শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অারাফার রোযা: জিলহজ্বের নয় তারিখে না হাজীদের অারাফায় অবস্থানের দিনে!

Mahbubul Hasan Arife

যিলহজ্বের প্রথম দশকের অনেক ফযীলতের কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। বিশেষভাবে যিলহজ্বের নয় তারিখের রোযার বিষয়ে হাদীসে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একটি হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
صيام يوم عرفة أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده.
ইয়াওমে আরাফা'র রোযার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, তিনি এর দ্বারা আগের এক বছরের ও পরের এক বছরের গোনাহ মাফ করবেন।-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১১৬২
হাদীসে ‘ইয়াওমু আরাফা’র যে রোযার কথা বলা হয়েছে এর অর্থ কি? হাজীগণ যেদিন আরাফায় অবস্থান করেন সেই দিনের রোযা, না জিলহজ্বের নয় তারিখের রোযা?
সঠিক ব্যাখ্যা হলো জিলহজ্বের নয় তারিখের রোযা। কারণ-
এক.
এই রোযা 'আরাফা' বা 'উকুফে আরাফা'র আমল নয়; বরং ঐ তারিখের আমল। ‘ইয়াওমে আরাফা’ হচ্ছে ঐ তারিখের (নয় যিলহজ্বের) পারিভাষিক নাম। যেহেতু ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান হজ্বের প্রধান রোকন ‘উকুফে আরাফা’ নয় যিলহজ্বে আদায় করা হয় তাই এ তারিখের নাম পড়ে গেছে ‘ইয়াওমে আরাফা’। সুতরাং প্রত্যেক মুসলমান নিজ দেশের হিসাব অনুযায়ী জিলহজ্বের নয় তারিখেই রোজা রাখবে।

বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বুঝা যেতে পারে। ‘ইয়াওমু আরফা’র মত হাদীসে আরেকটি শব্দ এসেছে ‘সওমু ইয়াওমি আশুরা’ এটি একটি ইসলামী পরিভাষা। এর দ্বারা মহররম মাসের দশ তারিখের রোযাকে বোঝানো হয়েছে। যেমনিভাবে প্রত্যেক মুসলমান নিজ দেশের হিসাব অনুযায়ী দশ মহররম রোজা রাখে; সউদী অারবের দশ তারিখের প্রতি লক্ষ করে না, তেমনিভাবে 'ইয়াওমু অারাফা'র ক্ষেত্রেও নিজ দেশের হিসাব অনুযায়ী নয় তারিখেই রোজা রাখবে; সউদী অারবের নয় তারিখে অর্থাৎ হাজীদের অারাফায় অবস্থানের দিনে নয়।
দুই.
তাকবীরে তাশরীক আরাফা বা উকূফে আরাফা’র বিশেষ আমল নয়। বরং এটি প্রত্যেক ব্যক্তির নিজ দেশের হিসাব অনুযায়ী যিলহজ্বের নয় তারিখ ফজর থেকে শুরু হয়ে তের তারিখ অাছরের মধ্যবর্তী সময়ের অামল। অথচ যে দলীল দ্বারা নয় তারিখ থেকে তাকবীরে তাশরীক শুরু হওয়া প্রমাণিত তাতেও ইয়াওমে আরাফা শব্দই আছে। 
দলীলের আরবী পাঠ এই-
عن علي رضي الله عنه : أنه كان يكبر بعد صلاة الفجر يوم عرفة، إلى صلاة العصر من آخر أيام التشريق، ويكبر بعد العصر.:
(আলমুসান্নাফ, ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ৪/১৯৫ হাদীস ৫৬৭৭, ৫৬৭৮ শায়খ আওয়ামাহ তাহকীককৃত) [হাফিজ ইবনে হাজার রহ. তাঁর আদ দিরায়া গ্রন্থে বলেন-এর সনদ সহীহ]

এখানে ইয়াওমে আরাফা শব্দটি কি নয় যিলহজ্ব এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় নাই? এটা কি ভুল?
সুতরাং বুঝা গেল 'ইয়াওমু অারাফা' অর্থ নয় জিলহজ্ব হওয়া একটি প্রসিদ্ধ এবং স্বীকৃত বিষয় তাই 'সওমু ইয়াওমি অারাফা' অর্থ জিলহজ্বের নয় তারিখের রোজা হবে এটাই সঠিক কথা।
তিন.
হাজীদের অারাফায় অবস্থানের দিনে একসাথে বিশ্বের সকল মুসলামের পক্ষে রোযা রাখা সম্ভবও নয়। কারণ, যেদিন হাজীরা রাফায় অবস্থান করবে দেখা যাবে বিশ্বের কোন কোন দেশে তখন রাত চলছে যেমন মেরিকার কথাই দরুন সউদিয়ারবের দিন হলে মেরিকার রাত তাই তাদের পক্ষে রোযা রাখা সম্ভব নয়। সুতরাং ইয়ামু অারাফা'র এমন অর্থ গ্রহণ করতে হবে যে অর্থ অনুযায়ী বিশ্বের সকল মুসলামানের পক্ষে ইয়াওমু অারাফা'র রোযা রাখা সম্ভব হয়। অার এটা ইয়াওমু অারাফা'র অর্থ নয় জিলহজ্ব ধরলেই সম্ভব।

চার.
গোটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা রয়েছে যে, ইয়াওমে আরাফার পরের দিনটিই ইয়াওমুন নাহর তথা কোরবানির দিন। পৃথিবীর কোন অালেম বলেন নি যে, ইয়াওমে আরাফা এবং ইয়াওমুন নাহর তথা কোরবানির দিনের মাঝে তৃতীয় কোন দিন থাকতে পারে। এখন অামাদের বাংলাদেশের কথাই দরুন, সউদী অারবের সাথে এখানকার অধিবাসীদের অারবী তারিখে সাধারণত এক দিনের ব্যবধান হয়ে থাকে। অার ইয়াওমুন নাহর তথা কোরবানির দিন দশ জিলহজ্বে হওয়াটা তো নির্ধারিত। সুতরাং এই অঞ্চলের অধিবাসীরা যদি 'ইয়াওমে আরাফা' অর্থ হাজীদের অারাফায় অবস্থানের দিন (যা অামাদের দেশের হিসাব অনুযায়ি জিলহজ্বের অাট তারিখ হয়) ধরে নেয় তাহলে ইয়াওমু অারাফা এবং ইয়াওমুন নাহর তথা কোরবানির দিনের মাঝে তৃতীয় অারেকটি দিন অতিরিক্ত হয়ে যায়, যা সম্পূর্ণ উদ্ভট এবং ইজমা বিরোধী।

তো এ জাতীয় বিচ্ছিন্ন চিন্তা ও বক্তব্য আরো কিছু ক্ষেত্রেও বিচ্ছিন্নতাকে অনিবার্য করে তুলবে। সুতরাং হাদীসে বর্ণিত ইয়াওমু অারাফা'র অর্থ জিলহজ্বের নয় তারিখ এটাই সঠিক কথা।
হায়! অামাদের ঐসকল ভাইয়েরা যারা মানুষদেরকে হাজীদের রাফায় অবস্থানের দিন রোযা রাখার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন তারা যদি উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে একটু চিন্তা করতেন এবং সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বেঁচে থাকতেন!
মাহবুবুল হাসান রিফী
জামিয়া ইসলামিয়া মোমেনশাহী
তারিখ ০৬/০৯/২০১৫ ইং রি-পোস্ট


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন