বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

এক নর্তকীর ইসলাম গ্রহনের চমকপ্রদ ঘটনা!

২০১১— বাংলাদেশ থেকে একটি তাবলীগ জামাত কানাডায় গিয়েছিল। ওখানকার এক কর্নেলের নাম আমীরুদ্দীন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত লোকটি এখন কানাডার নাগরিক। ডানভিরে একটি ক্লাব আছে মুসলমানদের সেখানে নাচ-গান হয়।
জামাত সেখানে গাশ-তে গেল ক্লাবের অশ্লীল পরিবেশ বিধায় বেছে-বেছে বৃদ্ধদের পাঠানো হলো। মঞ্চে এক বিবসনা যুবতী নাচছিল। এক যুবক তার ড্রামা বাজাচ্ছিল।
-দর্শক কারা?
- সকলেই মুসলমান।

মুতাকাল্লিম আমাদের সাথী আমাদের কর্নেল আমীরুদ্দীন। প্রভাবশালী চেহারা। মুখজুড়ে সাদা ঘন দাড়ি। ক্লাবে প্রবেশ করেই তিনি সজোরে একটা হাঁক দিলেন।
- নর্তকী মেয়েটির কন্ঠ স্তব্ধ হয়ে গেল। তার নৃত্যও বন্ধ হয়ে গেল, কিছু লোক মদ্যপান করছিল। তারা হঠাৎ কেঁপে ওঠল। কি ব্যাপার/একসাথে একাধিক কন্ঠ ভেসে ওঠল।
আমার কথা শোনো! কর্নেল আমীরুদ্দীন তাদেরকে দাওয়াত দিলেন। তিনি উপস্হিত সকলকে উদ্দেশ্য করে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন।
কিছুক্ষন মনোযোগ সহকারে তার বক্তব্য শুনে নর্তকী মেয়েটি মঞ্চ থেকে নেমে এল। আশপাশ থেকে একটি কাপর সংগ্রহ করে নিজেকে ঢেকে নিল। ক্লাবের অধিকংশ দর্শক মদে মাতাল অচেতন অবস্হায় পড়ে আছে।
কর্নেল আমীরুদ্দীন বললেন- মেয়েটি তাদের অগোচরে আস্তে-আস্তে আমার পিছনে এসে দাড়িয়ে গেল বলল, আপনি যা কিছু বলেছেন, আমি বুঝে ফেলেছি” কিন্তু ওরা বোঝেনি। এখন বলুন, 
- আমি কি করব?
আপনি যে জিন্দেগির কথা বলেছেন, আমি সেই জিন্দেগি কামনা করি।

মুতাকাল্লিম বললেন- আমারা মানুষকে কালেমার দাওয়াত দিয়ে থাকি। তুমি জন্মগতভাবে মুসলমান, কিন্তু ইসলামের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। 
- এই যে পেশাটা তুমি অবলম্বন করেছ, এ-পেশা অবলম্বন করলে মানুষের ঈমান থাকে না। তুমি কালেমা পড়ে পুনরায় মুসলমান হয়ে যাও।

-মেয়েটি বলল, আমি কালেমা জানি না, আপনি পড়িয়ে দিন। মুতাকাল্লিম তাকে কালেমা পড়ালেন। নিজে কলেমা পাঠ করে মেয়েটি বলল, আমার সাথে যে ছেলেটি ড্রামা বাজাচ্ছিল, ও আমার স্বামী!আপনি ওকেও কালেমা পড়িয়ে দিন। তারা দুজনে কলেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল। আমাদের মুতাকাল্লিম কর্নেল ভাই তাদের ইলম শিখাতে থাকলেন।
তিন দিন পর উক্ত অঞ্চল ত্যাগ করে চলে আসবার সময় তারা আমাদেরকে একটি ফোন নম্বর দিয়ে বলল, খোজখবর নেবেন। আমরা তাদেরকে ডানভিরের একটি ইসলামিক সেন্টারের ঠিকানা দিয়ে বললাম, প্রয়োজন হলে এখানে যোগাযোগ করো।
- দুমাস পর মেয়েটির ফোন এল। আস্ সালামু আলাইকুম,টরেন্টাে থেকে বলছি, আমাকে চিনতে পেরেছেন?
আমি সেই নর্তকী, যার সাথে ডানভিরে কথা হয়েছিল এবং আমরা স্বামী-স্ত্রী আপনাদের হাতে মুসলমান হয়েছিলাম।

- অামি সালম এর উওর দিয়ে বললাম, হ্যা, চিনতে পেরেছি। 
-তা তোমরা কেমন আছ?
- বলল” আমরা একটি সমস্যায় পরেছি-অনেক বড় সমস্যা। 
- বলো কি সমস্যা?
- আমি যখন নাচতাম তখন একরাত পাঁচশত ডলার উপার্জন হতো। ইসলাম গ্রহন করার পর সেই পেশা ছেড়ে দিয়ে স্বামীকে বললাম, ইসলামের বিধান মোতাবেক তুমি উপার্জন করো আর আমি ঘর সামলাই। কিন্তু তারও তো পেশা ছিল নাচগান করা। এখন এসব ছেড়ে সে ও বেকার। হালাল কোন কাজ পাচ্ছে না। অবশেষে নিরুপায় হয়ে সে একটি সরাইখানায় শ্রমিকের কাজ নিয়েছে। রোজ পায় চল্লিশ ডলার।

আগে ছিল রোজ পাঁচশত ডলার আর এখন চল্লিশ ডলার। সংসারে চরম অভাব ও সংকট দেখা দিয়েছে। বাড়িটা বিক্রি করে ফেলেছি। গাড়িগুলো বিক্রি করে দিয়েছি। এখন দুই রুমের একটি বাড়া বাসায় থাকি।
কিন্তু এর জন্য আমাদের কোন আক্ষেপ নেই। আমরা দীনের সন্ধান পেয়েছি, অন্ধকার জীবন থেকে আলোর জীবনে ফিরে এসেছি, এ আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া। এই সম্পদের কাছে দুনিয়ার সব সম্পদই তুচ্ছ।
-আমি বললাম আল্লাহ তোমাদের কবুল করেছেন। আখেরাতে শান্তি পেতে দুনিয়ার জীবনে কিছু কষ্ট ভোগ করতেই হয়। দ্বীনের উপর অটল থাকা মুমিনের সব চেয়ে বড় কাজ। আল্লাহ্ সুবহানা ওয়াতা’আলা তোমাদের আরও হিম্মত দান করুন! আমীন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন