বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই, ২০১৬

নামাযের চেয়ে খুতবা দীর্ঘ হওয়া খেলাফে সুন্নত

Mohiuddin Kasemi


সুন্নত হচ্ছে খুতবার চেয়ে নামায প্রলম্বিত হওয়া। খুতবা হবে নামায থেকে সংক্ষিপ্ত । রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময়ই সংক্ষিপ্ত খুতবা দিতেন; আর খুতবার চেয়ে নামায দীর্ঘ করতেন। তবে মাঝেমধ্যে অবস্থার প্রেক্ষিতে দীর্ঘ খুতবা দিতেন বলে জানা যায়। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম রহ. এমনটিই বলেছেন। [যাদুল মাআদ : খ. ১, পৃ. ১৯১]
এ বিষয়ে কয়েকটি হাদিস দেখা যেতে পারে : 
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ السُّوَائِىِّ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- لاَ يُطِيلُ الْمَوْعِظَةَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِنَّمَا هُنَّ كَلِمَاتٌ يَسِيرَاتٌ.
অর্থ : হযরত জাবের ইবনে সামুরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমুআর দিন লম্বা নসিহত করতেন না; কয়েকটি সংক্ষিপ্ত কথা বলতেন। [সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং- ১১০৯, অধ্যায় : باب إِقْصَارِ الْخُطَبِ]

عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ قَالَ أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- بِإِقْصَارِ الْخُطَبِ.
অর্থ : হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রা. বলেন, রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে খুতবা সংক্ষিপ্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। [সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং- ১১০৮] 
قَالَ أَبُو وَائِلٍ خَطَبَنَا عَمَّارٌ فَأَوْجَزَ وَأَبْلَغَ فَلَمَّا نَزَلَ قُلْنَا يَا أَبَا الْيَقْظَانِ لَقَدْ أَبْلَغْتَ وَأَوْجَزْتَ فَلَوْ كُنْتَ تَنَفَّسْتَ. فَقَالَ إِنِّى سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ إِنَّ طُولَ صَلاَةِ الرَّجُلِ وَقِصَرَ خُطْبَتِهِ مَئِنَّةٌ مِنْ فِقْهِهِ فَأَطِيلُوا الصَّلاَةَ وَاقْصُرُوا الْخُطْبَةَ.
অর্থ : তাবেয়ি আবু ওয়ায়েল রহ. বলেন, একবার হযরত আম্মার রা. সংক্ষিপ্ত (জুমুআর) খুতবা দিলেন। পরে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবুল ইয়াকযান! খুতবা বেশি সংক্ষিপ্ত হয়ে গেছে; আরেকটু লম্বা হলে ভালো হতো। তখন তিনি বলেন, আমি রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন : নামায লম্বা এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত হওয়া ব্যক্তির বিচক্ষণতার পরিচয়। সুতরাং তোমরা নামায লম্বা করো আর খুতবা দাও সংক্ষিপ্ত। [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২০৪৬, অধ্যায় : باب تَخْفِيفِ الصَّلاَةِ وَالْخُطْبَةِ] 
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : 
كان رسول الله صلى الله عليه و سلم ... و يطيل الصلاة و يقصر الخطبة.
অর্থ : রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায লম্বা করতেন আর খুতবা দিতেন সংক্ষিপ্ত। [শুআবুল ইমান, হাদিস নং- ৮১১৪]

عَنْ عُمَرَ رضي اللَّهُ عنه أَنَّهُ قال طَوِّلُوا الصَّلَاةَ وَقَصِّرُوا الْخُطْبَةَ
অর্থ : হযরত উমর রা. বলেন, তোমরা নামায লম্বা করো আর খুতবা দাও সংক্ষিপ্ত। [বাদায়েউস সানায়ে : খ. ১, পৃ. ২৬৩] 
. 
সুতরাং প্রমাণিত হল, জুমুআর নামায খুতবা থেকে দীর্ঘ হবে। আর এর বিপরীত হচ্ছে মাকরুহ ও খেলাফে সুন্নত। ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবেও বিষয়টি স্পষ্টভাবেই বিধৃত হয়েছে। ফিকহুস সুন্নাহর মধ্যে (খ. ১, পৃ. ১১২) রয়েছে : 
مكروهات الخطبة : ১. التطويل لما روي عن جابر بن سمرة السوائي رضي الله عنه...

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। দেখুন : ইকতিজাউস সিরাতিল মুস্তাকিম, পৃ. ১০২। 
الشرح المختصر على بلوغ المرনামক কিতাবের ৩ নং খ-ের ২৯৫ নম্বর পৃষ্ঠায় আছে : 
كان الأفضل أن يقصر الخطبة بشرط إلا يكون تقصيرا يخل بالمقصود أما الصلاة فيطولها لان الصلاة هي صلة بين العبد وربه والمصلي يناجي ربه عز وجل.

এছাড়াও আরো দেখা যেতে পারে : 
ইমাম নববী রহ. রচিত আল-মাজমু : খ.৪, পৃ.৫২৮;
ইবনে কুদামা লিখিত আল-মুগনী : খ.৩, পৃ.১৭৯।
.
প্রতিটি সুন্নত পালনে আগ্রহী হওয়া দরকার। নিজের বিবেক ও যুক্তির চেয়ে সুন্নাহ কি অগ্রগণ্য নয়?
সুতরাং খুতবাকে ভাষণ বলে যুক্তি দেখিয়ে দীর্ঘ খুতবা দেওয়া কোনোক্রমেই ঠিক নয়। যারা হাদিস হাদিস করে চিল্লায়ে বেড়ায় তাদের নজরে কি এসব হাদিস পড়ে না?
দেড় ঘণ্টা খুতবা হয়, নামায হয় সাত/আট মিনিট!
এটা কি সুন্নত?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন