যিলহজ্ব মাসের নবম তারিখ শুক্রুবার নবী করীম (সা) সমস্ত মুসলমানগন সহ আরাফাতের ময়দানে সমবেত হলেন। অন্যুন একলক্ষ পঁচিশ হাজার মুসলমান সেদিন একএিত হয়েছিলেন।
সেই বিশাল জনসমুদ্রের সম্মুখে বিশ্বনবী (সা) স্বীয় উটনীর পিঠে সওয়ার হয়ে তার শেষ ভাষন দান করলেন। এ ভাষনের মধ্যে দিয়েই নবী করীম (সা)এর জীবন-সন্ধ্য ঘনিয়ে আসার আভাস সুচিত হয়েছিল।
নবী করীম (সা) বললেন— হে মুসলিমগন! হয়ত এখানে আর তোমাদের সাথে আমার মিলন ঘটবে না। অতএব, আমার কথাগুলি তোমরা মনোযোগ সহকারে শ্রবন কর।
তারপর তিনি ভাষন আরম্ভ করলেন, হে আল্লাহর বান্দাগন! আজ হজ্বের দিন, পবিএ যিলহজ্ব মাস, এই মক্কা নগরী যেমন পবিএ, তোমাদের পরস্পরের জান মালও পরস্পরের নিকট তেমনি পবিএ। তোমাদের কাছে কারও কোন মাল গচ্ছিত থাকলে তা ফেরত দিয়ে দাও।
হে মীসলিমগন! তোমরা একে অপরের ভাই। তোমরা একের সম্পদ তার অনুমতি ব্যতিরেকে অন্যে খরচ করো না।
হে মুসলিম নরগন! মুসলিম নারীদের প্রতি তোমাদের কর্তব্য রয়েছে।
হে মুসলিম নারীগন! মুসলিম পুরুষদের প্রতি তোমাদেরও কর্তব্য আছে। তোমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ কর্তব্যগুলো পালন কর।
হে মুসলিমগন! স্ত্রীলোকদের সহিত নরম এবং উদার ব্যবহার করিও। ক্রীতদাসগনের সহিত সদ্ব্যবহার প্রদর্শন করিও। যা নিজেরা ভক্ষন কর, তাদের তা খেতে দিও। নিজেরা যা পরিধান কর, তাদেরকে তাই পরতে দিও। যদি কোন কাজে তারা ক্রুটি করে ফেলে তবে তা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখ।
হে মুসলিমগন! তোমরা আমার অবর্তমানে দ্বীন পরিত্যাগ করো না। সাবধান! আমার পরে তোমরা সত্য পথ হতে ফিরে যেওনা। তোমরা একে অপরের প্রতি অত্যাচার করো না। তোমরা একে অন্যকে হত্যা করতে লিপ্ত হয়ো না। কাল কিয়ামতে নিশ্চয়ই তোমাদের আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হবে। সেখানে তোমাদের কার্যাবলীর হিসাব গ্রহন করা হবে। হুশিয়ার থেকো। আমি তোমাদের জন্য আমার আদর্শ এবং আল্লাহর কিতাব পবিত্র কোরআন রেখে গেলাম। যদি তোমারা কোরআনকে এবং আমার আদর্শকে দৃঢ়ভাবে ধারন কর, তবে কখনই পথব্রষ্ট হবে না। যে কাজ করবে সরল হ্নদয়ে করিও। মুসলমানদের কল্যান কামনা করিও। পরস্পরে ঐক্য বজায় রেখো।
হে উম্মতগন! তোমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। তোমরা সবাই হযরত আদম(আ)-এর বংশধর। আল্লাহপাক মৃওিকার দ্বারা মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের মধ্যে সেই বেশি মর্যাদাশীল যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে। ধর্মভিরুতা ছাড়া আরব এবং অনারবের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। অনারবের প্রতি আরাবের, আরবের প্রতি অনারবের এবং সাদার প্রতি কালোর বা কালোর প্রতি সাদার কোন প্রাধান্য বা অভিজাত্য নাই। বিশ্বের সমগ্র মুসলিমগন তোমরা এক ভ্রাতৃ সম্পর্কে আবদ্ধ।
হে মুসলিমগন! তোমরা জানিও আমিই দুনিয়ার শেষ পয়গাম্বার। আমার পরে আর কেউ পৃথিবীতে নবী হিসাবে আগমন করবে না এবং আমার উম্মতের পরে নতুন কোন উম্মত হবে না। এখন সকলে তোমাদের মা‘বুদের প্রশংসায় নিয়োজিত থাক। নামায আদায় কর। রমযানের রোযা রাখ। মালের যাকাত আদায় কর। হজ্ব পালন কর। নেতৃস্হানীয়দের মান্য কর। আর এ সকল কাজ দ্বারা বেহেশতে নিজেদের জায়গা করে লও।
ভাষনের সমাপ্তিক্ষনে রাসূলুল্লাহ (সা) উম্মতগনকে জিজ্ঞেস করলেন, কাল কেয়ামতের দিন আল্লাহ আমার কর্তব্য পালন সম্পর্কে তোমাদের কাছে সাক্ষ্য গ্রহন করবেন, তখন তোমরা কি বলবে?
উপস্তিত জনতা সমস্বরে বললেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি আল্লহর নির্দেশসমূহ প্রচারঅ করেছেন। আপনি আপনার রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছেন। আপনি সৎ অসতের পার্থক্য ঘোষনা করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সা) পর পর তিনবার বললেন, আয় মা‘বুদ! তুমি সাক্ষী থেকো, আয় মা‘বুদ! তুমি সাক্ষী থেকো! আয় মা‘বুদ! তুমি সাক্ষী থেকো। আয় মাবুদ তুমি দেখ, ইহারা সকলেই সাক্ষী দিতেছে।
তারপর নবী করীম (সা) বললেন, তোমরা এখানে যারা উপস্তিত আছ, তারা অনুপস্হিত লোকদেরকে আমার উপদেশ বানী পৌছে দিও।
হযরত রাসূলে করীম (সা)-এর ভাষনের পর ফেরেশতা জিব্রাইল(আঃ) আল্লাহর পক্ষ হতে এসে ইসলামের পূর্নতা লাভের মহা সংবাদ ঘোষনা করলেন— “আল ইয়াওমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম ওয়া আতাতমামতু আলাইকীম নি‘মাতী ওয়া রাদিয়াতু লাকুমুল ইসলামা দ্বীনা।” (বয়ানুল কোরআন)
অর্থ— আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমার প্রতি আমার নিয়ামাতের সমাপ্তি ঘটল। আর ধর্ম হিসেবে ইসলামকেই আমি মনোনীত করলামl
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন