বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৬

পবিত্র কুরআনে তাকলীদ বা ইজতিহাদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ইংগিত

পবিত্র কুরআনে তাকলীদ বা ইজতিহাদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ইংগিত :
প্রশ্ন— আল্লাহর কালাম আর নবীর হাদিস, এসব মেনে চলার জন্য আমাদের আদেশ করা হয়েছে। কিন্তু মাযহাব মেনে চলার জন্য আদেশ করা হয়েছে কি?
আমাদের জবাব —
জেনে রাখতে হবে যে, কথিত আহলে হাদিস দলের ইতিহাস ১৮১৮ সালের পরের ইতিহাস। ইতিপূর্বে এদের কোনো অস্তিত্বই ছিলনা। ১৮১৮ সালে এসে ইংরেজ সরকারের কাছ থেকে বর্তমান “আহলে হাদিস” নামটি তারা বরাদ্দ করে নেয়।
একনিষ্ঠ শীয়া মতাবলম্বী আব্দুল হক বেনারসি [ মৃত ১২৭৫ হিজরী] ছিলেন উক্ত দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সর্বোচ্চ ইমাম (!)। এবার উল্লিখিত প্রশ্নের জবাব।
১-
আসলে এরকম প্রশ্নকারীরা মূলত “মাযহাব” কী এবং কেন—এসবের কিছুই জানেনা। যার ফলে তারা তাদের পলাতক শায়খদের শিখিয়ে দেয়া বুলি তোতাপাখির মত অহর্নিশি আওড়ায়।

২-
পবিত্র কুরআনের বেশ কিছু আয়াতে মুজতাহিদ বা ইজতিহাদ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে ইংগিত রয়েছে। যদি কেউ চোখ থাকিতে অন্ধ হয়, তাতে আমাদের কিবা করার আছে!

সূরা নিসা, আয়াত নং ৮৩: আল্লাহ তায়ালার ভাষ্য, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে ইরশাদ করেন- ﻭﺍﺫﺍﺟﺎﺀﻫﻢ ﺍﻣﺮﻣﻦ ﺍﻻﻣﻦ ﺍﻭﺍﻟﺨﻮﻑ ﺍﺫﺍﻋﻮﺑﻪ ﻭﻟﻮﺭﺩﻭﻩ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺮﺳﻮﻝ ﻭﺍﻟﻰ ﺍﻭﻟﻰ ﺍﻻﻣﺮﻣﻨﻬﻢ ﻟﻌﻠﻤﻪ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻳﺴﺘﻨﺒﻄﻮﻧﻪ ﻣﻨﻬﻢ
অনুবাদ , আর যখন তাদের (সাহাবায়ে কেরাম) নিকট শান্তি বা শংকা সংক্রান্ত কোনো খবর এসে পৌঁছে, তখন তাঁরা এর প্রচারে লেগে যান। অথচ বিষয়টি যদি তাঁরা রাসূল এবং ঊলূল আমর (ফকিহ বা মুজতাহিদ অথবা ইসলামী রাষ্ট্রের প্রসাশক)-এর নিকট পেশ করতেন তাহলে তাঁদের ভেতর সূক্ষ্ম উদ্ভাবনী শক্তির অধিকারীরা (মুজতাহিদরা) বিষয়টির যথার্থতা উদঘাটন করতে পারতেন।”
আয়াতের তাফসির : প্রখ্যাত মুফাসসির ইমাম আবু হাফস (রহ) “আল-লুবাব ফী উলূমিল কিতাব” -এ উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন : فنقول دلت الآية علي امور منها: ان في الاحكام مالا يعرف بالنص، بل بالاستنباط. ومنها : ان الاستنباط حجة و منها: ان العامي يجب عليه تقليد العلماء في احكام الحوادث. الخ
অর্থাৎ উল্লিখিত আয়াত দ্বারা বেশ কয়েকটি বিষয় প্রমাণিত হল।
যেমন – (১) মুজতাহিদদের কিয়াস শরিয়তের দলিল।

(২) কিছু বিধান এমন রয়েছে যা নস দ্বারা জানা যায়না। বরং ইস্তেম্বাত তথা সূক্ষ্ম উদ্ভাবনী শক্তি দ্বারা জানতে হয়।
(৩) ইজতিহাদ ও ইস্তেম্বাত তথা সূক্ষ্ম উদ্ভাবনী শক্তি দ্বারা রিসার্চ করে বের করা শরয়ী সমাধান শরিয়তের দলিল।
(৪) নতুন (অমীমাংসিত) মাসয়ালার ক্ষেত্রে ইজতিহাদে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য মুজতাহিদ উলামায়ে কেরামের তাকলীদ করা ওয়াজিব। ….।”
এ রকম ব্যাখ্যা শব্দের সামান্য বিভিন্নতা সহ আরো অনেক তাফসীরের কিতাবে পাওয়া যায়।
তন্মধ্যে তাফসীরে কবীর (১০/২০০),
তাফসীরে খাজেন (১/৪৭১),
তাফসীরে হাক্কানী (৫/২৫),
তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআন (২/৪৯৩),
আহকামুল কুরআন (২/২১৫)
এবং লামাযহাবী শায়খ কর্তৃক লেখিত তাফসীর “তাফসীরে ফাতহুল বয়ান” (২/৮৪) প্রভৃতি অন্যতম।
লামাযহাবী শায়খ নবাব ছিদ্দিক হাসান খান সাহেব কর্তৃক লেখিত তাফসীর “তাফসীরে ফাতহুল বয়ান” (সূরা নিসা, আয়াত নং ৫৯-এর তাফসীর দ্রষ্টব্য ) গ্রন্থে তো আরো সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে : الظاهر انه خطاب مستقل مستأنف موجه للمجتهدين.
অর্থাৎ “এটা সুস্পষ্ট যে, এখানে মুজতাহিদদেরকে স্বতন্ত্রভাবে সম্বোধন করা হয়েছে।”
তাহলে এবার কুরআনের ভেতর তাকলীদ বা মাযহাব মানার জন্য ইংগিত পাওয়া গেল কিনা? নিশ্চয় পাওয়া গেল ।
৩-
যদি আপনার বক্তব্য এরকম হয় যে, আল্লাহ’র কালাম (কুরআন মাজিদ) আর নবীর হাদিস অনুযায়ী চলতে হবে। এর বাহিরে মাযহাব বা অন্য কোনো মুজতাহিদ উম্মতির ফতুয়া বা রায় মানা যাবেনা। তাহলে তো আপনার প্রতি আমারও প্রশ্ন থাকছে। তাহল, আপনি আল্লাহ’র কালাম আর নবীর হাদিস মেনে চলবেন, ব্যাস ভাল কথা।

কিন্তু আমরা তো দেখতে পাচ্ছি যে, আপনি সরাসরি আল্লাহ’র কালাম না মেনে, বরং এমদাদিয়া প্রকাশনী সহ বিভিন্ন প্রকাশনীর কালাম (কুরআন মাজিদ) মেনে চলেছেন।
অনুরূপ ভাবে নবীর (সা) হাদিস না মেনে বুখারি, মুসলিম, আবুদাউদ এবং তিরমিযি প্রভৃতির হাদিস সমূহ মেনে চলছেন!
সুতরাং এমতাবস্থায় আপনি নিজেও নিজের দাবিতে স্থীর থাকতে পারলেন কিভাবে, তা কি একটু বুঝিয়ে বলবেন!! (সংক্ষেপে)
আর হ্যাঁ আপনার মতে, যদি এমদাদিয়া প্রকাশনী সহ বিভিন্ন প্রকাশনীর কালাম মেনে চলার মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালার কালাম (কুরআন মাজিদ) মান্য করা হয়, অনুরূপভাবে বুখারি, মুসলিম, আবুদাউদ এবং তিরমিযি প্রভৃতির হাদিস সমূহ মেনে চলার দ্বারা মূলত নবীপাকেরই হাদিস মান্য করা হয়। এর প্রতিউত্তরে আমাদেরও সে একই জবাব। অর্থাৎ মাযহাব চারটের উৎসই হল, আল্লাহ’র কালাম আর নবীপাকের হাদিস।
সুতরাং মাযহাব বা ইজতিহাদ ও ইস্তেম্বাত তথা সূক্ষ্ম উদ্ভাবনী শক্তি দ্বারা রিসার্চ করে বের করা শরয়ী রায় মেনে চলার আরেক নাম হল আল্লাহ’র কালাম আর নবীর হাদিস মেনে চলা।
আল-হামদুলিল্লাহ। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন ।
লেখক, প্রিন্সিপাল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন