স্বাধীন রাজ্য আরাকানে দুইশ বছরের মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে ১৬৩৫ খ্রিস্টাব্দের পর। সেখান থেকেই শুরু আরাকানি মুসলমান তথা রোহিঙ্গাদের ভাগ্য বিপর্যয়ের। ১৬৬০ সালে আরাকানের রাজা থান্দথুধর্মা নিজ রাজ্যে আশ্রিত মোঘল সম্রাট শাহজাদা সুজাকে হত্যা করে এবং মুসলমানদের ওপর শুরু করে অমানবিক নির্যাতন।
১৭৮০ সালে আরাকান স্বাধীনতা হারায়। বর্মী রাজা বোধাপোয়া আরাকান দখল করে নেয়। ঘোর মুসলিম বিরোধী রাজা বোধাপোয়াও অসংখ্য মুসমানকে হত্যা করে। এরপর ইংরেজ শাসনের অধীনে চলে যায় বার্মা। ১৯৩৭ সালে স্বায়ত্বশাসন দেওয়া হয় বার্মাকে। এ সময়টাতে সাম্প্রদায়িকতা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, দাঙ্গায় নিহত হয় ৩০ লাখ মুসলিম।
১৯৪৮ সালে পূর্ণ স্বাধীনতা লাভের পরও, রোহিঙ্গা তথা বার্মার মুসলিম জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বিড়ম্বনার শেষ হয়নি।
ইতিহাসের এই ধারার বিপরীতে নিপীড়ণ, দাঙ্গা আর হত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের যারা ‘মুসলিম সন্ত্রাসবাদী’ বলে আখ্যায়িত করে, তারা হয় ইতিহাস জানে না, না হয় নিজেদের ‘মগ’ ভাবে এবং তাদের চারপাশকে ‘মগের মুল্লুক’ বলে পরিগণিত করে।
‘মগ ও মগের মুল্লুক’ সম্পর্কে সরাসরি উইকিপিডিয়া’কে উদ্ধৃত করি, “রাখাইনে দুটি সম্প্রদায়ের বসবাস, দক্ষিণে বার্মার বংশোদ্ভুত ‘মগ’ ও উত্তরে ‘রোহিঙ্গা’। মগরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। মগের মুল্লুক কথাটি বাংলাদেশে পরিচিত। দস্যুবৃত্তির কারণেই এমন নাম হয়েছে ‘মগ’দের। একসময় তাদের দৌরাত্ম্য ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। মোঘলরা তাদের তাড়া করে জঙ্গলে ফেরত পাঠায়।”
“পর্তুগীজ নৌ-দস্যুদের সঙ্গে যখন আরাকানী বৌদ্ধরা হাত মিলিয়ে বাঙলার উপকূলীয় এলাকায় সম্ভ্রমহরণ-লুণ্ঠন-হত্যার মতো জঘন্য কর্মে লিপ্ত হয় তখন থেকেই ‘মগ’ ও ‘মগের মুলুক’ জাতি ও দেশবাচক শব্দ দুটি অরাজকতার নামান্তর রূপে ব্যবহৃত হতে থাকে। ‘মগ’ মানে আরাকানী আর ‘মগের মুলুক’ মানে আরাকান এ পরিচয় আজ অনেকের কাছেই অজ্ঞাত। বরং সমাজ-জীবনের কোথাও অনাচার-অত্যাচার, নিপীড়ন-নির্যাতন, অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খল অবস্থা দেখা দিলে তাকেই বলা হয় ‘মগের মুলুক’।” (তথ্যসূত্র: বঙ্গে মগ-ফিরিঙ্গী ও বর্গীর অত্যাচার, মুহম্মদ আবদুল জলিল, বাংলা একাডেমী, পৃষ্ঠা ২৫)
এই বাংলার ধন-সম্পদের প্রাচুর্য দেখে বারংবার বিদেশী অবাঙালি ও অমুসলিম দস্যুরা এই ভূখ-ে হানা দিয়েছে, যাদের মধ্যে ছিল পর্তুগীজ হার্মাদ নৌদুস্য, মগ নৌদস্যু, অশ্বারোহী মারাঠা বর্গী দস্যুদল প্রভৃতি। এর মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মগদের ভয়াবহ যুলুম নিয়ে ঐতিহাসিক শিহাবুদ্দীন তালিশ লিখেছিলেন- “চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা পর্যন্ত যাতায়াতের পথে নদীর উভয় পার্শ্বে একজন গৃহস্থও থাকলো না। এই মগের ধ্বংস ক্রিয়ার ফলে বাকলার মতো সমৃদ্ধশালী জনবসতি পূর্ণ জেলায় এমন একটি গৃহও ছিল না, যার মানুষ একটি প্রদীপ জ্বালাতে পারে।” (সূত্র: ঐ, পৃষ্ঠা ৩৫)
বাংলার ধন-সম্পদ লুণ্ঠনকারী ঐসব বৌদ্ধ মগ নৌদস্যুদের বংশধররাই হচ্ছে আজকের মিয়ানমারের রাখাইন বৌদ্ধ সম্প্রদায়। মগ আর রাখাইন, এ দুটো একই জাতিগোষ্ঠীর দুটো ভিন্ন নাম। ‘মগ’ নামটি ইতিহাসের পাতায় কলঙ্কিত দেখেই তারা ‘রাখাইন’ নাম ধারণ করেছে বলে ধরা হয়। তবে নাম পরিবর্তন করলেও তাদের পূর্বপুরুষদের দস্যুরক্ত তাদের মাঝে এখনো রয়ে গিয়েছে, যার ফলশ্রুতিতে ঐতিহাসিকদের বর্ণনানুযায়ী মানুষ নামের অযোগ্য এই হিংস্র রাখাইন বৌদ্ধরা নির্মমভাবে শহীদ করছে রোহিঙ্গা মুসলমানদের।
বাংলার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা নৃশংস এই মগ নৌ-দস্যুদের দমন করেছিলেন ইতিহাসবিখ্যাত সুবাদার শায়েস্তা খাঁ। তার ছেলে বুযূর্গ উমেদ খাঁ কর্তৃক রোহিঙ্গা মুসলমানদের সহায়তায় মগদের দমন করার ঘটনা বাংলার ইতিহাসের পাতায় এখনো সমুজ্জ্বল। সুতরাং পূর্বসূরীদের ঐতিহ্যকে ধারণ করে বাঙালি মুসলমানরা আবারো রাখাইন নামধারী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মগ নৌ-দস্যুদের সমূলে নির্মূল করুক। বাঙালি মুসলমান তার ঐতিহাসিক দায়বদ্ধতা থেকে মিয়ানমারের মগদের বিরুদ্ধে ফের জিহাদ ঘোষণা করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন