Mohiuddin Kasemi
চন্দ্রপুরিসহ আরো অনেকে পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাসী। ইসলাম ধর্মে মৌলিক যেসব বিষয়ের প্রতি ঈমান রাখা জরুরি এর মধ্যে একটি হচ্ছে আখেরাত বা পরকাল। এই জগতের যেমন শুরু আছে তেমনি এর একটা শেষও আছে। মৃত্যুর পর পুনরায় সকলকে জীবিত করে হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে এবং ঈমান-আমলের ভিত্তিতে পুরস্কার বা তিরষ্কারের অর্থাৎ জান্নাত-জাহান্নামের ব্যবস্থা রয়েছে। এটাই পুনরুত্থান ও আখেরাত। সকল আসমানি কিতাব পরকালে বিশ্বাসের ব্যাপারে একমত। কিন্তু হিন্দুরা পরকালে বিশ্বাস করে না। তারা পুনর্জন্মবাদের প্রবক্তা। তারা বলে, যারা এই জগতে পুণ্য অর্জন ব্যতীত মৃত্যুবরণ করে, তাদের কৃতকর্ম অনুযায়ী তারা অন্য কোনো দেহে পুনরায় পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়। যেমন : বীর বাহাদুর ব্যক্তি বাঘের দেহে আর কাপুরুষ খরগোশের দেহে আবির্ভূত হয়। এভাবে প্রত্যেককে স্বীয় কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করার জন্য এ দুনিয়ায় বারবার পাঠানো হতে থাকে। এক সময় যখন সে পুণ্য অর্জন করে এবং সমস্ত পাপ পঙ্কিলতা ও আবিলতা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়। তখন তার আত্মা স্বর্গলোকে আত্মিক সুখে নিমগ্ন হয়। আর যে দেহ শারীরিক পঙ্কিলতা, অজ্ঞতা ও অসৎচরিত্র থেকে মুক্ত না হতে পারে তার আত্মা নরকে যন্ত্রণা ভোগ করে। এটাকেই তারা পুনর্জন্মবাদ বলে।
এই হাস্যকর, অলীক ও কাল্পনিক মতবাদের প্রবক্তা মূলত হিন্দুরা। কিছু মুসলমান নামধারী ভ- ও প্রতারক শ্রেণীর লোকেরা এটাকে ইসলামে অনুপ্রবেশ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। কিন্তু এ আকিদা ইসলামের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক ও প্রতিদ্বন্দ্বী তাই তা প্রত্যাখ্যাত ও পরিত্যাজ্য। পুনর্জন্মবাদের এ আকিদা পরকালের আকিদাকে মূলোৎপাটন করে দেয়। যা ইসলামের মৌলিক ও জরুরি আকিদার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যারা এ আকিদা পোষণ করবে তারা বেঈমান ও কাফের, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আখেরাত বা পরকালের সাথে আরো কয়েকটি বিষয় সংশ্লি¬ষ্ট রয়েছে। যেমন- কবর ও কবরের আজাব, কবর থেকে পুনরুত্থান ও হাশরের ময়দানের আনুষ্ঠানিকতা, আল্লাহর হিসাব-নিকাশ, পাপ-পুণ্যের ওজন করা, হাউজে কাউসার, পুলসিরাত এবং জান্নাত ও জাহান্নাম। এসব বিষয়গুলো অকাট্য দলিল-প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত। ক্ষুদ্র এই কলেবরে কুরআন-হাদিসের দলিল একত্রিত করলে বৃহৎ গ্রন্থের রূপ ধারণ করবে। কেননা, কুরআন ও হাদিসে পরকাল ও তৎসংশ্লি¬ষ্ট বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। অনুসন্ধিৎসু পাঠক তা থেকে স্বীয় জ্ঞানপিপাসা নিবারণ করতে পারেন।
কুরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে-
كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللهِ وَكُنْتُمْ أَمْوَاتًا فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ.
-কীভাবে তোমরা আল্লাহর সাথে কুফুরি কর? অথচ তোমরা ছিলে প্রাণহীন। তিনি তোমাদেরকে জীবন দিয়েছেন। আবার তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় তোমাদেরকে জীবিত করবেন। অনন্তর তোমরা তাঁর দিকেই ফিরে যাবে। [সূরা বাকারা-২৮]
আমরা প্রতি নামাযেই সূরা ফাতেহা পড়ি। তাতে রয়েছেمَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ অর্থাৎ হে আল্লাহ তুমি বিচার দিবসের মালিক। এর দ্বারা আখেরাতের বিচারের কথা বুঝানো হয়েছে।
অন্য আয়াতে উল্লে¬খ আছে :
وَمِنْ وَرَائِهِمْ بَرْزَخٌ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ.
-তাদের পশ্চাতে রয়েছে বরযখ, পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। [সূরা মুমিনুন-১০০]
কবর জগতকে বরযখ বলা হয়। এমনিভাবে কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এবং হাদিসের সুবিশাল ভা-ার অধ্যয়ন করুন, তাতে আখেরাত বা পরকাল সম্বন্ধে একটি স্বচ্ছ ও নির্মল ধারণা লাভ করতে পারবেন। এই আখেরাতের ওপর ঈমান রাখা জরুরি। আর আখেরাতের বিরোধী হল পুনর্জন্মবাদ। তাই যারা এই স্পষ্ট কুফুরি আকিদার মধ্যে রয়েছে, তারা নিশ্চিত কাফের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন