আরবি উল্লেখযোগ্য একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ হেদায়াতুন্নাহু। কিতাবটি সকলের নিকট সমভাবে গ্রহণযোগ্য । বেফাক, আলিয়া সহ প্রত্যেক আরবি ভাষীর নিকট এটি নির্ভরযোগ্য একটি আরবী কানূনী কিতাব হিসেবেই স্বীকৃত।
কিতাবটির المقصد الثالث في المجرورات (তৃতীয় উদ্দেশ্য : জর বিশিষ্ট বিশেষ্য সমূহ প্রসংগে) শীর্ষক আলোচনা পর্বে বিজ্ঞ গ্রন্থকার লিখেছেন واعلم ان الاضافة علي قسمين معنوية و لفظية الخ
অর্থাৎ ইযাফত দুইপ্রকার। ১- অর্থগত, ২- শব্দগত। তিনি আরো লিখেছেন, اضافة معنوية এমন ইযাফতকে বলে যার মধ্যে مضاف টি صفت এর ছিগাহ ছাড়া অন্য কোনো পদ হবে, যা তার معمول (অর্থাৎ فاعل বা مفعول ) -এর দিকে মুযাফ হবে।আর এ ছাড়া এ ইযাফত হয়ত لام এর অর্থে হতে পারে, যেমন غلام ذيد (এর অর্থ غلام لذيد ) অথবা কখনো من অর্থে, কখনো বা في অর্থেও হতে পারে।
উল্লেখ্য, নাহুশাস্ত্রে যাদের মোটামোটি ধারণা রয়েছে, তারা জানেন যে, اضافة معنوية চেনার উপায় হচ্ছে, মুযাফটি সিফাতের ছিগাহ হবেনা। আরো জেনে থাকবেন যে, اضافة معنوية যখন لام -এর অর্থে ব্যবহৃত হয়, তখন مضاف টি مضاف اليه (মুযাফ ইলাই)-এর সমজাতীয় না হওয়া বুঝায়। [তথ্য সূত্র, হেদায়াতুন্নাহ]
মূল আলোচনায় ফিরে এলাম-
মুহতারাম উলামায়ে কেরাম! আপনারা উপরিউক্ত নাহুশাস্ত্রের নীতিমালার আলোকে নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পেরেছেন যে, হাদিস নামের জাল হাদিসটিকে তর্কের খাতিরে সহীহ ধরে নিলেও সেটি দ্বারা নবীজির (সা) শরীর মুবারক কস্মিনকালেও নূরের সৃষ্টি বলে প্রমাণিত হয় না। তার অন্যতম একটি প্রধান কারণ হল, সেখানে نوري শব্দটিতে যে اضافت তথা সম্ভোধন হয়েছে সেটিকে اضافت معنوية (ইযাফতে মা’আনুবিয়্যাহ) বলা হয়, যেটি لام অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যাদের একটি অপরটির সমজাতীয় না হওয়াকে বুঝায়। ফলে নাহুশাস্ত্রের বর্ণিত নীতিমালা অনুসারে ও সামগ্রিকভাবে অর্থ দাঁড়াচ্ছে,
اول ما خلق الله نوري اي نورا لي
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আমার নূর অর্থাৎ আমার জন্য নূর সৃষ্টি করেছেন।”
এখানে “আমার” এবং “নূর” শব্দদুটি ভিন্ন ভিন্ন সত্তা হওয়াকে প্রমাণ করে। উক্ত نوري যৌগিক শব্দটির সামগ্রিক অবস্থা পর্যালোচনা করলে সহজেই বেরিয়ে আসে যে, ঐ নূর শব্দ হতে রূহই উদ্দেশ্য হবে।
আল্লামা ইমাম কাসতালানী (রহ) রচিত ‘মাওয়াহেবে লাদূনিয়া’ কিতাবের (১/৭৩) মুহাক্কিক শায়খ ছালেহ আহমদ আশ শামী (রহ) এবং ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী [রহ] (মেরকাত ১/১৬৮-৬৯) সহ অনেক মুহাদ্দিসীন এরকমই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং, এ হাদিসটিকে তর্কের খাতিরে সহীহ হাদিস ধরে নিলেও তদ্দ্বারা নবীজির (সা) সৃষ্টিমূল-উপাদান মাটি হওয়া অস্বীকার করা এবং উনাকে নূরের সৃষ্টি বলে ফেরেশতা জাতির অন্তর্ভুক্ত করা কোনো ভাবেই গ্রহণ যোগ্য হতে পারেনা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে গোঁড়ামি হতে রক্ষা করুন, হক্ব কথা মেনে আকিদা সহীহ শুদ্ধ করার তৌফিক দিন। আমীন।
লিখক, প্রিন্সিপাল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন