বৃহস্পতিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৬

ওয়াসিলা কী এবং কখন ও কিভাবে হলে জায়েজ?

প্রশ্ন :
সকল প্রকার ওয়াসিলা কি নাজায়েজ? বিস্তারিত বিবরণ জানানোর অনুরোধ থাকবে।
উত্তর :
ﺑﺴﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺮﺣﻤﻦ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ
ওসীলা মৌলিকভাবে দুই প্রকার। যথা-
১-কোন নেক আমলের ওসীলা গ্রহণ। ২-কোন ব্যক্তিত্বের ওসীলা গ্রহণ।

প্রথম প্রকার ওসীলা তথা নেক আমলের ওসীলা জায়েজ এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা সর্বসম্মত মতানুসারে জায়েজ। যা বনী ইসরাঈলের তিন ব্যক্তি পাহাড়ের গুহায় আটকে যাবার পর স্বীয় আমলের উসীলা দিয়ে দুআ করার দ্বারা সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত। দ্রষ্টব্য- বুখারী-১/১৩৭}
ব্যক্তির উসীল গ্রহণের হুকুম এবং এর হাকীকত হযরত আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং আওলিয়ায়ে কেরাম এবং বুজুর্গানে দ্বীনের ওসীলা দিয়ে দুআ করা ইসলামী শরীয়ত মোতাবিক জায়েজ। বরং দুআ কবুলের সহায়ক হওয়ার দরূন তা প্রশংসনীয় ও উত্তমও। কুরআনে কারীমের আয়াত, হাদীসের বর্ণনা এবং জমহুর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বিশেষ করে আকাবীরে ওলামায়ে দেওবন্দ এর বক্তব্য দ্বারা একথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত।
এজন্য শর্ত হল ওসীলাকে মুআসসিরে হাকীকী তথা মূল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী মনে করা যাবে না। এমনও মনে করা যাবে না যে, ওসীলা গ্রহণ ছাড়া দুআ কবুলই হবে না। এমন করা সুষ্পষ্ট গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতা। সেই সাথে ওসীলা গ্রহণের উদ্দেশ্য এটাও নয় যে, আম্বিয়াগণ বা আওলিয়াগণ এর কাছে স্বীয় প্রয়োজন পূরণ করতে প্রার্থনা করা হবে। তাদের কাছে প্রয়োজন পূর্ণ করার ফরিয়াদ করা হবে। এটা শিরকী আক্বিদা ও পদ্ধতি এতে কোন সন্দেহ নেই। যেমনটি কতিপয় মুর্খ জাহেলরা করে থাকে। ব্যক্তির মাধ্যমে ওসীলা গ্রহণের হাকীকত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহঃ এর দৃষ্টিতে তাওয়াসসুল তথা ওসীলা গ্রহণ এর হাকীকত হল যে, হে আল্লাহ! ওমুক আমার কাছে আপনার প্রিয়ভাজন। আর আপনার প্রিয়ভাজনদের সাথে মোহাব্বত যারা রাখেন তাদেরকে আপনি মোহাব্বত করেন মর্মে আপনার ওয়াদা রয়েছে।
হাদীসে এসেছে যে, ﺍﻟﻤﺮﺀ ﻣﻊ ﻣﻦ ﺍﺣﺐ তথা ব্যক্তি তার সাথেই থাকবে যাকে সে মোহাব্বত করে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৮১৮} ব্যাস! আমি আপনার কাছে উক্ত রহমতটিই চাই। এভাবে ব্যক্তি তার মোহাব্বতকে ওলীদের সাথে প্রকাশ করে, উক্ত মোহাব্বত এর উপর রহমত ও সওয়াবের প্রত্যাশী হয়। আর ওলী বুজুর্গদের মোহাব্বত করাটা রহমাত ও সওয়াবের কারণ হওয়ার বিষয়টি কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমানিত। {আনফাসে ঈসা বহাওয়ালায়ে তাহকীকে মাসআলায়ে তাওয়াসসুল-৭}
.
তিনি আরো বলেনঃ ﻭﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﺩﻋﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﺒﺮﻛﺎﺗﻪ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﺨﻠﻮﻕ ﺍﻟﻤﻘﺒﻮﻝ ﻭﻫﺬﺍ ﻗﺪ ﺟﻮﺯﻩ ﺍﻟﺠﻤﻬﻮﺭ ﺍﻟﺦ তথা আর তাওয়াসসুলের তৃতীয় পদ্ধতি হল, কোন মকবুল বান্দার বরকতের সাথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা। আর জমহুর ওলামাগণ এটাকে জায়েজ বলেছেন। {বাওয়াদেরুন নাওয়াদের-৭৬১}
.
যে ব্যক্তি দুনিয়াতে নেই তার ওসীলা দিয়ে দুআ করা জায়েজের দলীল ﻭَﻟَﻤَّﺎ ﺟَﺎﺀَﻫُﻢْ ﻛِﺘَﺎﺏٌ ﻣِّﻦْ ﻋِﻨﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣُﺼَﺪِّﻕٌ ﻟِّﻤَﺎ ﻣَﻌَﻬُﻢْ ﻭَﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞُ ﻳَﺴْﺘَﻔْﺘِﺤُﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﴿ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ : ٨٩ ﴾ যখন তাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কিতাব এসে পৌঁছাল, যা সে বিষয়ের সত্যায়ন করে, যা তাদের কাছে রয়েছে এবং যা দিয়ে তারা ইতোপূর্বে কাফেরদের উপর বিজয় কামনা করতো। {সূরা বাকারা-৮৯}
.
বাগদাদের মুফতী আল্লামা সাইয়্যেদ মাহমুদ আলুসী রহঃ বলেনঃ ﻧﺰﻟﺖ ﻓﻲ ﺑﻨﻲ ﻗﺮﻳﻈﺔ ﻭﺍﻟﻨﻀﻴﺮ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﻳﺴﺘﻔﺘﺤﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﻭﺱ ﻭﺍﻟﺨﺰﺭﺝ ﺑﺮﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺒﻞ ﻣﺒﻌﺜﻪ ﻗﺎﻟﻪ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻭﻗﺘﺎﺩﺓ ﻭﺍﻟﻤﻌﻨﻰ ﻳﻄﻠﺒﻮﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺃﻥ ﻳﻨﺼﺮﻫﻢ ﺑﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ ، ﻛﻤﺎ ﺭﻭﻯ ﺍﻟﺴﺪﻱ ﺃﻧﻬﻢ ﻛﺎﻧﻮﺍ ﺇﺫﺍ ﺍﺷﺘﺪ ﺍﻟﺤﺮﺏ ﺑﻴﻨﻬﻢ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ ﺃﺧﺮﺟﻮﺍ ﺍﻟﺘﻮﺭﺍﺓ ﻭﻭﺿﻌﻮﺍ ﺃﻳﺪﻳﻬﻢ ﻋﻠﻰ ﻣﻮﺿﻊ ﺫﻛﺮ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﻗﺎﻟﻮﺍ : ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺇﻧﺎ ﻧﺴﺄﻟﻚ ﺑﺤﻖ ﻧﺒﻴﻚ ﺍﻟﺬﻱ ﻭﻋﺪﺗﻨﺎ ﺃﻥ ﺗﺒﻌﺜﻪ ﻓﻲ ﺁﺧﺮ ﺍﻟﺰﻣﺎﻥ ﺃﻥ ﺗﻨﺼﺮﻧﺎ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﻋﻠﻰ ﻋﺪﻭّﻧﺎ ﻓﻴﻨﺼﺮﻭﻥ
.
এ আয়াত নাজীল হয়েছে বনী কুরাইজা ও বনী নজীরের ব্যাপারে। রাসূল সাঃ এর আগমণের পূর্বে যারা আওস ও খাজরাজের বিরুদ্ধে রাসূল সাঃ এর ওসীলা দিয়ে দুআ করতো। এ বক্তব্যটি ইবনে আব্বাস রাঃ এবং কাতাদা এর। আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়ার মানে হল, তারা এর দ্বারা মুশরিকদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতো। যেমন সিদ্দী বর্ণনা করেন যে, যখন তাদের ও মুশরিকদের মাঝে ভয়াবহ যুদ্ধ লেগে যেত, তখন তারা তাওরাত কিতাব বের করত, এবং তাদের হাত যেখানে রাসূল সাঃ এর নাম আছে তার উপর রাখতো, আর বলতো-“হে আল্লাহ! আমরা আজকে আপনার সাহায্য কামনা করছি আমাদের শত্র“দের বিরুদ্ধে ঐ সত্য নবীর ওসীলায় শেষ জমানায় যার আগমনের ওয়াদা আপনি করেছেন। তারপর তাদের সাহায্য করা হতো। {তাফসীরে রুহুল মাআনী-১/৩২০}
.
আল্লামা মহল্লী রহঃ উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ রাসূল সাঃ এর আগমনের পূর্বে ইহুদীরা কাফেরদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য পার্থনা করে বলতো- ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻧﺼﺮﻧﺎ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﺑﺎﺍﻟﻨﺒﻰ ﺍﻟﻤﺒﻌﻮﺙ ﺁﺧﺮ ﺍﻟﺰﻣﺎﻥ তথা হে আল্লাহ! শেষ জমানায় আগমনকারী নবীর ওসীলায় আমাদের সাহায্য করুন।

{তাফসীরে জালালাইন-১/১২}
একই তাফসীর নিম্ন বর্ণিত তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত। যেমন-
১- তাফসীরে কাবীর-৩/১৮০। ২- তাফসীরে ইবনে জারীর তাবারী-১/৪৫৫। ৩- তাফসীরে বগবী-১/৫৮। ৪- তাফসীরে কুরতুবী-২/২৭। ৫- তাফসীরে আলবাহরুল মুহীত-১/৩০৩। ৬- তাফসীরে ইবনে কাসীর-১/১২৪। ৭- তাফসীরে আবীস সউদ-১/১২৮। ৮- তাফসীরে মাজহারী-১/৯৪। ৯- তাফসীরে রূহুল মাআনী-১/৩১৯। ১০- তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাঃ-১৩। ১১- তাফসীরে খাজেন-১/৬৪। ১২- তাফসীরে মাদারেক-১/৩২। ১৩- তাফসীরে দুররে মানসূর-১/৮৮। ১৪- তাফসীরে তাবসীরুর রহমান আরবী-১/৫২। ১৫- সফওয়াতুত তাফাসীর-১/৭৭। ১৬- তাফসীরে আজীজী-৩২৯। ১৭- তাফসীরে মাওজাউল কুরআন-১৫। ১৮- তাফসীরে মাআরেফুর কুরআন [মাওলানা মুহাম্মদ ইদ্রিস কান্ধলবী রহঃ]- ১/১৭৭। ১৯- তাফসীরে জাওয়াহেরুল কুরআন- ৪৯। ২০- বাদায়েউল ফাওয়ায়েদ লিইবনে কায়্যিম হাম্বলী-৪/১৪৫। ২১- আলমিনহাতুল ওহাবিয়া লিআল্লামা দাউদ বিন সুলাইমান আলবাগদাদী হানাফী রহঃ-৩১।
.
বিশেষ কথা উসুলে ফিক্বহ এ লিখা আছে যে, আল্লাহ তাআলা ও জনাবে রাসূল সাঃ যদি পর্ববর্তীদের শরীয়ত সমালোচনা বা নিষেধ করা ছাড়া বর্ণনা করে থাকেন, তাহলে সেটি আমাদের উপরও লাযেম হয়ে যায়। {নূরুল আনওয়ার-২১৬, তাসকীনুল কুলুব-৭৬, নেদায়ে হক্ব-১০১}।
.
নোট রাসূল সাঃ দুনিয়াতে বিদ্যমান ছিলেন না। সে সময় ইহুদীরা রাসূল সাঃ এর ওসীলা দিয়ে আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করতো। আর এ বিষয়কে আল্লাহ তাআলা সমালোচনাহীনভাবে উদ্ধৃতি করেছেন। রাসূল সাঃ থেকেও এ ওসীলার কোন বিরোধীতা বর্ণিত নেই।

তাই রাসূল সাঃ এখনো দুনিয়াতে নেই। তাই এ আয়াত অনুপাতে রাসূল সাঃ ওসীলা গ্রহণ এখনো জায়েজ আছে। হযরত উসমান বিন হানীফ রাঃ থেকে ওসীলা জায়েজের প্রমাণ ﺃﻥ ﺭﺟﻼ ﻛﺎﻥ ﻳﺨﺘﻠﻒ ﺇﻟﻰ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻋﻔﺎﻥ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻓﻲ ﺣﺎﺟﺔ ﻟﻪ ﻓﻜﺎﻥ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﻻ ﻳﻠﺘﻔﺖ ﺇﻟﻴﻪ ﻭﻻ ﻳﻨﻈﺮ ﻓﻲ ﺣﺎﺟﺘﻪ ﻓﻠﻘﻲ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺣﻨﻴﻒ ﻓﺸﻜﺎ ﺫﻟﻚ ﺇﻟﻴﻪ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﺣﻨﻴﻒ ﺍﺋﺖ ﺍﻟﻤﻴﻀﺄﺓ ﻓﺘﻮﺿﺄ ﺛﻢ ﺍﺋﺖ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﻓﺼﻠﻲ ﻓﻴﻪ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ﺛﻢ ﻗﻞ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺇﻧﻲ ﺃﺳﺄﻟﻚ ﻭﺃﺗﻮﺟﻪ ﺇﻟﻴﻚ ﺑﻨﺒﻴﻨﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻧﺒﻲ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ
.
এক ব্যক্তি হযরত উসমান বিন আফফান রাঃ এর কাছে একটি জরুরী কাজে আসা যাওয়া করত। হযরত উসমান রাঃ [ব্যস্ততার কারণে] না তার দিকে তাকাতেন, না তার প্রয়োজন পূর্ণ করতেন। সে লোক হযরত উসমান বিন হানীফ রাঃ এর কাছে গিয়ে এ ব্যাপারে অভিযোগ করল। তখন তিনি বললেনঃ তুমি ওজু করার স্থানে গিয়ে ওজু কর। তারপর মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নামায পড়। তারপর বল, হে আল্লাহ! তোমার কাছে প্রার্থনা করছি। রহমাতের নবী মুহাম্মদ সাঃ এর ওসীলায় তোমার দিকে মনোনিবেশ করছি। {আল মুজামে সগীর, হাদীস নং-৫০৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-৮৩১১, আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-১০১৮}।
.
এ হাদীসের শেষে স্পষ্ট রয়েছে যে, লোকটি তা’ই করেছিল। তার দুই কবুলও হয়েছিল। ফলে হযরত উসমান রাঃ তাকে সম্মান দেখিয়ে তার প্রয়োজনও পূর্ণ করে দিয়েছিলেন।

হাদীসটির সনদ প্রসঙ্গে:
# উক্ত হাদীসটির ক্ষেত্রে ইমাম তাবরানী বলেনঃ ﻭﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ তথা এ হাদীসটি সহীহ। {আল মুজামে সগীর-১০৪}
# আল্লামা মুনজিরী রহঃ ও একথার পক্ষাবলম্বন করেছেন। {আত তারগীব ওয়াত তারহীব-১/২৪২}
# আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী রহঃ বলেনঃ ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺒﺮﺍﻧﻰ ﺑﺴﻨﺪ ﺟﻴﺪ তথা তাবারানী রহঃ এটাকে উত্তম সনদে তা বর্ণনা করেছেন। {হাশীয়ায়ে ইবনে হাজার মক্কী আলাল ঈজাহ ফি মানাসিকিল হজ্ব লিননববী-৫০০, মিশর}
হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ উক্ত হাদীস বর্ণনার পর লিখেনঃ এর দ্বারা মৃত্যুর পর ওসীলা গ্রহণ করার বিষয়টিও প্রমাণিত। এছাড়া রেওয়ায়েত তথা বর্ণনার সাথে সাথে দিরায়াত তথা যৌক্তিকতার নিরিখেও তা প্রমাণিত। কেননা, প্রথম বর্ণনা দ্বারা যে ওসীলা প্রমাণিত তা উভয় অবস্থাকেই শামীল করে থাকে। {নশরুত তীব-২৫৩}
একই বক্তব্য দেখুন- শিফাহুস সিক্বাম লিস সুবকী-১২৫, ওয়াফাউল ওয়াফা লিস সামহুদী-২/৪২০}
নিম্ন বর্ণিত ওলামায়ে কেরামও এ ওসীলাকে জায়েজ সাব্যস্ত করেছেন। যথা-
১- আল্লামা সাইয়্যেদ সামহুদী- ওয়াফাউল ওয়াফা-২/৪২২।
২- আল্লামা তাজুদ্দীন সুবকী রহঃ- শিফাউস সিক্বাম-১২০।
৩- আল্লামা আলুসী হানাফী রহঃ- রূহুল মাআনী-৬/১২৮।
৪- শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দেসে দেহলবী রহঃ- হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা।
৫- শাহ মুহাম্মদ ইসহাক মুহাদ্দেসে দেহলবী- মিআতু মাসাঈল-৩৫।
৬- শাহ মুহাম্মদ ইসমাঈল শহীদ- তাক্ববিয়াতুল ঈমান-৯৫।
৭- মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষেৌবী- মাজমুআ ফাতাওয়া-৩/২৩।
৮- মাওলানা হুসাইন আলী সাহেব- বিলুগাতিল হিয়ার-১/৩৫৪।
৯- মুফতী আজীজুর রহমান, ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ-৫/৪৩১, ৪২৩, ৪২৪, ৪৪১।
১০- মাওলানা রশীদ আহমদ গঙ্গুহী রহঃ- ফাতাওয়া রশীদিয়া-১/৭৮।
১১- মাওলানা মুফতী শফী রহঃ- মাআরেফুল কুরআন-১/৪২, ৪৪।
১২- আকাবীরে ওলামায়ে দেওবন্দ- আলমুহান্নাদ ওয়াল মুফান্নাদ। বুজুর্গদের ওসীলা দেয়াও জায়েজ রাসূল সাঃ এর ওসীলা দেয়া যেমন জায়েজ, তেমনি বুজুর্গদের ওসীলা দেয়া ও জায়েজ আছে।
দেখুন- ১- ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ আলআবদারী আলমালেকী [ইবনুল হজ্ব]- মাদখাল-১/২৫৫}
২- আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী রহঃ- হাশীয়ায়ে ইবনে হাজার মক্কী আলালইজাহ ফী মানাসিকিল হজ্ব লিননাবাবী-৫০০।
৩- আল্লামা আলুসী রহঃ- রূহুল মাআনী-৬/১২৮।
৪- আশরাফ আলী থানবী রহঃ- নশরুত ত্বীব-৩০২-৩০৩।
৫- মুহাদ্দিসে কাবীর আল্লামা যফর আহমাদ উসমানী- ইমদাদুল আহকাম-১/৪১।
৬- মাওলানা মুফতী মাহমুদ হাসান গঙ্গুহী রহঃ- ফাতাওয়া মাহমুদিয়া-৫/১৩৬-১৩৭} ।
৭- মাওলানা খায়ের মুহাম্মদ জালান্ধরী রহঃ- খাইরুল ফাতাওয়া-১/১৯৮।
ইমামুল মুনাযিরীন মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর রহঃ এর একটি ঘটনা আমি [মুহাম্মদ আমীন সফদর রহঃ] যেদিন ওমরায় গেলাম। সেদিন সেখানে গিয়ে দুআ করছিলাম- ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﺳﺌﻠﻚ ﺑﻤﺤﻤﺪ ﻧﺒﻴﻚ ﻭﺭﺳﻮﻟﻚ ﻭﺣﺒﻴﺒﻚ তথা হে আল্লাহ! তুমি তোমার নবীজী সাঃ এর ওসীলায় আমার দুআ কবুল কর! সেখানে এক পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল। সে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল- ﺷﺮﻙ ﺷﺮﻙ শিরক! শিরক!
আমি বললাম- ﻟﻴﺲ ﺑﺸﺮﻙ তথা এটা শিরক নয়। বরং এটি ওসীলা।
পুলিশ বললঃ ﺗﻮﺳﻞ ﺑﺎﺍﻻﻋﻤﺎﻝ ﻻ ﺑﺎﻟﺬﺍﺕ ওসীলা আমলের সাথে হয় ব্যক্তির সাথে নয়। অর্থাৎ কোন নেক কাজ করে দুআ চাও যে, হে আল্লাহ! আমার এ নেক আমলের বরকতে আমার দুআটি কবুল করুন। ব্যক্তির ওসীলা দিয়ে নয়। তথা এভাবে দুআ করবে না যে, হে আল্লাহ! এ ওলীর বরকতে আমার দুআ কবুল করুন। তাছাড়া আমল হল আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তি নয়”।
আমি জবাবে বললামঃ আল্লাহ তাআলা বলেছেন ﻳُﺤِﺒُّﻬُﻢْ ﻭَﻳُﺤِﺒُّﻮﻧَﻪُ তথা যাদেরকে তিনি ভালবাসেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। {সূরা মায়িদা-৫৪}
আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে বলছেন তিনি ব্যক্তি সত্বাকে ভালবাসেন আর ব্যক্তিরাও তাকে ভালবাসে। উভয় দিকেইতো ব্যক্তি সত্বা। আমলতো নেই। লোকটি জবাবে বললঃ ব্যক্তি প্রিয় হয় না, বরং আমল প্রিয় হয়। তাদের মাঝে একটি ভাল গুণ হল এরা কুরআন শুনে চুপ হয়ে যায়। লোকটি চুপ হয়ে গেল। তারপর চলে যাচ্ছিল লোকটি।
আমি আওয়াজ দিয়ে বললামঃ “কোন আমল দিয়ে আমি ওসীলা দিব?”
জবাবে লোকটি বলতে লাগলঃ প্রথমে দুই রাকাত নফল নামায পড়! তারপর দুআ কর এবং ওসীলা দিয়ে বল- হে আল্লাহ! এ দু রাকাত নামাযে ওসীলায় আমার দুআ কবুল কর!” আমি বললামঃ আপনার আর আমার দুই রাকাত নামায আল্লাহর কাছে প্রিয়, অথচ রাসূল সাঃ আল্লাহর প্রিয় নয়? আশ্চর্য কথা বলছেন তো”।
আমার কথা শুনে লোকটি চলে গেল। {ইয়াদগার খুতুবাত, ঈষৎ সংক্ষেপিত}
ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺍﻋﻠﻢ ﺑﺎﻟﺼﻮﺍﺏ
উত্তর লিখনে লুৎফুর রহমান ফরায়েজী। পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com http://ahlehaqmedia.com/1820

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন