জনৈক রেজভী বললেন, নূরে মুহাম্মদী হতে সব কিছু সৃষ্টি করার মানে হল, সব কিছুর রূহ সমূহ সৃষ্টি করা উদ্দেশ্য।
আমার জিজ্ঞাসা, আসলে ওরা হচ্ছে জাহেলে মুরাক্কাব। ওদের যতই বুঝাতে চাই, ওদের মগজ তা লোড নিতে পারেনা। কারণ, ওদের মগজ পূর্ব থেকেই বিলাতী-সুন্নি-গুরু রেজাখাঁর এশকের চেতনায় বাক্সবন্দি হয়ে আছে। বোধ হয় সেজন্যই ওদের পক্ষে সুস্পষ্ট নসের ভেতর অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়া কিংবা চর্বিত চর্বণ করাই শেষরক্ষা কবচ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উনি যে জবাব দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ মনগড়া একটি কথা। এমন কথা না হাদিসে রয়েছে, না কোনো বিজ্ঞ হাদিস বিশারদদের কোনো কিতাবে রয়েছে! উপরন্তু এ রকম কথা তাদেরই কথিত উদ্ধারকৃত “আল-ঝুযউল মাফকূদ” পুস্তকের নীতি-বিরুদ্ধ কথা।
“আল-ঝুযউল মাফকূদ” পুস্তকের (পৃষ্ঠা নং ৫২) মধ্যে দেখুন। সেখানে একটি রেওয়ায়েত এনেছেন এবং সেটিকে তারা বিশুদ্ধ বলে দাবিও করেন। রেওয়ায়েতটি র একস্থানে রয়েছে ” আল্লাহ তায়ালা (নবীজির) নূরের প্রতি তাকালেন। ফলে সে নূর লজ্জাবনত হয়ে ঘর্মাক্ত হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা সেই নূরের মস্তকের ঘাম হতে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করলেন। … তিনি (উক্ত নূরের) বক্ষদেশের ঘাম হতে নবী রাসূল উলামা শুহাদা ও সালেহীনদের সৃষ্টি করেছেন।” (নাউযুবিল্লাহ) ।
↓↓
কিতাবের ভাষ্য, والله تعالي نظر الي ذالك النور فعرق حياء من الله تعالي، فمن عرق رأسه خلق الملائكة…..ومن عرق صدره خلق الانبياء والرسل والعلماء والشهداء والصالحين.
পর্যালোচনা: সচেতন পাঠকবৃন্দ, আপনারা অবশ্য খেয়াল করবেন যে, তাদের কুড়ে পাওয়া (যেটি আহলে হক্বের দৃষ্টিতে গ্রহনযোগ্য নয়) কথিত উদ্ধারকৃত “আল-ঝুযউল মাফকূদ” পুস্তকে আরো রয়েছে যে, “আল্লাহ তায়ালা সেই নূরের মস্তকের ঘাম হতে ফেরেশতাদের সৃষ্টি করলেন।”
অথচ মুসলিম বলতে সবাই একথা বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ তায়ালা নূর দ্বারা ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কুরআন আর সিহাহ সিত্তার প্রায় সব হাদিস গ্রন্থে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
“আল-ঝুযউল মাফকূদ” পুস্তকে আরো রয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা “ওই নূরের বক্ষদেশের ঘাম হতে নবী রাসূল উলামা শুহাদা ও সালেহীনদের সৃষ্টি করেছেন।” অথচ মুসলিম বলতেই সবাই একথাও বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ তায়ালা আদি পিতা হযরত আদম (আ) এবং তাঁর সকল সন্তান সন্ততিদের মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন। পবিত্র কুরআন আর সিহাহ সিত্তার প্রায় সব হাদিস গ্রন্থে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
এমতাবস্থায় তাদের কথিত উদ্ধারকৃত “আল-ঝুযউল মাফকূদ” পুস্তকের রেওয়ায়েতটি চরম মিথ্যা আর জাল নয় কি? যে সব রেওয়ায়েত দ্বারা এরকম গর্হিত আকিদা বিশ্বাসের গোড়াপত্তন হয়েছে তা বিশ্ব বিখ্যাত হাদিসগ্রন্থ “মুসান্নাফ আব্দ রাজ্জাক” কিতাবে থাকার দাবি ডাহামিথ্যে বৈ আর কি হতে পারে!!
যাইহোক, একই রেওয়ায়েতের কয়েক লাইন পরে আবার লেখা আছে “অতপর আল্লাহ তায়ালা নূরে মুহাম্মদী হতে নবীদের (আলাইহিমুস সালাম) নূর সৃষ্টি করেছেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা ওই নূরের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন অতপর নবীদের (আলাইহিমুস সালাম) রূহগুলো সৃষ্টি করলেন। রূহগুলো পড়লো, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ… অতপর তিনি দুনিয়াতে মুহাম্মদ (সা)-এর আকৃতি স্বীয় আকৃতিসদৃশ (এর সঠিক মর্মার্থ একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন) সৃষ্টি করলেন”
↓
কিতাবের ভাষ্য ,ثم خلق نور الانبياء من نور محمد صلي الله عليه وسلم ثم نظر الي
ذالك النور فخلق أرواحهم فقالوا لا اله الا الله محمد رسول الله… ثم خلق صورة محمد صلي الله عليه وسلم كصورته في الدنيا .
এবার সামগ্রিক ভাবে যে প্রশ্নটি রেজভী বিলাতি সুন্নীদের নিকট করতে চাচ্ছি, তা হল— যদি নূরে মুহাম্মদী হতে সবকিছুর রূহই সৃষ্টি করার কথা বুঝানো হয়ে থাকে, তাহলে একই রেওয়ায়েতের পরবর্তী অংশে দ্বিতীয় বারে আলাদা করে “অতপর নবীদের (আলাইহিমুস সালাম) রূহগুলো সৃষ্টি করলেন।” মর্মে কথাটির মানে কী? নাকি পরবর্তী অংশে দ্বিতীয় বারে এ কথাটি বাতিল বা অর্থহীন?
↓↓
আরো একটি কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, মুহাম্মদ (সা)-এর শরীর মুবারক পূর্বে বিদ্যমান ছিল না, বরং দুনিয়ার জীবনেই সৃষ্টি হয়েছিল। যেমন, আল-ঝুযউল মাফকূদ” পুস্তকে (পৃষ্ঠা নং ৫২) আরো রয়েছে যে, ثم خلق صورة محمد صلي الله عليه وسلم كصورته في الدنيا.
অনুবাদ “অতপর তিনি দুনিয়াতে মুহাম্মদ (সা)-এর আকৃতি স্বীয় আকৃতিসদৃশ সৃষ্টি করলেন”
এর দ্বারা কি স্পষ্ট হয়ে গেল না যে, মুহাম্মদ (সা)-এর শরীর মুবারক পূর্বে বিদ্যমান ছিল না, বরং দুনিয়ার জীবনেই সৃষ্টি হয়েছিল। কাজেই হাদিসে জাবেরে উদ্ধৃত “নূর” হতে রূহ উদ্দেশ্য নেয়া ছাড়া দ্বিতীয় যে কোনো ব্যাখ্যাই সামগ্রিক ভাবে আল-ঝুযউল মাফকূদ” পুস্তকের (পৃষ্ঠা নং ৫২)-ও সুস্পষ্ট নীতি বিরুদ্ধ। নচেৎ টেনেটুনে যেদিকেই নেবেন না কেন, রেওয়ায়েতটির অসংগতি পিছু ছাড়বে না।
কাজেই রেজভিদের কথিত ব্যাখ্যা “নূরে মুহাম্মদী হতে সব কিছু সৃষ্টি করার মানে হল, সব কিছুর রূহ সমূহ সৃষ্টি করা উদ্দেশ্য” এটি তাদেরই কথিত “আল-ঝুযউল মাফকূদ” পুস্তকের নীতি-বিরুদ্ধ কথা বলেই প্রমাণিত হল। যদি সাধ্য থাকে, তাহলে আমি যে লজিক্যাল কুইয়েশ্চনটি করেছি তার চর্বিত চর্বণ না করে সদুত্তর দিন, নচেৎ বকধার্মিক রেজাখা’র বাক্সবন্দি এশকের “মধুর বোতলে বিষমাখা আকিদার” প্রচারণা থেকে নিজে বিরত থাকুন, উম্মাতের ঈমান ধ্বংস করার খেল তামাশাও বন্ধ করুন।
লেখক, প্রিন্সিপাল
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন