মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৫

মোবাইলের মাধ্যমে বিবাহ করা

মোবাইল ফোনে বিয়ে বলতে বোঝানো হয় আক্বদের অনুষ্ঠানে কোনো কারণে বর-কনের মধ্য থেকে কোনো একজনের উপস্থিতি সম্ভব না হলে উপস্থিত পক্ষের কোনো একজন সাক্ষীদের সামনে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনুপস্থিত পক্ষকে বিবাহের প্রস্তাব দেওয়া।অনুপস্থিত পক্ষ সাক্ষীদের কাছ থেকে দূরে বহু দূরে অবস্থান করে অপর প্রান্ত থেকে তা কবুল করে নেওয়া।
ইসলামের দৃষ্টিতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্পাদিত এ ধরনের বিবাহের হুকুম:
শরয়ি দৃষ্টিকোণে বিবাহ সহিহ হওয়ার জন্য কিছু মৌলিক শর্ত রয়েছে। যেগুলোর কোনো একটি শর্তের অনুপস্থিতি শরিয়ত মোতাবেক নিকাহ অশুদ্ধ হয়ে যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মৌলিক শর্ত হচ্ছে-
১.বর-কনের ইজাব কবুল দুজন যোগ্য সাক্ষীর সামনে সম্পাদন হওয়া। ইজাব যেসব সাক্ষীর সামনে হবে কবুল, ঠিক সেই সাক্ষীদের উপস্থিতিতেই হতে হবে।
২.সাক্ষীদ্বয় বর-কনের ইজাব-কবুল সরাসরি শুনতে হবে।
৩.ইজাব ও কবুল একই মজলিসে(বৈঠকে) সম্পাদন হওয়া আবশ্যক।
৪.ইজাব-কবুল উভয় সাক্ষীর একসঙ্গে শুনতে হবে।
উপরের শর্ত গুলো যদি মোবাইল কিংবা স্কাকাইপ এর মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় তাহলে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।
শরিয়তে আরো কিছু গায়েবায়ানা বিয়ের ব্যাবস্থা রয়েছেঃ
১.বর বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে কনেকে বা কনের নিযুক্ত উকিলকে চিঠি লিখবে। চিঠি কনের বা কনের নিযুক্ত উকিলের হস্তগত হলে শরিয়তসম্মত সাক্ষীদের সামনে ওই চিঠি পাঠ করা হবে। পাঠ শেষে কনে বা নিযুক্ত উকিল ওই মজলিসেই বলবে যে, আমি বা কনের পক্ষে আমি বিবাহ কবুল করলাম। তাহলে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
২.কনে বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে বরকে বা বরের নিযুক্ত উকিলকে চিঠি লিখবে। চিঠি বরের বা বরের নিযুক্ত উকিলের হস্তগত হলে শরিয়তসম্মত সাক্ষীদের সামনে ওই চিঠি পাঠ করা হবে। পাঠ শেষে বর বা নিযুক্ত উকিল ওই মজলিসেই বলবে যে, আমি বা বরের পক্ষে আমি বিবাহ কবুল করলাম। তাহলে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
৩.প্রবাসীরা দেশে অবস্থিত কাউকে নিজের বিবাহের উকিল নিযুক্ত করে তাকে বলে দেবে যে ‘অমুক মেয়ের সঙ্গে তুমি আমার বিবাহ সম্পাদন করে দাও’ এরপর ওই উকিল দুজন শরিয়তসম্মত সাক্ষীর সামনে নিজ মুয়াক্কিলের পক্ষ থেকে সরাসরি কনের সঙ্গে বা কনের পক্ষ থেকে নিযুক্ত উকিলের সঙ্গে ইজাব-কবুল করে নেবে।
৪.অথবা চিঠি বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বর, কনেকে বা কনে, বরকে নিজের বিয়ের উকিল নিযুক্ত করবে। তখন উকিল বর হোক বা কনে শরিয়ত মোতাবেক সাক্ষীদের সামনে বলবে- তোমরা সাক্ষী থাকো আমি আমার মুয়াক্কিল অমুকের বিবাহ আমার সঙ্গে সম্পাদন করলাম। তাহলে বিবাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে।
প্রবাসীদের জন্য ওপরে উল্লিখিত চারটি পদ্ধতির যেকোনো একটি অবলম্বন করার অনুমতি রয়েছে। তবে তৃতীয় পদ্ধতিটি আমাদের দেশের সমাজের জন্য মানানসই। সবশেষে বলব যে, মোবাইলে প্রকৃতপক্ষে বিবাহ সহিহ হয় না। হ্যাঁ, তবে উকিল বানিয়ে এভাবে করা সহিহ। যে তাদের পক্ষ থেকে উকিল হয়ে বিবাহের আকদ করাতে পারে।
সর্বোপরি বিয়ে হলো একটি সামাজিক বন্ধন যার মাধ্যমে শুধু স্বামী স্ত্রীই নয় বরং উভয় ফ্যামিলির সেতু বন্ধনের পথ তৈরী হয়,বিয়ের অনুষ্ঠান উভয় পরিবারের মধ্যে একটি আনন্দ ঘন মুহূর্ত থাকে।উপস্থিত সকলে বর কনের সুখের জন্য দোয়া করে থাকেন, কিন্তু মোবাইল ফোনে বিয়া হলে সেই আনন্দ টা আর থাকেনা এমন কি বিয়ে অনুষ্ঠানে ইমাম সাহেবের খুতবা শোনার সওয়াব থেকেও বঞ্চিত হয়।

তবে বর কনের উপস্তিতিতে মসজিদে বিবাহ সম্পন্ন করাটা উত্তম।
(
উত্তর সংগ্রহঃ মুফতি শাহেদ রহমানী)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন