রহীমা শিরীন
সৃষ্টিগতভাবে পুরুষ নারী কেউই কারো ওপর কোনরূপ মৌলিক শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করতে পারে না। কেউই অপর কাউকে জন্মগত কারণে হীন, নীচ ও ক্ষুদ্র বলে ঘৃণা করতে পারে না। মানব দেহের সংগঠনে পুরুষের সাথে নারীর যথেষ্ট অংশও শামিল রয়েছে। বরং চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে নারীর অংশই বেশি থাকে প্রত্যেকটি মানবশিশুর দেহ সৃষ্টি।ে নারী ও পুরুষ উভয় মিলে মানবতার এক অবিভাজ্য সত্তা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন: “হে মানবম-লী! তোমরা তোমাদের প্রভুকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক সত্তা থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জুড়ি। আর এ উভয় থেকেই অসংখ্য পুরুষ ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।” ৪নং সূরাহ্ আন নিসা-১।
অপর আয়াতে মহান আল্লাহ্ আরও বলেন: “হে মানব জাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি।” ৪৯ নং সূরাহ্ আল হুজুরাত, ১৩।
নারী ও পুরুষ প্রত্যেকেই যে প্রত্যেকের জন্য একান্ত অপরিহার্য, কেউ কাউকে ছাড়া নয়, হতে পারে না, তা স্পষ্টভাবে জানা যায় নিম্নোক্ত আয়াতে।
মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন: “নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্য থেকে কোন ‘আমলকারীর ‘আমলকে নষ্ট করে দেই না, সে পুরুষই হোক আর নারীই হোক। তোমরা পরস্পর পরস্পর থেকে।” ৩ নং সূরাহ্ আলে ‘ইমরান, ১৯৫।
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ একই জীবন সত্তা থেকে সৃষ্ট, একই বংশ থেকে উদ্ভূত। দুনিয়ার এই বিপুল সংখ্যক পুরুষ-নারীও সেই একই সত্তা থেকে উদ্ভূত। মৌলিকতার দিক থেকে মানুষ হিসেবে এ দু’য়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। স্বামী-স্ত্রী একে-অপরের পোশাক। যেমন- মহান আল্লাহর বাণী: “তারা তোমাদের ভূষণ। আর তোমরা তাদের ভূষণ। ২ নং সূরাহ আল-বাক্বারাহ্, ১৮৭।
মূলত: ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষ যেন একটি বৃক্ষের দু’টো শাখা। মহানবী (সাঃ) এরশাদ করেছেন: নারীরা পুরুষদের অংশ। সুনান আবূ দাউদ হা: ২৩৫।
মানবজাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ইসলাম ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোন ধর্ম বা সমাজে নারীর উপযুক্ত মর্যাদা স্বীকৃত হয়নি। সর্বত্রই সে পুরুষের দাসী ও বিলাসিতার সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। সমস্ত প্রাচীন ধর্ম ও আইনে নারী পুরোহিত, স্বামী ও অবিভাবকের চিরন্তন অধীন বলে চিত্রিত হয়েছে। তাদের সকলের মতেই পুরুষকে সন্তুষ্ট করা ও তার তাঁবেদারী করার জন্যই রমণীর সৃষ্টি। ‘রমণ’ করা যায় বলেই নারীর নাম রমণী। সুতরাং রমণী মানেই পরাধীনতা ও পরনির্ভরতার করুণ ইতিহাস। নারী জাতিকে এহেন শোচীয় ও অমর্যাদাকর গহীন গহ্বর থেকে তুলে এনেছে ইসলাম। ইসলামই নারীকে যুগ যুগ সঞ্চিত অপমান-লাঞ্চনা ও হীনতা-নীচতার পুঞ্জীভূত জঞ্জালস্তূপ থেকে চিরদিনের জন্য মুক্তি দান করেছে এবং তাকে যথোপযুক্ত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। মুছে দিয়েছে তার ললাটস্থ সহস্র শতাব্দীকালের কলঙ্করেখা।
ইসলাম নারীকে তার সঠিক মূল্য দান করেছে। নারীর স্বাভাবিক সুকুমারবৃত্তি ও সহজাত গুণাবলীর বিকাশ সাধনই ইসলামের লক্ষ্য। এজন্য ইসলাম নারীকে ঘরের বাইরে, মাঠে-ময়দানে, হাটে-বাজারে, অফিসে, দোকানে, কলকারখানায়, পরিষদে, সম্মেলনে, মঞ্চে, নৃত্যশালায়, অভিনয়ে টেনে নেয়ার পক্ষপাতী নয়। ইসলাম নারীকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজের দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছে। ইসলাম নারীর স্বাভাবিক যোগ্যতার সঠিক মূল্য দিয়েছে। দিয়েছে তা ব্যবহার করে তার উৎকর্ষ সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি ব্যবস্থা।
মৌলিক অধিকারে সমতা বিধান। ইসলাম নারীকে মৌলিক অধিকার ভোগ ও ব্যবহার করার ক্ষেত্রে পুরুষের সমান মর্যাদা দিয়েছে। শুধু নির্দেশ দিয়েই নয়, বরং আইন, সমাজ ও রাষ্ট্রে তা প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন : “হে আদম! তুমি ও তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস করো এবং তা থেকে যা ইচ্ছা স্বাচ্ছন্দে আহার করো।” ২ নং সূরাহ্ আল-বাক্বারাহ্, ৩৫।
মহান আল্লাহ্ আরও ঘোষণা করেন:
“মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) যখন কোন বিষয়ে নির্দেশ দেন তখন কোন মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন স্ত্রীলোকের জন্য সে ব্যাপারে ভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার থাকবে না।” ৩৩ নং সূরাহ্ আল-আহযাব, ৩৬।
অপর আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা আরও ইরশাদ করেন, “পুরুষ বা নারী যে লোকই নেক ‘আমল করবে এবং সে ঈমানদার হলে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণও যুলুম করা হবে না।” ৪ নং সূরাহ আন-নিসা, ১২৪।
বস্তুত: ইসলামী শরী’আত পুরুষ-নারী উভয়কেই সম্মান সামাজিক মর্যাদা এবং মৌলিক অধিকারে সমতা দিয়েছে। ইসলাম নারীকে ব্যক্তিস্বাধীনতা দান করেছেন। ইসলামই সর্বপ্রথম নারীর ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে। আর সামগ্রিক বিষয়াবলীতে তাকে মতামত প্রকাশের অধিকার দান করেছে। তাকে সাক্ষ্যদানের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা: ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়েরই রাজনৈতিক অধিকার ও মর্যাদা স্বীকৃত। যেমন- নারীর বাক-স্বাধীনতা, ভোটাধিকার ও সমালোচনার অধিকার রয়েছে। ইসলামী রাষ্ট্রের প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কা মহিলা পুরুষের ন্যায়ই ভোটাধিকার লাভ করবে। ইসলাম নারীকে নাগরিক অধিকার দান করে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। ইসলামই নারীকে সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক মর্যাদা ও অধিকার দান করেছে।
যেমন- কুর’আনে বর্ণিত হয়েছে- “নারীদের রয়েছে নির্ধারিত অংশ।” ৪নং সূরাহ্ আন্্ নিসা, ৭।
কুর’আনের এ ঘোষণার আলোকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের নিম্নলিখিত অধিকারগুলোর স্বীকৃতি রয়েছে।
১. উত্তরাধিকার : নারী তাঁর পিতা, মাতা, নিকটাত্মীয় ও স্বামীর পক্ষ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ পেয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ এ প্রসঙ্গে ঘোষণা করেন : “পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদের অংশ রয়েছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদের অংশ রয়েছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ রয়েছে। তা অল্পই হোক অথবা বেশিই হোক। এক নির্ধারিত অংশ।” ৪নং সূরাহ্ আন্ নিসা, ৭।
২. মোহরের অধিকার: নারী তাঁর স্বামীর নিকট থেকে নির্ধারিত ও সম্মানসূচক অতিরিক্ত আর্থিক নিশ্চয়তা স্বরূপ মোহনার অধিকার পাবেন। এই মোহরানা স্বামী অবশ্যই স্ত্রীকে প্রদান করবেন। এ মর্মে মহান আল্লাহ্র নির্দেশ হচ্ছে: “আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিয়ে দাও। আর যদি তারা সন্তুষ্ট চিত্তে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে ভোগ করো।” ৪নং সূরাহ্ আন্ নিসা, ৪।
৩. ভরণ-পোষণ : নারী বিয়ের পূর্বে অভিভাবক ও বিয়ের পরে স্বামীর নিকট থেকে নিশ্চিতভাবেই ভরণ-পোষণের অধিকার লাভ করে থাকে। মহানবী (সাঃ) এ প্রসঙ্গে বলেন :
‘তুমি যখন খাবে স্ত্রীকেও খাওয়াবে এবং তুমি যখন পরবে স্ত্রীকেও পরাবে।’ [সুনান আবূ দাউদ হা: ২১৪২]
৪. ব্যক্তিগত সম্পদ ভোগ ও ব্যবহার: নারীর ব্যক্তিগত সম্পদ যথা ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়োগকৃত অর্থ অথবা নিজ পরিশ্রমের অর্থ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত যাবতীয় অর্থ তারই একান্ত মালিকানাধীন। স্ত্রী যদি তার ধন-সম্পদ ব্যয় করতে চায় কেউ তাকে বাধা দিতে পারবে না। এ মর্মে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে :
‘পুরুষগণ যা উপার্জন করে তা তাদের প্রাপ্য। আর নারীরা যা উপার্জন করে তা তাদের প্রাপ্য।’ [৪নং সূরা আন নিসা, ৩২]
মহান আল্লাহ্ আরও ঘোষণা করেন :
‘তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যে স্থানে বাস করো, তাদেরকে সে স্থানে বাস করতে দিয়ো। আর তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সঙ্কটাপন্ন করো না।’ [৬৫ নং সূরা আত্্ ত্বালাক্ব, ৬]
অপর আয়াতে মহান আল্লাহ্ আরও বলেন:
‘যে লোককে সচ্ছলতা দান করা হয়েছে, তার কর্তব্য সে হিসেবেই তার স্ত্রী-পরিঝনের জন্য ব্যয় করা। আর যার আয় অল্প তার সেভাবেই মহান আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ থেকে খরচ করা কর্তব্য।’ [৬৫ নং সূরা আত্ ত্বালাক, ৭]
৫. ধর্মীয় মর্যাদা: ইসলাম পুরুষের ন্যায় নারীকেও সমানভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা, মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক উন্নতি-উৎকর্ষ সাধনের অধিকার দিয়েছে। ধর্মীয় বিধি-বিধান পালন করা যেমন পুরুষের কর্তব্য, তেমনি নারীরও। এ কর্তব্য পালন ও ফল লাভের অধিকারও উভয়ের সম্পূর্ণ সমান। ইসলামে এ ব্যাপারে নারী-পুরুষের কোনরূপ পার্থক্য করা হয়নি। মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন :
‘পুরুষ বা নারী যে লোকই নেক ‘আমল করবে এবং সে ঈমানদার হলে, তারা জান্নাতে দাখিল হবে এবং তাদের প্রতি অণু পরিমাণ যুল্ম করা হবে না।’ [৪নং সূরা আন্ নিসা, ১২৪]
আল্লাহ্ তা’আলা আরও বলেন: ‘নিশ্চয় আমি নষ্ট করে দেই না তোমাদের মধ্য থেকে কোন ‘আমলকারীর ‘আমলকে, সে পুরুষ হোক, আর নারী হোক। তোমরা একে-অপরের অংশ।’ ৩নং সূরা আল ইমরান, ১৯৫]
৬. স্বামী নির্বাচন: স্বামী নির্বাচনের অধিকার ইসলাম নারীকে দিয়েছে। তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়া মহানবী (সাঃ) নিরুৎসাহিত করেছেন। ইসলামী শারী’আতে উপযুক্ত বয়সের নারী-পুরুষকে অন্যান্য কাজের ন্যায় বিয়ের ব্যাপারেও নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিয়ে তাদের স্পষ্ট মত ছাড়া সম্পন্ন হতেই পারে না। এ ব্যাপারেও নাবী কারীম (সাঃ) দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন:
পূর্বে বিবাহিত এবং জুড়িহীন নারী বিয়ে হতে পারে না, যতক্ষণ না তাদের কাছ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ পাওয়া যাবে এবং অবিবাহিত কুমারী মেয়ের বিয়ে হতে পারে না, যতক্ষণ না তার কাছ থেকে অনুমতি পাওয়া যাবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ)! তার অনুমতি কিভাবে পাওয়া যাবে? তখন তিনি বললেন, জিজ্ঞেস করার পর তার চুপ থাকাই তার অনুমতি।’ [সহীহুল বুখারী হা: ৬৯৭০]
উপর্যুক্ত হাদীসের ওপর ভিত্তি করে ইসলামিক স্কলারদের অভিমত হচ্ছে : অভিভাবক পূর্ব বিবাহিত ও অবিবাহিতা মেয়েকে বিয়ে করতে বাধ্য করতে পারবে না। অতএব, পূর্বে বিবাহিতা নারীর কাছ থেকে বিয়ের জন্য রীতিমতো আদেশ পেতে হবে এবং অবিবাহিতা বালেগ মেয়ের কাছ থেকে যথারীতি অনুমতি নিতে হবে।’ [সহীহুল বুখারীর ভাষ্য গ্রন্থ ২য় খণ্ড ১২৮ পৃষ্ঠা]
৭. বিবাহ বিচ্ছেদ: একজন অত্যাচারী, অকর্মণ্য স্বামী থেকে বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার ইসলাম নারীকে দিয়েছে। ইসলাম অন্যান্য সমাজব্যবস্থার মতো কারো অধীনে আজীবন নিগৃহীত হতে বলেনি। ইসলাম নারীকে তার অধিকার রক্ষার ক্ষমতা দান করেছে।
৮. সদাচরণ পাওয়ার অধিকার: ইসলাম নারীকে স্বামীর পক্ষ থেকে সদাচরণ পাওয়ার আইনগত অধিকার প্রদান করেছে। যেমন: কুরআনে বলা হয়েছে : ‘হে ঈমানদারগণ! জোরপূর্বক নারীদের ওয়ারিশ হওয়া তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আর তাদেরকে দেয়া মাল থেকে কিছু আদায় করে নেয়ার উদ্দেশ্যে তাদের সাথে কঠোর আচরণ করবে না, যদি না তারা সুস্পষ্ট ব্যভিচার করে। তাদের সাথে দয়া ও সততার সাথে জীবন যাপন করো, যদি তাদেরকে অপছন্দ করো, তবে হতে পারে যে, তোমরা যাকে অপছন্দ করছ, বস্তুত: তারই মধ্যে মহান আল্লাহ বহু কল্যাণ দিয়ে রেখেছেন।’ [৪ নং সূরা আন্ নিসা, ১৯]
৯. পুনঃবিবাহ: কখনো বিবাহ বা তালাকপ্রাপ্তা হলে রমণীর পুনরায় নিজের ইচ্ছামত বিবাহ করার আইনগত মর্যাদা ইসলামে স্বীকৃত রয়েছে।
১০. জীবনের নিরাপত্তা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা : ইসলাম নারীকে তার জীবন, সম্পদ, ইজ্জত-আবরু, মান-সম্মান ইত্যাদি নিয়ে বেঁচে থাকার পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়েছে। কেউ নারীকে উত্ত্যক্ত করতে পারবে না। যারা নারীদের মান-সম্মান বিনষ্ট করতে উদ্যত হয় তারা আইনের দৃষ্টিতে অভিযুক্ত হবে। ধর্মীয় ও বৈষয়িক বিষয়ে শিক্ষা লাভ এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা করার অধিকার পুরুষের মতো নারীরও রয়েছে। মহানবী (সাঃ) ঘোষণা করেছেন: জ্ঞানান্বেষণ করা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরয।’ [সহীহুল বুখারী হা: ২৮৮৩]
এছাড়া ইসলাম নারীকে সামরিক জ্ঞানার্জন করতে উৎসাহিত করেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে নারীরও ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে মহানবী (সাঃ) নারীদেরকে সেবার কাজে নিয়োজিত করার জন্য নিয়ে যেতেন। রুবাই বিনতু মু’আব্বিয (রাযি.) বলেন, ‘আমরা মহিলারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে যুদ্ধে গমন করেছি। আমরা সেখানে লোকদের পানি পান করানো, খিদমত ও সেবা-শুশ্রুষা এবং নিহত ও আহতদের মদীনায় নিয়ে আসার কাজ করতাম।’ [বায়হাকী হা: ৩২৫]
উপসংহারে বলা যায় যে, ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের মতই একই জীবনসত্বা হতে সৃষ্ট, একই বংশ থেকে উদ্ভূত অর্থাৎ- পৃথিবীর সকল নারী-পুরুষ একই আদমের সন্তান। মৌলিকতার দিক দিয়ে ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য করে না। ইসলামের দৃষ্টিতে পুরুষ মর্যাদার পাত্র।
আর নারীরা অবহেলিত এমনটি নয়। ক্ষেত্র বিশেষে নারীরা পুরুষ থেকে বেশি মর্যাদাবান ও সম্মানিত। তা সত্ত্বেও পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম ও সমাজে নারীদেরকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না। ইসলাম নারীদেরকে মর্যাদার রাজ সিংহাসনে বসিয়েছে। আজকের বিশ্ব সমাজ ইসলাম প্রদত্ত মর্যাদা ও অধিকারকে উপেক্ষা করে নারী মুক্তির জন্য শ্লোগান তুলছে। অথচ তারা নিগৃহীত নির্যাতি হচ্ছে সর্বত্র। সুতরাং নৈতিক, আত্মিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক তথা জীবনের সামগ্রিক ক্ষেত্রে ইসলাম প্রদত্ত নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যেই তাকে খুঁজতে হবে সত্যিকারের মুক্তির আবেহায়াত।
মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে নারীর প্রতি প্রকৃত সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করার তাওফিক দান করুন। আমীন!!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন