মাও. আতীকুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ
শিয়া ও ইহুদিরা বাইরে যতই ভিন্নতা দেখাক তারা ভেতরে ভেতরে এক। একটা লেখায় তাদের মধ্যে কিছু মিল খুঁজে পেলাম। গত কিছুদিনে এ বিষয়ে সরাসরি বেশ কিছু অভিজ্ঞতাও হয়েছে। মিলগুলো দেখা যাক:
(প্রথম ভাগ)
এক: ইসরাঈল মুসলমানদের ভূমি দখল করে রেখেছে। সেখানকার অসংখ্য অধিবাসীকে বিতাড়িত করেছে, বাকি থেকে যাওয়া অধিবাসীদের উপর নির্যাতনের স্টীম রোলার চালাচ্ছে।
= ইরানও আরব শহর ‘আহওয়ায’ দখল করে রেখেছে। সেখানকার সুন্নী অধিবাসীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে। যারাই প্রতিবাদ জানাচ্ছে, তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে শহীদ করে দেয়া হচ্ছে।
দুই: ইসরাঈল মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের ধর্মগ্রন্থ তালমুদ ও তাওরাতের ভাষ্য দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে। । মুসলিম ও আরবদের প্রতি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা পোষণকারী হলো, কট্টর ইহুদি গোষ্ঠী হেরিদেম ও হেসিদেম। এর অর্থ হলো: ধার্মিক।
= ইরানও মুসলিম ও আরবদের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের আকীদা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে। এ বিষয়ে তাদের ইমামদের ফতোয়া আছে। আর শিয়াদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্বেষ পরায়ণ শিয়া হলো ‘সাফাভী’ শিয়ারা। বর্তমানে ইরাকে লড়তে আসা ইরানি সৈন্যদের বেশিরভাগই সাফাভি শিয়া।
তিন: কট্টর ইহুদিরা ১৯৬৯ সালে মসজিদে আকসায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল।
= ১৪০৯ হিজরিতে কট্টরপন্থী শিয়ারাও মক্কা মুকাররামায় বোমা বিস্ফোরণের চেষ্টা চালিয়েছিল।
চার: প্রায় দশ মিলিয়ন ফিলিস্তিনী আজ ইসরাঈলের কারণে অধিকারবঞ্চিত।
= প্রায় দশ মিলিয়ন আহওয়াযবাসী আজ অধিকারবঞ্চিত ইরানের হিংসাত্মক শাসনের কারণে।
পাঁচ: ইসরাঈল তার স্বার্থের কারনে ইরাকে মার্কিন হামলার পক্ষে প্রধান উস্কানিদাতা হিসেবে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।
= ইরানও তাদের স্বার্থের কারণে ইরাকে ও আফগানিস্তানে মার্কিন হামলাকে সমর্থন জানিয়েছে। আহমাদিনেজাদও একবার ভুলে প্রকাশ্যে এ বিষয়টা স্বীকার করে ফেলেছিল।
ছয়: ইসরাঈল সেই প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই চেষ্টা করে আসছে, মসজিদে আকসাকে ধ্বংস করে দেয়া জন্যে। মসজিদের স্থানে তাদের কল্পিত ‘হায়কালে সুলাইমানি’ নির্মান করার লক্ষ্যে তারা দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। ইহুদিরা ‘লাল গাভি’ বের হওয়ার অপেক্ষা করছে। এই কল্পিত ‘লাল গাই’ বের হলেই তারা মসজিদে আকসাকে ধ্বংস করে ফেলবে। আল্লাহই জানেন কবে কখন কোথায় কিভাবে তাদের কল্পিত লাল গাই বের হবে। চরমপন্থী ইহুদিরা অবশ্য এখনই প্রকাশে মিছিল করে, যেন মসজিদকে ভেঙে ফেলা হয়।
= ইরান থেকে হজ্জ করতে আসা শিয়ারা হাজীদের মধ্যে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালায়। তারা তো মিছিলও করেছে। কোম নগরীর শিয়া আলেমরা ঘোষণাও দিয়ে আসছে, কিবলা যেন কাবা শরীফের দিক থেকে ঘুরিয়ে, কারবালা ও নাজাফের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। শিয়ারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, কখন তাদের প্রতীক্ষিত ‘মাহদী’ আসবে এবং কাবাঘর ধ্বংস করবে। নাউযুবিল্লাহ।
সাত: ইসরাঈল হাইফা নগরী ও গাযার উপকূলের তেল-গ্যাস চুরি করে নিয়ে যাচ্চে। জর্দান নদীর পানি অন্যায়ভাবে ভোগদখল করছে। লেবানন নদীর পানি ভোগদখল করছে। জর্দানের অধিবাসীরা এ কারণে পানিসংকটে ভুগছে। গাযার মুসলমানরা মানবেতর জীবন যাপন করছে ।
= ইরান আহওয়াযের পুরো তেলসম্পদ ও অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ জোরদখল করে আসছে। ইরানের তেলসম্পদের ৮০% ভাগই আহওয়াযে। অথচ আহওয়াযের আরব সুন্নীরা বেকারত্ব-অথসংকটের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে।
আট: ইসরাঈল দাবি করে, ফিলিস্তিনিরাও তাদের দেশের নাগরিক। কিন্তু তাদের নেই কোনও নাগরিক অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা। তারা নিরন্তর হত্যা-গুম ও বোমা-বিমান হামলার শিকার। সরকারি অফিস-কাচারিতে চাকরিসুবিধাবঞ্চিত।
= ইরানও দাবি করে, কুর্দি, বেলুচ ও আহওয়াযবাসীরা তার নাগরিক। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইরান তাদের প্রতি সব সময় খড়গহস্ত। ইরানের এই মাযলুম মানুষগুলো নিরন্তর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার।
নয়: ইসরাঈলের প্রতিটি শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পতিতালয়। ভিন্ন ভাষায়। অন্য অঙ্গিকে। তারা এর মাধ্যমে যৌনব্যবসাকে ব্যাপক করে তুলেছে। পর্যটকদেরকে অকৃষ্ট করছে।
= ইরান যৌনব্যবসাকে বৈধতা দিয়েছে ভিন্ন কৌশলে। ‘সতীত্বের ঘর’-এর মাধ্যমে তারা এই কাজ সারে। এই সতীত্বঘরে দুইজন অপরিচিত পুরষ-মহিলা ‘মুতআ’ বিবাহের মাধ্যমে তাদের চাহিদা চরিতার্থ করে।
শিয়াদের মতে, যে ব্যক্তি একবার মুতা বিয়ে করবে, তার জন্যে ৭০ হাজার ফিরিশতা রহমতের দু‘আ করবে। আর যে মুতআ করবে না, তার ওপর ৭০ হাজার ফিরিশতা লা‘নত করতে থাকে।
দশ: ইসরাঈল তাদের এজেন্ট রিক্রুট করে অপরিমেয় অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে অথবা সুন্দরী নারীদের লেলিয়ে দিয়ে।
= ইরানও তাদের পক্ষে লোক সংগ্রহ করে বিপুল অর্থব্যয়ে। মুতআ বিয়েকে ব্যপকতর করে তোলার মাধ্যমে।
এগার: ইসরাঈল তাদের রাষ্ট্রের ঘোষণাপত্রে লিখেছে: ইসরাঈল একটি গণতান্ত্রিক ইহুদি রাষ্ট্র। একটা কট্টর ইহুদিবাদী রাষ্ট্র কিভাবে গণতান্ত্রিক হয়?
= ইরানও তাদের সংবিধানে লিখেছে: ইরান একটি জাতীয়াতবাদী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র।
একটা কট্টর সুন্নিবিরোধী শিয়াবাদি রাষ্ট কিভাবে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়?
বার: ইসরাঈল তার আশেপাশের রাষ্ট্রগুলোতে সামরিক অধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে ব্যপকভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
= ইরানও তাই করছে। বর্তমানে ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন, সিরিয়া ইরানের প্রভাব বলয়ে। প্রয়াত বাদশাহ আবদুল্লাহর আমলে সৌদি আরবও পুরোপুরি ইরানের প্রভাব বলয়ে ছিল। আবদুল্লাহর পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিল শিয়া। এই শিয়া মন্ত্রীর হাত ধরে, সৌদিতে শিয়াদের ছিল পোয়াবারো অবস্থা। এখন হয়তো বাদশাহ সালমানের আমলে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে।
তের: ইসরাঈল সম্পূর্ণরূপে সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতার মধ্যে বাস করে। তারা তাদের যাবতীয় কর্মকান্ডকে বিশ্ব থেকে আলাদা করে রাখে। তারা বিশ্বের যেখানেই থাকুক, তারা নিজেদেরকে স্বতন্ত্র একটা বলয়ের মধ্যে ধরে রাখে। সেখানকার জনস্রোতের সাথে মিশে যায় না।
= ইরানও সবক্ষেত্রে তাদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখে। ভাষা-সংস্কৃতি-রাজনীতি সবক্ষেত্রেই। তাদের চারপাশে সুন্নী রাষ্ট্র থাকলেও তারা তাদের মতো করেই থাকে। আশেপাশের কোনও প্রভাব তাদেরকে প্রভাবিত করতে পারেনা। এমনকি হজে এলেও তারা দলবদ্ধভাবে আলাদা হয়ে থাকে। অন্যদের সাখে ভুলেও কথা বলতে বা মতবিনিময় করতে যায় না।
চৌদ্দ: ইসরাঈল বংশগতভাবেই আরব ও মুসলিমদেরকে ঘৃণা করে। এই ঘৃণা তাদের মধ্যে বংশানুক্রমেই চলে আসছে।
= ইরানও জন্মগতভাবেই আরব ও মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে। ফিরদাওসীর শাহনামাতেও এই ঘৃণা ফুটে উঠেছে। এক জায়গায় তিনি লিখেছেন:
= আমরা কিভাবে পতঙ্গখোর আরবদেরকে আমাদের পারস্য দখল করার অনুমতি দিতে পারি?
তিনি আরো লিখেছেন:
-আরবরা খাবে উটের পেশাব আর ইসফাহানের কুকুরগুলো খাবে নদীর শীতল পানি।
এই শাহনামা এখন বলতে গেলে ইরানের অন্যতম সংবিধান।
(দ্বিতীয় ভাগ)
*** এখন যে হুসিরা (হুতি) ইয়েমেন দখল করে নিয়েছে, সেটা কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। সেটা ইরানের অনেক দিনের পুরনো পরিকল্পনা। অনেকের হয়তো মনে আছে, মিসরে প্রেসিডেন্ট মুরসি ক্ষমতায় আসার পর, ইরানের সাথে বেশ দহরম-মহরম শুরু হয়েছিল। তখন বেশ কিছু ঘটনা দেখে আমার কাছে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়েছিল। এখন আরেক মুসলিম প্রেসিডেন্ট ইরানের মাধে নতুন করে পিরিত শুরু করেছেন। একটা মূল কথা সবার মনে রাখা দরকার:
= ইরান ও ইসরাঈলের সাথে কখনোই, কিছুতেই, কোনওভাবেই সখ্যতা চলে না। চলতে পারে না। সেটা কূটনৈতিক ভাষাতেই হোক আর রাষ্ট্রীয় ভাষাতেই হোক।
= ইহুদিরা শত শত নবীদের হত্যকারী। আমাদের নবীজিও (সা.) তাদের দেয়া বিষের কারণেই জীবনের শেষ মুহূর্তে তীব যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন।
=শিয়ারা শত শত সাহাবায়ে কেরাম ও আউলিয়ায়ে কেরামের হত্যাকারী। ইসলামের বড় বড় দুর্ঘটনা শিয়াদের ইন্ধনেই ঘটেছে।
= শিয়াদের সাথে কোনওভাবেই হাত মেলানো কোনও মুসলিমের পক্ষে শোভনীয় নয়। তিনি যত বড় ইসলামের মুক্তিদাতা ক্যারিশমেটিক নেতাই হোন। । কোনও মুসলিম নেতার পক্ষে শিয়াদের মাযারে গিয়ে ভক্তি গদগদ হয়ে দু‘আ করা শোভনীয় নয়।
= তার মানে এই নয় যে, আমরা শিয়াদেরকে ধরে ধরে মেরে ফেলবো। আমরা বলতে চাচ্ছি, শিয়াদের সাথে আমরা মানবিক আচরণ করবো। কিন্তু তাদেরকে মুসলিম মনে করে হাত মেলাতে যাবো না।
= যারাই এমনটা করবে, নিঃসন্দেহে তারা ভুলের মধ্যে আছে।
= শিয়া কাফের। জু না মানে, ওহ ভী কাফের!
= গত বিশ-বাইশ দিন বলতে গেলে দুনিয়া থেকেই বিচ্ছিন্ন ছিলাম। বেশ কিছু আলোচিত বিষয় জমে গেছে। কথা তো রয়ে গেল অনেক। আজকের লেখা লম্বা হয়ে গিয়েছে। পরে দেখা যাক। ইনশাআল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন