বৃহস্পতিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৬

পৃথিবীর পরিচয় ও আকার-আকৃতি

মাও. আবুল হুসাইন
জ্যোতির্বিজ্ঞান astronomy علم الفلك বিষয়ে আমার পড়াশোনার সার সংক্ষেপ। উপকৃতদের প্রতি রইল অভিনন্দন।
পৃথিবীকে দেখতে চ্যাপটা flat مسطحة মনে হলেও পৃথিবী গবেষণাকারী বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন পৃথিবী গোলাকৃতির كروية spherical, কিন্তু পৃথিবীর বিশালতার কারণে সেটা সহজে অনুভব করা যায় না। প্রশ্ন আসতে পারে, পৃথিবী চ্যাপটা না হয়ে গোল হয়ে থাকলে সমুদ্রের পানি স্থলে চলে আসে না কেন ? উত্তরে বলা যায়, যারা সমুদ্রের পাড়ে গিয়েছেন, তারা অবশ্য দেখেছেন মহান আল্লাহ কিভাবে সারাক্ষণ ঘূর্ণয়মান ডেউয়ের বাঁধ দিয়ে স্থলের দিকে সমুদ্রের পানি ধেয়ে আসার পথ রুদ্ধ করে রেখেছেন। 
---
বিজ্ঞানীরা আরো জানিয়েছেন যে, পৃথিবী মহাকাশ الفضاء space বা মহাশূণ্যের একটি গ্রহমাত্র। তাদের মতে মহাকাশে ছড়িয়ে আছে কোটি কোটি গ্যালাক্সী galaxy مجرة বা ছায়াপথ। আর এ গ্যালাক্সীগুলোতে রয়েছে কোটি কোটি নক্ষত্র نجم star। আর কোটি কোটি গ্যালাক্সীর মধ্যে একটি গ্যালাক্সীর নাম হচ্ছে Milky Way মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সী درب اللبانة (বাংলায় আকাশগঙ্গা)। আর এ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সীতে নাকি রয়েছে দশহাজার কোটি তারা বা নক্ষত্র। মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সীর এ দশ হাজার কোটি তারার মধ্যে মাঝারির চেয়েও ছোট একটি তারার নাম হচ্ছে sun الشمس সূর্য, যাতেই একমাত্র রয়েছে প্রাণীর অস্তিত্ব। আবার এ সূর্যকে ঘিরে রয়েছে ছোট-বড় ৯টি গ্রহ كوكب planet। যথাঃ বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন, প্লুটো। অনেক বিজ্ঞানী চ্যারন ও ইউবি-৩১৩ নামক আরো দুইটি গ্রহের কথা বলেছেন। তবে সম্প্রতি অনেক বিজ্ঞানী ক্ষুদ্রত্ব ও সূর্য থেকে অতি দুরত্বের কারণে চ্যারন ও ইউবি-৩১৩ এর সাথে প্লুটোকেও গ্রহ থেকে বাদ দিয়েছেন। এসব গ্রহগুলোকেকে একত্রে সৌরজগত Solar System المجموعة الشمسية বলা হয়। এ গ্রহগুলোর একটি মাঝারি আকৃতির গ্রহ হচ্ছে আমাদের পৃথিবী الأرض Earth। তবে মাঝেমধ্যে প্রকাশিত হওয়া ‘ধুমকেতু’ সৌরজগতের সদস্য নাকি অন্য কোনো ছায়াপথ থেকে অতিথি হিসেবে আসে তা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মাঝে বিরোধ রয়েছে। আর এ গ্রহগুলোর প্রতিটিতেই রয়েছে কিছু উপগ্রহ। আকাশে যে চাঁদ দেখা যায়, তা হল পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ (এ পর্যন্ত মঙ্গলগ্রহে ২টি, বৃহস্পতিতে ৬২টি, শনিতে ৩১টি, ইউরেনাসে ২৭ ও নেপচুনে ১৩টি চাঁদ তথা উপগ্রহ আবি®কৃত হয়েছে)। ভূপৃষ্ঠ থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব ৩ লক্ষ ৮২ হাজার ১৭১ কিলোমিটার।

সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে পৃথিবী পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। এটি সৌরজগতের চারটি কঠিন/শিলাময় Terrestrial গ্রহের অন্যতম। পৃথিবীর অপর নাম "বিশ্ব" world العالم বা "নীলগ্রহ"। লাতিন ভাষায় এই গ্রহের নাম টেরা (Terra)।
অন্যদিকে সূর্য ও তার গ্রহগুলো সারক্ষণই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। আর এ ঘুরার কারণেই পৃথিবীতে সৃষ্টি হচ্ছে আলো ও অন্ধকার বা দিন-রাত। উল্লেখ্য, সূর্যকে ঘিরে থাকা গ্রহগুলো সূর্য থেকে কোটি কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তম্মধ্যে সূর্যের সর্বাধিক কাছের গ্রহ ‘বুধ’র দূরত্ব সূর্য থেকে প্রায় ৫ কোটি কিলোমিটার। আর সূর্যের সর্বাধিক দূরের গ্রহ ‘প্লুটো’র দূরত্ব সূর্য থেকে প্রায় ৫৯৫ কোটি ৫০ লক্ষ কিলোমিটার। আর সূর্য থেকে আমাদের পৃথিবীর দূরত্ব ৯ কোটি ৩০ লক্ষ কিলোমিটার। অন্যদিকে গ্রহগুলোর তুলনায় সূর্য লক্ষ লক্ষ গুণ বড়। আমাদের পৃথিবীর চেয়ে সূর্য ১০ লক্ষ গুণ বড়।
এ হলো মানুষের গবেষণার ফল। তবে এটি একেবারে সত্য যে, বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রথম আসমানের নীচ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। তারা কখনোই সাত আসমানের রহস্য উন্মোচন করতে পারবে না। এমনকি আসমান সম্পর্কে জিন জাতির লোকেরা যতটুকু জানে তাও তারা জানতে সক্ষম হবে না। কোরআন শরীফে এসেছে, জিনেরা ফেরেশতাদের কথা শোনার জন্য প্রথম আসমানের কাছে ভিড়ার চেষ্টা করে তাতে ফেরেশতাদের কঠোর প্রহরা দেখতে পেয়েছে। কেউ প্রহরা ডিঙিয়ে ফেরেশতাদের কথা শুনতে চাইলে তার প্রতি উল্কাপিণ্ড Meteor شهاب ছোড়া হয় (দেখুন সূরা ছফ্ফাতের ৮-১০ ও সূরা জিনে ৮ ও ৯ নম্বর আয়াত)। জিনেরা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছে, "আমরা আকাশ পর্যবেক্ষণ করছি, অতঃপর দেখতে পেয়েছি যে, কঠোর প্রহরী ও উল্কাপিণ্ড দ্বারা আকাশ পরিপূর্ণ। আমরা আকাশের বিভিন্ন ঘাঁটিতে সংবাদ শ্রবণার্থে বসতাম। এখন কেউ সংবাদ শুনতে চাইলে সে জলন্ত উল্কাপিন্ড ওঁৎ পেতে থাকতে দেখে।" সূরা জিন : ৯, ১০
নীচে কুরআন থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি ও ধ্বংস নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরা হল :
১. পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপর। সূত্র : সূরা হূদ : ৭
২. আসমানের সংখ্যা সাতটি। সূত্র : সূরা আত-তলাক : ১২
৩. এ পৃথিবীর মত আরো ছয়টি পৃথিবী/গ্রহ রয়েছে। সূত্র : সূরা আত-তলাক : ১২
৪. আল্লাহ সাত আসমান ও পৃথিবী এবং এর মধ্যকার সবকিছু সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে। সূত্র : সূরা আস-সাজদাহ্ : ৪
৫. মানুষের এক হাজার বছর আল্লাহর কাছে একদিন বলে গনিত হয়। সূত্র : সূরা আল-হজ্ব : ৪৭
৬. পাহাড়কে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীকে স্থির রাখার জন্য। সূত্র : সূরা আন-নাবা‘ : ৬, ৭
৭. দুনিয়ার আসমানকে (অর্থাৎ, পৃথিবীর দিক থেকে প্রথম আসমান) আল্লাহ কিছু গ্রহ كوكب দ্বারা সাজিয়েছেন, যাতে অবাধ্য শয়তানেরা উর্ধধাকাশে গিয়ে ফেরেশতাদের কথা শোনতে না পারে। সূত্র : সূরা আছ-ছফফাত : ৬
৮. দুনিয়ার আসমানকে আল্লাহ কিছু বাতি/উল্কা দ্বারাও সাজিয়েছেন। অবাধ্য শয়তানরা ফেরেশতাদের কথা শোনার জন্য গ্রহকে পাশ কাটিয়ে উপরে যেতে চাইলে উত্তপ্ত এই বাতিগুলো شُهُب তাদের দিকে ছুড়ে মারা হয়। সূত্র : সূরা আল-মুলক্ : ৫, সূরা আল-হিজর : ১৬-১৮
৯. অন্ধকারে মানুষ পথ পাওয়ার জন্যই আল্লাহ তারকারাজি সৃষ্টি করেছেন। সূত্র : সূরা আল-আনআম : ৯৭
১০. যে কুরসীতে আল্লাহর আরশ বিদ্যমান সেটি সপ্তাকাশ ও পৃথিবীকে বেষ্টিত করে রেখেছে। সূত্র : সূরা আল-বাকারা : ২৫৫
১১. যখন কেয়ামত (মানব জাতির সমাপ্তি ও মানুষের সবাইকে জীবনেরর ভালো-মন্দের চূড়ান্ত বিচারের মুখোমুখি করার জন্য পুনর্জীবিতকরণ) আসবে, তখন সাত আসমানের সবটি ফেটে গিয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে যাবে, সূর্যসহ সকল নক্ষত্রকে নিষ্প্রভ করা হবে, গ্রহগুলো পড়ে যাবে, পাহাড়গুলো উড়ে যাবে, পৃথিবীকে বিস্তৃত করে (মাঝখানের সব সাগর-নদী মিটিয়ে ফেলে) তাকে একটি মসৃণ মাঠে রুপান্তরিত করা হবে এবং চতুর্পাশ্বের সমুদ্রকে উত্তপ্ত করা হবে। এরপর নির্দ্দিষ্ট স্থানে রক্ষিত সকল মানুষের প্রাণ ছেড়ে দিয়ে তাতে দেহ সৃষ্টি করা হবে। তখন রাত-দিন বলতে আর কিছু থাকবে না এবং মানুষের কারো মাঝে ক্ষুধাসহ পার্থিব কোনো জৈবিক চাহিদা ও আকর্ষণ অবশিষ্ট থাকবে না। অতঃপর আটজন মহান ফেরেশতা আল্লাহর আরশকে উপর (কুরসী) থেকে নীচে (হাশরের মাঠে) নামাবে। অতঃপর সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক সূচিত হবে সকল মানুষের বিচার অনুষ্ঠান। বিচারের এ পর্বটি এ দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান দীর্ঘ হবে। তথ্যসূত্র : সূরা আত-তাকভীর, সূরা আ-ইনফিতার, সূরা আল-ইনশিকাক, সূরা আল-মুরসালাত, সূরা আল-হা-ক্কাহসহ আরো বিভিন্ন সূরা ও হাদীছ
আল্লাহ আমাদেরকে প্রতারণার এ দুনিয়াতে আখেরাতের হিসাব মাথায় রেখে জীবন যাপন করার তৌফীক দান করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন