বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৬

নামাযে মহিলারা কতটুকু হাত উঠাবে এবং বৈঠক কিভাবে করবে?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাই কুম
নাম:মাহিমা
স্থান:ঢাকা,যাত্রাবাড়ী

আসসালামু আলাই কুম,আমার প্রথম প্রশ্ন হলো:
১.তাকবীর ও তাহরীমের পর মহিলাদের হাত কতোটুকু উঠাতে হয়?
২.মহিলাদের নামাযের বৈঠক কেমন হবে? মানে বসার পদ্ধতিটি কেমন হবে?
৩.সালাম ফিরানোর সময় “আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ” বলার পর কি মনে মনে বলতে হয় “আমি ডান পাশের ফেরেশতাকে সালাম দিলাম এবং বাম দিকেও সালাম ফিরেয়ে বাম পাশের ফেরেশতাকে সালাম বলা কি সহীহ?
দয়া করে আমার প্রশ্নের সকল উত্তর সহীহ দলিল ও হাদিস দিয়ে পেশ করবেন,এবং অনুগ্রহ করে একটু তাড়াতাড়ি উত্তর দিলে কৃতজ্ঞ থাকিবো।

উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
হাত উঠাবে কতটুকু?
মহিলারা তাদের নামায সেভাবেই আদায় করবে, যেভাবে তাদের পর্দা অধিক রক্ষা পায়।
সে হিসেবে হাত উঠাবে বুক বরাবর।
يَا وَائِلُ بْنَ حُجْرٍ، إِذَا صَلَّيْتَ فَاجْعَلْ يَدَيْكَ حِذَاءَ أُذُنَيْكَ، وَالْمَرْأَةُ تَجْعَلُ يَدَيْهَا حِذَاءَ ثَدْيَيْهَا»
হযরত ওয়েল বিন হুজুর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, হে ওয়েল বিন হুজুর! যখন তুমি নামায পড়,তখন তোমার হাত কান বরাবর উঠাও। আর মহিলারা তাদের হাত বুক বরাবর উঠাবে। { আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-২৮,জামেউল মাসানীদ ওয়াস সুনান, হাদীস নং-১০৬৫০,কানযুল উম্মাল-৩/১৭৫, হাদীস নং-১৯৬৪০,মাযমাউজ যাওয়ায়েদ-২/১০৩, হাদীস নং-২৫৯৪}
হযরত আতা রহঃ থেকেও এমনটি বর্ণিত। দেখুন- মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৩/১৩৭}
বৈঠক করার পদ্ধতি কি?
ডান দিক দিয়ে উভয় পা বের করে দিয়ে নিতম্বের বাম দিকের উপর বসবে।
عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّهُ سُئِلَ: «كَيْفَ كُنَّ النِّسَاءُ يُصَلِّينَ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ كُنَّ يَتَرَبَّعْنَ، ثُمَّ أُمِرْنَ أَنْ يَحْتَفِزْنَ»
হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল, রাসূল সাঃ এর জমানায় মহিলারা কিভাবে নামায পড়তো? তখন তিনি বলেন, মহিলারা প্রথম প্রথম চার জানু হয়ে বসতো, তারপর তাদের আদেশ করা হয় যেন তারা খুব জড়সড় হয়ে বসে। {মুসনাদে ইমামে আজম বিরিওয়াতি হিসকাফী, হাদীস নং-৩৭, পৃষ্ঠা নং-৭৩, ইলাউস সুনান-৩/২০}
এ হাদীসের সূত্র পরম্পরা এমন যে, যাকে মুহাদ্দিসীনে কেরামের পরিভাষায় বলা হয় সিলসিলাতুজ জাহাব। মানে হল স্বর্ণসূত্র।
কারণ এ হাদীসের সনদের একজন ব্যক্তির উপরও সামান্য পরিমাণ সমালোচনার আঙ্গুল তোলার সাহস এখন পর্যন্ত কোন ব্যক্তি করেননি।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ রাসূল সাঃ এর নির্দেশ নকল করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন-
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِذَا جَلَسَتِ الْمَرْأَةُ فِي الصَّلَاةِ وَضَعَتْ فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الْأُخْرَى،
মহিলা যখন নামাযের মধ্যে বসবে তখন যেন [ডান] উরু অপর উরুর উপর রাখে। {সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩১৯৯, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২০৩০৩}
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ পুরুষদের হুকুম দিতেন যে,
وَكَانَ يَأْمُرُ الرِّجَالَ أَنْ يَفْرِشُوا الْيُسْرَى، وَيَنْصِبُوا الْيُمْنَى فِي التَّشَهُّدِ، وَيَأْمُرُ النِّسَاءَ  أَنْ يَتَرَبَّعْنَ
তাশাহুদের বৈঠকে ডান পা দাঁড় করিয়ে রাখবে, আর বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসবে। আর মহিলাদের হুকুম দিতেন, যেন তারা উভয় পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের হয়ে বসে। {সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩১৯৮, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৭৮৩,আওজাযুল মাসালিক-২/১১৮}
সালামের সময় ফেরেশতার নিয়ত করার হুকুম কি?
সালাম ফিরানোর সময় ফেরেশতাকে সালাম দেয়া হচ্ছে এটি মনে মনে থাকলেই হবে, মুখে বলা যাবে না। সালাম ফিরানোর সময় ফেরেশতাকে সালাম দেয়া হচ্ছে এটি নিয়ত করা জরুরী নয়। এটি না করলেও নামাযে কোন ক্ষতি হবে না। এটি শুধু উত্তম মাত্র। {হেদায়া-১/৭২, শরহে নুকায়া-১/৮১, কাবীরী-৩৩৭}

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন