১) যারা প্রথম সিরাত পড়া শুরু করেছেন, তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো বই সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া। নবী জীবনের মূল মূল ঘটনা এই বইয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষিপ্তভাবে।লেখেছেন তাকি উছমানি সাহেবের বাবা মুফতি শফি রাহিমাহুল্লাহু। বইটির উর্দু ও বাংলা সংস্করণ আছে।
২) সিরাত অবশ্যই বুঝার বিষয়। কেচ্ছা-কাহিনী না।নিছক ঐতিহাসিক ঘটনা না।সিরাত থেকে আমাদের উপকৃত না হবার একটা বড় কারণ হচ্ছে, আমাদের বুঝাবুঝির তরিকাগত ভুল ও বুঝাবুঝির চর্চার অভাব। এই সমস্যা দূর করতে সবচেয়ে ভালো বই হচ্ছে, শায়েখ রামাদান আল বুতি রাহিমাহুল্লহুর ফিকহুস সিরাহ। বইটির আরবি ও ইংরেজি সংস্করণ আছে।
৩) ছোট আকারের মধ্যে সবচেয়ে সাজানো গুছানো ও শুদ্ধ বর্ণনার প্রতি যত্নবান বই আর রাহিকুল মাখতুম। আধুনিক ভাষা, বর্ণনাশৈলী ও দৃষ্টিভঙ্গী। এই বইটা সবসময় হাতের কাছে রাখার মত বই। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মুজাকারা, বন্ধুদের মধ্যে হালাকাহ বা রাতে ঘুমানোর আগে দশ মিনিট চোখ বোলানোর মত বই। লেখেছেন ছফিউর রহমান মোবারকপুরী হাফিজাহুল্লাহু। বইটির আরবি,ইংরেজি, উর্দু, বাংলাসহ নানা ভাষিক সংস্করণ আছে। বাংলায় খাদিজা আখতার রেজায়ীর অনুবাদ সবচেয়ে ভালো অনুবাদ। তবে, আরও ভালো অনুবাদ হওয়া দরকার।এই অনুবাদে একাডেমিক মান রক্ষা হয়নি।
৪) আর রহিকুল মাখতুমের প্রায় সমমানের বই হচ্ছে, নবীয়ে রহমত। লিখেছেন আলি নাদাবি রাহিমাহুল্লহু। গত শতকের প্রভাবশালী আলেমদের মধ্যে একজন।তবে পার্থক্য হচ্ছে, তৎকালীন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিষয়ে বিস্তৃত বর্ণনা আছে বইটির শুরুতে। আছে লেখকের ব্যক্তিগত সিরাত পাঠের অভিজ্ঞতার গল্প।শামায়েল সংকলনের প্রতি গুরুত্ব আছে। আছে আবেগ ও রুহানিয়াত।এই বইটির সাথে শামায়েলে তিরমিজি মিলিয়ে পড়তে পারেন। তাহলে, ব্যাপক উপকার হবে।বইটির উর্দু, আরবি, বাংলা, ইংরেজিসহ নানা ভাষিক সংস্করণ আছে।
৫) গত শতকের সবচেয়ে বিখ্যাত দুটি সিরাত গ্রন্থ হচ্ছে, শিবলি নুমানি ও সুলাইমান নাদাবি রাহিমাহুমাল্লাহুর সিরাতুন নবী ও আলি সাল্লাবি হাফিজাহুল্লাহুর আস সিরাতুন নাবাবিয়াহ। এই দুইটি বই সম্পর্কে কথা বলা খুব কঠিন। তারচে বরং বলা ভালো, এর মধ্যে সব আছে। প্রথম বইটির উর্দু,বাংলা, ইংরেজি সংস্করণ আছে। দ্বিতীয়টির আরবি ও ইংরেজি। বাংলা নেই। তবে, শুনেছি, সালাফি ঘরানার কে যেন অনুবাদের উদ্যোগ নিয়েছেন।
৬)যারা ট্র্যাডিশনাল পাঠে অভ্যস্ত, ট্র্যাডিশনাল লেখাজোখার গুরুত্ব বুঝেন, তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো বই সিরাতে মুস্তাফা। লিখেছেন ইদ্রিস কন্ধলবি রাহিমাহুল্লহ। সাথে সাথে সিরাতে ইবনে হিশাম ও জাদুল মাআদ লিইবনিল কাইয়িম রাহিমাহুল্লাহ।প্রথম বইদুটিতে সিরাত সংশ্লিষ্ট সব ঘটনা আনার চেষ্টা করা হয়েছে। তৃতীয় বইটিতে সিরাতের বিষয়ভিত্তিক আলোচনা আছে। অসাধারণ একটা বই। প্রেম করার পর ব্যর্থ হলে কি করতে হবে_ সিরাতের আলোকে এর ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই বইটা সবসময় শিথানের কাছে রেখে পড়ার মত বই। এই বই তিনটার বাংলা অনুবাদ আছে।
৭) যারা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সিরাত পাঠ করতে চান, তারা মুনির গাদবানের আল মানহাজুল হারাকি পাঠ করতে পারেন।এই বইয়ে নবীজির জীবনের আন্দোলনী তরিকা ও নীতির কথা বুঝার চেষ্টা করা হয়েছে। সাইয়েদ কুতুব মরহুমের মাইলস্টোনের আলোকে লেখা হয়েছে।
একইসাথে হামিদুল্লাহ খানের নবীজির রাজনৈতিক নথির সংকলন পাঠ আপনার সামনে নবীজির রাজনৈতিক কর্ম-তরিকা বুঝার ক্ষেত্রে ভালো সহায়ক হবে।
তেমনি নবীজির সরকার ব্যবস্থা বুঝতে সাহায্য করবে আব্দুল হাই কাত্তানি রাহিমাহুল্লাহুর বিশাল বই আত তারাতিবুল ইদারিয়াহ।
৮) যারা দার্শনিকভাবে সিরাত পাঠ করতে চান, তাদের জন্য শিবলি নুমানির সিরাতুন নবীই সবচেয়ে ভালো। এর পাশাপাশি শাহ ওলিউল্লাহ দেহলবি রাহিমাহুল্লাহুর হুজ্জাতুলাহিল বালিগার দ্বিতীয় অংশ থেকে পড়তে পারেন। বাংলা অনুবাদ আছে।
#আমার_নবী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন