মানুষ কোনদিনই যুদ্ধের পক্ষে নয় । মানুষ শুধু মানুষকে
মারার জন্য যে পরিমান অর্থ সময় ব্যায় করে এর পাঁচ ভাগও যদি শিক্ষা ও খাদ্যের জন্য
ব্যায় করতো তাহলে পৃথিবীর চেহারাই পাল্টে যেতো ।
আন্তর্জাতিক
রাজনীতিতে কোন শত্রু-মিত্র নাই, আন্তর্জাতিক রাজনীতি'র মূলনীতিই হচ্ছে ক্ষমতা অর্জনের প্রতিযোগীতা এবং "ব্যালেন্স অব
পাওয়ার" ! যুদ্ধ নামটা শুনলেই অনেকেই আতকে উঠে কারন যুদ্ধ মানুষকে দাড়
করিয়ে দেয় এক ভয়ংকর পরিণতির সামনে ।পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই বিভিন্ন দেশ তার
ক্ষমতা দেখানো /ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একজন আরেক জনের উপরে ঝাপিয়ে পড়েছে আর এতে
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে নিরীহ মানুষ, মারা গেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ ।
আমি জানিনা কোন অস্ত্র দ্বারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হবে। তবে চতুর্থ
বিশ্বযুদ্ধ হবে লাঠি আর পাথর দ্বারা । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরাট ধ্বংসকার্য শেষ
হওয়ার মাত্র একুশ বছরের মধ্যেই বিশ্ববাসী আর একটি বিধ্বংসী যুদ্ধের মুখোমুখি হয় ।
বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই কোনো না কোনো ভাবে এই বিশ্বযুদ্ধের দ্বারা প্রভাবিত হয়
।
পৃথিবীতে মোট দুইটি
বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে । ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত
আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে । এই ভয়াবহ যুদ্ধে
আনুমানিক ৬ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ মারা যায় যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল রাশিয়ার
নাগরিক । এই যুদ্ধের পরপরই সমগ্র ইউরোপ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়; এক অংশ হয় পশ্চিম ইউরোপ আর অন্য অংশে অন্তর্ভুক্ত হয় সোভিয়েত রাশিয়া ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ রয়েছে । প্রথম
বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি তার সম্পদ, সম্মান এবং ক্ষমতার প্রায়
সবটুকুই হারিয়ে বসে । জার্মানির একটি জাতীয় আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের
পরপর সম্পাদিত ভার্সাই চুক্তি হতে বেরিয়ে আসার । এরই প্রেক্ষাপটে হিটলার এবং তার
নাজি বাহিনীর ধারণা ছিল যে একটি জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে সংগঠিত করা সম্ভব
হবে । নাৎসি বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণএর মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়
। প্রথম দিনই জার্মান ঝটিকা বাহিনী পোল্যান্ডকে ছিন্নবিছিন্ন করে দিল । ১৭ই
সেপ্টেম্বর গোপন সমঝোতা অনুসারে সোভিয়েত বাহিনীও আক্রমণে যোগ দিল । জার্মানী বনাম
মিত্রপক্ষীয় যুদ্ধ চলাকালীন সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ফিনল্যান্ড আক্রমণ করে
শীতকালীন যুদ্ধের সূচনা করল । নরওয়ে বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তার ভৌগোলিক
অবস্থানের জন্য । নরওয়ে বাহিনী আত্মসমর্পণ করলো এবং রাজা সপ্তম হাকোন ব্রিটেনে
আশ্রয় নিলেন ।
১০ই মে ১৯৪০ একসাথে
চারটি দেশ আক্রমণ করে ভুয়া যুদ্ধের ইতি টানল জার্মানী । ১৪ই মে নেদারল্যান্ডের
পতন ঘটলো । ২৭শে মে বেলজিয়ামের পতন হলো । ১০ই জুন ইতালিও যুদ্ধ ঘোষণা করল । তবে
তারা আক্রমণ শুরু করে ২০শে জুন থেকে । ২২শে জুন জার্মান-ফরাসি এবং ২৪শে জুন
জার্মান-ইতালীয় শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । ১৯৪০ সালে জার্মানী-রুমানিয়া
তেল-অস্ত্র চুক্তি হল। হাঙ্গেরি ও রুমানিয়ার মতবিরোধ ঘটায় জার্মানী মধ্যস্থতা
করে । হিটলার দ্রুত হাঙ্গেরি, রুমানিয়া ও স্লোভাকিয়াকে
অক্ষচুক্তিতে টেনে নিল ।পোল্যান্ড কে সাপোর্ট করে ব্রিটেন ও ফ্রান্স জার্মানীর উপর
যুদ্ধ ঘোষনা করে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ছিল মানবজাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায় ...
যে যুদ্ধটির মূল কারণ ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের প্রতিশোধ গ্রহন ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেন ও ফ্রান্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে মোটা
অঙ্কের টাকা ঋন নেওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাভবান হয়েছিল । প্রথম বিশ্বযুদ্ধে
জার্মনি পরাজিত হয়েছিল । পরাজিত জার্মানিকে বিশাল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ গুনতে হয়েছিল ।
বিশ্বের প্রতিটি দেশ নিজস্ব অর্থনীতি রক্ষা করতে আমদানীকৃত পন্যের ওপরে অধিক হারে
করারোপ করে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপসহ অন্যান্য দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে
পড়ে। ১৯১৭ সালের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর থেকে সোভিয়ে ইউনিয়নও বিচ্ছিন্ন ছিল ।
এডলফ হিটলার, এবং তার বাহিনীর নাম ছিল নাৎসী বাহিনী । তাদের বিশ্বাস ছিল জার্মানীর উন্নতি
স্বমৃদ্ধি কিছু পঙ্গু ও গরিব মানুষের জন্য আটকে আছ । ইহুদী রা ছিল PRIMARY VICTIM. প্রায় ছয় মিলিয়ন ইহুদী তখন নাৎসী বাহিনীর হাতে মারা যায়
। ২য় বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ অর্থনৈতিক । ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি জেনারেল টিক্কা খান
বলেছিলেন ...‘পূর্ব পাকিস্তানে মানুষ নয়, জমি চাই!’। ... তেমনি
সম্প্রসারনবাদী হিটলারও অনুরূপ উক্তি করেছিলেন- বিশেষ করে জার্মান সীমান্তের
পূর্বাঞ্চলের জমির ওপর হিটলারের শ্যেনদৃষ্টি পড়েছিল । জাপানের ২য় বিশ্বযুদ্ধের
জড়িয়ে পড়ার পিছনে ছিল মার্কিন অর্থনৈতিক মন্দা । যার ফলে চেরি ফুলের সুন্দর দেশটি
রক্তের হোলি খেলায় মেতে ওঠে ...ঘনিয়ে আসে হিরোসিমা ও নাগাসাকি আণবিক বিস্ফোরণ । এই
মূহূর্তে পৃথিবীতে ১১,০০০ সক্রিয় পারমানবিক অস্ত্র আছে - যা
হিরোসিমার হিসাবে ২৬০,৭০০,০০০ মানুষ মারতে সক্ষম ।
সক্রিয় বোমাগুলোর মধ্যে ৬৩৯০টা আমেরিকা, ৩২৪২ টা রাশিয়া আর ২০০ টা
বৃটেনের দখলে আছে । গাভরিলো প্রিন্সেপ সারাজেভোর একটা ফুটপাতের ওপর ক্যাফেতে বসে
স্যান্ডউইচ খাচ্ছিল । হঠাৎই তাঁর চোখ কালো রঙের একটি কনভাট্রিবল গাড়িতে আটকে যায় ।
গাড়িতে আর্কডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ বসে; পাশে আর্কডিউক-এর স্ত্রী সোফি
। ড্রাইভার রং র্টান নিয়েছিল । এখন গাড়ি ব্যাক করছে । কাল বিলম্ব না করে প্রিন্সেপ
উঠে দাঁড়িয়ে পিস্তল বের করে মাত্র ৫ ফুট দূর থেকে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি করে । এই
মুহূর্তটিই সূত্রপাত করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে
হতাহতের পরিমান- সর্বমোট ২ কোটি ৭০ লক্ষ । এর মধ্যে ১ কোটি ৬০ লক্ষ মৃত । ২ কোটি
দশ লক্ষ আহত । এর মধ্যে সামরিক প্রায় ১ কোটি । প্রায় ৭০ লক্ষ সিভিলিয়ান । প্রথম
বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল: ২৮ জুলাই, ১৯১৪ থেকে ১১ নভেম্বর ১৯১৮ ।
দক্ষিণ এশিয়ায় আমেরিকার মিত্র এখন ভারত । বাণিজ্যে, সমরাস্ত্রে ভারত-আমেরিকা এখন দারুণ বন্ধু, কঠিনতম বাধনে তাদের সুসম্পর্ক
। পাকিস্তানকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানিয়ে, আফগানিস্তানে রক্তপাত ঝরিয়ে, শ্রীলঙ্কায় নৃশংস ও হিংস্র বর্বরতায় তামিল টাইগারদের হত্যা করে
ভারত-আমেরিকার চোখ এখন নেপাল, মায়ানমার আর বাংলাদেশের দিকে
। রাজনৈতিক নিপীড়নের মধ্যে আওয়ামী সরকার খুব শিগগিরই বাংলাদেশের সমুদ্রবক্ষের
সকল ব্লক তুলে দেবে আমেরিকান ও ব্রিটিশ তেল-গ্যাস কোম্পানির হাতে । সুবিধাবাদী
কমিউনিস্ট, ঈশ্বর শাসন প্রত্যাশী, ধর্ম ব্যবসায়ী কথিত প্রগতিশীল মধ্যপন্থী, মেরুদণ্ডহীন জাতীয়তাবাদী
রাজনৈতিক দলগুলো ।
আনা ফ্রাঙ্কের জন্ম
১৯২৯ সালের ১২ জুন, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে ।
১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর ইহুদিদের জন্য জার্মানিতে বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ
হয়ে পড়লে আনার বাবা অটো ফ্রাঙ্ক ১৯৩৩ সালের জুলাই মাসে সপরিবারে নেদারল্যান্ডের
আমস্টার্ডাম শহরে চলে আসেন । ১৯৪০ সালে হিটলার নেদারল্যান্ড দখল করে নেন, ফলে ফ্রাঙ্ক পরিবারের জন্য নেদারল্যান্ডও অনিরাপদ হয়ে পড়ে । ফ্রাঙ্ক পরিবার
সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা দখলদার জার্মান বাহিনী জোর করে শ্রমশিবিরে পাঠানোর আগেই
নেদারল্যান্ডেই নিরাপদ আশ্রয়ে গা-ঢাকা দেবে । ফ্রাঙ্ক পরিবারের সদস্য ছিল
চারজন—অটো ফ্রাঙ্ক, তাঁর স্ত্রী এডিথ, দুই মেয়ে মারগট ও আনা । আনা ১৯৪৪ সালের ৪ আগস্টে জার্মানদের কাছে ধরা পড়ার
আগে পর্যন্ত অর্থাৎ ৭৬১ দিন এই অ্যানেক্স ভবনে কাটিয়ে দেয় । এক মহূর্তের জন্যও
তাদের কেউ এখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ পায়নি । এখানেই আনা তার ১৩তম জন্মদিনে
উপহার পাওয়া লাল-সাদা চেক মলাটের ডায়েরিতে দিনিলিপি লিখতে শুরু করে । জন্মদিনে
পাওয়া ডায়েরিতে ১২২টি পৃষ্ঠা ছিল । আনা ১৯৪২ সালের ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এটিতে দিনলিপি
লিখে শেষ করে ফেলে । এরপর নতুন নতুন নোট-বই এবং ৩২৪টি আলগা কাগজে আনা তার দিনলিপি
লিখে রাখে । আনা তার দিনলিপি একদল কাল্পনিক বান্ধবীকে উদ্দেশ করে লেখা শুরু করে, এসব বান্ধবীর নাম সে তার প্রিয় লেখক সিসি ফ্যান মার্ক্সভেল্ডটের লেখা থেকে
নিয়েছিল, তবে তার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র হিসেবে স্থান করে নেয়
‘কেটি’ নামের এক কাল্পনিক বান্ধবী ।
দেশ শত্রুমুক্ত হলে
আনা ডায়েরিটি বই আকারে প্রকাশের স্বপ্ন দেখে, বইয়ের নাম ঠিক করে হেট
অ্যাকটারবুস, যার ইংরেজি অর্থ ‘দ্য সিক্রেট অ্যানেক্স’
বা গোপন কুঠরি । ১৯৪৭ সালের ২৫ জুন ডাচ্ ভাষায় প্রকাশ করেন, বইয়ের নাম দেন হেট অ্যাকটারবুস । পরে বইয়ের নাম পাল্টে রাখা হয় আনা
ফ্রাঙ্কের ডায়েরি, কেউ কেউ এটির নাম দেন দি
ডায়েরি অব এ ইয়ং গার্ল । এ পর্যন্ত প্রায় ৭০টি ভাষায় আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরির
কয়েক শ সংস্করণ প্রকাশ পেয়েছে ।
১৮৮৯ সালের ২০ এপ্রিল
হিটলার এক দরিদ্র পরিবারে জম্মগ্রহণ করেন । হিটলার ছিলেন তার বাবার তৃতীয় স্ত্রীর
তৃতীয় সন্তান । হিটলারের কণ্ঠ ছিল সুরেলা । গির্জায় প্রার্থনায় এবং বিদ্যালয়ের
গানের অনুষ্ঠানে তার ডাক পড়ত। এই কণ্ঠ তাকে পরবর্তিতে পুরো জার্মানবাসীকে
মোহাবিষ্ট করে ফেলতে সাহায্য করে । হিটলারের ছোটবেলার একটি প্রিয় সখ ছিল যুদ্ধের
ছবি দেখা । তার প্রিয় লেখক ছিলেন কার্ল মে । তরুন হিটলার ওল্ড শ্যাটারম্যন সিরিজের
৭০ টি বই পড়ে ফেলেন । এভাবেই হিটলারের মধ্যে যুদ্ধের প্রতি আকর্ষণ তৈরী হয় । একটা
সময় হিটলার ছবি এঁকে জীবন ধারন করেন । তিনি ভাল ছবি আঁকতে পারতেন । হিটলার
রাজনৈতীক আলোচনা করতেন রেস্তোরায় । লোকজন তার কথা মুগ্ধ হয়ে শুনতো । ১৯১৪ সালে
শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের পক্ষে যুদ্ধে তিনি প্রচণ্ড সাহসিকতা ও
বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন । এর পুরষ্কার হিসেবে তাকে আয়রণ ক্রস পদক দেওয়া হয় । একসময়
যুদ্ধে আহত হয়ে তিনি হাসপাতালে যান । সেখান থেকে যুদ্ধে জার্মানদের পরাজয়ের কথা
শুনতে পান । এ সংবাদ তার অন্তর চুরমার করে দেয় । সেনাবাহিনীতে তিনি ইস্তফা দেন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন