যাস পরিহার করার কোন পথ নেই। এমন নিরাশ হওয়া ঠিক নয়। কেননা মানুষ সাধনা করে অনেক কঠিন সাফল্যও অর্জন করতে পারে। তবে প্রথমত সদিচ্ছা এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমি এ কাজ বর্জন করবই। এ ধরনের দৃঢ়তা অর্জনের জন্য প্রথমত দুটি কাজ করতে হবে।
১) প্রথমে এ কথা সুদৃঢ়ভাবে অন্তরে স্থাপন করতে হবে যে, সিনেমা দেখা মারাত্মক গুনাহের কাজ এবং দ্বীনের জন্য বিরাট ক্ষতিকর বিষয়।
২) একাগ্রতা ও একনিষ্ঠতার সাথে নিম্নোক্ত পরামর্শগুলো মেনে চলতে হবে এবং মনে প্রানে এ কথা বিশ্বাস করতে হবে যে, ওলামায়ে কেরাম এবং বুজুর্গানে দ্বীনের মাধ্যমে হিদায়াত লাভ করা যায়।
(ক) আল্লাহর ওপর দৃঢ় আস্থা রেখে এমন সংকল্প ও প্রতিজ্ঞা করা যে, আমি ভবিষ্যতে সিনেমা দেখার মতো অন্যায় কাজ আর করবোনা এবং সাথে সাথে আল্লাহর দরবারে এ দুআ করা- হে আল্লাহ! আমাকে এমন বদকাজ থেকে হেফাজত করো। এ জঘন্য অভ্যাস ত্যাগ করার ক্ষমতা দাও। আর যখনই সিনেমা দেখার লালসা জেগে ওঠে তখনই মনে প্রানে " আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি" এ কথা জপতে থাকা।
(খ) নিজে নিজে এমন শপথ করা যে, আল্লাহ না করুন যদি কোনভাবে সিনেমা দেখা হয়ে যায় তাহলে একটি সিনেমার জন্য অন্তত ৩০/৪০ রাকাত তওবার নামায আদায় করবো।
যদি এমনটি করা যায় তাহলে নফস্ তো সোজা হবেই উপরন্তু শয়তানও পেরেশান হয়ে যাবে।
এমনিভাবে এমন শপথও করা যায় যে, একবার কোন কারণে সিনেমা দেখা হয়ে গেলে অন্তত ৫০ টাকা মিসকিনকে দান করবো। এভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেলে টাকার মায়ায় হলেও আশা করা যায় সিনেমা দেখার অভ্যাস বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ!

হযরত ওমর ফারুক রা.-এর শাষণকালীন ঘটনা।

হযরত ওমর ফারুক রা.-এর শাষণকালীন ঘটনা। একজন ইরানি শাহজাদাকে গ্রেফতার করে আনা হলো মদীনায়। মুসলমানদের অনেক ক্ষতি সাধন করেছে সে। অংশগ্রহন করেছে মুসলমান বিরোধী বহু যুদ্ধে। হযরত ওমর রা. জল্লাদকে ডাকলেন। ফায়সালা করার পূর্বে শাহজাদাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কোনো অন্তিম ইচ্ছে আছে? সে বললো, হ্যাঁ, আমার পানির তৃষ্ণা হচ্ছে। পানি চাই। হযরত ওমর রা. তার জন্য পানির ব্যাবস্থা করতে নির্দেশ দিলেন। তাকে পানি দেয়া হলো। সে পান করতে পারছিলো না। ভয়ে তার হাত-পা কাঁপছিলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী হলো? পানি পান করছো না কেনো? শাহজাদা বললো,আমীরুল মুমিনীন! আমার ভয় হচ্ছে ! পানি পান করতে গেলেই জল্লাদ হয়তো আমার গর্দান কেটে নিবে।
:
হযরত ওমর রা. তাকে অভয় দিয়ে বললেন, তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। পানি পান করার আগে তোমাকে হত্যা করা হবে না। তখন শাহজাদা কৌশল অবলম্বন করে পানির পেয়ালাটি মাটিতে ফেলে দিলো। মাটিতে পড়ে পানি শুকিয়ে গেলো।
সে বললো, হে আমীরুল মুমিনীন ! আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনি আপনার ওয়াদার ওপর অবিচল থাকবেন। আমি যেহেতু পানি পান করিনি তাই আপনি কৃত ওয়াদার কারণে আমাকে হত্যা করতে পারবেন না।
:
হযরত ওমর রা. সংকটময় পরিস্থিতির মুখে পড়ে গেলেন। একদিকে ইসলামের ভয়ঙ্কর শত্রু দাঁড়িয়ে, অপর দিকে নিজের ওয়াদা। বিবেক তো বলে, শত্রুর কথা না শুনে বরং তাকে হত্যা করে দাও, যেহেতু সে ইসলামের দুশমন। অথচ ওয়াদা পূরণ করাও ইসলামে জরুরী। আর ওমর রা. তো সে ওমর! যিনি “আশাদ্দুহুম ফী আমরিল্লাহি ওমর“-এর মিসদাক।
হযরত ওমর রা. কিছু সময় ভেবে বললেন, হ্যাঁ, তুমি যথার্থই বলেছো। আমি ওয়াদার খেলাফ করবো না। যেহেতু তুমি পানি পান করোনি তাই আমি তোমাকে হত্যা করতে পারি না। সুতরাং তোমাকে হত্যার নির্দেশ স্থগিত করে দিলাম। তুমি এখন মুক্ত।
:
ইসলামের এমন ভয়ঙ্কর শত্রুর হত্যার আদেশ রহিত হওয়ায় মুসলমানগন হতাশ হয়ে গেলেন। সবাই বলাবলি করতে লাগলো, শাহজাদা চতুরতার মাধ্যমে রক্ষা পেয়ে গেলো। কিন্তু আসল ব্যাপার ছিলো ভিন্ন।
ক্ষমা পাবার পর সে বলতে লাগলো, হে আমীরুল মুমিনীন ! এ হেনো বাহানা আমি এ জন্য করেছি যে, যদি আমি জল্লাদকে দেখে কালিমা পড়ে নিতাম তবে বিশ্ববাসী বলতো, আমি শাহজাদা হওয়া সত্ত্বেও মৃত্যূ ভয়ে কালিমা পড়েছি। তাই আমি একটি বাহানা করে জীবন রক্ষা করেছি। আপনি আমাকে হত্যা করতে পারেননি। এখন আমি স্বাধীন !
:
হে আমীরুল মুমিনীন ! আমি অামি অকপটে স্বীকার করছি, যে ধর্মে ওয়াদা রক্ষা করাকে এতোটা মূল্যায়ন করা হয়। আমি সে ধর্মে দীক্ষিত হয়ে নিজেকে ধন্য করতে চাই। অতঃপর সে কালিমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেলো। বর্ণিত আছে, হযরত ওমর রা. অনেক বিষয়ে তাঁর থেকে পরামর্শ গ্রহন করতেন। ইসলামের সেই শত্রু হয়ে গেলেন খিলাফাতের বড়ো জেনারেল।
:
বন্ধুরা ! আমরাতো আমাদের স্বার্থে বিন্দু পরিমান আঘাত এলেই নিজের ওয়াদার কথা বেমালুম ভুলে যাই। বিভিন্ন বাহানা ও মিথ্যার আশ্রয় নিতে অকুন্ঠ হয়ে উঠি । এড়িয়ে যাই “আস-সিদকু ইউনজী অল কিযবু ইউহলিক“-এর মতো শ্বাশত সত্যকেও। ফলে, আমাদের সমাজে দিন-বদিন অশান্তির দাবানল বেড়েই যাচ্ছে। প্রতিটি রসনা আজ ওয়াদা খেলাফের অভয়াশ্রম। ফলে আমরা হারিয়ে যাচ্ছি অমানুষের অরণ্যে। আমাদের আদর্শ দেখে এখন আর কেউ ইসলামের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে না।
:
তাই আসুন ! সোনালী যুগের সেই আদর্শকে আবারো নিজের মাঝে জাগিয়ে তুলি। হয়ে উঠি একেকজন নববী আদর্শের মূর্তপ্রতীক। পুনরুদ্ধার করি হৃত সেই মর্যাদাকে।
:
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দিন। আমীন।।