বৃহস্পতিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫

সবাইকে নতুন বছরের মোবারকবাদ*


আলহামদুলিল্লাহ 2015 সাল আমার ভালোই কেটেছে, আশা করি সামনের দিনগুলো আল্লাহর রহমতে ভালো কাটবে ইনশাআল্লাহ, যতদিন দুনিয়াতে আল্লাহ রাখেন ঈমান এবং আমলের সাথে যেন থাকতে পারি সেই দোয়াই সকলের নিকট চাচ্ছি। 
*আর সবাইকে নতুন বছরের মোবারকবাদ*

উদ্ভাবিত হলো বাংলাভাষী রোবট



এবার তৈরি হলো বাংলাভাষী রোবট। মাতৃভাষায় প্রথম এই রোবটটি আবিষ্কার করেছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তির বিশ্ববিদ্যালয় রুয়েটের তৃতীয় বর্ষের ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ছাত্র সাদলী সালাহউদ্দিন ও সৌমিন ইসলাম।
তাদের উদ্ভাবিত এই রোবটটি সম্পূর্ণ বাংলা কথা ও ইশারায় চলতে সক্ষম। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্যোগে অনেকটা ঘরোয়াভাবেই মঙ্গলবার রোবটটির একটি প্রদর্শনীও হয়েছে। সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রুয়েটে উপাচার্য ড. মর্ত্তুজা আলী এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ। এসব তথ্য জানিয়েছেন রুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের প্রধান মো. রফিকুল ইসলাম শেখ।
তিনি জানান, রোবটটি প্রদর্শনকালে বাংলা শব্দ ডানে যান, বামে যান, থামুন, এবার চলুন এ সমস্ত আদেশের মাধ্যমে কিভাবে কাজ করছে এটি দেখান হয়।
রফিকুল ইসলাম বলেন, রোবটটি যদি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা যায় তবে বাংলাদেশের বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্য একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে।
রোবটটির ঘরোয়া প্রদর্শনী দেখে ‘বাংলা ভাষায় কাজ করতে সক্ষম রোবট আবিষ্কার সত্যিই আমাদের গর্বের বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছেন রুয়েট উপাচার্য ড. মর্ত্তুজা আলী।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে রোবট নিয়ে অনেকে কাজ হলেও বাংলা কথায় চলবে এরকম রোবট এই প্রথম।
রোবট উদ্ভাবক দলের প্রধান সাদলী সালাহউদ্দিন জানান, রোবটটি বাংলাতে যেকোনো অদেশ করলে সে অনুযায়ী কাজ করতে সক্ষম। আবার যারা বাকপ্রতিবন্ধী বা কথা বলতে অক্ষম তাদের জন্যও রোবটটিতে যোগ করা হয়েছে বিশেষ সংবেদনশীল ব্যবস্থা। যার মাধ্যমে রোবটটিকে ইশারা করলেই সে অনুযায়ী কাজ করতে পারবে।
জানা গেছে, রোবটটিকে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। ইন্টারনেটে প্রবেশ করে একটা সফটওয়ারের মাধ্যমে প্রথমে একটি নিরাপত্তা কোডের মাধ্যমে রোবটটির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। এরপর রোবটটি থেকে একটা নিশ্চয়তামূলক বার্তা এলেই কাজ শেষ।
মূলত দূরে অবস্থানকারী ব্যক্তির কাছে রোবটটির আশেপাশের পরিবেশের জীবন্ত ভিডিও প্রতি মুহূর্তে পাঠাতে থাকবে নিয়ন্ত্রণকারী। আর ভিডিওগুলো দেখে নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নেবে কখন কী করতে হবে। সাথে সাথে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম(জিপিএস) এর মাধ্যমে রোবটটি স্যাটেলাইটের সাথে সংযোগ করতে পারবে। ফলে মানচিত্রের মাধ্যমেও রোবটটির অবস্থানও নিশ্চিত হওয়া যাবে

খেলাধুলা ও বিনোদন সম্পর্কে ইসলামের মৌলিক বিধান

১. কুরআন ও হাদীসে যেসব খেলা ও বিনোদন মাধ্যমকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, তা সব সময়ের জন্য হারাম। যেমন, দাবা, কবুতরবাজি, বাদ্য, প্রাণীর ছবি আকা। ইত্যাদি।
২. যেসব খেলাধুলা ও বিনোদনে হারামের সংমিশ্রণ আছে। বা যার পরিণতিতে হারামে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশংকা আছে, তাতে লিপ্ত হওয়া বৈধ নয়। যেমন, বাদ্যের সাথে গান। বা অশ্লীল গান ও কবিতা। অর্থ বাজি রেখে খেলাধুলা করা। নারী-পুরুষের মেলামেশা বা পর্দাহীনতা। ইত্যাদি।
 ৩. যে খেলাধুলা বা বিনোদন ফরজ বা ওয়াজিব বিধান পালনের প্রতি উদাসীনতা সৃষ্টি করে, তা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
৪. সে সব খেলাধুলা ও বিনোদন অর্থহীন এবং যা শুধু সময় কাটানোর জন্য করা হয়, তাতে লিপ্ত হওয়া ইসলাম অপছন্দ করে। কারণ, তা অবৈধ বিনোদনের প্রতি অনুরাগ বাড়ায়। শিথিলতা এনে দেয়। যেমন, বাদ্য ও অশ্লীলতা মুক্ত গান ও কবিতা।
৫. যেসব খেলাধুলা ও বিনোদন কুরআন ও হাদীসে অনুমোদিত এবং যা মানুষের জন্য উপকারী তাতে অংশ গ্রহণ করা বৈধ। যেমন, তীর ও বর্শা নিক্ষেপ। সাতার। দৌড় প্রতিযোগিতা। ইত্যাদি।
ইসলাম যেমন খেলাধুলা ও বিনোদন সমর্থন করে
১. ইসলাম মানুষের জন্য উপকারী খেলাধুলা, শরীর চর্চা, প্রতিযোগিতা ও বিনোদনের অনুমতি দিয়েছে। যেমন, সাতার, দৌড় ও তীর নিক্ষেপ। ইত্যাদি। ইরশাদ হয়েছে,
كل شئ ليس من ذكر الله لهو ولعب ، إلا أن يكون أربعة : ملاعبة الرجل امرأته ، وتأديب الرجل فرسه ، ومشى الرجل بنى الغرضين، وتعليم الرجل السباحة.
প্রত্যেক এমন জিনিস যা আল্লাহর জিকির নয়, তা ক্রীয়া ও কৌতুকের অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু চারটি জিনিস তার ব্যতিক্রম। এক. স্ত্রীর সঙ্গে হাস্যরস করা। দুই. কাউকে ঘোড়ায় উঠার প্রশিক্ষণ দেয়া। তিন. দু’টি লক্ষ্য নির্ণয়ের জন্য চলা। চার. কাউকে সাতার শিক্ষা দেয়া। (কানযুল উম্মাল-৪০৬১২)
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
المؤمن القوى خير واحب إلى الله من المؤمن الضعيف
‘শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন অপেক্ষা আল্লাহর নিকট উত্তম ও অধিক প্রিয়।’ (কানযুল উম্মাল-৫৪০)
২. অশ্লীলতা ও বিদ্বেষ মুক্ত, চেতনা উদ্দীপক ও অর্থবহ কবিতা, সঙ্গীত ও সাহিত্য চর্চা ইসলাম সমর্থন করে। একাধিক হাদীস থেকে জানা যায়, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম) ইরশাদ করেন,কাফেরদের বিরুদ্ধে হযরত হাস্সান বিন সাবেত (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর ঈমানদীপ্ত কবিতার উচ্চ প্রশংসা করে তাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি জিহাদের ময়দানে চেতনা উদ্দীপক কবিতার নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
 كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يضع لحسان منبرا في المسجد يقوم عليه قائما يفاخر عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
‘রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম) হযরত হাস্সান বিন সাবেত (রাদিয়াল্লাহু আনহু) জন্য মসজিদে নববীতে একটি মেম্বার তৈরি করে দেন, যেখানে দাড়িয়ে তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম) এর পক্ষ থেকে গর্ব প্রকাশ করতো। (তিরমিজী শরীফ-২৮৪৬)
ইসলাম যেমন খেলাধুলা ও বিনোদন সমর্থন করে না
১. যেসব খেলাধুলা ও বিনোদনের জাগতিক ও পরকালীন কোনো উপকার নেই। যা মানুষকে আল্লাহর স্মরণ ও ধর্মীয় জীবন থেকে বিমুখ করে দেয়। সমাজে বিশৃংখল ও বিবাদ সৃষ্টি করে। যেমন, গান ও বাদ্য, মদ ও জুয়া, দাবা ও কবুতর বাজি। ইত্যাদি। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
إذا مررتم بهؤلاء الذين يلعبون بهذه الأزلام والشطرنج والنرد وما كان من هذه فلا تسلموا عليهم وإن سلموا عليكم فلا تردوا عليهم
‘যখন তোমরা এমন লোকদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে যারা (ভাগ্য নির্ণয়ের জন্য) তীর, দাবা ও পাশা দিয়ে খেলছে, তখন তাদেরকে তোমরা সালাম দিবে না। আর তারা তোমাদেরকে সালাম দিলে তার উত্তরও দিবে না।’ (কানযুল উম্মাল-৪০৬৪৪)
২. অশ্লীল ও অনর্থক কবিতা ও সাহিত্য চর্চা করা। ইরশাধ হয়েছে,
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
‘একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে। এবং তা নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা লোকমান-৬)

ইন্টারনেট: দ্বীনী খিদমাতের এক উর্বর ক্ষেত্র

এক.
ইন্টারনেট আবিস্কারকে গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ আবিস্কার মনে করা হয়। হাজার মাইলের দূরত্ব ও সময়ের ব্যবধানসহ সবরকম বাধা দূর করে তথ্যের আদান-প্রদানকে সহজ ও গতিময় করতে এর বিকল্প নেই।
১৯৬০ সনে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্ট্‌স এজেন্সি বা আরপা (ARPA) পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা এই নেটওয়ার্ক আরপানেট নামে পরিচিত ছিল। এরই বাণিজ্যিক সংস্করণ ইন্টারনেট। ১৯৯০ এর পরের দিকে যার ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। (সূত্র : উইকিপিডিয়া)
ইন্টারনেটের প্রাথমিক ব্যবহারটা ই-মেইল আদান-প্রদানেই অনেকটা সীমাবদ্ধ ছিল। একসময় ব্যবহারকারীরা নিজেদের পরিচিতি অন্যান্য সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে তুলে ধরার প্রয়োজন অনুভব করে। জন্ম হয় ওয়েবসাইটের।
ইন্টারনেট আবিস্কারের পরই শুরু হয় ব্যক্তিগত, সামাজিক, ব্যবসায়িক ও রাষ্ট্রীয় নানা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইটকে সহজে “ইন্টারনেটভিত্তিক ঠিকানা” বলে ব্যক্ত করা যেতে পারে। একেকটি ওয়েবসাইটে একটি ডোমেইনের অধীনে হাজারো পাতার সমষ্টি হতে পারে। ডোমেইন হলো ওয়েব ঠিকানা হিসেবে ব্যবহৃত নামটি। বাস্তব পৃথিবীতে যেমন প্রত্যেকের বাড়ীর একটি হাউজিং নম্বর থাকে, যা দিয়ে তাকে চিহ্নিত করা যায়, ডোমেইন ঠিক সেরকম। যেমন, ইসলাম-ডট-কম একটি ডোমেইন। এর অধীনের হাজারো পাতার সমষ্টিতে একটি ওয়েবসাইট।
নানা রকম ওয়েবসাইটের একটি প্রকার ব্লগ। ব্লগ শব্দটি ওয়েব ও লগ শব্দদ্বয়ের সন্ধি। এর অর্থ অনলাইন দিনলিপি। কিন্তু বর্তমানে শুধু দিনলিপি নয়, বরং সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় ব্লগে স্থান পায়। ব্লগের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, নানা মতের মানুষ লেখক বা ব্লগারের লেখার ওপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও মতামত জানাতে পারে। যা আর কোনো গণমাধ্যমে সম্ভব নয়।
দুই.
২০১১ সনের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইন্টারনেটে মোট রেজিস্ট্রিকৃত ডোমেইনের সংখ্যা ৫৫ কোটি। ২০০৮ এ যা ছিল মাত্র ১৮ কোটি বিশ লক্ষ। (সূত্র: staticbrain.com) আর একেকটি ডোমেইনের অধীনে থাকতে পারে হাজারো পাতা। তাই সর্বমোট পাতার সংখ্যা বলা মুশকিল।
১৯৯৫ সনের ডিসেম্বরে বিশ্বের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল মাত্র ১ কোটি ৬০ লক্ষ্য, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.৪ শতাংশ। আর ২০১১ সনের মার্চ মাসে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় দুই শত নয় কোটি পঞ্চাশ লক্ষ্যে। যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩০.২ শতাংশ। (সূত্র : internetworldstats.com)
২০১২ সনের একটি পরিসংখ্যানে এশিয়াতে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দেখানো হয়েছে প্রায় ১০৭৭ মিলিয়ন বা প্রায় ১০৮ কোটি। যা ২০১০ এ ছিল ৮২৫ মিলিয়ন বা ৮৩ কোটি। ২০১০ এ বাংলাদেশে মোট ফেইসবুক ব্যবহারকারী ছিল প্রায় দশ লক্ষ। যা ২০১২ তে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৪ লক্ষে। আর একই সময়ে বাংলাদেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় আশি লক্ষ। (সূত্র: internetworldstats.com)
উপরোক্ত পরিসংখ্যানগুলো খুব সহজেই বুঝিয়ে দেয় যে, ওয়েবসাইট ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার যে কোনো গাণিতিক হারকেও হার মানায়। খোদ বাংলাদেশেও এই হার উর্ধ্বমুখী। যা আগামী বছরগুলোতে আরো দ্রুত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়। আগামীতে একেকজন মোবাইল ব্যবহারকারীই হবেন একেকজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।
তিন.
সম্পূর্ণ বাংলা ভাষায় অনলাইনে প্রথম ব্লগ চালু হয় ২০০৫ এ। ২০০৬ থেকে মোটামুটি তা জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে। বাংলা ভাষায় ব্লগ চালু হওয়ার পর তা মূলত বিভিন্ন সাংবাদিক, মিডিয়াকর্মী, নবীন কবি, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
তবে বাংলা ব্লগ ইতিহাসের শুরু থেকেই ইসলাম বিদ্বেষী লেখার দৌরাত্ম লক্ষণীয়। জনপ্রিয়তা ও হিট (ব্লগের ভিজিট সংখ্যা) বাড়ানোর জন্য অনেকেই তখন ইসলাম বিরোধী ব্লগ লেখা শুরু করে। দেখা যায়, গঠনমূলক কোনো লেখা দিলে তাতে মন্তব্য পাওয়া যায় হাতে গোনা কয়েকটি। আর ইসলাম বিরোধী ব্লগ লিখলে তাতে মন্তব্য-উত্তর ও নানা তর্ক-বিতর্ক মিলিয়ে মন্তব্য ছাড়িয়ে যায় শতককে।
এভাবেই জন্ম হয় বেশ কিছু তরুণ স্বঘোষিত নাস্তিকের। যারা নিজেদের নাস্তিক পরিচয় দিয়ে তৃপ্তি পায় এবং নাস্তিকতার আড়ালে মূলত ইসলামের কুৎসা রটায়। বিশেষ করে ইসলামের নবী মুহাম্মাদ স. এঁর পারিবারিক জীবন নিয়ে যাচ্ছেতা লিখতে থাকে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্লগগুলোর সঞ্চালকদের এসব লেখার বিষয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। তা হয়ত তাদের ব্লগে হিট বাড়ানো জন্য,নতুবা নিজ মতাদর্শের অভিন্নতার জন্য।
নব্য নাস্তিক পরিচয়ধারী এসব ব্লগাররা পরবর্তীতে আরো নতুন কিছু বাংলা ব্লগ সাইট খুলে। এবং এগুলোর কয়েকটি শুধু ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে অশ্লীলতা ছড়ানোর জন্যই। সেসব সাইটে আজ থেকে বছর তিনেক আগে নবীজী স. কে অপমান করে প্রকাশ করে অশ্লীল কমিক ই-বই। যেগুলো বছরের পর বছর পড়া হয় ও ডাউনলোড করা হয়।
এছাড়া অন্য ব্লগগুলোতেও তুলনামূলক ইসলাম বিরোধী লেখা বেশি প্রকাশ হয়। যারা এসবের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাদেরকে অনেক সময় সঞ্চালকবৃন্দ ব্যান (ব্লগ বা মন্তব্য প্রকাশ করার অধিকার হরণ) করেন। মুক্ত চিন্তা ও বাক স্বাধীনতার ছায়াতলে এসব নাস্তিকদের সহযোগিতা করে যান।
আর যখন এগুলোর কোনো উত্তর দেয়া হয়, তখন একের পর অশ্লীল গালাগালি করে উত্তরদাতাকে হেনস্থা করা হয়। এবং “ছাগু” সহ বহু অশ্লীল উপাধি দেয়া হয়। ফলে এক শ্রেণীর পাঠক, যারা নীরবে পাঠ শেষে চলে যান, তারা হৃদয়ে নিয়ে যান ইসলাম নিয়ে অনেক সন্দেহ। ধীরে ধীরে এসব সন্দেহ তাদেরকে ঈমান ছাড়া করে।
চার.
ইন্টারনেটে ইসলাম বিদ্বেষ নতুন নয়। প্রায় আট-দশ কিছু একটা খুঁজতে গিয়েই একদিন আলী সীনা নামের এক ব্যক্তির ওয়েবসাইটের সাথে পরিচিত হই। নিজেকে তিনি এক্স মুসলিম বা পূর্বে মুসলিম ছিলেন বলে দাবী করেন। এবং আরো দাবী করেন যে, তিনি পরবর্তীতে খ্রীস্টান হয়ে গেছেন ইসলামের প্রতি নিরুৎসাহী হয়ে। ফেইথফ্রীডম বা মুক্তবিশ্বাস নামে তার নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট আছে। নিজেকে আরবের বাসিন্দা বলেও দাবী করেন তিনি।
তার সেই সাইটটিতে মুসলিমদের প্রতি মোট এগারো কি বারোটি প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া ছিল। সবগুলোই প্রিয় নবীজীর স. জীবনকে কেন্দ্র করে। রাসূলের স. বিভিন্ন বিবাহ এবং উম্মাহাতুল মুমিনীন রা. নিয়ে ছিল প্রশ্নগুলো।
সাইটের ব্যানারে লেখা আছে, “যদি কোনো মুসলিম আমার প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন, তাহলে আমি আমার সাইট মুছে ফেলব”। আপাৎদৃষ্টিতে যা খুব নিরীহ একটি ব্যানার ও আবেদন।
আলী সীনার প্রশ্নের জবাবে ইংরেজী ও আরবীতে বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট হয়েছে। এবং অনেক উলামা তার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু তার একই কথা, উত্তর যথার্থ হয়নি। অনেকটা “বিচার মানি, তালগাছ আমার” –এর মত।
এমনকী, তাকে সরাসরি বাহাসে আসতেও আহ্বান জানানো হয়েছে। সে রাজী হয়নি। তাকে ফোনে বা অনলাইনে কথা বলতে আহ্বান করা হয়েছে। সেটাতেও সে রাজী হয়নি। পরবর্তীতে ডা.জাকির নায়েকও তাকে কনফারেন্সে আহ্বান করেছেন। কিন্তু তাও সে রাজী হয়নি। মূলত আলী সীনার নাম আসল কিনা, তাও সে কখনো স্পষ্ট করেনি।
এর অনেকদিন পর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে তার বিভিন্ন লেখা থেকে সংগৃহীত প্রমাণ দেখতে পাই যে, সে আসলে একজন ইহুদী, যে কখনোই মুসলিম ছিল না। ২০০৮ এ ইসরাইলের জেরুলাম পোস্ট নামের সংবাদপত্র তার একটি সাক্ষাৎকার ছাপে। যেখানে সে বলে, “ইসলামকে সংস্কার করার একমাত্র উপায় হলো, কুরআনকে নিক্ষেপ করা; এর নব্বই শতাংশই নিক্ষেপ করা উচিৎ। আপনাকে ইসলামের ইতিহাসকেও ছুড়ে ফেলতে হবে; আর সীরাতকে ছুড়ে ফেলতে হবে পুরো একশত ভাগ।“ (সূত্র: Jerusalem Post, 2008)
মূলত মুসলিমদের মাঝে দ্বীন নিয়ে নানাবিধ সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়ার জন্যই এ কাজ করছে সে। বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না যে, আলী সীনা কোনো ব্যক্তি নয়, আলী সীনা একটি গ্যাং। ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করাই যাদের লক্ষ্য।
অবশ্য আলী সীনা ব্যক্তি বা গ্যাং যা-ই হোক, তারা একা নয়। সম্প্রতি সেন্টার অফ আমেরিকান প্রোগ্রেস নামের একটি বেসরকারী আমেরিকান গবেষণা সংস্থার রিপোর্টে উঠে আসে আরো ভয়াবহ তথ্য। “দ্যা রুটস অফ ইসলামোফোবিয়া নেটওয়ার্ক ইন আমেরিকা” বা “আমেরিকায় ইসলামবিদ্বেষী নেটওয়ার্কের গোড়া” শিরোনামে তারা শতাধিক পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রকাশ করে।
এতে উঠে আসে যে, আমেরিকার বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অনুদান প্রদান করে কিছু গবেষণা সংস্থাকে। যাদের একমাত্র কাজই হলো ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানো। এসব সংস্থার গবেষণা দলে রয়েছে স্কলার, সম্পাদক ও প্রচারক। বিধর্মী নারী পুরুষের সমন্বিত স্কলারবৃন্দ ইসলামের কুরআন-হাদীস অধ্যয়ন করে ইসলাম বিরোধী তথ্য বানিয়ে থাকে। সম্পাদক টিমের হাতে সম্পাদনা হয়ে প্রচার টিমের মাধ্যমে সেগুলো প্রচার পায়। এই টিমে বেশ কয়েকজন মিস-ইনফরমেশন-এক্সপার্ট বা ভুল তথ্যবিশারদ রয়েছে, যারা এরকম ভুল তথ্য তৈরী করে থাকেন।
বিশ্বের নানা জায়গায় কোনো দুর্ঘটনা হলেই তারা সেগুলো মুসলিমদের ওপর চাপিয়ে সংবাদ তৈরী করে। তাদের নেটওয়ার্কে কিছু বড় বড় সংবাদ মাধ্যম আছে। তারা সেগুলো প্রকাশ করে। আবার তাদের সাথে আমেরিকার বিভিন্ন পার্টির কিছু সংসদ সদস্যও আছে। যারা সেগুলো নিয়ে সংসদেও ঝড় তোলেন। আবার কিছু তৃণমূল সংগঠন আছে, মানবাধিকার সংগঠনের মতো। তারা সেসব ভুল তথ্যগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। সাথে কিছু ধর্মীয় সংগঠনও এসব তথ্য ব্যবহার করে ধর্মীয় আবেগকে ইসলামের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়।
একই তথ্য যখন বিশ্বের বড় বড় মিডিয়ায় প্রকাশ পায়, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশের পার্লামেন্টে আলোচিত হয়, সেখানকার মানবাধিকার ও ধর্মীয় সংগঠনগুলো উচ্চারণ করে, তখন বহু মিথ্যাও সাধারণ মানুষের কাছে সত্য হয়ে উঠে। আর বিশ্বের তাবৎ মিডিয়া লুফে নেয় সেসব সংবাদ। তৈরী হয় ইসলামের প্রতি চরম বিদ্বেষ।
আমেরিকাভিত্তিক এই গবেষণাসংস্থাটি রিপোর্টের শেষে উল্লেখ করে যে, সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামবিদ্বেষ আমেরিকার নাগরিকদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার খাতিরেই তারা এ বিষয়ে গবেষণা করে প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, গবেষণা টিমটি কোনো মুসলিমদের নয়। (সূত্র: americanprogress.org)
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, বাংলা ভাষায় যারা ইন্টারনেটে ইসলামবিদ্বেষ ছড়ায়, তারা কোনো না কোনো ভাবে এদের সাথে সম্পৃক্ত। বহু লেখকের প্রোফাইলে গিয়ে আলী সীনার সাথে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। তাদের লেখাগুলোই অনুবাদ করে বাংলায় তারা প্রকাশ করেন মাত্র।
পাঁচ.
বাংলাদেশে মুসলিমদের মধ্যে যারা ধার্মিক, নাস্তিকদের প্রচার সাধারণত তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তবে যারা সাধারণ মুসলিম, নাস্তিকদের লেখা তাদের সংশয়বাদী করে তোলে। সংশয় থেকে ধীরে ধীরে ঈমানহীনতা তৈরি হয়।
নাস্তিকদের যেসব লেখা অশ্লীল গালিগালাজ, সেগুলো সাধারণত তেমন ক্ষতিকারক নয়। তবে যেগুলো কুরআন-হাদীসের সূত্রসহ দেয়া হয়, সেগুলো সাধারণ মুসলিমদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। যখন তারা দেখে যে, এসবের কোনো উপযুক্ত উত্তর দেয়া হয় নি, তখন তারা ভাবতে শুরু করে যে, নাস্তিকদের দাবীগুলোই সত্য।
এ ক্ষেত্রে উলামায়ে কিরামের অবদানের কোনো বিকল্প নেই। নাস্তিকদের রেফারেন্সগুলো মূলত আগ-পিছ বাদ দিয়ে বা মাঝ থেকে তুলে ধরা। যেগুলো কেবল উলামায়ে কিরাম উত্তর দিতে পারেন। তাই অনলাইনে ব্লগসমূহে উলামায়ে কিরামের ব্যাপক অংশগ্রহণ এখন সময়ের দাবী।
অনলাইনে ব্লগ লেখা এবং অনাগত অনলাইনের নানা ফিৎনা বুঝা ও মুকাবেলা করার জন্য তাই উলামায়ে কিরামকে প্রযুক্তি বিষয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এ ছাড়া যে কোনো ফিৎনার মূল জানা ও পড়াশোনার জন্য ইংরেজীর কোনো বিকল্প নেই।
তাই মাদ্রাসার নেসাবে কম্পিউটার শিক্ষা ও ইংরেজী কথন, লিখন ও বুঝার যোগ্যতা অর্জন হয় এমন বিষয় সংযোজন করা অতীব প্রয়োজন। কওমী মাদ্রাসাসমূহের বোর্ডগুলো এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিলে বিষয়টা সহজ হতে পারে। সংস্কার কঠিন হতে পারে, কিন্তু সংযোজন তেমন কঠিন নয়।
প্রতিটি মাদ্রাসায় একটি কম্পিউটার ল্যাব ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকা উচিৎ। মাদ্রাসার নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকা উচিৎ। ওয়েবসাইটে ছাত্র, উস্তায সবাই লেখা প্রকাশ করবে। এছাড়া উস্তাযদের বয়ান, প্রকাশিত বই ইত্যাদিও আপলোড করা হবে। ফতোয়া বিভাগগুলো অনলাইনে ফতোয়া দিবে। তাহলে সাধারণ মুসলিমরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন।
এছাড়া লেখক, মাওলানা, মুহাদ্দিস, মুফতী, খতীব, বক্তা ও ওয়ায়েয –প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থাকা উচিৎ। আরবের প্রায় প্রত্যেক আলেমেরই ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট আছে।
নাস্তিকদের অপরাধের জবাবে গণআন্দোলন একটি সচেতনতার শুরু হতে পারে। কিন্তু তা বাস্তবে রূপায়ণ করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই।
ছয়.
বাংলা ভাষায় ইসলামিক ওয়েবসাইটের শুরু কবে হয়েছে তা বলা কঠিন। Islamhouse.com এর বাংলা বিভাগটাকেই সবচেয়ে পুরনো বাংলা ইসলামিক সাইট বলে মনে হয়। তবে Islam.com.bd -এর রেজিস্ট্রেশন হয় ২০০৬ এ। ডট বিডির যাত্রা তখন প্রথম দিকে। এরও আগে ২০০৫ এ রেজিস্ট্রেশন করা হয় banglakitab.com সাইটটি। যাতে বিভিন্ন ইসলামিক বই স্ক্যান করে আপলোড করা হত, এখনও করা হয়। জনপ্রিয় ইসলামিক ম্যাগাজিন মাসিক মদীনার সাইট mashikmadina.com এর রেজিস্ট্রেশন হয় ২০০১ এ। ওয়েব আর্কাইভে দেখা সে সময়ের সাইটটিকে বেশ মানসম্মত বলেই মনে হয়। অবশ্য বর্তমানে ডোমেইনটি হাতছাড়া হয়ে গেছে। মাসিক মদীনার সাইটের আগে আর কোনো বাংলা ইসলামিক সাইটের অস্তিত্ব নজরে আসেনি। (সূত্র : who.is এবং web.archive.org)
ইন্টারনেটে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রটি খুব উর্বর। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। ধরা যাক, কোনো সম্মানিত খতীব সাহেব মসজিদে জুমার বয়ান করছেন। তাঁর বয়ান সর্বোচ্চ এক হাজার মানুষ শুনলেন। এই শ্রোতারা মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর অনেকেই হয়ত ভুলে যাবেন কী আলোচনা হয়েছে। কিংবা অন্যকে এ বিষয়ে জানাতে চাইলেও জানানোর সঠিক পথ পাবেন না।
খতীব সাহেব যদি এই একই বয়ান পেশ করার সময় রেকর্ড করে নেন, পরবর্তীতে নিজস্ব ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করেন, তাহলে তা পৌঁছে যেতে পারে অসংখ্য মানুষের কাছে। এবং বয়ানের আবেদন বেঁচে থাকবে বছর বছর। “অসংখ্য” বলতে হল এ জন্য যে, আসলেই তা সংখ্যায় সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়।
ধরুন, খতীব সাহেবের বয়ানটি তার ওয়েবসাইট থেকে এক ভাই শুনলেন। তার ভালো লাগল। তিনি তার ফেইসবুকে তা শেয়ার করলেন। কিংবা কেবল লাইক দিলেন। তার বন্ধু শত শত। তাদের মধ্যে কারো পছন্দ হলো। তিনিও লাইক দিলেন বা শেয়ার করলেন। তার বন্ধুদের কারো আবার পছন্দ হয়ে গেল। এভাবে এটা ঠিক কত হাজার বা লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে, তা ঠিক হিসাব করা সম্ভব নয়।
এটাতো শুধু ফেইসবুকের কথা বলা হলো। ফেইসবুকের শেয়ারকারীদের মাঝে কারো পছন্দ হলে তিনি তা ইউটিউবে আপলোড করে দিবেন। ইউটিউব যেহেতু গুগলের প্রতিষ্ঠান, তাই সার্চ রেজাল্ট বা ইন্টারনেটে কোনো বিষয় খোঁজার ফলাফলে ইউটিউবের ফলাফলগুলো অগ্রাধিকার পায়। উদাহরণস্বরূপ খতীব সাহেবের বয়ানের বিষয় ছিল “এপ্রিল ফুল”। তো, বয়ানটি ইউটিউবে আসার পর কেউ গুগলে খুঁজলে তা প্রথম দিকে চলে আসবে।
ইউটিউব থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যে কোন ফাইল কপি করে নেয় শত শত ওয়েবসাইট। ইউটিউবে কোনো কিছু আসা মানে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আরো শত শত ওয়েবসাইটে চলে যাবে। খতীব সাহেবের ফেইসুব যদি টুইটারে সংযুক্ত থাকে, তাহলে তা টুইটারেও একইভাবে ঝড় তুলবে। এপ্রিল ফুলের এই বার্তা পৌঁছে যাবে আরো লক্ষ মানুষের কাছে। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছেও।
ফেইসবুক-টুইটার থেকে কোনো পছন্দকারী আবার তা কোনো ব্লগে প্রকাশ করবেন। এভাবে তা আবার পৌঁছে যাবে অসংখ্য ব্লগ পাঠকের কাছে। খতীব সাহেব যদি লিংকডইন ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে স্বয়ংক্রিভাবে ফেইসবুক-টুইটার হয়ে তা লিংকডইনেও পোস্ট হয়ে যাবে। পৌঁছে যাবে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পেশাজীবীদের কাছে। এভাবে এক বছরেই তা শেষ হবে না। বরং প্রতি বছর যখনই এপ্রিল ফুলের তারিখ ঘনিয়ে আসবে, আবারও তা সচল হয়ে এভাবে ঘুরবে চক্রের মাধ্যমে।
এর কারণ হলো, মানুষ এখন অনলাইনেই বেশি পড়তে পছন্দ করেন। বিশেষ করে নিজের বন্ধু বা আত্মীয় কোনো লেখা বা লিংকে লাইক বা পছন্দ করলে প্রত্যেকেই তা পড়তে আগ্রহী হন। এটাই সামাজিক গণমাধ্যম বা সোশাল মিডিয়ার শক্তি। আর এ কারণেই ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা এত তুঙ্গে।
ফেইসবুক-টুইটারের এই অনলাইন চক্রের মাধ্যমে যে কোনো বার্তা মুহূর্তেই পৌঁছে দেয়া সম্ভব বিশ্বের যে কোনো গণমাধ্যমের কাছে। এভাবে বিশ্বকে খুব সহজেই জানিয়ে দেয়া যায় প্রকৃত সত্য। আর দ্বীনের খিদমত করা যায় কল্পনাতীতভাবে।
সাত.
ইন্টারনেটের বিশাল এ ময়দানে খিদমাতের আরো অসংখ্য ক্ষেত্র বিদ্যমান। বাস্তব পৃথিবীতে আমরা কোনো খিদমতের চিন্তা করলে নানা সীমাবদ্ধতা সামনে চলে আসে। কিন্তু ইন্টারনেটে সেগুলো খুব সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। পৃথিবীর নানা দেশ থেকে পরিচালিত কয়েকটি ইসলামী ওয়েবসাইটের কিছু খিদমাত এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে।
ক. Askimam.org –এই ওয়েবসাইটটি সাউথ আফ্রিকার মাদ্রাসা ইনয়ামিয়াহ কর্তৃক পরিচালিত। মুফতী ইবরাহীম দেসায়ী দেওবন্দী দা.বা. এর তত্ত্বাবধান করছেন। ২০০৪ এ শুরু হওয়া এই ওয়েবসাইটটি মূলত ফাতওয়ার ওয়েবসাইট। দারুল ইফতা থেকে প্রতিদিনই বেশ কিছু প্রশ্নের দালীলীক উত্তর প্রদান করা হয় এখানে। ইংরেজী ভাষায় কুরআন-সুন্নাহর দলীলসহ হানাফী ফিক্বহের দলীল নির্ভর এই ওয়েবসাইটের উত্তরগুলো পৃথিবীর সব ফিক্বহের অনুসারীদের কাছেই জনপ্রিয়। সাইটটিতে ইংরেজী ভাষায় আকিদা, সালাত, সাওম, হাজ্জ্ব, যাকাত, ব্যবসা-বাণিজ্য, পারিবারিক বিষয়, ইসলামের ইতিহাস, সীরাত ইত্যাদি নানা বিষয়ে হাজার হাজার উত্তর রয়েছে।
খ. darulifta-deoband.org –এই সাইটটি দারুল উলূম দেওবন্দের দারুল ইফতার ওয়েবসাইট। ২০০৬ এ প্রতিষ্ঠিত এ ওয়েবসাইটটিতে আরবী, উর্দু ও ইংরেজীতে হাজারো ফাতওয়া রয়েছে।
গ. islamhouse.com – সাইটটি ২০০০ সনে প্রতিষ্ঠিত। পৃথিবীর প্রায় ৫০ টি ভাষায় ইসলামী প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বই, অডিও, ভিডিও ও ফাতওয়া আপলোড করা হয় এতে। সাইটটিতে হাজার হাজার পেইজ রয়েছে। এবং প্রতি বছরই শত শত মানুষ সাইটটির মাধ্যমে মুসলিম হয় বলে বছর শেষে বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
ঘ. dorar.net –সাইটটি ইসলামী জ্ঞানের বিশ্বকোষের মতো। এতে আকিদা, ফিক্বহ, সুনান, তারীখ, বিভিন্ন মিলাল ও দ্বীন, ফিরাক ইত্যাদি বিষয়ে শত শত প্রবন্ধ ও বই রয়েছে। হাদীস খুঁজতে দেয়া হলে পূর্ন সূত্রসহ চলে আসে। এমন আরো নানাবিধ সুবিধা নিয়ে সাইটটি সাজানো।
এছাড়া আরো হাজারো ওয়েবসাইট আছে, যেগুলোতে বিভিন্নভাবে ইসলামের খিদমত করা হচ্ছে। ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম, রেডিও, অডিও-ভিডিও সাইট, কুরআন-সুন্নাহ-ফিক্বহসহ নানা বিষয়ভিত্তিক আলোচনা ফোরাম, আলেমদের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ইত্যাদির মাধ্যমে দ্বীনী খিদমাত আঞ্জাম দেয়া হচ্ছে।
প্রিয় পাঠকদেরকে sultan.org/a সাইটটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চাচ্ছি। এতে বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামী ওয়েবসাইটের সূচী দেয়া আছে। সাইটগুলো ভিজিট করলে ইন্টারনেটভিত্তিক দ্বীনী খিদমতের পরিকল্পনা করতে সুবিধা হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই নিয়ামত কাজে লাগিয়ে দ্বীনী খিদমাত করার তাওফীক দিন। আমীন

প্রযুক্তির কল্যাণ

মুফতি ইউসুফ সুলতান
প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক ইবাদতই এখন সহজ হয়ে গেছে। হজ্জ করতে আগে মাসের পর মাস জাহাজে কষ্টকর ভ্রমণ করতে হত, এরপর মক্কা পৌঁছে হজ্জ আদায় করে আবার মাসের পর মাস ভ্রমণ শেষে ফিরে আসতে হত। সময়মত নামাযের জন্য ওঠা এক সময় কঠিন ছিল। সূর্য ওঠা ও অস্ত যাওয়া – দ্বিপ্রহর ও ছায়া – এসব দেখে আন্দাজ করে নামায আদায় করতে হত। এখন ঘড়ি আছে, আছে অ্যালার্ম, রিমাইন্ডার, আজানের সফটওয়্যার ও অ্যাপ – আরো কত কী!
নারীর পর্দা করাও এক সময় কঠিন ছিল। বাড়ীগুলোর ফুটো দিয়ে ভেতরটা দেখা যেত (ফুটো দিয়ে দেখার শাস্তির বিষয়ে হাদীসও আছে)। পালকি বা বিশেষ বাহন ছাড়া যাতায়াতের সময় পর্দা রক্ষা করা কঠিন ছিল। এখন ইট-দালানের বাড়ি আছে; কালো গ্লাসের গাড়ীতে পর্দাসহ ভালোভাবে যাতায়াত সম্ভব।
ঠিক তেমনি, নারীর জন্য পর্দার ভেতরে থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা এক সময় কঠিন ছিল। কাউকে প্রতিনিধি বানানো ছাড়া সরাসরি ব্যবসায় অংশ নিয়ে পর্দা মেইন্টেইন করা প্রায় অসম্ভব ছিল।
এখন প্রযুক্তি এসেছে, বিশ্বটা হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। অনলাইনে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ এসেছে। নানা আইডিয়া নিয়ে নানা বিষয়ে ই-কমার্স করতে পারেন আমাদের মা-বোনরা। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং তো আছেই। নানা কাজ শিখে নিয়ে ঘরে বসেই আয় করতে পারেন অনেক। এতে পর্দা রক্ষা করেই কর্মসংস্থান সম্ভব। শুধু প্রয়োজন নিয়ত/সদিচ্ছা ও চমৎকার আইডিয়া।
আফসোস! এত সহজ হওয়া সত্ত্বেও এখন বরং আমাদের নামায বেশি কাযা হয়, হজ্জ আদায়ের সময়ই হয় না, পর্দা বেশি লঙ্ঘন হয়। নেয়ামতগুলোকে আমরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করি না। তাই সমাজে সমস্যা লেগেই থাকে, একের পর এক।
আল্লাহ তায়ালার ব্যবস্থাপনাকে পরিবর্তন করতে আসলে ‘শান্তি’ শব্দের শুরুতে ‘অ’ লাগিয়েই বসে থাকতে হবে। ‘অ’ আর কখনো মোছা যাবে না। রাসূলের স. সতর্কবাণীটি আমাদের সবসময় মনে রাখা দরকার।
রাসূলুল্লাহ স. বলেন, “তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষা করা হবে। আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি যেন তোমাদের জীবদ্দশায় তা না হয়।
১. কোনো সমাজে যখন অশ্লীলতা ছড়িয়ে যায়, এমনকি তারা তা প্রকাশ্যে করতে থাকে, তখন তাদের মাঝে নানা রোগ-প্লেগ ছড়িয়ে যাবে, যা তাদের পূর্বসূরিদের মাঝে ছিল না।
২. যখন তারা ওজনে-মাপে কম দিবে, তখন সেখানে দুর্ভিক্ষ, দুর্দশা ও শাসকের অত্যাচার ছেয়ে যাবে।
৩. যখন তারা তাদের সম্পদের যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানাবে, তখন তাদের ওপর থেকে বৃষ্টিকে উঠিয়ে নেয়া হবে। পশুগুলো যদি না থাকত, তাহলে বৃষ্টিই হত না।
৪. যখন তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের স. সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর শত্রুকে ক্ষমতাবান করে দিবেন, ফলে তারা (শত্রুরা) তাদের কর্তৃত্বাধীন কিছু বিষয় নিয়ে যাবে।
৫. আর যখন তাদের নেতৃবৃন্দ আল্লাহর কিতাব অনুসারে শাসন করবে না এবং আল্লাহর নাজিলকৃত কিতাব থেকে কল্যাণ অন্বেষণ করবে না, তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে পরস্পর ঝগড়া-বিবাদ লাগিয়ে দিবেন।”
[ইবনে মাজাহ: ৪১৫৫]

ইন্টারনেটে আমরা কী করছি কী করা উচিত?


একদিন লাইব্রেরিতে কম্পিউটার ডেক্সটে বসে নেটে কী জানি একটা তথ্য খুঁজে ফিরছিলাম আর মাঝে মাঝে ফেসবুক পেজে ঢুঁ মারছিলাম। এ সময় আমার পাশের বাসার ছোটো ছেলেটা এলো; এগারো কী বারো। আমার পাশে দাঁড়িয়ে মন প্লাস যোগ একত্র করে দেখছিলো। এ সামিউল কি খবর? আচ্ছা তোমার হেফজ ক’পাড়া হলো, মানে কয় পাড়া কুরআন শরিফ মুখস্ত করলে? ছাব্বিশ! ওফ! তাহলে আর ক’টাদিন পরেই তুমি পুরোদস্তুর একজন হাফেজ সাহেব হয়ে যাবে। আচ্ছা এটা কি আপনার আইডি? হুম! তো তুমি কী ফেসবুক ইউস করো? হুম আমার তিন তিনটে আইডি আছে। আরে বলো কি তোমার তিনটে আইডি (!!) অবাক বিষ্ময়ে তার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলাম। যে ছেলেটার ফেসবুক বোঝার কথা না, তার নাকি তিনটে আইডি দুটো ফেইক একটা মূল। আর একটা আফসানা মিমি নামে একটা মেয়ের নামে। তুমি মেয়ের নামে করলে কেনো? অন্যরা করে তাই আমিও করেছি। আর এই আইডি দিয়ে ভাইয়ার বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমি করি। আমি আবারো টাসকিত হলাম। প্রিয়পাঠক! আপনি চিন্তা করুন এই জেনারেশনের অবস্থা।
একজন মা আকুতি নিয়ে লিখেছেন, ‘আমার ছেলেমেয়ে সারা দিন ইন্টারনেটে কী যে করে বুঝি না। আমি নিজেও ইন্টারনেটের কিছু বুঝি না। কী করব? সমস্যাটি কি শুধু একজন মায়ের, নাকি এ সমস্যা আরও অনেক মা-বাবার?
ভাবির উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে আছে। ওদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবির দুই চোখে ঘুম নেই। আমি ভাবিকে জিজ্ঞেস করি, ভাবি, আপনার বাড়িতে কোনো অপরিচিত মানুষ ঢুকে আপনার ছেলেমেয়ের সঙ্গে গল্প করতে পারবে। ভাবি বিরক্ত হয়ে বলেন, মানে? অপরিচিত মানুষকে আমি ঢুকতে দেবো কেনো? আমি রসিকতা করে বলি, ধরুন, যদি একজন দুষ্টুপ্রকৃতির লোক গভীররাতে আপনার ছেলেমেয়ের সঙ্গে পাড্ডা মারার জন্য আপনার বাড়িতে আসে, আপনি কী করবেন? এবার ভাবি ভীষণ রেগে গেলেন, এমন ফালতু কথা বলো না তো? বাড়িতে আমরা আছি না? আমার বাড়ির দরজা কি খোলা থাকে যে হুট করে ঢুকে যাবে? দেখো, বাইরের গেটে তালা, ঘরের দরজায় তালা; এসব ভেঙে আসার পরিকল্পনা করলে পুলিশে ফোন করবো। আমি ভাবির নিরাপত্তা বেষ্টনী দেখে বললাম, তাহলে আপনি নিশ্চিত যে আপনার ছেলেমেয়েরা খুব নিরাপদ। ভাবির তৃপ্তির হাসি, অফকোর্স। আমি ভয়ে ভয়ে বলি, কিন্তু ভেবে দেখেছেন, এই আপনি এখন বাইরের গেটে, ঘরের দরজায় তালা দিয়ে নিশ্চিন্তে আছেন। ছেলেমেয়েরা যার যার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ওদের কাজ করছে। ওরা কী করছে? ভাবি অবজ্ঞা করেই উত্তর দিল, কি জানি, ওই ইন্টারনেটে কী যেনো করছে? আপনার ছেলেমেয়ে যে ইন্টারনেটে পৃথিবীর কোনো দূর্ধর্ষ অপরাধীর সঙ্গে কথা বলছে না, সেটা বলবেন কী করে? ভাবি এবার সোফা থেকে লাফ দিয়ে উঠলো, মানে? এবার আমি বুঝিয়ে বলি, ইন্টারনেটে মানুষ ছদ্মনাম ব্যবহার করে। এমনও তো হতে পারে, কোনো শিশু যৌন নির্যাতনকারী বা অপরাধী ভালো মানুষ সেজে আপনার ছেলেমেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে। আপনি বাড়িঘরে তালা দিয়ে ভাবছেন, কেউ আপনার বাড়িতে আসতে পারবে না। কিন্তু খেয়াল করুন, ওই ইন্টারনেট দিয়ে ওই অপরাধগুলো আপনার সন্তানের শোবার ঘরে ঢুকে পড়তে পারে।
ভাবিকে এবার ‘লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিকস’র প্রফেসর সোনিয়া লিভিংস্টোন এক হাজার শিশু-কিশোরের ওপর জরিপ চালানোর তথ্য তোলে ধরি। সোনিয়া লিভিংস্টোনের জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি শিশু ইন্টারনেটে আসক্তির কারণে তাদের হোমওয়ার্ক, পরিবার ও বন্ধুদের অবহেলা করছে। জরিপের এমন চিত্রে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন লিভিংস্টোন।
২০১০ সালে করা তার এ গবেষণায় দেখা গেছে, আসক্তির ফলে শিশুরা ইন্টারনেটে পর্নো ছবি দেখে, অশ্লীল বার্তা আদান-প্রদান করে, এমন কি শুধু অনলাইনে পরিচয় সূত্রে দেখা করার মতো ঝুঁকি পর্যন্ত নিয়ে ফেলে। তবে উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের েেত্র আসক্তির এ ঝুঁকি আরো বেশি। যেমন- লিভিংস্টোনের জরিপে দেখা গেছে, উচ্চবিত্ত পরিবারের শতকরা ৩০ ভাগ শিশু অনলাইনে পর্নোছবি অভ্যস্ত। নিম্নআয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েদের েেত্র এ হার ২৫ শতাংশ।
এবার বোধ হয় ভাবির টনক নড়লো। পারেন তো তখনই ইন্টারনেটের তার কেটে দেন। কিন্তু কথাটা তো সত্য, এই সাইবার কালচার আমাদের প্রচলিত ছেলেমেয়েদের বড়ো করার প্যারেন্টিং বিষয়টি সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়েছে। আমি নিশ্চিত, সেদিন রাতে ভাবির ঘুম হয়নি। গভীররাতে বারবার ওঠে ঘরের দরজা-জানালা চেক না করলেও হয়তো বারবার উঁকি দিয়ে দেখেছেন, তার ছেলেমেয়ে ইন্টারনেটে কোনো অপরাধীর সঙ্গে কথা বলছে কি না। বিষয়টি নিঃসন্দেহে চিন্তার ব্যাপার। কিন্তু এরা তো এই ডিজিটাল যুগের। ইন্টারনেটের তার কেটে এ সমস্যা সমাধান হবে না। আপনার সন্তানকে অবশ্যই ইন্টারনেট দিতে হবে। নতুবা সে স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে চলনে-বলনে এমনকি জ্ঞানেও পিছিয়ে পড়তে পারে। আপনি কি তা চান? ভাবির গভীর আকুতি, তাহলে করবোটা কী?
ভাবিকে বিষয়টার সমাধানের আগে আসক্তির কারণটাও তুলে ধরি, মধ্যবিত্ত এবং নিম্মবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের ইন্টারনেটে আসক্তির জন্য ‘ভয় সংস্কৃতিকে’ দায়ি করেছেন প্রফেসর সোনিয়া লিভিংস্টোন। কারণ বাইরের খারাপ সঙ্গ পেয়ে বখে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের বাইরে খেলতে দেয়া হয় না। ফলে এসব ছেলেমেয়ে ঘরে বসেই খেলতে বাধ্য হয়। আর তখন তাদের অন্যতম খেলার সঙ্গী হয় ইন্টারনেট। তিনি আরো বলেন, গবেষণার শুরুতে আমার ধারণা ছিলো, মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেট ব্যবহারে দ হবে অথবা দিকনির্দেশনায় বাবা-মা দ হবেন। আর এ কারণেই তারা কম ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করবে। পান্তরে, বাবা-মা অল্প শিতি হওয়ায় দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েরা ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করবে। কিন্তু গবেষণায় এর উল্টো ফল দেখে তিনি রীতিমতো হতবাক হয়ে গেছেন। অন্যদিকে, নিম্নআয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েদের ইন্টারনেটে আসক্তির ঝুঁকি কম। কারণ তাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ কম। অভিভাবক কম শিতি হওয়ায় তাদের ব্রডব্যান্ড সংযোগের গতিও কম থাকে। ফলে ইন্টারনেটে বেশি সময় ব্যয় করার মতো ধৈর্য তাদের থাকে না।
নতুনদের নিয়ন্ত্রণে অভিভাবকরা যা করতে পারেন
ভাবিকে বললাম দেখুন না, একটা সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ তৈরি করা যায় কি না! এ নিয়ে সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন, এর কোনো বিকল্প নেই। মা-বাবার উচিত পরিকল্পনা করে সন্তানের সঙ্গে বসে ইন্টারনেট ব্যবহার বিষয়ে কথা বলা। যেমন-কখন চ্যাট করবে, কী কী ওয়েবসাইটে যাবে, যাওয়া যাবে না। এমন একটি প্ল্যান সন্তান পরিষ্কার জানিয়ে দিন যে আপনি তাকে বিশ্বাস করেন। অতএব যেদিন এই বিশ্বাস ভঙ্গ হবে সেদিন থেকে ইন্টারনেট ব্যবহারের অবাধ লাইসেন্স বন্ধ হবে। সহজ ভাষায়, আপনার সন্তানকে ইন্টারনেট ব্যবহারের বাউন্ডারি ঠিক করে দিন। এই বাউন্ডারি ঠিক করার সময় আরও কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন: ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহারে কিছুতেই উৎসাহিত করবেন না। যদি ঘরের দরজা বন্ধ করতেই হয়, তাহলে যেকোনো সময়, যেকোনো অজুহাতে ঘরে ঢুকে সন্তানের সঙ্গে কথা বলবেন। অনেক সময় আপনার সন্তান পড়াশোনা এবং ইন্টারনেটে কথাবার্তা চ্যাট একই সময়ে করতে চাইবে। আপনি সেটা না করতে দিলেই ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। দুটো কাজ একসঙ্গে করা যায় না, আমি তা বলবো না। তবে এটা সত্য যে পড়াশোনা এক ঘণ্টায় করা যায়, সেটা করতে দুই ঘণ্টা লাগতে পারে। সন্তানের সঙ্গে আলোচনা করে সময় ঠিক করুন, কখন পড়াশোনা আর কখন চ্যাট করা উচিত। তবে এটা অবশ্যই যৌথ সিদ্ধান্তে হওয়া উচিত। ই-মেইল পাসওয়ার্ড সন্তানকে বলুন আপনার অনুমতি ছাড়া ইন্টারনেট অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড বদলানো যাবে না। তার মানে এই নয়, আপনি প্রতিদিন তার ই-মেইল পড়বেন। কিন্তু ও জানবে আপনি ইচ্ছে করলেই ওর ই-মেইল পড়তে পারেন। আপনার সন্তান যাদের সঙ্গে ইন্টারনেটে কথা বলে ইন্টারনেটের ভাষায় একে বলে চ্যাট, তাদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করুন। জানুন কে কে ওর স্কুলের বন্ধু আর কে কে কাসমেট বাইরের, জিজ্ঞেস করুন কীভাবে পরিচয় হয়েছে? যদি কখনো দেখেন যে নতুন বন্ধুর নাম লিস্টে যোগ হয়েছে, প্রশ্ন করুন। ইন্টানেটে আপনি ইচ্ছে করলেই দেখতে পারেন আপনার সন্তান কী কী ওয়েবসাইট ব্রাউজ করেছে। কথা বলে ঠিক করুন, আপনার সন্তান কখনোই ওই ওয়েবসাইট হিস্ট্রি মুছবে না। কারণ, আপনি যেকোনো সময় তা চেক করতে পারেন। যদি সে ব্রাউজিং হিস্ট্রি মুছে ফেলে, তবে সে তার ইন্টারনেটের স্বাধীনতা হারাবে। সন্তানের ওপর চোখ রাখুন। ওর আচরণে কি হঠাৎ কোনো পরিবর্তন খেয়াল করছেন? আপনার সস্তানের প্রিয় খেলা, বই, এবং টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, কম্পিউটার গেম বাদ দিয়ে কি ইন্টারনেটে বসে আছে? যদি তাই হয়, প্রশ্ন করুন ও সারাণ ইন্টারনেটে কী করে? অনেকে বলেন, এতো ঝামেলা না করে বাজার থেকে ইন্টারনেট সিকিউরিটি ফিল্টার কিনলেই তো সব সমাধান হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়া সরকার বিনামূল্যে সবাইকে এই ফিল্টার দিচ্ছে। আমার ধারণা, এই ফিল্টারকে কীভাবে ফাঁকি দেয়া যায়, তা এই ডিজিটাল জেনারেশন জানে। সন্তানের সঙ্গে ইন্টারনেট সম্পর্কে কথা বলতে গেলে আপনাকেও ইন্টারনেট সম্পর্কে জানতে হবে। নতুবা আপনাকে বোকা বানানো খুব সহজ। অতএব ওদের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে ওদের ভাষা শিখুন। ওদের তাল-লয়ে চলুন। ভালো করে তাকিয়ে দেখুন, আপনার চারপাশে অনেক বন্ধুবান্ধব আছে, যারা কম্পিউটার সম্পর্কে বেশ ভালো জানে এবং এককাপ চায়ের বিনিময়ে আপনার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে। সামারি হলো, ইন্টারনেট মানে কমিউনিকেশন। অর্থাৎ একজনের সঙ্গে আরেকজনের যোগাযোগ। আপনার বড়ো শক্তি হোক আপনার সন্তান, এর সঙ্গে হোক আপনার যোগাযোগ।
আমরা কী করছি?
এই তো গেলো নতুনদের কথা। আমরা যারা তরুণ-তরুণী, যুবক- যুবা আছি, আমাদের ইন্টারনেটে কী কাজ করছি। নতুনদের তো নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে গার্ডিয়ান একটু সচেতন হলেই মামলা চুকে যায়, কিন্তু আমাদের লাগাম টেনে ধরবে কে? আমরা কী সবে সাধু! আমরা রং জায়গায় নক করছি না। ভার্চুয়াল এমন একটা জগত কেউ যদি ইচ্ছে করে এখানে নিজের লাইফের বলিদান কার্যকর করবে, হলফ করে বলতে পারি, সে অনায়াসেই পারবে। আর যদি কেউ চায় ভার্চুয়াল ভা-ার থেকে নিজেকে সমৃদ্ধ করবে, পারবে। আমরা যারা স্কুল-কলেজে পড়ি, তাদের সিংহভাগ অনাবাসিক থেকে লেখা-পড়া করি, অভিভাবকের সচেতনতায় মা-বাবার কঠোর নিয়ন্ত্রণে বাস করি তারা তো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকি। আর যারা আবাসিক থেকে মাদরাসায় লেখা-পড়া করি। তাদের নেট ব্যবহারে ব্যাপক অনিয়ম হয়। তার কারণটা হলো মাদরাসায় এখনো ভার্চুয়াল জগতটা তেমন পরিচিতি হয়ে ওঠেনি। এজন্য এ জগতটায় আমরা প্রবেশ করার পর ভালো-মন্দ হিসেব করে চলার শিক্ষাটা তেমনটা পাইনি। সঙ্গত কারণেই আমাদের এজগতে চলতে গেলে ভালো-মন্দের হিসেবটা জানা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছি। আমরা হয়তো ভেবে বসে আছি এ জগতটা নিছক একটা ছেলে-খেলার বিষয়; বন্ধুরা বিষয়টা এমন নয়। এ জগতে আমাদের সামান্য ভুলের কারণে নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনতে পারি। তার কারণ এটা যেমন জ্ঞানের দুনিয়া তেমনি অপরাধের দুনিয়াও। এ জগতে আমি আপনি ভালো থেকে এ থেকে ফায়দা লুঠতে পারি, তেমনি সাইবার অপরাধীরা আমাদের দূর্বলতার সুযোগে আমাদের মেধা-জ্ঞান, মান-সম্মান, ধন- দৌলত সব কেড়ে নিতে পারে। কারণ মানুষের দূর্বলতার সুযোগে এ জগতের অপরাধীরা ইদানিং ততপর হয়ে ওঠেছে। সম্প্রতি এমনি একটা তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্য পুলিশ। ‘সামাজিক যোগাযোগের সাইটে ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে অপরাধও। শুধু যুক্তরাজ্যেই গত চার বছরে ফেইসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে অপরাধের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় আটগুণ। আর এসব অপরাধের দায়ে সাজাও পেয়েছে ৬৫৩ জন। অপরাধের নতুন ত্রে হিসেবে সামাজিক যোগাযোগের সাইটের ব্যবহারকে নতুন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন যুক্তরাজ্যের পুলিশপ্রধান। তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগ সাইটের মাধ্যমে হয়রানি বা সহিংসতার প্রবণতাও দিন দিন বাড়ছে।
অপরাধীরা অপরাধ করে আমাদের দূর্বলতার সুযোগে। এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো এক্ষেত্রে আমাদের দূর্বলতাগুলো কি কি?
আমরা যখন ফেসবুক, টুইটার, ইন অথবা অন্যকোনো সামাজিক যোগাযোগ সাইটে যখন ছবি আপলোড করবেন তখন এ ছবিগুলোর কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব নিয়ে ইন্টারনেট জগত কী বলে তা জেনে নেয়া যাক। তার আগে একটু জেনে নিই , যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী কোনো কপিরাইটসহ ছবি ইন্টারনেটে ‘আপলোড’ করার নিয়ম নেই। এর মানে হল আপনি যে ছবি ইন্টারনেটে আপলোড করবেন, করার পর ওই ছবির মালিক বা স্বত্বাধিকারী আপনি নন। ওই ছবি তখন উন্মুক্ত হয়ে যাবে। এই উন্মুক্ত করার নীতি হল তথ্যকে মুক্ত করা। এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে দেয়া। যে ছবিতে আপনার আপত্তি আছে সে ছবি আপনি আপলোড থেকে বিরত থাকবেন। তা না হলে আপনার কিছু করার নেই। যদিও কপিরাইট বা মেধাস্বত্ব আইন যা বলে তা মোটেই কার্যকর নয় এই কাউড কম্পিউটিংয়ের যুগে। ছবির কোনো কপিরাইট আছে বলে খুব বেশি যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা নেই, যা আছে তা হলো ছবিটি সম্পাদনা করা বেআইনি। আর যতোণ পর্যন্ত আপনি কোনো ছবিকে রেজিস্ট্রেশন করবেন না, ততোণ পর্যন্ত আপনার কোনো মতাই নেই ওই ছবিটির ওপর।
কিন্তু আসল কথা হলো, ইন্টারনেটে যে ছবি ও ডাটা থাকবে তার ওপর অধিকার হয়ে যায় সবার। কেউ যদি ছবি চুরি অথবা তিসাধন করে, তবে এ েেত্র বলার কিছু নেই। তাই ইন্টারনেটে ছবি আপলোড করতে আরও বেশি সতর্ক হোন।
ছবি আপলোডের ক্ষেত্রে সাবধনতা অবলম্বন করবো দূরের কথা, কেউ নিজের একান্ত জীবন- যৌবনের ছবি পোস্ট করে বসে। এমন এক তথ্য দিয়েছে, দ্যা গার্ডিয়ান। আজকাল বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নিজেদের যৌনজীবন শেয়ার করতে দেখা যায় বহু মানুষকে। আর ক্রমশ বাড়ছে এই প্রবণতা। ২০০৮ সালের একটি বইতে বিল ট্যানসার জানান ইন্টারনেট ব্যবহারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অন্যান্য পর্নোগ্রাফিকে পেছনে ফেলে দিচ্ছে। অনেক ইউজারই এসব নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন। শুধু সেলিব্রেটি নায়ক-নায়িকা নন, বহু ফেসবুকারকে দেখা যায় নিজেদের একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করতে। বিষয়টি নিয়ে আর তাদের মাঝে জড়তা কাজ করছে না। ভারতে সম্প্রতি ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার দায় এসে পড়েছে বলিউডের বিতর্কিত নায়িকা পুনম পা-ের ওপর। আর এতে বেজায় চটেছেন তিনি। পুনমের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, ইন্টারনেটে পুনম পান্ডের খোলামেলা ছবিই ধর্ষকদের এ কাজে প্ররোচিত করছে। ুব্ধ পুনম আরও বলেন, সমাজের শত্রুদের জন্য আমাকে কেনো দায়ি করা হচ্ছে। আমি কেবল বিশ্বে আমার একটি নিজস্ব জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা করছি। সমাজে এখন যে অপরাধগুলো হচ্ছে এ জন্য দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে দায়ি না করে আমার ওপর আঙুল তোলা হচ্ছে কেনো। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাকে কেনো দায়ি করা হবে। আমি কী এমন করেছি।
ইন্টারনেট যেমন উপকার করে তেমনি মানুষের মহাক্ষতিও সাধন করে এমনি সংবাদ দিয়েছেন। দু’জন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর মতে সারাদিন ও সারারাত যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বসে থাকেন, তারা দেহ ও মস্তিষ্কের ওপর মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজির অধ্যাপক, স্নায়ুবিজ্ঞানী ও রয়াল ইনস্টিটিউশন অব গ্রেট বিট্রেন-এর পরিচালক সুসান গ্রিনফিল্ড বলেন, ‘আমার ভয় হচ্ছে, এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সাইটগুলো আমাদের মস্তিষ্কের বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায় ছোটো শিশুদের সমপর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। ‘ছোট শিশুরা যেমন কোনো শব্দ বা উজ্জ্বলবাতি থেকে আকৃষ্ট হয়, এখনকার মানুষজনও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নোটিফিকেশন দেখে আকৃষ্ট হয়, তাদের দিনের একটা বড়ো অংশ এই সাইটগুলোতে ব্যয় করে।’
রয়াল সোসাইটি অব মেডিসিনের ড. এরিক সিগমান তার এক গবেষণাপত্রের ফলাফল দিয়ে তোলপাড় ফেলে দেন। যেগুলোতে বলা হয়, অনলাইন নেটওয়ার্কিং স্বাস্থ্যের তি করে আর অতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহার বাড়িয়ে দেয় ক্যান্সারের ঝুঁকি। মানুষ যতই ইন্টারনেট আসক্ত হয়ে পড়ছে ততই তারা পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এরফলে মানুষের মাঝে বিষণ্ণতা ও একাকীত্ব বাড়ছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো কি মানুষের মৃতে্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে? সরাসরি হয়তো নয়, তবে কিছু নেটওয়ার্কিং বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এরকমটা ঘটছে ধীরে ধীরে। দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি ফেসবুক বা টুইটারে অতিরিক্ত সময় দেয়ার কারণে মানুষের কাজের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। যা বাড়িয়ে দেয় স্বাস্থ্যঝুঁকি। আরেকজন বিজ্ঞানী ড. কামরান আব্বাসি ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ ঃযব জড়ুধষ ঝড়পরবঃু ড়ভ গবফরপরহব এর সম্পাদকীয়তে বলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় দিতে গিয়ে মানুষ তার প্রতিদিনের কাজকে ব্যহত করছে।“ এছাড়া কোনো ফেসবুক বন্ধুর ক্রমাগত উন্নতির আপডেট পেলে বেশিরভাগ মানুষের মনেই নিজেদের প্রতি এক ধরণের হতাশা ও হীনমন্যতা চলে আসে, যা তাদের সামনে এগিয়ে যাবার পথে সমস্যা সৃষ্টি করে।
আমাদের কী করা উচিত
আমরা ইন্টারনেটের ভেতর-বাইর, ভালো-মন্দ জানলাম। বিশেষ করে আমরা যারা কওমির সন্তান, দীনের কাজ করতে চাই তাদের ইন্টারনেটে কী কাজ হতে পারে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বে ইন্টারনেটে লেখালেখিকে সময়ের একটি ¯্রােত বলে বিবেচনা করা হয়। নামিদামি অনেকেই ইন্টারনেটে লিখছেন। ব্লগিং করা একটি ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। ব্লগকে একটি শক্তিশালী মিডিয়া হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে এ সময়ে। বাংলাদেশে ব্লগিংয়ের ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। ব্লগ-ইন্টারনেটে লেখালেখির আলাদা আনন্দ হচ্ছে, এটি মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। অনেকে পড়তে পারেন। সাইটে রেজিস্ট্রেশন থাকলে মন্তব্য করতে পারেন। লেখক তার নিজ পাঠকের সঙ্গে মতবিনিময় করতে পারেন।
ইন্টারনেট ও ব্লগ এখন তাদের দরজা আরও অবারিত করে দিয়েছে। ফেসবুক এখন বাঙালির আড্ডার অন্যতম মাধ্যম। তাহরির স্কয়ার ও আরব বসন্তের কথাও আমাদের জানা আছে, যা এখন বিশ্বে একটি বড়ো উদাহরণ।
ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা অনেকেই নিজেদের ব্যক্তিগত দিতে শুরু করি, যেমন আমি অমুক জায়গায়, আমি এটা করছি, সেটা করছি, কারণ এতে পশ্চিমাবিশ্ব আমাদের তথ্য বিনামূল্যে পেয়ে যায়। আপনি বলতে পারেন, আমি তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ পার্সন না, না হোন, কিন্তু তারা এসব তথ্য থেকে কখনো কোনো তথ্য কালেক্ট করে ফেলতে, যা দ্বারা আপনার আমার, দেশ-জাতি ও ধর্মের মহা ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
ফেসবুক যেমন মজার বিষয় তেমনি আমাদের জন্য ক্ষতিকর জিনিসও, আমরা জেনেছি ফেসবুকের সব সময় বসে থাকার ক্ষতি সম্পর্কে। আর অনৈতিক, খারাপ পেজে ঢুকার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে চলবো, নবীর আদর্শে কথা ভুলবো না। আপনার কোনো খারাপ পেজে লাইক দেয় কোনো গ্রুফ পেজে জয়েন করে অথবা কোনো আইডির ফ্রেন্ড থাকে বিনা দ্বিধায় আনফ্রেন্ড, আন লাইক অথবা কেনসেল রিকোয়েস্ট করবেন। কারণ কথায় আছে, সত সংঘ স্বর্গবাস অসতসংঘ সর্বনাশ। আমরা নিজেদের ব্যপারে নিজেরাই অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করবো। বিশ্বায়নের যুগে কালের গা ভাসিয়ে না দিয়ে, সব জায়গায় আল্লাহ ও রাসুলের আদর্শকে মেনে চলবো। তাহলে সম্ভব হবে নিজেদের পতন ঠেকানো। একটু সচেতন হলেই আমরা আধুনিক প্রযুক্তিকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারি। আল্লাহ আমাদের প্রযুক্তিকে ভালোভাবে জানার এবং নেককাজে ব্যবহার করার তওফিক দিন, আমিন।

বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫

সাইট তৈরি করতে চাইলে দেখে নিতে পারেন —

Waleed Bata


.
Full Album Zip : 
.
.
=================================
Related Shared Links:
How To Download – কিভাবে ডাউনলোড করবেন
“Right Click > Copy Link Location > Past Into Download Manager.
Right Click and ‘Save Target As’ or ‘Save Link As’ to save files to PC”
====================================