রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৬

মসজিদে থাকা-খাওয়া, ঘুমানো ও রাতযাপন

Mohiuddin Kasemi

মসজিদে থাকা-খাওয়া, ঘুমানো ও রাতযাপন করা প্রসঙ্গে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। কেউ বলছে, এটা নাজায়েয। আবার অনেকে মাকরুহ বলছেন। মূলত তাবলিগের ভাইয়েরা মসজিদে অবস্থান করেন, খাওয়া-দাওয়া করেন, ঘুমান; তাদের বিরুদ্ধবাদীরা এসব বলে বেড়াচ্ছে। আসলেই কি মসজিদে ঘুমানো নাজায়েয? বা মাকরুহ? 
মূলত মসজিদ হচ্ছে ইবাদতের ঘর। জিকির-আজকার, তেলাওয়াতের স্থান। বসবাস করার জায়গা না। তবে ইবাদতের প্রয়োজনে মসজিদে অবস্থান করা জায়েয। নামাযের প্রস্তুতি গ্রহণ, কুরআন শিক্ষা করা বা দেওয়া ইত্যাদি প্রয়োজনে মসজিদে অবস্থান করা জায়েয। অবস্থান করা যেহেতু জায়েয তাই সেখানে খাওয়া-দাওয়া করা, ঘুমানো ও রাতযাপন করাও জায়েয। তবে আশপাশে বসবাস করার মতো নিজের বাসা-বাড়ি থাকলে মসজিদে অবস্থান না করাই উত্তম। তদ্রƒপ মুসাফিরের জন্যেও মসজিদে অবস্থান করা বৈধ। ফাতাওয়া শামী ও আলমগীরিতে আছে, কেউ মসজিদে শুইতে চাইলে ইতিকাফের নিয়তে প্রবেশ করবে; তারপর কিছু নামায বা ইবাদত করবে। অতঃপর যা ইচ্ছা তা করতে পারবে। এভাবেই মসজিদে থাকা উত্তম। তখন আর কেউ কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতে পারবে না। 
রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষদশকের ইতিকাফ ছাড়া মসজিদে ঘুমিয়েছেন বলে কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই মসজিদে অবস্থান করতেন, ঘুমুতেন। তিরমিযি শরিফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ তুহফাতুল আহওয়াযিতে রয়েছে : وقد كان أصحاب النبي صلى الله عليه و سلم يبيتون في المسجد সাহাবিগণ মসজিদে ঘুমুতনে। 
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন : 
عَنْ ابْنِ عُمَرَ قَالَ كُنَّا نَنَامُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ وَنَحْنُ شَبَابٌ
অর্থ : রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আমরা মসজিদে ঘুমুতাম; তখন আমরা যুবক ছিলাম। (তিরমিযি, হাদিস নং- ; এ হাদিসটি বর্ণনার পর ইমাম তিরমিযি হাদিস ও বিষয় সম্পর্কে মন্তব্য করেন : 
قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ ابْنِ عُمَرَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَقَدْ رَخَّصَ قَوْمٌ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ فِي النَّوْمِ فِي الْمَسْجِدِ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ لَا يَتَّخِذُهُ مَبِيتًا وَلَا مَقِيلًا وَقَوْمٌ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ ذَهَبُوا إِلَى قَوْلِ ابْنِ عَبَّاسٍ
প্রখ্যাত তাবেয়ি সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব ও সুলাইমান ইবনে ইয়াসারকে মসজিদে ঘুমানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে দুনোজন বলেন : 
فقالا كيف تسألون عنها وقد كان أهل الصفة ينامون فيه وهم قوم كان مسكنهم المسجد
অর্থ : মসজিদে ঘুমানো সম্পর্কে কিভাবে জিজ্ঞেস কর; অথচ আহলে সুফফার সাহাবিগণ মসজিদেই ঘুমুতেন। মসজিদই তাঁদের বসবাসের স্থান ছিল। 
উপরের বক্তব্য তুহফাতুল আহওয়াযি (খ. ২, পৃ. ২২৮) থেকে নেওয়া। সেখানে আরো রয়েছে :
وذكر الطبري عن الحسن قال رأيت عثمان بن عفان نائما فيه وليس حوله أحد وهو أمير المؤمنين قال وقد نام في المسجد جماعة من السلف بغير محذور للانتفاع به فيما يحل كالأكل والشرب والجلوس وشبه النوم من الأعمال
.
এক্ষেত্রে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. মসজিদে ঘুমানো অপছন্দ করেছেন। তবে তিনিও বলেছেন, নামায পড়ার উদ্দেশ্যে হলে মসজিদে ঘুমানোও কোনো অসুবিধা নেই। আরবি ইবারত দেখুন :
عن بن عباس فروى عنه أنه قال لا تتخذ المسجد مرقدا . وروى عنه أنه قال إن كنت تنام فيه لصلاة لا بأس.

সুতরাং বুঝতে পারলাম, মুসাফির ও ঘরবাড়িহীন লোকজন মসজিদে থাকতে পারবে। তদ্রƒপ ইবাদতের উদ্দেশ্যও মসজিদে থাকা যায়। তবে মসজিদে যেই থাকুক ইতিকাফ ও ইবাদতের নিয়তে থাকবে। তখন আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না। তখন তা সম্পূর্ণ জায়েয হয়ে যাবে। হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও ফিকহের কিতাবগুলোতে আরো বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন