বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬

কবর বিষয়ে প্রান্তিকতা

 মুহিউদ্দীন কাসেমী (হাফি:)

কবরের বিষয়ে শরীয়ত ইফরাত-তাফরীত (কোনো প্রকারের প্রান্তিকতা) অনুমোদন করে না। সুতরাং কবরের অসম্মানও যেমন নিষেধ তেমনি সম্মান দিতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করাও নিষেধ। এ সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস দেখা যেতে পারে : 
أَخْبَرَنِى أَبُو الزُّبَيْرِ أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرًا يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- نَهَى أَنْ يُقْعَدَ عَلَى الْقَبْرِ وَأَنْ يُقَصَّصَ وَيُبْنَى عَلَيْهِ.
হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের উপর বসতে, কবর পাকা করতে এবং কবরের ওপর গম্বুজ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে আবী দাউদ, হাদিস নং- ৩২২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭০; মিশকাতুল মাসাবীহ পৃ. ১৪৮)

এক হাদীসে আছে, ‘কবরের উপর বসবে না, কবরের দিকে ফিরে নামাযও পড়বে না’। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭২) 
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- ্র لأَنْ يَجْلِسَ أَحَدُكُمْ عَلَى جَمْرَةٍ فَتُحْرِقَ ثِيَابَهُ فَتَخْلُصَ إِلَى جِلْدِهِ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَجْلِسَ عَلَى قَبْرٍ গ্ধ.
অর্থ : তোমাদের কেউ যেন কবরের উপর না বসে। সে জ্বলন্ত কয়লার উপর বসুক, যার কারণে তার পরিধেয় কাপড় পুড়ে তার শরীরও পুড়ে যায়- এও তার জন্য ভালো। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২২৯২, অধ্যায় : باب النَّهْىِ عَنِ الْجُلُوسِ عَلَى الْقَبْرِ وَالصَّلاَةِ عَلَيْهِ.)
এক হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর পাকা করতে, তার উপর কিছু লিখতে এবং তা পদদলিত করতে নিষেধ করেছেন। (জামে তিরমিযি, হাদীস ১০৫২)
অন্য হাদীসে আছে, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী আমর ইবনে হায্ম রা.-কে কবরে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে বলেছেন, ‘কবরের অধিবাসীকে কষ্ট দিও না।’ (মুসনাদে আহমাদ; মিশকাতুল মাসাবীহ পৃ. ১৪৯) 
এ সকল হাদীস থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, কবরের অসম্মানও কাম্য নয়, সীমাতিরিক্ত সম্মানও কাম্য নয়। তবে কবরের উপর শরিয়তবিরোধী কর্মকা- হলে তা সংশোধন করা জরুরি। হযরত আলী রা. বলেন, নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ কাজে পাঠিয়েছিলেন, যে ছবি বা মূর্তিই দেখি তা যেন বিলুপ্ত করি আর যে কবরই উঁচু দেখি তা যেন সমান করি। (সহীহ মুসলিম; মিশকাত শরীফ পৃ. ১৪৮)
এই হাদীসগুলো থেকে প্রমাণিত হয়, পাকা কবর বানানো বা কবরের উপর গম্বুজ নির্মাণ জায়েয নয়। স্বয়ং নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর দুই সাহাবী (হযরত আবু বকর ও ওমর রা.)-এর কবরও পাকা নয়, কাঁচা। (সুনানে আবু দাউদ; মিশকাতুল মাসাবীহ পৃ. ১৪৯)
এখন ঐসব কার্যকলাপ সম্পর্কে চিন্তা করুন, যা আমাদের সাধারণ অজ্ঞ মানুষ ওলী-বুযুর্গদের কবরে করে থাকে। যেমন কবরে গিলাফ চড়ানো, বাতি জ্বালানো, কবরে সিজদা করা, তাওয়াফ করা, কবরে চুমু খাওয়া, কপাল ঘষা, কবরের সামনে হাত বেধে এমনভাবে দাঁড়ানো যেভাবে নামাযী আল্লাহর সামনে হাত বেধে দাঁড়ায়, কবরের সামনে রুকুর মতো ঝোঁকা, কবরের উদ্দেশ্যে মান্নত মানা, নিয়ায চড়ানো, কবরকে পেছনে না দেওয়া ইত্যাদি।
এসব কার্যকলাপ দিল্লির নিজামউদ্দিন আওলিয়া রহ. এর মাজার, আজমীরের মুঈনুদ্দীন চিশতি রহ. এর মাজার কিংবা বাংলাদেশে শাহজালাল রহ., শাহ পরান কিংবা শাহ আলী রহ. এর মাজার হোক; সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয়। আপনি যদি কখনো কোনো বুযুর্গের মাযারে গিয়ে থাকেন তাহলে এই সকল কার্যকলাপ স্বচক্ষেই দেখেছেন। অথচ আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআত ও ফিকহের কিতাবাদিতে এই সকল বিষয়কে নাজায়েয লেখা হয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন