ড. মুহাম্মদ আল-আরিফি। আরব বিশ্বের খ্যাতিমান লেখক ও অনলবর্ষী বক্তাদের অন্যতম। বক্তৃতা ও লেখালেখির মাধ্যমে তিনি আরব-অনারব সর্বত্র সাড়া ফেলে দিয়েছেন। একজন দাঈ হিসেবেও ইতোমধ্যে তিনি মধ্যপ্রাচ্য ও পাশ্চাত্য দুনিয়ায় খ্যাতিলাভ করেছেন।
তাঁর পুরো নাম মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান বিন মিলহি বিন মুহাম্মদ আল-আরিফি। জন্ম ১৯৭০ সালের ১৬ জুলাই। বংশ পরিচয়ে সৌদি আরবের এ প্রখ্যাত আলেম ইসলামের বিখ্যাত সেনাপতি হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ রা.-এর উত্তরসুরী। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন দাম্মামে। রিয়াদের ইমাম মুহাম্মদ বিন সঊদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ইসলামের মৌলিক নীতিমালা ও বিভিন্ন ধর্মের তুলনামূলক বিশ্লেষণ' বিষয়ে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে ১৯৯৬ সালে মাস্টার্স ও ২০০১ সালে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকগণ হলেন, সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ বিন বাজ রহ. (শাইখ বিন বাজ রহ.-এর ছোহবতে তিনি প্রায় পনের/ষোল বছর থাকার সৌভাগ্য লাভ করেন), বিখ্যাত হাদিস বিশারদ শাইখ মুহাম্মদ বিন ইসমাইল, শাইখ আবদুল্লাহ বিন কুউদ, শাইখ আবদুর রহমান বিন নাসের আল-বাররাক প্রমুখ।
ড আরিফি একজন সুসাহিত্যিক। তাঁর লিখিত গ্রন্থাবলী আরব বিশ্বে সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে অন্যতম। আরবি ভাষায় ইতোমধ্যে তাঁর বিশটিরও অধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর এক একটি গ্রন্থের বিক্রয়-সংখ্যা শুনলে অবাক হতে হয়। এখানে তাঁর কয়েকটি গ্রন্থ বিক্রয়-সংখ্যাসহ উল্লেখ করছি। তাঁর সবচে বিখ্যাত গ্রন্থ ইস্তামতি বিহায়াতিকা (Enjoy Your Life, সুখময় জীবনের সন্ধানে) [বিক্রয়-সংখ্যা ৩০লক্ষ, ১১টি ভাষায় অনুদিত], নেহায়াতুল আলম (End Of The World, মহাপ্রলয়- হুদহুদ প্রকাশনী) [বিক্রয়-সংখ্যা ৩ লক্ষ, ৬টি ভাষায় অনুদিত], ইন্নাহা মালিকা (তুমি সেই রাণী, অনুবাদ- ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী) [বিক্রয়-সংখ্যা ১৫ লক্ষ], ইরকাব মা'আনা [বিক্রয়-সংখ্যা ৪০ লক্ষ], ফি বতনিল হুত [বিক্রয়-সংখ্যা ১৫ লক্ষ]।
সুসাহিত্যক ড. আরিফি একজন সুবক্তাও। তাঁর বক্তব্য থেকে আগুন ঝরে। সততা ও সত্যোচ্চারণে তিনি সদা নির্ভীক। বাতিলের রক্তচক্ষু দমাতে পারে নি তাঁর বিদ্রোহী, অবিচল সত্তা ও বজ্রকঠিন কণ্ঠস্বর। সাহসী ও সত্যনিষ্ঠ ভূমিকা এবং দৃঢ় ও আপসহীন মনোভাবের কারণে ইউরোপের কিছু কিছু দেশ তাঁর ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে এবং কয়েকটি দেশ তাঁর প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে। সৌদি সরকারের রোষানলে পড়েও তাঁকে কারাভোগ করতে হয়েছে।
তাঁর বক্তৃতার বিপুল পরিমাণ অডিও-ভিডিও সিডি রয়েছে। ইউটিউবে তাঁর এসব বক্তৃতা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হচ্ছে। ইংরেজি ভাষায় তাঁর অসংখ্য বক্তৃতার অনুবাদ হয়েছে এবং অন্যান্য ভাষায়ও অনুবাদ হয়ে তা ইউটিউবের কল্যাণে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, টেলিভিশন সর্বত্র তাঁর সরব পদচারণা।
ড. আরিফি জীবনের মূল কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছেন 'দাওয়াত ইলাল্লাহ'কে। এই লক্ষে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বক্তৃতা করে থাকেন। তাঁর দাওয়াতে বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করছে।
মাত্র পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সী আরব-অনারবে সাড়া জাগানো এই বিজ্ঞ আলেম অসংখ্য দাওয়াতি সংস্থার সদস্য, বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার উপদেষ্টা এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি 'রাবেতা আলমে ইসলামি' ও 'বিশ্ব মুসলিম ওলামা ঐক্য পরিষদে'র অন্যতম সদস্য।
১৯৯৩ সালে তিনি কিং সঊদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কমিটির সদস্যপদ লাভ করেন। বর্তমানে তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি রিয়াদের 'আল-বাওয়ারদি' জামে মসজিদের খতিব হিসেবে কর্মরত আছেন। শুক্রবার জুমার খুতবায় তাঁর এই মসজিদে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না।
ড মুহাম্মদ আল-আরিফি একাধারে সুসাহিত্যিক, বিজ্ঞ আলেম, অনলবর্ষী বক্তা ও দরদী দাঈ। আমরা এই মহান ব্যক্তির দীর্ঘ নেক হায়াত কামনা করছি। আল্লাহ কবুল করুন। আমিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন