মুসলিম সমাজে অশ্লীলতা ,বেহায়াপনা,নোংরামী , অনৈতিকতা ছড়িয়ে দেওয়াই যার মুল লক্ষ্য। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে অল্প বয়সে বিবাহ ক্ষতিকর নয় ,বরং উপকারী।
অল্প বয়সে বিবাহ ব্যাপারে পৃথিবীর সকল ধর্মের মানুষ এখন যেন দায়ভার ইসলামের উপর চাপিয়ে দেবার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আর এই অসুস্থ প্রচারণার শিকার হয়ে আজ এমনকি মুসলিমরাও এর বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেছে অথবা নানাভাবে একে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইছে।নাউযুবিল্লাহ। আধুনিক বিজ্ঞান এবং মেডিক্যাল সাইন্স এবং আজকে থেকে হাজার বছর পরের বিজ্ঞান ও মেডিক্যাল সাইন্স একমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনিই জানেন। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক যেটা হালাল করেছেন, সেটা উনার অসীম ইলমে গইব থেকেই হালাল করেছেন এবং মহান আল্লাহ পাক যেটা হারাম করেছেন সেটা উনার অসীম ইলমে গইব থেকেই হারাম করেছেন।
সম্মানিত ইসলামে চিকিৎসা নেয়ার ব্যাপারে কোন বাধা-নিষেধ নেই ।চিকিৎসা বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে অল্প বয়সে বিবাহ এর বিরুদ্ধে বলা অপপ্রচার মাত্র।
সাধারনত মেয়েদের প্রাপ্তবয়স্কতা প্রকাশ পায় ৮ বছর বয়সে আর ছেলেদের ৯.৫ বছর বয়সে ইহা মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৩ আর ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৩.৫ ও হতে পারে। তাহলে দেখা যাচ্ছে এই বয়সেই একটি ছেলে বা মেয়ে সন্তান জন্মগ্রহনে ভুমিকা রাখতে পারে ।
এবার আসা যাক বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে বলা সকল মেডিক্যাল সমস্যাগুলোর ব্যাপারে।
১. অল্প বয়সে গর্ভধারণ বিষয়ক প্রধান যে সমস্যাগুলো সম্পর্কে বলা হয় তা হলো- রক্ত স্বল্পতা, অধিক সময় ধরে ডেলিভারী, ইঊটেরাস বা গর্ভাশয় ফেটে যাওয়া, গর্ভে বাচ্চার ডিস্ট্রেস ইত্যাদি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই সকল গর্ভজনিত কমপ্লিকেশন বা সমস্যা যে শুধু অল্পবয়সী মায়ের ক্ষেত্রেই হবে তা নয়, বরং এগুলো যে কোন বয়সের মায়েদেরই হতে পারে এবং এমন কোন কমপ্লিকেশন নেই যা কেবল অল্পবয়সী মায়েদেরই হয়।যারা এসকল দোহাই দিয়ে অল্প বয়সে বিবাহের বিরুদ্ধ বলা , চিকিৎসা বিজ্ঞান নিয়ে তাদের অজ্ঞতাই প্রমান পায়।
২. মেডিক্যাল সাইন্সের অবসট্রেটিকস বা ধাত্রীবিদ্যায় প্রায় সবকটি রোগের প্রথম ভুক্তভোগীর নাম হলো 'এলডারলি প্রাইমি' বা 'বেশী বয়সে প্রথম গর্ভধারণ'। এমনকি আমাদের দেশে (যে দেশ সম্বন্ধে অমুসলিমরা বলে থাকে যে বাল্য বিবাহের হার অনেক বেশী) হাসপাতালগুলোতেও গর্ভজনিত রোগের প্রধান ভুক্তভোগীরা হলো এলডারলি প্রাইমি বা বেশী বয়সে প্রথম বাচ্চা নেয়া মা। তবে, কম বা বেশী বয়সী মা যাই হোকনা কেন, সকল রোগই এখন চিকিৎসা যোগ্য। বয়স কম হোক কিংবা বেশি সঠিক পুষ্টিমান আর যত্ন নিরাপদ প্রসবের অন্যতম শর্ত । এখন কেউ যদি এ শর্ত মেনে না চলার কারনে কোন সমস্যা হয় তাহলে তার দায় একান্ত তার, অল্প বয়সে বিয়ের উপর নয়।
৩. আরেকটি ব্যাপার হলো এই যে, মেডিক্যাল সাইন্সেই অল্পবয়সে গর্ভধারণ নারীর অনেক জটিল রোগের কার্যকর প্রতিরোধোক বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন- জরায়ুর টিউমার ও ক্যান্সার, ব্রেস্ট টিউমার, হরমোনাল অনেক সমস্যা, ঋতুজনিত সমস্যা ইত্যাদি।
৪. অল্প বয়সে বিয়ে হলে মানষিক সমস্যার কথা বলে অল্প বয়সে বিবাহের অপপ্রচারকারীরা। অথচ গবেষনায় এসেছে অল্প বয়সে বিয়ের মানষিক দিকগত সুবিধা অনেক । যেমন-
ক. সার্থক দম্পত্তি হনঃ একে অন্যকে জানার সুযোগ পায়, পরষ্পরের প্রতি মুহব্বত বৃদ্ধি পায় , সহনশীল হন
খ. পারষ্পরিক সহযোগীতা করার মনোভাব বৃদ্ধি পায়ঃ এরা সক্রিয় এবং একে অন্যকে সহযোগিতা করার প্রবনতা বৃদ্ধি পায়।
গ.একসাথে অনেক বছর জীবন কাটানোর সুযোগ পায়।
ঘ.মানষিক সক্ষমতা বৃদ্ধি- আহাল রুজির জন্য বাহিরে যান এবং আহলিয়া সংসার ও বাচ্ছাদের দেখভাল করেন। ফলে এ দম্পত্তি তাদের সন্তানদের যথেষ্ট সময় দিতে পারেন এবং সন্তানদের পিছনে সময় দেয়ার যে শক্তি প্রয়োজন তা পুরন করতে পারেন।
ঙ. সন্তান জন্মদানে বেশি সক্ষম থাকে ।
৫. কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হলে ফিস্টুলা হওয়ার দোহাই দেয় অল্প বয়সে বিবাহের অপপ্রচারকারীরা। অথচ কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে ফিস্টুলা হওয়ার কারণ নয়। ফিস্টুলা হল দুই বা তার অধিক আবরণী স্তরের মধ্যে অস্বাভাবিক যোগাযোগ।প্রধান কারণ হল-বাচ্চা প্রসবের সময় যদি বাধা পায় যাকে obstructed (বাধাগ্রস্থ) labour বলে। ফিস্টুলা হওয়ার সাথে বয়সের কোন সম্পর্ক নেই। মেয়েদের বিভিন্ন আকার আকৃতির পেলভিস দেখা যায়। কিছু পেলভিস আছে যেখানে Obstructed labour হয়। বাংলাদেশে ফিস্টুলা কেন বেশি হয়?
১. বাচ্চা পেটে থাকার সময় যত্ন না নেয়া ২. জন্মের সময় যত্ন না নেয়া ৩. জন্মের পর থেকে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত যত্ন না নেয়া ৪. চিকিৎসকদের অদক্ষতা ৫. অপারেশনের সময় যত্ন না নেওয়া (Ref-prof.Nurjahan/5th/106) এখানেও বয়সের সাথে বিন্দুমাত্র কোন সম্পর্ক নেই। যারা ফিস্টুলা ক্ষেত্রে কম বয়সে বাচ্চা নেয়া কে দায়ী করে তাদের কথার কোন ভিত্তি নেই।
অর্থাৎ অল্প বয়সে বিয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ক্ষতিকর তো নয়-ই , বরং অনেক উপকারী।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, আজ যারা অল্প বয়সে বিয়ের ধোঁয়া তুলে সম্মানিত ইসলাম উনার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডায় নেমেছে, তারাই সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে শিশু পর্নোগ্রাফির মতো সাঙ্ঘাতিক অনৈতিকতা। এদের মুখের মিষ্টি কথা দিয়ে এরা নিজেদের শিশুদের মহান রক্ষক হিসাবে তুলে ধরে, অথচ এরাই আজ বাঝে জায়গায় গিয়ে গিয়ে শিশু নির্যাতন করে।নিজ ঘরে গিয়ে এরা দেখে তার ছোট্ট শিশু সন্তানটি বল্গাহীন জীবন-যাপন করছে ।বাল্য বিবাহ বিরোধী সমাজে আজ আর পারিবারিক বন্ধন বলে কিছু নেই। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে আর বিশ্বাস নেই, সন্তানেরা বাবা-মাকে মানেনা আর বাবা-মাও সমাজ ও তাদের নিজেদের তৈরী করা আইনের ফাঁদে পড়ে সন্তানদের কিছু বলতে ভয় পায়। যে চিত্রটি পাশ্চাত্য সমাজে মহামারী আকারে দেখা যায়। বাল্য বিবাহ বিরোধীরা তা-ই চায় যাতে মুসলিম সমাজ ও পাশ্চাত্যের মত অনৈতিকতায় ডুবে যাক। মুসলিম বিশ্বকে কাফিরদের বাল্য বিবাহ বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন হয়ে তীব্র প্রতিবাদ করে এদের বিষদাত সমুলে উপড়ে ফেলতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন