শায়খ মুহাম্মদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব নজদি (রহ) সম্পর্কে উলামায়ে দেওবন্দের অভিমত কী?
.
মুহাম্মাদ ইবন আবদুল ওয়াহহাব এবং তার আকিদার বই “কিতাবুত তাওহিদ” সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কী? আমার এই কিতাবটি পড়বার সুযোগ হয়েছিল কিন্তু একজন আলিম আমাকে বললেন যে বইটির লেখকের [মুহাম্মাদ ইবন আবদুল ওয়াহহাব] এমন আকিদাগত বিভ্রান্তি রয়েছে যে তিনি আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বাইরে। আপনারা কি এই কথার সঙ্গে একমত?
.
আর সালাফী আকিদা সম্পর্কে সাধারণভাবে আপনাদের রায় কী? এটা কি আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ভেতরে না বাইরে?
.
উত্তর নং:৩৭৭০৩: ১২ই ডিসেম্বর ২০১২ (ফাতওয়াঃ ১৩৭২/১৩৪৫/N=১৪৩৩)
.
(১) শায়খ মুহাম্মাদ ইবন আবদুল ওয়াহহাব নজদী[ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ {তাঁর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক}] আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকদের বাইরের কেউ নন।
.
তবে কিছু কিছু কিছু মাসআলায় তিনি আল্লামা ইবন তাইমিয়াহ এবং ইবনিল কাইয়িমের [ ﺭﺣﻤﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ {তাঁদের উপর আল্লাহ রহম করুন}] মতোই খুব কঠোর ছিলেন। তাঁর “কিতাবুত তাওহিদ” এই বিষয়ের জন্য চমৎকার একটি গ্রন্থ। তবে যেসব ব্যাপারগুলোতে তিনি কঠোরতা অবলম্বন করেছেন, সেসব ব্যাপার পরিহার করাই উচিত।
.
(২) শায়খকে [আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন] আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বাইরে বলে অভিহিত করা উলামায়ে দেওবন্দের সর্বশেষ মতের বিরুদ্ধাচরণ। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানবার জন্য হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ মনজুর নোমানীর [আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন] “শায়খ মুহাম্মাদ ইবন আবদুল ওয়াহহাবকে খিলাফ প্রোপাগান্ডা আওর হিন্দুস্তানকে উলামা-এ-হাক পার উসকে আসারাত” কিতাবটি দেখুন।
.
(৩)পূর্বযুগের আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের গুরুজনদের মাসলাক ছিল আল্লাহর সিফাতের অর্থের ব্যাপারে নিরবতা অবলম্বন করা। পরবর্তীকালের আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের উলামাগণ অর্থাৎ আশআরী ও মাতুরিদীগণ সিফাতের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য এমন অর্থ গ্রহণ করা বৈধ বলেন যাতে সর্বশক্তিমান আল্লাহর মর্যাদার খেলাফ হয় না।
যেমনঃ (আল্লাহর) ﻳَﺪُ [হাত] এর ক্ষেত্রে ‘ক্ষমতা’ অর্থ নেওয়া এবং ﻭَﺟْﻪُ [মুখমণ্ডল] এর ক্ষেত্রে ‘আল্লাহর স্বত্ত্বা’ অর্থ নেওয়া।
অতএব যদি কেউ সালাফী আকিদা বলতে আল্লাহর সিফাতের অর্থের ব্যাপারে নিরবতা অবলম্বনকে বোঝায়, তাহলে এই আকিদার অনুসারীরা মোটেও আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বাইরের বলে গণ্য হবে না। যদিও বর্তমানকালে এই মতবাদের কিছু ব্যক্তি চরমপন্থা অবলম্বন করছে যা নিঃসন্দেহে শরিয়তের এবং সালাফদের মতপার্থক্যের দৃষ্টিকোণ থেকে ভুল কাজ।
আর যদি সালাফী বলতে গাইর মুকাল্লিদ (যারা মাজহাব মানেন না) বোঝানো হয়, যেহেতু এরাও নিজেদেরকে সালাফী বলে দাবি করে, সেক্ষেত্রে তাদের আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কিছু মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদির সাথে মতপার্থক্য আছে যেমনঃ প্রমাণসিদ্ধ ইজমা, কিয়াস ইত্যাদি বিষয় প্রত্যাখ্যান। সেক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে তারা আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামাআতের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। এইসব লোকদের থেকে দূরে থাকা কর্তব্য। আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) সব থেকে উত্তম জানেন।
দারুল ইফতা, দারুল উলুম দেওবন্দ দেওবন্দের অফিসিয়াল ফতোয়ার ওয়েবসাইট থেকে ফতোয়াটির লিঙ্কঃ http://darulifta-deoband.org/showuserview.do?function=answerView&all=en&id=37703
আশাকরি বিষয়টি সবার নিকট স্পষ্ট হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হক্ব বুঝার তাওফিক দিন, আমীন। ওয়াসসালাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন