শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬

শরয়ী মানদণ্ডে “ডিজিটাল ছবি ভিডিও ও টেলিভিশন” সম্পর্কে জামিয়া দারুল উলুম করাচীর ফাতওয়া


মুফতি মিজান সাহেব 

এই ফাতওয়ায় তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে:
১. প্রাণীর ছবি সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের মতামত।
২. ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে ডিস্ক ও সিডিতে ধারণকৃত দৃশ্যের হাকিকত।
৩. বর্তমানে টিভির শরয়ী বিধান।
**************************
প্রথম অধ্যায়:
১. প্রাণীর ছবি সম্পর্কে ফুকাহায়ে কিরামের মতামত-
প্রাণীর ছবি বানানো ও ব্যবহার করা সম্পূর্ণ হারাম এই হুকুম অসংখ্য সহীহ হাদীস, সাহাবায়ে কিরাম এবং তাবেয়ীগণের বক্তব্য ও আমল দ্বারা প্রমাণিত। তাই চার মাযহাবের ইমামগণ এবং ফুকাহায়ে কিরাম একান্ত প্রয়োজন ব্যতীরেকে প্রাণীর ছবি হারাম হওয়ার উপর ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন। তবে বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে ফুকাহায়ে কিরামের মাঝে কিছু মতানৈক্য পাওয়া যায়।
ফুকাহায়ে কিরামের মতামতের সারসংক্ষেপ হতে তিন ধরনের ছবির বর্ণনা পাওয় যায়।
১. দেহবিশিষ্ট বা ত্রিমাত্রিক ছবি
২. দেহবিহীন বা অংকিত ছবি।
৩. ফটোগ্রাফী ও ডিজিটাল ছবি।
*******************************
দেহবিশিষ্ট ছবি-
এমন ছবি, যাতে কোন প্রাণীর জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় অঙ্গসমূহ বিদ্যমান রয়েছে এবং একেবারে ছোটও নয় ও খেলনা জাতীয় পুতুলও নয়। এ জাতীয় ছবি বানানো ও ব্যবহার হারাম হওয়ার ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরাম ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন। এত কারো কোন দ্বিমত নেই।
***********************************
দেহবিহীন ছবি-
এমন ছবি যা কাগজ কিংবা কাপড়ে অংকিত এবং যার প্রকৃত কোন ছায়া নেই। এ জাতীয় ছবির ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতানৈক্য বিদ্যমান।
জমহুর ফুকাহায়ে কিরামের নিকট এমন ছবিও নাজায়েয। ইমাম মালেক রহ. হতে এ ব্যাপারে দ্বিমুখী বর্ণনা পাওয়া যায়।
মালেকী মাযহাবের মুহাক্কিক আলেমদের মধ্য হতে আল্লামা ইবনুল কাসেম মালেকী, আল্লামা ইব্বী মালেকী, আল্লামা আবু আব্দুল্লাহ মাওয়াক্ব, আল্লামা মুহাম্মদ আল উলাইশ আল মালেকী প্রমুখ এমন ছবি জায়েয হওয়ার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন।
এমনিভাবে হাম্বলী মাযহাবেও এ ব্যাপারে দ্বিমুখী বর্ণনা পাওয়া যায়।
হাম্বলী মাযহাবের মুহাক্কিক আলেম আল্লামা ইবনে কুদামা রহ. তার কিতাব المغنى:৭/২১৫، ১০/২০১ এর মধ্যে এবং ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তার কিতাব فتح البارى:১০/৩৮৩،৩৮৮ এর মধ্যে হাম্বলী মাযহাবের বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন যে, হাম্বলী মাযহাবের কাপড়ের উপর অংকিত ছবি হারাম নয়। এছাড়াও আল্লামা আবুল হাছান আলী বিন সুলাইমান আল মুরদাবী রহ. আল্লামা শাইখ ইবনে উকাইল, আল্লামা ইবনে হামদান হাম্বলী প্রমূখ এমনই মতামত ব্যক্ত করেছেন।
এরূপভাবে মালেকী এবং হাম্বলী মাযহাব ছাড়াও সালফে সালেহীনের মধ্যে হতে আল্লামা কাসেম বিন মুহাম্মদ বিন আবু বকর রহ. সহ সাহাবী এবং তাবেয়ীদের কারো কারো থেকে ছায়া বিশিষ্ট ছবি এবং ছায়া বিহীন ছবি এর মাঝে পার্থক্য করার বর্ণনা পাওয়া যায়।
****************************
ফটোগ্রাফী বা প্রিন্টকৃত ছবি-
এমন ছবি যা হাত দ্বারা বানানো নয়, বরং ক্যামেরার মাধ্যমে তৈরিকৃত। এ পার্থক্যের কারণে বর্তমান সময়ের কতিপর আলেম এ জাতীয় ছবিকে নিষিদ্ধ ছবির অন্তর্ভূক্ত করেননি, বরং তা জায়েয বলে উল্লেখ করেছেন।
যেমন আরবের বিশেষজ্ঞ আলেমদের মধ্য হতে আল্লামা মুহাম্মদ ইবনু সালেহ আল উসাইমিন, আল্লামা শাইখ ছালুস, শাইখ আহমাদ আল খতীব উস্তাদ আহমদ মুহাম্মদ জামাল, শাইখ মুহাম্মদ আল খিজির হুসাইর (শাইখে আযহার) আল্লামা হুসাইন মুহাম্মদ মাখলুক (মুফতিয়ে মিসর) শাইখ সায়্যিদ সাবেকসহ প্রমূখ আলেমগণ ফটোগ্রাফীকে হারাম ছবির অন্তূর্ভূক্ত করেননি।
আল্লামা শাইখ সায়্যিদ সাবেক তার কিতাব فقه السنة এর মধ্যে লিখেন-
أما الصور التي لا ظل لها، كالنقوش في الحوائط وعلى الورق والصور التي توجد في الملابس والستور والصور الفوتو غرافية فهذه كلها جائزة.( فقه السنة: ২/৫৮)
অনুবাদ: ছায়াহীন ছবি। যেমন দেয়াল, পয়সা, কাপড়, পর্দা ইত্যাদিতে অংকিত ছবি এবং ফটোগ্রাফী এ সকল ছবি জায়েয।
উক্ত বক্তব্যের সমর্থন আল্লামা শাইখ মুহা. বুখাইত (মুফতিয়ে মিসর) এর লিখিত রিসালাহ الجواب الشافى فى اباحة التصوير الفتوغرافى:২০০ তে পাওয়া যায়।
এমনিভাবে আল্লামা শাইখ ড. ইউসুফ আব্দুল্লাহ আল কারাযাভী দা.বা. তার কিতাব الحلال والحرام فى الاسلامএর ১৪ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-
اما تصوير اللوحات وتصوير الفوتوغرافى فقد قدمنا الأقرب الى روح الشريعة فيهما هوالاباحة .... الخ (الحلال والحرام فى الاسلام:১৪)
অনুবাদ-
বিভিন্ন জিনিসে অংকিত ছবি এবং ফটোগ্রাফী বৈধ হওয়াই হল روح شريعة শরীয়তের চাহিদার অনুকুল।
বিজ্ঞ আলেমদের অনেকে ফটোগ্রাফীকে হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত করেছেন এমনকি উপমহাদেশের প্রায় সকল আলেম এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন যে, ফটোগ্রাফী এবং হাতে বানানো ছবি উভয়টি না জায়েয হওয়ার দকি থেকে কোন পার্থক্য নেই। আর উপমহাদেশের সকল দারুল ইফতা এই ফাতওয়া প্রদান করছে যে, একান্ত প্রয়োজন এবং বৃহৎস্বার্থ ব্যতীত কোন অবস্থাতেই প্রাণীর ছবি তোলা বৈধ নয়।
করাচীসহ সকল দারুল ইফতার অবস্থান এখন পর্যন্ত এটাই যে, ছবি শুধু কলম, রং কিংবা এ জাতীয় পদার্থ দ্বারা কাগজ, কাপড় দেয়াল ইত্যাদির উপর হাত দ্বারা বানানো অথবা পাথর ইত্যাদি দ্বারা তৈরি ভাস্কর্যই নয়, বরং ওই সকল পদ্ধতিও ছবির অন্তর্ভূক্ত যার মাধ্যমে কোন প্রাণীর স্পষ্ট আকৃতি কাগজ, কাপড়, দেয়াল ইত্যাদি এ জাতীয় কোনো বস্তুর উপর এমনভাবে অংকন করা যে, এ আকৃতি ওই বস্তুর উপর স্থির হয়ে যায়। চাই তা পুরাতন কিংবা নতুন যন্ত্রের মাধ্যমে হোক না কেন। যেমন Non Digital ক্যামেরার নেগেটিভ এর উপর অংকিত আকৃতি অথবা ফটাগ্রাফীর মাধ্যমে নির্মিত ছবি তথা প্রিন্টকৃত ছবি।
তাই আমাদের আকাবিরিনে কেরাম ফটোগ্রাফীকে হারাম ছবি হতে পৃথক মনে করেন অথবা ফটোগ্রাফী দ্বারা নির্মিত ছবিকে হারাম ছবি মনে করেন না এ ধারণা করা সঠিক নয়।
বিস্তারিত تكملة فتح الملهم ৪/১৬২-১৬৩ 
এমনিভাবে মুফতি শফী রহ. তার রিসালাহ تصوير كى شرعى احكامএর মধ্যে দলীলের আলোকে প্রমাণ করেছেন যে, ছবি চাই তা হাতে বানানো হোক কিংবা নবআবিস্কৃত যন্ত্রের মাধ্যমে হোক তা হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত। যন্ত্রের পরিবর্তনের কারণে হুকুমের মাঝে কোন পরিবর্তন হবে না।
*******************************
ফটোগ্রাফী এবং ডিজিটাল ক্যামেরার দৃশ্যের মধ্যে পার্থক্য
আমাদের আকাবিরগণ ফটোগ্রাফীকে হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত করেছেন। কেননা ছবি হল, কোনো জিনিসের চিত্র স্থীর হওয়ার নাম অর্থাৎ সেটা কোন বস্তুর উপর এমনভাবে অবস্থান করা যে, তা ওই বস্তুর উপর স্থীর হয়ে যায়। আর এটাই হলো কোনো জিনিস ছবি হওয়া বা না হওয়ার মাঝে মূল পার্থক্য।
সুতরাং যদি কোনো প্রাণীর আকৃতি কোন বস্তুর উপর স্থীর হয়ে যায় তাহলে তা হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে। আর যদি তা স্থীর না হয় তা শরয়ী দৃষ্টিতে হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত হবে না। কেননা হারাম ছবির মূল বৈশিষ্ট হল স্থির হওয়া যা এখানে পাওয়া যায়নি।
আর ফটোগ্রাফীর মধ্যে যেহেতু হারাম ছবির মূল বৈশিষ্ট ( কোন বস্তুর উপর স্থির হওয়া) পাওয়া যায় তাই তা হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত। এ জন্য Non Digital ক্যামেরার মাধ্যমে প্রাণীর যে ছবি তোলা হয় তা হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত। কেননা, চাই তা Rim তথা Negative অবস্থায় হোক কিংবা কাগজে ছাপানো হোক সর্বাবস্থাতেই তাতে স্থীরতা পাওয়া যায়।
এর সম্পূর্ণ বিপরীত হলো ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে তোলা ছবি। কেননা, উক্ত ছবি যতক্ষণ পর্যন্ত প্রিন্ট করা না হয় তা স্ক্রীন এর সীমার মধ্যে স্থীর হয় না।
ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণকৃত দৃশ্যাবলী সাধারণত কিছু আলোকরশ্মীর আকৃতিতে সিডি কিংবা মেমোরীতে এমনভাবে সংরক্ষিত থাকেব, যা খারিল চোখে দেখা যায় না। এমনকি অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়েও দেখা যায় না। কারণ তা ছবি আকৃতিতে সেখানে বিদ্যমানই থাকে না।
আর যখন তা সিডি বা মেমোরী হতে স্ক্রীনে কিংভা পর্দায় প্রকাশ করা হয় তখন তা অস্থায়ী আলোক রশ্মীর মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে সাথে সাথেই বিলীন হয়ে যায়। এক মুহুর্তের জন্যও তা স্থীর থাকে না। এ জন্য ছবির মূল বৈশিষ্ট স্থীর হওয়া এতে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং Non Digital ক্যামেরার ছবি সন্দেহাতীতভাবে হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত। আর Digital ক্যামেরার দৃশ্যাবলী হারাম ছবির হুকুমে নয়।
ডিজিটাল এবং Non Digital ক্যামেরা এর মধ্যে উক্ত পার্থক্য বিজ্ঞানীরা তাদের লিখিত বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যেমন মার্শাল ব্রেইন তার গ্রন্থ How Stuff Works এর মধ্যে উল্লেখ করেন How digital cameras work?....... 
এমনিভাবে উইকিপিডিয়া ইনসাইক্লোপিডিয়া তে Understanding resolution নামক শিরোনামে উল্লেখ আছে-

**************************************
২য় অধ্যায় ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমে ডিস্ক ও সিডিতে ধারনকৃত দৃশ্যের হাকীকত
প্রশ্ন: ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণকৃত দৃশ্যাবলী কম্পিউটার মনিটর, সিডি, ভিডিও ক্যাসেট ইত্যাদির মধ্যে সংরক্ষণ করে স্ক্রীন, মনিটর টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচার করা হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত কি-না?
উত্তর: تكملة فتح الملهم:৪/১৬২-১৬৩ এর মধ্যে লেখা রয়েছে যে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ধারনকৃত দৃশ্যাবলী কাগজ ইত্যাদিতে প্রিন্ট হওয়ার পূর্বে ছবির আকৃতিতে কোথাও স্থীর হয় না। এজন্য তাকে হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত করা খুবই দূরুহ ব্যাপার।
এ বিষয়টি তাহকীকের জন্য تجلس تحقيق مسائل حاضرة كراسى বিজ্ঞ মুফতিদের প্রথমে ২৩ মুর্হারম ১৪২৫ হি. জামিয়া দারুল উলুম করাচীতে, পরবর্তীতে ১৬ সফর ১৪২৫ হি. একটি Confarance (সভা) এর আহ্বান করা হয়। অতপর এ বিষয়ে ২ রবিউল আউয়াল ১৪২৭ হি. ১২ মে ২০০৬ ইং তারিখে দারুল উলুম করাচীর দারুল ইফতায় একটি বিশেষ বৈঠক করা হয়। উক্ত বৈঠকে পাকিস্তানের দেশ বরেন্য বিজ্ঞ মুফতিদের প্রায় ৩৫জন অংশ গ্রহন করেন।
****************************************
উক্ত কনফারেন্সে যে সকল সিদ্ধান্ত হয় তার সারসংক্ষেপ নিম্বরূপ-
১. এ বিষয়ে সকলে একমত যে, ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়র দৃশ্যাবলী ছবি কি ছবি নয় বিষয়টি কোন দিকই চূড়ান্ত নয় বরং তা مجتهد فيه তথা ইজতিহাদী একটি বিষয়। এবং এতে সমসাময়িক আলেমদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে।
২. এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, টিভি অসংখ্য ফিতনার কারণ তাই বর্তমানের টিভি ঘরে রাখা হতে বিরত থাকাই উচিত।
৩. ডিজিটাল ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ধারনকৃত দৃশ্যের ব্যাপারে তিনটি মতামত পাওয়া যায়।
ক. সম্পূর্ণ হারাম।
খ. ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার দৃশ্যাবলী হারাম ছবির অন্তর্ভূক্ত নয়। এ জন্য শরয়ী কোন নিষেধাজ্ঞা না জাওয়া যাওয়ার শর্তে তা ব্যবহার বৈধ।
গ. শুধুমাত্র জিহাদের প্রয়োজনে তা ব্যবহার করার অনুমতি আছে।
দারুল উলুম করচীর ফাতওয়া-
উপরে আলোচিত তিনটি মতামতের মধ্যে হতে দারুল উলুম করাচীর ফাতওয়া দেয়ার ক্ষেত্রে ২য় মতটিই গ্রহনযোগ্য মনে করা হয়। হাকীকত হলো, Digital যন্ত্রের মাধ্যমে স্ক্রীন এর উপর প্রাণীর যে, চিত্র দৃশ্যমান হয় তা প্রকৃতপক্ষে ছবিও নয়عكس (প্রতিবিশ্ব) ظل (প্রতিচ্ছবি)ও নয়। ظل না হওয়ার বিষয়ে প্রায় সকলে ঐকমত্য পোষণ করেছেন এবং তা স্পষ্ট।
*******************************************
ডিজিটাল ক্যামেরায় ধারণকৃত দৃশ্যাবলী কেন ছবি নয়?
কোনো আকৃতি বা প্রতিবিম্বকে ওই সময়ই ছবি বলা চয় যখন তা কোন কিছুর উপর স্থীর হয়। কিন্তু ভিডিও ক্যাসেট, সিডি USB হার্ডডিস্ক, ইত্যাদির মধ্যে সংরক্ষিত ডাটা ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে CD এবং Analog to digital Converter এর সাহায্যে কোন عكس(প্রতিবিম্বের) আলোকরশ্মী দ্বারা কিছু Im pormation গ্রহন করে থাকে। আর এই ওস Im pormation ছবির আকৃতিতে সেখানে সংরক্ষিত হয় না, বরং ডিজিটাল কিছু সাংকেতিক চিহ্নের আকৃতিতে এমনভাবে সংরক্ষিত হয় যে, তা দেখাও যায় না পড়াও যায় না, এমনটি অনুবীক্ষণ যন্ত্র এর মাধ্যমেও দেখা যায় না।
সুতরাং ভিডিও ক্যাসেপ, সিডি ইত্যাদির মধ্যে সংরক্ষিত সাংকেতিক চিন্নসমূহ ছবি না হওয়াটা একেবারে স্পষ্ট। আর ভিডিও ক্যাসেট সিডি ইত্যাদি চালানোর পর স্ক্রীনে যা দৃশ্যমান হয় তাও ছবি নয় এজন্য যে, সেটি বাস্তবে Electronic Signals বা Digital ক্যামেরা অথবা Digital মেশিনে বিদ্যমান এক বিশেষ Device অথবা ABC এর সাহায্যে দেয়াল অথবা স্ক্রীন এর উপর অস্থায়ী আকৃতিতে প্রকাশিত হয়ে সাথে সাথেই বিলীন হয়ে যায়।
সুতরাং এ সমস্ত দৃশ্যাবলী প্রিন্ট করার পূর্বে স্ক্রীন এর সীমার মধ্যে স্থায়ীভাবে কোথায় ও স্থীন হয় না, এজন্য এ সমস্ত দৃশ্যাবলী ছবির হুকুমে নয়। যেমনটি মার্শাল ব্রেইন তার বিখ্যাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
আমারদের আকাবিরগণের অনেকে ছবি ও প্রতিবিম্ব . এর মাঝে পার্থক্য বুঝাতে গিয়ে স্থীন ও স্থায়ীত্বকেই মূলনীতি হিসেবে গ্রহন করেছেন।
যেমন আল্লামা মুফতি শফী সাহেব রহ. তার কিতাব تصوير كى شرعى احكام:৫১ এর মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
আল্লাম যফর আহমদ উসমানী রহ. তার কিতাব امداد الاحكام:৪/৩৮৪ এর মধ্যে ছবি ও ফটো সম্পর্কৃত এক প্রশ্নের জবাবে উক্ত পার্থক্ত তুলে ধরেন-
سب سے بٹرا فرق تو دونوں مسين يہی ہے کہ آيئنہ و غیرہ کا عکس پائدار نہیں ہوتا اور فوتو کا عکس مسالہ لگاکر قائم کرلیا جاتاہے: پس وہ اسی وقت تک عکس ہے جب تک مسالہ سے اسے قائم نہ کیا جا‌‌ۓ اور جب اسکو کسی طریقہ سے قائم اور پا‌ئندار کرلیا جا ‍‌‌‌‍ۓ وہی تصویر بن جاتا ہے
আল্লামা রশীদ আহমদ লুদইয়ানভী রহ. তার কিতাব :৮/৩০৬ احسن الفتاوی এর মধ্যে عکس প্রতিবিম্ব এবং এর মাঝে পার্থক্য তুলে ধরেন-
تصویر و عکس دونوں بالکل متضاد چیز ں ہیں تصویر کسی چیز کا پائدار اور محفوظ نقش ہوتاہے عکس نا پائیدار اور وقتی نقش ہوتا ہے اصل کے غائب ہوتے ہی اس کا عکس بھی غائب ہوتاہے
তদ্রুপ আল্লামা জামিল আহমাদ থানভী রহ. টিভি স্ক্রীনে দৃশ্যমান আকৃতি সম্পর্কৃত ফাতওয়া লিখতে গিয়েও উক্ত পার্থক্য তুলে ধরেন। الاشراف:৪/৬০, شعبان১৪০৯هــ 
*******************************
ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণকৃত দৃশ্যাবলী
عكس বা প্রতিবিম্ব কেন নয়?
ذوالعكس তথা عکس বিশিষ্ট জিনিস হতে স্থানান্তরিত হয়ে কোন জিনিসের উপরিভাগের সাথে ঘর্ষন লেগে আলোর যে, প্রতিফলন হয় তাকে عکس বলে। আর Digital স্ক্রীন এর উপর যে আলোকরশ্মী দৃশ্যমান হয় তা এরকম নয় যা ذوالعكس থেকে স্থানান্তরীত হয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। তই এটা عكس নয়। 
তবে স্ক্রীনে দৃশ্যমান আলোকরশ্মী ছবির তুলনায় عكس এর সাথে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।
***********************************************
৩য় অধ্যায়
বর্তমান যুগে টিভির শরয়ী বিধান
টেলিভিশন দূর দুরান্ত হতে তথ্য সরবরাহের একটি যন্ত্র বা মাধ্যম। যা জায়েয ও নাজায়েয উভয় কাজেই ব্যবহার উপযোগী এমন কতিপয় যন্ত্র যেমন রেডিও, টেপরেকর্ডার, কম্পিউটার, ইন্টারনেট ইত্যাদি। সুতরাং টিভি একটি যন্ত্র হিসেবে তাকে না জায়েয বলা যাবে না। বরং তা জায়েয কাজে ব্যবহার করলে বৈধ। না জায়েয কাজে ব্যবহার করলে অবৈধ।
বর্তমান যামানায় যেহেতু টিভির মাধ্যমে অশ্লীলতা ও বিভিন্ন প্রকার খারাফি ছড়াচ্ছে। তাই বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামسد الباب টিভি চ্যানেল অশ্লীলতা ও শরীয়া বিরোধী কোন প্রকার প্রোগ্রাম প্রচার না করে থাকে, কিংবা কোন আলেম শরয়ী গন্ডির মধ্যে থেকে সকল প্রকার কাজ হতে বিরত থেকে দ্বীনের প্রয়োজনীয় বিষয়াদী আলোচনার জন্য টিভি চ্যানেলে আসে, অথবা টিভি প্রোগ্রামে কোন ওয়াজ নসীহত করে, দাওয়াত ও তাবলীগ এর কাজ করে কিংবা শরয়ী শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে, তাহলে এ সকল অনুষ্ঠান, দেখা শ্রবন করা শুধুমাত্র ছবি হওয়ার অজুহাতে না জায়েয বলা যাবে না।
উক্ত ফাতওয়া শুধু দারুল উলুম করাচীর নয়, বরং ভারতীয় উপমহাদেশের শীর্ষস্থানীয় দারুল ইফতা এবং বিশেষজ্ঞ মুফতিয়ানে কিরাম এমন ফাতওয়া দিয়েছেন।
টেলিভিশন ও ইন্টারনেট দ্বীনি কাজে ব্যবহার বিষয়ে ادارۃ مباحث فقھیۃ جمیعۃ علماء ھندد কর্তৃক আয়োজীত ৮ম ফিকহী সেমিনার (২৭,২৮,২৯ এপ্রিল ২০০৫) সংগঠিত হয়। এতে প্রায় ১৫০ জনের অধিক বিজ্ঞ মুফতি অংশগ্রহন করেন। দারুল উলুম দেওবন্দের প্রখ্যাত মুুফতি হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী তার মাকালাতে টেলিভিশনকে تصویرআখ্যায়িত করে না জায়েয বলে মন্তব্য করেন। 
উক্ত মাকালা নিরীক্ষণ করতে গিয়ে উক্ত কনফারেন্সে এর সভাপতি আল্লামা সাইয়্যিদ আসআদ মাদানী বলেন-
اتنی شدت مناسب نہیں ہے پر چیز کو قطعی حرام قرار دینے سے کام نہیں چلےگا، علماء کو امت کو انتشار سے نکالنے کی صورت پر توجہ دینی چاہے۔ لوگ ٹیلی ویرن پر قادیانوں، عیسائیوں کی طرف سے نشن ہونے والے پر وگر اموں کو دیکھ کر مرتد ہور ہے ہیں، کیا لوگوں کو ارتداد سے بچانے اور ان تک صحیح معلومات پہنچانے کے لئے ایسی صورت نہیں نکالی جاسکتی ہے، جیسی کہ شنافتی کا رڈ، پا سپورٹ وغیرہ کے لئے تصویر کے سلسلہ مین نکالی گئی ہے پھر فرمایا کہ ....
অনুবাদ এত কঠোরত উচিত নয়। প্রত্যেক বিষয়কে হারাম বলা যাবে না। উলামায়ে উম্মতকে গোমরাহী হতে বাচানোর প্রতি দৃষ্টি দেয়া চাই। লোকজন টেলিভিশনে কাদীয়ানী, খ্র্স্টিানদের প্রচারকৃত অনুষ্ঠান দেখে দেখে মুরতাদ হয়ে যাচ্ছে। লোকদেরকে গোমরাহী থেকে বাচিয়ে সঠিক পথ দেখানোর জন্য এমন কোন পথ কি বের করা যাবে না? যেরমকভাবে ID কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদির ক্ষেত্রে ছবি তোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে?
নফল হজ্ব, ওমরা, সফর ইত্যাদির জন্য ছবি তোলা কি প্রয়োজন হিসেবে মেনে নেয়া হয়নি?
এছাড়াও দারুল উলুম ওয়াকফে দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা সালেম কাসেমী, জামিয়া আশরাফিয়া লাহোর এর প্রধান মুফতি জামিল আহমদ থানভী, জামিয়া ইসলামিয়অ বান্নুরী টাউন এর শায়খ ও মুফতি আল্লামা নেজার উদ্দিন সাহেব প্রমুখ বিজ্ঞ আলেম টিভি, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া ইত্যাদির মাধ্যমে শরয়ী গন্ডির মধ্যে থেকে দ্বীন প্রচারের অনুমতি দিয়েছেন।
Copy By মুহতারাম মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ দা:বা:-এর পেজ থেকে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন