নবীকরীম (সা)-এর দেহ বা আকৃতি দুনিয়ায় সৃষ্ট হওয়ার তাত্ত্বিক প্রমাণ!
(বিদয়াতি রেজাখানী ওরফে বিলাতী সুন্নীদের অপব্যাখ্যার লজ্জাজনক খণ্ডন পড়ুন-)
গত কিছু দিন আগের কথা। রেজাখানী ওরফে বিলাতী সুন্নীরা অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে নসের খেলাফ বিশ্বনবী (সা)-এর শরীরকে নূরের সৃষ্ট বলেছিল।
বিলাতী সুন্নিদের গুরু আহমদ রেজাখানের শেখানো অজিফার বিপরীতে পবিত্র কুরআনের আয়াতও ওদের নিকট যেন অর্থহীন। এর সবই বিলাতি সুন্নীদের বহুত বড় এশকের চেতনা, তাই না!
আজ সেই এশকের ফেরিওয়ালা বিলাতি সুন্নীদেরই স্বপ্নে কুড়ে পাওয়া কথিত “আল-ঝুযউল মাফকূদ” পুস্তক হতেই তাদের রেজভী আকিদার অসারতা প্রমাণ করব, ইনশাআল্লাহ।
আপনারা জানবেন যে, বিলাতি সুন্নীদের স্বপ্নে কুড়ে পাওয়া “আল-ঝুযউল মাফকূদ” পুস্তকে (পৃষ্ঠা নং ৫২) খুবই সুস্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে যে, ثم خلق صورة محمد صلي الله عليه وسلم كصورته في الدنيا.
অনুবাদ,… “অতপর তিনি দুনিয়াতে মুহাম্মদ (সা)-এর আকৃতি স্বীয় আকৃতিসদৃশ সৃষ্টি করলেন” এর দ্বারা কি স্পষ্ট হয়ে গেল না যে, মুহাম্মদ (সা)-এর শরীর মুবারক পূর্বে বিদ্যমান ছিল না, বরং দুনিয়ার জীবনেই সৃষ্টি হয়েছিল। সুতরাং তিনি দুনিয়ায় যে সুরতে তাশরীফ এনেছিলেন-সেটি নূরের সৃষ্ট নয়, বরং মদিনার (রওজাপাকের) মাটিরই সৃষ্ট ।
আমরা বিশ্বাস করি যে, বিশ্বনবী (সা)-এর শান ও মর্যাদা বহুত উর্ধ্বে। আল্লাহতা’য়ার পরেই তাঁর অবস্থান। তিনি সৃষ্ট আর আল্লাহতালা হলেন স্রষ্টা।
মূলকথায় চলে আসলাম-
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! মনে করুন, আপনি কাউকে বললেন ‘আমার কলমটি সুন্দর’। এ ক্ষেত্রে আপনি এবং আপনার কলম এ দুটি জিনিস কি এক, নাকি ভিন্ন ভিন্ন?
অবশ্য বলতে হবে যে, আপনি আর আপনার কলম—এ দুটি ভিন্ন ভিন্ন জিনিস, তাই না। কেননা মুযাফটি সর্বদা মুযাফ-ইলাইহি’র মুতাগায়ের (বিভিন্ন) হয়ে থাকে, এটাই নাহুশাস্ত্রের অন্যতম একটি নীতিমালা। সে হিসেবে প্রচলিত হাদিসে জাবের (রা)-এর ভাষ্য মতে ” আল্লাহ তায়ালা “আমার নূর” সৃষ্টি করেছেন—এখানে উল্লিখিত “নূর” শব্দটি দ্বারা আপনি কী মর্মার্থ নেবেন? উপরের উদাহরণটিতে আরেকটু ফিরে যান, জ্ঞানটা খাটুন। বন্ধুরা, কষ্ট হলে থাক, আমি নিজেই তা সলিউশন করে দেব। আরেকটু সামনে চলুন। তবে তার আগে নিচের কথাটি বুঝার চেষ্টা করুন।
↓↓
হে জাবের! আল্লাহতা’লা সর্বপ্রথম তাঁর নূর হতে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন—এখানে ওই “নূর” শব্দটি তাঁর ( আল্লাহতা’লা) সাথেই সম্বন্ধযুক্ত (’মোযাফ ইলাইহি’); আর ’মিন নূরিহী’ (তাঁর নূর হতে) বাক্যটিতে ’মিন’ (’হতে’) শব্দটি হলো ’লিল বয়ান’ তথা ব্যাখ্যামূলক।
ব্যাকরণবিদরা যেভাবে নিরূপণ করেন, সেভাবে ‘মিন’ শব্দটিকে ব্যাখ্যা করে মহানবী (সা) যেন বলতে চেয়েছেন, হে জাবের! আল্লাহতা’লা সর্বপ্রথম তাঁর নূর হতে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন—মানে আল্লাহ তায়ালা’র সৃষ্ট রূহ সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম তোমার নবী’র রূহ মোবারক সৃষ্টি করেছেন।’ এ ব্যাখ্যাটির প্রমাণ একটু পরেই দেব, ইনশাল্লাহ।
আমাদের সাইয়্যেদ (সরকার) মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)-এর নূর সকল নূরের উৎস—মানে সকল সৃষ্টিকূলের রূহ সমূহ সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে নবীকরীম (সা)-এর রূহ মোবারক সৃষ্টি হয়েছিল (সুবহানাল্লাহু)।
আল্লামা জুরকানী (রহঃ) তিনি নিজের লেখাতেই (জুরকানী শরহে মাওয়াহেব-৯০) বিষয়টি এ ভাবে স্পষ্ট করে দিলেন যে, ﺍﺿﺎﻓﺔ ﺗﺸﺮﻳﻒ ﻭ ﺍﺷﻌﺎﺭ নূর শব্দটিকে আল্লাহ তায়ালার প্রতি নিসবত করা হয়েছে শুধু কেবল সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশার্থে।
এ রকম নেসবত করার অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন, বাইতুল্লাহ (আল্লাহর ঘর), ছাইফুল্লাহ (আল্লাহর তরবারী), রূহুল্লাহ (আল্লাহর রূহ)।
এখানে যথাক্রমে ঘর, তরবারী আর রূহের নেসবত আল্লাহ তায়ালার দিকে শুধু মাত্র সম্মান আর মর্যাদা প্রকাশের উদ্দেশ্যে।
অন্যথা হযরত ঈসা (আঃ) এর উপাধি হল রূহুল্লাহ (আল্লাহর রূহ)। তো কী ব্যাখ্যা দেবেন? উনাকে আল্লাহর রূহের তৈরি বলবেন? খ্রিষ্টান জাতির মত রেজভিরাও কি হযরত ঈসা (আঃ)- কে আল্লাহর পরমাত্মা বা জাতের অংশ বলা শুরু করে দেবেন?? নাউযুবিল্লাহ। কাজেই ওখানে যে ব্যাখ্যা রয়েছে ঠিক “তিনি তাঁর নূর হতে” এ কথাটিরও ব্যাখ্যা রয়েছে। আর ব্যাখ্যা রয়েছে বলেই তাঁকে আল্লাহ তালার নুরের সৃষ্ট বলা যাবেনা।
একটি অপ্রিয় সত্য কথা হল, ডজনখানেক বিজ্ঞ হাদিস বিশারদদের মতে হাদিসে জাবের (রা) জাল এবং অনির্ভরযোগ্য সনদ দ্বারা বর্ণিত। এতদ্ব্যতীত কিছু সংখ্যক মুহাদ্দিস এমন ছিল যারা এটি সম্পর্কে নেতিবাচক কোনো মন্তব্য না করেই বরং ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের পিছু নিয়েছেন। যাদের ভেতর আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) অন্যতম। তিনি উল্লিখিত নূরে মুহাম্মদী হতে “রূহে মুহাম্মদী” বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
আজ আমি ওই দিকে যাচ্ছি না। আমি তাদের কিছু অপব্যাখ্যার জারিজুরি তাদেরই স্বপ্নে পাওয়া কথিত “মাফকূদ” নামক আবিস্কৃত পুস্তক হতে দেখিয়ে দেব যে, তাদের প্রায় মস্তিষ্কপ্রসূত ব্যাখ্যার নামে অপব্যাখ্যা কথিত “মাফকূদ” নামক আবিস্কৃত পুস্তকেরই বিরুদ্ধে গেল কিনা?
তাদের কথিত “মাফকূদ” নামক আবিস্কৃত পুস্তকের ৫২ নং পৃষ্ঠায় মুসান্নাফ আব্দ রাজ্জাক কিতাবের নাম ভেংগে তারা একটি রেওয়ায়েত এনেছে। রেওয়ায়েতটির শুরুতে রয়েছে —
عن السائب ابن يزيد قال: ان الله تعالي خلق شجرة ولها أربعة اغصان فسماها شجرة اليقين. ثم خلق نور محمد صلعم.
অনুবাদ, আল্লাহ তায়ালা একটি বৃক্ষ সৃষ্টি করলেন যার চারটি ডাল রয়েছে। অতপর বৃক্ষটির নাম রাখলেন “শাজারাতুল এক্বীন”। অতপর (আল্লাহ তায়ালা) নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি করলেন। [দেখুন- “মাফকূদ” নামক আবিস্কৃত পুস্তকের ৫২ নং পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য ]।
উপরের রেওয়ায়েতটির দিকে ভাল ভাবে খেয়াল করুন। সেখানে সৃষ্টির ধারাবাহিতা অনুসারে বুঝা যাচ্ছে যে, নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে “শাজারাতুল এক্বীন” নামক বৃক্ষই সৃষ্টি হয়েছিল, তাই নয় কি?
এবার বুঝে থাকলে বুলুন, তারা এসব রেওয়ায়েত দ্বারা আসলে কি নূরে মুহাম্মদী সর্বপ্রথম সৃষ্টি হওয়া প্রমাণ করল, নাকি শাজারাতুল এক্বীন” নামক বৃক্ষই সর্বপ্রথম সৃষ্টি হওয়াই প্রমাণ করতে চলল? তাদের নিকট এর সঠিক কোনো জবাব নেই। তারা ধেনাই পেনাই করে এ অসম্ভব দ্বৈতনীতি থেকে উত্তরণের জন্য পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত দ্বারা হাস্যকর অপব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়।
আমি তাদের সেই অপব্যাখ্যার স্বরূপ আপনাদের সামনে তুলে ধরব। অতপর তার দাঁতভাঙা জবাব দেব।
জনৈক রেজভি সাহেব উপরুল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে যে সব চর্বিত চর্বণ করেছে তা পড়লে বুঝা যায় যে তাদের নিকট কুরআন হাদিসের কোনো দলিল নেই।
আমাদের প্রশ্নের জবাবে তার দেয়া উত্তরটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য, বানোয়াট ও বালকসুলভ এবং হাস্যকর। কারণ, আল-কুরআনে , নবীজীই প্রথম মুসলিম (সূরা আনয়াম: ১৬৪)-একথা যেমন রয়েছে তেমনি হযরত মূসা (আ) প্রথম মুমিন—এ কথারও উল্লেখ রয়েছে।
পবিত্র কুরআনে হযরত মূসা (আ)-কে সর্বপ্রথম বিশ্বাস স্থাপনকারী তথা মুমিন বলে উল্লেখ রয়েছে। যেমন, কুরআনের ভাষায় – “(মূসা বললেন) হে প্রভু! তোমার সত্তা পবিত্র, তোমার দরবারে আমি তওবা করছি এবং আমিই সর্বপ্রথম বিশ্বাস স্থাপনকারী তথা মুমিন।” (সূরা আ’রাফ ১৪৩)।
তো এবার তাদেরই বানোয়াট নীতিগত পন্থায় হযরত মূসা (আ)-ও সৃষ্টির সূচনা হয়ে যাচ্ছেন, তাই নয় কি? নচেৎ আহলে বিদয়াত রেজভিদের এ সব অপব্যাখ্যা উদ্দেশ্যমূলক ছাড়া আর কি?
কাজেই তার দেয়া উত্তরটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য, বানোয়াট ও বালকসুলভ এবং হাস্যকর বৈ আর কি!
(তারপর তিনি লিখেছেন,) (৪) নং হাদীছটির [হাদিসে জাবের] বক্তব্যই আল-কুরআনের অনুকূল।]
আমার জবাব,
প্রথমত (৪) নং হাদীছটিকে [হাদিসে জাবের] আমরা ইতিপূর্বে জাল ও অগ্রহণযোগ্য সনদ দ্বারা বর্ণিত বলে প্রমাণ করেছি।
দ্বিতীয়ত, তার উত্তর উপরে আবার দেখে নিন।
তৃতীয়ত, আপনাদের কুড়ে পাওয়া গতকালের আবিস্কৃত “আল-ঝুযউল মাফকূদ” নামক পুস্তকটি আমাদের নিকট দু পয়সারও মূল্য নেই। কারণ এটি পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত রেজভী ঘরানার মৌলভি আব্দুল হাকিম শরফ আল-কাদেরী কর্তৃক রচিত। যেখানে তিনি এমন সব রেওয়ায়েত একত্রিত করেছেন যার সিংহভাগ জাল, অত্যন্ত দুর্বল ও অগ্রহণযোগ্য সনদ দ্বারা বর্ণিত।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রেজভী ঘরানার মৌলভি আব্দুল হাকিম শরফ আল-কাদেরী সাহেব তিনি তার আবিস্কৃত “আল-ঝুযউল মাফকূদ” নামক পুস্তকের রেওয়ায়েতগুলোকে “মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক” কিতাবের দিকে নেসবত করার মত চরম ধৃষ্টতাও দেখিয়েছেন। যা শুধু ডাহা মিথ্যেই নয়, বরং শতাব্দীর জঘন্যতম অপকীর্তির এক কালো অধ্যায়ও বটে। বিস্তারিত আমার ওয়েব সাইটে।
কাজেই রেজভী ঘরানার মৌলভি আব্দুল হাকিম শরফ আল-কাদেরী সাহেব কর্তৃক আবিস্কৃত (প্রথম প্রকাশ ২০০৫ সাল) “আল-ঝুযউল মাফকূদ” নামক পুস্তক হতে যে রেওয়ায়েত উল্লেখ করা হবে সেটি মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক কিতাবের রেফারেন্স দিয়ে না হলে আমাদের নিকট ০.০১ পার্সেন্টও গ্রহনযোগ্য হবেনা।
(তিনি আরেকটি ঊহ্য প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন
প্রশ্ন, নূরে মুহাম্মাদী বলতে কী তাঁর রূহ, নাকি দেহ, নাকি উভয়ই বোঝায়? মোল্লা আলী আল- ক্বারী নাকি বলেছেন যে, নূরে মুহাম্মাদী মানে, রূহে মুহাম্মাদী। তাহলে, তাঁর দেহ কীসের সৃষ্টি? নূরে মুহাম্মাদীর কোনো হাকীকী সুরত থাকলে, দুনিয়ায় তিনি যে (বশরী বা মানবীয়) সুরতে তাশরীফ এনেছিলেন-তা কীসের সৃষ্টি?
[তিনি নিজেই প্রতি উত্তরে লিখেছেন] উত্তর: (সংক্ষিপ্ত) নূরে মুহাম্মাদী বলতে তাঁর রূহ ও শরীর মুবারক উভয়ই তথা তাঁর গোটা সত্তাই বোঝায়। কাজেই, তাঁর দেহ মুবারকও নূরের সৃষ্টি। আর তাঁর হাকীকী সুরত হচ্ছে, ময়ূরের মতো এবং তিনি দুনিয়ায় যে সুরতে তাশরীফ এনেছিলেন-তাও নূরের সৃষ্টি।”
আমার জবাব:
১- আপনার উপরিউক্ত জবাবের ভিত্তিমূল যদি রেজভী ঘরানার মৌলভি আব্দুল হাকিম শরফ আল-কাদেরী সাহেব কর্তৃক আবিস্কৃত (প্রথম প্রকাশ ২০০৫ সাল) “আল-ঝুযউল মাফকূদ” নামক পুস্তকই হয়ে থাকে তাহলে এটা গ্রহনযোগ্য হবেনা। কারণ আগেই বলেছি যে, পুস্তকটি আমাদের নিকট দু পয়সারও মূল্য নেই।
দ্বিতীয়ত, একই রেওয়ায়েতের কয়েক লাইন পরে আবার লেখা আছে “অতপর আল্লাহ তায়ালা নূরে মুহাম্মদী হতে নবীদের (আলাইহিমুস সালাম) নূর সৃষ্টি করেছেন। এরপর আল্লাহ তায়ালা ওই নূরের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করলেন অতপর নবীদের (আলাইহিমুস সালাম) রূহগুলো সৃষ্টি করলেন। রূহগুলো পড়লো, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ… অতপর তিনি দুনিয়াতে মুহাম্মদ (সা)-এর আকৃতি স্বীয় আকৃতিসদৃশ (এর সঠিক মর্মার্থ একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন) সৃষ্টি করলেন” কিতাবের ভাষ্য ,ثم خلق نور الانبياء من نور محمد صلي الله عليه وسلم ثم نظر الي ذالك النور فخلق أرواحهم فقالوا لا اله الا الله محمد رسول الله… ثم خلق صورة محمد صلي الله عليه وسلم كصورته ﻓﻲ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ .
এবার সামগ্রিক ভাবে যে প্রশ্নটি রেজভী বিলাতি সুন্নীদের নিকট করতে চাচ্ছি, তা হল— যদি নূরে মুহাম্মদী হতে সবকিছুর রূহই সৃষ্টি করার কথা বুঝানো হয়ে থাকে, তাহলে একই রেওয়ায়েতের পরবর্তী অংশে দ্বিতীয় বারে আলাদা করে “অতপর নবীদের (আলাইহিমুস সালাম) রূহগুলো সৃষ্টি করলেন।” মর্মে কথাটির মানে কী? নাকি পরবর্তী অংশে দ্বিতীয় বারে এ কথাটি বাতিল বা অর্থহীন?
এখানে আরো একটি কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, যেমন, আল-ঝুযউল মাফকূদ” পুস্তকে (পৃষ্ঠা নং ৫২) আরো রয়েছে যে, ثم خلق صورة محمد صلي الله عليه وسلم كصورته في الدنيا.
অনুবাদ,… “অতপর তিনি দুনিয়াতে মুহাম্মদ (সা)-এর আকৃতি স্বীয় আকৃতিসদৃশ সৃষ্টি করলেন” এর দ্বারা কি স্পষ্ট হয়ে গেল না যে, মুহাম্মদ (সা)-এর শরীর মুবারক পূর্বে বিদ্যমান ছিল না, বরং দুনিয়ার জীবনেই সৃষ্টি হয়েছিল। সুতরাং তিনি দুনিয়ায় যে সুরতে তাশরীফ এনেছিলেন-সেটি নূরের সৃষ্ট নয়, বরং মদিনার (রওজাপাকের) মাটিরই সৃষ্ট । নতুবা উপরিউক্ত রেওয়ায়েতের খন্ডাংশ “আল্লাহ তায়ালা নূরে মুহাম্মদী হতে নবীদের (আলাইহিমুস সালাম) নূর সৃষ্টি করেছেন” মর্মে কথাটির মানে কী?
কাজেই হাদিসে জাবেরে উদ্ধৃত “নূর” হতে রূহ উদ্দেশ্য নেয়া ছাড়া দ্বিতীয় যে কোনো ব্যাখ্যাই আল-ঝুযউল মাফকূদ” পুস্তকের (পৃষ্ঠা নং ৫২) সুস্পষ্ট নীতি বিরুদ্ধ। নচেৎ টেনেটুনে যেদিকেই নেন না কেন, রেওয়ায়েতটির অসংগতি পিছু ছাড়বে না।
তৃতীয়ত, নূরে মুহাম্মাদী বলতে নবীপাক (সা)-এর রূহ এবং শরীর মুবারক উভয়টি বুঝায় না, বরং নূরে মুহাম্মাদী বলতে শুধু মাত্র নবীপাক (সা)-এর রূহ মুবারকই বুঝানো হয়েছে। তার পক্ষে হাদিসে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। যেমন, আমরা মেশকাত’র ব্যাখ্যাগ্রন্থ মেরকাত কিতাবে মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) [মৃত১০১৪ হিঃ] হতে সেই ব্যাখ্যাটি কিভাবে আছে তা এক্ষুণি আপনাদের দেখিয়ে দেব।
↓↓
তিনি মেরকাত কিতাবের ১ম খন্ডের ১৬৮-৬৯ নং পৃষ্ঠায় নূরে মুহাম্মদীকে রূহে মুহাম্মদী দ্বারা ব্যাখ্যা দিয়ে যা লিখেছেন, তা হুবহু তাঁরই ভাষায় তুলে দিলাম-
ﻭﺭﻭﻱ : ﺃﻥ ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻌﻘﻞ ، ﻭﺇﻥ ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻮﺭﻱ ، ﻭﺇﻥ ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﻭﺣﻲ ، ﻭﺇﻥ ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﺧﻠﻖ الله ﺍﻟﻌﺮﺵ ، ﻭﺍﻷﻭﻟﻴﺔ ﻣﻦ ﺍﻷﻣﻮﺭ ﺍﻹﺿﺎﻓﻴﺔ ﻓﻴﺆﻭﻝ ﺃﻥ ﻛﻞ ﻭﺍﺣﺪ ﻣﻤﺎ ﺫﻛﺮ ﺧﻠﻖ ﻗﺒﻞ ﻣﺎ ﻫﻮ ﻣﻦ ﺟﻨﺴﻪ ، ﻓﺎﻟﻘﻠﻢ ﺧﻠﻖ قبل ﺟﻨﺲ ﺍﻷﻗﻼﻡ ، ﻭﻧﻮﺭﻩ ﻗﺒﻞ ﺍﻷﻧﻮﺍﺭ ، ﻭﺇﻻ ﻓﻘﺪ ﺛﺒﺖ ﺃﻥ ﺍﻟﻌﺮﺵ ﻗﺒﻞ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﺴﻤﺎﻭﺍﺕ ، ﻭﺍﻷﺭﺽ ، ﻓﺘﻄﻠﻖ الأولية ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﻭﺍﺣﺪ ﺑﺸﺮﻁ ﺍﻟﺘﻘﻴﻴﺪ ﻓﻴﻘﺎﻝ : ﺃﻭﻝ ﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻲ ﻛﺬﺍ ، ﻭﺃﻭﻝ ﺍﻷﻧﻮﺍﺭ ﻛﺬﺍ ، ﻭﻣﻨﻪ ﻗﻮﻟﻪ ( ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻮﺭﻱ ) ، ﻭﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ : ﺭﻭﺣﻲ ، ﻭﻣﻌﻨﺎﻫﻤﺎ ﻭﺍﺣﺪ ، ﻓﺈﻥ ﺍﻷﺭﻭﺍﺡ ﻧﻮﺭﺍﻧﻴﺔ ﺃﻱ : ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﻷﺭﻭﺍﺡ ﺭﻭﺣﻲ (
অনুবাদ, “একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম বিবেক সৃষ্টি করেছেন। আরো বর্ণিত আছে, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। আরো বর্ণিত আছে, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আমার রূহ সৃষ্টি করেছেন। আরো বর্ণিত আছে, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আরশ সৃষ্টি করেছেন।
সর্বপ্রথম হওয়ার দিক থেকে সম্ভোধনী বিষয়গুলো তা’বীল তথা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। কাজেই সর্বপ্রথম হওয়ার দিক থেকে তাদের প্রত্যেককে স্বীয় সমজাতীয় জিনিষ অপেক্ষা সর্বপ্রথম হওয়া উদ্দেশ্য নেয়া হবে। সে হিসেবে (হাদিসে বর্ণিত) কলম তার সমজাতীয় কলম সমূহ অপেক্ষা পূর্বে হওয়া উদ্দেশ্য হবে, তেমনি ভাবে তাঁর নূরও তার সমজাতীয় নূর সমূহ অপেক্ষা পূর্বে হওয়াই উদ্দেশ্য। অধিকন্তু আরশ (ভিন্ন একটি হাদিস দ্বারা) আসমান ও জমিনের পূর্বে হওয়াই প্রমাণিত হয়ে আছে । অতএব এসবের কোনো একটি ক্ষেত্রেও সর্বপ্রথম হওয়ার মর্মার্থ শর্তহীন ভাবে বুঝাবেনা। তাই সর্বপ্রথম হওয়ার মর্মার্থ ওখানে যেমন বুঝাল, তেমনি নূর সমূহের ক্ষেত্রেও বুঝাবে। কাজেই যেহেতু বর্ণনায় রয়েছে যে, আল্লাহপাক সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন। এভাবে অন্য আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে যে, আল্লাহপাক সর্বপ্রথম আমার রূহ সৃষ্টি করেছেন। অতএব উভয় বর্ণনার মর্মার্থ একই। যেহেতু রূহই নূর। অর্থাৎ আল্লাহপাক রূহগুলোর মধ্য হতে সর্বপ্রথম আমার রূহ সৃষ্টি করেছেন।” [উল্লেখ্য, ’মিন’ (’হতে’) শব্দটি ‘তাদাখুল’ (অন্তঃপ্রবেশ)-এর অর্থ বুঝায় না। অনুবাদ এখানে শেষ হল]
হাদিসে এসেছে- আল্লাহ তায়ালা বান্দা সৃষ্টি করার পূর্বে তাদের রূহগুলো সৃষ্টি করেছেন। যেমন, হযরত উমর ইবনে আবাসাহ (রাদি:) হতে বর্ণিত —
قال النبي صلي الله عليه وسلم: ان الله خلق ارواح العباد قبل العباد بالفئ عام فما تعارف منها ائتلف و ما تناكر منها اختلف. )عن عمر ابن عبسة( الروح ٢٢٩
অনুবাদ, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা বান্দা সৃষ্টি করার দু’হাজার বছর পূর্বে তাদের রূহগুলো সৃষ্টি করেছেন। [সূত্র— রূহ : ২২৯]
উপরুল্লিখিত ব্যাখ্যাটিতে ভালভাবে চোখ বুলিয়ে দেখুন, মোল্লা আলী ক্বারী (রহ) [মৃত১০১৪ হিঃ] -এর ভাষ্য : … অর্থাৎ আল্লাহপাক রূহগুলোর মধ্য হতে সর্বপ্রথম আমার রূহ সৃষ্টি করেছেন।” মনে রাখতে হবে যে, এখানে ওই “নূর” শব্দটি তাঁর (আল্লাহতা’লা) সাথেই সম্বন্ধযুক্ত (’মোযাফ ইলাইহি’); আর ’মিন নূরিহী’ (তাঁর নূর হতে) বাক্যটিতে ’মিন’ (’হতে’) শব্দটি হলো ’লিল বয়ান’ তথা বর্ণনা-মূলক। ব্যাকরণবিদরা যেভাবে নিরূপণ করেন, সেভাবে ‘মিন’ শব্দটিকে খোলাসা করে মহানবী (সা) যেন বলতে চেয়েছেন, হে জাবের! আল্লাহতা’লা সর্বপ্রথম তাঁর নূর হতে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন—মানে আল্লাহ তায়ালা’র সৃষ্ট রূহ সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম তোমার নবী’র রূহ মোবারক সৃষ্টি করেছেন।’ উল্লেখ্য, ’মিন’ (’হতে’) শব্দটি ‘তাদাখুল’ (অন্তঃপ্রবেশ)-এর অর্থ বুঝায় না।
↓
এবার বুঝে থাকলে বলুন তিনি নূরে মুহাম্মাদী বলতে নবীপাক (সা)-এর রূহ এবং শরীর মুবারক উভয়টি বুঝিয়েছেন, নাকি নূরে মুহাম্মাদী বলতে শুধু মাত্র নবীপাক (সা)-এর রূহ মুবারকই বুঝিয়েছেন। রেজভিদের অহির্নিশি মিথ্যাচারের বিচার সচেতন পাঠকদের আদালতেই থাকল।
↓↓
এবার আরো ভালভাবে যাচাই করার জন্য মেরকাত কিতাবটির ১ম খন্ডের ১৬৮-৬৯ নং পৃষ্ঠার সরাসরি লিংকটিতে ক্লিক করুন।
http://library.islamweb.net/newlibrary/display_book.php?bk_no=79&ID=4&idfrom=10&idto=404&bookid=79&startno=92
→
←
শায়খ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ কাস্তালানী (রহ) রচিত “‘মাওয়াহেবে লাদূনিয়া’ কিতাবে (১/৩১-৩২) হযরত আবু হুরায়রাহ (রাদি:) থেকে একটি হাদিস (হাদিস নং ৪৮) উল্লেখ রয়েছে । হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, নবী করীম (সা) হযরত আদম (আ) এর সৃষ্টি পূর্ণ হওয়ার পূর্বে (রূহের আকারে) তাকদীর বা অদৃষ্টলিপিতে ছিলেন। কিতাবের ভাষ্য —
كنت نبيا و آدم بين الماء والجسد “ثم قال : و اما قوله عليه السلام : )كنت نبيا( فاشارة الي ما ذكرناه و انه كان نبيا في التقدير قبل تمام خلقه آدم عليه السلام لانه لم ينشأ خلق آدم الا لينتزع من زريته محمدا صلعم و يستصفي تدريجا الي ان يبلغ كمال الصفاة.
অনুবাদ, আমি তখনো নবী ছিলাম, যখন আদম পানি আর শরীরের মাঝামাঝিতে বিদ্যমান ছিলেন। আলোচ্য হাদিসটি সে দিকেই ঈংগিত বহন করে যা আমরা উল্লেখ করেছি। তা হল, নবী করীম (সা) হযরত আদম (আ) এর সৃষ্টি পূর্ণ হওয়ার পূর্বে (রূহের আকারে) তাকদীর বা অদৃষ্টলিপিতে ছিলেন। কেননা তিনি নবী করীম (সা) -কে তাঁরই সন্তানসন্ততীর অন্তর্ভুক্ত করা ব্যতীত আদমের আকার আকৃতি সৃষ্টি করেননি। তিনি তাঁর সমুদয় গুণাবলীর পূর্ণতা দিয়েই তাবলীগ করার জন্য মনোনীত করেছেন।”
↓↓
“‘মাওয়াহেবে লাদূনিয়া’ কিতাবে (১/৩১-৩২) উক্ত হাদিসের (হাদিস নং ৪৮) ব্যাখ্যায় আরো উল্লেখ রয়েছে “আমি তখনো নবী ছিলাম”—এটি তাঁরই রূহ মোবারকের প্রতি ঈংগিত। কিতাবের ভাষ্য —
و هو متعقب بقول الشيخ تقي الدين السبكي عليه الرحمة انه قد جاء ان الله خلق الارواح قبل الاجساد. فقد تكون الاشارة بقوله: )كنت نبيا( الي روحه الشريفة او الي حقيقة من الحقائق. والحقائق تقصر عقولنا عن معرفتنا و انما يعلمها خالقها و من امده الله بنور الهي
অনুবাদ, শায়খ ইমাম তকি উদ্দিন আস-সুবকী (রহ) -এর ভাষ্য মতে তিনি (শারিরীক ভাবে) পশ্চাদ্বর্তী। যেহেতু (হযরত উমর ইবনে আবাসাহ রাদি: হতে বর্ণিত ) একটি হাদিসে এসেছে যে, আল্লাহ তায়ালা শরীর সৃষ্টি করার পূর্বে রূহগুলো সৃষ্টি করেছেন। তাই নবীজির বাণী “আমি তখনো নবী ছিলাম”—এটি তাঁরই রূহ মোবারকের প্রতিই ঈংগিত।”
↓↓
“মাওয়াহেব” কিতাবে (হাদিস নং ৪৮) উপরিউক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় আরো উল্লেখ রয়েছে যে,
قوله عليه السلام )كنت نبيا( … ولو صح الحديث لكان معناه ان روحه صلي الله عليه وسلم اول ارواح البشر و فرق بين ان يقال اول ارواح البشر و بين ان يقال اول خلق الله الأن بين كتابة القلم علي اللوح المحفوظ و بين خلق السموات والارض خمسين الف سنة. كما مر
অনুবাদ, যদি হাদিসটি সহীহ হয়ে থাকে, তাহলে তার অর্থ হবে, মানুষের রূহগুলোর মধ্য হতে সর্বপ্রথম সৃষ্ট রূহ হল নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরই রূহ মুবারক ।
↓↓
কাজেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে পারি যে, নূরে মুহাম্মদী মানে একমাত্র রূহে মুহাম্মদী তথা মুহাম্মদ (সাঃ)-এর রূহ মোবারককে বুঝায়। নূরের উপরোক্ত বর্ণনাটিকে এভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করার মাধ্যমে সকল প্রকারের মতানৈক্য আর শিরিকি আকিদা বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করা সম্ভব হবে।
↓↓
শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (রহ) রচিত “সিররুল আসরার” কিতাবের ভাষ্য হল, আল্লাহ তায়ালার নূর ও সৌন্দর্য হতে সর্বপ্রথম নবী করীম (সা)-এর রূহ মুবারক সৃষ্টি হয়েছে। এবার এ কথাটি উক্ত কিতাবে কিভাবে রয়েছে আমরা তা দেখে নেব। কিতাবের ভাষ্য —
معني الآن مقطع منه فيما يتعلق بهذه الفقرة يقول : اعلم وفقك الله لما يجب و يرضي ، لقد خلق الله تعالي روح محمد صلي الله عليه و سلم اولا من نوره و جماله. )هكذا في سر الاسرار لامام الشيخ عبد القادر الجيلاني رح (
অনুবাদ, এখন এ অধ্যায়ের সাথে সম্পর্কিত مقطع منه (তার একটি অংশ) এর অর্থ হল, তিনি বলেন: জেনে রেখো! আল্লাহ পাক তোমাকে সেসব ব্যাপারে সৌভাগ্যবান করুন যা তিনি আবশ্যক করেছেন এবং সন্তুষ্ট রয়েছেন, তা হল আল্লাহ তায়ালা তাঁরই নূর ও সৌন্দর্য হতে সর্বপ্রথম নবী করীম (সা)-এর রূহ মুবারক সৃষ্টি করেছেন।”
↑↓
জাবের (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসটিতে উল্লিখিত “নূর” শব্দের বিশ্লেষণও মাওয়াহেবে লাদূনিয়া কিতাবের ৭১নং পৃষ্ঠার ৫ নং টীকায় রয়েছে । আমি এখানে তা অর্থ সহকারে তুলে ধরছি। যাতে সেখানে উল্লিখিত নূর শব্দটি দেখে কেউ বিভ্রান্তিতে না পড়ে। “নূর” শব্দের বিশ্লেষণ-
ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺍﻭﻝ ﻣﺎ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻮﺭ ﻧﺒﻴﻚ ﻣﻦ ﻧﻮﺭﻩ ﺍﻟﺦ ﻗﻮﻟﻪ ﻣﻦ ﻧﻮﺭﻩ ﺍﻱ ﺍﻻﺿﺎﻓﺔ ﺍﺿﺎﻓﺔ ﺗﺸﺮﻳﻒ، ﻛﺬﺍ ﻓﻲ ﻣﻮﺍﻫﺐ ﻟﺪﻭﻧﻴﻪ ﺍﻟﻤﺠﻠﺪ ﺍﻻﻭﻝ ﺑﺮﻗﻢ ﺍﻟﺼﻔﺤﺔ ٧١ ﺍﺭﻗﺎﻡ ﺍﻟﺤﺎﺷﻴﺔ ٥
অনুবাদ, হযরত জাবের রা: থেকে রেওয়ায়েত “আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম তাঁর নূর হতে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন। (তাঁর নূর হতে-এভাবে) আল্লাহ তায়ালার প্রতি নূরের নেসবত সম্মান আর মর্যাদা প্রকাশের জন্যই।” [এখানে এ অর্থ উদ্দেশ্য নয় যে, তাঁর (রাসূল সাঃ) নূরের সৃষ্টি মূল উপাদান আল্লাহ তায়ালার জাতি নূর অথবা তাঁর সত্তার অংশ বা টুকরা বিশেষ।] ↓↓
‘মাওয়াহেবে লাদূনিয়া’ কিতাবের (১/৭৪) মধ্যে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আরো একটি তথ্য পাই। সেখানে হাদিসে জাবের (রা)-এর উপর শারেহে মাওয়াহেব (আলাইহির রাহমাহ) কয়েকটি প্রশ্নের প্রতিউত্তর স্বরূপ জবাব দিতে গিয়ে লিখেছেন –
و قيل : الاولية في كل بالاضافة الي جنسه اي اول ما خلق الله من الانوار نوري و كذا في باقيها. بحواله مواهب لدونيا
অর্থাৎ, হাদিস বিশারদদের কেউ কেউ বলেছেন, (এ সমস্ত ক্ষেত্রে) সর্বপ্রথম হওয়ার মর্মার্থ সেগুলোরই সমজাতীয় বস্তুর প্রতি সম্বোধনের মাধ্যমেই ধর্তব্য হইবে। অর্থাৎ আল্লাহপাক সমস্ত নূর (রূহ) হতে আমার নূর (রূহ) সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন। এরূপ অন্যান্য সমজাতীয় বস্তুর ক্ষেত্রেও (একই নিয়ম বিবেচিত হবে)।
↓↓
শারেহে বুখারী আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী ওয়াল হানাফী (আলাইহির রাহমাহ) রচিত “উমদাদুল ক্বারী” কিতাবে (১৫/১০৯) উল্লেখ করেছেন যে, সর্বপ্রথম সৃষ্টি হওয়া সম্পর্কিত রেওয়ায়েত গুলোর ভেতর সমন্বয় সাধন করতে হবে। সেখানে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তাদেরই সমজাতীয় জিনিসের দিকে সর্বপ্রথম হওয়ার নেসবত করা হবে।
কিতাবের ভাষ্য –
وحكي ابن جرير عن محمد ابن اسحاق انه قال قال اول ما خلق الله تعالي النور والظلمة ثم ميز بينهما فجعل الظلمة ليلا اسود مظلما و جعل النور نهارا ابيض مبصرا . و قيل اول ما خلق الله تعالي نور محمد قلت التوفيق بين هذه الروايات بان الاولية نسبي و كل شيئ قيل فيه انه اول فهو بالنسبة الي ما بعدها. )عمداد القاري شرح بخاري للعيني رح ١٥/١٠٩ (
অনুবাদ, ইবনে জারীর (রহ) মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রহ) হতে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সা) ইরশাদ করেছেন—আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম নূর (আলো) এবং যূলুমাত (অন্ধকার) সৃষ্টি করেছেন। অতপর দু’নোটির মাঝে পার্থক্য নিরূপণ করেছেন। তিনি যূলুমাতকে কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন রাত্রিতে পরিণত করেছেন আর নূর বা আলোকে করেছেন শুভ্র দিবস। কথিত আছে
ﺍﻭﻝ ﻣﺎ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻧﻮﺭ ﻣﺤﻤﺪ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম মুহাম্মদ (সা:) -এর নূর সৃষ্টি করেছেন । আমার (আল্লামা আইনী) বক্তব্য হল, বর্ণনাগুলোর মাঝে সমন্বয় সাধন করতে হবে। যেহেতু সর্বপ্রথম হওয়ার বিষয়টি প্রত্যেকটি বস্তুর দিকেই সম্বন্ধীয়, সেহেতু (সমন্বয় সাধন করে) বলতে হবে যে, সেখানে অবশ্যই প্রত্যেকটি বস্তু স্ব স্ব সমজাতীয় বস্তুগুলোর নেসবতে সর্বপ্রথম সৃষ্ট।”
কাজেই প্রমাণিত হয়েছে যে, রেজভিদের উপরিউক্ত ধারণাটি পুরোপুরি অনুমান নির্ভর ও বানোয়াট বৈ কিছু না। কাজেই, তাঁর দেহ মুবারক নূরের সৃষ্টি নয়, বরং আশরাফুল মাখলূকাত মানুষ জাতির অন্তর্ভুক্ত হিসেবে তাঁর দেহ মুবারকের সৃষ্টি মূল-উপাদান মাটিই ছিল।
(তিনি আরো লিখেছেন) ” আর তাঁর হাকীকী সুরত হচ্ছে, ময়ূরের মতো এবং তিনি দুনিয়ায় যে সুরতে তাশরীফ এনেছিলেন-তাও নূরের সৃষ্টি।”
আমার জবাব, তাদের উপরিউক্ত বক্তব্যের পক্ষে কোনো রেওয়ায়েত প্রসিদ্ধ/অপ্রসিদ্ধ কোনো একটি হাদিস গ্রন্থে পাওয়া যায়না। কাজেই এ রকম একটি অপ্রমাণিত ও সনদ বিহীন রেওয়ায়েত কিছুতেই গ্রহনযোগ্য নয়। কাজেই তাদের আকিদা—নবীজি (সা)-এর হাকীকী সুরত হচ্ছে ময়ূরের মতো (নাউযুবিল্লাহ), আহলে হক্বের নিকট এ রকম সনদ বিহীন জঘন্যতম কথার দু পয়সার মূল্য নেই। অতএব তিনি দুনিয়ায় যে সুরতে তাশরীফ এনেছিলেন-তা নূরের সৃষ্ট নয়।”
আরেকটি কথা হল, পবিত্র কুরআনে ‘সূরা ত্বীন’র ভেতর ময়ূরের আকৃতিকে নয়, বরং মানুষের আকৃতিকেই “আহসানি তাক্ববীন” (সর্বোৎকৃষ্ট আকৃতির সৃষ্টি) বলা হয়েছে। তাই নবীজি (সা)-এর হাকীকী সুরত [প্রকৃত আকৃতি] ময়ূরের মতো (নাউযুবিল্লাহ)-এধরণের কথা বলা ও বিশ্বাস রাখা নবীজি (সা)-এর অবমাননা করার শামিল ও কুরআনের ‘সূরা ত্বীন’র আয়াত “আহসানি তাক্ববীন” (সর্বোৎকৃষ্ট সৃষ্টি) মর্মের সুস্পষ্ট বিরুধী। যেজন্য উক্ত রেওয়ায়েত বাতিল ও জাল হওয়া সুস্পষ্ট।
↓
লিখেছেন, প্রিন্সিপাল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন