হযরত উসমান গণি (রাঃ)হলেন ইসলামের তৃতীয় খলীফা।তিনি অত্যন্ত নরম স্বভাবের একজন সাহাবী ছিলেন।যেই দশজন সাহাবীকে রাসুলে কারীম (সাঃ) জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়েছিলেন যারা আমাদের মাঝে আশারায়ে মুবাশ্শারা হিসেবে পরিচিত।হযরত উসমান গণি (রাঃ) ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ।
তিনি যখন কোন কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করতেন তখন তিনি এপরিমান কাঁদতেন যে,বেহুশের মত হয়ে যেতেন।সাথীরা জিজ্ঞেস করতেনঃহে উসমান!আপনি হলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা,এবং আপনি হলেন আশারায়ে মুবাশ্শারাদের একজন।তারপরও আপনি কবর দেখে এভাবে কাঁদেন কেন ?
হযরত উসমান (রাঃ) উত্তরে বলতেন,হে আমার সাথীরা আমি হতে পারি ইসলামের তৃতীয় খলিফা,হতে পারি আশারায়ে মুবাশ্শারাদের একজন। কিন্তু তারপরও আমারতো জানা নেই যে,আখেরাতের প্রথম ঘাটি কবরের মধ্যে আমার কি অবস্থা হবে ? আমারতো জানা নেই যে,আমি আমার আখেরাতের প্রথম ঘাটি কবর থেকে মুক্তি পাব কিনা ? যার কবরের মুক্তি সহজ হয়ে যায় তার আখেরাতের অন্যান্য ঘাটি সহজ হয়ে যাবে। এই জন্য আমি কবর দেখে এভাবে পেরেশান হয়ে যাই।
চিন্তা করে দেখুন!ইসলামের তৃতীয় খলিফা হয়েও,আশারায়ে মুবাশ্শারা হয়েও হযরত উসমান গণি (রাঃ) আখেরাতের ব্যপারে এভাবে চিন্তিত থাকতেন।
সেই তুলনায় আমরা কি পরিমান আখেরাতের ব্যপারে উদাসিন? অথচ আমাদের প্রতিটি মুহুর্ত গুনাহের মধ্যে কাটে ভালো কাজের পরিমান নাই বল্লেই চলে। আমরা কি আখেরাতের প্রথম ঘাটি কবর থেকে মুক্তি পাব ? আমরা কি পারব কবরের সেই তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে ?
কবরের তিনটি প্রশ্নঃ
********************
কবরের মধ্যে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর দুইজন ফেরেশ্তা এসে তিনটি প্রশ্ন করেনঃ(১)তোমার প্রভূ কে ?নেককার বান্দা উত্তরে বলে আমার প্রভূ হলেন আল্লাহ।(২)তোমার ধর্ম কি? নেককার বান্দা উত্তরে বলে আমার ধর্ম হল ইসলাম।(৩)এই ব্যক্তি যাকে তোমার কাছে পাঠানো হল তিনি কে? নেককার বান্দা উত্তরে বলে তিনি হলেন আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ)।তখন অদৃশ্য থেকে আওয়াজ আসে,আমার বান্দা সঠিক উত্তর দিয়েছে।তারপর সুন্দর চেহারা বিশিষ্ট একজন ফেরেস্তা এসে মৃত ব্যক্তিকে বেহেস্তি পোশাক পরিধান করিয়ে দেয়,তার কবরে বেহেস্তি বিছানা বিছিয়ে দেওয়া হয়,বেহেস্তের সাথে কবরের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং তার কবরকে দুরত্ব সমপরিমান প্রশারিত করে দেওয়া হয়।তারপর তাকে বলা হয়, এটা হল সেই দিন যেদিন সম্পর্কে তোমার প্রভূ ওয়াদা করেছিলেন।তারপর মৃত ব্যক্তি এমন একটি আরামের ঘুম দিবে এক ঘুমেই কেয়ামতের সময় এসে যাবে।তখন তার কাছে মনে হবে সামান্য সময় মাত্র ঘুমিয়েছিল।
কিন্তু গুনাহগার বান্দা প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে বলবে,হায় আফসুস!হায় আফসুস!আমি কিছুই জানিনা,আমি কিছুই জানিনা। তখন তার কবরে কেয়ামত কঠিন কঠিন শাস্তি চলতে থাকবে।
কবরের উত্তর কিভাবে শিখবঃ
*****************************
কবরের এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর ঐব্যক্তিই দিতে পারবে যে ব্যক্তির দুনিয়াবী জীবনে আল্লাহর সাথে ও তার বিধানাবলী পালনের সাথে, ইসলামের সাথে ও ইসলামের বিধানের সাথে,রাসুলের সাথে ও রাসুলের সুন্নাতের সাথে মুহাব্বত থাকবে।সুতরাং চিন্তা করা উচিত যে,আমরা কবরের এই তিন প্রশ্নের প্রস্তুতি হিসেবে আল্লাহর সাথে, ইসলামের সাথে ও ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)এর সাথে কি পরিমান সম্পর্ক রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবরের ব্যপারে সতর্ক থাকা ও কবরের তিনটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মত আমল করার তাওফিক দান করুন।
আমীন!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন