বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৫

যুবক-যুবতীদের মধ্যে বিবাহের পূর্বে প্রেম বিষয়ে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস রয়েছে।

যুবক-যুবতীদের মধ্যে বিবাহের পূর্বে প্রেম বিষয়ে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস রয়েছে।
তারা এই বিবাহবহির্ভূত প্রেমকে ইসলামাইজেশন করার জন্য কিছু এটাকে ধর্মের সাথে সংমিশ্রিতকরে আজগুবি এবং ভিত্তিহীন কিছু প্রচারণা চালায়।
যেমনঃ
১. প্রেম স্বর্গীয় তাই প্রেম কি করে হারাম হয়?
২. প্রেম আসে স্বর্গ থেকে।
৩. ইউসুফ-জোলেখা প্রেম করেছেন, তাই ইউসুফ (আঃ) যদি নবী হয়ে প্রেম করতে পারেন তাহলে প্রেম জায়েজ।
৪. যে যাকে ভালবাসে মৃত্যুর পর তার সাথেই মিলিত হয়।
৫. কারো মন ভাঙা আর মসজিদ ভাঙা সমান।
৬. কারো মনে আঘাত দিলে সে আঘাত লাগে কাবার ঘরে।
৭. প্রেম পবিত্র।
ইত্যাদি এমন আর অনেক ভ্রান্ত বিশ্বাস এদের মাঝে রয়েছে।
এগুলো সবই ভিত্তিহীন এবং মিথ্যাচার এবং জাহান্নামে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
এর মধ্যে ইউসুফ-জোলেখা প্রেম কাহিনী সমাজে খুব প্রচলিত।
এইটা পরিষ্কার একটি কুফুরী কথা ও আল্লাহর সম্মানিত একজন নবী (আঃ) এর চরিত্র সম্পর্কে চরম মানহানি ও মিথ্যা অপবাদ।
ইউসুফ (আঃ) যেকোনো ধরণের অবৈধ প্রেম ভালোবাসা থেকে মুক্ত ছিলেন – এই ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে সুরা ইউসুফে।
সমস্ত আলেমরা একমত, যেকোন একজন নবী বা রাসূল সম্পর্কে কোনো খারাপ বা কটু মন্তব্য করা, তাদেরকে হেয় করা, তাদের মানহানি করা – বড় কুফুরী। এই কুফুরীর কারনে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
ইউসুফ-জোলেখার বানোয়াট প্রেম কাহিনী দ্বারা অনেক গানও বানানো হয়েছে। আমাদের দেশের অনেকেরই ধারণা (বিশেষ করে যুবক-যুবতীদের) ইউসুফ-জোলেখার মধ্যে গভীর প্রেম ছিল। তাই তারা যুক্তি দেখায় প্রেম-ভালবাসা পবিত্র। ইউসুফ (আঃ) যদি নবী হয়ে প্রেম করতে পারে তবে আমারা কেন করব না???
কিন্তু......
এই কথা গুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বানোয়াট। এই মিথ্যা কল্প-কাহীনি তারাই পেশ করে থাকে যাদের অন্তরে বক্রতা আছে, যাদের মনে কু-লিপ্সা রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্‌র নবী ইউসুফ (আঃ) এই ধরনের কু-কর্ম থেকে অনেক পবিত্র। তিনি ছিলেন আল্লাহ্‌ভীরু। তিনি কখনোই জোলেখার সাথে কোন সম্পর্ক করেন নি।
ইউসুফ (আঃ) কে যখন আজিজ নামক এক বাদশা কাছে কৃতদাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয় তখন ইউসুফ (আঃ) ঐ বাদশার নিকটে লালিত-পালিত হতে থাকে। আর জোলেখা ছিল ঐ বাদশা আজিজের স্ত্রী।
মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ "যখন সে পূর্ণ যৌবনে পৌছে গেল, তখন তাকে প্রজ্ঞা ও ব্যুৎপত্তি দান করলাম। এমননিভাবে আমি সৎকর্মপরায়ণদেরকে প্রতিদান দেই। আর সে যে মহিলার ঘরে ছিল, ঐ মহিলা তাকে ফুসলাতে লাগল এবং দরজাসমূহ বন্ধ করে দিল। সে মহিলা বললঃ শুন! তোমাকে বলছি, এদিকে আস, সে বললঃ আল্লাহ রক্ষা করুন; তোমার স্বামী আমার মালিক। তিনি আমাকে সযত্নে থাকতে দিয়েছেন। নিশ্চয় সীমা লংঘনকারীগণ সফল হয় না। নিশ্চয় মহিলা তার বিষয়ে চিন্তা করেছিল এবং সেও মহিলার বিষয়ে চিন্তা করত। যদি না সে স্বীয় পালনকর্তার মহিমা অবলোকন করত। এমনিভাবে হয়েছে, যাতে আমি তার কাছ থেকে মন্দ বিষয় ও নিলজ্জ বিষয় সরিয়ে দেই। নিশ্চয় সে আমার মনোনীত বান্দাদের একজন। তারা উভয়ে ছুটে দরজার দিকে গেল এবং মহিলা ইউসুফের জামা পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে ফেলল। উভয়ে মহিলার স্বামীকে দরজার কাছে পেল। মহিলা বললঃ যে ব্যক্তি তোমার পরিজনের সাথে কুকর্মের ইচ্ছা করে, তাকে কারাগারে পাঠানো অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া ছাড়া তার আর কি শাস্তি হতে পারে? ইউসুফ (আঃ) বললেন, সেই আমাকে আত্মসংবরণ না করতে ফুসলিয়েছে। মহিলার পরিবারে জনৈক সাক্ষী দিল যে, যদি তার জামা সামনের দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা সত্যবাদিনী এবং সে মিথ্যাবাদি। এবং যদি তার জামা পেছনের দিক থেকে ছিন্ন থাকে, তবে মহিলা মিথ্যাবাদিনী এবং সে সত্যবাদী। অতঃপর গৃহস্বামী (বাদশা আজিজ) যখন দেখল যে, তার (ইউসুফ) জামা পেছন দিক থেকে ছিন্ন, তখন সে বলল, নিশ্চয় এটা তোমার (জোলেখা) ছলনা। নিঃসন্দেহে তোমাদের ছলনা খুবই মারাত্নক। ইউসুফ বললেনঃ এ ছলনা ছাড়! আর হে নারী, এ পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর নিঃসন্দেহে তুমি-ই পাপাচারিনী। নগরে অন্যান্য মহিলারা বলাবলি করতে লাগল যে, আযীযের স্ত্রী স্বীয় গোলামকে কু-মতলব চরিতার্থ করার জন্য ফুসলায়। সে তার প্রেমে উম্মত্ত হয়ে গেছে। আমরা তো তাকে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি।
[[[[সুরা ইউসুফঃ ২২-৩০]]]]
==================
"মহিলা বললঃ এ ঐ ব্যক্তি, যার জন্যে তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করছিলে। আমি ওরই মন জয় করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে। আর আমি যা আদেশ দেই, সে যদি তা না করে, তবে অবশ্যই সে কারাগারে প্রেরিত হবে এবং লাঞ্চিত হবে। ইউসুফ বললঃ হে পালনকর্তা তারা আমাকে যে কাজের দিকে আহবান করে, তার চাইতে আমি কারাগারই পছন্দ করি। যদি আপনি তাদের চক্রান্ত আমার উপর থেকে প্রতিহত না করেন, তবে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাব। অতঃপর তার পালনকর্তা তার দোয়া কবুল করে নিলেন। অতঃপর তাদের চক্রান্ত প্রতিহত করলেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
[[[[সুরা ইউসুফঃ ৩২-৩৪]]]]
==================
বিয়ের আগে ভালবাসা হারাম।
বিয়ের পর স্ত্রীর সাথে ভালবাসাও একটি ইবাদাত।
অতএব বিবাহ পূর্ব হারাম ভালবাসা নয় বরং বিয়ে করে সকল ব্যাভিচারের পথ বন্ধ করুন এবং আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন করুন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন