প্রশ্ন:
দাড়ি রাখা ইসলামে কতটা গুরুত্বপুর্ন? কেউ যদি দাড়ি না রাখে, তাহলে ইসলামে তার শাস্তি কি? আল-কুরান এবং সহিহ হাদিসের আলোকে উত্তর দেবেন বলে আশা রাখি। ধন্যবাদ।
উত্তর:
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সকল ইমাম গণের সর্বসম্মতি ক্রমে দাড়ি লম্বা রাখা ওয়াজিব এবং তা কমপক্ষে এক মুষ্টি পরিমান হতে হবে । এ ব্যাপারে চার মাযহাবের সকল ইমাম গণের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ইসলামে দাড়ির প্রমাণ কোরআনের আলোকেঃ-
কোরআন শরীফে সরাসরি দাড়ি রাখার কথা বলা হয়নি তবে হারুন আঃ এর ঘটনায় দাড়ির কথা উল্লেখ রয়েছে । যথাঃ আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেনঃ- (হারূন আঃ তাঁর ভাই মূসা আঃ কে বললেন ) আপনি আমার দাড়ি ও মাথা ধরবেন না।
হাদীসের আলোকেঃ-
১- ইবনে উমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল ( সাঃ ) ইরশাদ করেনঃ- তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর, আর দাড়ি লম্বা রাখো এবং গোঁফ খাটো কর।
(সূত্র—সহীহ মুসলিম হাঃ নং ৬০২ , সহীহুল বুখারী হাঃ নং ৫৮৯২)
হযরত ইবনে উমর ( রাঃ)-এর সূত্রে অন্য হাদীসে বর্ণিত রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেনঃ خالفوا المشركين اوفروا اللحي وأحفوا الشوارب তোমরা গোঁফ ছোট কর এবং দাড়ি লম্বা রাখো।
( সূত্র— সহীহুল বুখারীঃ হাঃ নং ৫৮৯৩ , সহীহ মুসলিমঃ হাঃ নং ৬০০)
এছাড়া বিভিন্ন শব্দে হাদীসে দাড়ি লম্বা রাখার প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দাড়ি লম্বা করা সম্পর্কে হাদীস সমূহে ছয়টি শব্দ বর্ণিত হয়েছে । اوفروا সে গুলোর অন্যতম। উপরোক্ত সব কয়টি বাক্যের মর্মার্থ একই , অর্থাৎ তোমরা দাড়ি লম্বা কর।
এ বিষয়টি লক্ষ্যণীয় যে, কোন হাদীসেই সরাসরি দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখার কথা উল্লেখ নেই , শুধুমাত্র লম্বা করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে এক মুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা প্রামাণিত আছে ।
দাড়ি সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী আবু হুরাইরা ইবনে উমর (রাঃ) প্রমুখগণ দাড়ি এক মুষ্ঠি পরিমাণ রাখতেন । তাই এ ব্যাপারে তাঁদের আমল আমাদের জন্য দলীল । এর কারণ হল – যে বিষয়ে হাদীসে সরাসরি পাওয়া যায় না সে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের আমল শরীয়তের প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হয়। কেননা তারা হলেন হাদীসে রাসূলের (সাঃ) আমলী নমুনা। সুতরাং দাড়ি কমপক্ষে এক মুষ্ঠি পরিমাণ হওয়া প্রত্যক্ষভাবে সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত হলেও পরোক্ষভাবে তা রাসূল (সাঃ) থেকেই প্রমাণিত ।
বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে- ···ইবনে উমর (রাঃ) যখন হজ্ব অথবা উমরা করতেন, তখন তিনি দাড়ি মুঠ করে ধরে মুঠের বেশী অংশটুকু কেটে ফেলতেন।
(সূত্র— সহীহুল বুখারী হাঃ ৫৮৯২)
এখানে যদিও হজ্ব ও উমরার সময়ের কথা বলা হয়েছে ,কিন্তু মুহাদ্দিসীনরা বলেন তিনি তা সব সময়ই করতেন । এ ছাড়াও আবু দাউদ ও নাসাঈর বর্ণনায় ইবনে উমরের (রাঃ) হজ্ব ও উমরা ছাড়া অন্য সময়েও দাড়ি এক মুঠের বেশীটুকু কেটে ফেলার কথা রয়েছে। ( সূত্র— ফাতহুল বারীঃ খন্ড-১০ পৃঃ ৩৬২)
হযরত উমর (রাঃ) তো নিজেই এক ব্যক্তির দাড়ি ধরে এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু নিজেই কেটে দিয়েছিলেন । (প্রাগুক্ত)
ইবনে উমর (রাঃ) ছিলেন রাসূলের (সাঃ) আদর্শের পূর্ণ অনুসারী । তাই তিনি যা করেছেন তা রাসূল (সাঃ) থেকেই জেনে- শুনে করেছেন ।
উপরোক্ত দু’জন মহান সাহাবী ব্যতীত আবু হুরাইরা ,জাবির (রাঃ) প্রমুখ সাহাবী থেকেও দাড়ির এক মুঠের অতিরিক্ত অংশটুকু কেটে ফেলার কথা পাওয়া যায় । এ থেকে দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখার বিষয়টি প্রমাণিত হয়।
দাড়ি না রাখা বা মুন্ডিয়ে ফেলা বা এক মুষ্ঠির কম রাখা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে দাড়ি মুন্ডায় বা এক মুঠের চেয়ে ছোট রাখে, তার আমলনামায় পুনরায় দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কবিরা গুনাহ লিখা হতে থাকে। কেননা শরীয়তের হুকুম হল-দাড়ি কমপক্ষে এক মুঠ পরিমাণ রাখা। তাই এর চেয়ে দাড়ি ছোট রাখলে বা মুন্ডিয়ে ফেললে যতক্ষন পর্যন্ত দাড়ি এক মুঠ পরিমাণ না হবে ততক্ষন পর্যন্ত সে শরীয়তের হুকুম অমান্যকারী সাব্যস্ত হবে এবং তার নামে গুনাহ লিখা হতে থাকবে । অন্যান্য গুনাহ সাময়িক ও অস্থায়ী, কিন্তু দাড়ি ছোট করা বা মুন্ডানোর গুনাহ দীর্ঘস্থায়ী । শরিয়তের ফয়সালা মতে, যে ব্যক্তি দাড়ি মুন্ডায় বা (এক মুঠের চেয়ে) ছোট রাখে সে ফাসিক।
আল্লাহ তায়ালা সহিহ কথা মেনে চলার ত্বওফিক দিন। আমীন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন