তাবলীগ জামাতের প্রচলিত ৬ ঊসূল নিখুঁত ও নির্ভরযোগ্য কি?
জনৈক ভান্ডারী সুন্নীর সাথে উপরিউক্ত বিষয় নিয়ে একদা আমার তর্ক হল। সে ভাব নিল আর কপালে চোখ তুলে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল- তাবলীগ জামাত সমর্থন করা যাবেনা। যারা তাবলীগ জামাতে যায় তারা জান্নাত পাবেনা। তাবলীগ জামাতের ছয় উসূলের ভেতর হজ্ব বা সিয়ামের কথা সংযুক্ত নেই। কাজেই তাদের এ তাবলীগ প্রকৃত ইসলামী তাবলীগ নয়?
আমি কাছ থেকে তার এ হুংকার শুনলাম। তৎক্ষণাত তার হুংকারের পাল্টা জবাব দিলাম।
জবাবটি ছিল এ রকম। তো ভাই, তাবলীগ জামাতের ছয় উসূলের ভেতর যদিও হজ্ব বা সিয়ামের কথা সংযুক্ত করা হয়নি, কিন্তু তাই বলে কখনো কি তারা ঐ দুটোকে বাদ দিতে বলেছেন, কিংবা নিষ্প্রয়োজন বলেছেন?
রেজভী বললেন, তা বলেননি কথা ঠিক, কিন্তু ঐ দুটো সংযুক্ত করল না কিজন্য?
আমি বললাম, আপনাকে প্রথমে তাবলীগ জামাতের লক্ষ্য উপলব্ধি করতে হবে। তারপর যথেচ্ছা মন্তব্য করার অধিকার থাকবে। তাবলীগ জামাত মানুষকে এমন কতগুলো গুণের উপর মেহনত করার ট্রেনিং দেন, যা রপ্ত করার পর সেই লোকটির পক্ষে অনায়াসে দ্বীনের উপর চলা সহজ হয়ে যাবে।
আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে যে, তাবলীগ জামাতের একটি সিলেবাস রয়েছে। ফাজায়েলে আমাল নামক সেই সিলেবাসে “ফাজায়েলে সিয়াম” এবং “ফাজায়েলে সাদাকাত” সহ সেখানে উনারা ইসলামের জুরুরি বিষয়গুলো প্রতিনিয়ত স্টাডি করেন। বুঝলেন?
রেজভী বলল, তা বুঝলাম, কিন্তু উনারা সেগুলো ছয় উসূলের বাহিরে রাখলেন কেন?
আমি জিজ্ঞাস করলাম, সেগুলো ছয় উসূলের বাহিরে রাখার অর্থ কি তারা সেগুলোকে প্রয়োজন মনে করেন না, এ রকম কি?
রেজভী লোকটি বলল, নিশ্চয়ই এ রকম কিছু। নতুবা সেগুলো উসূলের অন্তর্ভুক্ত থাকত।
আমি বললাম, যিনি মুত্তাকী হবেন, তার জন্য হজ্ব বা সিয়াম এর সব গুলোই আমলে নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে-একথা আপনি বিশ্বাস করেন কিনা?
রেজভী লোকটি বলল, হ্যাঁ নিশ্চয়ই আমি বিশ্বাস করি।
আমি বললাম, আল্লাহ তায়ালা সূরা বাক্বারার আয়াতটির ভেতর মুত্তাকীনদের সিফাত বা গুণাগুণ আলোচনাকালে হজ্ব বা সিয়ামের কথা বাদ দিলেন কিজন্য? তার অর্থ কি মুত্তাকীনদের জন্য সেগুলোর কোনোই প্রয়োজন নেই?
এই যে লক্ষ্য করুন-
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন সুরায়ে বাক্বারার শুরুতে বলেছেন, “কুরআন মুত্তাক্বিনদের জন্য হেদায়েত”। মুত্তাক্বিন কারা-তারপরই আল্লাহ তায়ালা মুত্তাক্বিনদের ৬টি গুণাগুণ বর্ণনা দিয়েছেন। যেমন –
১-
যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনবে।
২-
যারা নামাজ ক্বায়েম করবে।
৩-
যারা তাদের সম্পদের একাংশ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করবে।
৪-
হে নবী! যারা আপনার উপর নাযিলকৃত কিতাবের উপর ঈমান আনবে।
৫-
যারা পূর্ববর্তী নবীগ্ণের উপর নাযিলকৃত কিতাবের উপর ঈমান আনবে।
৬-
যারা ক্বিয়ামতের দ্বীনের উপর ঈমান আনবে।
তারপর আমি আরো বললাম, আচ্ছা বলুনতো ভ্রাতা, আল্লাহ তায়ালা মুত্তাক্বিনদের এ ছয়টি ( ৬ ) গুণাগুণের ভেতর কোথাও কি হজ্ব বা সিয়ামের কথা বলেছেন? না বলেন নি? তার অর্থ কি এই যে, আল্লাহ তায়ালা সেখানে হজ্ব বা সিয়ামের কথা সংযুক্ত না করার দ্বারা সেগুলো বাদ দিতে বলেছেন?
মজার ব্যাপার হল, আল্লাহ তায়ালা মুত্তাক্বিনদের এ ছয়টি ( ৬ ) গুণাগুণের বর্ণনা দিয়েই বলেছেন,
“কোরআনের হেদায়েত যারা পেল, তাদের জীবন সফল হয়ে গেল”।
অথচ যাদের হজ্বে যাওয়ার তৌফিক থাকা সত্যেও হজ্ব করল না, হাদিস শরীফে তাদের সম্পর্কে ইহুদী কিংবা নাসারা হয়ে মরার হুশিয়ারী রয়েছে, নয় কি?
রেজভী : হুম। তাওবা তাওবা, রেজভিদের ধোকায় পড়ে এতকাল যাবত গোমরাহ ছিলাম। আজই প্রকৃত সত্যটি বুঝতে পারলাম। জাজাকাল্লাহ।
আমি: আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।
লিখেছেন- প্রিন্সিপাল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন