বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৬

বরকতের মর্মকথা রিজিকে বরকত হওয়ার কারণসমূহ রিজিকে বরকত বন্ধের কারণসমূহ

মাও. আতীক উল্লাহ আতীক হাফি.
ড. আবদুর রাহীম। বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। বায়োকেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্ট। ঢাকা ভার্সিটি। তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন জার্মানিতে। গল্প করতে বসলেই জার্মানির গল্প শোনাতেন। সেখানকার বন্ধুবান্ধবের কথা বলতেন। 
.
কাজ ও পড়াশোনার সূত্রে তার বাসায় নিত্যদিন মেহমান লেগেই থাকতো। তাদের বেশির ভাগই জার্মান। তার একটা অভ্যেস ছিল, কেউ এলে, যত সামান্যই হোক, কিছু একটা দিয়ে মেহমানের আপ্যায়ন করা। আগন্তুকরা বেশ অবাক হতো। ড. সাহেব চলেন নির্ধারিত বেতনের টাকায়। কিন্তু এভাবে হাতখুলে মেহমানদারী করার টাকা পান কোত্থেকে? এক মহিলা থাকতে না পেরে প্রশ্নটা সরাসরি ডক্টর সাহেবকে করেই ফেলেছিলেন:
-হের ডক্টর! তুমি তো বাড়তি কোনও জব করো না, তবুও আমরা যখনই আসি, কিছু না খাইয়ে ছাড়ো না, এত টাকা কোথায় পাও! আমার ‘সেলারি’ও তো তোমার স্কেলেরই! সংসারে লোক বলতে আমি আর মুলার! তার রুজি-রোজগার ভালোই, তবুও মাসশেষে দেখা যায়, ধারকর্জ করতে হয়! কিন্তু তুমি দিব্যি আরামেই থাকো! এ কী করে সম্ভব?
-ফ্রাউ ড. লিন্ডা! মেহমানদারী করা সুন্নাত। 
-সুন্নাত কী?
-আমাদের প্রফেট হের মুহাম্মাদ (সা.)-এর আদর্শ!
-সে না হয় বুঝলাম! কিন্তু এত খায়-খরচার পয়সা আসে কোত্থেকে?
-মেহমানদারী রিযিকে বরকত আনে!
-রিযিক?
-রিযিক মানে ‘আয়রোজগার’। আর বরকত মানে বৃদ্ধি। 
-কী বলছো তুমি! আমাদেরকে মেহমানদারী করলে, তোমার সেলারি দ্বিগুন হয়ে যায়! ওহ জেসাস!
-না ব্যাপারটা ঠিক সে রকম নয়! 
-তবে?
-ব্যাপারটা ঠিক বোঝানো যাবে না, তুমি মুসলমান হলে বুঝতে পারবে! তোমার সীমিত আয়েও যদি মেহমানদারী করো! মাস শেষে দেখবে, তোমার টাকায় টান পড়েনি! ঠিকই মাসকাবার হয়ে গেছে!
.
একদিন নবীজি সা. এলেন বেলালের কাছে। বেলালের কাছে কিছু খেজুর ছিল:
-এগুলো কী বেলাল?
-খেজুর হুযুর! আপনি ও আপনার মেহমানের জন্যে রেখে দিয়েছি!
- (মিয়া) বেলাল! খরচ করে ফেলো! আরশের অধিপতির কাছ থেকে ‘কমতির’ আশংকা করো না (বায়হাকী)
.
বরকত লাভের আর কী কী উপায় আছে?
এক: আল্লাহর ভয়। তাকওয়া অর্জন করা: সরাসরি আল্লাহর স্বীকৃতি, সন্দেহের অবকাশ নেই:
= যদি জনপদবাসী ঈমান আনে ও তাকওয়া অর্জন করে, আমি অবশ্যই আসমান-যমীন থেকে বরকত (এর দরজা) খুলে দেবো! (আ‘রাফ: ৯৬)। 
.
দুই: আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা। নবীজি সা. বলেছেন:
= যদি তোমরা আল্লাহর ওপর সত্যিকার তাওয়াক্কুল করো, আল্লাহ তোমাদেরকে পাখির মতোই রিযিক দান করবেন। পাখি খালি পেটে সকালে বের হয়, ভরপেট হয়ে সন্ধ্যায় ফেরে। (তিরমিযী)। 
.
তিন: সম্পদে, সময়ে, স্ত্রীতে, সন্তানে, সমস্ত বিষয়ে বরকতের দু‘আ করা। নিজের জন্যে করা, অন্যের জন্যেও দু‘আ করা:
বিয়ে করছে, এমন মানুষের জন্যে দু‘আ:
بارك اللهم لك وبارك عليك وجمع بينكما فى الخير
খাবারের সময় দু‘আ:
اللهم بارك لنا فيما رزقتنا وارزقنا خيرا منه
.
চার: বিয়ে করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
= তোমাদের মধ্যে যারা বিধবা, তাদেরকে বিয়ে করিয়ে দাও। তোমাদের নেককার দাসী-বাঁদীদেরকেও বিয়ে করিয়ে দাও! যদি তারা ফকীর হয়, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে ধনী করে দিবেন (নূর: ৩২)। 
.
পাঁচ: মোহরানা ধরার সময় বাড়াবাড়ি না করা। নবীজি সা. বলেছেন:
= যে নারীর মোহরানা যত কম হবে, তার মধ্যে বরকত তত বেশি হবে (মুসনাদে আহমাদ)। 
.
ছয়: হালাল উপায়ে সম্পদ অর্জন করা। নবীজি সা. বলেছেন:
= যে ব্যক্তি হকপন্থায় সম্পদ অর্জন করবে, তার মধ্যে বরকত দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে সম্পদ অর্জন করলো, তার দৃষ্টান্ত হলো: এমন ব্যক্তির মতো, যে শুধু খেতেই থাকে, কিন্তু পরিতৃপ্তি আসে না (মুত্তাফাকুন)। 
.
সাত: লোভহীন মনে সম্পদ অর্জন করা। হাকীম বিন হিযাম রা. বলেন:
-আমি নবীজি সা.-এর কাছে ‘সুওয়াল’ করলাম, তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি দিলেন। তারপর বললেন:
-হাকীম! এই সম্পদ হলো সুমিষ্ট সজীব বস্তু! যে এটাকে (নির্লোভ ) উদারচিত্তে গ্রহণ করবে, তাতে বরকত দেয়া হবে। আর যদি কেউ সম্পদকে লোভী হয়ে, পীড়াপীড়ি করে অর্জন করে: তার অবস্থা হবে, এমন ব্যক্তির মতো যে, খেয়েই চলছে,কিন্তু তৃপ্তি আসছে না (মুত্তাফাক)
.
আট: বেচাকেনায়, ব্যবসা-বাণিজ্যে, লেনদেনে সততা বজায় রাখা:
= ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে কেনাবেচার ক্ষেত্রে স্বাধীন। যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা স্থান ত্যাগ করে। যদি তারা সততা অবলম্বন করে, তাদের কেনাবেচায় বরকত দেয়া হবে। আর যদি মিথ্যা বলে, কোনও কিছু গোপন করে, লেনদেনে বরকত উঠিয়ে নেয়া হবে (বুখারী)। 
.
নয়: ভোরে ভোরে কাজ শুরু করা। ব্যবসা-বাণিজ্য, সফর-ভ্রমণ, ইলমতলব ইত্যাদি। প্রিয় নবীজি সা. বলেছেন:
-ইয়া আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতের সকালের মাঝে বরকত দান করুন! (মুসনাদে আহমাদ)। 
.
দশ: ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দেয়া:
= বৎস (আনাস)! তুমি যখন ঘরে প্রবেশ করবে, সালাম দিবে। এটা তোমার ও তোমার পরিবারের জন্যে বরকত নিয়ে আসবে (তিরমিযী)। 
.
এগার: খাবারের সময় সুন্নাতের অনুসরণ করা:
ক: একত্রে খাওয়া ও বিসমিল্লাহ পড়া। কিছু সাহাবী অভিযোগ করলেন:
-আমরা খাই কিন্তু তৃপ্ত হই না!
-তোমরা সম্ভবত পৃথক পৃথক খাও!
-জ্বি!
-একত্রে খাবে, বিসমিল্লাহ পড়বে। তাহলে তোমাদের খাবারে বরকত দান করা হবে! (আবু দাউদ)। 
.
খ: বরতনের একপাশ থেকে খাওয়া। মধ্যখান থেকে খাওয়া পরিহার করা। নবীজি বলেছেন:
= বরকত খাবারের মাঝামাঝিতে অবতীর্ণ হয়। তোমরা একপাশ থেকে খাও। মধ্যখান থেকে খেয়ো না (তিরমিযি)। 
.
গ: আঙুল চেটে খাওয়া। নবীজি খাওয়ার সময় আঙুল চেটে খেতেন। বরতনও চেটে খেতেন। খাবার পড়ে গেলে, ময়লা ঝেড়ে সেটা খেয়ে নিতেন। না হলে, খাবারটা শয়তানের খাবারে পরিণত হয়। তিনি সাহাবীদেরকে বরতন চেটে খেতে আদেশ করতেন:
= কারণ তোমরা জানো না, খাবারের কোন অংশে বরকত আছে (মুসলিম)। 
.
ঘ: খাবার ঠান্ডা হওয়ার অপেক্ষা করা। আসমা বিনতে আবী বকর রা. রান্না করলে, প্রথমে কিছু দিয়ে ঢেকে রাখতেন, যাতে আগুনের উত্তাপের তীব্রতা কমে আসে। তিনি বলতেন: আমি নবীজি সা.কে বলতে শুনেছি:
-এটা (গরম কমে আসার অপেক্ষা করা) খাবারের বরকত বাড়িয়ে দেয়! (মুসনাদে আহমাদ)। 
.
ঙ: খাবার ঢেকে রাখা। নবীজি সা. বলেছেন:
-তোমরা খাবারের পাত্রকে ঢেকে রাখো! (বুখারী)। 
.
চ: খাবার শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা (বুখারী)। 
.
বারো: ইস্তেখারা করা। মানে সবকিছুতে কল্যাণ কামনা করা। দৃঢ় বিশ্বাস রাখা, আল্লাহ আমার জন্যে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন, তা পুরোটাই আমার জন্যে কল্যাণকর। আমি নিজে যা ঠিক করি, তাতে কল্যান নেই। বান্দা সব সময় দু‘আ করবে:
-ইয়া আল্লাহ! আমার সবকিছুতে কল্যাণ দান করুন। বরকত দান করুন (বুখারী অবলম্বনে)। 
.
তেরো: আল্লাহর দেয়া রিযিকে সন্তুষ্ট থাকা। নবীজি সা. বলেছেন:
= আল্লাহ বান্দাকে যা দিয়েছেন, তা দিয়ে পরীক্ষা করেন। বান্দা যা তাকে দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ বরকত বাড়িয়ে দেন। প্রাচুর্য দান করেন। অন্যথায় বরকত লাভে বঞ্চিত হয় (মুসনাদে আহমাদ)। 
.
চৌদ্দ: আদল। ন্যায়বিচার। শেষ যমানায় ঈসা আ. নেমে আসবেন। যমীনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। বরকত বেড়ে যাবে। যমীনকে সম্বোধন করে বলা হবে: তোমার শস্য উৎপন্ন করো, বরকত ফিরিয়ে দাও! একেকটা গমের দানা হবে খেজুর আঁটির মতো (মুসনাদে আহমাদ)। 
.
পনের: আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা ও পিতামাতার প্রতি সদাচার। হাদীসে আছে:
-যে চায় তার রিযিকে প্রাচুর্য আসুক, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে (মুত্তাফাক)। 
বাবা-মায়ের প্রতি সদাচার সৌভাগ্যের কারণ। তাদের দু‘আ আল্লাহ কবুল করেন। তাদের সন্তুষ্টি আল্লাহর সন্তুষ্টি। 
.
ষোল: দান-সাদাকা। 
=তোমরা যা (আল্লাহর রাস্তায়) ব্যয় করবে, তিনি (আল্লাহ) তার বিনিময় দিয়ে দিবেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা (সূরা সাবা: ৩৯)। 
.
= আসমা! তুমি খরচ করো, আল্লাহও তোমার জন্যে খরচ করবেন। তুমি ধরে রাখলে, আল্লাহও ধরে রাখবেন (তিরমিযী)। 
.
কষ্টেপড়া ব্যক্তির অবস্থাকে সহজ করে দিলে, আল্লাহও দুনিয়া-আখেরাতে তার জন্যে সবকিছু সহজ করে দিবেন। যে কারো বিপদ দূর করলো, আল্লাহও দুনিয়া-আখেরাতে তার বিপদ দূর করে দিবেন (মুসলিম)। 
.
সতের: কুরআন তিলাওয়াত করা:
= এটা বরকতময় কিতাব (আনআম)। 
.
= তোমরা সূরা বাকারা পড়ো। যে সূরা বাকারাকে আঁকড়ে ধরবে, বরকত লাভ করবে। যে ছেড়ে দিবে, আফসোস করবে। সুরা বাকারা পাঠকারীকে কোনও শয়তান ছুঁতে পারবে না (মুসলিম)। 
.
আঠার: সর্বদা ইস্তেগফার পড়া। 
= যে ব্যক্ত নিয়মিত ইস্তেফগার পড়বে, সব ধরনের সমস্যা-সংকট থেকে আল্লাহ তাকে মুক্তি দেবেন (আবু দাউদ)। 
.
উনিশ: বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পড়া। 
-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি দু‘আতে শুধু দুরুদ শরীফই পাঠ করি। 
-তাহলে তোমার দুশ্চিন্তা দূর হবে। গুনাহ মাফ হবে (তিরমিযী)। 
.
বিশ: রমযান মাস:
= তোমাদের কাছে রমযান মাস এসেছে। বরকতের মাস। এই মাসে আল্লাহ তোমাদেরকে বেষ্টন করে রাখবেন। রহমত নাযিল হবে। গুনাহ মাফ হবে। দু‘আ কবুল হবে। তোমরা আল্লাহকে ভাল কিছু দেখাও। যে রমযান মাসে রহমত থেকে বঞ্চিত হয়, সে দুর্ভাগা (তারগীব তারহীব)। 
.
একুশ: সাহরী খাওয়া। 
= তোমরা সাহরী খাও, কারন তাতে বরকত রয়েছে (মুত্তাফাক)। 
.
বাইশ: দুই ঈদ। উম্মে আতিয়া রা. বলেছেন:
= আমাদেরকে ঈদের দিন বের হওয়ার আদেশ করা হতো। আবাল-বৃদ্ধা-বণিতা-কুমারি সবাই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়তো। এমনকি হায়েযগ্রস্তারাও। মহিলারা পুরুষের পেছনে নামাযে দাঁড়াতো। তাকবীর বলতো। তাদের মতো দু‘আ করতো। তারা বরকতের আশা করতো (বুখারী)। 
.
তেইশ: যমযমের পানি পান করা:
= নিশ্চয় যমযমের পানি বরকতময়। সেটা উত্তর খাবার। রোগের নিদান (মুসলিম)। 
.
চব্বিশ: কদরের রাত্রির অন্বেষণ:
= আমি কুরআনকে এক বরকতময় রাতে নাযিল করেছি (দুখান:৩)। 
সব মুসলমারেই উচিত, এই রাতের অন্বেষণ করা। আল্লাহর কাছে এ রাতের বরকত লাভের দু‘আ করা। 
.
পঁচিশ: বেশি বেশি আল্লাহ শুকরিয়া ও প্রশংসা করা। 
= তোমরা যদি শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেবো (ইবরাহীম: ৭)। 
.
ছাব্বিশ: নামায কায়েম করা, পরিবারকে নামায কায়েমের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা:
= তুমি তোমার পরিবারকে নামাযের আদেশ করো। নামায আদায়ে অবিচল থাকো। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না। আমিই তোমাকে রিযিক দান করবো (তাহা:১৩২)।
.
সাতাশ: চাশতের নামায। 
(ক) শকীক বলখী রহ, বলেছেন:
-আমরা পাঁচটি বস্তু তলব করেছি। সেগুলোকে পাঁচটি বস্তুর মধ্যে পেয়েছি। রিযিক তলব করেছি, সেটাকে চাশতের নামাযের মাধ্যমে পেয়েছি। 
.
(খ) যায়তুনের তেল:
= (বাতি) জ্বালানো হয় রবকতময় যায়তুন বৃক্ষ (এর তেল) হতে (নূর: ৩৫)। 
= তোমরা (যায়তুনের তেল খাও, মাখো, কারণ তা এক বরকতময় বৃক্ষ হতে নিঃসৃত হয় (তিরমিযী)। 
.
আঠাশ: খেজুর। 
= তোমরা খেজুর দিয় ইফতার করবে, কারণ খেজুর বরকতময় বস্তু (আবু দাউদ)। 
.
ঊনত্রিশ: মধু ও কালোজ্বিরা। 
= মধুতে রয়েছে আরোগ্য (নাহল:৬৯)। 
= তিন বস্তুতে আরোগ্য রয়েছে: আগুনের সেঁক। সিঙা লাগানো। মধু পানে (বুখারী)। 
= এই কালো জিরায় সর্বরোগের ওষুধ রয়েছে। মৃত্যু ছাড়া (বুখারী)। 
.
ত্রিশ: দুধ।
= যে ব্যক্তি দুধ পান করবে, সে যেন বলে:
اللهم بارك لنا فيه وزدنا منه
কারণ একমাত্র দুধ পানেই সওয়াবের প্রতিশ্রুতি রয়েছে (ইবনে মাজাহ)। 
.
একত্রিশ: মক্কা ও মদীনার বরকত। 
= মানুষের জন্যে সর্বপ্রথম ঘর বরকতময় মক্কাতেই নির্মিত হয়েছে (আলে ইমরান: ৯২)। 
= ইয়া আল্লাহ! আপনি মদীনাতে মক্কার চেয়েও দ্বিগুন বরকত দান করুন (মুত্তাফাক)। 
.
বত্রিশ:বৃষ্টির পানি। 
= আমি আকাশ থেকে বরকতময় বৃষ্টি নাযিল করেছি (ক্বাফ: ৯)। 
= নবীজি পোষাক অনাবৃত করেছিলেন, যেন শরীরে বৃষ্টির পানি পড়ে (মুসলিম)। 
.
তেত্রিশ: আলিমদের সঙ্গ। নেককারদের সঙ্গ। দুর্বল ভালো লোকের সঙ্গ। আলিমগন সমাজে কল্যাণের প্রসার ঘটান। মানুষের অবস্থার সংশোধন করেন। এই কাজে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন। ফলে বিপদাপদ দূর হয়। 
আর দুর্বল ভালো লোকদের সম্পর্কে নবীজি বলেছেন:
= তোামদেরকে তোমাদের দুর্বলদের কারণে সাহায্য করা হবে (বুখারী)। 
কারণ দুর্বলরা অন্যদের তুলনায় বেশি মনোযোগ দিয়ে দু‘আ করে। খুশু-খুযুর সাথে ইবাদত করে। তাদের হৃদয়ে দুনিয়ার প্রভাব কম থাকে। 
.
চৌত্রিশ: বরকত না আসার কারণগুলো থেকে দূরে থাকা। 
ক: সুদ খাওয়া। 
= আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করবেন, সাদাকাকে বৃদ্ধি করে দেবেন (বাকারা: ২৭৪)। 
= আল্লাহ সুদ গ্রহীতা ও দাতা উভয়কে অভিশাপ দিয়েছেন (আহমাদ)। 
.
খ: অন্যকে ধোঁকা দেয়া। 
= যে আমাদেরকে ধোঁকা দিল, সে আমাদের দলভুক্ত নয় (মুসলিম)। 
.
গ: মাপে কম দেয়া। 
= মানুষকে মাপে কম দিলে, দুর্ভিক্ষ, খাদ্যসংকটা ও শাসকের যুলুম নেমে আসবে (ইবনে মাজাহ)। 
.
ঘ: জুয়া খেলা।
= মদ, জুয়া হলো শয়তানের নাপাক কর্ম, সেগুলো পরিহার করে চলো। তাহলে সফল হতে পারবে (মায়েদা:৯০)। 
.
ঙ: হারাম পণ্য, হারাম কাজ, জনমানুষের জন্যে ক্ষতিকর কাজে লেগে থাকা। যেমন মদের ব্যবসা, শুকরের ব্যবসা, মৃত-রক্ত-মূর্তি-কুকুরের ব্যবসা করা। এসবকে কুরআন হাদীস উভয়টাতে নিষেধ করা হয়েছে। 
.
চ: অন্যের প্রাপ্য আদায়ে, ঋণ পরিশোধে টালবাহানা করা:
= যে ব্যক্তি আদায় করে দেয়ার নিয়তে, মানুষ থেকে সম্পদ নিল, আল্লাহ তা আদায় করাটা সহজ করে দিবেন। আর যদি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে কারো কাছ থেকে টাকা নেয়, আল্লাহই সেটা বিনষ্ট করে দিবেন (বুখারী)। 
.
ছ: নামাযের সময়ে মুআমালা-লেনদেন করা। 
= যে কাজ নামায থেকে বিমুখ করে দেয়, আল্লাহ তাতে বরকত দান করেন না (এটা লোকমুখে প্রচারিত বানী। তবে সূরা নূরের ৩৭ নং আয়াতের সাথে মিলে যায়:
= কিছু (নেককার) পুরুষকে ব্যবসা-বাণিজ্য আল্লাহর যিকির ও নামায কায়েম থেকে বিরত রাখতে পারে না। 
.
জ: ইহতেকার। মজুতদারী। খাদ্যশস্য-পণ্যদ্রব্য কমদামে কিনে, গুদামে তুলে রাখা। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা। 
= পাপী লোকই শুধু ইহতিকার করে (মুসলিম)। 
.
ঝ: ব্যবসা করতে গিয়ে অতিরিক্ত শপথ করা। 
= অচল পণ্য সচলকারী মিথ্যা শপধ, বরকতকে দূর করে দেয় (মুসলিম)। 
.
ঞ: ইসরাফ-তাবযীর। অপচয় করা। খাবার-দাবারে। পোশাক-আশাকে। পানাহারে। এটা শয়তানী কাজ। 
= অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই (বনী ইসরাঈল: ২৭)। 
.
ট: খেয়ানত ও অশ্লীলতা। এক বুযুর্গ বলেছেন:
-তিনটা বস্তু কোনও ঘরে থাকলে, বরকত উঠিয়ে নেয়া হয়:
অপচয়। যিনা। খেয়ানত। 
.
ঠ: যুলুম। অন্যকে যুলুম করলেও জীবন থেকে বরকত চলে যায়।
.
ড: ব্যভিচার, হারাম তরীকায় নারীর সৌন্দর্য প্রদর্শন। খোলামেলা পোশাকের প্রচলন। উল্কি আঁকা। ভ্রুপ্লাক ইত্যাদি কাজের প্রতি আল্লাহর লা‘নত আছে। এসব করলেও বরকত উঠিয়ে নেয়া হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন