জাহেলিয়াতের যুগে আবু জাহল জনৈক ইয়াতিমের অভিভাবক ছিল। সে ঐ ইয়াতিমের পৈতৃক সম্পত্তি দেখাশুনার নামে নিজেই ভোগ দখল করত এবং ইয়াতিমকে তার কোন অংশই দিত না। একদিন সেই ইয়াতিম বালক তার কাছে এসে পিতার পরিত্যক্ত সম্পত্তির কিছু অংশ চাইল। তার গায়ে তখন কাপড় চোপড়ও ছিল না। কিন্তু পাষন্ড আবু জাহল তার দিকে ভ্রুক্ষেপও করলোনা।
ছেলেটি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে হতাশ হয়ে ফিরে চলল। কোরায়েশ নেতাদের কয়েকজন দুষ্টমি করে তাঁকে বললোঃ “মুহাম্মদের(সা) কাছে নালিশ করে দে। সে আবু জাহলের কাছে সুপারিশ করে তোর সম্পত্তি আদায় করে দেবে।” আসলে তাদের মতলব ছিল আবু জাহলের সাথে একটা টক্কর লাগিয়ে দিয়ে রাসূল(সা) কে জব্দ করা।
ছেলেটি জানতোই না যে, আবু জাহলের সাথে তার সম্পর্ক কী এবং তারা কোন্ উদ্দেশ্যে তাকে এই পরামর্শ দিচ্ছে। সে সরল মনে রাসূল(সা)এর কাছে হাজির হলো এবং নিজের পুরো ঘটনা বর্ণনা করলো।
রাসূল(সা) তৎক্ষণাত উঠলেন এবং তাঁর কট্টর দুশমন আবু জাহলের কাছে চলে গেলেন। তাঁকে দেখে আবু জাহল স্বাগত জানালো। তিনি যখন বললেন যে, এই ছেলেটার পাওনা দিয়ে দাও, তখন সে নির্বিবাদে মেনে নিল এবং তার পাওনা দিয়ে দিল।
ওদিকে কুরায়শ নেতারা অপেক্ষায় ছিল আবু জাহল ও মুহাম্মদের(সা) মধ্যে কী কান্ড ঘটে তা দেখার জন্য। তারা একটা মজার সংঘর্ষ ঘটার খবরের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু যখন পুরো ঘটনার খবর পেল, তখন অবাক হয়ে গেল এবং আবু জাহলকে এসে ভৎসর্না করতে লাগলো যে, সে এমন সুযোগ হাতছাড়া করলো কেন এবং সেও ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে বলে চিৎকার করতে লাগলো।
আবু জাহল তাদেরকে বললোঃ “আল্লাহর কসম, আমি আমার ধর্ম ত্যাগ করি নি। কিন্তু আমি দেখতে পেলাম যেন মুহাম্মদের ডানে ও বামে এক একটা বর্শা রয়েছে, আমি তার কথামত কাজ না করলে তা আমার বুকের মধ্যে ঢুকে যাবে।”
শিক্ষাঃ ইয়াতিম ও দুস্থ মানুষের উপর কেউ নির্যাতন করলে তা নীরবে বরদাশত করা উচিত নয়। সমাজের প্রভাবশালী লোকদের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করে যুলুম প্রতিরোধের চেষ্টা করা। যালেমদের সাধারণতঃ মনোবল কম থাকে।
দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে তারা প্রায়ই হার মানে।
এ কাজে একাকী অগ্রসর হলেও আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার আশা করা যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন