রবিবার, ২২ মে, ২০১৬

কুরআনে কারিমের নামসমূহ

Mohiuddin Kasemi

আল্লামা আবুল মাআলি রহ. ‘আল-বুরহান ফি মুশকিলাতিল কুরআন’ নামক গ্রন্থে বলেনÑ কুরআনে কারিমের পঞ্চান্নটি নাম রয়েছে। আবার কতক আলেমদের মতে নব্বয়ের অধিক নাম রয়েছে।
তবে সঠিক কথা হল, কুরআনে কারিমের মোট পাঁচটি নাম রয়েছে :

১. الْقُرْآنُ আল-কুরআন। যেমন-
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَسْمَعُوا لِهَذَا الْقُرْآَنِ وَالْغَوْا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُونَ
(সূরা ফুসসিলাত : ২৬)
২. الْفُرْقَان : আল-ফুরকান। যেমন - مِنْ قَبْلُ هُدًى لِلنَّاسِ وَأَنْزَلَ الْفُرْقَانَ 
(সূরা আলে ইমরান : ৪)
৩. الذِّكْرُ : আজ্-জিকর। যেমন- 
ذَلِكَ نَتْلُوهُ عَلَيْكَ مِنَ الْآَيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ 
(সূরা আলে ইমরান : ৫৮)
৪. الْكِتَابُ : আল্-কিতাব। যেমন-
الَّذِينَ آَتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُولَئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ 
(সূরা বাকারা : ১২১)
৫. التنزيل : আত্-তানজিল। যেমন- تَنْزِيلَ الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ 
(সূরা ইয়াসিন : ৫)
এ নামগুলোর মধ্যে ‘আল কুরআন’ সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। তাই তো পবিত্র কুরআনে তা পঁয়ষট্টি বার ব্যবহৃত হয়েছে। তবে কুরআনের গুণবাচক নাম যেমনÑ ‘মাজিদ’ ‘কারিম’ এগুলো অনেক। এ হিসেবেই আল্লামা আবুল মাআলি পঞ্চান্নটি এবং অন্যান্যরা তদূর্ধŸ নামের প্রবক্তা। (উলুমুল কুরআন-২৩)
---
কুরআন শব্দের তাহকিক (শাব্দিক বিশ্লেষণ)
আল্লামা ইবনে কাসির, ইমাম শাফেয়ি রহ. এবং কতিপয় আলেমের মতে ‘কুরআন’ শব্দটি غير مشتق (অনির্গত)
هو اسم علم غير مشتق خاص بكلام الله تعالى و غير مهموز
অর্থাৎ ‘কুরআন’ শব্দটি একটি নাম, যা অনির্গত এবং তা আল্লাহর কালামের জন্য খাস আর তা মাহমুয না।’
আর অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে ‘কুরআন’ শব্দটি مشتق বা নির্গত। কিন্তু কোন্ মাস্দার থেকে নির্গত এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে।
ইমাম রাযি রহ. ও অন্যান্যদের মতে القَرْنُ (মিলিত হওয়া) মাসদার থেকে নির্গত, তখনمهموز হবে না। যেমন- বলা হয় :
قَرَنْتَ الشئَّ بالشئ اذا ضَمَّمْتَ احدَهما الى الآخر
এমতাবস্থায় মাসদার ইসমে মাফউল مَقْرُوْنٌ এর অর্থ দিবে। কেননা, কুরআনের এক আয়াত অপর আয়াতের সাথে মিলিত। 
আর কেউ কেউ বলেন কুরআন القِرأة পাঠ করা, পড়া; বাবে فَتَحَ থেকে মুশতাক, তখন مهموز হবে। এমতাবস্থায়ও মাসদার ইসমে মাফউল مَقْرُوٌّ এর অর্থ দিবে। কেননা, কুরআন বারবার পড়া হচ্ছে।
---
‘কুরআন’ বলে নামকরণের কারণ 
এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য কারণ হল- কাফেরদের প্রত্যাখ্যানস্বরূপ এ নাম রাখা হয়েছে। তারা বলত- 
لَا تَسْمَعُوا لِهَذَا الْقُرْآَنِ وَالْغَوْا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُونَ 
-তোমরা এ কুরআনকে শুনিও না; আর তা পাঠকালে অনর্থক কথা বল। (ফুস্সিলাত-২৬)
তাদের প্রত্যাখ্যানে আল্লাহর কালামকে ‘কুরআন’ বলে নামকরণ করে এ দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এ কিতাব পড়ার জন্যই অবতীর্ণ হয়েছে। কিয়ামত অবধি তা বারংবার পড়া হবে; কাফেরদের কারণে কিছু যায় আসে না। তাই তো পবিত্র কুরআন পৃথিবীর মধ্যে বহুল পঠিত একমাত্র গ্রন্থ। যা সর্বজন স্বীকৃত দিবালোকের ন্যায় পরিস্ফুটিত চিরসত্য। 
আবার কেউ বলেন : যেহেতু কুরআন তার পূর্বে অবতীর্ণ সকল গ্রন্থের ফলাফল ও ইলম একত্রিত করেছে, তাই তাকে কুরআন বলে।
---
কুরআনের পারিভাষিক সংজ্ঞা
هُوَ الْكِتَابُ الْمُنَزَّل عَلَى رَسُول اللَّهِ ، الْمَكْتُوبُ فِي الْمَصَاحِفِ ، الْمَنْقُول عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَقْلاً مُتَوَاتِرًا ، بِلاَ شُبْهَةٍ ، وَهُوَ النَّظْمُ وَالْمَعْنَى جَمِيعًا فِي قَوْل عَامَّةِ الْعُلَمَاءِ
অর্থাৎ কুরআন আল্লাহ তাআলার ঐ কিতাব যা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অবতীর্ণ হয়েছে; মুসহাফে লিখিত এবং কোনো প্রকার সন্দেহ ব্যতীত তাঁর থেকে ক্রমধারা সূত্রে বর্ণিত। সকল আলেমের মতে শব্দ ও মর্ম উভয়টিই কুরআন। (উসুলুল বাযদাবি : খৃ.১, পৃ. ৬৭; উলুমুল কুরআন-২৫, নুরুল আনওয়ার-৭, তাফসিরে কুরতুবি-খ.১, পৃ. ১০)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন