ইহতিশামুল হক
চুরি করা বড় অন্যায়। ইসলাম চুরি করাকে হারাম বলেছে। মহান আল্লাহ বলেন, তোমরা অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ কর না। সূরা বাকারা, সূরা নং-১, আয়াত নং ১৮৭। চুরি জঘন্য অপরাধ। মানুষ যখন এ অপরাধে লিপ্ত হয় তখন তার ঈমান-ই থাকে না। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, ব্যভিচারী যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে না এবং চোর যখন চুরি করে তখন সেও মুমিন থাকে না।
মানুষ যেন এ পাপ থেকে দূরে থাকে এজন্য ইসলামী শরিয়তে কঠোর শাস্তির বিধান দেয়া হয়েছে। কোরআন শরিফে বর্ণিত হয়েছে, চোর পুরুষ বা নারী হোক, তাদের হাত কেটে দেবে। এটা তাদের পাপের শাস্তি। এ দণ্ড আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। সূরা মাইদাহ, সূরা নং-৪, আয়াত নং-৩৭। যেসব দেশে এ বিধান কার্যকর করা হয়েছে, সেখানে চৌর্যবৃত্তি নেই। চোরের উপদ্রব থেকে মানুষ রক্ষা পেয়েছে। এ বিধান সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য। ধনী পরিবারের কেউ এর বাইরে নয়। ইসলামী বিধিমতে সমাজের যে কেউ এ কর্মে লিপ্ত হবে তাকেই এ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। হোক সে প্রধানমন্ত্রী বা তার পুত্র। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, বনু মাখযুম গোত্রীয় এক মহিলা চুরি করেছিল। এতে কুরাইশরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তারা বলাবলি করে, কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ ব্যাপারে সুপারিশ উত্থাপন করবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় পাত্র উসামা ইবন যায়দ (রা.) ছাড়া আর কে এ সাহস করবে? তারপর উসামা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি আল্লাহর দণ্ডবিধিগুলো থেকে এক দণ্ডের ব্যাপারে সুপারিশ করছ? তারপর তিনি দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্বেকার লোকদের নীতিও ছিল যে, যখন কোনো সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করত, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে কোনো দুর্বল ব্যক্তি চুরি করত, তখন তার ওপর দণ্ড প্রয়োগ করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মদ (সা.)-এর কন্যা ফাতেমাও চুরি করে, তাহলে আমি অবশ্যই তার হাত কেটে দেব।
বুখারি, ৪৩৭৯ ও মুসলিম নং-৩৫৯৮।
কোনো কোনো দেশের সংবিধানে চুরির অপরাধের জন্য গুটিকয়েক বছরের সাজার বিধান রয়েছে এবং সে সাজাও তৎক্ষণাত হয় না। হয় মামলা হওয়ার পর। মামলাও কোনো কোনো সময় গ্রহণ হয় না যদি না বড় কোনো কাগজে সে সম্বন্ধে রিপোর্ট হয়। মামলার বিচার ঝুলে থাকে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। যদি না সেখানে বড় রকমের আর্থিক লেনদেন হয়। এভাবে দেখা যায় চুরির মতো একটি জঘন্য অপরাধের মামলার রায়ও অপরাধীর সাজা হতে বছর দশেক সময় লেগে যায়। ফলে তৎক্ষণাত এ সাজা না হওয়ার কারণে সমাজে এ বিচারের কোনো প্রভাব পড়ে না। মানুষ চুরি করতে ভয় পায় না। তার চিন্তা হয়, কিছু খরচ করলে হয়তো রক্ষা পাওয়া যাবে। পূর্ববর্তীকালে যখন মুসলিম খলিফারা এ আইনটি বাস্তবায়ন করেছেন, তখন তাদের সমাজ হয়েছিল সোনালি সমাজ।
শিক্ষক, জামেউল উলুম মাদ্রাসা, মিরপুর
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন