কবি রূহুল আমীন খান : সাহাবায়ে কেরামদের আমরা দেখিনি। তাঁদের কথা পড়েছি ইতিহাসে। তাঁদের ইখলাস-লিল্লাহিয়াত, ত্যাগ-কুরবানী, আদর্শ-নিষ্ঠার কথা পড়ে বিস্ময়াভিভূত হয়েছি। একালে তেমন মানুষ- দুনিয়ার প্রতি, সম্পদের প্রতি আড়ম্বরের প্রতি, তেমন নিরাসক্ত নির্মোহ ব্যক্তিত্ব পাওয়া দুষ্কর। সেই অনুপম চরিত্রের মানুষগুলোর কথা আমার মানসপটে যে রূপে অংকিত হয়েছে, তাঁদের যে চিত্র, যে ছবি আমার মনে বারবার উঁকি দিচ্ছে- আমার পরম শ্রদ্ধেয় উস্তাদ কায়েদ ছাহেব হুজুর হযরত মাওলানা আযীযুর রহমান নেছারাবাদী (রহ.) ছিলেন যেন তাঁদেরই প্রতিচ্ছবি। তাঁর ছাত্র হিসেবে, ভাবশিষ্য হিসেবে, আন্দোলনের কর্মী হিসেবে, সহকর্মী হিসেবে সুদীর্ঘ অর্ধশত বছরের আমার যে অভিজ্ঞতা, সে অভিজ্ঞতার নিরিখে আমি এ বিশেষণ ছাড়া তাঁকে অন্য কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করতে পারছি না।
ছিপছিপে লম্বা গড়নের এই মানুষটির চোখের তারায় যে জ্যোতি আমি প্রত্যক্ষ করেছি, এককথায় তা দুর্লভ। সে অপূর্ব দ্যুতিময় দৃষ্টি যখন তিনি নিক্ষেপ করতেন কর্মীদের প্রতি তখন তা তাদের অন্তর ভেদ করে যেত, সমগ্র সত্তায় ছড়িয়ে দিত বিদ্যুৎ প্রবাহ, মনোরাজ্যে সৃষ্টি করত প্রচ- আবেগ, আলোড়ন; জাগিয়ে তুলত আত্মোৎসর্গ করার উন্মাদনা। সেইসাথে তাঁর আদেশ, নির্দেশ, পরামর্শ মানার, তা বাস্তবায়িত করার যে উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি করত তা আমি ভুলতে পারব না কোনদিন। তার উত্তাপ আমি অনুভব করছি এখনও। সে দৃষ্টি অনন্য, অসাধারণ, অনুপম। এজন্য একালে তার দৃষ্টান্ত তিনি নিজেই। আধ্যাত্মিকতার পরিভাষায় একে ‘ফয়েজ’ বলে কিনা, ‘তাওয়াজ্জুহ’ বলে কিনা, তা ওই জগতের বিশেষজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন; আমি জানি না। তবে এইটুকু জানি, পতঙ্গকে আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে, প্রাণ উৎসর্গ করতে বাধ্য করে যে শক্তি, সে শক্তি ছিল কায়েদ ছাহেব হুজুরের দৃষ্টিতে।
যে কোন আন্দোলন ও তার নেতাকর্মীকে বুঝতে হলে তার ব্যাকগ্রাউন্ড বা পশ্চাৎভূমি জানা প্রয়োজন। কায়েদ ছাহেব হুজুরকে, তাঁর আন্দোলনকে বুঝতে হলেও প্রয়োজন ছারছীনাকেন্দ্রিক সর্বতোমুখী ইসলামী তাহরীককে বুঝা ও জানা। এ স্বল্প পরিসর নিবন্ধে তার বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব নয়। তবে সংক্ষেপে এটুকু বলা যায় ঃ বাংলার মুসলমানদের এক ঘোর দুর্দিনে ছারছীনার পীরে মরহুম হযরত মাওলানা নেছার উদ্দীন (রহ.)-এর আবির্ভাব। বাংলার মুসলমান, বিশেষ করে দক্ষিণ বাংলার মুসলমান ব্রিটিশ শাসনের যাঁতাকলে যখন নিপিষ্ট, তাদের ঈমান-আকীদা, তাহজীব-তমদ্দুন যখন বিলুপ্ত প্রায়, তখন এই মুর্শিদে কামিল তাঁর মুর্শিদ মুজাদ্দিদে যামান হযরত মাওলানা আবু বকর ছিদ্দীকী (রহ.)-এর দোয়া ও এজাযত নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন সমাজ সংস্কারের কাজে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে করেন হিদায়াত ও তাবলীগ। প্রতিষ্ঠা করেন শত সহস্র মাদ্রাসা ও তালীমী খানকাহ। এ আন্দোলন ছিল মূলত শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.)-এর সর্বব্যাপী আন্দোলনেরই উত্তরাধিকার। ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ছারছীনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় সে আন্দোলন অর্থাৎ ইসলামী পুনর্জাগরণের সংগ্রাম। ১৯৪৬ সালে কলকাতা মোহাম্মদ আলী পার্কে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় উলামা সম্মেলনে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাস ভূমি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতি জানানো হয় সমর্থন, সিলেটের রেফারেন্ডামকে পাকিস্তানের পক্ষে আনার জন্য চালানো হয় সক্রিয় তৎপরতা। পাকিস্তানে ইসলামী শরীয়াহ্ আইন জারী এবং কার্যকরীকরণের দাবীতে ছারছীনায় অনুষ্ঠিত হয় সর্বদলীয় উলামা ও মাশায়েখ সম্মেলন। ১৯৫১ সালে করাচীতে অনুষ্ঠিত সর্বদলীয় উলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে ছারছীনার পীর ছাহেব হযরত মাওলানা শাহ্ আবুজাফর মোহাম্মদ ছালেহ (রহ.)-এর যোগদান এবং ওই সম্মেলনে পাকিস্তানের জন্য ইসলামী শাসনতন্ত্র রচনার পথপ্রদর্শক নীতি হিসেবে ২২ দফা আদর্শ প্রস্তাব পাস ইত্যাদির মধ্যে দেদীপ্যমান এ আন্দোলনের ব্যাপকতা ও কার্যকারিতা।
কায়েদ ছাহেব হুজুর ছারছীনা মাদ্রাসায় অধ্যয়নকালেই বা‘আত গ্রহণ করেন পীরে কামিল হযরত মাওলানা নেছার উদ্দীন (রহ.)-এর হাতে। সে সময় থেকেই তিনি শরীক হন এ আন্দোলনে। পীরছাহেব কেবলা (রহ.)-এর বড় ছাহেবজাদা (তাঁর ইন্তেকালের পর গদ্দীনশীন পীর) হযরত মাওলানা শাহ আবু জাফর মোহাম্মদ ছালেহ (রহ.) এবং তিনি ছিলেন ছারছীনা মাদ্রাসার একই ক্লাসের ছাত্র। উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত নিবিড়। ছারছীনায় অধ্যয়ন সমাপ্ত করে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে তিনি আবার ছারছীনায় প্রত্যাবর্তন করে শুরু করেন মাদ্রাসায় অধ্যাপনা। নবপ্রাণ সঞ্চার করেন জমিয়াতে হিযবুল্লাহ আন্দোলনে। পীরছাহেব কেবলা হযরত মাওলানা শাহ্ আবু জাফর মোহাম্মদ ছালেহ (রহ.) হন এই সংগঠনের আমীর এবং কায়েদ ছাহেব হুজুর নাজেমে আলা। ছারছীনাকেন্দ্রিক বিভিন্নমুখী দ্বীনী তৎপরতার মধ্যে আন্দোলনের দিকটার তিনিই দিতে থাকেন নেতৃত্ব। এ সময় মরহুম দাদা হুজুর ক্বিবলা হযরত মাওলানা নেছার উদ্দীন (রহ.) তাঁকে ‘কায়েদ’ অর্থাৎ নেতা খেতাবে ভূষিত করেন। এই খেতাবে তিনি এতটাই খ্যাত হয়ে ওঠেন যে ‘কায়েদ ছাহেব’ যেন তাঁর আসল নামে পরিণত হয়। অনেকে তাঁর মূল নাম জানে না কিন্তু ‘কায়েদ ছাহেব’ উপনামটি জানে। আমীরে হিযবুল্লাহ হযরত পীর ছাহেব কেবলা এবং নাযেমে হিযবুল্লাহ হযরত কায়েদ ছাহেব হুজুরের চিন্তা, কর্ম একীভূত হয়ে যায়। তিনি পরিণত হন তাঁর অঘোষিত প্রধানমন্ত্রীতে, দক্ষিণ হস্তে। আমরা সাধারণ কর্মীরা কায়েদ ছাহেব হুজুরের কথাকে মনে করতাম পীর ছাহেব হুজুরেরই কথা, তাঁর সিদ্ধান্তকে মনে করতাম পীরছাহেব হুজুরেরই সিদ্ধান্ত। কায়েদ ছাহেব হুজুরের খেয়াল ছিল না আয়েশ-আরামের প্রতি, ধন-সম্পদের প্রতি, বিরাম-বিশ্রামের প্রতি। এমনকি নিজ পরিবার-পরিজনের প্রতি; নিজের স্বাস্থ্যের প্রতিও। উৎসর্গ করা যাকে বলে, আক্ষরিক অর্থেই নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন এই আন্দোলনে। তাঁর ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-চেতনা, যোগ্যতা, প্রতিভা, সময়- সবকিছুকে উজাড় করে দিয়েছিলেন দ্বীনি তাহরীকে। নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়াই ছিল তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হয় মন্ত্রের সাধন, নয় শরীর পতন- এর বাস্তব উদাহরণ কায়েদ ছাহেব হুজুর। আর এর সবকিছু ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তাঁর সবকিছুতে ছিল লিল্লাহিয়াত।
লিল্লাহিয়াত অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহর জন্য। কায়েদ ছাহেব হুজুর সবসময় বলতেন, মুসলমান তাঁর জীবনের যাবতীয় কাজ করবে একমাত্র আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে। তাঁর লক্ষ্য হবে আখিরাত, দুনিয়া নয়। দুনিয়াকে ব্যবহার করবে এই লক্ষ্যে পৌঁছার সহায়ক বস্তু হিসেবে। তিনি ছিলেন, মাওলানা রূমী (রহ.)-এর মসনবীর অনুরাগী পাঠক। তিনি তাঁর বয়াত উদ্ধৃত করে বলতেন, পানির উপর দিয়েই নৌকা চালাতে হয়, কিন্তু পানি থাকতে হবে নৌকার তলদেশে। লক্ষ্য রাখতে হবে নৌকার ভেতরে যেন পানি প্রবেশ না করতে পারে। কারণ পানি নৌকার ভেতরে প্রবেশ করলেই নৌকা হবে ধ্বংস। তেমনি দুনিয়ার ওপর দিয়েই পাড়ি জমাবে তুমি আখিরাতের বন্দরের দিকে। দুনিয়া থাকবে তোমার পদতলে। তা না থেকে দুনিয়া তথা দুনিয়ার মোহ, আসক্তি যদি তোমাতে প্রবেশ করে তবে তোমার ধ্বংস অনিবার্য। একথা তিনি শুধু মুখেই বলতেন না, তাঁর প্রতিটি কাজ, সমস্ত তৎপরতা থেকে প্রকাশ পেত লিল্লাহিয়াত। তিনি ছিলেন লিল্লাহিয়াতের প্রতীক।
কায়েদ ছাহেব হুজুরকে আমি দেখেছি উস্তাদের আসনে বসে অধ্যাপনা করতে, দেখেছি প্রশাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠান চালাতে; সংগঠক হিসেবে সংগঠন গড়ে তুলতে, পরিচালনা করতে ও সময়োপযোগী কর্মসূচি দিতে; চিন্তাবিদ হিসেবে জটিল, কঠিন সমস্যার সঠিক সমাধান দিতে; বাগ্মী হিসেবে উদ্দীপনাময়ী, পথনির্দেশক অসাধারণ বক্তৃতা দিতে; লেখক হিসেবে গ্রন্থরাজি রচনা করতে; সম্পাদক হিসেবে নিপণ হাতে সম্পাদনার কাজ চালাতে; মুরিদ হিসেবে আদাবুশ শায়খের গভীর মনোযোগ দিতে; ধ্যানী হিসেবে মুরাকাবা-মুশাহাদা করতে; পীর হিসেবে তরীকতের সবক দিতে; চিকিৎসক হিসেবে ব্যবস্থাপত্র দিতে; ঝাড়-ফুঁক দিতে; পরামর্শ দাতা হিসেবে সঠিক পরামর্শ দিতে; সংগ্রামী মুজাহিদ হিসেবে অনৈসলামী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে, দুর্নীতি-দুষ্কৃতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে; মিছিলের পুরোভাগে থেকে মিছিল পরিচালনা করতে; দেখেছি উদার কণ্ঠে ইসলামী সংগীত গাইতে, নাট্য পরিচালনা করতে; দেখেছি চিন্তাবিদ, দার্শনিক হিসেবে বিষয়ের গভীর থেকে গভীরে প্রবেশ করে রহস্য উদ্ঘাটন করতে; দরদী মানুষ হিসেবে পরিচিতজনদের খোঁজ-খবর নিতে; দেখেছি দুস্থ, দুর্গত, অভাবগ্রস্ত লোকদের সমব্যথী হয়ে তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে সচেষ্ট হতে; রোগীদের সেবা করতে, অনাথ ইয়াতীমদের আশ্রয় দিতে, তাদের স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে এবং এসবের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠত তাঁর অপূর্ব নিষ্ঠা, আন্তরিকতা, দ্বীনের দরদ ও মানব প্রেম। তিনি ছিলেন সাম্যের প্রতীক, মেহমান-নেওয়াজ অতিথি বৎসল, উদারদিল, ইনসানে কামিল, মর্দে মুমিন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সদা তৎপর ছিলেন তিনি। এজন্য হিন্দুরাও মনে করত আপনজন, তারা তাঁকে ভালোবাসত, অপরিসীম শ্রদ্ধা করত। তিনি ছিলেন- বিনয়ী, নিজ ছাত্রদের এমনকি কিশোর বালকদেরও তিনি আপনি বলে সম্বোধন করতেন। যে খাবার তাঁর সম্মুুখে হাজির করা হতো সবাইকে নিয়ে একাসনে বসে, সমভাবে বণ্টন করে তাই তিনি খেতেন, উঁচু-নিচুর ভেদাভেদ, ধনী-গরীবের তারতম্য তিনি করতেন না, করা দেখতে পারতেন না। তাঁর অমায়িক ব্যবহার কেউ ভুলতে পারত না। তাঁর ছাত্ররা-যাদের অনেকে বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন, অনেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন, অনেকে উচ্চপদে বিভিন্ন চাকরি করছেন, অনেকে অনেক সম্মানের আসনে আসীন হয়েছেন, অনেকে অবসর জীবনযাপন করছেন- কিন্তু ভুলতে পারেননি উস্তাদ কায়েদ ছাহেব হুজুরকে। যখনই তারা অবসর পেয়েছেন ছুটে গেছেন তাঁর সান্নিধ্যে।
কায়েদ ছাহেব হুজুরের যৌবন কেটেছে ছারছীনায়, প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেও তিনি ছিলেন সেখানে। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন সেখানকার চাকরি থেকে। তাঁর প্রধান কর্মকেন্দ্র হয় নিজ জন্মভূমি ঝালকাঠী শহরের উপকণ্ঠে বাসন্ডা গ্রামে। এ গ্রামের নামকরণ করেন তিনি স্বীয় মুর্শিদের নামে নেছারাবাদ। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার নাম করেন ছারছীনার মরহুম পীর ছাহেব হযরত মাওলানা নেছার উদ্দীন (রহ.)-এবং গদ্দীনশীন পীর ছাহেব হযরত মাওলানা শাহ আবুজাফর মোহামদ ছালেহ (রহ.)-এর নামে। নেছারাবাদ ছালেহীয়া মাদ্রাসা। কী অপূর্ব মুহব্বত!
সে যাই হোক, এক পর্যায়ে এসে তাঁর জীবনের যেন পট-পরিবর্তন ঘটে। গালেব হয় মজযুবিয়াত। সাধারণ পাঠকদের বোধগম্য হওয়ার জন্য এর কিছুটা ব্যাখ্যার প্রয়োজন। তাসাউফের পরিভাষায় আধ্যাত্ম সাধনার উচ্চপর্যায়ের দুটি স্তরের একটির নাম ফানাফিল্লাহ, আরেকটি বাকাবিল্লাহ। ফানাফিল্লা’র স্তরে পৌঁছে সাধক আল্লাহর অস্তিত্বের মধ্যে নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। তখন অবস্থা আর নিজের আয়ত্ত্বে থাকে না। এই আত্মলীন অবস্থায় মজযুবিয়াত প্রাধান্য লাভ করে। অনেক সময় সে যে কী করছে, কী বলছে তা নিজেও জানে না। এর পরবর্তী স্তর বাকাবিল্লা’র এখানে এসে সাধক স্থিত হয়। তার মধ্যে ফিরে আসে স্বাভাবিক অবস্থা। একে বলে সালেকিয়াত। কায়েদ ছাহেব হুজুর নেছারাবাদে স্থিত হওয়ার পর এ দু’অবস্থার মধ্যে অবস্থান করতেন। কখনো ফানাফিল্লায়, কখনো বাকাবিল্লায়, কখনো মজযুব, কখনো সালেক। এ সময় তাঁর থেকে প্রকাশ পেতে থাকে অতি প্রাকৃতিক ঘটনা, যাকে বলে কারামত। তাঁর ব্যক্তিত্বকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং ভয় ও সমীহ মিলে এক স্বতন্ত্র ইমেজ। মানুষ আসতে থাকে দলে দলে তাঁর কাছে। বেড়ে যেতে থাকে ভক্ত-অনুরাগী-অনুসারীর সংখ্যা। আউলিয়ায়ে কেরামের জীবনে সাধারণত দুটি অবস্থা দেখা যায়। প্রথম ফাকাকাশি, তারপর ফতহুল গায়েব। অর্থাৎ তাদের শুরুর জিন্দেগী অভাব-অনাটনের এবং শেষের জীবন প্রাচুর্যের। কায়েদ ছাহেব হুজুরের জীবনেও তাই দেখা যায়। এ সময় তিনি হাত দেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজে। মাদ্রাসা, মসজিদ, ছাত্রাবাস, ইয়াতীমখানা, মহিলা মাদ্রাসা, কারিগরি বিদ্যালয়সহ প্রায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠান কায়েম হয় নেছারাবাদে। ভক্তরা এগিয়ে আসে দানের হস্ত প্রসারিত করে। তবে সম্পদের প্রতি বিরাগ মনোভাব তাঁর আগের মতোই থাকে বহাল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন