বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭

বিবাহের কতিপয় সুন্নাত সমূহ


যে সকল ভাইয়েরা/বোনেরা বিবাহ উপযুক্ত বা যাহারা বিবাহ নিয়ে ভাবছেন তাদের অথবা যারা অভিবাবক আছেন তারা জেনে নিন:
বিবাহের কতিপয় সুন্নত সমূহঃ
(১) মাসনূন বিবাহ সাদা সিধে ও অনাড়ম্বর হবে, যা অপচয়, অপব্যয়, বেপর্দা ও বিজাতীয় সংস্কৃতি মুক্ত হবে এবং তাতে যৌতুকের শর্ত বা সামর্থের অধিক মহরানার শর্ত থাকবেনা। (তাবারানী আউসাত, হাদিস নং- ৩৬১২)
(২) সৎ ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করে বিবাহের পূর্বে পয়গাম পাঠানো। কোন বাহানা বা সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে, দেখে নেয়া মুস্তাহাব। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত তা সুন্নতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য। (বুখারী হাদিস নং-৫০৯০, ইমদাদুল ফাতাওয়া-৪: ২০০)
(৩) শাউয়াল মাসে এবং জুমুয়ার দিনে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা। উল্লেখ্য, সকল মাসের যে কোন দিন বিবাহ করা যায়িজ আছে। (মুসলিম ১৪২৩/ বায়হাকী ১৪৬৯৯)
(৪) বিবাহের খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করে বিবাহ করা এবং বিবাহের পরে আকদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকদের মাঝে খেজুর বন্টন করা। (বুখারী/৫১৪৭)
(৫) সামর্থানুযায়ী মোহর ধার্য করা। (আবু দাউদ/২১০৬)
(৬) বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরের চুল হাতে নিয়ে এই দোয়া পড়াঃ
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা খয়রাহা ওয়া খয়রা মা জাবালতুহা আলাইহি ওয়াওযুবিকা মিন শার্রিহা মিন শার্রিমা জাবালতাহা আলাইহি” (আবু দাউদ/২১৬০)
(৭) স্ত্রীর সঙ্গে প্রথমে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি করবে, তার পর যখনই সহবাস এর ইচ্ছা হয়, তখন প্রথমে নিম্নোক্ত দু’আ পড়ে নিবেঃ
“বিসমিল্লাহ্। আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তান ও জান্নিবিশ শায়তানা মা রাযাকতানা।” (মুসলিম/১৪৩৪)
(উপরোক্ত দোয়া না পড়লে শয়তানের তাছীরে বাচ্চার উপর কু-প্রভাব পড়ে। অতঃপর সন্তান বড় হলে, তার মধ্যে ধীরে ধীরে তা প্রকাশ পেতে থাকে এবং বাচ্চা নাফরমান ও অবাধ্য হয়। সুতরাং পিতা মাতাকে খুবই শতর্ক থাকা জরুরী)
(৮) বাসর রাতের পর স্বীয় আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাংখী এবং গরীব মিসকীনদের তাউফীক অনুযায়ী ওলীমা খাওয়ানোর আয়োজন করা (মুসলিম/১৪২৭)
(৯) কোন পক্ষ যেওরের শর্ত করা নিষেধ এবং ছেলের পক্ষ থেকে যৌতুক চাওয়া হারাম (আহসানুল ফাতাওয়া ৫/১৩)
(১০) কনের ইযন এর জন্য স্বাক্ষীর কোন প্রয়োজন নাই। সুতরাং ছেলের পক্ষের লোক ইযন শুনতে যাওয়া অনর্থক এবং বেপর্দা। সুতরাং তা নিষেধ। মেয়ের কোন মাহরুম বিবাহের এবং উকীল হওয়ার অনুমতি নিবে। (মুসলিম/১৪২১)
(১১) শর্ত আরোপ করে বর যাত্রীর নামে বরের সাথে অধিক সংখ্যাক লোকজন নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়ীতে মেহমান হয়ে কনের পিতার উপর বোঝা সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কু-প্রথা, যা সম্পূর্ন রুপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক। (মুসনাদে আহমাদ/২০৭২২, বুখারী/২৬৯৭)
(১২) ওলীমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরী নয়। বরং সামর্থানুযায়ী খরচ করাই সুন্নত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওলীমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত দেওয়া হয়, দ্বীনদার ও গরীব গরীব-মিসকিনদের দাওয়াত দেওয়া হয়না, সে ওলীমাকে হাদিসে নিকৃষ্টতম ওলীমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের ওলীমা আয়োজন থেকে বিরত থাকা উচিত (আবু দাউদ /৩৭৫৪)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুন্নত মোতাবেক বিবাহ করার তৌফিক দান করুন। আমীন

আরাফার খুতবা ২০১৭


খতিব: শায়খ সা’দ বিন নাসের আশ শিছরি
অনুবাদ: মহিউদ্দীন ফারুকী

হামদ সালাতের পর, হে মুমিনগন তোমরা তাকওয়া অর্জন কর। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ তোমরা তাকওয়া অর্জন করা। আল্লাহ যা নির্দেশ করেছে তা মনতে চেষ্টা কর। আল্লাহর সাথে কাউকে ডেকোনা। তাওহীদ হচ্ছে মুসা, ঈসা ও মুহাম্মদের দ্বীন।তাহাওহীদ হচ্ছে, আল্লাহকে এক ইলাহ বলে মানা। তার সাথে কাউকে ডাকা যাবেনা। হে মানুষ সকল, নিশ্চেই নাজাত ও মুক্তির পথ হচ্ছে ঈমান। রাসূল স. আরকানুল ঈমানেএর কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান আনা। রাসুলদের প্রতি ইমান আনা। কিতাবের প্রতি ইমান আনা। হে মুমিনগণ, সলাত হচ্ছে দ্বীনের খুটি। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা নামাজের হেফাজত কর। যাকাত আদায় কর। এতে রয়েছে হৃদয়ের পবিত্রতা।চতুর্থ রুকন হ্েচছ, সিয়াম পালন করা। পঞ্চম রুকন হচ্ছে, হজ্জ আদারয় করা। হজ্জে মাবরুরের প্রতদান হচ্ছে একমাত্র জান্নাত। রাসুল স. হজ্জ আদায় করেছেন। তিনি তার সে হজে সকলের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন।হে মুমিনগন, দ্বীনে সৌন্দর্যের অন্যতম হচ্ছে একে অপরকে সাহায্য করা । ইহসান ও একে অপরের প্রতি দয়া করা।শরীয়ত বাবা মার সাথে সুন্দর আচরণ দিতে নির্দেশ করেছেন। সন্তানদের সাথে ভাল আচরণ করতে নির্দেষ দিয়েছেন। সাতে সাথে খারাপ কাজ ও ফাহেশা থেকে নিশেধ করেছেন ।নিশ্চয় প্রত্যেক মুসলিম নিরাপত্তার সহযোগী। একজন মুমিন রক্ত ঝরাতে পারেনা। যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের রক্ত ঝড়িওনা। মুমিনের কাজ হচ্ছে ওয়াদা ঠিক রাখা। অঙ্গীিকার ভঙ্গ না করা।মুমিনের কাজ হচ্ছে ওয়ালিউল আমরের কথা ঠিকভাবে মান্য করা। ফিকরের নিরাপত্তা বা আমন ফিকরির ব্যাপারের সচেতন থাকতে হবে। শরীয়ত সারা পৃথিবীতে নিরাপত্তা ও আমন ব্যাপকভাবে ছড়াতে নির্দেশ দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেছে, তারাকি দেখেনা যে আল্লাহ তাআলা হারামকে নিরাপদ বানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা ফিলিস্তিন ও বায়তুল মুকাদ্দিস কে নিরাপদ রাখুন।রাসুল স. তার ভাষনে বলেন, জাহিলিয়াতের সকল বিষয় আমার পায়ের নীচে রাখা হলো। অতএব কোনধরণের জাহিলি কাজ ইসলাম সমর্থন করেনা। হজ্জ হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আল্লাহর জন্য হজ ও ওমরা কর। অতএব এখানে কোন ধরনের দলীয় ব্যানার ও মিছিল বা প্রচারেরর কোন সুযোগ নেই।হে শাসকবর্গ, তোমাদের সামনে কোরআন রয়েছে। শাসনের জন্য, দেশষ পরিচালনার এই কুরআনই যথেষ।হে ওলামায়ে কেরাম, আপনাদের সামনে রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহ, অতএব সবকল ক্ষেত্রে করআন সুন্নাহর অনুষ্মরণ করতে চেষ্ঠা করুন। মিডিয়া কর্মিগণ, আপনারাও দ্বীনের জন্য কাজ করতে চেষ্টা করুন। মুরব্বি ও পিতা মাতাগণ, সন্তানের ব্যপারে সতর্ক হোনহে হাজিগণ, আপনরা সকলেই মর্যাপূর্ণ স্থানে রয়েছেন। মর্যাদপূর্ণ সময়ে রযেছেন। আজ ইয়াওমু আরাফা। দোআ কবুল হওয়ার সময়। নিজেদের জন্য চাইতে থাকুন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম ভায়ের জন্য দোআ করুন। হে আল্লাহ, তুমি খাদেমূল হারামাইনের হায়াতে বরকত দান কর। হে আল্লাহ তুমি হাজিদের হজকে কবুল কর। তাদেরকে নিরাপদে রাখ।

বুধবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৭

যেসব ওলামায়ে দেওবন্দগণকে মদীনার পবিত্র "জান্নাতুল বাকি"তে দাফন করা হয়েছে' তার মধ্যে কয়েকজনের নামঃ


👉১) মাওঃ শাহ্ রফি উদ্দীন (রহঃ)
👉২) মাওঃ শাহ্ মুজাফ্ফর হুসাইন (রহঃ) 
👉৩) মাওঃ শাহ্ আব্দুল গনী মোহাদ্দেসে দেহলভী (রহঃ) 
👉৪) মাওঃ খলিল আহমদ সাহারানপুরী (রহঃ)
👉৫) মাওঃ মোহাম্মদ সিদ্দিক মাদানী (রহঃ)
👉৬) মাওঃ সায়্যিদ আহমদ মাদানী (রহঃ)
👉৭) মাওঃ সায়্যিদ মাহমুদ আহমদ মাদানী (রহঃ)
.
👉৮) মাওঃ সায়্যিদ জামিল আহমদ মাদানী (রহঃ)
(৫নং থেকে ৮নং পর্যন্ত তারা হলেন,
হুসাইন আহমদ (রহঃ) এর ভ্রাতা।)

👉৯) মাওঃ মোহাম্মদ এনাম করিম (রহঃ)
(তিনি শাইখুল হিন্দ (রহঃ) এর নাতি)
.
👉১০) মাওঃ বদর আলম মিরাঠি (রহঃ)
👉১১) মাওঃ আব্দুস সাকুর দেওবন্দী (রহঃ)
👉১২) মাওঃ ওলি আহমদ রহঃ হাজারভী (রহঃ)
👉১৩) মাওঃ শের মোহাম্মদ গুটুভী (রহঃ)
(থানভী রহঃ এর খলিফা)
.
👉১৪) মাওঃ মোহাম্মদ আজম খাইরাবাদি (রহঃ)
👉১৫) মাওঃ জাকারিয়া কান্দলভী (রহঃ)
👉১৬) শাইখ মোহাম্মদ মোজহার দেহলভী (রহঃ)
👉১৭) মুফতি আশেক এলাহি (রহঃ)
👉১৮) মাওঃ আব্দুল হক্ব নক্বশবন্দী (রহঃ)
👉১৯) মাওঃ মুসা মাদানী (রহঃ)
👉২০) মাওঃ সায়ীদ খান (রহঃ)
👉২১) মাওঃ আব্দুল কাদের (রহঃ)
👉২২) মাওঃ রশিদ আহমদ গাঙ্গুহী (রহঃ)
👉২৩) মাওঃ রুহুল কিস্ত (রহঃ)
সহ আরো অনেকে !
.
আল্লাহতায়ালা দ্বীনের এসকল খাদিমদেরকে
জান্নাতুল ফিরদাউস নাসিব করেন। আমিন।।

লিখণেঃ ভাই আবু বকর সিদ্দীক।

মাজার পূজা এবং মিলাদের বিরুদ্ধে আকাবিরে দেওবন্দের শত শত ঐতিহাসিক ফতোয়া


আমাদের উপমহাদেশে ১৭৫৭ সালের পর থেকেই মুসলমানদের তেমন কোন রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রভাব ছিল না। আর ১৭৯৯ সালের মহীশুরের সিংহ টিপু সুলতানের পরাজয়ের মাধ্যমে চুড়ান্ত ভাবে হাত ছাড়া হয়ে যায় শাসন ক্ষমতা। 

এরপর মুসলমানদের ইতিহাস শুধু অপমান, লাঞ্ছনা, অত্যাচার আর গনহত্যার ইতিহাস। এর আগে মুসলমানদের প্রতি জনপদে মাদ্রাসা ছিল। এসব মাদ্রাসা সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় চলত। আর বড় বড় জায়গীর ছিল এসব মাদ্রাসার নামে। এ দিয়েই এর খরচ চলত। কারও কাছে হাত পাততে হত না এসব মাদ্রাসার। কাউকে পাত্তা দেয়ার দরকার পড়ত না। কাউকে বেতন দিয়েও পড়তে হত না। 

ইংরেজরা একে একে সব মাদ্রাসা ধ্বংস করে। একের পর এক উলামায়ে কেরাম বলা চলে যাকে যেখানে যেভাবে পেয়েছে কোন ধরণের অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই নিত্য নতুন প্রক্রিয়ার প্রাণদন্ড দিতে ছিল। লোমহর্ষক সব উপায়ে শাস্তি দিতে থাকে। এসব অত্যাচারের মাত্রা এত বেশী ছিল যে, এর বিবরণ মানুষের কাছে অতিরঞ্জন বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা এটাই ছিল।

মুসলমানদের জমিজমা কেড়ে নিয়ে ভূমিদাস বানানো হয়। মুসলমানদের দৈনন্দিন আমাল ও অভ্যাসেও বাঁধা দেয়া হয়। দাঁড়িও উপর উচ্চ হারে কর বসানো হয়। মুসলমানদের ঈমান ও আকীদাহ ধ্বংস করার জন্য সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন ফেরকার জন্ম দেয়া হয়। একই সাথে বিভিন্ন ভাবে ভুল বুঝিয়ে অনেক সরলমনা মুসলমানদের খৃষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করে। এর সাথে পর্তুগিজ ও ফরাসী দস্যুদের অত্যচার তো ছিলই। এদেশীয় হিন্দুদেরও মুসলমানদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা ও ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি করে বিবাদ বাঁধিয়ে দেয়া হয়।

এরই প্রেক্ষাপটে কিছু উলামায়ে কেরাম অন্তরালে চলে যান। আর প্রত্যন্ত এক গ্রামে এক মাদ্রাসা গঠন করেন। যে গ্রামের নাম দেওবন্দ। দেওবন্দ মাদ্রাসা তাই নতুন কিছু নয়। নতুন কোন সম্প্রদায় বা নতুন কোন আকীদাও নয়। নতুন কোন ধারাও নয়। ফেরকাও নয়। বরং উপমাহাদেশের ইসলামের ধারাবাহিকতাই দেওবন্দ মাদ্রাসা।

অবশ্য এরপর থেকে উপমহাদেশের ইসলামের ইতিহাস আর দেওবন্দের ইতিহাস সমার্থক। কেননা উলামায়ে দেওবন্দ অনেক কষ্ট কুরবানী, ত্যাগ তিতিক্ষা, কৌশল প্রয়োগ করে এখানে ইসলামের ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রেখেছেন। বলতে পারেন মহানবী (সঃ) এর মক্কার জীবনের এক প্রতিচ্ছাবি ছিল দেওবন্দের শুরু দিকের সময় গুলো। পরবর্তীতে দেওবন্দী উলামাদের উপরও চলে ইংরেজদের লোমহর্ষক সব অত্যাচার।

দেওবন্দের প্রথম ছাত্র মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে মাল্টায় নির্বাসনে পাঠানো হয়। ইতিহাস বলে খাব্বাব (রাঃ) এর মত অত্যাচার চলে তার উপর সেখানে। আজকের গুয়েনতামো বে এর জেলখানার কথা শুনেই আমরা অবাক হই। সারা দুনিয়ার কাফেররা পর্যন্ত সোচ্চার। কিন্তু মাল্টার জেলখানার তুলনায় গুয়েন্তামো বে অনেক আরামের জায়গা। 

এভাবে দুশো বছর অত্যাচার চলে। আসল ব্যাপার হল ইংরেজরা চেয়েছিল ইসলাম মিটে যাক। ইসলাম মেটানোর জন্য সম্ভাব্য যত পদ্ধতি তাদের জানা ছিল সবই তারা প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু এই সব মহান আলেমদের কুরবানী এ অঞ্চলে মুসলমানদের সংখ্যা তো বাড়িয়েছেই, আজও এখানে নবীজি সুন্নত ১০০% পালন করার জন্য আগ্রহী মানুষে অভাব হয় না। নবীজির শানে বেয়াদবী প্রতিবাদে জীবন দেয়ার জন্যও মানুষের অভাব নেই এখানে।
.
ইংরেজদের শাসনআমলে ইংরেজদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে, তৎকালীন উপ-মহাদেশের সবচেয়ে বড় আলেম, আল্লামা শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহঃ) এর বড় সাহেবজাদা আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহঃ) ১৮০৩ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জালিম বলে ফতোয়া দিলেন।

এই দেওবন্দি আলেমদের একটি ফতোয়া "ভারত বর্ষ দারুল হারব হয়ে গেছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে জেহাদ করা ফরজ" একইসাথে ইংরেজদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাও দেন। এই ঘোষণা বা ফতোয়ার ভিত্তিতে, ভারত বর্ষের সকল মুসলমান, স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রাণ-পণে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যার ফলে শেষ পর্যন্ত হাজার হাজার মুসলমান তথা-আলেমদের রক্তের বিনিময়ে ইংরেজদের হাত থেকে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। যার কারনে ইংরেজ বিতাড়িত হয় এবং ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়। ভারতবর্ষ ইংরেজ মুক্ত হতে পেরেছে বলেই পাকিস্তান এবং তার পর বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পেরেছে।
.
বিগত শতাব্দীতে বিশ্ববাসীর উপর উলামায়ে দেওবন্দের অবদান এতো বেশি যে, দ্বীনী খিদমাতে তাঁদের অবদানকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। মুফতী তাক্বী উসমানী (হাফিজাহুল্লাহ), মাওলানা তারেক জামীল (হাফিজাহুল্লাহ) –এর ন্যায় গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিগণ পুরো পৃথিবী ভ্রমণ করে বলেছেন, উলামায়ে দেওবন্দের মতো দ্বিতীয় আরেকটি জামাত বিশ্বের বুকে নেই।

কাদিয়ানী গোষ্ঠী যখন রাসূল (সাঃ)-এর নামে মিথ্যাচার করেছে, উলামায়ে দেওবন্দ তাঁদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে, উলামায়ে দেওবন্দ রুখে দাঁড়িয়েছেন।

যখন দ্বীনের বিরুদ্ধে কেউ অস্ত্র ধারণ করেছে, উলামায়ে দেওবন্দ অস্ত্র হাতে নিয়েছেন। দ্বীনের মোকাবেলায় কলম ব্যবহার করেছে, উলামায়ে দেওবন্দ কলম দিয়ে জবাব দিয়েছেন। বিতর্কের আহ্বান করেছে, উলামায়ে দেওবন্দ বিতর্কে অংশ নিয়ে পরাভূত করেছেন। বাতিল সম্প্রদায়ের ভয়ে উলামায়ে দেওবন্দ কখনো পালিয়ে যাননি।

শায়খুল হিন্দ মাহমুদ হাসান (রহঃ), সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ), আশরাফ আলী থানভী (রহঃ), ইলিয়াস (রহঃ), আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ), ইউসুফ বানূরী (রহঃ), আমীন সফদর (রহঃ) প্রমুখ উলামায়ে কেরামের জীবন পর্যালোচনা করলে উলামায়ে দেওবন্দের অবদান অনুভব করা যায়।

এক শায়খুল হিন্দের মোকাবেলায় ব্রিটিশ গোষ্ঠী অসহায় হয়ে পড়েছিলো। অর্জিত হয়েছিলো স্বাধীনতা। মাদানী (রহঃ)-এর দূরদর্শী সিদ্ধান্ত উপহার দিয়েছিলো পাকিস্তান। হাকীমুল উম্মত (রহঃ)-এর সহস্রাধিক কিতাব জাতিকে দেখিয়েছিল নতুন দিগন্ত। ইলিয়াস (রহঃ) পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন রাসূলের সুন্নাত। ইউসুফ বানূরী (রহঃ) “আক্বিদায়ে খতমে নবুওয়াত” কনফারেন্সে এশা থেকে নিয়ে ফজর পর্যন্ত বক্তব্য রেখেছিলেন। কোর্টের ভেতরে বিচারপতির সামনে কাদিয়ানীদের অমুসলিম প্রমাণ করেছিলেন। আমীন সফদর (রহঃ) বিতার্কিকের ভূমিকায় বাতিল গোষ্ঠীকে চুপসে দিয়েছিলেন।

দেওবন্দিয়াত কাপুরুষতার নাম নয়। মিথ্যাচারের নাম দেওবন্দিয়াত নয়। যারা দেওবন্দের নামে মিথ্যাচার করছে, তারা কূপে অবস্থানকারী সেই ব্যাঙের মতো, যে কূপের বাইরে পৃথিবীর অস্তিত্বে বিশ্বাসীই নয়।

মাজার পূজা এবং মিলাদের বিরুদ্ধে আকাবিরে দেওবন্দের শত শত ঐতিহাসিক ফতোয়া রয়েছে।

কয়েকটির হাওয়ালা দিয়ে দিলাম। যাদের গায়ে চুলকানি বেশি, তারা দেখে নিতে পারেন।

👉“ইমদাদুল ফতোয়া” (৬/৩২৭.মাকতাবা যাকারিয়া)
👉“ইমদাদুল আহকাম” (১/১৮৭.মাকতাবা যাকারিয়া)
👉“কিফায়াতুল মুফতী” (২/২১৯.মাকতাবা ইদারাতুল ফারুক)
👉“আযীযুল ফতোয়া” ((১/১২২.মাকতাবাতু দারিল ইশায়া)
👉“জাওয়াহিরুল ফিকহ” (১/৪৫৯.মাকতাবাতু দারুল উলূম করাচী)
👉“ফতোয়া মাহমুদিয়া” (১/১৭৮.যাকারিয়া বুক ডিপো।)
👉“ফতোয়া রহিমিয়া” (২/৭৩.দারুল ইশায়া’)
👉“ফতোয়া উসমানী” (১/১১০-১১৫.)

এরপরও যদি কেউ আকাবিরে দেওবন্দের নামে বলে যে,তারা মিলাদ এবং মাজার পুজায় বিশ্বাসী, তারা আর যাই হোক কোন একজন আলেম হতে পারে না।


মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

সামরিক হস্তক্ষেপ ছাড়া মিয়ানমারকে থামানো যাবে না


জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিশনের সুপারিশ অগ্রাহ্য করতেই নতুন করে হামলা শুরু করেছে মিয়ানমার সরকারি বাহিনী। এই কমিশন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে, নচেৎ নিজ দেশেই সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। অং সান সূচির সরকার ও সামরিক বাহিনী মনে করছে চীন ও ভারতের সমর্থন রয়েছে তাদের এসব কর্মকাণ্ডে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তেমন আশঙ্কা নেই। কারণ এখানকার সরকার নিজেই অনির্বাচিত ও জনবিচ্ছিন্ন। প্রভৃতি কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এমনিতেই চাপে রয়েছে আওয়ামীলীগ সরকার। তবে বাংলাদেশের জনগণ মজলুম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত। আশাব্যঞ্জক হচ্ছে রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থার সহানুভূতি বাড়ছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মিডিয়া তাদেরকে হাইলাইটস করছে। রোহিঙ্গাদেরও নিজস্ব প্রায় অর্ধডজন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এখন সরব। ইউরোপ-আমেরিকান রোহিঙ্গা কমিউনিটিও বেশ সোচ্চার সেসব দেশে।
তুরস্ক, সৌদি আরব, মালয়েশিয়ার মতো অনেক মুসলিম দেশ রোহিঙ্গাদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করছে। বাকী মুসলিম বেসরকারিভাবে সহযোগিতা করছে। তবে এবার রোহিঙ্গারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। এখন স্বাধীন আরাকানের স্বপ্ন দেখছে তারা। বার্মিজদের হাতে হারানো স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারে কয়েকটি নামে তারা সংঘবদ্ধ হচ্ছে।
এবার শরণার্থীদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা অনেক কম দেখা গেছে। কারণ জানা গেছে যে, নারী-শিশুদের বাংলাদেশ সীমান্তে পাঠিয়ে পুরুষরা প্রতিরোধ যুদ্ধে যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশের আশ্রয় ক্যাম্পগুলো থেকেও রোহিঙ্গা পুরুষরা যুদ্ধে যোগ দিচ্ছে।

রোহিঙ্গা মুসলমানদের ইতিহাস এবং মায়ানমারের আরাকানে মুসলিম নির্যাতন

হিজরী প্রথম শতকের শেষ দিকে (৯৬ হিজরী) ৭১২ ঈসায়ীতে উমাইয়া শাসনামলে মুসলিম সেনাপতি হযরত মুহম্মদ বিন কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নেতৃত্বে সিন্ধু অঞ্চলে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত হবার মধ্যদিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ইসলামের প্রতিষ্ঠা শুরু হলেও মূলত পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়কালে অর্থাৎ ৮ম হিজরীতে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেই এ অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে। 
কারণ চাঁদ দ্বিখ-িত হওয়ার পর চীনের রাজা তাঁইসাং বা তাইসং ইসলাম গ্রহণ করার জন্য লোক পাঠালে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবু কাবশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেসহ এক কাফেলা পাঠান। তখনকার দিনে চীনের ক্যান্টনে যাওয়ার জন্য আরবদেশ থেকে রওনা করলে পথিমধ্যে ভারতের মালাবার, কালিকট, চেররবন্দর, তৎকালীন আরাকানের চট্টগ্রাম ও আকিয়াব প্রভৃতি স্থানে জাহাজ নোঙ্গর করতো এবং বাতাসের গতিবেগের কারণে বিভিন্ন বন্দরে অনেকদিন যাবৎ অবস্থান করতে হতো। এভাবে যাত্রাকালীন সময়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বিভিন্ন বন্দরে ইসলাম প্রচারের কাজ করতেন। এ ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম ও আকিয়াবেও জাহাজ নোঙ্গর করে উনারা ইসলাম প্রচারের কাজ করেছেন। তখন থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিশেষত মায়ানমারের আরাকান অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে। 
এ আরাকানের পূর্ব নাম ‘রোখাম’। এটি আরবী শব্দ; যার অর্থ শ্বেতপাথর এবং আরাকানের প্রাচীন রাজধানী ম্রোহংয়ের পূর্বনাম কায়কপ্রু। এটি বার্মিজ শব্দ; যার অর্থও শ্বেতপাথর। এদিক থেকে কায়াকপ্রু অঞ্চল ও রোখাম একই অঞ্চল হেতু রুহমী বলতে রোখাম বা আরাকানকেই বুঝানো হয়। 
আরাকানের চন্দ্র-সূর্য বংশের প্রথম রাজা মহৎ ইঙ্গ চন্দ্র (৭৮৮-৮১০ খ্রিস্টাব্দে) মুসলমানদের আচার-আচরণ ও ইসলামের সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধ হয়ে সেখানে ইসলাম প্রচারের ব্যাপক সুযোগ দেন এবং সাথে সাথে রাজা মুসলমানদের স্থায়ীভাবে বসবাসেরও অনুমতি দেন। তাছাড়া আরবে ইসলাম কায়েমের পর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শতাব্দীতে আরব, ইরানী, গৌড়ীয়, ভারতীয়সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসলিম বডুক, নাবিক, ইসলাম প্রচারকগণ আরাকানে এসে এখানকার স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হতেন। এভাবে আরাকানে মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। এরাই বর্তমান আরাকানী মুসলমান।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মতো মুসলিম অধ্যুষিত এ আরাকান রাজ্যে মায়ানমারের মুসলিম বিদ্বেষী বৌদ্ধ সামরিক জান্তা সরকার এখানকার “রোহাংঙ্গ” এলাকার মুসলিম জনগোষ্ঠী যারা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত তাদের উপর অহরহ কঠোর ও নির্মমভাবে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। যা বিশ্ববাসীর জানা সম্ভব হয়না। তাদের মৌলিক অধিকার বলতে কিছু নেই। মুসলিম দেশগুলোও এ ভয়াবহ নির্যাতনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব। 
উল্লেখ্য, রাখাইন প্রদেশ ঐতিহাসিকভাবে আরাকান নামে পরিচিত। স্বাধীন মুসলিম দেশ আরাকান ১৭৮৪ সালে তৎকালীন বার্মা দখল করে নেয়। আর ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইনের সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে আরাকান রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, সামরিক এবং রাজনৈতিকভাবে বিতাড়নের জন্য এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেয়। মুসলিম বিদ্বেষী বৌদ্ধ সামরিক জান্তা সরকার আরাকানের মুসলমানদের উপর বহুমুখী নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ করে থাকে। তন্মধ্যে সেখানে যখন তখন যে কাউকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে নির্যাতন, বিনা মজুরিতে শ্রম খাটানো, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে বিধি নিষেধ আরোপ, মুসলিম পল্লী তুলে দিয়ে সেখানে রাখাইন বুদ্ধ বসতি স্থাপন, বিবাহ বন্ধনে বাধা, যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ, নির্বিচারে শহীদ, গণগ্রেফতার, জায়গা জমি ও ওয়াক্ফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক বঞ্চনা ও শোষণ, মহিলাদের শ্লীলতাহানি, ধর্মীয় বিদ্বেষ ও মুসলমানদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে অ-স্বীকৃতি, দেশ ত্যাগে বাধ্য করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।যে নির্যাতনগুলো আরো তীব্র মাত্রায় করছে কথিত শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জয়ী হায়েনা সূচি।

আমরা সবচাইতে বড় গাদ্দার।



ওরা তোমাদের নিকট একটু আশ্রয় চেয়েছে। তোমাদের দেশের নাগরিকত্ব তো চায়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় বার্মাতেও বাংলাদেশি মুসলিমরা,মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশেই আশ্রয় নিয়েছিল। কিন্তু আজ তারা আমাদের নিকট আশ্রয়হীন। 
,
(সুত্রঃ মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩)

শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৭

হজ্জ করার তীব্র বাসনা


Emran Hossain Adib
ড্রোন দিয়ে ভিডিও ধারন করছিল। হঠাৎ ড্রোনটি এক বৃদ্ধ লোকের বাড়ীতে গিয়ে পড়লো। ঘটনাটা ঘানার এক গ্রামের। বৃদ্ধ খুব গরীব । নাম: আল হাসান আবদুল্লাহ। সাংবাদিক ড্রোনটি আনতে গেলে দেখেন, সে বৃদ্ধ খুব অবাক হয়ে ড্রোনটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ড্রোনটি দেখছেন খুব নিবিড়ভাবে। সহজ সরল বৃদ্ধ লোকটি উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে সাংবাদিককে জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা এটা কি আমাকে হজ্জ করার জন্য মক্কা নিয়ে যেতে পারবে?' আহা! 

লোকটার চোখে মুখে ছিল হজ্জ করার তীব্র বাসনা। তিনি কি আর জানেন এই ড্রোনে মানুষ উঠতে পারেনা! যেহেতু জিনিসটা উড়ে তাই তীব্র ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বাই চান্স যদি যাওয়া যায়। তিনি ড্রোন কি তা হয়তো বুঝেনও না। 

সাংবাদিক সে ড্রোন হাতে সে বৃদ্ধের ছবি আর তার হজ্জে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছার কথা টুইটারে পোস্ট করেন।
ছবিটি ভাইরাল হয়ে যায় মুহূর্তেই। তুরস্ক সরকার লোকটির সাথে যোগাযোগ করে এবং'তার হজ্জে যাওয়ার যাবতীয় খরচ বহন করে।
ঘটনাটা এবারের হজ্জের। আল্লাহ তার মনের বাসনা পূর্ণ করেছেন। 

ক্বাবার সামনে দাড়িয়ে হৃদয়ের সমস্ত আবেগ আর ভালবাসা দিয়ে 'লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক' বলে মহান রবের কৃতজ্ঞতা আদায় করতেই হজ্জে যেতে পেরেছেন সে বৃদ্ধ। যা তার দ্বারা সম্ভব ছিলো না। কিন্তু ঐ যে, আল্লাহ্‌ কার ইচ্ছা কিভাবে পূরণ করেন তা কি আর অনুমান করা যায়!

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে এমন ইচ্ছা পূরণ করার তৌফিক দিন। "আমীন"


শুক্রবার, ১১ আগস্ট, ২০১৭

সুস্থ, সবল দেহ নিয়েও নামাজ না পড়ার জন্য আমাদের কতো কতো এক্সকিউজ থাকে।


June 29 
 সুস্থ, সবল দেহ নিয়েও নামাজ না পড়ার জন্য আমাদের কতো কতো এক্সকিউজ থাকে।ঘুম থেকে জাগতে পারিনা, কাজের চাপ, টেনশান হাবিজাবি। শরীর সামান্য ম্যাজম্যাজ করলে কিংবা হালকা একটু সর্দি কাশি হলেই বিশাল বড় এক্সকিউজ পেয়ে যাই নামাজ ছেড়ে দেওয়ার।
অথচ, এই লোকটিকে দেখুন। দুটি পা থেকেও নাই উনার। নামাজ ছেড়ে দেওয়ার সবচে বড় এক্সকিউজ তো উনিই দেখাতে পারেন। অথচ, পা না থাকা সত্ত্বেও ভর দিয়ে দিয়ে কতো যত্ন সহকারেই না মসজিদে আসেন নামাজ পড়তে এই লোক! কী টান! কী প্রেম প্রভুর প্রতি!
আমরা যদি ৫ ওয়াক্ত ফরজ (অবশ্য পালনীয়। ছাড়াছাড়ি নাই) নামাজের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারতাম 

একজন শায়েখকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমরা অধিকাংশ মুসলিমরা সিজনাল মুসল্লী কেনো? শুক্রবারের জুমা, দুই ঈদের সালাত আর শবে বরাত আর ক্বদর ছাড়া মসজিদগুলো হাহাকার করে মুসল্লী শূন্যতায়। কিন্তু কেনো?
শায়েখ একটি মুচকি হাসি দিয়ে বলেছিলেন,- 'Part time muslim can't defeat full time Shaytan'...

আসলেই তাই। আমরা সিজনাল মুসল্লীরা শুক্রবারের জুমা আর ঈদের সালাত পড়ে ভাবি, - বহুত বড় নেকক্বার বনে গেছি।
অথচ, আমরা ইবাদতে পার্ট টাইম হলেও, শয়তান কিন্তু আমাদের পেছনে ফুল টাইম লেগে আছে। বিরতিহীন।
যে ফুল টাইম দেয়, সে-ই সাকসেসফুল হবে। সোজা হিসাব! আহা! যদি আমরা বুঝতাম 

ছবিটি আজকের আসরের ওয়াক্তে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ থেকে তোলা....
ছবিটি তুলেছেন MoNir ভাই।

গরু হলো সৃষ্টিকূলের সেরা জীব হুহ হু............


সব অনুভূতির বাইরেও, আমাদের একটা আলাদা অনুভূতি আছে। এই অনুভূতির নাম- ধর্মানুভূতি। অর্থাৎ, ধর্মীয় অনুভূতি।

ছোটবেলায় কায়দা, আমপারা পাঠের মাধ্যমে আমাদের ধর্মীয় শিক্ষার হাতেখড়ি। এরপর আস্তে আস্তে আমাদের মনের গভীরে, অন্তরের ভিতরে প্রোথিত হয় ধর্মের বীজ। আমরা ধর্মকে, ধর্মীয় কানুনকে, আল্লাহকে, রাসূল (সাঃ) কে, আমাদের ধর্মীয় কিতাবকে সম্মান করতে শিখি, ভালোবাসতে শিখি। অন্তরে ধারণ করতে শিখি।
আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে, আমার ভালোবাসার জিনিসকে নিয়ে যখন কেউ বাজে কথা বলে, যখন কেউ কটুক্তি করে, বিদ্রুপাত্মক ভাষায় আক্রমণ করে, আমি ক্ষেপে যাই। আমি নিজেকে দমাতে পারি না।
কারণ, ভালোবাসা যুক্তি মেনে হয়না। ভালোবাসা দর্শন কপচিয়ে টিকে থাকে না। ভালোবাসা অন্তরের ব্যাপার।
আমার ধর্ম আমার ভালোবাসা। এই ভালোবাসার একটা অনুভূতি আছে। এটার নাম ধর্মানুভূতি।
আমি এই অনুভূতিকে শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। ধারণ করি।

ভারতের হিন্দুত্ববাদী ক্ষমতাসীন দল বিজেপি'র একটা শ্লোগান আছে। তাদের মতে, গরু হলো সৃষ্টিকূলের সেরা জীব। বিজেপি'র 'গো-রাজনীতি' ওপারে সীমাবদ্ধ থাকলে আমার কোন মাথাব্যথা ছিলো না।
কিন্তু, বাংলাদেশের প্রথম সারির সংবাদপত্র 'প্রথম আলো' কেনো বিজেপি'র সেই শ্লোগানকে আমাদের কচি, তরুণ, কিশোরদের মনে গেঁথে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগবে?

ইসলাম ধর্মে মানুষকে দেওয়া হয়েছে শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মর্যাদার খেতাব। আর, ইসলামী কালচার অনুযায়ী মুসলিমরা গরু কোরবানী করে থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। 
কিন্তু, প্রথম আলো কেনো বিজেপি'র শ্লোগান প্রমোট করে, গরু জবাইকে নিকৃষ্ট কাজ বলে উল্লেখ করে, এবং যারা গরু খায় তাদের 'নিকৃষ্ট সৃষ্টি' বলে আমাদের শিশুদের মগজ ধোলাই করবে?
মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অধিকার প্রথম আলোকে কে দিয়েছে?

এর আগেও প্রথম আলো এদেশের কোটি কোটি মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছে। বারংবার এরকম কাজের মাধ্যমে তাদের চরম ইসলাম বিদ্বেষীতার রূপ বারবার সামনে চলে আসে। আমি প্রথম আলো সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। হয় তিনি তাদের ম্যাগাজিন 'কিশোর আলো' তে এই জিনিস ছাপানোর জন্য ক্ষমা চাইবেন, নয়তো রাষ্ট্রের কাছে কোটি মুসলমানের পক্ষ থেকে আকুল আবেদন, তাকে আইনের আওতায় আনা হোক।
এবং, 'কিশোর আলো'র উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দয়া করে আমাদের শিশুদের মগজ ধোলাই করবেন না। ইসলামের বিরুদ্ধ্যে আপনাদের এই হীন তৎপরতা বন্ধ করুন। মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে জুয়া খেলবেন না।
অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার নাম 'বাক-স্বাধীণতা' নয়। যদি মনে করেন এটা নির্দিষ্ট কোন ধর্মের শ্লোগান প্রমোট করছেন, তাহলে ম্যাগাজিনের উপরে বড় বড় অক্ষরে লিখে দিন 'হিন্দু সংখ্যা'.....

(সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে এটার বিরুদ্ধে লিখার, প্রতিবাদ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। ছবিটি ছাপানো হয়েছে কিশোর আলোর এ বছরের জুলাই সংখ্যায়। ৯৬ পৃষ্টায়।

তাবলীগ বিষয়ে দেওবন্দের অবস্থান বিভ্রান্তির কোন সুযোগ নেই



দারুল উলুমের ওয়েব পেইজে মুহতামি সাহেব স্বাক্ষরিত প্যাডে তাবলীগ বিষয়ে উর্দু ভাষায় কি প্রচারীত হয়েছ? তার ব্যাখ্যা,লিংক অনুবাদসহ নিচে আসছে।
তবে কিছু স্বার্থপর অপব্যাখ্যা দিয়ে দারুল উলুমকে তাবলীগ বিরোধী অবস্থান নেয়ার অপপ্রচারে ব্যস্ত, তাতে বিভ্রান্তি হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে স্পষ্ট করেছেন বিজ্ঞ উলামাগণ।
-----------ওয়েব পেইজের অনুবাদ

তাবলীগি জামাতের মুরুব্বিদের পরস্পর মতনৈক্যের কথা কোন গোপন কথা নয়, মিল্লাতে ইসলামিয়ার সাধারণ থেকে সাধারণ ব্যাক্তিও বিষয়টি নিয়ে অবগত আছে।

দারুল উলুম দেওবন্দের বর্তমান ছোট বড় সকলের আগ্রহ ছিল উক্ত মতনৈক্য পরস্পর আলোচনার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব দুর করবে শুধু তাবলীগের জন্য না গোটা উম্মত এবং মিল্লাতের জন্য কল্যাণকর হবে।

এ বিষয়ে দারুল উলুম বার বার অবস্থান পরিস্কা্র করে আসছে যে মতনৈক্যটা যেহেতু
তাবলীগের অভ্যান্তরীন বিষয়, ধর্মিয় কোন বিধি বিধান নিয়ে নয়, দারুল উলুম এ বিষয়ে
কোন ধরনের ইন্ট্রেষ্টি হওয়া প্রয়োজন মনে করেনা।যেহেতু দারুল উলুমের আসল কাজই হল আমল-আখলাক ,ইলম শিক্ষা দেয়া এবং তার প্রচার করা।

দারুল উলুমের এমন নিরপেক্ষ অবস্থান ঘোষনার পরও এক শ্রেনীর পক্ষ থেকে বুঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে দারুল উলুম উক্ত মতনৈক্যে বিশেষ একটি পক্ষের হয়ে কাজ করছে।
এই ভুয়া সংবাদের কারনে শুধু হিন্দুস্তান নয় বিভিন্ন বাইরের রাষ্ট্র থেকেও দারুল উলুমের ভক্তবৃন্দ দারুল উলুমের সঠিক অবস্থান জানতে চায় , এর বড় একটি সংখ্যা এ বিষয়ে সরাসরি দারুল ‍উলুমে প্রশ্নও করেছেন।

সে কারণে দারুল উলুম আরো একবার মিল্লাতের সকলের কাছে স্পষ্ট করতে চায় যে উক্ত মতনৈক্যের সাথে দারুল উলুমের সামান্যতম সম্পর্ক নেই।

তবে দ্বীনের তাবলীগ এবং দাওয়াতের ব্যাপারে তো দারুল উলুম দেওবন্দ সুচনালগ্ন থেকেই গুরুত্বের সাথে আন্জাম দিয়ে আসছে ইনশা’আল্লাহ আগামিতেও আন্জাম দিয়ে যাবে।