আল্লাহ তাঁকে দান করেছেন বুদ্ধিস্নাত প্রতিভা। সূর্যদীপ্ত যোগ্যতা। শৈশব থেকেই যার বিচ্ছুরণ ঘটতে শুরু করেছিলো। হ্যাঁ .. শৈশব থেকেই। বিস্ময়বোধের কিছুই নেই! সকালের সূর্যটাই-না বলে দেয়― দিবসের আকাশটা মেঘলা থাকবে না-কি― সুনীল-স্বচ্ছ! কবির ভাষায়―
وإذا رأيت مـن الهلال نموه + أيقنتَ أن ســيصير بدرا كاملا
‘নয়া চাঁদের ক্রমবৃদ্ধি দেখে বুঝতে পারো না―
এ-ই হতে যাচ্ছে সুনিশ্চিত ষোলটা তিথির সমষ্টি―পূর্ণিমা?!’
আল্লাহপ্রদত্ত এই প্রতিভা তাঁর সামনে খুলে দিয়েছে জ্ঞান লাভের অবারিত দিগন্ত, সভ্যতা-সংস্কৃতির জগতে প্রবেশের প্রশস্ত বাতায়ন এবং ইলমে নববী’র বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় সাবলীল বিচরণের বিস্তৃত পথ। আঁজলা ভরে-ভরে নিয়েছেন তিনি―
পরম্পরাগত বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের স্বচ্ছ ধারা,
সালফে সালেহীন বা মহান পূর্বসুরীদের গৌরবময় ঐতিহ্য ..
পরবর্তীদের জ্ঞান-গবেষণা ..
এবং প্রাচ্যের ইলম ও প্রতীচ্যের বিজ্ঞানধারা,
আর পান করেছেন বড়ো তৃপ্তিভরে।
এভাবেই গড়ে উঠেছে তাঁর ব্যক্তিত্ব। জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ময়দানে পরিণত হয়েছেন তিনি বিশাল এক মহীরুহে― ছায়া ছড়িয়ে .. আলো বিলিয়ে! আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাওফীক-যোগে এ-বহুমুখী প্রতিভার বদৌলতেই একাধিক ভাষায় সুদক্ষ হয়ে উঠেছিলেন তিনি― আরবী, উর্দূ, ফারসি, হিন্দি ও ইংরেজি। আর এই বহুভাষা-সেঁতুর বন্ধনে ভারত-উপমহাদেশ ছাপিয়ে পরিচিত হতে পেরেছিলেন বিশ্ব সম্প্রদায়ের সুবিস্তৃত শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে― আপন-আপন বলয়ে যে ভাষাগুলোর রয়েছে সুনির্দিষ্ট ওজন ও মূল্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতি।
কিন্তু শায়খ নদভী শুধু শিক্ষা ও জ্ঞান-গবেষণার ময়দানেই মহান ও অগ্রগামী ছিলেন না, তাঁর রক্তের কণায়-কণায় মিশে ছিলো সুকুমারবৃত্তি ও মহৎ গুণাবলী’র অসংখ্য উপাদান, যা তিনি উত্তরাধিকারসূত্রেই লাভ করেছিলেন তাঁর পূর্বপুরুষ রাসূলে আরাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, যিনি এসেছিলেন ‘মহান চরিত্র’কে ষোলকলায় পূর্ণতা দিতে .. যাঁর সম্পর্কে আম্মাজান আয়েশা রা. এর উক্তি হলো― ‘كان خلقه القرآن’ ‘তাঁর চরিত্র ছিলো― কুরআন।’
আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, শায়খ নদভীও ছিলেন― কুরআনী চরিত্রের, মুহাম্মদী আচরণের, হাসানী স্বভাবের এবং ইসলামী চিন্তা-চেতনার সূতীকাগার। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তার চিরঅনুগত ছিলো শায়খ নদভী’র সকল চাওয়া-পাওয়া ও আবেগ-অনুভূতি। এ মোটেই নয়― আমার মনগড়া উক্তি কিংবা অতিশয়োক্তি কিংবা তাঁকে ছোট করার কোনো প্রয়াস। এ আমার হৃদয়ের গভীর থেকে উচ্চারিত বিশুদ্ধ ধ্বনি। চির-অনুভবীয় সত্যের স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণ। আমি তাঁকে গভীরভাবে দেখেছি, চিনেছি ও বুঝেছি এবং এই দাবি নিয়েই বলছি― তিনি এমনই ছিলেন। এমনই ছিলো তাঁর স্বভাব-প্রকৃতি। আল-কুরআনের এই আয়াত যেনো ছিলো তাঁর জীবনের স্লোগান―
"قل إن صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العالمين، لاشريك له"
‘বলো, আমার নামাজ, আমার কোরবানী, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু― জগৎসমূহের প্রতিপালক লা-শরীক আল্লাহ্র জন্যে।’
-আন‘আম:১৬২-১৬৩
তিনি একজন ‘ইনসান’ (মানুষ) ছিলেন―
‘ইনসানিয়াত’ শব্দের সর্বব্যাপী অর্থ ও তাৎপর্যে।
তিনি একজন রাব্বানী ছিলেন―
‘রাব্বানিয়াত’ শব্দের নিগূঢ়তম অর্থ ও তাৎপর্যে।
তিনি ‘আখলাকী’ (চরিত্রবান) ছিলেন―
‘আখলাকিয়াত’ শব্দের সকল মানদণ্ডে।
তিনি একজন মুসলমান ছিলেন―
‘ইসলাম’ শব্দের পরিপূর্ণ অবয়বে।
من المصابيح الذين همو + كأنهم من نجوم حية صُنِعُوْا
أخلاقهم نورهم من أيِّ ناحية + أقبلت تنظر فـي اخلاقهم سطعوا
‘মানুষের ভিতরে আছে এমন সব আলোকবর্তিকা,
যাঁদেরকে দেখলে মনে হয় যেনো জীবন্ত নক্ষত্ররাজি থেকে নির্মিত সত্ত্বা।
তাঁদের চরিত্রই তাঁদের সামনে আলো ছড়ায়― সবদিক থেকে,
কাছে এসেই দেখো না তাঁদের চরিত্র! দেখবে সে কী দেদীপ্যমান!!
وإذا رأيت مـن الهلال نموه + أيقنتَ أن ســيصير بدرا كاملا
‘নয়া চাঁদের ক্রমবৃদ্ধি দেখে বুঝতে পারো না―
এ-ই হতে যাচ্ছে সুনিশ্চিত ষোলটা তিথির সমষ্টি―পূর্ণিমা?!’
আল্লাহপ্রদত্ত এই প্রতিভা তাঁর সামনে খুলে দিয়েছে জ্ঞান লাভের অবারিত দিগন্ত, সভ্যতা-সংস্কৃতির জগতে প্রবেশের প্রশস্ত বাতায়ন এবং ইলমে নববী’র বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় সাবলীল বিচরণের বিস্তৃত পথ। আঁজলা ভরে-ভরে নিয়েছেন তিনি―
পরম্পরাগত বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানের স্বচ্ছ ধারা,
সালফে সালেহীন বা মহান পূর্বসুরীদের গৌরবময় ঐতিহ্য ..
পরবর্তীদের জ্ঞান-গবেষণা ..
এবং প্রাচ্যের ইলম ও প্রতীচ্যের বিজ্ঞানধারা,
আর পান করেছেন বড়ো তৃপ্তিভরে।
এভাবেই গড়ে উঠেছে তাঁর ব্যক্তিত্ব। জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও শিক্ষা-সংস্কৃতির ময়দানে পরিণত হয়েছেন তিনি বিশাল এক মহীরুহে― ছায়া ছড়িয়ে .. আলো বিলিয়ে! আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাওফীক-যোগে এ-বহুমুখী প্রতিভার বদৌলতেই একাধিক ভাষায় সুদক্ষ হয়ে উঠেছিলেন তিনি― আরবী, উর্দূ, ফারসি, হিন্দি ও ইংরেজি। আর এই বহুভাষা-সেঁতুর বন্ধনে ভারত-উপমহাদেশ ছাপিয়ে পরিচিত হতে পেরেছিলেন বিশ্ব সম্প্রদায়ের সুবিস্তৃত শিক্ষা ও সংস্কৃতির সাথে গভীরভাবে― আপন-আপন বলয়ে যে ভাষাগুলোর রয়েছে সুনির্দিষ্ট ওজন ও মূল্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতি।
কিন্তু শায়খ নদভী শুধু শিক্ষা ও জ্ঞান-গবেষণার ময়দানেই মহান ও অগ্রগামী ছিলেন না, তাঁর রক্তের কণায়-কণায় মিশে ছিলো সুকুমারবৃত্তি ও মহৎ গুণাবলী’র অসংখ্য উপাদান, যা তিনি উত্তরাধিকারসূত্রেই লাভ করেছিলেন তাঁর পূর্বপুরুষ রাসূলে আরাবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে, যিনি এসেছিলেন ‘মহান চরিত্র’কে ষোলকলায় পূর্ণতা দিতে .. যাঁর সম্পর্কে আম্মাজান আয়েশা রা. এর উক্তি হলো― ‘كان خلقه القرآن’ ‘তাঁর চরিত্র ছিলো― কুরআন।’
আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, শায়খ নদভীও ছিলেন― কুরআনী চরিত্রের, মুহাম্মদী আচরণের, হাসানী স্বভাবের এবং ইসলামী চিন্তা-চেতনার সূতীকাগার। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তার চিরঅনুগত ছিলো শায়খ নদভী’র সকল চাওয়া-পাওয়া ও আবেগ-অনুভূতি। এ মোটেই নয়― আমার মনগড়া উক্তি কিংবা অতিশয়োক্তি কিংবা তাঁকে ছোট করার কোনো প্রয়াস। এ আমার হৃদয়ের গভীর থেকে উচ্চারিত বিশুদ্ধ ধ্বনি। চির-অনুভবীয় সত্যের স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণ। আমি তাঁকে গভীরভাবে দেখেছি, চিনেছি ও বুঝেছি এবং এই দাবি নিয়েই বলছি― তিনি এমনই ছিলেন। এমনই ছিলো তাঁর স্বভাব-প্রকৃতি। আল-কুরআনের এই আয়াত যেনো ছিলো তাঁর জীবনের স্লোগান―
"قل إن صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العالمين، لاشريك له"
‘বলো, আমার নামাজ, আমার কোরবানী, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু― জগৎসমূহের প্রতিপালক লা-শরীক আল্লাহ্র জন্যে।’
-আন‘আম:১৬২-১৬৩
তিনি একজন ‘ইনসান’ (মানুষ) ছিলেন―
‘ইনসানিয়াত’ শব্দের সর্বব্যাপী অর্থ ও তাৎপর্যে।
তিনি একজন রাব্বানী ছিলেন―
‘রাব্বানিয়াত’ শব্দের নিগূঢ়তম অর্থ ও তাৎপর্যে।
তিনি ‘আখলাকী’ (চরিত্রবান) ছিলেন―
‘আখলাকিয়াত’ শব্দের সকল মানদণ্ডে।
তিনি একজন মুসলমান ছিলেন―
‘ইসলাম’ শব্দের পরিপূর্ণ অবয়বে।
من المصابيح الذين همو + كأنهم من نجوم حية صُنِعُوْا
أخلاقهم نورهم من أيِّ ناحية + أقبلت تنظر فـي اخلاقهم سطعوا
‘মানুষের ভিতরে আছে এমন সব আলোকবর্তিকা,
যাঁদেরকে দেখলে মনে হয় যেনো জীবন্ত নক্ষত্ররাজি থেকে নির্মিত সত্ত্বা।
তাঁদের চরিত্রই তাঁদের সামনে আলো ছড়ায়― সবদিক থেকে,
কাছে এসেই দেখো না তাঁদের চরিত্র! দেখবে সে কী দেদীপ্যমান!!
পানাহারে তাঁর কোনো আড়ম্বরতা ছিলো না।
পোশাক-আশাকে তাঁর কোনো লৌকিকতা ছিলো না।
চাল-চলন ও ওঠা-বসা অর্থাৎ তাঁর জীবন প্রবাহের কোনো বাঁকেই কোনো আড়ম্বরতা বা লৌকিকতা ছিলো না। তিনি ছিলেন নিজের মতো। আপন গতিপ্রবাহে প্রবহমান। আপন স্বভাবে গড়া, আপন মহিমায় ভাস্বর। তাঁর চোখের সামনে সর্বদা যেনো ভেসে বেড়াতো এই আয়াত―
"قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنْ الْمُتَكَلِّفِينَ"
‘(হে নবী!) বলে দিন, আমি এ কাজের জন্যে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইছি না। আমি তাদেরও কেউ নই― যারা লৌকিকতা করে।’
-সুয়াদ:৮৬
তাঁর জবান ছিলো সংযত, কলমও ছিলো সংযত। কোনোদিন কাউকে আঘাত করে কোনো কথা বলেন নি তিনি। কারো দোষ খুঁজে বেড়ানো ছিলো তাঁর কাছে ভীষণ অপছন্দ। এই প্রজ্ঞাপূর্ণ কথার তিনি ছিলেন জীবন্ত নমুনা―
‘طوبي لمن شغله عيبه عن عيوب الناس’
অর্থাৎ ‘পরের দোষ না খুঁজে নিজের দোষ যে খুঁজে বেড়ায় .. তাকে যে সাধুবাদ জানাতেই হয়!’
কিন্তু তাই বলে সত্য-বিকৃতি তিনি মোটেই বরদাশত করতেন না। যে কোনো সত্য-বিকৃতির কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনি। তাই আমরা দেখতে পাই; মাওলানা মওদূদী সাহেব যেমন তাঁর সমালোচনা থেকে রেহাই পান নি, তেমনি শহীদ সায়্যিদ কুতবও রেহাই পান নি এই সত্য-বিচ্যুতির কারণে― তাঁর কাছে তাঁদের মর্যাদা ও অবস্থান সত্ত্বেও। কিন্তু এই সমালোচনা এক ন্যায়নিষ্ঠ আলেমের সমালোচনা। হিংসা-বিদ্বেষ ও সীমালংঘনমুক্ত সু-ভারসাম্যপূর্ণ সমালোচনা। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই তিনি সমালোচনা করেছেন ব্যক্তির, দলের, দৃষ্টিভঙ্গির ও প্রশাসনের।
কিন্তু এই সমালোচনা―
তাঁর বিনয়-নম্রতায় প্লাবিত,
বন্ধুসুলভ স্নেহ-ভালোবাসায় সিক্ত,
বিশ্বস্ত কল্যাণকামী’র আন্তরিকতায় দীপ্ত।
নেই কাউকে ছোট করার হীন মানসিকতা,
নেই হিংসার বিহ্ন .. বিদ্বেষের আঁধার উদগীরণ।
তিনি দুনিয়ার প্রতি ছিলেন ভীষণ অনাসক্ত। পরকালই ছিলো তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য, সর্বশেষ চাওয়া-পাওয়া। আল্লাহ্র কাছে এক মর্দে মু’মিনের জন্যে অপেক্ষা করছে যে প্রাপ্তি ও পুরস্কার, তার জন্যেই তিনি ছিলেন সবচে’ বেশি লালায়িত। তা ছাড়া দুনিয়ার এই মানুষের কাছে কী-ইবা চাওয়ার আছে? দুনিয়ার কোনো পাওয়া কি মানুষকে দিতে পারে স্বস্তি, শান্তি ও তৃপ্তি? মানুষের কাছে যা-কিছু আছে তার সবই তো কুয়াশার মতো অপসৃয়মান! বুদ্বুদের মতো বিলীয়মান!! আর আল্লাহ্র কাছে যা আছে, তার কোনো ক্ষয় নেই .. লয় নেই।
স্বর্গীয় জ্যোতিস্নাত এ-চিন্তামানসই তাঁকে আজীবন ‘দুনিয়া-অনুরাগ’-এর মোহনীয় ইন্দ্রজাল থেকে দূরে .. বহুদূরে সরিয়ে রেখে ‘আখেরাত-অনুরাগ’-এর চিরপ্রেমিক বাসিন্দা বানিয়েছিলো। এক মুহূর্তের জন্যে সম্পদের মায়ায় তিনি তাড়িত হন নি। যশ-খ্যাতিও তার কাছে কোনো সাড়া পায় নি! এ সব থেকে তিনি ছিলেন অনেক বড়― শুধু ঈমানের দৌলতের মহা অধিকার বলে, শুধু ইয়াকিনের অপার শক্তি বলে!
পোশাক-আশাকে তাঁর কোনো লৌকিকতা ছিলো না।
চাল-চলন ও ওঠা-বসা অর্থাৎ তাঁর জীবন প্রবাহের কোনো বাঁকেই কোনো আড়ম্বরতা বা লৌকিকতা ছিলো না। তিনি ছিলেন নিজের মতো। আপন গতিপ্রবাহে প্রবহমান। আপন স্বভাবে গড়া, আপন মহিমায় ভাস্বর। তাঁর চোখের সামনে সর্বদা যেনো ভেসে বেড়াতো এই আয়াত―
"قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنَا مِنْ الْمُتَكَلِّفِينَ"
‘(হে নবী!) বলে দিন, আমি এ কাজের জন্যে তোমাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চাইছি না। আমি তাদেরও কেউ নই― যারা লৌকিকতা করে।’
-সুয়াদ:৮৬
তাঁর জবান ছিলো সংযত, কলমও ছিলো সংযত। কোনোদিন কাউকে আঘাত করে কোনো কথা বলেন নি তিনি। কারো দোষ খুঁজে বেড়ানো ছিলো তাঁর কাছে ভীষণ অপছন্দ। এই প্রজ্ঞাপূর্ণ কথার তিনি ছিলেন জীবন্ত নমুনা―
‘طوبي لمن شغله عيبه عن عيوب الناس’
অর্থাৎ ‘পরের দোষ না খুঁজে নিজের দোষ যে খুঁজে বেড়ায় .. তাকে যে সাধুবাদ জানাতেই হয়!’
কিন্তু তাই বলে সত্য-বিকৃতি তিনি মোটেই বরদাশত করতেন না। যে কোনো সত্য-বিকৃতির কঠোর সমালোচক ছিলেন তিনি। তাই আমরা দেখতে পাই; মাওলানা মওদূদী সাহেব যেমন তাঁর সমালোচনা থেকে রেহাই পান নি, তেমনি শহীদ সায়্যিদ কুতবও রেহাই পান নি এই সত্য-বিচ্যুতির কারণে― তাঁর কাছে তাঁদের মর্যাদা ও অবস্থান সত্ত্বেও। কিন্তু এই সমালোচনা এক ন্যায়নিষ্ঠ আলেমের সমালোচনা। হিংসা-বিদ্বেষ ও সীমালংঘনমুক্ত সু-ভারসাম্যপূর্ণ সমালোচনা। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই তিনি সমালোচনা করেছেন ব্যক্তির, দলের, দৃষ্টিভঙ্গির ও প্রশাসনের।
কিন্তু এই সমালোচনা―
তাঁর বিনয়-নম্রতায় প্লাবিত,
বন্ধুসুলভ স্নেহ-ভালোবাসায় সিক্ত,
বিশ্বস্ত কল্যাণকামী’র আন্তরিকতায় দীপ্ত।
নেই কাউকে ছোট করার হীন মানসিকতা,
নেই হিংসার বিহ্ন .. বিদ্বেষের আঁধার উদগীরণ।
তিনি দুনিয়ার প্রতি ছিলেন ভীষণ অনাসক্ত। পরকালই ছিলো তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য, সর্বশেষ চাওয়া-পাওয়া। আল্লাহ্র কাছে এক মর্দে মু’মিনের জন্যে অপেক্ষা করছে যে প্রাপ্তি ও পুরস্কার, তার জন্যেই তিনি ছিলেন সবচে’ বেশি লালায়িত। তা ছাড়া দুনিয়ার এই মানুষের কাছে কী-ইবা চাওয়ার আছে? দুনিয়ার কোনো পাওয়া কি মানুষকে দিতে পারে স্বস্তি, শান্তি ও তৃপ্তি? মানুষের কাছে যা-কিছু আছে তার সবই তো কুয়াশার মতো অপসৃয়মান! বুদ্বুদের মতো বিলীয়মান!! আর আল্লাহ্র কাছে যা আছে, তার কোনো ক্ষয় নেই .. লয় নেই।
স্বর্গীয় জ্যোতিস্নাত এ-চিন্তামানসই তাঁকে আজীবন ‘দুনিয়া-অনুরাগ’-এর মোহনীয় ইন্দ্রজাল থেকে দূরে .. বহুদূরে সরিয়ে রেখে ‘আখেরাত-অনুরাগ’-এর চিরপ্রেমিক বাসিন্দা বানিয়েছিলো। এক মুহূর্তের জন্যে সম্পদের মায়ায় তিনি তাড়িত হন নি। যশ-খ্যাতিও তার কাছে কোনো সাড়া পায় নি! এ সব থেকে তিনি ছিলেন অনেক বড়― শুধু ঈমানের দৌলতের মহা অধিকার বলে, শুধু ইয়াকিনের অপার শক্তি বলে!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন