Mohiuddin Kasemi
কল্যাণ-অকল্যাণ, ক্ষতি-উপকারের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তিনিই রোগ দেন, তিনিই সুস্থ করেন। তবে রোগের কিছু উপকরণ রয়েছে; যেমন আরোগ্যেরও কিছু উপকরণ আছে। এসব বস্তুতে মৌলিকভাবে কোনো লাভ-ক্ষতি নেই। এগুলো হল উসিলা মাত্র।
সুতরাং কোনো বস্তুর প্রতি সুধারণা থাকলেই যে ওই বস্তু উপকার করবেÑ এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, ‘ভক্তি থাকলে পাথরেও মুক্তি মিলে’ এটি একটি ভুল বিশ্বাস। সাধারণত তাবিজ-কবজ, ঝাড়-ফুঁক ও পানি পড়া ইত্যাদি যারা করে, তারা গ্রাহকের আস্থা অর্জনের নিমিত্তে এসব কথা বলে বেড়ায়। বাস্তবে এ কথাটি কুরআন-হাদিসের কোথাও বর্ণিত হয়নি। একটি মনগড়া কথা। তাছাড়া পাথরের প্রতি বা যে কোনো বস্তুর প্রতি ভক্তি প্রদর্শনের কথাতেও শিরকের গন্ধ রয়েছে। তাই এসব কথা বলা ও বিশ্বাস করা হতে বিরত থাকা আবশ্যক।
তবে কুরআন ও হাদিস থেকে জানা যায়, আল্লাহ তাআলা কিছু স্থান ও কিছু সময়ের মধ্যে বরকত রেখেছেন। সেগুলো থেকে বরকত হাসিল করা যাবে। যেমন- বায়তুল্লাহ, মসজিদে নববী, বায়তুল মুকাদ্দাস, হাজরে আসওয়াদ, মাকামে ইবরাহিম; সময় হচ্ছে- জুমুআবার, শবে কদর, জিলহজের প্রথম দশরাত্রি, শবেবরাত ইত্যাদি।
কিন্তু কুরআন-হাদিসে বর্ণিত বরকতময় স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থানকে বরকতময় মনে করা কোনোভাবেই ঠিক নয়। ্এটিই কুরআন-সুন্নাহ ও সাহাবিদের শিক্ষা।
বাইআতে রিজওয়ান ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ বাইআত সংঘটিত হয়েছিল একটি বাবলা গাছের নিচে। কিন্তু এ গাছের বিশেষ কোনো ফজিলত ও বরকত নেই। তবুও সাধারণ মানুষ এ গাছের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখাতে পারে; এ গাছকে কেন্দ্র করে শিরকের রাস্তা খুলে যেতে পারেÑ এমন আশঙ্কা থাকার কারণে আল্লাহর পক্ষ হতে এ গাছটিকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সহিহ বুখারির নিচের বর্ণনাটি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে পড়–ন :
عَنْ طَارِقِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ انْطَلَقْتُ حَاجًّا فَمَرَرْتُ بِقَوْمٍ يُصَلُّونَ قُلْتُ مَا هَذَا الْمَسْجِدُ قَالُوا هَذِهِ الشَّجَرَةُ حَيْثُ بَايَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْعَةَ الرِّضْوَانِ فَأَتَيْتُ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ سَعِيدٌ حَدَّثَنِي أَبِي أَنَّهُ كَانَ فِيمَنْ بَايَعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ قَالَ فَلَمَّا خَرَجْنَا مِنْ الْعَامِ الْمُقْبِلِ نَسِينَاهَا فَلَمْ نَقْدِرْ عَلَيْهَا فَقَالَ سَعِيدٌ إِنَّ أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَعْلَمُوهَا وَعَلِمْتُمُوهَا أَنْتُمْ فَأَنْتُمْ أَعْلَمُ
অর্থ : তারেক ইবনে আবদুর রহমান রহ. বলেন, একবার আমি হজে গিয়ে কিছু লোককে দেখলাম নামায পড়ছে। তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, এটা কোন্ মসজিদ? তারা বলল, এটি কোনো মসজিদ নয়, এটি ওই গাছ যে গাছের নিচে রাসুল সা. বাইআতে রিজওয়ান গ্রহণ করেছিলেন। বিষয়টি আমি প্রখ্যাত তাবেয়ি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াবকে জানালাম। তখন তিনি বলেন, আমার পিতা মুসাইয়াব রা. (যিনি ওই বাইআতে অংশগ্রহণ করেছিলেন) বলেছেন : বাইআতে রিজওয়ানের পরবর্তী বছর আমরা যখন আবার গিয়েছিলাম, তখন গাছটির কথা ভুলে গেলাম; আমরা তা নির্দিষ্ট করতে পারলাম না। এতৎসত্ত্বেও অনুমানের ওপর নির্ভর করে কিছু লোক সেখানের একটি গাছের কাছে আনাগোনা করত। তা দেখে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব রহ. ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণ গাছটির ফজিলত জানল না, তোমরা জেনে ফেললে! তোমরা কি তাঁদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী!! (সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ৩৯৩০)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন :
رَجَعْنَا مِنْ الْعَامِ الْمُقْبِلِ فَمَا اجْتَمَعَ مِنَّا اثْنَانِ عَلَى الشَّجَرَةِ الَّتِي بَايَعْنَا تَحْتَهَا
অর্থ : বাইআতে রিজওয়ানের পরের বছর আমরা আবার ওই গাছের নিচ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম। তখন সেখানে দুজনের বেশি একত্রিত হইনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ২৭৯৮) অর্থাৎ বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কেউ আর ওই গাছের নিচে যায়নি। কিন্তু পরবর্তীকালের কিছু লোক সেখানে যাওয়া-আসা করত। অথচ গাছটি অনির্দিষ্ট ছিল। বোঝা গেল, সব যুগেই পথভ্রষ্ট কিছু লোক থাকে; যারা গাছপালা, দরগাহ ইত্যাদি স্থানে গমন করাকে ফজিলত ও বরকতের বিষয় মনে করে। এ হাদিসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমাম নববি রহ. বলেন :
قال النووي : سبب خفائها أن لا يفتتن الناس بها لما جرى تحتها من الخير ونزول الرضوان والسكينة وغير ذلك فلو بقيت ظاهرة معلومة لخيف تعظيم الأعراب والجهال إياها وعبادتهم إياها فكان خفاؤها رحمة من الله تعالى . (شرح مسلم الإمارة باب استحباب مبايعة الإمام الجيش . .)
(শরহে নববী আলা মুসলিম : খ. ১৩, পৃ. ৫)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন