শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০১৫

আবু জর আল গিফারীঃ ডাকাত থেকে সাহাবী

মক্কা যে গিরিপথের মাধ্যমে বাকী পৃথিবীর সাথে যুক্ত ছিল সেটা ছিল ওয়াদান ভ্যালী এবং সেখানেই ছিল গিফার গোত্রের বাস। অত্যন্ত দুর্ধর্ষ এই জাতি মক্কা এবং সিরিয়ার মধ্যে যে সকল বানিজ্য বহর চলাচল করত তাদের জিম্মি করে চাঁদবাজী করত । বানিজ্য কাফেলা তাদের দাবী পূরণে ব্যর্থ হলে তারা মালামাল আর ধনসম্পদ লুন্ঠন করত । জুনদুব ইবন্ জুনাদা নামে এই গোত্রের ভয়ংকর এবং ক্ষিপ্র একজন নেতা ছিল, যাকে মানুষ আবু জর ডাক নামেই বেশী চিনত।
লোকটি সমগ্র আরব অঞ্চলে তার সাহস এবং স্থিরচিত্তের জন্য বিখ্যাত ছিল। লোকজন তাকে সেই মানুষ হিসাবেও জানত যে মানুষ আরবের সকলে যে ধর্মবিশ্বাস নিয়ে জীবনধারণ করে সে তাকে মিথ্যা বলে মনে করত।
ওয়াদান মরুভূমিতে অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে খবর পৌঁছাল যে, মুহাম্মাদ নামের একজন ব্যক্তি মক্কায় নিজেকে আল্লাহর নবী বলে পরিচয় দিচ্ছে। একথা শোনার পর তার অন্তরে খেলে গেল এক অদ্ভূত আলোড়ন। মন বলল এই লোকটিই হয়ত সে, যে এ জাতিকে মূর্তিপূজা এবং পাপাচার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসবে। এ জনকে ও জনকে জিজ্ঞেস করেও তিনি কোন সদুত্তর পেলেন না। অস্থির মনের ব্যাকুলতা আরো বরং বেড়ে গেল। মন বলল আর তো বিলম্ব করা যায় না। বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে নিশ্চিত খবর তার চাই।
তাঁর ছোট ভাই এর নাম ছিল আনিস। বড় ভাই এর অস্থিরতা তার চোখেও ধরা পড়েছিল। আনিস নিজেও বড় ভাইকে গভীরভাবে ভালোবাসতো। আবু জর একদিন তাকে ডেকে নিয়ে বললেন, ”তুমি মক্কায় চলে যাও। ওখানে গিয়ে চুপি চুপি সে লোকটিকে খুঁজে বের করবে যে নিজেকে নবী বলে পরিচয় দিচ্ছে। সাবধান থেকো, ওখানকার মানুষ জানতে পারলে তোমাকে এমনকি মেরেও ফেলতে পারে। লোকটি কি কি বলে তুমি তা মনোযোগ দিয়ে শুনো, বিশেষ করে সে কথাগুলো, যা সে আল্লাহর পক্ষ থেকে পেয়েছে বলে বলছে। দ্রুত যাও আর ফিরে এসে আমাকে সব জানাও।”
আনিস দেরী না করে বেরিয়ে পড়ল। মক্কার বিপদসংকুল পরিস্থিতি। নতুন নবীর দাবীদার মুহাম্মাদের সন্ধান করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সংশয় আর শংকার মধ্যেই আনিস একদিন খুঁজে বের করলো মুহাম্মাদকে (আল্লাহর করুনা শান্তি তাঁর উপর বর্ষিত হোক)। আনিস তাঁর কথা শুনলেন, তারপর মক্কা থেকে তিনি দ্রুত ওয়াদান এর পথে রওয়ানা হলেন।
ইতিমধ্যেই আবু জর অস্থির হয়ে উঠেছেন। মক্কা-ওয়াদান পথে তার উদ্বিগ্ন দৃষ্টি আনিসের আগমন পথের প্রতীক্ষায় ছিল। একদিন দেখা গেল আনিস ফিরে আসছে। ছুটে গেলেন তিনি আনিসের কাছে। উদ্বিগ্ন আবু জর জিজ্ঞেস করলেন,
”কি দেখলে ওখানে, দেখা হয়েছিলো তাঁর সাথে?”
”হ্যাঁ। একজন মানুষকে ওখানে সত্যিই আমি পেয়েছি যে নিজেকে আল্লাহর প্রেরিত নবী বলে বলছে। সে কবি নয় এবং সে মানুষকে কেবল সত্য ও সৎকাজের দিকে ডাকছে।”
”মানুষজন তার সম্বন্ধে কি বলছে?”
”তারা তাকে যাদুকর, মিথ্যাবাদী আর কবি হিসাবে বলছে।”
”তুমি আমার কৌতুহল মেটাতে পারলে না। তুমি কি আমার পরিবারের দিকে খেয়াল রাখতে পারবে যদি আমি নিজেই মক্কা যাই আর সেই নবী বলে দাবীদার লোকটির সবকিছু নিজেই দেখে আসি?”
”হ্যাঁ। তবে সাবধান, মক্কার লোকদের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকবেন।”
আর দেরী না করে আবু জর বেরিয়ে পড়লেন। তারুণ্যে উদ্দীপ্ত যৌবন তার। জীবনে কতবার মানুষের সম্পদ লুট করার জন্য ক্ষিপ্র গতিতে ঘোড়া ছুটিয়েছেন, আর আজ তিনি চলেছেন এক মহাসত্যকে গ্রহণ করে নেবার জন্য। প্রখর সূর্য, গভীর রাতের নিকষ কালো অন্ধকার সবকিছু পেছনে ফেলে অকুতোভয় মানুষটি এগিয়ে চললেন মক্কার দিকে।
মক্কায় পৌঁছেই তীক্ষ্মধী আবু জর বুঝতে পারলেন শুধুমাত্র মুহাম্মাদের সাথে দেখা করার চেষ্টার কারণে তিনি অত্যন্ত অনিরাপদ ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন এবং এজন্য তিনি কঠিন সতর্কতা অবলম্বন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। আবু জর লক্ষ্য করলেন কুরাইশরা মুহুম্মাদের আনুসারীদের নির্মম শাস্তি দিচ্ছে আর কে কে মুহাম্মাদের কাছে আসছে তা দেখার জন্য চতুর গোয়েন্দাবাহিনী নামিয়েছে। আবু জর জানতেন যে এ অবস্থা তাকে মোকাবেলা করতে হতে পারে, তাই তিনিও প্রস্তুত ছিলেন। বুদ্ধিমান আবু জর এজন্য কোন লোকের কাছে মুহাম্মাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা থেকে বিরত রইলেন। পরিস্থিতি উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে তিনি রাতে কাবাঘরের এক কোণে শুয়ে পড়তেন। একদিন আলী ইবন্ আবী তালীব তাকে দেখে ভাবলেন তিনি নিশ্চয়ই একজন আগন্তুক। আলী তাঁকে তার বাড়ীতে যাবার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। আবু জর মেহমান হিসাবে চললেন আলীর বাড়ীতে। রাত যাপন করে তিনি সকালে আবার কাবার কাছে চলে এলেন, তবে আবু জর বা আলী কেউ কাউকে কোন প্রশ্ন করলেন না।
মুহাম্মাদ নামের নবী বলে দাবীদার লোকটির দেখা পাবেন বলে পরদিন সারাদিন তিনি কাবার কাছে খুঁজে খুঁজে কাটিয়ে দিলেন। কিন্তু দেখা পেলেন না। রাতে আবার চলে এলেন কাবার মসজিদে ঘুমাতে এবং আজও আলী ইবন্ আবী তালিব দেখলেন তাকে। আজ আলী বললেন, “এখনওকি সে সময়টা হয়নি যখন মানুষ বাড়ীর দিকে যায়, চলুন।”
আবু জর আজও আলীর সাথে তার বাড়ীতে গেলেন এবং আজও দুজনের কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।
এমনিভাবে তৃতীয় দিন এল। আজও আলীর মেহমান হয়েই আবু জর এসেছেন আলীর বাড়ীতে। আজ আলী জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি আমাকে বলবেন কেন আপনি মক্কায় এসেছেন?”
”আমি আপনাকে তখনই বলব যখন আপনি আমার সাথে এই প্রতিজ্ঞা করবেন যে, আমি যা চাই তার সঠিক সংবাদ আপনি আমাকে দেবেন আর কাউকে তা জানাবেন না।” আলী রাজী হলেন। আবু জর বললেন,
”আমি মক্কা থেকে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছি একজন লোকের খোঁজে, যার নাম মুহাম্মাদ, যে নিজেকে নবী বলে পরিচয় দিচ্ছে। আমি শুধু তার সাথে একটু দেখা করে তার কিছু কথা শুনতে চাই।”
আনন্দে আলীর চেহারা উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। আলী বললেন, ”আল্লাহর শপথ, তিনি সত্যিই নবী।” আলী তাকে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এবং তিনি যে শিক্ষা দিচ্ছেন তার থেকে কিছু আবু জরকে শোনালেন। অবশেষে তিনি বললেন, ”কাল সকালে আমি আপনাকে মুহাম্মাদের (সাঃ) কাছে নিয়ে যাব। আমি যেখানে যাব আপনি দূর থেকে আমাকে অনুসরণ করবেন। আমি যদি আপনার জন্য বিপজ্জনক কোন কিছু দেখি তাহলে আমি মূত্রত্যাগ করার ভাব করে থেমে যাব। যদি আমি চলতে থাকি আপনি আমাকে অনুসরণ করবেন এবং আমি যেখানে প্রবেশ করি আপনিও সেখানে প্রবেশ করবেন।”
সে রাতে আবু জর এর ঘুম হল না। এতদিন ধরে যে মানুষটিকে দেখার জন্য তিনি হন্যে হয়ে ঘুরছেন কাল তাঁরই সাথে দেখা হতে যাচ্ছে। আর তিনি যদি আল্লাহর নবীই হয়ে থুকে তাহলে কী সৌভাগ্যময় দিন তার আসতে যাচ্ছে কাল।
পরদিন কথামত আবু জর চললেন আলীর সাথে রাসুল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথে দেখা করার জন্য। আলীর সাথে দূরত্ব বজায় রেখে তিনি আলীর পদচিহ্ন অনুসরণ করতে লাগলেন। কোন বিপদ ছাড়াই একসময় তারা পৌঁছে গেলেন কাঙ্খিত গন্তব্যে। কত কথা আবু জর যেন ভেবে রেখেছিলেন মুহাম্মাদকে জিজ্ঞাসা করার জন্য, তার কথাগুলো একটু যাচাই করে নেবার জন্য, কিন্তু আজ যখন তিনি মুহাম্মাদ নামের এই লোকটির সামনে এলেন, তার আগেই আল্লাহ্ ঈমানের আলো আবু জরের অন্তরে ঢেলে দিয়েছিলেন। প্রথম দেখাতেই রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) কে তিনি বললেন, ”আপনার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষিত হোক হে আল্লাহর রাসুল।” ”আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ্”।
রাসুলুল্লাহ্, তাঁর উপর আল্লাহর শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক, আবু জরের চেয়েও সুন্দর ভাষায় সে সম্বোধনের জবাব দিলেন, ”তোমার উপরও আল্লাহর শান্তি, রহমত ও করুণা বর্ষিত হোক।” ”ওয়ালাইকুম আস্সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্ ওয়া বারাকাতুহু”। আর এভাবেই আবু জর হলেন প্রথম মানুষ যিনি আল্লাহর রাসুলকে সেই কথাগুলো দিয়ে সম্বোধন করলেন যা পরবর্তিতে মুসলিমদের জন্য সম্বোধন রীতি হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে স্বাগত জানরালেন এবং ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তিনি তাকে কুরআন থেকে কিছু বাণী পড়ে শেনালেন। আবু জর মোটেও দেরী করলেন না, সত্যের আলো তার হৃদয়ে আল্লাহ্ প্রজ্জ্বলিত করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ্ ও তার রাসুলকে বিশ্বাস করে সাক্ষ্যের উচ্চারণ তার মুখ থেকে উচ্চারিত হলো। আর ভাগ্যবান এই লোকটি এভাবেই প্রথম দিককার মুসলিমদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হলেন, যাদের সীমাহীন মর্যাদার কথা স্বয়ং আল্লাহ্ ঘোষনা করেছেন। এরপরের কথা আমরা আবু জরের মুখ থেকেই শুনব।
“এরপর থেকে আমি রাসুল, তাঁর উপর আল্লাহর শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক, এর সাথে মক্কায় থাকতে লাগলাম। তিনি আমাকে ইসলাম এবং কুরআন শিক্ষা দিলেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাকে বললেন, ”তোমার ইসলাম গ্রহণের কথা তুমি এখানে মক্কার কাউকে জানিও না। আমার ভয় হয়, তা জানলে ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে।”
আবু জর তারুণ্যদীপ্ত দুঃসাহসিক মানুষ। ইসলাম গ্রহণের আগেও তিনি কাউকে কখনও ভয় পাননি, বরং এ লোকটির সাহস আর পৌরুষ সবাইকে অবাক করেছে। আজ ঈমানের তেজ তার অন্তরে। তিনি কি কাউকে ভয় পেতে পারেন? আবু জর বললেন, ”যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্ত্বার শপথ ইয়া রাসুলাল্লাহ্, আমি ততক্ষন পর্যন্ত মক্কা ত্যাগ করব না যতক্ষন না আমি কাবার প্রঙ্গনে কুরাইশদের মাঝখানে গিয়ে যে সত্য আল্লাহ্ আমাকে দিয়েছেন সে সত্যের ঘোষণা না দেব।”
রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) নিশ্চুপ রইলেন। আমি কাবার মসজিদে গেলাম। কুরাইশরা সেখানে বসে ছিল এবং নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। আমি তাদের মাঝখানে গিয়ে পৌঁছালাম এবং আমার গলার সর্বোচ্চ আওয়াজে বললাম, ”কুরাইশগণ, আমি তোমাদের ঘোষণা করছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নাই এং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল।”
আমার কথার সাথে সাথে তাদের মধ্যে বিস্ময়কর প্রতিক্রিয়া হল। তারা লাফ দিয়ে উঠে পড়ল এবং বলতে লাগল, ”একে এখনই ধর, সে নিজের দীন ত্যাগ করেছে।” তারা আমাকে ধরে ফেলল, আমার উপর চড়ে বসল আর আমাকে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে মারতে লাগলো। তাদের সেই বীভৎস মার আমাকে প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক সে সময় আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব, যিনি রাসুলুল্লাহর চাচা, আমাকে চিনতে পারলেন। তিনি আমার উপর আচ্ছাদনের মত ঝুঁকে পড়লেন এবং আমাকে তাদের মার থেকে রক্ষা করলেন। তারপর তাদের বললেন, ”তোমাদের ধ্বংস হোক, এ তোমরা এ কি করছ? তোমরা কি গিফার গোত্রের একজন লোককে মেরে ফেলছ অথচ তোমাদের ব্যবসা ও বাহনগুলো গিফার গোত্রের উপর দিয়েই মক্কা থেকে বের হবে।” আব্বাসের এ কথায় তারা আমাকে ছেড়ে দিল।
এ ঘটনার পর আমি রাসুলুল্লাহ্, তাঁর উপর আল্লাহর শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক, এর কাছে ফিরে গেলাম। যখন তিনি আমার ক্ষতবিক্ষত অবস্থা দেখলেন তখন বললেন, ”আমি কি তোমাকে বলিনি মক্কার লোকদের সামনে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা না দেবার জন্য।” আমি বললাম, ”ইয়া রাসুলাল্লাহ্, এ কাজটি করার জন্য আমি মন থেকে চাইছিলাম এবং তা আমি পূরণ করেছি”।
”তোমার জাতির কাছে ফিরে যাও, আর তুমি যা দেখেছ ও যা শুনেছ তা তাদেরকে জানাও। তাদেরকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দাও। আল্লাহ্ হয়তো তোমার মাধ্যমেই তাদেরকে কল্যাণের দিকে নিয়ে আসবেন এবং তাদের মাধ্যমে তোমাকে পুরস্কৃত করবেন। আর যখন তুমি শুনবে যে আমি প্রকাশ্যে চলে এসেছি, তখন তুমি আমার কাছে চলে এসো।”
রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর এ আদেশের পর আমি আমার জাতির কাছে চলে এলাম। আমার পৌঁছানোর খবর পেয়ে আমার ভাই আমার কাছে ছুটে এল। ”আপনি কি করলেন সেখানে?”, সে আমাকে জিজ্ঞেস করল। আমি বললাম যে, আমি মুসলিম হয়েছি আর মুহাম্মাদ যে শিক্ষা দিচ্ছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। ”আমি আপনার ধর্ম আর মতের বিরুদ্ধে নই, আজ থেকে আমিও মুসলিম আর বিশ্বাসী হিসাবে ঘোষনা করলাম।”
দুই ভাই এরপর তাদের মায়ের কাছে গেল এবং মাকে ইসলামের দাওয়াত দিল। মা বললেন, ”তোমাদের দু ভাইয়ের বিশ্বাসের সাথে আমার কোন দ্বিমত নেই। আজ থেকে আমিও ইসলামে প্রবেশ করলাম।”
সেদিন থেকেই এ বিশ্বাসী মুসলিম পরিবারটি গিফার গোত্রের লোকদের অক্লান্তভাবে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চলল। ফলশ্র“তিতে গিফার গোত্রের অধিকাংশ লোক ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিল।
আবু জর রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) মদিনায় হিজরতের আগ পর্য়ন্ত ওয়াদান মরুভূমিতে তাঁর গোত্রে অবস্থান করতে লাগলেন। বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধের সময় পর্য়ন্ত এ গোত্রটি ওয়াদান মরুভূমিতে অবস্থান করতে লাগল। অবশেষে রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশে আবু জর এরপর মদিনায় চলে এলেন। আবু জর রাসুল (সাঃ) এর কাছে অনুমতি চাইলেন সর্বক্ষন তাঁর একান্ত সান্নিধ্যে থাকার জন্য এবং তাঁর ব্যক্তিগত কাজে লাগার জন্য। রাসুল (সাঃ) তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং তার সাহচার্য ও কাজকর্মে সবসময় সন্তুষ্ট ছিলেন। রাসুল (সাঃ) প্রয়ই আবু জরকে অন্যদের থেকে অগ্রাধিকার দিতেন এবং যখনই তার সাথে দেখা হত তিনি তার দিকে তাকিয়ে হাসতেন আর তাঁকে বেশ প্রফুল্ল দেখাত।
সময় বয়ে চলল এবং একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করলেন। আবু জর এরপর আর মদিনা থাকতে পারলেন না। প্রতিটি মুহূর্তে রাসুলের (সাঃ) শূন্যতা তাকে ভীষন আবেগপ্রবন করে তুলত। রাসুলের (সাঃ) যে অভিভাবকত্ব আবু জরকে ছায়ার মত আগলে রেখেছিল তার অভাব তাকে প্রতিটি সেকেন্ডে যেন বিদ্ধ করছিল। আবু জর মদিনা ত্যাগ করলেন এবং আবু বকর এবং উমার এর পুরো খিলাফতকাল তিনি সিরিয়ার মরুভূমিতে নিভৃতে কাটিয়ে দিলেন।
উসমান ইবন্ আফফান (রাঃ) এর খিলাফতকালে আবু জর দামাস্কাসে অবস্থান করছিলেন। দুনিয়ার প্রতি চিরকাল উদাসীন আবু জর লক্ষ্য করলেন মুসলিমরা পরকাল বাদ দিয়ে দুনিয়া এবং বিলাসিতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তিনি এতে অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে পড়লেন। উসমান (রাঃ) তাকে মদিনায় ডেকে পাঠালেন। মদিনায় এসেও আবু জর মুসলিম সমাজের বিলাসিতায় মজে যাবার চিত্রই দেখলেন। অবিশ্বাস্য রকম দৃঢ় ও সারাজীবন একই রকম দুনিয়াবিমুখ এ লোকটি মুসলিমদের এ পরিবর্তন সহজভাবে নিতে পারলেন না। এর ফলে শাসক খিলাফতের সাথে তাঁর দ্বন্দ্ব বাড়তে লাগল, এমনকি আবু জরের দৃঢ় দুনিয়া বিমুখতায় মুসলিম সমাজে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দেখা দিল। এহেন অবস্থায় খলিফা উসমান তাঁকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তাঁকে মদিনার কাছে নির্জন আল-রাবাতাহ্ মরুভূমিতে চলে যাবার জন্য অনুরোধ করলেন। আবু জর লোকালয় থেকে অনেক দূরে রাবাতাহ্য় চলে গেলেন এবং সেখানে প্রাণপ্রিয় রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ্ আঁকড়ে ধরে বাস করতে লাগলেন। মরুভূমিতে তাঁর বসবাসকালীন জীবনে একবার এক লোক তাঁর সাথে দেখা করতে এল। অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে সে লক্ষ্য করল আবু জরের বাড়ী প্রায় শূন্য, কোন সম্পদ বলতে সেখানে কিছু নেই। লোকটি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ”আপনার সম্পদ কোথায়?” তিনি উত্তর করলেন, ”পৃথিবীর পরের জীবনে আমার একটি বাড়ী আছে। আমার সব উত্তম সম্পদগুলো আমি সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছি।” লোকটি বুঝল আবু জর কি বুঝাতে চাচ্ছেন। ”কিন্তু যতদিন আপনি এ দুনিয়াতে আছেন, ততদিন আপনার কিছু সম্পদ থাকা উচিৎ”। আবু জর উত্তর করলেন, ”যিনি এ পৃথিবীর মালিক, তিনি তো আমাকে এ সম্পদের কাছে ছেড়ে দেবেন না”।
একবার সিরিয়ার আমীর দূত পাঠিয়ে আবু জরকে তাঁর প্রয়োজন মেটানোর জন্য তিনশো দীনার পাঠিয়ে দিল। আবু জর এই বলে আমীরের দেয়া দীনার ফেরত পাঠালেন যে, ”আমীর কি এ দীনারগুলো দেবার জন্য আমার চেয়ে বেশী চাহিদাসম্পন্ন ভৃত্য আর কাউকে খুঁজে পেলেন না?”
৩২ হিজরী। আবু জরের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়েছে। নির্জন মরুভূমিতে তিনি আর তাঁর স্ত্রী একা। রাবাতাহ্ ছিল এমন একটি যায়গা যেখান দিয়ে সাধারণত একেবারেই লোক চলাচল হত না, তার উপর সে সময়টা এমন ছিল যখন কোন বাণিজ্য কাফেলাও যাতায়াত করত না।। মৃত্যুপথযাত্রী আবু জরের অবস্থা দেখে তাঁর স্ত্রী ব্যাকুল হয়ে পড়লেন কোন সাহায্যের আশায়। স্ত্রীর এ অবস্থা দেখে আবু জর বললেন, ”চিন্তা করো না, আমি রাসুলাল্লাহ, তাঁর উপর আল্লাহর করুণা বর্ষিত হোক, কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে এখানকার একজনের মৃত্যু হবে নির্জন মরুভূমিতে। কিন্তু তার মৃত্যুর সময় মুমিনদের একটি দল সেখানে উপস্থিত হবে। আমি নিশ্চিত সে ব্যক্তিটিই আমি, কারণ সেদিন আমরা যারা সেখানে উপস্থিত ছিলাম তাদের সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন। কেবল আমিই বাকী। তুমি পথের দিকে খেয়াল রাখ। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল মিথ্যা বলেন নি।” আবু জর কিছুক্ষনের মধ্যেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। আবু জরের স্ত্রী একবার স্বামীর কাছে আরেকবার উঁচু টিলার উপর উঠে দূরে খেয়াল করতে লাগলেন। এ অসময়ে কে আসবে এই অপ্রচলিত পথে এই চিন্তায় তিনি অস্থির হয়ে পড়লেন। অবশেষে দূরে দেখা গেল ধুলোর ঝড় তুলে একদল লোক এদিকেই আসছে। কাফেলাটি এসে আবু জরকে অসহায় অবস্থায় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করল এ লোকটি কে? তাঁর স্ত্রী উত্তর করলেন, আবু জর। লোকেরা বলল, রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর সাহাবী আবু জর? তাঁর স্ত্রী বললেন, ”হ্যাঁ।” লোকেরা অত্যন্ত অস্থির হয়ে বলল, ”আমাদের জান কুরবান হোক”। তারা দ্রুত আবু জরের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করলেন। প্রখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ্ ইবন্ মাসউদ (রাঃ) তাঁর জানাজার সালাত পড়ান।
এমনিভাবে আবু জর ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেছেন দুনিয়াবিমুখ হয়ে কেবলমাত্র আল্লাহ্ আর তাঁর রাসুলের আনুগত্যের মাধ্যমে। একদিন যে লোকটি ওয়াদান ভ্যালীর আতঙ্ক আর ত্রাসের নাম ছিল, সে ব্যক্তিটিই একদিন নির্লোভ আর দুনিয়াবিমুখতার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। ঈমানের মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর অন্তরকে এমনই পরিবর্তন করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) কে তিনি এতই ভালবাসতেন যে তাঁর মৃত্যুর পর যখনই তিনি রাসুলের (সাঃ) কথা মনে করতেন, তখনই অঝোর ধারায় কাঁদতেন। অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যপার এই যে এই দুর্ধর্ষ মানুষটি সম্পর্কেই রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, ”আকাশের নীচে এবং পৃথিবীর উপর আবু জরের চেয়ে বিশ্বাসী ও সত্যবাদী আর কেউ নেই”।

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫

পবিত্র কোরআনের আলোকে পর্দার অপরিহার্যতা চতুর্থ প্রমাণ

আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَا جُنَاحَ عَلَيْهِنَّ فِي آَبَائِهِنَّ وَلَا أَبْنَائِهِنَّ وَلَا إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاءِ إِخْوَانِهِنَّ وَلَا أَبْنَاءِ أَخَوَاتِهِنَّ وَلَا نِسَائِهِنَّ وَلَا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ وَاتَّقِينَ اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدًا
নবীর স্ত্রীদের জন্য তাদের পিতাদের, তাদের পুত্রদের, তাদের ভাইদের, তাদের ভাইয়ের ছেলেদের, তাদের বোনের ছেলেদের, তাদের নারীদের ও তাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের বেলায় (হিজাব না করায়) কোন অপরাধ নেই। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ সকল কিছুর প্রত্যক্ষদর্শী। (সুরা আহযাব-৫৫)
ইবনে কাসীর (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন: আল্লাহ তাআলা মহিলাদেরকে গাইরে মাহরাম (ইসলামি শরিয়তে যাদের সাথে বিবাহ অনুমোদিত)-এর সাথে পর্দা করার নির্দেশ দানের পর এটিও বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, আত্মীয় মাহরামদের সাথে পর্দা করা ওয়াজিব নয়। যেমন, সূরা নূরের ৩১ নং আয়াতে বর্ণিত আছে:
وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ
“তারা যেন তাদের স্বামী ছাড়া অন্যের সামনে তাদের সাজ-সজ্জা প্রকাশ না করে”।
পরপুরুষের সামনে পর্দার অপরিহার্যতার উপর পবিত্র কোরআন থেকে এই চারটি দলীল পেশ করা হল শুধু প্রথম আয়াতেই এ বিষয়ের উপর পাঁচটি প্রণালীতে নাতিদীর্ঘ আলোচনা করা হয়েছে। (যা আমাদের জন্যে যথেষ্ট।)
দ্বিতীয়ত:
সুন্নাহর আলোকে পর্দার অপরিহার্যতা
প্রথম দলীল,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,
إذا خطب أحدكم امرأة فلا جناح عليه أن ينظر منها إذا كان إنما ينظر إليها لخطبة و إن كانت لا تعلم ( رواه أحمد)
“তোমাদের কেউ কোনো নারীর প্রতি বিয়ের প্রস্তাব প্রদানের পর তাকে দেখলে কোন গুণাহ হবে না”। (মুসানদে আহমাদ)
মাজমাউজ্জাওয়ায়েদ গ্রন্থে উক্ত হাদীসকে ত্রুটিমুক্ত ও বিশুদ্ধ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
উল্লেখিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম) বলেন, বিয়ের প্রস্তাব দাতা যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে পাত্রীকে দেখে, তাহলে গুণাহ হবে না। এতে প্রতীয়মান হলো যে, যারা বিয়ের উদ্যোগ না নিয়ে, এমনিই দেখে তারা গুনাহগার হবে। অনুরূপ যারা বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বিয়ের উদ্দেশ্যে নয় বরং মহিলার রূপ লাবণ্য দর্শনের স্বাদ উপভোগ করার উদ্দেশ্যে দেখে থাকে, তারাও পাপাচারীদের দলভুক্ত হবে।
প্রশ্ন হতে পারে, হাদীসে মহিলার কোন অঙ্গটি দর্শনীয় তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। বক্ষদেশ, হাত, পা ইত্যাদি যে কোনো একটি অঙ্গের দর্শনওতো উদ্দেশ্য হতে পারে।
উত্তর: সৌন্দর্য ও রূপ উপলব্ধিকারী প্রস্তাব দাতার পক্ষে পাত্রীর চেহারার সৌন্দর্য দেখাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। কারণ, চেহারাই হল, নারী সৌন্দর্যের প্রতীক। অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সৌন্দর্য অন্বেষনকারী প্রস্তাবদাতা নারীর চেহারাই দেখে থাকে, এতে কোন সন্দেহ নেই। (নারীর দর্শনীয় অঙ্গটি চেহারাই হয়ে থাকে)
২য় দলীল,
রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদেরকে ঈদগাহে ঈদের নামায আদায় করার আদেশ প্রদান করলে জনৈকা নারী বলে উঠলেন। হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের করো কারো পরিধান করার মত চাদর-কাপড় নেই (আমরা কিভাবে জনসমাবেশে ঈদের নামায আদায় করতে যাব।) প্রত্যুত্তেরে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন যার চাদর নাই তাকে যেন অন্য বোন পরার জন্যে চাদর দিয়ে দেয়। (বুখারী-মুসলিম)
উক্ত হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত হল যে, সাহাবায়ে কেরামের স্ত্রীরা কোন অবস্থাতেই চাদর পরিধান না করে গৃহ থেকে বের হতেন না, এমনকি চাদর ব্যতীত ঘর হতে বের হওয়াকে অসম্ভব মনে করতেন। এ কারণে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দানের পরও তারা চাদর ছাড়া ঈদগাহে যাওয়াকে সমীচীন মনে করেননি। তাইতো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে এরশাদ করেন, সে যেন তার অন্য বোন হতে ধার নিয়ে হলেও চাদর পরিধান করে ঘর থেকে বের হয়। লক্ষনীয় যে, রাসূল বিনা চাদরে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করেননি। অথচ ঈদ গাহে গিয়ে নামায আদায় করা নারী পুরুষ উভয়ের জন্য ইসলামি শরিয়ত সম্মত বিধান। যখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) শরিয়ত সম্মত কাজের জন্যেও চাদর ব্যতীত (পুরাপুরী পর্দা করা ব্যতীত) ঈদগাহে যাওয়ার অনুমতি প্রদান করেননি, তাহলে অনৈসলামিক, অহেতুক, শরিয়ত অসম্মত কাজে চাদর ব্যতীত বেপর্দায় যাওয়ার অনুমতি কিভাবে দেওয়া যেতে পারে? নি:সন্দেহে তা অবৈধ হবে। বরং নারীর পক্ষে বাজারে মার্কেটে চলাফেরা করা এবং পরপুরুষের সাথে খোলা-মেলা ভাবে ঘুরে বেড়ানো অহেতুক কাজ যা প্রকৃত পক্ষে তাদের জন্যে অকল্যাণকর।
বস্তুত: আয়াতে ও হাদীসে চাদর পরিধান করার নির্দেশ এ কথাই প্রমাণ করে যে, নারীর জন্যে মুখমন্ডলসহ পরিপূর্ণ পর্দা করা 

পবিত্র কোরআনের আলোকে পর্দার অপরিহার্যতা তৃতীয় প্রমাণ

                                                   আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا
হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব-৫৯)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. বলেন, আল্লাহ তাআলা মুমিনদের মহিলাদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে যেন জিলবাব তথা চাদর দ্বারা মাথার উপর দিক থেকে নিজেদের মুখমন্ডল ঢেকে বের হয়, তবে একটি চোখ খোলা রাখবে। সাহাবির তাফসীর নি:সন্দেহে শরয়ি দলীল । এমনকি কোনো কোনো আলেম সাহাবির তাফসীরকে হাদীসে মারুফের (উচ্চ ও ক্রটিমুক্ত হাদীস) সমতুল্য মনে করেন। সাহাবির তাফসীরে রাস্তা দেখার জন্যেই একটি চোখ খোলা রাখার অনুমতি দেয়া হয়েছে। নিষ্প্রয়োজনে চক্ষু উম্মুক্ত রাখা বৈধ হবে না।
আরবি পরিভাষায় জিলবাব বলতে বড় চাদরকে বুঝানো হয়, যা ওড়নার উপর বোরকার পরিবর্তে পরিধান করা হয়।
নবী পত্নী উম্মে সালামা (রা:) বলেন, আলোচ্য আয়াত নাযিল হওয়ার পর থেকে আনসারি মহিলাগণ (মদীনা শরীফের স্থায়ী অধিবাসিনী) কালো চাদর পরে অতি ধীরস্থিরতার সাথে ঘর হতে বের হতেন। মনে হত যেন তাদের মাথার উপর কাক বসে আছে। সাহাবি আলী (রা:) এর শিষ্য আবু উবাইদাহ আস-সালমানী, কাতাদাহ প্রমুখ বলেন, মুমিন লোকদের স্ত্রীগণ মাথার উপর থেকে চাদর এভাবে পরিধান করত, চলার পথে রাস্তা দেখার জন্যে চক্ষু ব্যতীত শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রকাশ পেত না।

পবিত্র কোরআনের আলোকে পর্দার অপরিহার্যতা দ্বিতীয় প্রমাণ

                                             
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَالْقَوَاعِدُ مِنَ النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا يَرْجُونَ نِكَاحًا فَلَيْسَ عَلَيْهِنَّ جُنَاحٌ أَنْ يَضَعْنَ ثِيَابَهُنَّ غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ وَأَنْ يَسْتَعْفِفْنَ خَيْرٌ لَهُنَّ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“বৃদ্ধা নারী যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে, তাদের জন্য দোষ নেই।.... তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা”। (সূরা নূর-৬০)
আলোচ্য আয়াতে পর্দার অপরিহার্যতা এভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, আল্লাহ বলেন বৃদ্ধনারী বার্ধক্যের কারণে) যার প্রতি কেউ আকর্ষণ বোধ করে না, তারা সৌন্দর্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখতে পারে। এখানে বস্ত্র খুলে রাখা মানে উলঙ্গ বা নিরাবরণ হওয়া নয়, বরং যেসব বস্ত্র দ্বারা হাত, মুখমন্ডল ইত্যাদি আবৃত রাখা হয়- যথা- চাদর, বোরকা ইত্যাদি। এ আয়াতে বস্ত্র খুলে রাখার অনুমতি শুধুমাত্র বৃদ্ধা নারীদের জন্যেই নির্দিষ্ট। যুবতী নারীর মুখ-মন্ডল বিপদ সংকুলস্থান হওয়ায় তা ঢেকে রাখা জরুরি। যদি বস্ত্র খুলে রাখার হুকুম (নির্দেশ) বৃদ্ধা, যুবতী, তরুণী সকলের জন্যে অভিন্ন হত, তা হলে বৃদ্ধাকে যুবতী থেকে পৃথক করে উল্লেখ করার কোনো প্রয়োজন ছিল না।
আয়াতে বলা হয়েছে:
غَيْرَ مُتَبَرِّجَاتٍ بِزِينَةٍ
অর্থাৎ যদি তারা তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, বস্ত্র খুলে রাখে, তবে তাদের কোনো দোষ নেই।
কিন্তু যুবতী ও তরুণী নিজ নিজ লাবণ্যময় মুখমন্ডল প্রদর্শন করে পুরুষের সামনে নেচে বেড়ানোর উদ্দেশ্য কেবলমাত্র পরপুরুষকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করাই হয়ে থাকে। এ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে তা কদাচিত হয়ে থাকে যার উপর কোন হুকুম হয় না। এতে প্রমাণিত হল যে, বিবাহের যোগ্য যুবতী তরুণীর জন্যে মুখমন্ডল সহকারে পরিপূর্ণ পর্দা করা অপরিহার্য।

প্রথমত: পবিত্র কোরআনের আলোকে পর্দার অপরিহার্যতা


                                                          প্রথম প্রমাণ:
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آَبَائِهِنَّ أَوْ آَبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ ﴿31﴾
আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আন-নূর:৩১)
উদ্ধৃত এই আয়াত থেকে নারীর জন্য পর্দার ‌অপরিহার্যতা -নিম্ন প্রণালীতে- প্রতিভাত হয়।
(১) আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে অবৈধ ও হারাম পন্থায় প্রবৃত্তি চরিতার্থ করা এবং ঐ সমস্ত ভূমিকা থেকে দূরে থেকে সতীত্ব সংরক্ষণের নিদের্শ দিয়ছেন, যা পরিণতিতে ব্যভিচার সংঘটিত হওয়ার সকায়ক হয়।
সর্ব শ্রেণীর লোকই জানে যে, নারীর জন্য চেহারা ঢাকা তার সতীত্ব সংরক্ষণের অন্যতম মাধ্যম। কারণ নারীর চেহারা অনাবৃত রাখা হলে, পরপুরুষেরা তার দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকায় এবং তার অঙ্গশ্রী দেখে চোখের দ্বারা যৌনানন্দ উপভোগ করার সুযোগ পায়। পরিণামে সেই নারীর সাথে বাক্যালাপ, পত্রালাপ ও সাক্ষাত ইত্যাদি অবৈধ পন্থা অবলম্বনের কারণ হয়ে দাড়ায়।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
العينان تزنيان و زناهما النظر
(মানুষের) চক্ষু দুটিও যেনা করে, আর চক্ষুদ্বয়ের যেনা হল দৃষ্টিপাত করা।

হাম্বলী মাজহাব অবলম্বনকারী

হাম্বলী মাজহাব অবলম্বনকারী পরবর্তী ফেকাহ শাস্ত্রবিদগণের দৃষ্টিতে পর্দার অপরিহার্যতা:
আল-মুন্তাহা নামক গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে,পুরুষত্বহীন (যার অন্ডকোষ ফেলে দেয়া হয়েছে) ও লিঙ্গবিহীন পুরুষের জন্য পর নারীর প্রতি দৃষ্টিপাত করা হারাম।আল-ইক্বনা নামক গ্রন্থে উল্লেখ আছে যে, পুরুষত্বহীন, নপুংসক পুরুষের জন্যে নারী দর্শন হারাম। এই কিতাবের অন্যত্র উল্লেখ আছে, স্বাধীন পর নারীর প্রতি ইচ্ছাকৃত দৃষ্টিপাত করা এমনকি তার চুলের প্রতি নজর করাও হারাম।আদ-দলীল গ্রন্থের মূল পাঠে উল্লেখ আছে,দৃষ্টিপাত আট প্রকার। প্রথম প্রকার হল: সাবালক যুবকের পক্ষে (যদিও সে লিঙ্গ কর্তিত হয়) স্বাধীন প্রাপ্তবয়স্কা নারীর প্রতি (বিনা প্রয়োজনে) তাকানো হারাম। এমনকি রমনীর মাথার কৃত্রিম চুলের প্রতিও তাকানো জায়েয নয়।শাফেয়ী মতাবলম্বী ফেকাহ শাস্ত্রবিদগণের পর্দা সম্পর্কিত অভিমত।নারীর প্রতি কামুক দৃষ্টিতে তাকানো হারাম অনুরূপভাবে যে দৃষ্টিতে ফেতনার আশঙ্কা আছে সেটিও হারাম।আর দৃষ্টি যদি কামোভাব সহকারে না হয় এবং এতে ফেৎনা সৃষ্টির আশংকাও না থাকে এ ক্ষেত্রে তারা দুইটি অভিমত পেশ করেন। শারহুল ইক্বনা গ্রন্থকার অভিমতদ্বয় উল্লেখ করে বলেন, ত্রুটিমুক্ত ও বিশুদ্ধ মতটি হল: এ ধরনের দৃষ্টিপাত হারাম। তাদের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ আল মিনহাজে উল্লেখ আছে যে, রমণীর পক্ষে মুখমন্ডল খোলা রেখে বের হওয়া মুসলিমদের ঐক্যমতে নিষিদ্ধ। তাতে আরও বলা হয়েছে, মুসলিম শাসকবৃন্দের ইসলামি ও ঈমানি দায়িত্ব হচ্ছে, মহিলা সম্প্রদায়ের প্রতি মুখমন্ডল খোলা রেখে বের হওয়ার উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। কারণ, ফেৎনা সৃষ্টি ও যৌন উত্তেজনার মূলে দর্শনই দায়ী। যেমন, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন:
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ
আর তুমি মুমিনদেরকে বলে দাও তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে। (সূরা নূর-৩০)
প্রজ্ঞাভিত্তিক ইসলামি শরিয়তের বিধি-বিধানের লক্ষ্য হচ্ছে ফিৎনা-ফাসাদ, অনাচার, ব্যভিচারসহ যাবতীয় অবাধ্যতার ছিদ্রপথ চিরতরে বন্ধ করে দেয়া।মুনতাকাল আখবার গ্রন্থের ব্যাখ্যাগ্রন্থ নাইলুল আওতারে উল্লেখ আছে, নারীর জন্যে মুখমন্ডল খোলা রেখে বেপর্দা হয়ে বের হওয়া বিশেষত: দুষ্ট-দুরাচার-পাপীলোকদের সম্মুখে ইসলামপন্থীদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে হারাম।
• মুখমন্ডল খোলা রাখার মতাবলম্বীদের কতিপয় যুক্তি:
আমার জানামতে যারা নারীর হাত ও মুখমন্ডলকে ইসলামি পর্দা বহিভূর্ত মনে করে, এবং তা অনাবৃত রাখা এবং তার প্রতি পরপুরুষের দৃষ্টিপাত করা জায়েয বলে মত পোষণ করেন, পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক তাদের কোনো দলীল নেই। হ্যাঁ কোরআন ও সুন্নাহ থেকে নিম্নোক্ত প্র্রমাণাদি পেশ করতে পারেন।
(১) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا
আর তারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। (সূরা নূর: ৩১)
কারণ, সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা:) ‌‍‍‌মা জাহারা মিনহা (যা সাধারণত: প্রকাশ হয়ে পড়ে) আয়াতের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, এখানে নারীর হাত, আংটি এবং মুখমন্ডল বুঝানো হয়েছে। (কেননা কোনো নারী প্রয়োজন বশত: বাইরে যেতে বাধ্য হলে চলা ফেরা ও লেন-দেনের সময় মুখমন্ডল ও হাত আবৃত রাখা খুবই কষ্টকর হয়)। এ তাফসীর ইমাম আমাশ সাঈদ বিন যুবাইরের মধ্যস্থতায় আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. হতে বর্ণনা করেছেন। আর সাহাবির তাফসীর শরিয়তের বিধান সাব্যস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে দলীল হিসাবে গৃহীত।
(২) ইমাম আবু-দাউদ তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সুনানে আবু-দাউদ-এ উম্মত জননী আয়েশা (রা.) এর বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, একদা আবু-বকর (রা.) তনয়া আসমা রা: পাতলা কাপড় পরিধান করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সমীপে উপস্থিত হলে নবীজী চেহারা মুবারক অপর দিকে ফিরিয়ে হাত ও মুখমন্ডলের প্রতি ইংগিত করে আসমাকে বললেন, হে আসমা! মেয়ে মানুষের প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর তার মুখমন্ডল ও হাত ছাড়া শরীরের অন্য কোনো অংশই দৃষ্টি গোচর হওয়া উচিত নয়।
(৩) বুখারি শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণনা করেন, বিদায় হজের সময় তার ভ্রাতা ফজল বিন আব্বাস রা: রাসূলের সাথে সওয়ারীর পিছনে উপবিষ্ট ছিলেন, ইতিমধ্যে খুসআম গোত্রের জনৈকা মহিলা রাসূলের সমীপে উপস্থিত হলে ফজল মহিলার প্রতি তাকাচ্ছিলেন এবং মহিলাও ফজলের প্রতি দৃষ্টি প্রদান করছিল, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজল ইবনে আব্বাসের চেহারা অন্য দিকে ফিরিয়ে দেন। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, মহিলাটির মূখমন্ডল খোলা ছিল।
(৪) সহীহ বুখারি ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে জাবের (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক লোকদের নিয়ে ঈদের নামাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজ শেষ করে লোকদেরকে আখেরাত সংক

জান্নাতী কারা ???

চৌদ্দশত বছর ধরে কোটি কোটি মানুষ মাযহাব অনুসরণ করে আসছে, তারা সবাই কি ভুলের মাঝে ছিল ? সবাই কি জাহান্নামী ? আর ইংরেজদের এই দাড় করানো আহলে হাদীস, ইংরেজদের চাটুকার, আর তাদের পেনশনভোগী, তাদের ভক্তি আর প্রশংসায় গদগদ এই আহলে হাদীসের সামান্য কিছু লোকই কেবল জান্নাতী ? তাহলে তারা আল্লাহর থেকে জান্নাতের ঠিকাদারী নিয়ে রেখেছে ? কখ্যনোও নয় । আল্লাহর জান্নাত আল্লাহ তার সকল মুমিন ও সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য বানিয়ে রেখেছেন । হাদীস শরীফে কাওকে কাফির বলার ব্যাপারে খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে । এমনকি বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তিকে যদি কাফির বলা হয়, আর তার মাঝে কুফূরীর কোন আলামত না থাকে, তাহলে ওই কথাটা যে বলবে, তার উপরেই ঘুরে এসে পতিত হবে । অর্থাৎ সে নিজেই কাফির বলে গন্য হবে । ফতোয়ার কিতাবে বলা হয়েছে, কারো কোন বিষয়ে যদি ৯৯টি কুফূরীর দিক পাওয়া যায়, আর একটা মাত্র ঈমানের দিক পাওয়া যায় । তাহলে তার ঈমানের দিকের প্রতি লক্ষ্য করে তার প্রতি ভাল ধারণা পোষন করতে হবে । তাথাপি তাকে কাফির বলা জায়েয হবে না । অথচ লক্ষ্য করুন এই লা-মাযহাবীদের দিকে । এরা সারা দুনিয়ার মুসলমানকে কাফির বলার জন্য উৎসুক হয়ে থাকে । তাদের জনৈক মুফতী যিনি নাকি লাখ লাখ হাদীস মুখস্থ আছে বলে দাবী করেন, তিনি একদিন আহলে হাদীসের এক সভায় বললেনঃ হানাফীরা সব কাফির । কিয়ামতের দিন ৭৩টি দল হবে, তন্মধ্যে ৭২টি দল জাহান্নামে যাবে । আর এক দল যাবে জান্নাতে । সে জান্নাতী দল হলাম আমরা আহলে হাদীসগন । অর্থাৎ তার দৃষ্টিতে চার মাযহাবের অনুসারী দেড়শ কোটি মুসলমান সকলেই কাফির ও জাহান্নামী । একজন মুফতীর পক্ষে এ ধরনের ফতোয়া প্রদান করা সত্যিই বিস্ময়ের ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই নয় । আরো শ্মরণীয় যে, তিনি এখানে নিজেকে দোষ মুক্ত রাখার জন্য গুনিয়াতুত্তালিবীন নামক কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, যে কিতাবে তাহরীফ করা হয়েছে । তার কাছে আমার প্রশ্ন যে, গুনিয়াতুত্তালিবীন কি কোন ফতোয়ার কিতাব ? নাকি কোন হাদীসের কিতাব ?
আজ দু’শ বছর যাবত তারা এই উপমহাদেশে ফেতনা সৃষ্টি করে রেখেছে । নানাভাবে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছে । আমাদের উলামায়ে কেরাম তাদের মুকাবেলা করেছেন । কিন্তু কখনো কেও তাদেরকে কাফির বা জাহান্নামী বলেন নি । অথচ তারা কথায় কথায় মাযহাবপন্থিগনকে কাফির বলে ফতোয়া ঝাড়ে । সকল মাযহাবপন্থিগনকে কাফির বলে ফতোয়া দেয়াটাই তাদের ভ্রান্তি ও গোমরাহীর বড় প্রমান ।

হাদীসের আলোকে লা-মাযহাবীদের অবস্থানঃ-

এই দলটি যে ভ্রান্ত ও গোমরাহ , তা বুঝে আসে কয়েকটি হাদীস দ্বারা । হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে- হযরত আনাস রাঃ বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি এরশাদ করেন, আমার উম্মত কখনো গোমরাহীর উপর একমত হবে না । সুতরাং যখন তোমরা মতবিরোধ দেখো তখন তোমরা বড় জামাতের অনুসরণ কর । (ইবনে মাজাহ ২৮৩) মিশকাত শরীফে এই হাদীসের দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে- কেননা যে বড় জামাত থেকে পৃথক হয়ে যাবে, তাকে পৃথক ভাবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে । (মিশকাত ১/৩০) এর মানে হল- যে মতের উপর বেশির ভাগ মুসলমান প্রতিষ্ঠিত, তোমরা সেই মতের অনুসরণ কর । সেই মত থেকে পৃথক হয়ে দাঁড়াবে না । এখন বিশ্বের দেড়শ কোটি মুসলমানের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, হাতে গোনা কিছু লোক ছাড়া বাকী সবাই মুকাল্লিদ তথা চার মাযহাবের মধ্য থেকে কারো না কারো অনুসারী । আর রুটির মধ্যে লবনের মতো অলপ কয়েক জন হল লা-মাযিহাবী । অন্য হাদীসে এরশাদ হয়েছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চই আল্লাহ পাক আমার সকল উম্মতকে গোমরাহীর পথে একতাবদ্ধ করবেন না । মুসলমানদের সম্মিলিত দলের উপর আল্লাহ পাকের (সাহায্যের) হাত রয়েছে । সুতরাং যে পৃথক হয়ে গেল, সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে । (তিরমিযী ২/৩৯)
এখন যদি আহলে হাদীসের বিবেচনা অনুযায়ী যদি সকল মুকাল্লিদরা গোমরাহ আর জাহান্নামী হয় আর তারা হাতে গোনা কয়েকজন জান্নাতের অধিবাসী হয়, তাহলে এই ছহী হাদীসের ব্যাখ্যা কী হবে ? এটা তো সিহাহ সিত্তাহর হাদীস, যা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । বুঝা গে, সমস্ত উম্মত যে কথার উপর একমত, সেটাই ঠিক ।
আরো একটি হাদীস লক্ষ্যনীয়, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চই শয়তান মানুষের জন্য নেকড়ে স্বরূপ, যেমন নাকি নেকড়ে দলছুট হয়ে যাওয়া বা দূরে সরে যাওয়া বকরীকে নিয়ে পালায় ( অনুরূপ ভাবে যে মানুষ জামাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, শয়তানও তাকে গোমরাহ করে দেয় ) সুতরাং তোমরা জামাতকে আকড়ে ধর । (আহমাদ) অর্থাৎ দলছুট বকরীর উপর নেকড়ে যেমন স্বাচ্ছন্দে হামলা চালায়, অনুরূপভাবে শয়তানও সেই ব্যক্তির উপর সাওয়ার হয়ে যায়- যে যে উলামায়ে কেরামের জামাত থেকে পৃথক হয়ে নতুন কোন মতবাদ আবিষ্কার করে ।

মাযহাব পন্থিরাই সঠিক পথে আছেঃ-

হযরত আনাস রাঃ বলেন, আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি এরশাদ করেন, আমার উম্মত কখনো গোমরাহীর উপর একমত হবে না । সুতরাং যখন তোমরা মতবিরোধ দেখো তখন তোমরা বড় জামাতের অনুসরণ কর । (ইবনে মাজাহ ২৮৩)
মিশকাত শরীফে এই হাদীসের দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে- কেননা যে বড় জামাত থেকে পৃথক হয়ে যাবে, তাকে পৃথক ভাবে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে । (মিশকাত ১/৩০) 
অন্য হাদীসে এরশাদ হয়েছে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চই আল্লাহ পাক আমার সকল উম্মতকে গোমরাহীর পথে একতাবদ্ধ করবেন না । মুসলমানদের সম্মিলিত দলের উপর আল্লাহ পাকের (সাহায্যের) হাত রয়েছে । সুতরাং যে পৃথক হয়ে গেল, সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে । (তিরমিযী ২/৩৯)
এসব হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় যে, বিশ্বের শত কোটি মুসলমান যে তাকলিদের উপর রয়েছে, তা সঠিক । আর তাকলিদ জরুরী নয় বরং তাকলিদ শিরক বলে যারা নতুন মতবাদ আবিষ্কার করছে, তারা বৃহৎ দল বহির্ভূত । শয়তান তাদের উপর সাওয়ার হয়ে গেছে । তারা নিজেদেরকে আহলে হাদীস বলে দাবী করছে, অথচ তারা সিহাহ সিত্তাহর ওই সব সহীহ হাদীস অস্বীকার করে হাদীস অস্বীকারকারীতে পরিণত হয়েছে । আর তা হচ্ছে কুফূরী ।
যারা হকের উপরে আছে, তারা নিজেদের দল ভারী করার জন্য কখনো প্রলোভনের আশ্রয় নেয় না । বরং তারা হক কথা জনগনের সামনে তুলে ধরে আর মানুষ নিঃশংকচে তা কবু করে, পক্ষান্তরে এই আহলে হাদীসের সম্প্রদায় নিজেদের দল ভারী করার জন্য বিভিন্ন টোপ ফেলছে । টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করছে । বিনা পয়সায় বই-পুস্তক, কাপড়-চোপড় বিলি করছে । রমযান মাসে রোজাদারদের ইফতার পার্টির আয়োজন করে দলে লোক ভিড়াচ্ছে । যে সমস্ত হানাফী বা মাযহাবপন্থি আহলে হাদীস বা লা-মাযহাবী হয়ে যাচ্ছে, তারা মূলতঃ এই প্রলোভনের কারনেই ঝুকছে । নইলে তারা এমন কোন বিদ্বান নয় যে, কোরআন-হাদীস গভীর ভাবে অধ্যায়ন করে আহলে হাদীসকে হক মনে করে সেদিকে ঝুকে পড়েছে । বরং তাদের অধিকাংশই এমন গন্ড মূর্খ যে, সূরায়ে ফাতিহা পর্যন্ত শুদ্ধ করে পড়তে পারে না । একটা আরবী হাদীস তার সামনে খুলে দিলে এক লাইনও যের যবর দিয়ে অড়তে পারবে না । ওরাই আবার কথায় কথায় বাঙ্গা বোখারী শরীফ খুলে দেখায় । অথচ কোরআন, কিতাব, হাদীস ইত্যাদি তো উস্তাদের কাছে পড়ে বুঝতে হয় । একা একা পড়ে পন্ডিত হওয়া যায় না । সেভাবে ঠুনকো পন্ডিত হতে চাইলে গোমরাহ হয়ে যেতে হয় । সাহাবায়ে কেরামকে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে শিক্ষা দিয়েছেন । তাদের নিকট থেকে তাবেঈনগণ শিখেছেন । তাদের নিকট থেকে তাবে তাবেঈনগণ শিখেছেন । এভাবে সীনা হতে সীনায় ইলম চিলে এসেছে । এখন একটা বাংলা বুখারী পড়ে যদি আমাদের দেশের লাল মিয়া আর কালা মিয়া আহলে হাদীস হয়ে যায়, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই । কেননা, কেয়ামত নিকটবর্তী, এটা কেয়ামতেরই আআমত ।

আহলে হাদীস বা লা-মাযহাবীদের প্রতি কয়েকটি প্রশ্নঃ-


১। কোরআন-হাদীসের পরে সবচেয়ে বিশুদ্ধ কিতাব বুখারী শরীফ, এটা আল্লাহর বাণী না রাসূলের বাণী ?
২। বুখারী শরীফে কি সর্বদা সীনার উপরে হাত বাঁধার হাদীস আছে । থাকলে হাওয়ালা দিন ।
৩। বুখারী শরীফে কি গরু-মহিষের দুধ খাওয়ার কথা আছে ? যদি না থাকে, তো আপনারা খান কেন ?
৪। আহলে হাদীসরা বলেন, আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত হাদীস (১/২২৯)দ্বারা প্রমানিত যে, তারাবীহ-তাহাজ্জুদ একই      নামায । কিন্তু ইমাম বুখারী রঃ রমযান মাসে তারাবীর পরে তাহাজ্জুদও পড়তেন । তিনি কি হাদীসের বিরোধিতা করতেন 
৫। অশিক্ষিত বা জেনারেল শিক্ষিত সকলের জন্যই প্রত্যেক মাসালার পরিপূর্ণ দলীল সম্পর্কে অবগত হওয়া ফরজ না ওয়াজিব ? ছহী হাদীসের আলোকে জওয়াব দিন ।
৬। কোন কোন লা-মাযহাবী বলে শয়তান কেয়াস করেছিল, যে রকম মুজতাহদীন করে । তাহলে কোরআন-হাদীদের আলকে বলুন, শয়তান কি বাস্তবেই মুজতাহিদ ছিল ? 
বিঃ দ্রঃ যদি কোন ব্যক্তি কোরআন-হাদীসের আলোকে এ প্রশ্নগুলোর কোন গ্রহণযোগ্য কোন উত্তর দিতে পারে, তাহলে আমিও আহলে হাদীসে যোগদান করব । আর যদি না পারে তাহলে কী হবে, এ বিচার আপনাদের হাতে ।

বিখ্যাত মুহাদ্দিসদের মাযহাবঃ তথা কে কোন মাযহাবের অনুসারী ছিলেন ?

এ চার মাযহাব যে হক ও এ চার মাযহাবের যে কোন এক মাযহাব মানা যে জরুরী, সে বিষয়ে ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে । এখম আমরা এ ব্যাপারে আমাদের দাবীকে আরো জোড়ালো করার উদ্দেশ্যে বিশ্বের খ্যাতনামা ও প্রসিদ্ধ কয়েকজন মুহাদ্দিসের নাম উল্লেখ করছি ।
১. ইমাম বুখারী র. ওফাত ২৫৬ হিঃ । অনেক মুহাদ্দিসের মত এই যে, তিনি শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন । আলামা কাসতাল্লানী র. এর মতও তাই । অবশ্য অনেকের মতে তিনি নিজেই মুজতাহিদ ছিলেন ।
২. ইমাম মুসলিম র. ওফাত ২৬১ হিঃ । অধিকাংশের মতে তিনি মালেকী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন ।
৩. ইমাম আবু দাউদ র. ওফাত ২৭৫ হিঃ । নির্ভরযোগ্য মত অনুসারে তিনি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন ।
৪. ইমাম নাসায়ী র. ওফাত ৩০৩ হিঃ । নির্ভরযোগ্য মত এটাই যে, তিনিও হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন ।
৫. ইমাম তিরমিজি র. ওফাত ২৭৯ হিঃ । তিনি শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন ।
৬. ইমাম ইবনে মাজা র. ওফাত ২৭৩ হিঃ । অধিকাংশ আলেমের মতে তিনি শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন ।
৭. ইমাম ত্বহাবী র. ওফাত ৩২১ হিঃ । তিনি হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন ।

প্রশ্নঃ- যখন যে কোন নির্ভরযোগ্য ইমামের তাকলিদ করলেই চলে,

প্রশ্নঃ- যখন যে কোন নির্ভরযোগ্য ইমামের তাকলিদ করলেই চলে, তাহলে আমরা নির্ধারিত ভাবে চারজন ইমাম তথা- ইমাম আবু হানীফা রঃ, ইমাম শাফেয়ী রঃ, ইমাম মালেক রঃ ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রঃ অনুসরণ করব কেন ? উম্মাতে মুহাম্মাদীয়ার মাঝে তো আরো মুজতাহিদ আছেন । যেমন- হযরত সুফিয়ান ছাওরী রঃ, ইমাম আউযায়ী রঃ, আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রঃ, ইমাম বুখারি রঃ প্রমুখ । তাদের তাকলিদ করা হয় না কেন ? 
উত্তরঃ- আসুন, এর উত্তরে আমরা শুনি প্রখ্যাত মনীষী আল্লামা আঃ রউফ মুনাভী রঃ এর মুখের বানী ।
তিনি লিখেছেন =
ويجب علينا ان نعتقد ان الاءمة الاربعة والسفيانين والاوزاعي وداود الظاهري واسحاق بن راهوية و ساءرالاءمة هدى.....
وعلى غير المجتهد ان يقلد مذهبا معينا... لكن لا يجوز تقليد الصحابة وكذا التابعين كما قاله امام الحرامين من كل من لم يدون مذهبه فيمتنع تقليد غير الاربعة فى القضاء والافتاء لان المذاهب الاربعة انتشرت وتحررت حتى ظهر تقييد مطلقها وتخصيص عامها بخلاف غيرهم لانقراض اتباعهم وقد نقل الامام الرازى اجماع المحققين على منع العوام من تقليد اعيان الصحابة واكابرهم-
অর্থাৎ -আমাদের আকীদা ও বিশ্বাস হল যে, চার ইমাম রঃ ও সুফিয়ানদ্বয় তথা সুফিয়ান ছাওরী ও সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ রঃ, ইমাম আউযায়ী রঃ, দাউদ যাহেরী রঃ, ইসহাক বিন রাহবাই রঃ প্রমুখ সকল ইমাম আহলে হক্বের অন্তর্ভুক্ত । কাজেই যে ব্যক্তির ইজতিহাদের যোগ্যতা নেই তার কর্তব্য হল যে কোন এক মাযহাবের তাকলিদ করা । অবশ্য ইমামুল হারামাইন রঃ এর ভাষ্য মতে ছাহাবা রাঃ, তাবেইন রঃ সহ এমন কোন মুজতাহিদের তাকলিদ করা যাবে না, যাদের মাযহাব সুবিন্যস্ত ভাবে সংকলিত হয়ে আমাদের সামনে নেই । মুলতঃ এ জন্যই ফয়সালা ও ফাতওয়া প্রদানের ক্ষেত্রে মাযহাব চতুষ্টয় ছাড়া ভিন্ন অন্য কারো তাকলিদ করা জায়েয নেই । যেহেতু বর্তমানে শুধু চার মাযহাবই সুবিন্যস্ত ও গ্রন্থবদ্ধ ভাবে ইসলামী দুনিয়ায় সর্বত্র বিরাজমান । পক্ষান্তরে অন্যান্য মাযহাবের অনুসারীদের অস্তিত্ব পর্যন্ত আজ দুনিয়ার কোথাও খুজে পাওয়া যায় না । তাছাড়া বিশ্ব বিখ্যাত মুসলিম মনীষী ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রঃ লিখেছেনঃ-মুহাক্কিকগন এ বিষয়ে একমন যে, সাধারণ মানুষকে ছাহাবীদের রাঃ সরাসরি তাকলিদ থেকে বিরত রাখা উচিৎ ।

এক আহলে হক্ব ও আহলে হাদীসের মাঝে মুনাযারা =

হাত উত্তোলন না করলে নামায বাতিল হওয়া সম্পর্কে । 
হাদীস ও ফিকাহ সংরক্ষণ কমিটির এক যুবক আহলে হাদীসের এক শাইখুল হাদীসের নিকট গিয়ে বলল, হুজুর ! হাত উত্তোলন ব্যতীত নামায আদায় করলে তার হুকুম কী ? 
শাইখুল হাদীস সাহেব বললেন, নামায বাতিল হয়ে যাবে ।
যুবক বলল, হাত উত্তোলণ না লরলে যদি নামায বাতিল হয়ে যায়, তাহলে সমস্ত আহলে হাদীসের নামায বাতিল হয়ে যাবে ।
শাইখুল হাদীস সাহেব বললেন, কিভাবে ?
যুবক বলল, আহলে হাদীসের বরেণ্য মুহাদ্দিস নাছিরুদ্দীন আলবানী তার ‘সিফাতুস সাআত’ নামক কিতাবের ১২১, ১৩৩, ১৩৫, ও ১৩৬ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, সিসদার পূর্বে ও পরে হাত উত্তোলণ হাদীস দ্বারা প্রমানিত ।
এবং ১২১ নং পৃষ্ঠার টীকায় তিনি লিখেছেন যে, সিসদার সময় হাত উত্তোলণের হাদীস দশজন সাহাবী দ্বারা বর্ণিত । বুঝা গেল, আলবানী সাহেবের তাহকিক অনুযায়ী সিসদার পূর্বে ও পরে হাত উত্তোলণ হাদীস দ্বারা প্রমানিত । সুতরাং যদি হাত উত্তোলণ না করলে নামায বাতি হয়ে যায়, তাহলে সিসদার সময় হাত উত্তোলণ না করার কারনে আহলে হাদীসের নামাযও বাতিল হয়ে যাবে ।
শাইখুল হাদীস সাহেব বললেন, ইবনে ওমর রা. এর হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূল সঃ সিসদার সময় হাত উত্তোলণ করতেন না ।
যুবক বলল, হুজুর ! ব্যাপারটা তো ঘোলাটে হয়ে গেল । কেননা, হাত উত্তোলণের হাদীস পরষ্পর বিরোধী । আলবানী সাহেবের তাহকিক অনুযায়ী সিসদার সময় হাত উত্তোলণের হাদীস দশজন সাহাবী দ্বারা বর্ণিত । আর আপনার বক্তব্য অনুযায়ী ইবনে ওমর রা. এর হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূল সঃ সিসদার সময় হাত উত্তোলণ করতেন না । তো আপনি এ বিরোধ সম্পর্কে রাসূল সঃ এর ফায়সাআ বলে দিন ।
শাইখুল হাদীস সাহেব বললেন, আসল কথা হল, সিসদার সময় হাত উত্তোলণের বিষয়টি প্রথমা ছিল । পরে রহিত হয়ে গেছে ।
যুবক শাইখুল হাদীস সাহেবের এ বক্তব্যটি কাগজে লিখে নিল । এরপর বলল, হুজুর ! এ ফায়সাআ রাসূল সঃ এর, না আপনার, না রাসূলের কোন উম্মাতের ?
যদি রাসূল সঃ এর হয়, তাহলে এমন একটা হাদীস বলুন, যার মাঝে এ ফায়সালা উল্লেখ আছে । আর যদি আপনার হয়, তাহলে আপনি শরয়ী মাসালায় নিজের মতামত যোগ করেছেন । যা শয়তানের কাজ । আর যদি রাসূলের অন্য কোন উম্মাতের , তো আপনি তার তাকলিদ করেছেন । আর আপনাদের মতে তাকলিদ হল শিরক । সরাসরি ওহী না হলে সেখানে নবীর কথাও গ্রহণযোগ্য নয়, এখানে আপনার কথা কী মূল্য রাখে ?

এক আহলে হাদীসের সাথে মুনাযারা... সুন্নাতের সঙ্গা সম্পর্কে

এক আহলে হাদীসকে বলা হল, আপনি সুন্নাতের সঙ্গা বলুন । 
তিনি বললেন, হাদীস ও সুন্নাত একই ।তাকে বলা হল, আপনি কোরআনের এমন কোন আয়াত বা এমন কোন হাদীস পড়েন , যাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, সুন্নাত ও হাদীস একই জিনিস ।তিনি বললেন, এমন কোন আয়াত বা হাদীস নেই ।তাকে বলা হল, আওনি যা বললেন, তা তো নবীর কথা নয় । বরং উম্মাতেরই কারো না কারো মত । আর আওনাদের মূলনীতি অনুযায়ী ধর্মীয় উম্মাতের মত গ্রহণ করা শয়তানের কাজ । সাথে সাথে সুন্নাত ও হাদীস যদি একই জিনিস হয়, তাহলে তো আহলে হাদীস হাজারো সুন্নাত ছেড়ে দিচ্ছে । কেননা
১. হাদীসে আছে , এক মহিলা রাসূল সঃ এর নির্দেশে একজন বালেগ পুরুষকে দুধ আন করিয়েছিলেন । অথচ আহলে হাদীস পুরুষ-মহিলা দুধ আন করা ও করানোর এ সুন্নাত থেকে বঞ্চিত ।
২. হাদীসে আছে , রাসূল সঃ কখনো দাঁড়িয়ে পেশাব করেছেন । অথচ আহলে হাদীস পুরুষ-মহিলা এ সুন্নাতের অনুসরণ কঅরছে না ।
৩. হাদীসে আছে, রাসূল সঃ অজুর পরে স্ত্রীকে চুম্বন করেছেন । এরপর এসে নামায পড়িয়েছেন । অথচ আহলে হাদীস ইমাম-মুক্তাদী এ সুন্নাতের ব্যাপারে উদাসীন ।
৪. হাদীসে আছে, রাসূল সঃ তার নাতী উমামকে কাধে নিয়ে নামায পড়েছেন । অথচ আহলে হাদীস সন্তানদেরকে মসজিদেও আনে না । কাধে নিয়ে নামাযও পড়ে না । আল্লাহ আপনাদেরকে মৃত সুন্নাতগুলোকে জিন্দা করার তাওফীক দান করুক ।
অবস্থা বেগতিক দেখে সে বলতে লাগল, রাসূল সঃ এর ত্বিরীকাকে সুন্নাত বলে ।
তাকে বলা হল, আপনি কোরআনের এমন কোন আয়াত বা এমন কোন হাদীস পড়েন , যার অনুবাদ হল - রাসূল সঃ এর ত্বিরীকাকে সুন্নাত বলে ।
তিনি বললেন, এমন কোন আয়াত বা হাদীস নেই ।
তাকে বলা হল, তাহলে তো এটা উম্মাতের কথা । যা আপনাদের নিকট গ্রহনযোগ্য নয় । সাথে সাথে উপরে যে চারটি হাদীস বলা হল, আহলে হাদীস তা বর্জন করে থাকে ।
পেরেশান হয়ে সে বলতে লাগল, সুন্নাত ঐ ত্বরীকাকে বলা হয়, যা রাসূল সঃ এর সাথে খাছ নয় ।
তাকে বলা হল, এ মর্মে এমন কোন আয়াত বা হাদীস পাঠ করেন ও এমন চারটি হাদীস শোনান যাতে রাসূল সঃ উক্ত চার বিষয়কে নিজের জন্য খাছ বলেছেন । অন্যথায় আপনার উচিৎ নিজস্ব মত ও উম্মাতের মত বর্জন করে সুন্নাতের প্রতি মনোনিবেশ করা ।
সে বলল, সুন্নাত ঐ ত্বরীকাকে বলা হয়, যার উপর নবী স্বয়ং আমল করেছেন ও উম্মতকে আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন
তাকে বলা হল, এ মর্মে এমন কোন আয়াত বা হাদীস পাঠ করেন, যার অনুবাদ আপনার বক্তব্যের অনুরূপ ও এমন হাদীস শোনান , যাতে রুকুর আগে, রুকুর পরে ও তৃতীয় রাকাতের শুরুতে হাত উত্তোলনের নির্দেশ রয়েছে এবং ঐ সকল হাদিসও শুনান, যার মধ্যে খালী মাথায় নামায পড়া, ফরজের ছয় রাকাতে আমীন উচ্চস্বরে বলা ও এগারো রাকাতে আমীন নীচুস্বর্ব বলা, বুকের উপর হাত বাঁধা ও নামাযে পা ছড়িয়ে দাঁড়ানো ইত্যাদির নির্দেশ রয়েছে ।
অপারগ হয়ে সে বলল, আমি তাহকিক করব ।
তারপর বলল, তাহলে আপনি সুন্নাতের সঙ্গা বলুন ।
উত্তরে বলা হল, এমন ত্বরীকাকে সুন্নাত বলাহয়, যা রাসূল সঃ অথবা খুলাফায়ে রাশেদীন চালু করেছেন ।
সে বলল, এমন কোন আয়াত বা হাদীস পাঠ করেন, যাতে এ সঙ্গা উল্লেখ আছে ।
জবাবে বলা হল, সঙ্গা কোরান-হাদীসে থাকে না । বরং সঙ্গা বিশেষজ্ঞরা করে থাকেন । সুন্নাতের এ সঙ্গা ফুকাহায়ে কেরাম করেছেন । আমরা তাদের থেকে এ সঙ্গা গ্রহন করেছি ।

এক আহলে হাদীসের সাথে মুনাযারা... কালেমায়ে তাইয়্যেবা নিয়ে

আহলে সুন্নাতের কয়েকজন যুবক আহলে হাদীসের কয়েকজন আলেমকে বলল, কালেমায়ে তাইয়্যেবা “ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ হুবহু এভাবে , একসাথে কোরআন কিংবা সহী হাদীস থেকে দেখান, যে হাদীসে রাসূল সঃ এ কালেমা সাহাবায়ে কেরামকে শিখিয়েছেন ও উম্মাতকে শিখানোর নির্দেশ দিয়েছেন । অন্যথায় আপনারা ঘোষনা করুন বা লিখে দিন যে , এ কালেমা ভুল । তাদের একজন বলল, মূলত কালেমায়ে তাইয়্যেবা পতাকায় লেখার জন্য । আর কালেমায়ে শাহাদাৎ পড়ার জন্য ।কথাটি যুবকদের একজন কাগজে লিখে নিয়ে বলল, আপনি এমন কোন হাদীস লিকে দিন যার দ্বারা আপনার কথাটি প্রমাণিত হয় । আর যদি এ মর্মে কোন হাদীস না থাকে , তাহলে এটা আপনাদের নিজস্ব মত । আপনারা যেখানে সরাসরি ওহী নয় , রাসূল সঃ এর এমন বানী পর্যন্ত গ্রহন করতে প্রস্তুত নন । সেখানে আমরা কিভাবে আপনাদের মত গ্রহন করব ?

এক আহলে হক্ব ও আহলে হাদীসের মুনাযারা


হাদীসের সঙ্গা সম্পর্কে এক আহলে হক্ব এক আহলে হাদীসের আলেমকে বললেন, আপনি হাদীসের সঙ্গা বলেন ।
তিনি বললেন, রাসূল (সঃ) এর কথা ,কাজ ও সম্মতিকে হাদীস বলে ।আহলে হক্ব বললেন, আপনি কোরআনের এমন কোন আয়াত বা এমন কোন হাদীস পড়েন , যার অনুবাদ আপনি যে সঙ্গা করেছেন , তার হুবহু অনুরূপ । তিনি বললেন, এমন কোন আয়াত বা হাদীস নেই ।আহলে হক্ব বললেন, তাহলে আপনি এ সঙ্গা কোথায় পেলেন ? তিনি বললেন, মুহাদ্দিসীন এ রকম বলেছেন । আহলে হক্ব বললেন, আপনাদের নীতিতে তো কারো তাকলিদ করা শিরক ! তাহলে আপনি মুহাদ্দিসীনের তাকলিদ করলেন কেন ? নাকি এমন কোন হাদীস আছে, যা এ কথার প্রমান বহন করে যে,ফুকাহার তাকলিদ শিরক আর মুহাদ্দিসীনের তাকলিদ শিরক নয় ?তিনি বললেন, এমন কোন হাদীস নেই ।আহলে হক্ব বললেন, আপনাদের মতে তাকলিদ হল শিরক । সুতরাং আপনি যেহেতু মুহাদ্দিসীনের তাকলিদ করেছেন । তার মানে আপনিও শিরক করেছেন । এ শিরক থেকে আপনাকে তওবা করতে হবে এবং আপনার বিবাহও দোহরাতে হবে ।

আহলে হাদীসের তিনটি মূলনীতি

১ম মূলনীতি > শরীয়তের দলীল শুধু দু’টি । আহলে হাদীস শুধুমাত্র দু’টি দলীলই মান্য করেন । কোরআন আর হাদীস । এতদুভয় ব্যতীত তাদের নিকট তৃতীয় কোন দলীল গ্রহনযোগ্য নয় । তাদের দাবী আর শ্লোগান হল- ‪#‎আহলে‬ হাদীসের দুই উসূল* কোরআন ও হাদীসে রাসূল [স.]
আহলে হাদীসের নেতা মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী বলেন , ভাইয়েরা ! আপনার হাত দু’টি । আর শরীয়ত আপনাকে দুই হাতে দুইটি বস্তু দান করেছে । আল্লাহর বাণী ও রাসূলের বাণী । এরপর আপনার যেমন তৃতীয় কোন হাত নেই , তেমনি ভাবে তৃতীয় কোন বস্তুও নেই । (লাহোর থেকে প্রকাশিত ত্বরীকে মুহাম্মাদী, পৃষ্ঠা নং ১৯) 
২য় মূলনীতি > কারো কিয়াসই দলীল নয় ।
আললে হাদীসের নিকট নবী বা উম্মত , কারো কিয়াসই দলীল নয় আহলে হাদীসের নেতা মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ী বলেন, বুযুর্গদের , মুজতাহিদদের , ইমামদের কেয়াস তো দূরের কথা , শরীয়তে ইসলামে রাসূল (সঃ) এর কোন কথা সরাসরি ওহি না হলে , তাও দলীল নয় । (লাহোর থেকে প্রকাশিত ত্বরীকে মুহাম্মাদী, পৃষ্ঠা নং ৫৭) 
আহলে হাদীস আলেম মুহাম্মাদ আবুল হাসান সাহেব বলেন, কেয়াস করো না । কারন সর্ব প্রকার কেয়াস করেছে শয়তান । (যফরুল মুবীন পৃষ্ঠা নং ১৪)
৩য় মূলনীতি > তাকলিদ করা শিরক ।
আহলে হাদীসের নিকট উম্মাতের তাকলিদ করা শিরক । তাদের বড় আলেম মুহাম্মাদ আবুল হাসান সাহেব বলেন, ইমাম চতুষ্টয় বা অন্য যার তাকলিদই হোক না কেন ,তা হল শিরক ।
তাদের সংকীর্ণতার একটি দৃষ্টান্ত ঃ
এ সম্পর্কে প্রশ্ন-উত্তর আকারে উপস্থাপিত আহলে হাদীসের নেতা মাওলানা মুহাম্মাদ জুনাগড়ীর একটি মাসয়ালা লক্ষ্য করুন ।
(প্রশ্ন- এটা কি ঠিক যে, কোন আহলে হাদীসের পিতা হানাফী হয়ে মৃত্যু বরণ করলে , সে “ ربى اغفرلى و لوالدى “ তথা- হে আমার আল্লাহ তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে ক্ষমা কর । এ দোয়া পড়বে না ?
উত্তর – মুশরিকদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা জায়েয নেই । (লাহোর থেকে প্রকাশিত সীরাতে মুহাম্মাদী, পৃষ্ঠা নং ৪৭)
এ কিতাবের ১২ নং পৃষ্ঠায় স্পষ্ট লাল অক্ষরে লেখা আছে – তাকলিদ হল শিরক ।
আহলে হাদীসদের দেয়া তাকলিদের ভুল সঙ্গা =
আহলে হাদীসের একজন প্রাজ্ঞ আলেম তাকলিদের সঙ্গা দিতে গিয়ে বলেন, তাকলিদ হল দলীল ছাড়া কোন বিধান মেনে নেয়া এবং এ কথা জিজ্ঞাসা না করা যে, এ বিধান আল্লাহ ও রাসূল সমর্থিত কিনা ? (যফরুল মুবীন পৃষ্ঠা নং ১৫)
(যে কিতাবগুলোর রেফারেন্স দেয়া হয়েছে সেগুলো আহলে হাদীসের কয়েকটি প্রসিদ্ধ কিতাব)
আহলে হাদীসের জন্য অবশ্য পালনীয় মূলনীতি=
যেহেতু গায়রে মুকাল্লিদদের নিকট উম্মাতের তাকলিদ হল শিরক । আর কেয়াস হল শয়তানের কাজ । সুতরাং এ মূলনীতি অনুযায়ী তারা কোন রাবী সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য , হাদীসের মান তথা হাদীসটি সহী কিংবা দুর্বল ইত্যাদি বয়ান করার জন্য এমনকি কোন হাদীসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার জন্য উম্মাতের কোন মত বা মন্তব্য পেশ করতে পারবে না । 
রাতা শুধু কোরআনের আয়াত ও হাদীসের অনুবাদ করবেন । ব্যাখ্যা করার ছুতোয় আপন খেয়াল অন্তর্ভূক্ত করতে পারবে না ।আহলে হাদীস বন্ধুরা হাদীসের তিরজমা করার পর আপন উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যে ব্যাখ্যা পেশ করেন, তা তো তাদেরই কথা । তারা তো আপন মতকেই হাদীস নামে অভিহিত করেন । 
উদাহারণস্বরূ – لا صلاة لمن لم يقرء بفاتحة الكتاب
অর্থাৎ যে ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা পড়ল না , তার নামায হয় নি । (বুখারী শরিফ পৃষ্ঠা ১০৪ ১ম খন্ড )
এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম আহুমাদ ও সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা রহঃ বলেন, এখানে একাকী নামায আদায়কারীর কথা বলা হয়েছে । অর্থাৎ একাকী নামায আদায়কারী ব্যক্তি সূরায়ে ফাতিহা না পড়লে তার নামায হবে না । কিন্তু আহলে হাদীসগন বলেন, এখানে من (যে/যারা)শব্দটি ব্যাপক । ইমাম, মুক্তাদী ও একাকী নামায আদায়কারী সবাই এর অন্তর্ভূক্ত । বুঝলাম । কিন্তু হাদীসে من (যে/যারা) শব্দটি যে ব্যাপক , এটা তো তাদের কথা । এ কথা আল্লাহও বলেন নি , রাসূলও বলেন নি । অথচ তারা এ হাদীস পেশ করে বলে , রাসূল (সঃ) বলেছেন, সূরায়ে ফাতিহা ব্যতীত ইমাম, মুক্তাদী ও একাকী নামায আদায়কারী কারো নামাযই হবে না । অর্থাৎ নিজ মতকেই তারা হাদীস বলে চালিয়ে নিল । এ জন্য তারা আলোচনাকালে উম্মাতের কারো কথা বা মত পেশ করলে সর্ব প্রথম তাদেরকে তাকলিদের শিরক ও কেয়াসের শয়তানী থেকে তওবা করাবেন । এরপর সামনে অগ্রসর হবেন ।

রিবা

রিবা প্রধানত দুই প্রকার : ১. রিবা নাসিয়্যাহ ২. রিবাল ফযল; একে রিবাল বাইও বলা হয়।
এখানে আমরা শুধু রিবা নাসিয়্যাহর প্রচলিত কয়েকটি রূপ নিয়ে আলোচনা করব।
রিবা নাসিয়্যাহর সংজ্ঞা:
ইমাম আবু বকর জাস্সাস রাহ. বলেন,
هو القرض المشروط فيه الأجل وزيادة مال على المستقرض.
এমন ঋণ যাতে মেয়াদ শর্ত করা হয় এবং গ্রহিতাকে অতিরিক্ত প্রদানের শর্ত করা হয়।
-আহকামুল কুরআন ১/৫৫৭
অর্থাৎ অতিরিক্ত প্রদানের শর্তে কাউকে মেয়াদি ঋণ দেওয়া। একে রিবাল করযও বলা হয়। রিবান নাসিয়্যাহ-এর আরেক প্রকার হল, রিবাদ দাইন।
রিবাদ দাইনের সংজ্ঞা : কারো থেকে কোনো পণ্যের বিক্রিলব্ধ বকেয়া-মূল্য পরিশোধের সময় হলে তখন অতিরিক্ত প্রদানের শর্তে মেয়াদ বাড়িয়ে নেওয়া। অর্থাৎ অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধের শর্তে সময় বাড়িয়ে নেওয়া। জাহেলী যুগে রিবা নাসিয়্যাহর উভয় প্রকারের প্রচলন ছিল খুব বেশি।
আজও এই উভয় ধরনের রিবা নাসিয়্যাহ ব্যাংকিং জগতে এবং মার্চেন্টদের সমাজে বহুল প্রচলিত।
বাজারে বিভিন্ন পণ্য কিস্তিতে বিক্রি হয়। কিন্তু কিস্তি সময়মত দিতে না পারলে একটা নির্ধারিত হারে অতিরিক্ত দেওয়ার শর্ত করা হয়। এটা রিবাদ দাইনের অন্তর্ভুক্ত।
রিবা নাসিয়্যাহর প্রচলিত রূপ ও ক্ষেত্রসমূহ
রিবা নাসিয়্যাহকে রিবাল কুরআন, রিবাল করয ও রিবাদ দাইনও বলা হয়। প্রচলিত ব্যাংকিং সুদ এর জ্বলন্ত উদাহরণ, এছাড়াও আরো ক্ষেত্র আছে, নিম্নে একেকটি করে সবিস্তারে আলোকপাত করা হল:
১. সুদী ব্যাংক : ব্যাংকের সংজ্ঞাতেই আছে যে, ব্যাংক হল, অল্প সুদে ঋণ নেয়, আর বেশী সুদে ঋণ দেয়। সুদী ব্যাংকের কারেন্ট একাউন্ট ছাড়া সকল প্রকার একাউন্ট সুদী একাউন্ট। তাই সুদী ব্যাংকের সেভিং একাউন্ট এবং সকল ধরনের ফিক্সড ডিপোজিট সুদী। চাই তা উচঝ হোক বা ঋউজ হোক অথবা সাধারণ ফিক্সড ডিপোজিট হোক; সবই রিবা নাসিয়্যাহ একাউন্ট। অনেকে মনে করেন সরকারী হলে সেটা আর সুদী হয় না। অথচ এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।
এছাড়া কারেন্ট একাউন্টেও ইদানিং সুদের মিশ্রণ দেওয়া হয়। এ ধরনের কারেন্ট একাউন্টকে SND কারেন্ট একাউন্ট বলে। এসকল একাউন্ট খোলাই সুদী চুক্তির গুনাহ। পরে সুদ গ্রহণ করলে তার গুনাহ ভিন্ন হবে।
সুদী ব্যাংকের সেভিং একাউন্ট খোলাটাই সুদী চুক্তির গুনাহ। তাই সুদ গ্রহণ না করলেও যে কোনো ধরনের সেভিং একাউন্ট করলে সুদী চুক্তির গুনাহ হবে।
২. ডি. পি. এস/ DPS ডিপোজিট পেনশন স্কীম : এটিও সম্পূর্ণ সুদী একাউন্ট।
৩. সুদী ব্যাংকের যে কোনো লোনই সুদী লোন। যেমন কার লোন, হোম লোন, হাউজ লোন, ইনভেস্টমেন্ট লোন, সিসি লোন, কৃষি লোন ইত্যাদি।
৪. প্রাইজবন্ড : সরকার প্রাইজবন্ড ছাড়ে। যা যে কোনো ব্যাংক থেকে ভাঙ্গানো যায়। একটা নির্ধারিত মেয়াদের পর লটারীর মাধ্যমে ড্র করা হয়। এরপর বিজয়ীদেরকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এই পুরস্কারটাই রিবা নাসিয়্যাহ বা সুদ। প্রাইজবন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে ব্যাংককে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। আর ব্যাংক প্রাইজ বা পুরস্কার দেয়ার নামে ক্রেতাকে সুদ দিচ্ছে।
৫. ক্রেডিট কার্ড : ক্রেডিট কার্ড মূলত এক প্রকার সুদভিত্তিক লোন কার্ড। কেননা এই কার্ডের চুক্তিপত্রেই লেখা রয়েছে যে, মিনিমাম ডিউ টাইমে/ডেটে বাকী পরিশোধ না করলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট হারে সুদ দিতে হবে। যার ফলে অধিকাংশ ক্রেডিট কার্ড হোল্ডারই সুদের আওতায় পড়ে যান। এই সুদ রিবাদ দাইনের অন্তর্ভুক্ত, যা রিবা নাসিয়্যাহ। তাই সুদ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই যথাসময়ে বাকী পরিশোধ করে দিতে হবে। তাহলে আর সুদী কারবার হবে না।
৬. ক্রেডিট কার্ড দ্বারা এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন করলে যে চার্জ নেওয়া হয় তা সুস্পষ্ট সুদ। কেননা কার্ডের ফি তো নিচ্ছেই। এখন অতিরিক্তটা ঋণের বিনিময়ে হচ্ছে।
৭. বন্ড : সরকারী এবং বেসরকারী বন্ড। এগুলো সম্পূর্ণ রিবা নাসিয়্যাহ। সরকারী হওয়ার কারণে কিংবা নির্দিষ্ট কোনো বাণিজ্যিক প্রকল্প, কোনো কোম্পানী বা রাস্তা-ঘাট কিংবা ব্রীজ নির্মাণের জন্য ঋণ নেওয়া হচ্ছে এমন কথা উল্লেখ করার কারণে কেউ কেউ মনে করতে পারেন যে, এটা সুদী হবে না, কিন্তু এ ধারণা ভুল। স্টক এক্সচেঞ্জ বা বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্য যে কোনো ব্যাংকে যে বন্ড ক্রয়-বিক্রয় হয় তাতে সুনির্দিষ্ট সুদের ঘোষণা দেওয়া থাকে। এ সকল বন্ডও সুদী বন্ড।
৮. স্টুডেন্ট লোন : বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃক স্টুডেন্ট লোন দিয়ে যা অতিরিক্ত নেওয়া হয় সেটাও সুদ। এটি ইন্টারেস্ট বা সার্ভিস চার্জ যে নামেই নেওয়া হোক না কেন।
৯. লটারী : রেডক্রিসেন্ট বা এজাতীয় সরকার অনুমোদিত কিছু প্রতিষ্ঠান দশটাকা বিশটাকা মূল্যের লটারী টিকেট ছাড়ে। এক লক্ষ, দুই লক্ষ টাকা, গাড়ি, মোটর সাইকেল ইত্যাদি পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা নেয়া হয়।
এক্ষেত্রে পুরস্কার পায় কেবল দু’তিনজন। আর বাকিরা কিছুই পায় না। তাদের মূল টাকাই গচ্চা যায়। এধরনের লেনদেনকেই শরীয়তের ভাষায় ‘কিমার’ বলে। যা সম্পূর্ণ হারাম। আর এক্ষেত্রে সবাই তো অতিরিক্ত পাওয়ার

স্বামী আর স্ত্রী বেড়াতে গেল চিড়িয়াখানায়

স্বামী আর স্ত্রী বেড়াতে গেল চিড়িয়াখানায়। তারা দেখল একটি বানর তার সঙ্গীনির সাথে খেলছে, খুনসুটি করছে। স্ত্রী দৃশ্যটা দেখে মুগ্ধ হয়ে স্বামীকেবলল: কী চমৎকার ভালোবাসার দৃশ্য! এরপর তারা গেল সিংহদের খাঁচার কাছে ।দেখল: সিংহ খাঁচার একপাশে চুপচাপ বসে আছে। সিংহীটাও অদূরে অন্য দিকে ফিরে বসে আছে। স্ত্রী দেখে বলল: আহ! ভালোবাসার কী নির্মম পরিণতি! স্বামী এতক্ষণ চুপচাপ স্ত্রীর পাশে হাঁটছিল। এবার নীরবতা ভঙ্গ করে বললেন: ধরো! এই কাঁচের টুকরোটা সিংহীর দিকে ছুঁড়ে মারো,আর দেখো কী ঘটে! মহিলাটি যখন কাঁচের টুকরোটা ছুঁড়ে মারল, সিংহ ক্ষিপ্ত হয়ে গেল। সঙ্গীনিকে বাঁচানোর জন্য গর্জে উঠল। এবার মেয়ে বানরটার দিকে ছুঁড়ে মারো। দেখ কী ঘটে।পুরুষ বানরটার আচরণ লক্ষ্য কর। স্ত্রী কাঁচের টুকরোটা বানরীর দিকে ছুঁড়ে মারল । দেখা গেল ছুঁড়ে মারার আগেই বানরটা আত্মরক্ষার্থে ছুটে পালিয়ে গেল। সঙ্গীনির দিকে ফিরেও তাকাল না। স্বামী বলল: মানুষ তোমার সামনে যা প্রকাশ করে তা দেখে প্রভাবিত হয়ে যেয়ো না। অনেক মানুষ আছে যারা তাদের বানোয়াট , লোক দেখানো আবেগ- অনুভূতি প্রকাশ করে অন্যকে প্রতারিত করে। আবার অনেক মানুষ আছে যারা তাদের ভেতরে গভীর অনুরাগ-ভালবাসা লুকিয়ে রাখে। আর বর্তমানে সিংহদেরচেয়ে বানরদের সংখ্যা বেশি।

আহলে হাদীস

কিছুদিন আগে আহলে হাদীসভাইদের এক আস্তানার মধ্যে বসে তাদের সায়েখদের জালিয়াতির কথা এক এক করে বলছিলাম। তাদের অবস্থা হল নাথিং টু সে এর মতো।
যাই হোক। টপিক পাল্টানোর জন্য এক ভাই বললেন আচ্ছা ভাই রাফুল ইয়াদাইনের ব্যাপারটা এ কি সমাধান ??
আমি বললাম রাফুল ইয়াদাইন করাও সুন্নত না করাও সুন্নত। তবে উসূলের বিচারে রাফুল ইয়াদাইন না করার হাদীসকে আমরা অধিক গ্রহনযোগ্য মনে করি।
পাশ থেকে এক আহলে হাদীস বলে উঠলেন সুন্নত আবার একাধিক হয় কি করে ???
সময় নষ্ট না করে আমি প্রশ্ন করলাম ভাই বেতেরের সালাত কত রাকায়াত?
তিনি বললেন ১,৩,৫,৭ সবই পড়া যায়।
আমি বললাম - বাহ্‌, একটু আগে না বললেন সুন্নত একাধিক হয় কি করে ??
বেচারা থতমত খেয়ে অপ্রসঙ্গিক কথা বলা শুরু করলো।
আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম , নামাযে হাত কিভাবে বাধবেন ? জিরার উপর জিরা রেখে নাকি ডান হাতের পাঞ্জা দিয়ে বাম হাতের কবজি ধরে?? (কারণ তাদের শায়খরা দুটুকেই সুন্নত বলে)
তিনি বললেন জিরার উপর জিরা রেখে। এটাই সঠিক। আমি বললাম আগে শায়খদের কিতাব পড়ুন । তারা উভয়টিকেই সুন্নত বলেছেন। এরুপ আরাকটা আমলের ব্যাপারে আপনাদের শায়খরা উভয়টিকেই সুন্নত বলেছেন। আর তা হল তাকবীরে তাহারিমার সময় হাতকে কাধ পর্যন্ত উঠানো এবং কানের লতি পর্যন্ত উঠানো উভয়টিকে সুন্নত বলেন।
এরপর আমি বললাম মতপার্থক্য হলে যদি ক্ষতিই হয় তাহলে আগে বলুন আপনাদের শায়খরা ফরজ নিয়ে মতপার্থক্য করে কেন ??
আপনাদের একজন শায়খ মতিউর রহমান মাদানী। সে বুখারীর হাদীসের রেফারেন্স দিয়ে ওজুতে নিয়ত করাকে ফরজ বলেছেন। তিনি তার মাযহাব পরিচিতি নামক লেকচারে এ কথা বলেছেন।
আবার আপনাদের আরাকজন শায়খ আসাদুল্লাহ আল গালিব সাহেব। তিনি কোরআনের আয়াতকে রেফারেন্স হিসেবে পেশ করে ওজুতে নিয়ত ফরজ নয় বলেছেন।
এবার বলুন মাদানী সাহেব কোরআন বিরুধী, নাকি গালিব সাহেব বুখারীর ঐ হাদীস বিরুধী।
এরকম আরো কিছু প্রশ্ন করার পর বেচারে ঐ আহলে হাদীস ভাইয়ের অবস্থা 'ছাইরা দে মা কাইন্দা বাচি' এর মত হয়ে গেল। আমিও তাকে তার ইজ্জতের চিন্তা করে সালাম দিয়ে ছেড়ে দিলাম ।

★★ সমাজের অলিখিত সংবিধান ★★

বাংলাদেশের সবকটি গণমাধ্যমেই বেশ ফলাও করে আলোচিত হচ্ছে সংবাদটি। ‘মাদ্রাসা ছাত্রের ধর্ষণ, প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণ করেছে মাদ্রাসাছাত্র, তরুণীকে মাদ্রাসাছাত্রের ধর্ষণ।’ সংবাদটি প্রায় এ রকম। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি গ্রামে শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধী এক তরুণীকে হাত বেঁধে ধর্ষণের সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছে এক মাদ্রাসা ছাত্র। রোববার মিরসরাইয়ের বারইয়ারখালি গ্রামের ১৭ বছরের মেয়েটি বাড়িতে রেখে প্রতিবেশীর বাড়িতে তার বাবা মা বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে এই ঘটনা ঘটে। মাদ্রাসা ছাত্রটি বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
এ ধরণের ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম নয়। বাংলাদেশের নিত্যদিনের সংবাদ। নৌকায় ধর্ষণ, বনে ধর্ষণ, প্রাইভেটকারে ধর্ষণ, জঙ্গলে ধর্ষণ, শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ, বিধবাকে ধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ, গারো তরুণীকে ধর্ষণ, প্রতিবন্ধীকে ধর্ষণ। ধর্ষণ খেলায় মেতে উঠেছে ধর্ষক নামের পশুরা। এত ধর্ষণের সংবাদ পত্রিকার সাদাকালো পাতায় ¯’ পেলেও হঠাৎ করে মাদ্রাসা ছাত্রের ধর্ষণের সংবাদটি পত্রিকায় বেশ ফলাও করে ¯’ নিয়েছে।
ধর্ষক মাদ্রাসার ছাত্র হোক বা অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হোক সে ধর্ষক এবং তার যথাযথ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। আইনের ফ্যাঁকরা, প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়া, দুর্নীতি, পুলিশের দুর্বল তদন্ত রিপোর্ট, আইনজীবীর মারপ্যাঁচের কাছে অসহায় সমাজ, অধিকাংশ নির্যাতিতা মেয়ে গরীব কিংবা আদালতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পয়সা সংগ্রহ করতে না পারা বা হুমকি ধামকিতে বাধ্য হয়ে নতি স্বীকার করে। কিংবা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অর্থাৎ একটি মেয়ে ধর্ষণ হয় না তা তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় অথচ আজীবন মানসিক অশান্তি আর বিপর্যস্ত জীবনধারণে জীবিত অথচ মৃতপ্রায় হয়ে থাকে। এজন্যে ধর্মে ধর্ষকদের কঠিন শাস্তি দেবার বিধান রয়েছে। ধর্ষক যদি বিবাহিত হয় তাহলে তাকে পাথর ছুঁড়ে মৃত্যুদন্ড করার কথা বলা হয়েছে। আর যদি অবিবাহিত হয় তাহলে তাকে কমপক্ষে ১’শ দোররা মারার কথা বলা হয়েছে।
অধিকাংশ নারীবাদি বা মানবাধিকার রক্ষার কথা যারা বলেন, তাদের কাছে ধর্ষককে এধরনের কঠিন শাস্তি দেবার পক্ষপাতি নন। তারা এও বলেন, এটা মধ্যযুগীয় শাস্তি। এখানে নিরব সমাজ, প্রশ্নবিদ্ধ বিবেক। ফলে ধর্ষকদের পোয়াবারো। তবে ধর্ষকের নামের শুরুতে মাদ্রাসা শব্দটি যোগ রয়েছে। ধর্ষক একজন হুজুর, ধর্ষককে একজন হুজুর বলে চিনে সমাজ। বিষয়টা অস্বাভাবিক কিš‘ কারো কারো কাছে যেন উপাদেয় কোনো ব¯‘। পাওয়া গেছে। এবার তবে কেল্লা ফতে।
হুজুররা অন্যায় করলে সমাজ কাঁপবে এটাও স্বাভাবিক। হুজুরদের অন্যায় করা নিষেধ, হুজুরদের প্রেম করা নিষেধ, হুজুরদের গান বাজনা নিষেধ, হুজুরদের মেয়েদের দিকে তাকানো নিষেধ, হুজুরদের সিনেমা দেখা নিষেধ। এটা সমাজের অলিখিত সংবিধান। সমাজের মানুষদেরও অলিখিত সংবিধান। তবে এ হুজুররা যে এ সমাজেরই মানুষ, এ সমাজেরই চরিত্র আমরা ভুলে গেছি। ভুলে গেছি হুজুরদের গায়ে আমাদের মতই রক্ত, সে শয়তানের চক্রান্তে পড়ে পথভ্রষ্ট হতে পারে অন্যকোনো সাধারণ মানুষের মত। আমাদের মতই কামনা, বাসনা ও নফসে লাওয়ামা, নফসে আম্মারা বাস করে। হুজুরদের ভুল করতে নেই, হুজুরদের গোনাহ করতে নেই এ মানসিকতা কি হুজুরদের নষ্ট মানসিকতার পরিচয় না সমাজের নষ্ট ও মিডিয়ার নিচু মানসিকতার পরিচয়।
হুজুরদের অন্যায়টা সমাজের আট দশটা মানুষের মত বিবেচনা করা হয় না কারণ তাদের সম্পর্কে সমাজে একটা স্চ্ছ ও পবিত্র ধারণা ছিল এবং কিছুটা হলেও অবশিষ্ট রয়েছে। তো সমাজের সব হুজুররাই তো সব মানুষ নয়। ভাল মন্দ সকল সমাজ ও সকল শ্রেণীর মানুষের ভেতরেই রয়েছে।
একজন মাদ্রাসা ছাত্রের অন্যায় কেন ফলাও করে প্রচার হবে আর মাদ্রাসা ছাত্র না হলে তা ভেতরের পাতায় ছাপা হবে। আপত্তি এখানেই। একজন ছাত্র তা সে মাদ্রাসার হোক বা স্কুল কলেজের হোক সে অন্যায় ও ভাল মন্দের মাঝামাঝি চরিত্র নিয়ে বেড়ে উঠে। সমাজে ধর্ষক হবার মত নষ্ট পরিবেশ ও অপসংস্কৃতির উপকরণ এ দুজনকেই আকৃষ্ট করে। তারা পথভ্রষ্ট হয়। তাদের বিচার কঠিন হবে এবং এতে কোনো বৈষম্য করা চলবে না। কিš‘ পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা পেলে সে মাদ্রাসা হোক আর স্কুলের হোক অছাত্র কিংবা যে কোনো অপরাধে অপরাধী হয়ে উঠতে পারে। তবে মাদ্রাসাছাত্র ধর্ষক হলে মিডিয়ার অতিরিক্ত উৎসাহ ধর্ষণকে বন্ধ করতে পারবে না। ধর্ষকের নামের শুরুতে মাদ্রাসাছাত্র যোগ করে সমাজের আরেক ধরনের পঁচন মানসিকতার পরিচয় প্রকাশ পয়েছে
অন্যায়কে অন্যায়, পাপকে ঘৃণা করাই কাম্য। তবে অপরাধের শুরুতে বিশেষণ লাগিয়ে কাউকে ছোট কিংবা বড় করাও কি এক প্রকার অন্যায় নয়? পাপকে ঘৃণা করো পাপীকে নয়। ধর্ষণ অচিন্তনীয় ও ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। প্রয়োজন উপযুক্ত ধর্ষকদের শাস্তির মুখোমুখি করা।

আবদুল কালামের ১০টি উক্তি,

 আবদুল কালামের ১০টি উক্তি, যা আপনার জীবনধারা পালটে দেবে। 'স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো। স্বপ্ন সেটা যেটা তোমায় ঘুমোতে দেয় না।' 'সূর্যের মতো দীপ্তিমান হতে হলে প্রথমে তোমাকে সূর্যের মতোই পুড়তে হবে।' 'যদি তুমি তোমার কাজকে স্যালুট কর, দেখো তোমায় আর কাউকে স্যালুট করতে হবে না। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান কর, অমর্যাদা কর, ফাঁকি দাও, তাহলে তোমায় সবাইকে স্যালুট করতে হবে।' 'যারা হৃদয় দিয়ে কাজ করতে পারে না; তাদের অর্জন অন্তঃসারশূন্য, উৎসাহহীন সাফল্য চারদিকে তিক্ততার উদ্ভব ঘটায়।' প্রতিদিন সকালে এই পাঁচটা লাইন বলো : ১) আমি সেরা। ২) আমি করতে পারি ৩) সৃষ্টিকর্তা সব সময় আমার সঙ্গে আছে ৪) আমি জয়ী ৫) আজ দিনটা আমার 'ভিন্নভাবে চিন্তা করার ও উদ্ভাবনের সাহস থাকতে হবে, অপরিচিত পথে চলার ও অসম্ভব জিনিস আবিষ্কারের সাহস থাকতে হবে এবং সমস্যাকে জয় করে সফল হতে হবে। এ সকল মহানগুণের দ্বারা তরুণদের চালিত হতে হবে। তরুণ প্রজন্মের প্রতি এই আমার বার্তা।' 'জীবন একটি কঠিন খেলা। ব্যক্তি হিসেবে মৌলিক অধিকার ধরে রাখার মাধ্যমেই শুধুমাত্র তুমি সেখানে জয়ী হতে পারবে।' 'আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই।পুরো মহাবিশ্ব আমাদের প্রতি বন্ধুত্বসুলভ।যারা স্বপ্ন দেখে এবং কাজ করে শুধুমাত্র তাদেরকেই শ্রেষ্ঠটা দেওয়ার জন্য চক্রান্তে লিপ্ত এই বিশ্ব।' 'উৎকর্ষতা একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এটি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়।' 'যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ ক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন বাবা, মা এবং শিক্ষক।