বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৬

একটি লাশের দাওয়াত এবং মৃত্যু পথযাত্রীর অপেক্ষা!


ফোনটা বেজে উঠল। অসময়ে রিসিভ করতে মনে চায় না। রিসিভ করতেই বয়স্ক মানুষের কণ্ঠ ভেসে এল। সালাম বিনিময়ের পর জিজ্ঞাসা করলেন- মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী বলছেন?
- জি বলুন।
- নাটোর থেকে বলছি।
- হু।
- এক মাস আগে আপনাকে নাটোরে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। মনে আছে?
- ডায়রীতে লেখা থাকলে মনে থাকবে ইনশাআল্লাহ। 
- হাফেজ মুতিউর রহমান আপনাকে দাওয়াত দিয়েছিল। 
- হ্যাঁ, হ্যাঁ।
- সেতো মারা গেছে। 
- মানে?
- এইতো কিছুদিন আগে মারা গেছে। ঢাকায় মাদরাসায় থাকা অবস্থায় হার্ট ব্লক হয়ে মারা গেছে। তারপর বাড়িতে এনে দাফন করা হয়েছে। বিয়ের কথা চলছিল। সব কিছু প্রায় ঠিক ছিল। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাকে নিয়ে গেলেন।
কি বলবো? বুঝে পাচ্ছিলাম না। অজান্তে মুখে চলে এলঃ ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেঊন! নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য, তার কাছেই সবাই ফিরে যাবো। 
চুপ করে রইলাম। জবান বন্ধ হয়ে গেল। শব্দ বের হচ্ছিল না মুখ থেকে। 
অপরপ্রান্ত থেকে মাওলানা সাহেব বলছেনঃ হুজুর হাফেজ মতিউর রহমানের বাবার সাথে কথা বলবেন?
বললাম- দিন। 
বৃদ্ধ মানুষটা সালাম দিল। জবাব দিয়ে কি বলা উচিত মনে আসছে না। বললাম- হায়াত মওত সবই আল্লাহর হাতে। কার কখন কিভাবে চলে যেতে হবে জানা নেই। তাই ধৈর্য ধরুন। আমরা দুআ করি। আপনিও আমাদের জন্য দুআ করবেন। 
মাওলানা সাহেব আবার জানালেনঃ হুজুর! হাফেজ মতিউর রহমান (রহঃ) মারা গেলেও মাহফিল কিন্তু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ আমরা যোগাযোগ রাখবো।
বললাম- হু।
মোবাইলটা রাখার পর চিন্তা জগত যেন স্তব্ধ হয়ে এল। খুললাম ডায়রী। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ১৯ তারিখের দাওয়াত। লেখা আছে দাওয়াতদাতা- হাফিজ মতিউর রহমান। তারপর তার মোবাইল নাম্বার। 
ঢাকার কামরাঙ্গিরচর এক মাদরাসায় পড়াতেন। চলে গেলেন। আমাকে দাওয়াত দিয়ে। একজন মৃত মানুষের দাওয়াতে যাবো এক মৃত্যু পথযাত্রী। 
কত অনিশ্চয় আমাদের জীবন। কখন কোথায় কিভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হবে জানা নেই। যেকোন স্থানেই হাজির হতে পারে মালাকুল মওত। তবুও কত বেখেয়াল আমাদের জীবন। ক্ষণকালের জন্য কত আয়োজন। কিন্তু চিরকালের জন্য কত বেখবর। 
মনের গহীনে শুধু দাগ কাটছে একটি কথা- "মৃতের দাওয়াতে মৃত্যু পথযাত্রী মেহমান"। এটাই সত্য। পরম সত্য।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন