বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আশুরা : করণীয়-বর্জনীয় আশুরার পরিচয়

মুফতি  Mohiuddin Kasemi সাহেব দাঃ বাঃ
আশুরা শব্দটি আরবি ’আশেরা’ শব্দ থেকে রূপান্তরিত। আর আশেরা হচ্ছে ‘আশারা’ শব্দের বিশেষণ। যার, সাধারণ বাংলা অর্থ হচ্ছে দশ, দশক, দশজন বা দশটি (১০)। অর্থাৎ আশারা একটি আরবি সংখ্যার নাম যার বাংলা অর্থ দশ। দেখা যাচ্ছে, আরবি সংখ্যা ‘আশারা’ (১০) থেকে ‘আশেরা’ (দশম)। আর তা থেকে ‘আশুরা’ শব্দটি নির্গত হয়েছে যার অর্থ, মুহাররম মাসের ১০ তারিখ। (লিসানুল আরব : খ. ৪, পৃ. ৫৬৯( 
এই শাব্দিক পরিবর্তনের ফলে অতিরঞ্জন এবং সম্মানের অর্থ পাওয়া যায়। (ফাতহুল বারী : খ. ৪, ৩১১) 
আশুরার দিনে অনেক বরকত, ফজিলত ও মাহাত্ম্য রয়েছে। দিনটি তাৎপর্যম-িত। এ দিন আসমান-জমিন, পাহাড়-পর্বত, লওহে মাহফুজ, নদী-সাগর, আদম-হাওয়া, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করা হয়েছে। তাছাড়া :
 এ দিনেই হযরত আদম আ. জান্নাতে প্রবেশ করেন। এ দিনেই আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করেন। এ দিনেই তিনি আল্লাহর খলিফা হিসেবে দুনিয়ায় আগমন করেন। 
 এ দিনে হযরত ইবরাহীম আ. জন্মলাভ করেন। এ দিনেই তিনি নমরুদের আগুন থেকে মুক্তি পান। 
 এ দিনেই হযরত ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে মুক্তি লাভ করেন। 
 এ দিনেই হযরত ইউসুফ আ. কূপ থেকে বের হন। 
 এ দিনেই হযরত নুহ আ. এর নৌকা মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি পেয়ে জুদী পাহাড়ে অবতরণ করে।
 হযরত আইয়ুব আ. এ দিনেই দুরারোগ্য ব্যাধি হতে আরোগ্য লাভ করেন। 
 এ দিনেই হযরত মুসাকে আল্লাহ তাআলা ফেরাউনের বিরুদ্ধে সাহায্য করেন। নীলনদের বুকে রাস্তা তৈরি হয়। ফলে মুসা আ. ও তাঁর সঙ্গীবৃন্দ নিরাপদে পেরিয়ে যান। ফেরাউন তার দলবল নিয়ে নদীতে ডুবে মরে। 
 এ দিনেই হযরদ দাউদ আ. এর দোয়া কবুল হয়।
 এ দিনেই হযরত ইয়াকুব আ. এর দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। 
 এ দিনেই হযরত ঈসা আ. অলৌকিকভাবে পিতা ছাড়াই জন্মলাভ করেন। এ দিনেই আল্লাহ তাআলা তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নেন। 
 এ দিনেই হযরত সুলায়মান আ. বিশাল সাম্রাজ্যের রাজত্ব লাভ করেন। 
.
ইসলামপূর্ব আশুরার রোযা 
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ الله عنها ، قالت : كَانَتْ قُرَيْشٌ تَصُومُ عَاشُورَاءَ فَي الجَاهِلِيَّةِ ، وَ كَانَ رسول الله صلى الله عليه وسلم يَصُومُهُ ، فَلمّا هَاجَرَ إلى المدينةِ ، صَامَهُ و أمَرَ بصَوْمِهِ ، فَلمّا فُرِضَ شَهْرُ رَمَضَانَ قال : مَنْ شَاءَ صَامَهُ و مَنْ شَاءَ تَرَكَهُ .
অর্থ : আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : কুরাইশ গোত্র জাহেলি যুগে আশুরার রোযা রাখত এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সেদিন রোযা রাখতেন। অতঃপর রাসুল সা. যখন মদীনায় হিজরত করলেন, তখন তিনি নিজে রোযা রাখলেন এবং অন্যদের রোযা রাখার আদেশ করলেন। তারপর যখন রমযান মাসের রোযা ফরয করা হল, তখন তিনি বললেন : ইচ্ছা হলে রোযা রাখো, না হলে রেখো না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৩)
.
ইসলামে আশুরার রোযা
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ - رضى الله عنهما - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَدِمَ الْمَدِينَةَ فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِى تَصُومُونَهُ গ্ধ. فَقَالُوا هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ أَنْجَى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَقَوْمَهُ وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ فَصَامَهُ مُوسَى شُكْرًا فَنَحْنُ نَصُومُهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَى بِمُوسَى مِنْكُمْ গ্ধ. فَصَامَهُ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ.
অর্থ : ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় হিজরত করলেন, তখন ইহুদি সম্প্রদায়কে আশুরার দিনে রোযা পালন করতে দেখলেন। তাই তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন :
“এটা এমন কোন্ দিন, যে দিনে তোমরা রোযা রাখছ? তারা বলল, এটি একটি মহান দিন, আল্লাহ তাআলা এই দিনে মুসা আ. এবং তাঁর অনুসারীদেরকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফেরাউন ও তার দলবলকে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন। তাই মুসা আ. কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোযা রাখেন। অতএব আমরাও রোযা করি। তারপর নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : তাহলে তো মুসা আ. এর ব্যাপারে তোমাদের তুলনায় আমরা বেশি হকদার। অতঃপর রাসুল সা. রোযা রাখেন এবং রোযা রাখার আদেশ দেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৭১৪, অধ্যায় : باب صَوْمِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ) 
.
আশুরার রোযার ফজিলত 
আবু কাতাদা আল-আনসারি রা. হতে বর্ণিত :
سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ فَقَالَ : يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ
অর্থ : নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার রোযার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “এটা বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা। অর্থাৎ এর মাধ্যমে বিগত এক বছরের গুনাহ ক্ষমা হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৮০৪) 
.
আশুরার রোযার হুকুম
ইমাম নববি রহ. বলেন : 
اتفق العلماء على أن صوم يوم عاشوراء اليوم سنة ليس بواجب
“উলামাগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, আশুরার রোযা সুন্নত। ওয়াজিব নয়। (শরহে মুসলিম : খ. ৮, পৃ. ৪) 
কারণ একাধিক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসের রোযা ফরয হওয়ার পর এই রোযা সম্পর্কে বলেছেন : যার ইচ্ছা রোযা রাখবে আর যার ইচ্ছা রাখবে না। 
عَنْ عَائِشَةَ - رضى الله عنها - أَنَّ يَوْمَ عَاشُورَاءَ كَانَ يُصَامُ فِى الْجَاهِلِيَّةِ فَلَمَّا جَاءَ الإِسْلاَمُ مَنْ شَاءَ صَامَهُ وَمَنْ شَاءَ تَرَكَهُ.
অর্থ : হযরত আয়েশা রা. বলেন, জাহেলি যুগে আশুরার রোযা রাখা হতো। ইসলাম আসার পর কেউ ইচ্ছা করলে রোযা রাখত, আবার কেউ রাখতও না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৬৯৫)
.
আশুরার রোযা কয়টি?
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাররম মাসের দশ তারিখে (আশুরার দিনে) রোযা রাখতেন, একাধিক হাদীসে বর্ণিত তা হয়েছে। তবে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর পূর্বে ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন, আল্লাহ যদি আগামী বছর বাঁচিয়ে রাখেন তাহলে মুহাররমের নয় তারিখেও রোযা রাখব। আর রাসুল সা. যা করার ইচ্ছা করেন তাও সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে : 
حَدَّثَنِي إِسْمَاعِيلُ بْنُ أُمَيَّةَ ، أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا غَطْفَانَ بْنَ طَرِيفٍ ، يَقُولُ : سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ ، يَقُولُ حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ ، وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، إِنَّهُ يَوْمٌ يُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ ، صُمْنَا يَوْمَ التَّاسِعَ إِنْ شَاءَ اللَّهُ ، قَالَ : فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ : ইবনে আব্বাস রা. বলেন : যখন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার রোযা রাখেন এবং অন্যদের রাখার আদেশ করেন, তখন সাহাবাগণ বললেন : এটি একটি এমন দিন যাকে ইহুদি ও খ্রিস্টানেরা সম্মান করে থাকে। অতঃপর নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আগামী বছর ইনশাআল্লাহ নবম তারিখেও রোযা রাখব। হাদীস বর্ণনাকারী বলেন : আগামী বছর আসার পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা যান। (সুনানে আবী দাউদ, হাদীস নং- ২৪৪৭(
অতএব বুঝা গেল, আশুরার রোযা হবে দুটি : নবম এবং দশম তারিখ। আর এটিই হচ্ছে আশুরার রোযার উৎকৃষ্ট স্তর। কারণ এর সমর্থনে সহিহ প্রমাণ বিদ্যমান। অনুরূপ শুধু দশ তারিখে একটি রোযাও রাখা যেতে পারে। কারণ এটিই ছিল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমল। তবে উলামাগণ এটিকে আশুরার রোযার নিম্ন স্তর বলেছেন। অর্থাৎ কেবল আশুরার দশ তারিখে রোযা রাখা অনুত্তম। নয় ও দশ তারিখে দুটি রোযাই মুস্তাহাব ও উত্তম। 
উল্লেখ থাকে যে, অনেকে আশুরার রোযাসহ তার পূর্বে ও পরে আরও একটি অর্থাৎ মোট তিনটি রোযা রাখাকে সর্বোত্তম স্তর বলেছেন। আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহ. বলেন : 
وَيُسْتَحَبُّ أَنْ يَصُومَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ بِصَوْمِ يَوْمٍ قَبْلَهُ أَوْ يَوْمٍ بَعْدَهُ لِيَكُونَ مُخَالِفًا لِأَهْلِ الْكِتَابِ وَنَحْوُهُ فِي الْبَدَائِعِ.
(রদ্দুল মুহতার : খ. ৭, পৃ. ৩২৬; আরও দেখা যেতে পারে : ফাতহুল বারী : খ. ৪, পৃ.৩১১-১২; নায়লুল আউতার : খ.৩, পৃ.৭৩৩; তুহফাতুল আহওয়াযী : খ. ৩, ৩৮২)
..........................

আশুরার রোযার সাথে হুসাইন রা. এর শাহাদাতের কোনো সম্পর্ক আছে কি?
অনেককে এই দিনে রোযা রাখার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলতে শুনা যায় : এই দিনে হুসাইন রা. শহীদ হয়েছিলেন তাই আমরা রোযা রাখছি। দীনের বিষয়ে এটি একটি বিরাট অজ্ঞতা। সাধারণ লোকদের এই উত্তরের পিছনে আছে শিয়া সম্প্রদায়ের কৃতিত্ব! যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পৌত্র হুসাইন রা. এই দিনে কারবালা প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শহীদ হয়েছিলেন, তাই শিয়ারা এই দিনটিকে শোক দিবস হিসাবে উদযাপন করে থাকে। তাই সাধারণ লোকদের নিকট এই দিনটির পরিচয় এবং মর্যাদার কারণ হচ্ছে, হুসাইন রা. এর শাহাদত। আর এ কারণেই হয়ত তারা বলে থাকে, হুসাইন রা. শহীদ হয়েছিলেন তাই রোযা করছি।
এটি একটি বিরাট ভুল ধারণা। কারণ যেদিন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেছেন সেদিন থেকে অহীর ধারা বন্ধ হয়ে গেছে; আর অহীর মাধ্যমেই ইসলামের আদেশ-নিষেধ আসত। ইসলাম পূর্ণতা লাভ করার পরেই রাসুল সা. এর মৃত্যু হয়েছে। তাই তাঁর মৃত্যুর পর ইসলামের নামে কোনো বিধান আবিষ্কৃত হবে না। কেউ এমন করলে তা হবে বিদআত, দীনের মধ্যে নবসংযোজন; যা প্রত্যাখ্যাত ও পরিত্যাজ্য। রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: 
مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
অর্থ : যে ব্যক্তি আমাদের এই দীনে নতুন কিছু আবিষ্কার করল, যা এর অংশ নয় তা প্রত্যাখ্যাত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ৪৫৮৯)
তাই যারা এই নিয়তে রোযা রাখে যে, এই দিনে হুসাইন রা. শহীদ হয়েছিলেন, তাহলে তাদের রোযা তো হবেই না বরং তাদের এই আমল বিদআতে পরিণত হবে। আর অনেক ক্ষেত্রে শিরকও হতে পারে যদি কেউ হুসাইন রা. এর উদ্দেশ্যে তা পালন করে থাকে। কারণ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে ইবাদত করা শিরক। 
...
মুহাররম ও আশুরার প্রচলিত কতিপয় বিদআত

 ঢাল-বাজনা ও লাঠি খেলার আয়োজন করা।
 তাজিয়া তৈরি করা এবং তাজিয়াকে সম্মান করা।
 তাজিয়া মিছিল বের করা।
 মুহাররমের দশ তারিখে কালো জামা-কাপড় পরিধান করা বা কালো পতাকার মিছিল বের করা।
 কিছু মানুষ মুহাররমের প্রথম দশ দিন গোস্ত, মাছ ইত্যাদি খায় না বরং নিরামিষ খায়। 
 কিছু মানুষ মুহাররমের প্রথম দশ দিন মাটিতে ঘুমায়।
 মুহাররম উপলক্ষে কাওয়ালী, জারি বা মুরছিয়া গাওয়ার আসর বসানো।
 শোক দিবস পালন করা।
এ কাজগুলো ইসলাম সমর্থন করে না। তাই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। শুধু এ কাজগুলোই নয়; বরং ইসলাম সমর্থন করে না এমন যে কোনো কাজই বিদআত ও নাজায়েযের কাতারে পড়বে। সর্বপ্রকার শিরক, বিদআত ও কুসংস্কার পরিত্যাগ করে সুন্নাহর পথে পরিচালিত হওয়া দরকার।

খুবই_জরুরী_বিষয়:


Emran Hossain Adib
খুবই_জরুরী_বিষয়: যদি কারো পরিচিত এমন কেউ থাকে যার হাটুর উপরে অথবা নিচের দিকে পা কাটা আছে, তাকে অবশ্যই "পংগু হাস্পাতালের, ৩য় তলায় (শ্যামলি, ঢাকা)" এসে যোগাযোগ করতে বলবেন। সেখানে বিনামূল্যে কৃত্রিম পা লাগানো হবে। এ কাজের জন্য বিদেশ থেকে এক্সপার্টরা আসছেন এবং তাঁরা সম্ভবত ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত থাকবেন। যদি কারো পরিচিত জনের এই সমস্যা থাকে তাহলে আজকেই চলে আসুন। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে সহযোগীতা করতে এই পোস্টটি যতো বেশি সংখ্যক শেয়ার/কপি-পেস্ট করুন যাতে সঠিক ব্যক্তির কাছে খবরটি দ্রুত পৌঁছাতে পারে।

মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মসজিদে চেয়ারকে না বলি


০৯.০৪.২০১৬
নামঃ মসজিদে চেয়ারকে না বলি
বিষয়ঃ ফিক্‌হ
লেখক / অনুবাদকঃ মাওলানা আবুল ফাতাহ
প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল হাদীস
সাইজঃ ৭.৩ এমবি
ডাউনলোড 

সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

سور القرآن ... في قصة


رجل قرأ ( الفاتحة ) قبل ذبح ( البقرة ) وليقتدى بـ ( آل عمران ) تزوج خير ( النساء ) وبينما هو مع أهله فى ( المائدة ) ضحّى ببعض ( الأنعام ) مراعيا بعض ( الأعراف ) وأوكل أمر ( الأنفال ) إلى الله ورسوله معلنا ( التوبة ) إلى الله أسوة بـ ( يونس ) و( هود ) و( يوسف ) ومع صوت ( الرعد ) قرأ قصة ( إبراهيم ) و ( حجر ) ابنه إسماعيل وكانت له خليه ( نحل ) اشتراها فى ذكرى ( الإسراء ) والمعراج ووضعها فى ( كهف ) له ، ثم أمر ابنته ( مريم ) وابنه ( طه ) أن يقوما عليها ؛ ليقتديا بـ ( الأنبياء ) فى العمل والجد ، ولما جاء موسم ( الحج ) انطلقوا مع ( المؤمنون ) متجهين إلى ( النور ) الذى يتلألأ ، وحيث كان يوم ( الفرقان ) وكم كتب فى ذلك ( الشعراء ) وكانوا في حجهم كـ ( النمل ) نظاما ، فسطروا أروع ( قصص ) الاتحاد ؛ لئلا يصيبهم الوهن كحال بيت ( العنكبوت ) وجلس إليهم يقص عليهم غلبة ( الروم ) ناصحا لهم كـ ( لقمان ) مع ابنه أن يسجدوا ( سجدة ) شكر لله ، أن هزم ( الأحزاب ) وألا يجحدوا مثل ( سبأ ) نِعَمَ ( فاطرِ ) السماوات والأرض ، وصلى بهم تاليا سورة ( يس ) مستوين كـ ( الصافات ) من الملائكة ، وما ( صاد ) صيدا ؛ إذ لا زال مع ( الزمر ) فى الحرم داعيا ( غافر ) الذنب الذى ( فصلت ) آيات كتابه أن يغفر له وللمؤمنين ، ثم بدأت ( الشورى ) بينهم عن موعد العودة مع الحذر من تأثرهم بـ ( زخرف ) الدنيا الفانية كـ ( الدخان ) خوفا من يوم تأتى فيه الأمم ( جاثية ) فمروا على ( الأحقاف ) فى حضرموت ؛ لذكر ( محمد ) عليه الصلاة والسلام - لها ولأمنها ، وهناك كان ( الفتح ) فى التجارة مما جعلهم يبنون لهم ( حُجُرات ) ، وأسّسوا محالا أسموها محال ( قاف ) للتجارة فكانت ( ذاريات ) للخير ذروا ، وكان قبل هذا ( الطور ) من أطوار حياته كـ ( النجم ) فصار كـ ( القمر ) يشار إليه بالبنان بفضل ( الرحمن ) ووقعت بعدها ( واقعة ) جعلت حالهم على ( الحديد ) فصبرت زوجته ولم تكن ( مجادلة ) لعلمها أن الله يعوضهم يوم ( الحشر ) إليه وأن الدنيا ( ممتحنة ) فكانوا كـ ( الصف ) يوم ( الجمعة ) تجاهَ هذا البلاء مجتنبين صفات ( المنافقين ) لأن الغُبن الحقيقى غبن يوم ( التغابن ) فكاد ( الطلاق ) يأخذ حكم ( التحريم ) لعمق المودة بينهم ، فـ ( تبارك ) الذى ألف بينهم كما ألف بين يونس والـ ( ـنُّون ) وتذكروا كذلك يوم ( الحاقة ) فى لقاء الله ذى ( المعارج ) فنذروا أنفسهم للدعوة إليه واقتدوا بصبر أيوب و ( نوح ) ، وتأسّوا بجَلَد وحلم المصطفى ؛ حيث وصلت دعوته إلى سائر الإنس و ( الجن ) بعد أن كان ( المزمل ) و ( المدثر ) وهكذا سيشهدُ مقامه يوم ( القيامة ) كل ( إنسان ) إذ تفوق مكانته عند ربه مكانة الملائكة ( المرسلات ) فعَنِ ( النبأ ) العظيم يختلفون ، حتى إذا نزعت ( النازعات ) أرواحهم ( عبسـ ) ـت الوجوه وفزعت الخلائق لهول ( التكوير ) و ( الانفطار ) فأين يهرب المكذبون من الكافرين و ( المطففين ) عند ( انشقاق ) السماء ذات ( البروج ) وذات ( الطارق ) من ربهم ( الأعلى ) إذ تغشاهم ( الغاشية ) ؟ هناك يستبشر المشاؤون فى الظلام لصلاة ( الفجر ) وأهل ( البلد ) نيام حتى طلوع ( الشمس ) وينعم أهل قيام ( الليل ) وصلاة ( الضحى ) فهنيئا لهم ( انشراح ) صدورهم ! ووالذى أقسم بـ ( التين ) وخلق الإنسان من ( علق ) إن أهل ( القدر ) يومئذ من كانوا على ( بينة ) من ربهم فأطاعوه قبل ( زلزلة ) الأرض ، وضمّروا ( العاديات ) فى سبيل الله قبل أن تحل ( القارِعة ) ولم يلههم ( التكاثر ) فكانوا فى كل ( عصر ) هداة مهديين لا يلفتون إلى ( الهمزة ) اللمزة موكلين الأمر إلى الله كما فعل عبد المطلب عند اعتداء أصحاب ( الفيل ) على الكعبة وكان سيدا فى ( قريش ) وما منعوا ( الماعون ) عن أحد ؛ رجاء أن يرويهم من نهر ( الكوثر ) يوم يعطش الظالمون و ( الكافرون ) وتلك حقيقة ( النصر ) الإلهى للنبى المصطفى وأمته ، فى حين يهلك شانؤوه ، ويعقد فى جِيد مَن آذتهُ حبل من ( مسد ) فاللهم تقبل منا وارزقنا ( الإخلاص ) فى القول والعمل يا رب ( الفلق ) ورب ( الناس )...
_______________________
منقول ......

শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ওয়েলিং ওয়ালের সামনে কয়েকজন ইহুদি।


পরিণত হয়েছে। 
ওয়েলিং ওয়ালের সামনে কয়েকজন ইহুদি। আমরা যেমন মক্কায় যাই, তারাও আসে এই ওয়ালের কাছে। আরবীতে এটাকে (حائط البراق) বলা হয়। ইংরেজিতে বলে Western Wall। 
.
ওয়ালটা আসলে কুদস শরীফের পশ্চিম পাশ্বস্থ সীমানা প্রাচীর। এটা মুসলমান ও ইহুদি উভয়ের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। মুসলমানরা মনে করে, এই ওয়ালের সাথে নবীজি সা. মেরাজের রাতে বোরাক বেঁধেছিলেন। ইহুদিরা মনে করে, সুলাইমান আ. যে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন, সেটা কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও, সে মসজিদ থেকে একমাত্র 
এই ‘ওয়ালটা’ই অক্ষত থেকে গেছে। তাই এখানে এসে তারা দু‘আ করে। মুনাজাত করে। দেয়ালের খাঁজে খাঁজে নিজের ইচ্ছার কথা লিখে চিরকুট গুঁজে রাখে। বিশ্বের বড় কেউ ইসরায়েলে বেড়াতে এলে তারা মেহমানকে এখানে একবার হলেও নিয়ে আসে।


বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

কুরআন কারীমে খেজুরের অাঁটি সম্পর্কিত তিনটা শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে:



(১) কিতমীর (القطمير)। খেজুরের অাঁটির উপরের পাতলা আবরণ।
 
(২) ফাতীল (الفتيل)। খেজুরের অাঁটির ফাটলের মধ্যে সুতোর মত পাতলা লম্বা একটা ‘রেশা’।
 
(৩) নাকীর (النقير)। খেজুরবিচির পিঠে খেয়াল করলে দেখা যাবে, ছোট্ট একটা বিন্দু আছে, সেটাকে খোঁচা দিলে ক্ষুদ্র এক ছিদ্র বের হয়। এটাই নাকীর। কুরআন কারীমে তিনটা শব্দই মূল অর্থ বোঝানোর জন্যে ব্যবহৃত হয়নি। অতি তুচ্ছ, সামান্য পরিমাণ বা নগন্য বস্তু বোঝানোর জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে। এই তিনটা শব্দ বারবার মুখস্থ বারবার ভুলি! আশা করি এবার থেকে আর ভুলব না। ইনশাআল্লাহ!


শিক্ষিত আর অশিক্ষিতের মানদণ্ডই বদলে গেছে এখন


শিক্ষিত আর অশিক্ষিতের মানদণ্ডই বদলে গেছে এখন। শিক্ষিত মানে ডিগ্রিধারী। অশিক্ষিত মানে ডিগ্রিহীন।  অথচ বিষয়টা অত সরল নয়। বাস্তবে দেখা যায় অনেক ডিগ্রিধারীই শিক্ষিত নয়। অনেক শিক্ষিতই ডিগ্রিধারী নয়। এমন অনেক কাউন্সেলরের কথা বলা যায়, যাদের কাজ হল, অন্যদেরকে দাম্পত্যজীবনে সুখী হওয়ার উপায় বাতলে দেয়া। এ-বিষয়ে তিনি উচ্চ ডিগ্রিধারী! মজার ব্যাপার হল, তার নিজের দাম্পত্য জীবনেই সুখ নেই। বাঙলাদেশের ডাকসাইটে এক শান্তি বিতরণকারী, ‘ইয়ের’ মাধ্যমে তিনি দাম্পত্যজীবন তো বটেই, নানা দুরারোগ্য ব্যাধিও নাকি তিনি সারিয়ে তোলেন! অথচ দাম্পত্য জীবনে সুখী নন বলেই তার চারপাশে ফিসফাস! অথচ এমন হাজারো সুখী মানুষের উদাহরণ দেয়া যাবে, যারা কাউন্সেলিংয়ের ‘ক’ও জানেন না! এসব তুকতাক ‘টিপস’-এর কথা তারা ইহজনমে কখনো শোনেননি। আমরা চাই প্রকৃত শিক্ষা! সেটা ডিগ্রির মাধ্যমেই হোক আর ডিগ্রি ছাড়াই হোক! প্রাতিষ্ঠানিক হোক অথবা অপ্রাতিষ্ঠানিকই হোক! 

 আমরা চাই অাগের মত সহজ-সরল শিক্ষাজীবন! কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা সেশন ফি দিয়ে,ধাঁ-চকচকে বানোয়াট কল্পনাবিলাসে বুঁদ থেকে অথর্ব ছেঁদো কাগুজে ডিগ্রি আমাদের দরকার নেই! যে ডিগ্রি আমাকে রাস্তার গাড়ির মডেল আর শো রূমের মোবাইলের আপডেট ভার্শনের দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে হ্যাংলার মত জুলজুল করে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করে, সারাক্ষণ হাহাকারে ডুবিয়ে রাখে, আহা, কখন আমার এমন একটা গাড়ি হবে! এমন একটা মোবাইল হবে! নিকুচি করি এমন ডিগ্রির!!!!


কুরবানি দিচ্ছেন, পঁয়ত্রিশতম উসমানি সুলতান মুহাম্মাদ (৫ম)। তিনি মুহাম্মাদ রাশাদ নামেও পরিচিত


কুরবানি দিচ্ছেন, পঁয়ত্রিশতম উসমানি সুলতান মুহাম্মাদ (৫ম)। তিনি মুহাম্মাদ রাশাদ নামেও পরিচিত। তার মেয়াদকাল ছিল ১৯০৯-১৯১৮। তার আগের সুলতান আবদুল হামীদ ২য়। মুহাম্মাদ রাশাদ ছিলেন প্রতিকী সুলতান। কার্যত তার হাতে কোনও ক্ষমতা ছিল না। সামরিক অফিসারদের হাতেই সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ছিল। 
.
উসমানি সালতানাত প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১২৯৯ সালের দিকে। গাযি উসমানের হাতে। মুস্তাফা কামালের হাতে এই সালতানাতের বিলুপ্তি ঘটে ১৯২৪ সালে। সর্বশেষ সুলতান ছিলেন আবদুল মাজীদ (২য়)। তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে, প্যারিসে নির্বাসিত করা হয়। তিনি প্রায় বিশ বছর প্যারিসে নির্বাসিত থাকেন। মৃত্যুর পর তাকে মদীনা মুনাওয়ারায় দাফন করা হয়। 
.
১২৯৯ সালে শুরু হলেও, তখনো খিলাফাহ ছিল মিসরে মামলুকদের অধীনে। নবম সুলতান সলীম (১ম) ১৫১৭ সালে নিজেকে খলীফা হিশেবে ঘোষণা দেন। 
.
মুসলিম উম্মাহ প্রায় পুরোটা সময়ই কাটিয়েছে কোনওনা কোনও খিলাফাহর অধীনে। খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করা উম্মাহর উপর ওয়াজিব। খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা হলে, খলীফাকে বাইয়াত দেয়াও সমান ওয়াজিব।


মীর্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী ও তার কিছু অনুসারী। কাদিয়ানীরা কাফের। যে তাদেরকে কাফের মনে করবে না, সেও কাফের।





এটাই সেই বিখ্যাত ‘টাট্টিখানা


নবীগনের ক্ষেত্রে একটা অলিখিত নিয়ম হলো, তারা যেখানে ইন্তেকাল করেন, সেখানেই তাদেরকে দাফন করতে হয়। কথিত আছে, গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী মারা গিয়েছিল ‘টাট্টিখানায়’। নিয়ম অনুযায়ী তাকে টাট্টিখানাতেই দাফন করা উচিত ছিল। তাকে দাফন করা হয়েছে ভারতের পাঞ্জাবের জলন্ধরের বেহেশতি মাকবারায়।
.
এটাই সেই বিখ্যাত ‘টাট্টিখানা’।


উটের পুরো দেহকাঠামোই বিস্ময়কর।


উটের পুরো দেহকাঠামোই বিস্ময়কর। প্রতিটি অঙ্গই আল্লাহ তা‘আলা আজীব নিপুণতার সাথে সৃষ্টি করেছেন। উটের চোখের পাতায় সুঘন পাপড়ি আছে। পাপড়ির উপরে অতিরিক্ত লম্বা লম্বা পশম আছে। মরুভূমিকে বালুঝড় উঠলে, উড়ন্ত বালু এসে চোখে আঘাত আনতে পারে না। বালুঝড়ে ‍উপরের পশমের আড়ালে চোখ বন্ধ না করেও কাছে দুরের দৃশ্য অনায়াসে দেখতে পায়। উটের চোখে তৃতীয় আরেকটা পাপড়ি আছে। এই পাপড়ির উটের চোখকে গনগনে সূর্যের কড়া উত্তাপ থেকে সুরক্ষা দেয়। মরুর ছাতিফাটা রোদেও পথ চলতে বেগ পেতে হয় না। 
.

শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

কুরবানীঃ ত্যাগের মহিমায় প্রেরণা যোগায়

মুনির আহমদ

আদিকাল হতেই কুরবানীর রীতি চলে আসছে। হযরত আদম (আ.)এর পুত্রদ্বয় হাবিল ও কাবিল এক বিশেষ ব্যাপারে ফলাফল নির্ণয়ের জন্য যথাক্রমে হাবিল একটি হৃষ্টপুষ্ট দুম্বা এবং কাবিল কিছু শস্য কুরবানী স্বরূপ পেশ করেছিলেন। হাবিলের কুরবানী কবুল হল। আসমান থেকে একটি অগ্নি শিখা এসে হাবিলের দুম্বা ভস্ম করে দিল। আর কাবিলেরটা কবুল হল না, তার শস্য আসমানী আগুন জ্বালালো না। সে সময় কুরবানী কবুল হওয়া না হওয়ার এরূপ নিশানাই সাব্যস্ত ছিল।হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে বহু রকমের পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয় এবং তিনিও প্রতিটি পরীক্ষায় চরম কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ফলে তিনি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘খলিলুল্লাহ্ (আল্লাহর অন্তরঙ্গ বন্ধু)’ উপাধীতে ভূষিত হন। মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহীম (আ.) তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় ছেলে হযরত ইসমাঈল (আ.)কে কুরবানী করতে আদিষ্ট হয়ে সকল স্বার্থ দ্বন্দ্বের ঊর্ধ্বে উঠে, সকল মায়া-মুহাব্বত বিসর্জন দিয়ে হুকুমের যথার্থ তা’মীল করেছিলেন। ফলে ইরশাদে ইলাহী নাযিল হয়, “ক্বাদ সাদ্দাকতার রুইয়া…” অর্থাৎ- ‘হে নবী! আপনি স্বপ্নের আদেশকে যথানুরূপ বাস্তবায়ন করেছেন। তাঁর কর্তব্য পরায়ণতা, খোদাভক্তি ও নিষ্ঠার চরম পরাকাষ্ঠা প্রত্যক্ষ করে মহান আল্লাহ্ খুশী হয়ে বেহেশতি দুম্বা পাঠিয়ে দেন। ইসমাঈল (আ.)এর পরিবর্তে দুম্বা কুরবানী হয়। তাই আজ কুরবানীর নামে হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর ত্যাগ-তিতিক্ষা, সংগ্রাম-সাধনা ও প্রেম-নৈকট্যের দৃষ্টান্ত ও আত্মত্যাগ নিয়ে প্রতি বছর বিশ্ব মুসলিম আল্লাহর দুয়ারে সমাগত হয়। সুতরাং আমাদের মাঝে হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর চরম আত্মত্যাগ অবিস্মৃত স্মৃতিরূপে ভাস্কর হয়ে আছে। সাথে সাথে আল্লাহ্ তাআলা পরবর্তীদের জন্য সেই কুরবানীকে একটি পালনীয় রীতি হিসেবে সাব্যস্ত করেন। ইরশাদ হচ্ছে- “ফাত্তাবিউ মিল্লাতা ইব্রাহীমা হানীফা” অর্থাৎ- ‘একনিষ্ঠভাবে তোমরা ইব্রাহীমী মিল্লাতের অনুসরণ কর।’ (সূরা আলে ইমরান- ৯৫)। মোটকথা, ‘কুরবানী’ হচ্ছে ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রদর্শনের মাধ্যমে মাহান আল্লাহর অধিক নৈকট্য ও সান্নিধ্য অর্জনের অনন্য সোপান। কুরবানীর মাধ্যমে বান্দা স্বীয় খাহেশাতকে বিসর্জন দিয়ে মহান আল্লাহর সমীপে আত্মনিবেদন পূর্বক তাঁর আদেশ সম্পর্কিত হুকুম পালন করতঃ তাঁর নৈকট্য লাভে অগ্রসর হয় বিধায় এটিকে ‘কুরবান’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। লক্ষণীয় যে, হযরত ইসমাঈল (আ.) যবেহ না হলেও হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর আন্তরিকতা ও পূর্বাপর সকল প্রস্তুতিকেই আল্লাহ্ তাআলা ‘বাস্তবায়ন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তা কবুল করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ্ তাআলা তো দেখেন মানুষের আন্তরিকতাময় ইচ্ছাকে।প্রতি বছর আমরা যে পশু কুরবানী করছি, তার গোশত তো আমরাই খাচ্ছি। তার চামড়া-হাড় দ্বারা তো আমারাই উপকৃত হচ্ছি। কুরবানীর পশুর কোন কিছুই আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। তাহলে এই কুরবানীর উদ্দেশ্য কি? কালামে পাকে ইরশাদ হচ্ছে, “লাঁই ইয়ানালাল্লাহা লুহুমুহা ওলা দিমাউহা ওলা কিন ইয়ানালাল্লাহুত্ তাক্বওয়া মিনকুম”। অর্থাৎ-‘ কুরবানীর পশুর গোস্ত আল্লাহ্ তাআলার কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে  না তার রক্ত। তবে তোমাদের তাক্বওয়াই তাঁর কাছে যায়। (সূরা হজ্ব- ৩৭)। আল্লাহ্ তাআলা পরীক্ষা নেন কেবল আমাদের মনোবৃত্তিরই। কিন্তু আজ আমাদের সামাজের দিকে তাকালে কি দেখতে পাই? আমারা দেখতে পাই, কুরবানীকে যেন গোশত ভক্ষণের এক মহোৎসব মনে করা হয়। সমাজের যারা সম্পদশালী, তারা যেন কুরবানীর পশু ক্রয় করতে এক রকম প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন। কে কত চড়া দামে পশু ক্রয় করবেন, এটাই হয়ে উঠে মূখ্য বিষয়। আর যারা অপেক্ষাকৃত অসচ্ছল, দরিদ্র, তারা ঈদুল আযহা আসলেই এক মহাচিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তারা কুরবানী না দিতে পারায় মনো বেদনায় ব্যথিত হন। নিজেদের সমর্থহীনতার কথা বিবেচনা করা হয় না; বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধু সামাজিকতা মেইনটেন করার জন্য কুরবানী করা হয়। এমন কি তারা কুরবানী করার জন্য ঋণ পর্যন্ত করতেও বাধ্য হয়। জিজ্ঞেস করলে বলে- সবাই দিচ্ছে, আমি দিব না; এটা কেমন হয়। তাছাড়া বাড়ীতে স্ত্রী-পরিজন নিয়ে গোশত খাওয়ার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হয়। সাত ভাগে কুরবানী দেওয়া যায়। সাতভাগে কুরবানী দেয়ার ক্ষেত্রে আমাদের নিয়্যাতের কতটা নিষ্ঠতা থাকে, তা ভাবার বিষয়। যে সমাজে দুই জন লোক এক হতে পারে না, ভাই ভাই দ্বন্দ্ব-কলহ্ লেগেই থাকে। ফলে সাত ভাগের কুরবানীর ক্ষেত্রে গোশত ভাগ বণ্টনের সময় দেখা যায় তুমুল বাক বিতন্ডা। এতে গোশ্ত ভক্ষণের উদ্দেশ্যটাই যেন ফুটিয়ে তোলা হয়। অথচ একমাত্র মহান আল্লাহর হুকুম তা’মিল ও তাঁকে রাজি-খুশী করার জন্যই কুরবানী দেয়ার ব্যাপারে সবার নিয়্যাত এক থাকা অপরিহার্য। না হলে কুরবানী হবে না। অথচ আমরা ক’জনই বা সেদিকে লক্ষ্য রাখি! কিন্তু যদি হযরত ইসমাঈল (আ.)এর যবেহই মঞ্জুরে ইলাহী হত এবং হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর হাতে তাঁর কুরবানী হত, আর সেই আমলের পরম্পরায় আমাদের প্রাণাধিক প্রিয় সন্তানদেরকে যবেহ করার হুকুম হত, তা কত কঠিন ব্যাপারই না ছিল! তথাপি মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করলে আমাদের তা পালন করতেই হত। এ ক্ষেত্রে পরম করুণাময় আল্লাহ্ আমাদের উপর বড় মেহেরবানী করেছেন যে, তিনি পশু কুরবানীকে তার স্থলাভিষিক্ত করেছেন। তাই ইব্রাহীমী কুরবানীর স্মৃতি গাঁথা ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। খলীলী ইশকের দীক্ষায় উজ্জিবিত হয়ে আহকামে ইলাহীর সামনে নিজের খাহেশাত বা কামনা বাসনাকে কুরবান করতে হবে। সর্বান্তকরণে নিজেকে সঁপে দিতে হবে ইসলামের তরে। প্রকৃতপক্ষে কুরবানী হচ্ছে ত্যাগের এক সমুজ্জল দৃষ্টান্ত। বলাবাহুল্য, পশু কুরবানী তো একটি প্রতিকী আমল। এর অন্তর্নিহিত কৃতজ্ঞতা-ই একে অর্থবহ করে তুলেছে। কারণ, আল্লাহর জন্য সবচেয়ে প্রিয় বস্তু বিসর্জন দেয়ার মধ্য দিয়েই কুরবানীর সূচনা হয়। তাই কুরবানীর প্রক্কালে সর্বাগ্রে নফ্সানী খাহেশাত, প্রবৃত্তি, লোভ-লালসা ও দুনিয়ামুখিতার গলায় ছুরি চালাতে হবে। নিজের মনের খেয়াল খুশিতে নয়, বরং আল্লাহ্ ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ মোতাবেক সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পথে চলার সংকল্প করতে হবে। যে কোন পরিস্থিতিতে আল্লাহর ভয় ও আখেরাতের জবাবদিহিতার আশঙ্কায় সর্বপ্রকার অনৈসলামিক বা মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। মানুষ যেখানে সারাক্ষণ নিজের সামান্য কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার জন্য, নিজের চাহিদা পূরণের জন্য যে কোন রকম ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকে, সেখানে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর নির্দেশ পালন কল্পে, তাঁর রহ্মতের দারে কড়া নাড়ার জন্য, তাঁর দয়া দৃষ্টি নিজের দিকে আকর্ষণ করার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে সর্বোচ্চ কুরবানী করতে হবে। এ ত্যাগ এ কুরবানী পশু কুরবানী থেকে শুরু করে আত্মোৎসর্গ পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। খোদাভীতির সামনে পরিবেশ পরিস্থিতি, সমাজ সংস্কার আর পার্থিব ভয়-ভীতিকে এবং আল্লাহ্ ও রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালবাসার সামনে মানুষের সহায় সম্পদ পরিবার পরিজন এবং নিজের জীবনের ভালবাসাসহ অন্যান্য যাবতীয় প্রেম-ভালবাসাকে উৎসর্গ করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। আল্লাহর হুকুম পালনে হযরত ইব্রাহীম (আ.) যেরূপ প্রবল মনোবল নিয়ে অগ্রসর হয়েছিলেন, ইবলীস শয়তানও তত কঠোর প্রতিরোধ নিয়ে বাঁধা দিয়েছিল। কিন্তু শয়তান তাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তিনি রমিয়ে জিমার (পাথর নিক্ষেপ) করে শয়তানকে বিতাড়িত করেছিলেন। যার স্মৃতি আজ হজ্বের আমল হিসেবে গন্য। আর মরদুদ শয়তান পরাস্ত হয়ে চির লাঞ্ছনা কুড়িয়েছে। আজ মীনা প্রান্তরের সেই ‘জমরাত’ জগৎকে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, প্রকৃত মু’মিনের নিকট শয়তানী চক্রান্ত অতি তুচ্ছ এবং প্রস্তরাঘাতে দূরে নিক্ষিপ্ত হওয়ার যোগ্য। ঐ স্তম্ভ জগদ্বাসীকে বলছে যে, যে কোন প্রকার সৎকাজে অগ্রসর হওয়ার সময় যদি শয়তান কোন প্রকার বাঁধার সৃষ্টি করে, তাহলে আল্লাহর এ ক’জন সেরা নবীর নিদর্শন স্মরণ করে তওবা স্বরূপ ভীষণ প্রস্তরাঘাতে তাকে ক্ষত-বিক্ষত করে অনেক দূরে নিক্ষেপ কর। আল্লাহর আদেশ পেয়ে হযরত ইব্রাহীম (আ.) পার্থিব মায়া পরিত্যাগ করে প্রাণপ্রিয় পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়ে ছিলেন। অনুরূপভাবে আমাদেরকেও প্রকৃত মুসলমান হতে হলে কিভাবে শত প্রেম ভালবাসা, মায়া-মুহাব্বাত ছিন্ন করে, শত বাধাবিঘ্ন, শয়তানী কুচক্র পদদলিত করে কঠোর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, আর কিভাবেই বা পরম দয়ালু আল্লাহ্ তাআলা তাঁর সন্তুষ্টির জন্য লালায়িত বান্দাকে শত সহস্র বিপদ হতে অচিন্তনীয় ভাবে সম্পূর্ণ রূপে রক্ষা করেন, কুরবানী তাই শিক্ষা দেয়। আজও কুরবানীর ব্যাপারে শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়ে প্রতিরোধে তৎপর হয়। কিন্তু মিল্লাতে ইব্রাহীমির ধারক আল্লাহর খাঁটি মুসলমান বান্দাগণ শয়তানকে পরাজিত করে আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়ন করেন। তথাপি শয়তান কতক লোককে তার দলে ভিড়াতে সক্ষম হয়। তাদের কেউ শয়তানী প্ররোচণায় কুরবানী দ্বারা কেবল নাম কামনার ধান্ধায় থাকে। আবার কেউ ওয়াজীব দায়িত্ব আদায়ে অনীহা দেখায়। উপরন্তু অনেকে কুরবানীকে নির্মম পশু হত্যা ও অপচয় বলে ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি পর্যন্তও করে বসে। ইসলাম তো হচ্ছে সবান্তকরণে আল্লাহর সমীপে আত্মনিবেদন করার নাম। আল্লাহর বান্দারা আল্লাহর সৃষ্টি পশু কুরবানী করবে, এতে সংকীর্ণমনা হওয়ার আবকাশ নেই। এ ব্যাপারে যারা বিরূপ উক্তি করে, তাদের অনেকে ইসলামী নামের অধিকারী হলেও মূলতঃ তারা ধর্মদ্রোহী নাস্তিক মুরতাদদের কাতারেই তাদের অবস্থান আবিষ্কার করা উচিত। ঈদুল আযহার পশু কুরবানী যেহেতু আল্লাহর আদেশ পালন ও ইবাদত; তাই এক্ষেত্রে মনে কোন সংকীর্ণতার স্থান দেয়া জায়েয নেই। বরং স্বতঃস্ফূর্তভাবে আল্লাহর এ হুকুম পালন করতে হবে। তাই তো এ দিনের নাম ‘ঈদ’ রাখা হয়েছে। অর্থাৎ, এটি কুরবানী তথা আল্লাহর হুকুম পালন করতে পারার খুশির দিন। মূলতঃ হযরত ইব্রাহীম (আ.) যেমন কঠিন পরীক্ষার মুহূর্তে প্রমাণ করেছিলেন, “ইন্নাসালাতি ওয়া নুসুকি ওয়ামাহ্ ইয়াইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন” অর্থাৎ- “আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্ব পালনকর্তা মহান আল্লাহর জন্যই নিবেদিত।” (সূরা আন্আম- ১৬২)। আমাদেরকেও কুরবানীতে ঐ আদর্শই অনুসরণ করতে হবে। ‘কুরবানী’ প্রতি বছর আসে যায়, আমাদের বারবার ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করে। সারা বছরের কর্মতৎপরতায় কুরবানীর শিক্ষাকে ধারণ করে রাখাই সচেতন ধার্মিকের কাজ। সুতরাং, আসুন! আমরা কুরবানীর  শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে ত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। আল্লাহর অধিক নৈকট্য ও সান্নিধ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে নিজেকে সর্বান্তকরণে সঁপে দেই ইসলামের তরে। আল্লাহ্ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন॥

নিজ হাতে গরু কুরবানী করা এবং গোশত খাওয়া খাছ সুন্নত


নাস্তিক,ইসলামবিদ্বেষি এবং তাদের দালাল মিডিয়া এবং কিছু বকলম মুসলমান নামধারী মুনাফিক অপপ্রচার করে থাকে গরুর গোশত খাওয়ার কথা নাকি সম্মানিত ইসলামে নাই।নাউযুবিল্লাহ। আরব দেশে নাকি গরু কুরবানী হতোনা কিংবা খাওয়া হতোনা! নাউযুবিল্লাহ। হাবিবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নাকি গরুর গোশত গ্রহণ করেননি ! নাউযুবিল্লাহ। হাদিস শরীফে নাকি গরুর গোশতের কথা উল্লেখ নেই! নাউযুবিল্লাহ। আরব দেশে গরু নাই, গরু কিভাবে এলো?
অথচ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ এবং হাদিস শরীফে সুস্পষ্টভাবে গরু কুরবানী এবং গরুর গোশত খাওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।
১) পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ থেকে দলিল -
আল্লাহ পাক তিনি যে রিযিক তোমাদেরকে দিয়েছেন তা তোমরা ভক্ষণ করো। আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করোনা। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। উহা আটটি (পশু)। ছাগল হতে দুটি (পুরুষ ও স্ত্রী), মেষ হতে দুটি, উট হতে দুটি এবং গরু হতে দুটি।” (পবিত্র সূরা আনয়াম - ১৪২, ১৪৩, ১৪৪)
২) হাদীস শরীফ থেকে দলীল
১. উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ননা- ‘নুরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেছেন।’( বুখারী শরীফ: ২/৮৩৪ , মুসলিম শরীফঃ ২১১৯)
২. হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন” হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেছেন, "একটি গরু সাত জনের পক্ষ হতে এবং একটি উট সাত জনের পক্ষ হতে কুরবানি করা যায়"(আবু দাউদ শরীফ: ২/৩৮৮ , মুসলিম শরীফঃ ২৩২৪)
৩.হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত মুবারক দ্বারা দু’টি শিংওয়ালা দুম্বা কুরবানী করেছেন’ ( বুখারী শরীফঃ ৫৫৬৪-৬৫; মুসলিম শরীফ,মিশকাত শরীফ/১৪৫৩ । কখনও তিনি দু’-এর অধিক দুম্বা, খাসী, বকরী (ছাগল), গরু ও উট কুরবানী করেছেন (ফাতহুল বারী ১০/৯ পৃঃ ৫৭;পমিরকাত শরীফঃ ১৪৭৪, ২/৩৫৪ পৃঃ)।
৪. “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিকট গরুর গোশত আনয়ন করা হয়েছিলো। এতে বলা হয়েছিলো, এটা বারীরা নাম্নী বাঁদীকে ছদকা দেয়া হয়েছে। তা শুনে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছিলেন, সেটা উনার জন্য ছদকা আর আমাদের জন্য হাদিয়া।” ( মুসলিম শরীফঃ ২৩৫৭, যাকাত অধ্যায় )
উপরোক্ত দলীলসমুহ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে হাবিবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াসাল্লাম তিনি গরু কুরবানী করেছেন এবং গরুর গোশত গ্রহণ করেছেন।এর দ্বারা প্রমাণিত গরু কুরবানী করা এবং গরুর গোশত খাওয়া উম্মতের জন্য খাছ সুন্নত অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ । যারা গরু কুরবানী এবং গরুর গোশতের বিরোধীতা করা তারা মূলত হাবিবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়াসাল্লাম প্রতি বিদ্বেষ থেকেই বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ।

বর্তমান মিয়ানমারের রাখাইন বৌদ্ধরাই হচ্ছে অতীতের ‘মগের মুল্লুক’-এর মগ নৌ-দস্যুদের বংশধর।তাদের বংশধরেরাই মুসলমান শহীদ করছে।


স্বাধীন রাজ্য আরাকানে দুইশ বছরের মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে ১৬৩৫ খ্রিস্টাব্দের পর। সেখান থেকেই শুরু আরাকানি মুসলমান তথা রোহিঙ্গাদের ভাগ্য বিপর্যয়ের। ১৬৬০ সালে আরাকানের রাজা থান্দথুধর্মা নিজ রাজ্যে আশ্রিত মোঘল সম্রাট শাহজাদা সুজাকে হত্যা করে এবং মুসলমানদের ওপর শুরু করে অমানবিক নির্যাতন। 


১৭৮০ সালে আরাকান স্বাধীনতা হারায়। বর্মী রাজা বোধাপোয়া আরাকান দখল করে নেয়। ঘোর মুসলিম বিরোধী রাজা বোধাপোয়াও অসংখ্য মুসমানকে হত্যা করে। এরপর ইংরেজ শাসনের অধীনে চলে যায় বার্মা। ১৯৩৭ সালে স্বায়ত্বশাসন দেওয়া হয় বার্মাকে। এ সময়টাতে সাম্প্রদায়িকতা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, দাঙ্গায় নিহত হয় ৩০ লাখ মুসলিম। 
১৯৪৮ সালে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভের পরও, রোহিঙ্গা তথা বার্মার মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বিড়ম্বনার শেষ হয়নি। 
ইতিহাসের এই ধারার বিপরীতে নিপীড়ণ, দাঙ্গা আর হত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের যারা ‘মুসলিম সন্ত্রাসবাদী’ বলে আখ্যায়িত করে, তারা হয় ইতিহাস জানে না, না হয় নিজেদের ‘মগ’ ভাবে এবং তাদের চারপাশকে ‘মগের মুল্লুক’ বলে পরিগণিত করে। 
‘মগ ও মগের মুল্লুক’ সম্পর্কে সরাসরি উইকিপিডিয়া’কে উদ্ধৃত করি, “রাখাইনে দুটি সম্প্রদায়ের বসবাস, দক্ষিণে বার্মার বংশোদ্ভুত ‘মগ’ ও উত্তরে ‘রোহিঙ্গা’। মগরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। মগের মুল্লুক কথাটি বাংলাদেশে পরিচিত। দস্যুবৃত্তির কারণেই এমন নাম হয়েছে ‘মগ’দের। একসময় তাদের দৌরাত্ম্য ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। মোঘলরা তাদের তাড়া করে জঙ্গলে ফেরত পাঠায়।” 
“পর্তুগীজ নৌ-দস্যুদের সঙ্গে যখন আরাকানী বৌদ্ধরা হাত মিলিয়ে বাঙলার উপকূলীয় এলাকায় সম্ভ্রমহরণ-লুণ্ঠন-হত্যার মতো জঘন্য কর্মে লিপ্ত হয় তখন থেকেই ‘মগ’ ও ‘মগের মুলুক’ জাতি ও দেশবাচক শব্দ দুটি অরাজকতার নামান্তর রূপে ব্যবহৃত হতে থাকে। ‘মগ’ মানে আরাকানী আর ‘মগের মুলুক’ মানে আরাকান এ পরিচয় আজ অনেকের কাছেই অজ্ঞাত। বরং সমাজ-জীবনের কোথাও অনাচার-অত্যাচার, নিপীড়ন-নির্যাতন, অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খল অবস্থা দেখা দিলে তাকেই বলা হয় ‘মগের মুলুক’।” (তথ্যসূত্র: বঙ্গে মগ-ফিরিঙ্গী ও বর্গীর অত্যাচার, মুহম্মদ আবদুল জলিল, বাংলা একাডেমী, পৃষ্ঠা ২৫)
এই বাংলার ধন-সম্পদের প্রাচুর্য দেখে বারংবার বিদেশী অবাঙালি ও অমুসলিম দস্যুরা এই ভূখ-ে হানা দিয়েছে, যাদের মধ্যে ছিল পর্তুগীজ হার্মাদ নৌদুস্য, মগ নৌদস্যু, অশ্বারোহী মারাঠা বর্গী দস্যুদল প্রভৃতি। এর মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মগদের ভয়াবহ যুলুম নিয়ে ঐতিহাসিক শিহাবুদ্দীন তালিশ লিখেছিলেন- “চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত যাতায়াতের পথে নদীর উভয় পার্শ্বে একজন গৃহস্থও থাকলো না। এই মগের ধ্বংস ক্রিয়ার ফলে বাকলার মতো সমৃদ্ধশালী জনবসতি পূর্ণ জেলায় এমন একটি গৃহও ছিল না, যার মানুষ একটি প্রদীপ জ্বালাতে পারে।” (সূত্র: ঐ, পৃষ্ঠা ৩৫)
বাংলার ধন-সম্পদ লুণ্ঠনকারী ঐসব বৌদ্ধ মগ নৌদস্যুদের বংশধররাই হচ্ছে আজকের মিয়ানমারের রাখাইন বৌদ্ধ সম্প্রদায়। মগ আর রাখাইন, এ দুটো একই জাতিগোষ্ঠীর দুটো ভিন্ন নাম। ‘মগ’ নামটি ইতিহাসের পাতায় কলঙ্কিত দেখেই তারা ‘রাখাইন’ নাম ধারণ করেছে বলে ধরা হয়। তবে নাম পরিবর্তন করলেও তাদের পূর্বপুরুষদের দস্যুরক্ত তাদের মাঝে এখনো রয়ে গিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে ঐতিহাসিকদের বর্ণনানুযায়ী মানুষ নামের অযোগ্য এই হিংস্র রাখাইন বৌদ্ধরা নির্মমভাবে শহীদ করছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের।
বাংলার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা নৃশংস এই মগ নৌ-দস্যুদের দমন করেছিলেন ইতিহাসবিখ্যাত সুবাদার শায়েস্তা খাঁ। তার ছেলে বুযূর্গ উমেদ খাঁ কর্তৃক রোহিঙ্গা মুসলমানদের সহায়তায় মগদের দমন করার ঘটনা বাংলার ইতিহাসের পাতায় এখনো সমুজ্জ্বল। সুতরাং পূর্বসূরীদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে বাঙালি মুসলমানরা আবারো রাখাইন নামধারী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মগ নৌ-দস্যুদের সমূলে নির্মূল করুক। বাঙালি মুসলমান তার ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা থেকে মিয়ানমারের মগদের বিরুদ্ধে ফের জিহাদ ঘোষণা করুক।