Mohiuddin Kasemi
পবিত্র কুরআনের কয়েকটি আয়াত দেখা যাক :
وَلَا تَشْتَرُوا بِآَيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ
অর্থ : আমার আয়াতের বিনিময়ে সামান্য মূল্যও তোমরা গ্রহণ করিও না। তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর। [সূরা বাকারা : ৪১]
وَمَا تَسْأَلُهُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِلْعَالَمِينَ
অর্থ : এবং তুমি তাদের নিকট কোনো মজুরি দাবি করিও না। এটাতো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ মাত্র। [সূরা ইউসুফ : ১০৪]
) قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُتَكَلِّفِينَ
অর্থ : বল! আমি ইহার জন্য তোমাদের নিকট কোনো পারিশ্রমিক চাই না। এবং যারা মিথ্যা দাবি করে আমি তাদের দলভুক্ত নই। [সূরা সোয়াদ : ৮৬]
قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرَى لِلْعَالَمِينَ
অর্থ : তাদেরকেই (নবীদেরকেই) আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেছেন। সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ কর; বল! ইহার জন্য আমি তোমাদের কাছে কোনো মজুরি চাই না। [সূরা আনআম : ৯০]
قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى
অর্থ : বল! আমি ইহার বিনিময় তোমাদের কাছ থেকে প্রেম-ভালোবাসা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার ব্যতীত অন্য কোনো মজুরি চাই না। [সূরা শুরা : ২৩]
হযরত নূহের অঙ্গীকার
وَيَا قَوْمِ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مَالًا إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ وَمَا أَنَا بِطَارِدِ الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّهُمْ مُلَاقُو رَبِّهِمْ وَلَكِنِّي أَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُونَ
অর্থ : হে আমার সম্প্রদায়! ইহার পরিবর্তে আমি তোমাদের নিকট ধন সম্পদ চাই না। আমার পারিশ্রমিক আল্লাহর নিকট। [সূরা হুদ : ২৯]
হযরত হুদের অঙ্গীকার
يَا قَوْمِ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى الَّذِي فَطَرَنِي أَفَلَا تَعْقِلُونَ
১১: ৫১] অর্থ: হে আমার স¤প্রদায়! আমি ইহার পরিবর্তে তোমাদের নিকট কোনো মজুরি চাই না। আমার পারিশ্রমিক তারই নিকট যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। তোমরা কি তবুও বুঝতে চেষ্টা করবে না? [সূরা হুদ : ৫১]
হযরত ছালেহ’র অঙ্গীকার
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থ : আমি তোমাদের নিকট ইহার জন্য কোন পারিশ্রমিক চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। [সূরা শোআরা : ১৪৫]
হযরত লুতের অঙ্গীকার
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থ : ইহার জন্য আমি কোনো মজুরি চাই না। আমার মজুরী জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। [সূরা শোআরা : ১৬৪]
হযরত শোয়েবের অঙ্গীকার
وَمَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ
অর্থ : আমি ইহার জন্য তোমাদের নিকট কোনো মূল্য চাই না। আমার মজুরি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। (সূরা শোআরা : ১৮০)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّ كَثِيرًا مِنَ الْأَحْبَارِ وَالرُّهْبَانِ لَيَأْكُلُونَ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ.
অর্থ : হে ভক্তগণ (সাবধান) আলেম-দরবেশদের মধ্যে অনেকেই মানুষের ধন-সম্পত্তি অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করছে। এবং আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করছে। যারা স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করে রাখে, আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদের কঠোর শাস্তির সংবাদ দাও। (সূরা তাওবা : ৩৪)
اتَّبِعُوا مَنْ لَا يَسْأَلُكُمْ أَجْرًا وَهُمْ مُهْتَدُونَ
অর্থ : অনুসরণ করো তাদের, যারা তোমাদের নিকট থেকে কোনো মজুরি গ্রহণ করে না এবং সৎ পথপ্রাপ্ত।
দুয়েকটি হাদিস দেখি :
عَنْ عَطِيَّةَ بْنِ قَيْسٍ الْكِلاَبِىِّ قَالَ : عَلَّمَ أُبَىُّ بْنُ كَعْبٍ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ رَجُلاً الْقُرْآنَ فَأَتَى الْيَمَنَ فَأَهْدَى لَهُ قَوْسًا فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ : إِنْ أَخَذْتَهَا فَخُذْ بِهَا قَوْسًا مِنَ النَّارِ فَرَدَدْتُهَا.
অর্থ : আতিয়্যা বিন কায়েস কিলাবি রহ. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত উবাই ইবনে কাব রা. একবার একব্যক্তিকে কুরআন শিখিয়েছিলেন। তখন সে তাকে একটি ধনুক হাদিয়া দিল। উবাই বিন কাব যখন ব্যাপারটি রাসুলকে জানানোর পর রাসুল সা. বললেন, তুমি তা নিলে জাহান্নামেরই একটি ধনুক নিবে। তখন আমি তা ফেরত দিলাম। (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদিস নং- ১২০১৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-২১৫৮)
রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন :
لاَ تَأْكُلُوا بِالْقُرْآنِ
অর্থ : তোমরা কুরআনের বিনিময় খেয়ো না। (শরহু মাআনিল আছার : খ. ৮, পৃ. ২৫৬)
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رضي الله عنه أَنَّهُ قَالَ : كُنْت أُقْرِئُ نَاسًا مِنْ أَهْلِ الصُّفَّةِ الْقُرْآنَ فَأَهْدَى إلَيَّ رَجُلٌ مِنْهُمْ قَوْسًا عَلَى أَنْ أَقْبَلَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ تَعَالَى . فَذَكَرْت ذَلِكَ لِرَسُولِ اللَّهِ فَقَالَ لِي إنْ أَرَدْت أَنْ يُطَوِّقَك اللَّهُ بِهَا قَوْسًا مِنْ نَارٍ فَاقْبَلْهَا .
অর্থ : হযরত উবাদা ইবনুস সামিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহলে সুফফার লোকদেরকে আমি কুরআন পড়াতাম। তখন তাদের মধ্য হতে একজন আমাকে একটি ধনুক হাদিয়া দিল। আমি ভাবলাম, এটা জিহাদে কাজে আসবে। রাসুলকে জানানোর পর তিনি বললেন, তুমি যদি চাও যে, আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তোমার গলায় জাহান্নামের হার পরিয়ে দিবেন, তাহলে তা গ্রহণ করতে পার। (সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং- ৩৪১৮)
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ أَبِي الْعَاصِ : إِنَّ مِنْ آخِرِ مَا عَهِدَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، أَنِ أَتَّخِذَ مُؤَذِّنًا لا يَأْخُذَ عَلَى أَذَانِهِ أَجْرًا.
অর্থ : হযরত উসমান ইবনে আবুল আস রা. বলেন, আমার প্রতি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বশেষ নির্দেশ ছিল, আমি যেন এমন একজন মুয়াজ্জিনের ব্যবস্থা করি, যিনি আজানের জন্যে কোনো বিনিময় গ্রহণ করেন না। (সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং- ২০৯, অধ্যায় : باب ما جاء في كراهية أن يأخذ المؤذن على الأذان أجرا)
এসব আয়াত ও হাদিস দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ওয়াজ-নসিহত, কুরআন তেলাওয়াত, কুরআন শিক্ষা, দীনি শিক্ষা, আজান দেওয়া এমনকি যে কোনো দীনি বিষয়ের বিনিময় গ্রহণ করা হারাম। রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরামের কেউই এসবের বিনিময় গ্রহণ করেননি।
তবে হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত একটি হাদিস দ্বারা জানা যায়, সাহাবিদের একটি দল এক অভিযানে যায়। সেখানের স্থানীয় লোকজনের কাছে তারা আতিথেয়তা কামনা করলেও তারা দেয়নি। ইত্যবসরে তাদের সর্দারকে সাপে দংশন করল। কোনো চিকিৎসাই তার কাজে আসছে না। অবশেষে একজন সাহাবি পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ঝাড়ফুঁক করল। লোকটিও সুস্থ হয়ে যায়। ওই পারিশ্রমিকের ব্যাপারে রাসুল সা. -কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন :
إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللَّهِ
অর্থ : তোমরা যেসব বিষয়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ কর, তন্মধ্যে কুরআন হল পারিশ্রমিক গ্রহণের সর্বাধিক উপযোগী। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ৫৪০৫)
এ হাদিস দ্বারা পরিষ্কার বোঝা গেল, কুরআন দ্বারা ঝাড়ফুঁকের বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয। ঝাড়ফুঁক তো চিকিৎসা; আর চিকিৎসার বিনিময়গ্রহণের ব্যাপারে কোনো অস্পষ্টতা নেই।
সুতরাং আমরা জানতে পারলাম, কুরআন তেলাওয়াত, কুরআন শিক্ষাদান ও ওয়াজ-নসিহতের বিনিময় গ্রহণ করা সম্পূর্ণ হারাম।
ইসলামের শুরুযুগে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের বেতন-ভাতা প্রদান করা হতো; তাই সাধারণ জনগণের কাছ থেকে বিনিময় গ্রহণ করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে ইসলামী খিলাফতের বিলুপ্তির কারণে ফুকাহায়ে কেরাম ফতোয়া দেন, ইসলামের যেসব ইবাদত দীনের আবশ্যকীয়, যেগুলো না হলে দীন ধ্বংসের মুখোমুখি হবে, যাকে জরুরিয়াতে দীন (ضروريات دين) বলা হয়; এমন ইবাদতের বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয। বর্তমানে এটিই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য অভিমত এবং পুরো পৃথিবীর মুসলমানগণ এর ওপরই আমল করছেন। কিন্তু যেসব বিষয় জরুরিয়াতে দীনের অন্তর্ভুক্ত নয় সেগুলোর বিনিময় যথারীতি হারামই থাকবে। যেমন : শুধু কুরআন তেলাওয়াতের বা কুরআন খতমের বিনিময়, ইতিকাফের বিনিময় ইত্যাদি।
রদ্দুল মুহতার বা ফাতাওয়া শামী’র নিচের ইবারতের সারাংশ তাই বলা হয়েছে :
قال فى الدر: ( وَ ) لَا لِأَجْلِ الطَّاعَاتِ مِثْلُ ( الْأَذَانِ وَالْحَجِّ وَالْإِمَامَةِ وَتَعْلِيمِ الْقُرْآنِ وَالْفِقْهِ ) وَيُفْتَى الْيَوْمُ بِصِحَّتِهَا لِتَعْلِيمِ الْقُرْآنِ وَالْفِقْهِ وَالْإِمَامَةِ وَالْأَذَانِ .
و قال ابن عابدين : مَطْلَبٌ فِي الِاسْتِئْجَارِ عَلَى الطَّاعَاتِ .
( قَوْلُهُ وَلَا لِأَجْلِ الطَّاعَاتِ ) الْأَصْلُ أَنَّ كُلَّ طَاعَةٍ يَخْتَصُّ بِهَا الْمُسْلِمُ لَا يَجُوزُ الِاسْتِئْجَارُ عَلَيْهَا عِنْدَنَا لِقَوْلِهِ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ { اقْرَءُوا الْقُرْآنَ وَلَا تَأْكُلُوا بِهِ } وَفِي آخِرِ مَا عَهِدَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إلَى عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ { وَإِنْ اُتُّخِذْتَ مُؤَذِّنًا فَلَا تَأْخُذْ عَلَى الْأَذَانِ أَجْرًا } وَلِأَنَّ الْقُرْبَةَ مَتَى حَصَلَتْ وَقَعَتْ عَلَى الْعَامِلِ وَلِهَذَا تَتَعَيَّنُ أَهْلِيَّتُهُ ، فَلَا يَجُوزُ لَهُ أَخْذُ الْأُجْرَةِ مِنْ غَيْرِهِ كَمَا فِي الصَّوْمِ وَالصَّلَاةِ هِدَايَةٌ .
مَطْلَبٌ تَحْرِيرٌ مُهِمٌّ فِي عَدَمِ جَوَازِ الِاسْتِئْجَارِ عَلَى التِّلَاوَةِ وَالتَّهْلِيلِ وَنَحْوِهِ مِمَّا لَا ضَرُورَةَ إلَيْهِ .
( قَوْلُهُ وَيُفْتَى الْيَوْمَ بِصِحَّتِهَا لِتَعْلِيمِ الْقُرْآنِ إلَخْ ) قَالَ فِي الْهِدَايَةِ : وَبَعْضُ مَشَايِخِنَا - رَحِمَهُمْ اللَّهُ تَعَالَى - اسْتَحْسَنُوا الِاسْتِئْجَارَ عَلَى تَعْلِيمِ الْقُرْآنِ الْيَوْمَ لِظُهُورِ التَّوَانِي فِي الْأُمُورِ الدِّينِيَّةِ ، فَفِي الِامْتِنَاعِ تَضْيِيعُ حِفْظِ الْقُرْآنِ وَعَلَيْهِ الْفَتْوَى ا هـ ، وَقَدْ اقْتَصَرَ عَلَى اسْتِثْنَاءِ تَعْلِيمِ الْقُرْآنِ أَيْضًا فِي مَتْنِ الْكَنْزِ وَمَتْنِ مَوَاهِبِ الرَّحْمَنِ وَكَثِيرٍ مِنْ الْكُتُبِ ، وَزَادَ فِي مُخْتَصَرِ الْوُقَايَةِ وَمَتْنِ الْإِصْلَاحِ تَعْلِيمَ الْفِقْهِ ، وَزَادَ فِي مَتْنِ الْمَجْمَعِ الْإِمَامَةَ ، وَمِثْلُهُ فِي مَتْنِ الْمُلْتَقَى وَدُرَرِ الْبِحَارِ .
وَزَادَ بَعْضُهُمْ الْأَذَانَ وَالْإِقَامَةَ وَالْوَعْظَ ، وَذَكَرَ الْمُصَنِّفُ مُعْظَمَهَا ، وَلَكِنَّ الَّذِي فِي أَكْثَرِ الْكُتُبِ الِاقْتِصَارُ عَلَى مَا فِي الْهِدَايَةِ ، فَهَذَا مَجْمُوعُ مَا أَفْتَى بِهِ الْمُتَأَخِّرُونَ مِنْ مَشَايِخِنَا وَهُمْ الْبَلْخِيُّونَ عَلَى خِلَافٍ فِي بَعْضِهِ مُخَالِفِينَ مَا ذَهَبَ إلَيْهِ الْإِمَامُ وَصَاحِبَاهُ ، وَقَدْ اتَّفَقَتْ كَلِمَتُهُمْ جَمِيعًا فِي الشُّرُوحِ وَالْفَتَاوَى عَلَى التَّعْلِيلِ بِالضَّرُورَةِ وَهِيَ خَشْيَةُ ضَيَاعِ الْقُرْآنِ كَمَا فِي الْهِدَايَةِ ، وَقَدْ نَقَلْتُ لَكَ مَا فِي مَشَاهِيرِ مُتُونِ الْمَذْهَبِ الْمَوْضُوعَةِ لِلْفَتْوَى فَلَا حَاجَةَ إلَى نَقْلِ مَا فِي الشُّرُوحِ وَالْفَتَاوَى ، وَقَدْ اتَّفَقَتْ كَلِمَتُهُمْ جَمِيعًا عَلَى التَّصْرِيحِ بِأَصْلِ الْمَذْهَبِ مِنْ عَدَمِ الْجَوَازِ ، ثُمَّ اسْتَثْنَوْا بَعْدَهُ مَا عَلِمْتَهُ ، فَهَذَا دَلِيلٌ قَاطِعٌ وَبُرْهَانٌ سَاطِعٌ عَلَى أَنَّ الْمُفْتَى بِهِ لَيْسَ هُوَ جَوَازُ الِاسْتِئْجَارِ عَلَى كُلِّ طَاعَةٍ بَلْ عَلَى مَا ذَكَرُوهُ فَقَطْ مِمَّا فِيهِ ضَرُورَةٌ ظَاهِرَةٌ تُبِيحُ الْخُرُوجَ عَنْ أَصْلِ الْمَذْهَبِ مِنْ طُرُوُّ الْمَنْعِ ، فَإِنَّ مَفَاهِيمَ الْكُتُبِ حُجَّةٌ وَلَوْ مَفْهُومَ لَقَبٍ عَلَى مَا صَرَّحَ بِهِ الْأُصُولِيُّونَ بَلْ هُوَ مَنْطُوقٌ ، فَإِنَّ الِاسْتِثْنَاءَ مِنْ أَدَوَاتِ الْعُمُومِ كَمَا صَرَّحُوا بِهِ أَيْضًا .
وَأَجْمَعُوا عَلَى أَنَّ الْحَجَّ عَنْ الْغَيْرِ بِطَرِيقِ النِّيَابَةِ لَا الِاسْتِئْجَارِ ، وَلِهَذَا لَوْ فَضَلَ مَعَ النَّائِبِ شَيْءٌ مِنْ النَّفَقَةِ يَجِبُ عَلَيْهِ رَدُّهُ لِلْأَصِيلِ أَوْ وَرَثَتِهِ ، وَلَوْ كَانَ أُجْرَةً لَمَا وَجَبَ رَدُّهُ ، فَظَهَرَ لَكَ بِهَذَا عَدَمُ صِحَّةِ مَا فِي الْجَوْهَرَةِ مِنْ قَوْلِهِ وَاخْتَلَفُوا فِي الِاسْتِئْجَارِ عَلَى قِرَاءَةِ الْقُرْآنِ مُدَّةً مَعْلُومَةً .
قَالَ بَعْضُهُمْ : لَا يَجُوزُ : وَقَالَ بَعْضُهُمْ : يَجُوزُ وَهُوَ الْمُخْتَارُ ا هـ وَالصَّوَابُ أَنْ يُقَالَ عَلَى تَعْلِيمِ الْقُرْآنِ ، فَإِنَّ الْخِلَافَ فِيهِ كَمَا عَلِمْتَ لَا فِي الْقِرَاءَةِ الْمُجَرَّدَةِ فَإِنَّهُ لَا ضَرُورَةَ فِيهَا ، فَإِنْ كَانَ مَا فِي الْجَوْهَرَةِ سَبْقَ قَلَمٍ فَلَا كَلَامَ ، وَإِنْ كَانَ عَنْ عَمْدٍ فَهُوَ مُخَالِفٌ لِكَلَامِهِمْ قَاطِبَةً فَلَا يُقْبَلُ .
وَقَدْ أَطْنَبَ فِي رَدِّهِ صَاحِبُ تَبْيِينِ الْمَحَارِمِ مُسْتَنِدًا إلَى النُّقُولِ الصَّرِيحَةِ ، فَمِنْ جُمْلَةِ كَلَامِهِ قَالَ تَاجُ الشَّرِيعَةِ فِي شَرْحِ الْهِدَايَةِ : إنَّ الْقُرْآنَ بِالْأُجْرَةِ لَا يَسْتَحِقُّ الثَّوَابَ لَا لِلْمَيِّتِ وَلَا لِلْقَارِئِ .
ফুকাহায়ে কেরাম ওয়াজ-নসিহত করার বিনিময় গ্রহণ করা জায়েয বলেছেন এই মূলনীতির আলোকে :
الضَّرُورَاتُ تُبِيحُ الْمَحْظُورَاتِ
অর্থ : জরুরত বা তীব্র প্রয়োজন নিষিদ্ধ বিষয়কে বৈধ করে দেয়। (আল্লামা ইবনে নুজাইম রহ. রচিত আল-আশবাহ ওয়ান নাযায়ের : পৃ. ৮৬)
তবে মনে রাখতে হবে, এই মূলনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আরেকটি মূলনীতি রয়েছে :
الضَّرُورَة تَتَقَدَّرُ بِقَدْرِهَا
অর্থ : প্রয়োজন প্রয়োজন পর্যন্তই সীমিত থাকে। (মাবসুত লিস সারাখসি : খ. ১, পৃ. ২২২)
অর্থাৎ কোনো প্রয়োজনের কারণে যখন কোনো নিষিদ্ধ বিষয়কে বৈধ করে দেওয়া হয়, তখন প্রয়োজন পর্যন্তই ওই অনুমতি কার্যকর হয়। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে, প্রয়োজন পূরণ হয়ে গেলে আর অনুমতি থাকে না। তখন আবার নিষিদ্ধ হয়ে যায়। উদাহরণত কেউ এমন পরিস্থিতিতে পড়ল যে, খাওয়ার মতো তার কাছে কিছুই নেই; না খেলে মারা যাওয়ার উপক্রম। হালাল খাবার নেই, আছে হারাম খাবার। এখন তার জীবন বাঁচানোর জন্যে হারাম ভক্ষণ করার অনুমিত আছে। এত্থেকে বেশি খেলে অতিরক্তি খাবারটুকু হারাম হবে। তদ্রƒপ ওয়াজ-নসিহত করে টাকা নেওয়া জায়েয বক্তাদের জীবন ধারণ পরিমাণ; এর বেশি নেওয়া কোনোক্রমেই হালাল হবে না। এটা ঠিক যে, ব্যক্তিভেদে জীবন ধারণের প্রয়োজনও কমবেশি হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন