হিজরী প্রথম শতকের শেষ দিকে (৯৬ হিজরী) ৭১২ ঈসায়ীতে উমাইয়া শাসনামলে মুসলিম সেনাপতি হযরত মুহম্মদ বিন কাসিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নেতৃত্বে সিন্ধু অঞ্চলে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত হবার মধ্যদিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ইসলামের প্রতিষ্ঠা শুরু হলেও মূলত পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়কালে অর্থাৎ ৮ম হিজরীতে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেই এ অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে।
কারণ চাঁদ দ্বিখ-িত হওয়ার পর চীনের রাজা তাঁইসাং বা তাইসং ইসলাম গ্রহণ করার জন্য লোক পাঠালে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবু কাবশা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেসহ এক কাফেলা পাঠান। তখনকার দিনে চীনের ক্যান্টনে যাওয়ার জন্য আরবদেশ থেকে রওনা করলে পথিমধ্যে ভারতের মালাবার, কালিকট, চেররবন্দর, তৎকালীন আরাকানের চট্টগ্রাম ও আকিয়াব প্রভৃতি স্থানে জাহাজ নোঙ্গর করতো এবং বাতাসের গতিবেগের কারণে বিভিন্ন বন্দরে অনেকদিন যাবৎ অবস্থান করতে হতো। এভাবে যাত্রাকালীন সময়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বিভিন্ন বন্দরে ইসলাম প্রচারের কাজ করতেন। এ ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম ও আকিয়াবেও জাহাজ নোঙ্গর করে উনারা ইসলাম প্রচারের কাজ করেছেন। তখন থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশসহ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিশেষত মায়ানমারের আরাকান অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে।
এ আরাকানের পূর্ব নাম ‘রোখাম’। এটি আরবী শব্দ; যার অর্থ শ্বেতপাথর এবং আরাকানের প্রাচীন রাজধানী ম্রোহংয়ের পূর্বনাম কায়কপ্রু। এটি বার্মিজ শব্দ; যার অর্থও শ্বেতপাথর। এদিক থেকে কায়াকপ্রু অঞ্চল ও রোখাম একই অঞ্চল হেতু রুহমী বলতে রোখাম বা আরাকানকেই বুঝানো হয়।
আরাকানের চন্দ্র-সূর্য বংশের প্রথম রাজা মহৎ ইঙ্গ চন্দ্র (৭৮৮-৮১০ খ্রিস্টাব্দে) মুসলমানদের আচার-আচরণ ও ইসলামের সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধ হয়ে সেখানে ইসলাম প্রচারের ব্যাপক সুযোগ দেন এবং সাথে সাথে রাজা মুসলমানদের স্থায়ীভাবে বসবাসেরও অনুমতি দেন। তাছাড়া আরবে ইসলাম কায়েমের পর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শতাব্দীতে আরব, ইরানী, গৌড়ীয়, ভারতীয়সহ পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসলিম বডুক, নাবিক, ইসলাম প্রচারকগণ আরাকানে এসে এখানকার স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হতেন। এভাবে আরাকানে মুসলমানদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। এরাই বর্তমান আরাকানী মুসলমান।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মতো মুসলিম অধ্যুষিত এ আরাকান রাজ্যে মায়ানমারের মুসলিম বিদ্বেষী বৌদ্ধ সামরিক জান্তা সরকার এখানকার “রোহাংঙ্গ” এলাকার মুসলিম জনগোষ্ঠী যারা রোহিঙ্গা নামে পরিচিত তাদের উপর অহরহ কঠোর ও নির্মমভাবে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। যা বিশ্ববাসীর জানা সম্ভব হয়না। তাদের মৌলিক অধিকার বলতে কিছু নেই। মুসলিম দেশগুলোও এ ভয়াবহ নির্যাতনের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নীরব।
উল্লেখ্য, রাখাইন প্রদেশ ঐতিহাসিকভাবে আরাকান নামে পরিচিত। স্বাধীন মুসলিম দেশ আরাকান ১৭৮৪ সালে তৎকালীন বার্মা দখল করে নেয়। আর ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইনের সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখলের পর থেকে আরাকান রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, সামরিক এবং রাজনৈতিকভাবে বিতাড়নের জন্য এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেয়। মুসলিম বিদ্বেষী বৌদ্ধ সামরিক জান্তা সরকার আরাকানের মুসলমানদের উপর বহুমুখী নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ করে থাকে। তন্মধ্যে সেখানে যখন তখন যে কাউকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে নির্যাতন, বিনা মজুরিতে শ্রম খাটানো, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালনে বিধি নিষেধ আরোপ, মুসলিম পল্লী তুলে দিয়ে সেখানে রাখাইন বুদ্ধ বসতি স্থাপন, বিবাহ বন্ধনে বাধা, যাতায়াতের ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ, নির্বিচারে শহীদ, গণগ্রেফতার, জায়গা জমি ও ওয়াক্ফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক বঞ্চনা ও শোষণ, মহিলাদের শ্লীলতাহানি, ধর্মীয় বিদ্বেষ ও মুসলমানদের সে দেশের নাগরিক হিসেবে অ-স্বীকৃতি, দেশ ত্যাগে বাধ্য করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।যে নির্যাতনগুলো আরো তীব্র মাত্রায় করছে কথিত শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার জয়ী হায়েনা সূচি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন