যদি সামর্থ্য থাকে তো দিকভ্রান্ত আহলে বাতিল রেজভি বন্ধুরা জবাবটা দিয়ে যান। ভালো ভাবে একটু খেয়াল করুন – হযরত আবু হোরায়রাহ রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- ﻋﻦ ﺍﺑﻲ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻭ ﻣﻦ ﺻﻠﻲ ﻋﻠﻲ ﻧﺎﺋﻴﺎ ﺍﺑﻠﻐﺘﻪ .
(যে কেউ দূর থেকে আমার উপর দরূদ পড়বে, সেটি আমাকে পৌঁছিয়ে দেওয়া হবে। (মেশকাত ১/৮৭।)}
হযরত ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন- ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺍﻥ ﻟﻠﻪ ﻣﻼﺋﻜﺔ ﺳﻴﺎﺣﻴﻦ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﺗﺒﻠﻐﻨﻲ ﻣﻦ ﺍﻣﺘﻲ ﺍﻟﺴﻼﻡ
(আল্লাহপাক সমগ্র ভূপৃষ্ঠে একদল ফেরেশতাকে ভ্রমণাবস্থায় রেখেছেন। তারা আমার উম্মতের পক্ষ হতে আমার নিকট তাদের সালাম সমূহ এনে পৌঁছিয়ে দিন।” (নাসাঈ শরিফ ২/১৮৯, মেশকাত ২/৮৬।)}
লক্ষ করুন! প্রথমোক্ত হাদিসে রয়েছে ﻋﻠﻲ ﻧﺎﺋﻴﺎ যে কেউ দূর থেকে আমার ওপর দরূদ পড়বে” তো আহলে বাতিল রেজভিদের মতানুসারে নবীজি সাঃ যদি সর্বপুরি উপস্থিত থাকতেন তাহলে উম্মতগণ তাঁর থেকে দূরে থাকবে কেন ? কী জবাব?
অনুরূপ দ্বিতীয় হাদিসের মর্মার্থ হল , ﺳﻴﺎﺣﻴﻦ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ফেরেশতাগণ পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। তাঁরাই উম্মতের পক্ষ থেকে সালামগুলো নবীজির দরবারে পৌঁছিয়ে দেন। তো যেখানে ফেরেশতারাই সবকিছু পৌঁছিয়ে দিচ্ছেন, সেখানে নবীজি সাঃ সর্বপুরি হাজির থাকার কী প্রয়োজন?
আর হ্যাঁ, তর্কের খাতিরে যদি মেনেও নিই যে, রাসূল সাঃ (আহলে বাতিল রেজভিদের আকিদা অনুসারে) সর্বত্রে রূহানীভাবে হাজির। অর্থাৎ রাসূলেপাকের সাঃ দুনিয়া থেকে চলে যাওয়ার পর তাঁর পবিত্র রূহের জন্য সর্বস্থানে বিচরণ করার অনুমতি রয়েছে, তাহলে বলা হবে যে, সর্বস্থানে বিচরণের অনুমতি থাকার দ্বারা বাস্তবেই সর্বস্থানে উপস্থিত থাকা জুরুরী নয়। বরং তিনি যে সর্বত্রে হাজির থাকেন না, তার বহুপ্রমাণ কুরআন হাদিস এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলী দ্বারা প্রমাণিত। তা ছাড়া হাদিসের ভাষ্য মতে তিনি সর্বদা রওজা মুবারকে আরাম করছেন। অতএব এখন যদি কেউ নির্দিষ্ট স্থানে রাসূলের সাঃ উপস্থিতির দাবি করে, তাহলে তখন তার দাবিটা দু অবস্থার কোনো অবস্থা থেকে খালি নয়। ১- হয়ত সে রূহানীভাবে উপস্থিত থাকার দাবি করবে। ২- নতুবা শারিরীকভাবে উপস্থিত থাকার দাবি করবে। দ্বিতীয় অবস্থার দাবি তো গ্রহণযোগ্য হতেই পারেনা। কারণ তখন তাদের এ দাবির পক্ষে সুস্পষ্ট দলিল চাই। অথচ এর পক্ষে কোনো দলিল নাই। আর প্রথমোক্ত দাবির পক্ষেও তদ্রুপ কোনো দলিল তো নাই, বরং তখন তাদের কল্পিত নির্ভর এ আকিদার ফলে রাসূল সাঃ এর পবিত্র দেহ মুবারক রওজাপাকে প্রাণহীন ভাবে পড়ে থাকার দাবি রাখে। যা অত্যন্ত গর্হিত ও ন্যাক্কারজনক মতবাদ।
লক্ষ্য করুন, হাদিসে উল্লেখ রয়েছে- হযরত আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন ﻣﺎ ﻣﻦ ﺍﺣﺪ ﻳﺴﻠﻢ ﻋﻠﻲ ﺍﻻ ﺭﺩ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻲ ﺭﻭﺣﻲ ﺣﺘﻲ ﺍﺭﺩ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ( তোমাদের যে কেউ আমার প্রতি যখন সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ তায়ালা আমার প্রতি আমার রূহ প্রেরণ করিয়ে দেন, ফলে আমি সালামের জবাব দিই। মেশকাত ৮৬।)
আরেকটু খেয়াল করুন – সূরা হুদ ১৮ নং আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে তাফসীরে মাজহারীর ৫/৭৭ পৃষ্ঠায় লেখা আছে , ﻭ ﺍﺧﺮﺝ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻙ ﻋﻦ ﺳﻌﻴﺪ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻴﺐ ﻗﺎﻝ ﻟﻴﺲ ﻣﻦ ﻳﻮﻡ ﺍﻻ ﻭ ﺗﻌﺮﺽ ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻌﻢ ﺍﻣﺘﻪ ﻏﺪﻭﺓ ﻭ ﻋﺸﻴﺔ ﻓﻴﻌﺮﻓﻬﻢ ﺑﺴﻴﻤﺎﻫﻢ ﻭ ﺍﻋﻤﺎﻟﻬﻢ ﻓﻠﺬﺍﻟﻚ ﻳﺸﻬﺪ ﻋﻠﻴﻬﻢ.
“ইবনে মুবারক তিনি বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব রহঃ হতে বর্ণনা করেন, প্রত্যহ সকাল ও সন্ধ্যায় হযরত রাসূল সাঃ এর নিকট তাঁর উম্মতের সকল সদস্যগণকে পেশ করা হয়। তখন তিনি তাদের চিহ্ন ও আমল সমূহ দ্বারা তাদেরকে চিনে নেন। যেহেতু তিনি হাশরের দিন তাদের পক্ষে ও বিপক্ষে স্বাক্ষ্য প্রদান করবেন।”
এ আলোচনা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, হাশরের দিবসে উম্মতের ব্যাপারে স্বাক্ষ্য প্রদান করার উদ্দেশ্যে নবীজি সাঃ এর জন্য সর্বপুরী উম্মতীর পাশাপাশি উপস্থিত থাকা কিংবা উম্মতীর বাড়ি বাড়ি ঘুরাফেরা করা এসবের কোনোই প্রয়োজন নেই। যেহেতু প্রত্যহ সকাল সন্ধ্যায় উম্মতের সকল সদস্যকে তাঁর নিকট উপস্থিত করা হয় আর তিনি তাদের চিহ্ন ও আমলের দ্বারা তাদেরকে চিনে নিন।
এবার প্রশ্ন হতে পারে যে, তিনি তাদের চিহ্ন ও আমলের দ্বারা তাদেরকে চিনে নিবেন কিভাবে? তার কাছে কি উম্মতের আমল সমূহ পেশ করা হয়? এর প্রতি উত্তরে ভিন্ন আরেকটি হাদিসে এসেছে যে- , ﻋﻦ ﺍﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻌﻢ ﻋﺮﺿﺖ ﻋﻠﻲ ﺍﺟﻮﺭ ﻭ ﻓﻲ ﺭﻭﺍﻳﺔ ﺍﺟﻮﺭ ﺍﻋﻤﺎﻝ ﺍﻣﺘﻲ ﺣﺘﻲ ﺍﻟﻘﺬﺍﺕ ﻳﺨﺮﺟﻬﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺍﻟﺦ
(নবীজি সাঃ বলেন আমার উম্মতের আমলগুলো আমার নিকট পেশ করা হয়। আবু দাউদ ১/৬৬।) তো যেখানে ফেরেশতারাই সবকিছু পৌঁছিয়ে দিচ্ছেন, সেখানে নবীজি সাঃ সর্বপুরী উম্মতীর পাশাপাশি উপস্থিত থাকা কিংবা উম্মতীর বাড়ি বাড়ি ঘুরাফেরা করা কিংবা সর্বপুরি হাজির থাকার কী প্রয়োজন? আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
লেখক, প্রিন্সিপাল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন